গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ২৪

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 24


🍂🍂🍂


ভয়ার্ত দৃষ্টিতে এদিক সেদিক চেয়ে এলোমেলোভাবে দৌড়াচ্ছে একজন। তার পেছনেই কয়েকজন গার্ড দৌড়াচ্ছে। বাড়িটির থেকে বেরিয়ে ঢোক গিলে আবারো পেছন দিকে দৃষ্টি রেখে পা চালিয়ে যেতেই কারো সাথে ধাক্কা খায় লোকটি। সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটিকে দেখেই শরীর ভয়ে কেপে উঠে। রুদ্র হেসে বলে,

হেই! পালিয়ে যাচ্ছিলে নাকি? আমি হেল্প করবো?

গার্ডরা এসে চারদিকে গোল হয়ে দাঁড়ায়। তাদের মধ্যে একজন বলে,

~তানভীরকে (রুদ্রর বিশ্বস্ত গার্ডদের মধ্যে একজন) মাথার পেছনে আঘাত করে পালিয়ে যাচ্ছিল স্যার। আমরা দেখা মাত্রই ধরার জন্য পেছনে ছুটেছি।

মুহূর্তেই রুদ্রর চোখে মুখে রাগের অস্তিত্ব দেখা দেয়। গার্ডদের একজনকে ডেকে গম্ভীর স্বরে বলে,

ওকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠাও। ওর কিছু হলে তোমাদের একেকজনকে ডিরেক্ট শুট করে দিবো।

গার্ডটি ভয়ে মাথা নেড়ে চলে যেতেই রুদ্র আবারো ওই লোকটির দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,

~দ দয়া করে আমাকে যেতে দিন। আমার ভুল হয়ে গেছে। টাকার লোভে পরে আমি তাকে খুন করতে এসেছিলাম। মাফ করে দিন আমাকে। আর কখনো এমন ভুল করবো না।

কাদতে কাদতে বলে লোকটি। রুদ্র শান্ত কণ্ঠে বলে,

লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। জানিস তো? তোর সাহস কি করে হলো ওকে মারার চেষ্টা করার!

বলেই লোকটির বুকে এক লাত্থি দেয় রুদ্র। একজন গার্ডকে ইশারা করতেই সে এসে রুদ্রর হাতে একটি রড দেয়। রুদ্রর হাতে রড দেখেই অন্তর আত্মা কেপে উঠে লোকটির।


🍂🍂🍂


মনে মনে বিরক্ত হলেও জোরপূর্বক হেসে সকলের সাথে কথা বলছে মেহের আর তার বন্ধুরা। কে সম্পর্ক কি হয় তার হিসেব মিলাতেই মিলাতেই আজ হয়তো শহীদ হয়ে যাবে তা ইতিমধ্যে ভেবে নিয়েছে মেহের। সঙ্গীতের অনুষ্ঠান ইতিমধ্যে শেষ, সবাই মেহেদি লাগাতে ব্যস্ত। মেহেরের মেহেদি দেওয়া শেষ অনেক আগেই, মেহেদি শুকিয়েও গেছে অলরেডী। এখন দিয়া আর স্নেহা মেহেদি দিচ্ছে। সেদিকেই মনোযোগ দিয়ে বসে আছে ওরা।

~তোগো মাইয়া মাইনষের মধ্যে এত প্যাচ কেন! (বিরক্তমিশ্রিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে কাব্য)

~মেয়ে মানুষ আবার তোরে কি করলো? (ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে দিয়া)

~সম্পর্কে মেহের আর স্নেহার কি লাগে তা না বইলা দেখস না কেমনে পরিচয় দেয়! হিসাব মিলাইয়া ই তো কুল পাই না যে কেডা কি লাগে। (কাব্য)

~আসলেই রে ভাই। আবার কেউ চেপে ধরার আগে চল এদিক থেকে সরে যাই। (আহিল)

~ভালো কথা মনে করিয়েছিস। চল ভাগি!!!

যেই না কাব্য আর আহিল উঠতে যাবে ওমনিই দুজন মধ্যবয়স্ক মহিলা হাজির। কি সুন্দর হেসে চেয়ে আছে ওদের দিকে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে পান খাওয়া তাদের অন্যতম প্রিয় অভ্যাস। কাব্য আর আহিলকে যেতে দেখেই তাদের মধ্যে একজন বলে উঠে,

আরে তোমরা কনের বন্ধু না? কোথায় যাও? বসো বসো।

~বসে থাকতে থাকতে কোমর বেকা হয়ে গেছে তাই একটু সোজা করতে যাচ্ছি। আপনি পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করুন, আমরা ২ ঘণ্টায় আসছি। (কাব্য)

~কোমর পরে সোজা করলেও চলবে আপাতত আন্টিদের সাথে পরিচয় হই আয়। মুরব্বী মানুষ বসতে বললো আর তোরা চলে যাচ্ছিস! দেটস ব্যাড ম্যানার্স। (বিজ্ঞ ভাব নিয়ে বলে দিয়া)

~দিয়া ঠিকই বলেছে। বস বস। (দাত কেলিয়ে বলে স্নেহা)

কাব্য আর আহিল কটমট দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকাতেই ওরা যেনো চোখের ইশারায় জানিয়ে দিলো 'আমরা একা কেনো বসে বসে ওনাদের বকবকানি শুনবো? তোরাও শুন'। কাব্য আর আহিল আবারও নিজের জায়গায় বসতেই একজন মহিলা এগিয়ে এসে মেহেরের গালে হাত রেখে বলে,

~সুফিয়ানের পছন্দ আছে বলতে হবে। বউ দেখতে তো একদমই পুতুলের মত। (তাদের মধ্যে একজন বললো)

~ঠিক বলেছেন ভাবি। (পাশের দাড়িয়ে থাকা মহিলাটি)

দুজন একে ওপরের দিকে চেয়ে হেসে আবারো মেহেরকে উদ্দেশ্যে করে বললো,

আমাদের চিনো না নিশ্চয়। আমি রুদ্রর মায়ের মেঝ চাচার ছোট ছেলের বউ। আর ও (পাশের জনকে দেখিয়ে) রুদ্রর মায়ের ছোট চাচার একমাত্র ছেলের বউ।

বলেই ফের একবার একে ওপরের দিকে চেয়ে মুচকি হাসি দিল। মেহের ফ্যালফ্যাল করে দুজনের দিকে চেয়ে আছে। এমনি সম্পর্কের হিসেব মিলাতে কষ্ট হয় মেহেরের। আর আজকে প্রায় সবাই দেখি এভাবেই পরিচয় দিচ্ছে। কি এক ঝামেলা! ভুলে যদি ভাবির জায়গায় চাচী কিংবা চাচীর জায়গায় মামী ডেকেছে তাহলেই বাঁশ! মেহের করুন দৃষ্টিতে স্নেহার দিকে তাকায়। স্নেহাও তো এই পরিবারের ই বউ তাই ওর জানার কথা যে উনি সম্পর্কে কে হন। কিন্তু স্নেহাও বরাবরের মতোই উদাসীন চোখে মেহেরের দিকে চেয়ে আছে। মেহের ঘাড় ঘুরিয়ে দিয়া, আহিল আর কাব্যর দিয়ে তাকায়। ওরা বসে মিনমিন করে গবেষণা করে বের করার চেষ্টা করছে যে ওনারা সম্পর্কে কি হয়। মেহের এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মহিলা দুজনের দিকে তাকায়। তারা এখনও উৎসাহী দৃষ্টিতে মেহেরের দিকে চেয়ে আছে। মেহের এমন ভাবে এক হাসি দিয়ে সালাম দিলো যেনো সে বুঝতে পেরেছে যে তারা সম্পর্কে কি হয়। মহিলা দুজন খুশিতে গদগদ হয়ে স্নেহার দিকে চেয়ে বললেন,

তুমি তো এই বাড়ির বড় ছেলে তীব্রর বউ। তাই না? তোমাদের বিয়েতে এসেছিলাম, মনে আছে?

তাদের প্রশ্নতে স্নেহা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। বিয়ের দিন এমন এক দিন যাতে অনেক মানুষের ই দেখা মিলে। কে কার কি হয় তা মনে রাখা অসম্ভব এক কাজ বলে মনে করে স্নেহা। কিন্তু এখন কি জবাব দিবে ভেবে পায় না স্নেহা। অবশেষে সেও মেহেরের মত হেসে বললো,

আসসালামু আলাইকুম। হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই মনে আছে। তো? ভালো আছেন?

এবার যেনো তাদের চোখে আরো কয়েকগুণ খুশির ঝলক দেখা দিল। কাব্য, আহিল আর দিয়া জোরপূর্বক এক হাসি মুখে চেপে রেখেছে। মহিলা দুজন আরো কিছুক্ষণ কথা বলে তিথি আহমেদ এর কাছে চলে গেলো। তাদের যেতে দেখে ওরা এক স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। মেহের স্নেহার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জিজ্ঞেস করলো,

এই তুই না এই বাড়ির বউ?

~কোনও সন্দেহ আছে নাকি? (চোখ ছোট ছোট করে বলে স্নেহা)

~অবশ্যই সন্দেহ আছে। এই বাড়ির বউ হয়ে একটা মেহমান রেও চিনোস না তুই! বিয়ার দিন কি মেহমান রেখে খাবারের টেবিলের দিকে মনোযোগ দিয়া বইসা ছিলি নাকি তুই! (কাব্য)

কাব্যর কথায় স্নেহা চোখ মুখ কুচকে বলে,

আমি কি তোর মত বাকাশুর নাকি যে সারাক্ষণ খাবারের কথাই মাথায় ঘুরবে! তারা এখন যেমনভাবে পরিচয় দিয়ে গেলো তেমন ভাবেই আমার বিয়েতেও পরিচয় দিয়ে গেছে। আমি আজও মেলাতে পারি নি যে এরা আসলে সম্পর্কে কি হয়।

~থাক বাদ দে। এই ব্যাপারে তর্ক করে লাভ নেই। (আহিল)

সকলে এক সাথে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। মেহের ফের চারদিকে নজর ঘুরায় রুদ্রকে খুজার উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষন আগেও রুদ্র মেহেরের পাশে বসে মেহমানদের সাথে কথা বলছিল। হটাৎ দাড়িয়ে বললো যে তার একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে সে কিছুক্ষণের মধ্যেই আসবে। আয়মানকে চোখ দিয়ে ইশারা করে নিজের সাথে দিয়ে গেলো। তাও মেহেরের দৃষ্টিগোচর হয়নি কিন্তু ইশারায় কি বলেছে বুঝতে পারেনি মেহের। টানা কয়েক ঘন্টা এভাবে বসে থাকায় কোমর ব্যাথা করছে মেহেরের। স্নেহাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

আমার বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না। আমি একটু ঘুরে আসি?

~সারা বাড়িতেই মেহমান এর ছড়াছড়ি। যেদিকে যাবি সবাই ই ডেকে কথা জুড়ে বসবে। তাও যাবি?

~বাড়ি তো বিশাল বড়। বাড়িতে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে মেহমান যাবে না?

~উম... ওই দিকটা হয়তো এখন খালি আছে। ঐদিকে এমনিও গার্ড ছাড়া কেউ তেমন একটা কেউ যায় না। ওই দিকের জায়গাটা সুন্দর। আমি মাঝে মাঝে তোর ভাইয়াকে নিয়ে হাঁটা হাটি করি।

~আমরাও আসি? (আহিল)

~উহু। একটু একা থাকতে মন চাইছে। আপাতত মানুষজনের কোলাহল ভালো লাগছে না। দিয়া আর স্নেহার মেহেদি দেওয়া হলেই তোরা সবাই আসিস। আমি আগে যাই। (মেহের)

~আচ্ছা। (আহিল)

উঠে দাড়ায় মেহের। স্নেহার দিক নির্দেশনা অনুযায়ী পা চালায় সেদিকে। এইদিকটায় আসলেই কেউ নেই। গার্ডগুলোও কেমন গম্ভীর, একদম মূর্তির মত দাড়িয়ে আছে। মেহের চুপচাপ হেটে যেতে থাকে। হটাৎ কারো আর্তনাদ শুনে সেদিকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায় মেহের। বাড়ির পেছন দিকটায় এসে এমন দৃশ্য দেখবে ভাবতেও পারেনি মেহের।

.

মেহেরের সাথে ম্যাচিং করে পড়া হালকা গোলাপী রঙের পাঞ্জাবি তে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ, চেহারায় ফুটে উঠেছে হিংস্রতা। তারই বাড়িতে এসে তার প্রিয় মানুষের জীবন শেষ করতে চাইছিল ভাবতেই রাগ যেনো শির শির করে বেড়ে উঠে রুদ্রর। দূরেই গম্ভীর ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে আয়মান আর গার্ডরা। রক্তাক্ত অবস্থায় লোকটি থেমে থেমেই বলছে যে তার ভুল হয়ে গেছে। কিন্তু রুদ্র থামার পাত্র নয়। লোকটিকে পুনরায় রড দিয়ে আঘাত করতে নিতেই পেছন থেকে কারো চিৎকার শুনে ঘুরে দাঁড়ায় রুদ্র। চোখ বন্ধ করে কানে হাত চেপে দাড়িয়ে আছে মেহের। রুদ্র মেহেরকে দেখতেই হাতে থাকা রডটি ছুড়ে ফেলে দেয়। আয়মান গার্ডদের বলে লোকটিকে তাদের টর্চার হাউসে নিয়ে যেতে। মেহেদি পড়া হাতেই শক্ত হাতে নিজের লেহেঙ্গা চেপে ধরে মেহের। রুদ্র মেহেরের দিকে এগিয়ে আসতেই মেহের দ্রুত পায়ে কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। রুদ্র মেহেরকে ধরতে গেলেই মেহের অশ্রুসিক্ত নয়নে রুদ্রর রক্ত রাঙ্গা হাতের দিকে তাকায়। 

~তার মানে আপ আপনি স-সত্যিই মা-মাফিয়া? আয়মান ভাইয়া আপনিও তার সাথে জড়িত?

কাপা কাপা গলায় বলে মেহের। রুদ্র শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলতেই মেহের শব্দ করে কেঁদে উঠে।

~আমি-আমি আপনাকে বি-বিয়ে করবো না। কিছুতেই না। একজন গুন্ডার সাথে আমি কখনোই সংসার করতে পারবো না।

রুদ্রর মাথায় যেনো দপ করে আগুন জ্বলে উঠলো মেহেরের কথা শুনে। হাতে রক্ত থাকায় মেহেরকে ছুঁতে পারছে না রুদ্র, নাহলে যে মুখে রুদ্রকে ছাড়ার কথা বলেছে এতক্ষণে নির্দ্বিধায় কয়েকটা চড় বসিয়ে দিত।

~বিয়ে তো এই আমাকেই করতে হবে মেহেরজান। মোটেও বিয়ে ভাঙার কথা মাথায় এনো না। তবে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।

মেহের মাথা না বোধকে নাড়িয়ে পেছনে ঘুরে দৌড় দিতে নিতেই কারো সাথে ধাক্কা খায়। কান্নার কারণে সব ঘোলা দেখছে মেহের। চোখ পিটপিট করে সামনে থাকা মানুষটাকে দেখে যেনো ভরসার হাত দেখতে পায়। কান্নার পরিমাণও আরো দু গুন বেড়ে যায়। কান্না ভেজা গলায় বলে,

তী-ব্র ভাইয়া! আপনি জানেন উনি! উনি নাকি সত্যিই মাফিয়া। উনি... উনি খুব খারাপ। আমি মোটেও ওনাকে বিয়ে করবো না। আপনি বাবা আর মামনিকে বুঝিয়ে বলবেন? আমি ওনাকে বিয়ে করবো না।

ঠোঁট চেপে শীতল দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তীব্র। এমন একটা দিনের মুখোমুখি হতে হবে তা সে আগের থেকেই জানতো কিন্তু এতো জলদি এমন কিছু হবে তা তার ভাবনায়ও ছিল না। মৌনতা ভেঙে তীব্র জবাব দেয়,

আমি জানি মেহের। বোন আমার। তুমি প্লীজ রাগ করো না। রুদ্র খারাপ ছেলে নয়।

তীব্রর কথা শুনে মেহের যেনো আকাশ থেকে পড়লো। বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তীব্রর দিকে চেয়ে আবার ঘাড় ঘুরিয়ে রুদ্র আর আয়মান এর দিকে তাকায়। এই মানুষগুলোকে আজ বড্ড অপরিচিত লাগছে মেহেরের নিকট। কাছের মানুষ গুলোর এই রূপ যেনো মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে মেহেরের। মাথায় আর চাপ নিতে পারছে না মেহের। চোখ খুলে রাখা কষ্টকর হয়ে উঠছে। মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিতেই তীব্র এগিয়ে মেহেরকে ধরতে যায়। কিন্তু তার আগেই কাব্য আর আহিল এসে মেহেরকে দু দিক থেকে আগলে ধরে। কাব্য আর আহিল আগেই বলেছিল যে রুদ্র মাফিয়া জগতের একজন কিন্তু সেদিন স্নেহা অমত পোষণ করায় ওরা আর কিছুই বলেনি। দিয়া অবাক দৃষ্টিতে আয়মান এর দিকে তাকায়। আয়মান চুপ করে মাটির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে চেয়ে আছে। অন্যদিকে স্নেহাও নিশ্চুপ ভাবে তীব্রর দিকে চেয়ে আছে। তীব্র কিছু বলার জন্য এগিয়ে আসতেই স্নেহা থম থমে গলায় আহিল আর কাব্যকে বলে,

পেছনের দরজা দিয়ে মেহেরকে নিয়ে ঘরে চল আহিল। 

রুদ্র এখনও একই জায়গায় দাঁড়িয়ে নির্লিপ্তভাবে চেয়ে আছে মেহেরের দিকে। আহিল আর কাব্য রুদ্রর দিকে তাকাতেই রুদ্র মাথা নেড়ে সায় দেয়। আহিল দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে মেহেরকে কোলে তুলে দরজার দিকে পা বাড়ায়। আহিলের পিছু পিছু কাব্য, স্নেহা আর দিয়াও যায়।

~ডাক্তার কে ফোন করে দ্রুত আসতে বল মান। বাড়ির কাউকে এখন এই ব্যাপারে জানানোর প্রয়োজন নেই।

বলেই হন হন করে রুদ্র পেছনের দরজা দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে।

~~~

চলবে~

(এই যা! নায়িকা তো বিয়ে করবে না বলে জানিয়ে দিলো। এখন উপায়?)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ২৩

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 23


🍂🍂🍂


অনুষ্ঠানের জন্য রেডী হয়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় সকলের দৃষ্টি মেহেরের দিকে আবদ্ধ হয়। গোলাপি রঙের লেহেঙ্গা, হালকা মেকআপ আর গায়ে জুয়েলারি। রুদ্রর ভারী মেকআপ পছন্দ নয় বলেই মেহেরকে তেমন গর্জিয়াস ভাবে সাজায়নি। মেহেরের এই সিম্পল লুকটিই সবার পছন্দ বেশ হয়। রুদ্র মুগ্ধ দৃষ্টিতে তার রুদ্রাণীর দিকে চেয়ে থাকে। তীব্র আর আয়মান রুদ্রকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রুদ্রর কাছে এগিয়ে টিজ করতে শুরু করে। রুদ্র ওদের দিকে চেয়ে মাথা চুলকে হেসে দেয়। মেহেরের দিকে এগিয়ে গিয়ে মেহেরকে নিয়ে স্টেজ এ বসতেই অনুষ্ঠান শুরু হয়। সবার আগে রুদ্র মেহেদি নিয়ে মেহেরের হাতে ছোট করে নিজের নাম লিখে দেয়। এর পর মেহেদি আর্টিস্টরা মেহেরকে মেহেদি দিতে শুরু করে। প্রায় সব মেয়েরাই একে একে মেহেদি লাগাতে শুরু করে। আহিল, কাব্য, স্নেহা, দিয়া আর রুদ্র বসে গালে হাত দিয়ে বসে মেহেরের মেহেদি দেওয়া দেখতে থাকে। পাশাপাশি মেহেরের বন্ধুদের আড্ডা তো আছেই। তীব্র আর আয়মান মাইক নিয়ে কথা বলতেই সকলে তাদের দিকে তাকায়। তীব্র হেসে কিছু কথা বলে আয়মান আর দিয়া কে নাচার জন্য ডাকতেই আয়মান আর দিয়া ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। দিয়া অপ্রস্তুত হয়ে জোরপূর্বক হেসে তীব্রর কাছে যেয়ে মিনমিনে স্বরে বলে,

ভাইয়া আপনি পাগল হয়ে গেছেন! এই বাঁদরের সাথে আমি নাচবো! উনি আদৌ নাচতে পারে কিনা সন্দেহ। দেখা গেলো নাচতে গিয়ে পড়ে পরে আমার কোমর ভেঙে দিল।

আয়মান চোখ ছোট ছোট করে দিয়ার দিকে চেয়ে বলে,

ভাইয়া এই পিচ্চির সাথে আমি মোটেও নাচবো না। এ তো আমার হাঁটুর সমান। আমার সাথে নাচতে গেলে একে তো কেউ দেখতেই পাবে না।

~আমি মোটেও পিচ্চী নই। (গাল ফুলিয়ে বলে দিয়া)

তীব্র একবার দিয়া তো একবার আয়মানের দিকে তাকাচ্ছে। এদের নাচের জায়গায় ঝগড়া দেখে কেউ কেউ না বুঝে দুর থেকে ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে আবার কাছাকাছি থাকার ফলে কেউ কেউ ওদের কথা শুনে হাসছে। ভ্রু কুঁচকে চেয়ে থাকা দলগুলোর মধ্যে রুদ্র, মেহের আর ওর বন্ধুরাও আছে। তীব্র এবার এক ধমক দিয়ে বলে,

নাম এনাউন্স করা হয় গেছে। আমি গান প্লে করছি তোরা নাচ শুরু কর।

দিয়া কাদো কাদো মুখ করে তীব্রর দিকে তাকাতেই তীব্র বলে,

মেহের না তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড? ও অবশ্যই আসা করেছে যে তোমরা সব বন্ধুবান্ধব ওর বিয়ে তে নাচ গান করবে? আর রুদ্রও অবশ্যই চেয়েছে যে তার মানও তার বিয়েতে নাচবে। তোরা দুইজনই বর আর কনের বেস্ট ফ্রেন্ড। তবে?

দিয়া আর আয়মান বুঝতে পেরে মাথা নেড়ে সায় দিতেই তীব্র হেসে বলে, 

ওকে আমি গান প্লে করছি যেয়ে।

দিয়া আর আয়মান 'লুঙ্গি ড্যান্স' আর 'উচি হে বিল্ডিং' গানে নাচে। এরপর তীব্র আর স্নেহা একটি রোমান্টিক গান নাচে। আয়মান আর কাব্য "কালা চাশমা' আর 'দিল চোরি সাড্ডা' গানে নাচে। পরবর্তীতে কাব্য, আহিল, দিয়া আর স্নেহা মিলে 'জোর কা ঝাটকা' গানে নাচতে শুরু করে। এই গানে নাচতে দেখে রুদ্র বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে চেয়ে থাকে। রুদ্রর রিয়েকশন দেখে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলেই মুখ চেপে হাসতে থাকে। এক পর্যায়ে তীব্র আর আয়মান গড়াগড়ি খেয়ে হাসতে থাকে। নাচ শেষ হতেই মেহেরের বন্ধুরা স্টেজ এ আসতেই রুদ্র সাথে সাথে প্রশ্ন করে,

গান টা কে সিলেক্ট করেছে? আইডিয়া টা কার ছিল?

রুদ্রর ঠান্ডা স্বরে ধমক শুনেই তীব্র আর আয়মান হাসি থামিয়ে সোজা হয়ে বসে পড়ে। ধমক খেয়ে স্নেহা গড়গড় করে বলে দেয় যে এটা তীব্রর আইডিয়া ছিল। তীব্রর দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকাতেই তীব্র জোরপূর্বক হাসি দেয়। মেহের ফিসফিস করে রুদ্রকে বলে,

বিয়ে শাদি তে এই রকম দুষ্টুমি চলেই। এত রাগার কি আছে? আপনি প্লীজ ঠান্ডা হন।

মেহেরের কথা শুনে রুদ্র ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ছাড়ে। তীব্রর দিকে চেয়ে বলে,

তুমি অনেক ফাজিল ভাইয়া। আমার বউকে ভাগানোর প্ল্যান করো!

তীব্র হেসে বলে,

এখন তুই গান গাইবি। (তীব্র)

~মোটেও না। (রুদ্র)

~অবশ্যই হ্যাঁ। (তীব্র)

~উনি গান পারেন? (মেহের)

~স্যার অনেক ভালো গান করেন। (আয়মান)

~সত্যি? আপনি গান গাইবেন? (মেহের)

~না (নির্লিপ্তভাবে বলে রুদ্র)

~গান না প্লীজ

চোখ পিটপিট করে তাকায় মেহের। রুদ্র মেহেরের দিকে চেয়ে আলতো হাসে। হাসির মানে বুঝতে পেরেই তীব্র আর আয়মান রুদ্রকে গান গাওয়ার জন্য আহ্বান করে। আয়মান একটা গিটার এনে দিতেই রুদ্র গিটারে সুর তুলে গান শুরু করে,


Teri saanson ki saans mein

Jo hoon toh main hoon

Tere khwabon ki aanch mein

Jo hoon toh main hoon


Tere hone se hi mera hona hai

Tujhko khona jaise khudko khona

Tu jo hai toh main hoon

Yun jo hai toh main hoon

Tu jo hai toh main hoon

Yun jo hai toh main hoon

 

(বাকি টুকু নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন 😒)

পুরোটা গান রুদ্র মেহেরের দিকে চেয়েই গায়। মেহের রুদ্রর গান শুনে অনেক ভালো লাগে কিন্তু রুদ্রর চাহনি তে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে মাটির দিকে চেয়ে থাকে। গান শেষ হতেই চারদিক থেকে করতালির আর শিষের আওয়াজ এ মুখরিত হতে থাকে।রুদ্র একজন গার্ড এর হাতে গিটার দিয়ে মেহেরের সাথে যেয়ে বসে। তীব্র মাইকে সারপ্রাইজ ড্যান্স এর এনাউন্স করতে সবাই সেদিকে চেয়ে থাকে। গান শুরু হতেই দেখা যায় তীব্র, আয়মান, রেদোয়ান, তিথি, মেহরিশ, মেহেরের নানা - নানি, স্নেহা, কাব্য, আহিল, আর দিয়া 'গাল্লা গুরিয়ান' গানে নাচে। রুদ্র আর মেহের অবাক হয়ে ওদের নাচ দেখে। মেহের তার মা আর নানা - নানীর দিকে দৃষ্টি স্থির করে। এর আগে কখনোই তাদের এতটা খুশি হতে দেখেনি মেহের। মেহেরের এই বিয়েতে যে তারা কতটা খুশি তা উপলদ্ধি করতেই মেহেরের ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে।

~~~

চলবে~


(রিচেক করা হয়নি আজকে। ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ২২

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 22


🍂🍂🍂


আড়মোড়া দিয়ে ঘুম থেকে উঠে সামনে রুদ্রকে দাড়িয়ে থাকতে দেখেই একদফা অবাক হয় মেহের। রুদ্র দরজার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাড়িয়ে আছে। অবাকতার রেশ কাটিয়ে উঠতেই রুদ্রকে প্রশ্ন করে,

আপনি এখানে কি করছেন?

মেহেরের কথা কর্ণকুহর হতেই রুদ্র ঘাড় ঘুরিয়ে মেহেরের দিকে তাকায়। রুদ্র পাল্টা প্রশ্ন করে,

মাথা ব্যাথা কমেছে?

~হুঁ

~তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি সার্ভেন্ট কে বলছি খাবার পাঠাতে। তোমার ঘুমের কারণে তো দুপুরে লাঞ্চ করা হয়নি।

মেহের মাথা নাড়িয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে রুদ্র মাথা চেপে সোফায় বসে আছে। একজন সার্ভেন্ট ছোট টেবিলটায় খাবার সার্ভ করছে আর একজন তার সাথে দাড়িয়ে আছে। মেহেরকে দেখে রুদ্র তার পাশে বসতে ইশারা করলেই মেহের চুপচাপ যেয়ে রুদ্রর সাথে বসে। খাবার সার্ভ করার পর সার্ভেন্ট কে ইশারা করতেই তারা চলে যান। দুটো প্লেট এ খাবার দেখে মেহের জিজ্ঞেস করে,

আপনি দুপুরে লাঞ্চ করেননি?

~উহু

~কেনো?

~তোমার সাথে খেতে ইচ্ছে করছিল তাই।

মেহের এক তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে খাবার নিয়ে খেতে শুরু করে। খাওয়া শেষে একজন সার্ভেন্ট এসে সব নিয়ে যায়। মেহের গালে হাত দিয়ে চোখ পিটপিট করে তাদের দিকে চেয়ে তাদের কাজ দেখতে থাকে। ওদের যাওয়ার সময়ও মেহের হা করে ওদের দিকেই চেয়ে থাকে। সকলের চোখেই রুদ্রর জন্য ভয় দৃশ্যমান এতক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে তাই বুঝলো মেহের।

~মেহেরজান!

শান্তকণ্ঠে ডেকে উঠে রুদ্র। রুদ্রর কণ্ঠ শুনতেই মেহের যেনো স্তব্দ হয়ে গেলো। রুদ্রর এভাবে ডেকে উঠলে কেমন যেনো এক মিশ্রঅনুভূতি হয় যা মেহেরের কাছে একদম নতুন। রুদ্র আবারো  ডাক দিতেই মেহের লম্বা এক শ্বাস নিয়ে রুদ্রর দিকে ঘুরে বসে। মাটির দিকে কতক্ষন চেয়ে থেকে জিভ দিয়ে নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে রুদ্র এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। চোখ তুলে মেহেরের দিকে করুন চোখে চেয়ে বলে,

একটু জড়িয়ে ধরবে প্লীজ।

রুদ্রর এমন আবেদন শুনে মেহের এর দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এই মুহূর্তে কি বলা উচিত ভেবে পায় না মেহের, শুধু ফ্যালফ্যাল করে রুদ্রর দিকে চেয়ে থাকে। মেহেরের উত্তরের অপেক্ষা না করেই রুদ্র পরম স্নেহে মেহেরকে জড়িয়ে ধরে। মেহের বিপরীতে জড়িয়ে ধরে না, থম মেরে বসে থাকে। রুদ্রর বুকের ডিপডিপ শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে মেহের। খুব দ্রুত বেগে তার হার্ট বিট করছে। আচ্ছা রুদ্র কি কিছু নিয়ে চিন্তিত? কিংবা কোনো কারণে ভয় পাচ্ছে? অকারণে তো কারো হার্ট এত দ্রুত বিট করে না। হাজারো প্রশ্ন মেহেরের মনে উদয় হচ্ছে কিন্তু তা আর জিজ্ঞেস করার সাহস করে না মেহের। মেহেরকে ছেড়ে রুদ্র মেহেরের গাল আর গলার মাঝ বরাবর দু হাত রাখে। রুদ্রর চোখে পানি চিকচিক করছে তা স্পষ্ট দেখতে পায় মেহের। প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে রুদ্রর দিকে। রুদ্র এক তপ্ত শ্বাস ত্যাগ করে কাপা কাপা গলায় বলে,

আমি যতদিন বেঁচে আছি তোমার কিছু হতে দেবো না মেহেরজান। তুমি আমার প্রাণভোমরা, আমার মায়াবতী, #আমার_রুদ্রাণী। তোমাকে আমার থেকে আল্লাহ ব্যতীত কেউ দুর করতে পারবে না মেহেরজান।

এমন অনেক কথাই রুদ্র বলতে থাকে। বলতে বলতেই এক ফোঁটা পানি রুদ্রর চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে। মেহের আজ অবাকের ওপর অবাক হচ্ছে। রুদ্র কান্না করছে! ছেলে মানুষের কান্না কখনো দেখেছে বলে এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না মেহেরের। ছেলেরা তো খুব সহজে কাদে না তবে কি এমন হয়েছে যার জন্য রুদ্র কান্না করছে? সে কি জিজ্ঞেস করবে? যদি বকা দেয়? দিলে দিবে কিন্তু তার এখন জানা খুব জরুরী যে কি এমন হয়েছে যার কারণে রুদ্র কান্না করছে। মেহের কাপা কাপা হাতে রুদ্রর চোখের পানি মুছে দিতেই রুদ্র চোখ বন্ধ করে তার মেহেরজানের ছোঁয়া অনুভব করে। চোখ খুলে মেহেরের দিকে তাকাতেই মেহের প্রশ্ন করে,

আপনি কাদছেন কেনো? কিছু কি হয়েছে?

রুদ্র উত্তরে শুধু এতটুকুই বলে,

বিয়ের পর সব প্রশ্নের জবাব দিবে।

মেহেরকে কপাল কুঁচকে চেয়ে থাকতে দেখে রুদ্র আলতো হেসে মেহেরের নাক টেনে বলে,

~পিচ্চি একটা।

~আমি মোটেও পিচ্চি না।

~আমার জন্য তুমি পিচ্চি ই।

বলে আবারো গা দুলিয়ে হাসে রুদ্র।

~হুঁ? লোকটাকে কি জ্বিনে টিনে ধরলো নাকি! একটু আগে কান্না করছিল এখন আবার হিহি করে হাসছে! শেষ মেষ মা আমাকে এই জ্বীনে ভর করে ছেলের সাথে বিয়ে দিচ্ছে না তো। আয়হায়! এখন আমার কি হবে।

মাটিতে পায়ের নখ ঘষতে ঘষতে ভাবতে থাকে মেহের। রুদ্র মেহেরের দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে বলে,

উদ্ভট চিন্তা মাথা থেকে নামাও। আমাকে কোনো জ্বীনে ধরেনি। পিচ্চি একটা।

মেহের আবারো অবাক হয়ে তাকায়। কি করে বুঝলো যে ও কি ভাবছে। মেহেরের দিকে চেয়ে কিছুক্ষণ থেমে আবারো বলে,

একটু পর পার্লার থেকে মানুষ আসবে তোমাকে রেডী করতে। ততক্ষণে তুমি রেস্ট নাও।

বলেই মেহেরের মাথায় ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় রুদ্র। রুদ্র যেতেই দিয়া, আহিল, কাব্য আর স্নেহা ঘরে আসে। ওরা এসে মেহেরের কাছে আজকে ওরা সারাদিনে কি কি করেছে, মেহের ঘুমিয়ে থাকার কারণে কি কি মিস করেছে সব বলতে শুরু করলে মেহেরও গালে হাত দিয়ে মনোযোগী শ্রোতার মত সব শুনতে থাকে।


🍂🍂🍂


ছাদে একজন গার্ড এসে রুদ্রকে কিছু একটা বলতেই রুদ্র গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

অনুষ্ঠান এর পর আমি আসবো। তত পর্যন্ত ওকে আটকে রাখবে। কিছুতেই যেনো পালাতে না পারে। বি কেয়ারফুল।

~জ্বি স্যার।

রুদ্র ইশারা করতেই গার্ডটি চলে যায়। রুদ্র ঘাড় ঘুরিয়ে আবারো আকাশের দিকে চোখ নিবদ্ধ করে। বিড়বিড় করে বলে,

আমার রুদ্রানির দিকে যেই হাত বাড়াবে তার অস্তিত্ব এই পৃথিবী থেকে বিলীন করে দিবো আমি। অনেক সাধনার পর আমার রুদ্রানিকে আমার করে পাচ্ছি আমি। আর হারাতে দিবো না ওকে।

~~~

চলবে~

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ২১

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 21


🍂🍂🍂


গাড়ি চলছে আহমেদ ভিলার উদ্দেশ্যে। সকলে বেশ উৎফুল্ল হয়ে আড্ডা দিলেও মেহের চুপ করে চোখ বন্ধকরে সিটে মাথা হেলিয়ে বসে আছে। সারাদিন ঘরে একা থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়ে গেছে। ২ দিন যাবত এত গান বাজনা চিৎকার চেঁচামেচি তার বিরক্তির অন্যতম কারণ মনে হচ্ছে এখন। আহমেদ ভিলার সামনে গাড়ি থামতেই একে একে সবাই নেমে পড়ে। মেহের সবার শেষে নেমে একবার মাথা তুলে বাড়ির দিকে চোখ বুলায়। কি সুন্দর করেই বিভিন্ন লাইটিং আর ফুল দিয়ে সেজে উঠেছে আহমেদ ভিলা। মেহের কতক্ষন চেয়ে থেকে আবারো মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে বাড়ির ভেতরের দিকে হেঁটে যায়। দরজায় পৌঁছাতেই সামনে কাউকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে চোখ তুলে ব্যক্তিটির দিকে তাকায়। তিথি আহমেদ আর স্নেহা হাসি হাসি মুখে মেহেরের জন্য দাড়িয়ে ছিলেন এতক্ষণ। চোখ মুখ দেখলে কোনো কানাও এই মুহূর্তে বলতে পারবে যে উনি এই বিয়েতে বেজায় খুশি। মেহেরের গালে হাত রেগে বলে,

কেমন আছে আমার মেয়েটা? আসতে সমস্যা হয়নি তো?

~জ্বি আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। আসতে কোনো সমস্যা হয়নি। আপনি কেমন আছে? (মুচকি হেসে প্রশ্ন করে মেহের)

~আমিও ভালো আছি। (তিথি)

~দেখি দেখি সরো সবাই। আমার মেয়ে এসেছে। সরো সরো।

বলতে বলতে সকলকে সরিয়ে এগিয়ে আসেন রেদোয়ান।

~আসসালামু ওয়ালাইকুম আংকেল। কেমন আছেন? (মেহের)

রেদোয়ান জবাব না দিয়ে ডানে বামে খুঁজতে থাকে। নাহ! সে ব্যতীত এদিকে ওনার বয়সী অন্য কাউকে দেখছেন না। আংকেল কাকে বললো তবে? ভ্রু কুঁচকে মেহেরকে জিজ্ঞেস করে,

কাকে জিজ্ঞেস করলি রে মা?

বলে আবারো ডানে বামে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চারদিকে চোখ বুলান। রেদোয়ানের প্রশ্নতে মেহের থতমত খেয়ে যায়।

~আপনাকে (মেহের)

মেহের এর জবাবে রেদোয়ান বিস্ফোরক দৃষ্টিতে মেহেরের দিকে চেয়ে থাকে। মেহের করুন দৃষ্টিতে একবার তিথি আহমেদ তো একবার রেদোয়ান এর দিকে তাকায়। আরেকবার সকলের দিকে চোখ বুলায়। সবাই যে মেহেরের মতই কিছু বুঝতে পারেনি তা সবার চোখ মুখের ভঙ্গিতেই বুঝা যাচ্ছে। শুধু মাত্র তিথি আর স্নেহা ই স্বাভাবিক ভাবে দাড়িয়ে আছে। মেহের ভাবে সে ভুল কিছু বললো কি না। মেহের এবার অপ্রস্তুত হয়ে তিথিকে জিজ্ঞেস করে,

আমি কি কিছু ভুল বলেছি আন্টি?

তিথি এবার দু কদম পিছিয়ে আরো বিস্ময়ের দৃষ্টিতে মেহেরের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। মেহের এবার কেঁদে দিবে দিবে ভাব। রেদোয়ান আহমেদ অবাক স্বরে বলে,

আমরা তোর আংকেল আন্টি হলাম কবে?

মেহের এবার বুঝতে পারে যে সে কি ভুল করেছে। তারা তাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসলেও মেহের এখনও তাদের ঐভাবে ডাকেনি। মেহের মাথা নিচু করে দুজনের হাত ধরে মিনমিনে গলায় বলে,

তোমরা রাগ না করলে মামনি আর বা... বাবা বলে ডাকি?

তিথি আর রেদোয়ান দুজনের মুখেই হাসি ফুটে ওঠে। রেদোয়ান মেহেরের মাথায় এক হাত রেখে বলে,

দেখো মেয়ের কথা! মেয়ে বাবা বলে ডাকলে রাগ করবো কেনো? উল্টো খুশি হয়েছি আমি।

~আমি বুঝি কেউ না? (মুখ ফুলিয়ে বলে স্নেহা)

রেদোয়ান হেসে বলে,

তুই তো আমার বড় মেয়ে। আর মেহের আমার ছোট মেয়ে।

মেহের মুচকি হেসে তিথির দিকে তাকাতেই উনি কোমরে হাত রেখে বলেন,

হ্যাঁ ৩ বাপ ঝি মিলে বাড়ির বাইরেই থাকো। বাড়ির ভেতরে আর যাওয়া লাগবে না। মেয়েটাকে এখন পর্যন্ত বাইরে দাড় করিয়ে রেখেছে। সরো তো!

.

মেহের বাড়ির ভেতরে এসে সোফায় বসে সবার সাথে টুকটাক কথা বলছিল। সবার নজর সিড়ির দিকে দেখে মেহেরও সকলের দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাকায়। এলো মেলো চুল, ঘুমুঘুমু চোখ, চেহারায় একরাশ গম্ভীরতা, একটা কালো আর সাদার সংমিশ্রণে টিশার্ট আর ট্রাউজার পড়ে, মেহেরের দিকে দৃষ্টি রেখেই ধীর পায়ে ওদের দিকেই আসছে রুদ্র। রুদ্রকে আসতে দেখে তিথি স্নেহা আর তীব্রকে সবার রুম দেখিয়ে দিতে বলে নিজেও রান্নাঘরের দিকে চলে যান। ওরাও সকলকে ঘর দেখিয়ে দেওয়ার জন্য সেখান থেকে চলে যেতে থাকে। মেহের উঠে স্নেহাদের পেছনে যেতে নিতেই রুদ্র সোফায় বসে মেহেরের হাত টেনে ধরে জিজ্ঞেস করে,

কই যাও?

মেহের ঘুরে রুদ্রর দিকে তাকায়। শুষ্ক ঢোক গিলে চারদিকে তাকায়। এতক্ষণ মানুষে ভরপুর থাকা জায়গাটায় এখন দু একজন কাজের লোক আর বডিগার্ড ছাড়া কেউ নেই এইদিকে।

~আব... স্নেহাদের সাথে।

~কেনো?

~মামনি স্নেহাকে বললো তো ঘর দেখিয়ে দিতে।

~হ্যা তো?

~তো আমি না গেলে আমার ঘর কোনটা জানবো কিভাবে?

~আমি আছি না! আমি দেখিয়ে দিবো নে।

~আ... আচ্ছা।

মেহের মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আড়চোখে বার বার রুদ্রর দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু রুদ্র তো গালে হাত দিয়ে সোজা মেহেরের দিকেই চেয়ে আছে। রুদ্র উঠে দাড়িয়ে একজনকে ফোন করে। কথা শুনেই বুঝা যায় যে সে আয়মানকে ফোন করেছে।

মান! মেহেরজানের কথা কেউ জিজ্ঞেস করলে জানিয়ে দিবে সে এখন ঘুমাচ্ছে। কেউ যেনো ডিস্টার্ব না করে।

মেহের ভ্রু কুচকে চেয়ে আছে রুদ্রর দিকে। সে এখন জেগে আছে তাও একদম বাড়ির মাঝ বরাবর দাড়িয়ে আর সে কিনা আয়মান কে বলতে বলছে কেউ জিজ্ঞেস করলে যেনো বলে সে ঘুমিয়ে! এখন হাজার মাথা ব্যথা করলেও ঘুমানো যাবে না। মেহমানরা কি ভাববে! বউ এসেই ঘুমিয়ে আছে! ইশ!!!

~চলো

~কোথায়?

~গেলেই দেখতে পাবে।

বলেই মেহেরকে টানতে টানতে ঐদিনের সেই কর্নার এর রুমটিতে নিয়ে যায়। ঐদিনের মত আজও এইদিকে কোনো মানুষ নেই। ঘরে ঢুকেই মেহের সারা ঘরে চোখ বুলায়। এখন বুঝতে পারে যে সে গতবার স্নেহার না বরং রুদ্রর ঘরে এসেছিলো। তাইতো রুদ্র বলেছিল "আমার ঘরে আমি না থাকলে আর কে থাকতো?" গতবার তাড়াহুড়ায় মেহের ঘরের দিকে ঠিক মত খেয়াল ই করেনি। ওয়াশরুম দেখতেই সেদিকে দৌড় চলে গিয়েছিল। একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারতো এটা রুদ্রর ঘর। কেননা রুদর ঘরে বিছানার ওপরের দেয়ালে রুদ্রর মস্ত বড় একটা ছবি টাঙানো। মেহের মনে মনে নিজেকে কয়েকটা অসাব্র গালি দেয়। আগে ঠিক মত খেয়াল করলে আর ওইদিন রুদ্রর হাতে ধরাই পড়তো না। মেহের আরেকটু এগিয়ে যেতে খাটের পাশে দাড়িয়ে ছবিটি মনোযোগ দিয়ে দেখে বুঝতে পারে রুদ্রর ছবিটি মেহেরের অনেকগুলো ছবি দিয়ে তৈরি। মেহের অবাক হয়ে কতক্ষন ছবিটির দিকে চেয়ে থাকে। বেশিরভাগ ছবিই ক্যান্ডিড আর এইসব ছবি মেহের কখনোই তুলেনি। তবে এইসব ছবি উনি কোথায় পেলো? ভাবতেই মেহেরের মাথা চক্কর দিয়ে উঠছে। 

~পছন্দ হয়েছে?

রুদ্রর কণ্ঠ শুনে মেহের পেছনে ঘুরে তাকায়। রুদ্রর প্রশ্নর জবাব না দিয়ে উকি দিয়ে দরজার দিকে একবার তাকাতেই ভ্রু কুঁচকে আসে মেহেরের।

দরজা লক করেছেন কেনো?

~তোমার সাথে প্রেম করবো বলে।

রুদ্রর কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকায় মেহের। মেহের এর  এই লুক দেখে রুদ্র ফিক করে হেসে দেয়। মেহেরের নাক টেনে বলে,

কিউট এর বস্তা একটা।

মেহের মুখ ফুলিয়ে তাকাতেই রুদ্রর আবারো গা দুলিয়ে হাসে। পুনরায় জিজ্ঞেস করে,

ঘর পছন্দ হয়েছে? 

মেহের আরেকবার ঘরে নজর বুলায়। ঘরের প্রায় জিনিসই সাদা আর কালোর কম্বিনেশনের, বেশির ভাগই সাদা রঙের। রুদ্রর ঘরটা বেশ বড়,ঘরের দেয়াল গুলো সাদা রঙের, রুমের মাঝেই খাট, হাতের বাম পাশে আলমারি, ড্রেসিং টেবিল আর ওয়াশরুমের দরজা। খাটের ডান পাশে একটা বুকশেলফ যাতে নানান ধরনের বই রয়েছে, বুক সেলফ এর পাশের দেওয়ালটি একটি জানালা রয়েছে, প্রতিটি দরজা জানালায় সাদা রঙের ফিনফিনে পাতলা পর্দা বিদ্যমান, জানালার কাছের পর্দাটা মৃদু বাতাসে থেকে থেকেই উড়ছে, ঐদিকে একটা দরজা রয়েছে যা দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে এটি বারান্দার দরজা, রুদ্রর পিছনের দেওয়ালের ঐদিকে একটা সোফা যাতে মেহের চাইলেই অনায়াসে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়তে পারবে, সোফার ওপরের দেওয়ালে রুদ্রর, আহমেদ পরিবারের সবার সাথে এবং মেহেরের ও বিভিন্ন ছবি রয়েছে। ঘরটা আসলেই বেশ পছন্দ হয়েছে মেহেরের। মেহের মুগ্ধ হয়ে সারা ঘর দেখতে থাকে।

বিয়ের পর থেকে এখানেই থাকবে তুমি। একচুয়ালি বিয়ের পর না তুমি আজকে থেকেই এখানে থাকবে।

~আমি এখানে থাকলে আপনি কোথায় থাকবেন?

~কেনো! তোমার সাথেই থাকবো।

~কিহ! আপনি ভুলে গেছেন আমাদের এখনও বিয়ে হয়নি!

~হ্যা তো?

~হ্যাঁ তো মানে! আমি মোটেও বিয়ের আগে আপনার সাথে এক ঘরে থাকবো না।

~তোমার কি মনে হয়? আমি থাকবো? পাগল একটা! আমি মজা করছিলাম। আমি পাশের ঘরটাতে থাকবো আজকে।

মেহের একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। লোকটা যেই পাগল! দেখা যেত সত্যিই ওর সাথে এই ঘরে আছে।

~তোমার নিশ্চিত মাথা ব্যাথা করছে? তুমি ঘুমাও। কিছু লাগলে আমাকে বা বাড়ির কাউকে জানিয়ে দিও। ঠিকাছে? আমি আসছি। টেক কেয়ার।

বলেই মেহেরের কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে চলে যায়। মেহের তার যাওয়ার দিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। আসলেই তার ভীষণ মাথা ব্যাথা করছিলো। রুদ্র কি করে বুঝলো? পরে জানা যাবে আপাতত মেহের নিজের ঘুমকেই প্রাধান্য দেওয়া বেশি জরুরি মনে করলো। সকল চিন্তা এক সাইডে রেখে ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়।

~~~

চলবে~

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ২০

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 20


🍂🍂🍂


আয়নার সামনে আনমনে বসে আছে মেহের। গায়ে হলুদ রঙের শাড়ি, ফুলের তৈরি গহনা আর মুখে হালকা মেকআপ। পাশেই দিয়া, আহিল আর কাব্য দাড়িয়ে মেহেরকে আজ কতটা সুন্দর লাগছে তার প্রশংসা করে করে মেহেরের মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার অবস্থা। মেহের নানা নানি এসে মেহেরকে দেখে গেছে এবং তারাও অনেক প্রশংসা করে গেছেন মেহেরের। মেহের শুধু মুচকি হেসে সবার কথা শুনে গেছে।

আরে আন্টি! আসুন না।

দিয়ার কথায় সন্ধি পায় মেহের। আয়নায় দেখে মেহেরের মা ঘরে প্রবেশ করছেন। মেহরিশ টলমলে দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে চেয়ে থেকেই এগিয়ে আসেন। মেহের উঠে মায়ের কাছে এগিয়ে যায়। আলতো হাতে মায়ের গাল ছুঁতেই এক ফোঁটা অশ্রু গাল বেয়ে পরে। মেহের পরম যত্নে মায়ের চোখের পানি মুছে দেয়। হাজার কষ্ট হলেও নিজের কান্না মাকে কখনোই দেখাতে চায় না মেহের। হালকা হেসে বলে,

কাদছো কেনো? নিজেই তো ছেলে খুঁজে এনে বললে বিয়ে করতে। এখন আবার এত কান্নাকাটি কিসের?

মেহরিশ কান্নাভেজা গলায় বলে,

সব মা ই চায় তার মেয়ে সুখে সংসার করুক। বিদায় দিতে কষ্ট হবে বলে কি বিয়ে দেয় না কেউ?

মায়ের কথায় মেহের খিল খিল করে হেসে উঠে। মাকে জড়িয়ে ধরেই বলে,

বিদায়? কিসের বিদায়? বিদায় কাকে বলে? আমি কি মরে যাচ্ছি? কবরে রেখে আসছো? না তো! এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি যাচ্ছি। তবে বিদায় কিসের? এই বাড়িতে প্রায়ই আসা যাওয়া হবে, রোজ ফোনে কথা হবে, তোমার তো খুশি হওয়ার কথা যে এত দিন একটা মেয়ে ছিল এখন আবার একটা ছেলেও পাচ্ছো।

~তোর নানা নানি তোকে এইসব বলে গেছে তাই না? তোর কান্না থামানোর জন্য তারা এইসব বলে বুঝ দিয়েছে এখন তুই আমার কাছে কপি পেস্ট করে আমার কান্না থামানোর চেষ্টা করছিস না! আর কিসব অলুক্ষণে কথা বলছিস! মরা, কবর এইসব কি! মা বাবা তো তোকে এইসব বলেনি আমি জানি।

মেহের আবারো হাসে। মা এর বকা দেওয়া যেনো এখন তার কাছে ভারি মজার বিষয় মনে হচ্ছে। হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাওয়ার মত হাসতে থাকে। আহিল, কাব্য, দিয়া, মেহরিশ সকলেই অবাক হয়ে মেহেরের দিকে চেয়ে থাকে। মেহের মাকে ছেড়ে হাসতে হাসতে খাটে যেয়ে বসে। চোখ বন্ধ করে লম্বা এক শ্বাস নেয়। চোখ খুলে অশ্রুসিক্ত দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকায়,

তোমাদের বকাগুলো খুব মিস করবো মা। আগে বিরক্ত লাগলেও আজ এইসব কিছু উপভোগ করছি ভীষণভাবে।

মেহরিশ মেয়েকে জড়িয়ে ধরতেই মা মেয়ে এক সাথে কেঁদে উঠে। আহিল, কাব্য আর দিয়ার চোখেও পানি টলমল করছে। স্নেহা হাসি হাসি মুখে এক লাফ দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে বলে,

কি হচ্ছে এখানে? সবার চোখে পানি কেনো?

মেহেরকে ছেড়ে মেহরিশ বলেন,

তোরা এসে গেছিস।

~হুঁ। সবাই নিচে অপেক্ষা করছে। চলো নিচে যাই।

~আমি আগে যাচ্ছি। তোরা আয়।

~আচ্ছা (দিয়া)

.

কিছুক্ষণ পর মেহেরকে নিয়ে স্টেজ এ যায় সবাই। সব রিচুয়াল এক সাথে হবে বলেই জানায় রুদ্র। বরাবরের মতই কেউ আর মানা করতে পারে না। হলুদ আর বিয়ে মেহেরের বাড়িতে হলেও মেহেদী - সঙ্গীত ও রিসেপশন রুদ্রর বাড়িতেই হবে। মেহেরকে দেখেই রুদ্র এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। হার্টবিট ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। রুদ্র মুচকি হেসে মেহেরের দিকে এগিয়ে যায়। মেহেরের সামনে হাত বাড়াতেই মেহের চোখ তুলে একবার রুদ্রর দিকে তাকায়। চারদিকে হইহুল্লোড় শুরু করে সকলে। মেহের লজ্জা পেয়ে হাত বাড়িয়ে দেয়। মেহের যেয়ে স্টেজ এ বসতেই রুদ্র মেহেরের কানে ফিসফিসিয়ে বলে,

এত মায়াবতী হতে কে বলেছিল তোমায়! আজ তোমায় দেখে হার্ট এ্যাটাক না করে বসি মেহেরজান।

রুদ্রর কথা শুনে মেহের মাথা নিচু করে বসে থাকে। রুদ্র হেসে উঠে। হলুদ এর অনুষ্ঠান শুরু হয়। সবার আগে রুদ্রকে মেহের আর মেহেরকে হলুদ লাগায় রুদ্র। তার এক কথা তার বউকে সবার আগে সেই হলুদ লাগাবে। মেহেরের তখন লজ্জায় জান যায় যায় অবস্থা। চারদিকে আরেকদফা হইহুল্লোড় শুরু হয়। হলুদের পাশাপাশি নাচ গান তো আছেই। রাত প্রায় ২ টার দিকে অনুষ্ঠান শেষ হয়। তাও রুদ্র বলায়। কেননা কালকে সঙ্গীত আর মেহেদী এর অনুষ্ঠান। এখন সকলেরই বিশ্রাম দরকার, বিশেষ করে মেহেরের। 


🍂🍂🍂


সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে মেহেরের। পিটপিট করে চোখ খুলে মায়ের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে,

শুভ সকাল মা।

~শুভ সকাল। দ্রুত উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে আয়। এর পর আরো নিয়ম বাকি আছে আছে সেগুলো পূরণ করতে হবে। আর হ্যা দিয়া আর স্নেহাকেও ডেকে তোল। 

~হুঁ

মেহরিশ যেতেই মেহের ঘাড় ঘুরিয়ে দিয়া আর স্নেহার দিকে তাকায়। দিয়া কোলবালিশকে আর স্নেহা দিয়াকে জড়িয়ে ধরে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। মেহের আগে ফ্রেশ হয়ে এসে ওদের ডাক দেয়। স্নেহা আড়মোড়া দিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসতেই দরজায় আহিল আর কাব্য নক করে।

~উঠেছিস তোরা? (আহিল)

~হ্যাঁ। ভেতরে আয়। (মেহের)

~দিয়া উঠেছে? (ঘরে প্রবেশ করতে করতে বলে কাব্য)

~না এখনও ঘুমাচ্ছে। (স্নেহা)

~দাড়া ওকে উঠাচ্ছি। ও আল্লাহ গো ভুউউউউত!!!(কাব্য)

কাব্যর চিৎকার শুনে দিয়া ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে নিজেও 'ভুত ভুত' বলে চিৎকার করতে থাকে। আহিল, কাব্য, স্নেহা আর মেহের কতক্ষন দিয়ার দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। তারপর একে ওপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে সবাই এক সাথে হেসে উঠে। কাব্য আর আহিলের তো হাসতে হাসতে প্রায় গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্হা। দিয়ার ঘুমের রেশ কাটতেই বুঝতে পারে যে কাব্য ওর সাথে প্রাঙ্ক করেছে। 

~শয়তান পোলা!!! আজ তোর একদিন কি আমার চব্বিশ ঘণ্টা 

বলেই দিয়া কাব্যর কে ধাওয়া করে। অনেকক্ষণ দৌড়াদৌড়ির পর মেহেরের ধমক খেয়ে কাব্য চুপ করে বসে আর দিয়া কাব্যর মাথায় এক গাট্টা মেরে মুখ ভেংচি দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

সকালে নাস্তা করে বাকি রিচুয়াল পূরণ করার পর আয়মান আর তীব্র নিতে এলেই সকলে আহমেদ ভিলায় যাওয়ার জন্য রওনা দেয়।

~~~

চলবে~

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ১৯

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 19


🍂🍂🍂


বদ্ধঘরে হাত পা বাঁধা অবস্থায় বসে আছে একজন ব্যক্তি। চেহারায় ভয়ের রেশ বিদ্যমান, গায়ে বিভিন্ন স্থানে ক্ষত চিহ্ন, মাথা ফেটে গাল বেয়ে পড়ছে তাজা রক্ত। চিৎকার করে আর্তনাদ করছে কিন্তু এই চিৎকার আদৌ এই ঘরের বাইরে যাচ্ছে কিনা জানা নেই। হাত জোড় করে নিজের প্রাণ ভিক্ষা চাইতেই তার সামনের চেয়ারে বসে থাকা ব্যক্তিটি ভয়ংকরভাবে হেসে উঠে। থমথমে পরিবেশে তার এমন এক হাসিতে লোকটির মনে থাকা ভয়ের পরিমাণ যেনো আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে গেলো। লোকটি প্রাণ বাঁচানোর জন্য পুনরায় বললো,

ক্ষমা করে দিন স্যার, আর কখনো এমন কিছু করবো না। দয়া করে আমাকে যেতে দিন।

বুকে স্বজোরে এক লাথি পড়তেই লোকটি ছিটকে চেয়ারসহ মাটিতে মুখথুবড়ে পড়ে। রুদ্রর পাশেই দাড়িয়ে থাকা গার্ড দুজনকে ইশারা করতেই তারা লোকটিকে তুলে আবার সোজা করে, হাত পায়ের বাঁধন খুলে চেয়ারে বসায়। রুদ্র এবার একটা হাতুড়ি নিয়ে বসে। তা দেখেই যেনো লোকটির অন্তর আত্মা কেপে উঠে। মাথা দিয়ে বার বার না বুঝাচ্ছে। লোকটির চোখে ভয় দেখে রুদ্র বাকা হেসে বলে,

শেষ বারের মত প্রশ্ন করছি। কে পাঠিয়েছে তোকে?

লোকটি আবারো না বোধকে মাথা নেড়ে বোঝায় যে সে বলবে না। এতে রুদ্র আরো রেগে যায়। পাশের ছোট টেবিলটিতে লোকটির এক হাত রেখে হাতুড়ি দিয়ে স্বজরে আঘাত করতেই লোকটি বিকট শব্দে চিৎকার করে উঠে। আবার আঘাত করতে নিতেই লোকটি মিনতির সুরে বলে,

বলছি, ব-বলছি। মারবেন না বলছি আমি।

~বল

~ শ-শরীফ মির্জা। উনি, উনি আমাকে বলেছিল তীব্র আহমেদ এর গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট করাতে। 

নাম শুনেই রুদ্রর হাসি যেনো আরো প্রশস্ত হয়। আয়মানের দিকে তাকাতেই আয়মান বলে,

বিয়ের আগে খবর নিবেন নাকি বিয়ের পর স্যার?

~বিয়ের আগে খবর চাই। আর বিয়ের পর স্বশরীরে শরীফ মির্জাকে আমার সামনে চাই। 

রুদ্রর কথা শুনে মাথা নাড়ায় আয়মান। রুদ্র লোকটির দিকে আবারো ঘুরে বসতেই লোকটি হাত জোর করে বলে,

আমি তো সব বলেছি। এবার আমাকে যেতে দিন স্যার। আমি আর কখনও আপনাদের সামনে আসবো না।

লোকটির কথায় রুদ্র হাসে। ঘাড় কাত করে বলে,

হুঁ বলেছিস এর জন্য মাফ করলাম। কিন্তু....

লোকটি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই রুদ্র পুনরায় হেসে বলে,

এতক্ষণ মার খেলি নাম না বলার জন্য। এখনও আরেক হিসাব বাকি। আমার ভাই কে মারার সাহস কি করে হয় তোর!!!

শেষের কথাটি চিৎকার করে বলেই গার্ড এর হাত থেকে একটু রড নিয়ে লোকটিকে মারতে থাকে।

আমার ভাই কে মারার জন্য এই হাত দিয়ে টাকা নিয়েছিলি না তুই!

বলেই হাত ভেঙে ফেলে। পরবর্তীতে পায়ে স্বজোরে আঘাত করতে থাকে আর বলে,

এই পা, এই পা এ ভর করেই তো আমার ভাইকে মারার জন্য এগিয়ে এসেছিলি। তাই না!

বলেই আবারো আঘাত করতে থাকে। লোকটির আর্তনাদ সারাঘরে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।

রুদ্রর থেকে কিছুটা দূরেই দাড়িয়ে আছে আয়মান আর তীব্র। তীব্রকে মেরেছে দেখে এই কয়েকদিনে আয়মান বেশ কয়েকবার মেরেছে এই লোককে তাতেও যেনো তার রাগ কমেনি। কিন্তু আজ রুদ্রর মার দেওয়া দেখে বেচারার নিজেরই খারাপ লাগছে। পর মুহূর্তেই ভাবে 'ঠিকই করছে রুদ্র, আহমেদ পরিবারের দিকে হাত বাড়ানোর সাহস কি করে হয়'। অন্যদিকে তীব্র দাড়িয়ে কি করবে ভাবছে। এইমুহুর্তে ছোট ভাই এর হিংস্র রূপ দেখে তার নিজেরই ভয় লাগছে। তীব্র অ্যাকসিডেন্ট করে যেই ব্যাথা পেয়েছি তার থেকে তিনগুণ কষ্ট এই লোককে অলরেডী দিয়ে দিয়েছে রুদ্র। এমনিও এখানে এসে লোকটিকে আধমরা অবস্থায় পেয়েছে তারা কারণ আয়মান খুব মার মেরেছে লোকটিকে। এখন রুদ্রর মার দেখে মনে হচ্ছে লোকটি নির্ঘাত মনে মনে বলছে 'এত যন্ত্রণার থেকে মৃত্যু অনেক বেশি আরামদায়ক'।

তীব্র এবার রুদ্রর থেকে চোখ সরিয়ে আয়মান এর দিকে তাকায়। আয়মানকে এমন ভাবলেসহীন ভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তীব্র বিড়বিড় করে বলে,

আজ বুঝলাম আয়মান কেনো রুদ্রর এত প্রিয় পাত্র। এই জন্যই ও রুদ্রর পি এ হতে পেরেছে। যেমন বস তার এমন পি এ, দুটোই ডেঞ্জারাস। বাপ রে বাপ!

তীব্র দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আয়মানের দিকে এগিয়ে দাড়াতেই আয়মান তীব্রর দিকে চেয়ে ভ্রু নাচায়। এর অর্থ 'কি হয়েছে'। তীব্র ভ্রু কুচকে বলে,

আরেকটু মার খেলে তো বেচারা পটল তুলবে।

~পটল না তুলে কুমড়ো তুলুক। আপনি এত টেনশন নিচ্ছেন কেন! রিলাক্স মুডে দেখুন শুধু। বেটার সাহস কি করে হয় আপনাকে মারার চেষ্টা করার।

চোখ মুখ গম্ভীর করে বলে আয়মান। আয়মানের কথা শুনে কপাল চাপড়ায় তীব্র। আয়মান ভ্রু কুচকে চেয়ে থাকে তীব্রর দিকে।

~রুদ্রর সাথে থেকে থেকে তুইও বেশ ঘাড়ত্যাড়া হয়ে যাচ্ছিস। আরে বেটা যা না ওকে আটকা। যথেষ্ট শাস্তি দিয়েছে। মাফ করতে বল এখন।

~আপনি আসলেই স্যার এর ভাই! আমি পারলে যেয়ে উল্টো আরো হাতে হাতে কয়েক ঘা বসিয়ে আসি আর আপনি বলছেন ওনাকে আটকাতে! আমি মোটেও যাবো না।

মুখ ফুলিয়ে বলে আয়মান। আয়মান এর চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে এখন ভীষণ হতাশ। লোকটিকে শাস্তি দিতে না পেরে তার আফসোস এর শেষ নেই। তীব্র বুঝলো আয়মান কে বোঝানো মানে এখন বালুতে পানি ঢালার সমান। আয়মান আর রুদ্র যে তীব্রকে অনেক ভালোবাসে এতে সন্দেহ নেই তীব্রর। কিন্তু এতে যে একটা মানুষের প্রাণ যাচ্ছে তা মানতে নারাজ সে। আয়মান এর দিকে চেয়ে মিনমিন করে,

রুদ্রর লেজ একটা!

বলেই তীব্র রুদ্রর দিকে এগিয়ে যায়। রুদ্র এখনও লোকটিকে মারছে দেখে শুকনো ঢোক গিলে তীব্র রুদ্রর কাধে হাত রাখে। রুদ্র এক ঝাড়া দিয়ে হাত সরিয়ে দিলে তীব্র আবারো হাত রাখে। রুদ্র রেগে ঘুরে তাকাতেই তীব্র জোরপূর্বক হেসে বলে,

বেচারাকে আর কত মারবি ভাই! মাফ করে দে একে। দেখ অলরেডী আধমরা হয়ে গেছে। আরো মারলে মরেই যাবে। ছেড়ে দে না ওকে।

তীব্রর অনেক বুঝানোর পর রুদ্র আর আয়মান লোকটিকে ছাড়তে রাজি হয়। রুদ্র গার্ডদের দিয়ে লোকটিকে হাসপাতালে পাঠায়।

.

গাড়ি চলছে আপন গতিতে। মাঝ রাস্তায় হটাৎ রুদ্র ড্রাইভার এর উদ্দেশ্যে বলে,

গাড়ি মেহেরজান এর বাড়ির দিকে ঘুরাও। মান তুই বাড়ি যেয়ে একটা গাড়ি আমার জন্য মেহেরজানের বাড়িতে পাঠিয়ে দিস। তোর আসা লাগবে না, বাড়িতে রেস্ট নিস। আর ভাইয়াও রেস্ট নিও যেয়ে।

তীব্র প্রশ্ন করে,

কেনো? মেহেরের বাড়ি কেনো? এখন আবার সেখানে কি কাজ?

~তুমি তোমার বউ এর কাছে কেনো যাও? অবশ্যই দেশের রাজনৈতিক ঝামেলা নিয়ে গবেষনা করতে যাও না।

তীব্রর আড় চোখে চেয়ে থাকে। রুদ্র সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে সিটে মাথা ঠেকিয়ে মুচকি হেসে বলে,

মুড প্রচন্ড খারাপ। মুড ফ্রেশ করতে যাচ্ছি।

~ওওওওওও...।

বলে তীব্রও মুচকি হেসে জানালার বাহিরে তাকায়।


🍂🍂🍂


খাটে আধশোয়া হয়ে মনোযোগ দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের লেখা "ময়ূরাক্ষী" বইটি পড়ছে মেহের। হটাৎ কেউ ঝড়ের বেগে এসে মেহেরের কোলে মাথা রাখতেই মেহের হকচকিয়ে যায়। পরে কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকা মানুষটির দিকে তাকাতেই কপাল কুঁচকে তাকায় মেহের।

~আপনি এখন, এখানে কি করছেন?

~মুড ফ্রেশ করছি

~মানে কি?

~বড্ড বেশি কথা বলো তুমি মেহেরজান। রেস্ট নিতে দাও।

বলেই আবারো মেহেরের পেটে মুখ গুজে শুয়ে পড়ে। মেহের কতক্ষন হা হয়ে চেয়ে থাকে। পরমুহূর্তেই রেগে বলে,

সরুন। বই পড়ছি দেখছেন না! রেস্ট নিতে হলে বাড়ি যান। আপনার আহমেদ ভিলা কি কম বড় নাকি যে আমার ঘরে এসে রেস্ট নেওয়া লাগছে আপনার! যান আপনার ঘরে যেয়ে রেস্ট নিন। আমাকে ছাড়ুন। আমি বই পড়বো।

~ওই বাড়ি অবশ্যই বড়। কিন্তু বউ তো আমার এই বাড়িতে। তাই আমিও এখানেই। বাই দ্যা ওয়ে আরেকবার ছাড়তে বললে ডিরেক্ট তোমার প্রিয় বই এ আগুন লাগিয়ে দিবো বললাম।

মেহের সাথে বই বন্ধ করে বালিশের নীচে লুকায়। রুদ্র মেহেরের পেটে মুখ গুজেই হেসে দেয়। মেহের আলতো হাতে রুদ্রর চুলের ভাঁজে আঙুল চালাতে চালাতে বলে,

কি হয়েছে আপনার?

~মাথাটা ভীষণ ব্যাথা করছে।

~কফি খাবেন?

~তুমি বানাবে?

~ছাড়ুন আমি নিয়ে আসছি।

রুদ্র উঠে বসে। মেহের কফি বানানোর জন্য কিচেন এ যায়। কফি নিয়ে ঘরে এসে দেখে রুদ্র ঘরে দেই। বারান্দা থেকে দোলনার আওয়াজ পেতেই বুঝতে পারে রুদ্র সেখানেই আছে। বারান্দায় এসে দেখে রুদ্র দোলনায় বসে বাইরের দিকে চেয়ে বাড়ি সাজানো দেখছে। মেহের গিয়ে রুদ্রর পাশে দাঁড়াতেই রুদ্র মেহেরের হাত থেকে কফি মগ টা নিয়ে তাতে এক চুমুক দেয়। চোখের ইশারায় মেহেরকে পাশে বসতে বললে মেহেরও বাধ্য মেয়ের মত রুদ্র পাশে বসে। রুদ্র কফি খাওয়া শেষ করে মেহেরের দিকে চেয়ে এক প্রাণবন্ত হাসি দেয়। রুদ্রর চোখ মুখ দেখেই বুঝতে পারছে যে কফিটা রুদ্রর ভালো লেগেছে। হাসি বজায় রেখেই রুদ্র বলে,

এত ভালো কফি বানানো কোথা থেকে শিখেছো?

~নিজ থেকেই শিখেছি।

~বিয়ের পর রোজ সকাল বিকেল আমার তোমার হাতে বানানো কফি চাই।

~আর কোনো আবদার?

~আপাতত এটাই। রুদ্রানী...

মায়াভরা কণ্ঠে ডেকে উঠে রুদ্র। মেহের রুদ্রর দিকে তাকায়। রুদ্র মেহেরের কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে বলে,

বড্ড বেশি ভালোবাসি তোমার। তোমাতে আসক্ত আমি। কখনো বলবো না যে আমার মত ভালোবাসো না কেনো তুমি আমায়। তুমি শুধু আমার হয়ে থেকো তাতেই আমি খুশি।

উত্তরে মেহের কিছুই বলে না। মানুষটার প্রতি মেহের ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে তা মেহের নিজেও বুঝতে পারছে। রুদ্র মাথা তুলে মেহেরের দিকে তাকায়। 

~আর মাত্র ২ দিন। তারপর তুমি আমার। একান্তই #আমার_রুদ্রাণী।

বলেই নিঃশব্দে হাসে রুদ্র। মেহেরের গেলে হাত রেখে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বলে,

আমার হবু স্ত্রীর খেয়াল রেখ, আসছি।

রুদ্র উঠে চলে যেতে নিলেই মেহের রুদ্রর হাত ধরে আটকায়। রুদ্র জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই মেহের ধীর গলায় বলে,

সাবধানে যাবেন। নিজের খেয়াল রাখবেন।

রুদ্র কিছুক্ষণ মেহেরের দিকে চেয়ে থাকে। তারপর ঠোঁটের হাসি আরো চওড়া করে বলে,

অবশ্যই।

মেহের বারান্দায় দাড়িয়ে রুদ্রর যাওয়া দেখে। গাড়িতে উঠার সময় রুদ্র একবার বারান্দার দিকে তাকায়। মেহের এখনও রুদ্রর দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ রেখে দাঁড়িয়ে আছে। রুদ্র ফ্লায়িং কিস দেখাতেই মেহের অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে চেয়ে থাকে। পরমুহূর্তেই লজ্জা রাঙ্গা এক হাসি দেয়। রুদ্রর গাড়ি দৃষ্টিসীমার বাহিরে যাওয়া পর্যন্ত মেহের দাড়িয়ে থাকে। রুদ্রর কথা মনে হতেই একরাশ ভালো লাগা মনের মাঝে ছেয়ে যায়। মেহের হাসিমুখে ঘরের দিকে পা বাড়ায়।

~~~

চলবে~

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ১৮

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 18


🍂🍂🍂


~কিছু বলবে?

বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশের দিকে দৃষ্টি রেখেই প্রশ্ন করে মেহের। মেহেরের প্রশ্নতে নড়েচড়ে দাড়ায় মিসেস মেহরিশ। সিঙ্গেল মাদার হওয়ায় মেহেরকে চেয়েও খুব একটা সময় দিতে পারেননি। সারাক্ষণ রেস্টুরেন্ট এর কাজে ব্যস্ত ছিলেন। দিনে দিনে যে মেয়েটা কেমন চুপচাপ আর একরোখা স্বভাবের হয়ে উঠেছে তাও যেনো খেয়াল করার সময় পাননি তিনি। সময়ের সাথে ধীরে ধীরে মা মেয়ের মাঝে বেড়ে উঠেছে দূরত্ব। আদৌ কি এই দূরত্ব ঘুচবে? এই প্রশ্ন প্রায়শই তার মনে উদয় হয়। মেহরিশ লম্বা শ্বাস নিয়ে মেয়ের পাশে যেয়ে দাড়ায়। সেও দৃষ্টি আকাশেই স্থির করে। মেহের আবারো জিজ্ঞেস করে,

মন খারাপ নাকি?

~আমার মেয়েটা যে এত বড় হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। ২ দিন পর স্বামীর বাড়ি চলে যাবি। সময় কত দ্রুত যায়।

~আজ খেয়াল করলে নাকি? (হেসে বলে মেহের)

~কাজের চাপে তেমনটা খেয়াল করার সুযোগই পাইনি।

মেহের এবার ঘাড় ঘুরিয়ে মায়ের দিকে তাকায়। ছোট থেকেই মায়ের সাথে খুব একটা সময় কাটানোর সুযোগ পায়নি মেহের। প্রয়োজন ছাড়া তেমন কথাও বলে না। বাবা যাওয়ার পর থেকে মাও কেমন পরিবর্তন হয়ে গেছে। মেহের বুঝে সে যেনো ভালো থাকে তাই ই তার মা এত কাজ করতো। ধরা গলায় মেহের জিজ্ঞেস করে,

আমি চলে গেলে কাদবে না?

ছলছল নয়নে মেয়ের দিকে তাকায় মেহরিশ। তিনি বলেন,

রুদ্রর সাথে বিয়ে দেওয়ায় কি তুই আমার প্রতি রাগ? রুদ্র খুব ভালো ছেলে। পাশাপাশি ওর পরিবারও খুব ভালো। ওরা সবাই তোকে খুব ভালোবাসে মেহের।

~জানি। আমার মা আমার জন্য খারাপ কাউকে পছন্দ করবে না। তোমার প্রতি আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে।

মেহরিশ উত্তরে কিছুই বলে না। মেয়ের কথায় যেনো তার মনে এক প্রকার শান্তি অনুভব হচ্ছে এখন। মেহের কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,

২ দিন পর তো চলেই যাব। তোমার কোলে মাথা রেখে একটু শুতে দিবে মা?

মেহরিশ মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে দোলনায় বসে। মেহের কোলে মাথা দিয়ে শুতেই তিনি মেহেরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। মেহের চোখ বন্ধ করে আলতো হাসে। কিছুক্ষণ পর গল্পের ঝুড়ি নিয়ে বসে মায়ের সাথে। মেহের কখনো চোখ ছোট করে তো কখনো চোখ বড় করে, হাত নেড়ে নেড়ে একেক কথা বলতে বলতেই খিলখিল করে হেসে উঠে আর মেহরিশ মেহের কথা মনযোগ দিয়ে শুনছে।


🍂🍂🍂


গালে হাত দিয়ে বসে আছে তীব্র। সামনেই রুদ্র ভ্রু কুঁচকে ল্যাপটপে কাজ করছে। আয়মানও ফাইল হাতে নিয়ে রুদ্রর সাথে বসে কাজ করছে। তীব্র একবার আয়মানের দিকে তো একবার রুদ্রর দিকে তাকাচ্ছে। বিরক্ত হয়ে ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে তীব্র। করুন স্বরে বলে উঠে,

এতো কি কাজ করিস রে ভাই? আমিই এতো বিরক্ত হচ্ছি। মেহের বেচারি তোরে বিয়ে করে তো পরে আফসোসে কপাল ঠুকবে। সামনে যে আমি একটা জলজ্যান্ত মানুষ বসে আছি তাকে কোনো দামই দিচ্ছিস না।

ফাইলের দিকে দৃষ্টি রেখেই আয়মান হেসে দেয়। রুদ্র চোখ তুলে একবার তীব্রর দিকে তাকায়। আবারো লাপটপের দিকে চেয়ে কাজ করতে করতেই বলে,

তোমাকে সেই কখন বলেছি ঘুমাতে? রেস্ট না নিয়ে আমাদের দিকে চেয়ে থাকতে বলেছে কেউ?

~সারাদিন কেউ ঘুমাতে পারে! সেই কবের থেকে শুধু রেস্টই নিচ্ছি। তোর ধমক খেয়ে ঘুমাবো ভেবে আমার বউ টাও আমার বাপের মত মীরজাফরগিরি করে তোর কাছে রেখে যেয়ে মা এর সাথে আড্ডা দিচ্ছে।

আয়মান এবার হূ হা করে হেসে উঠে। রুদ্রও ফিক করে হেসে দিয়ে আবার গলা খাকারি দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

তো কি করতে চাইছো এখন? অসুস্থ হয়ে রেস্ট না নিলে কি করতে বলবে কেউ তোমায়?

~ছোট ভাই এর বিয়ে। কই আমি নেচে নেচে ঘুরে বেড়াবো তা না। একজন ফাইল হাতে বসে আছে, আরেকজন ল্যাপটপ হাতে আর আমাকে এমন ভাবে ঘরে বসিয়ে রেখেছে যেনো আমার হাতে না পায়ে ব্যাথা। আরে বাবা হাতের ব্যাথাও তো সেরে গেছে। এখন তো যে কাউকে বেধরম কেলানিও দিতে পারবো।

রুদ্র গালে হাত দিয়ে তীব্রর কপালের ব্যান্ডেজ এর দিকে নজর বুলায়। হাতের ব্যান্ডেজ খুলে ফেলা হয়েছে গতকালই। রুদ্র এখন কি বলবে টা শুনার জন্য তীব্র আর আয়মান দুজনই উৎসুক দৃষ্টিতে রুদ্রর দিকে চেয়ে আছে। রুদ্র বাকা হেসে বলে,

চলো।

~কোথায়? (তীব্র)

~ঐযে বললে কাউকে বেধরম কেলানি দিবে। ইচ্ছে অপূর্ণ রাখতে নেই। চলো পূরণ করে আসি। (রুদ্র)

রুদ্রর কথা শুনে আয়মান শুকনো ঢোক গিলে। ওর বুঝতে বেগ পেতে হয়নি যে আজকে কারো কপালে শনি - রবি - সোম সব একসাথে লেগে গেছে। রুদ্রর গম্ভীর কণ্ঠে ধ্যান ভাঙে তার,

কি হলো মান! চলো। 

~জ্বী স্যার।


🍂🍂🍂


একতলা বিশিষ্ট একটি বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই গাড়ি থেকে নেমে দাড়ায় রুদ্র, আয়মান আর তীব্র। এক নজর তীব্র আর আয়মান এর দিকে চেয়ে বাড়িটির ভেতর প্রবেশ করে রুদ্র। তার পেছন পেছন আয়মান আর তীব্রও বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।

~~~

চলবে~