গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ১০

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 10


🍂🍂🍂


তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পাশে বসে থাকা রুদ্রকে পর্যবেক্ষন করছে মেহের। কিছুক্ষণ আগে যে মেহেরের করা প্রশ্নটি আদৌ রুদ্র কানে শুনেছে কিনা বুঝতে পারছে না মেহের। কেননা রুদ্র আগের মতোই বসে আছে, দৃষ্টি তার দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক জোড়া কপোত - কপোতীর দিকে। মেহেরও রুদ্রর দৃষ্টি অনুসরন করে সেদিকে তাকায়। দেখতে পায়, মেয়েটি হয়তো কোনো এক কারণে রাগ করে আছে আর ছেলেটি কানে ধরে উঠবস করে তার প্রেয়সীর রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছে। মেয়েটিও আর বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারে না বলে হেসে দেয়। প্রেয়সীর রাগ ভেঙেছে দেখে ছেলেটিও হেসে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে আর মেয়েটিও তার প্রেমিক পুরুষটির বুকে মুখ গুজে দাড়িয়ে থাকে। কি মুগ্ধকর এক দৃশ্য। ওদের দেখে রুদ্র আনমনেই হেসে উঠে। মেহের এখনও ওদের দিকে এক ধ্যানে চেয়ে আছে। এমন ভালোবাসা আজকাল খুব কমই দেখা যায়। রুদ্র মুচকি হেসে মেহেরের চেয়ে থাকে। তারপর রুদ্র বলে,

এত কি দেখছো? নজর লেগে যাবে তো।

রুদ্রর কথায় মেহেরের ধ্যান ভাঙে। রুদ্র এই মুহূর্তে কি বললো তা বুঝতে মেহেরের ছোট্ট মস্তিষ্ক কয়েক সেকেন্ড সময় নিলো। বুঝে উঠতেই যেনো মেহের তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। রাগী সুরে জিজ্ঞেস করলো,

কেনো? নজর লাগবে কেন? আমি কি ওদের বাজে দৃষ্টিতে দেখছিলাম নাকি!

~তো কি করছিলে?

~ভাবছিলাম।

~কি ভাবছিলে?

~আজকাল এমন ভালোবাসা খুব কমই দেখা যায়! কি সুন্দর করে ছেলেটি মেয়েটির রাগ ভাঙাচ্ছিল। ইশ! কত্ত  কিউট লাগছিল দুজনকে।

~তোমারও কি এমন কাউকে চাই নাকি?

~অবশ্যই চাই। এমন ভালোবাসা কে না চায়? এই একটা জিনিসই তো মানুষকে হাসি খুশি ভাবে বেচেঁ থাকার আশা দেয়। সবাই ই চায় যে তাদের প্রিয় মানুষ তাদের রাগ অভিমান বুঝুক, তারা রাগ করলে প্রিয় মানুষটি যেভাবেই হোক তার রাগ ভাঙাক।

মেহেরের দিকে রুদ্র এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। হটাৎ ই মেহের বলে উঠে,

একটু আগে যেই প্রশ্ন করলাম তার উত্তর দিন।

~কোন প্রশ্ন?

~ঐযে কালকে রাতে আপনিই ছিলেন কিনা।

~আমার আগমনের কারনে পার্টি হয়েছে আর আমি থাকবো না! আজব! তোমার সাথেও তো বৌমনি পরিচয় করিয়েছি। ভুলে গেলে? (বাঁকা হেসে বলে রুদ্র)

~উফফ!!! আমি তখনকার কথা বলছি না।

~তবে? 

~কাল রাতে দ্বিতীয় তলার ওই ঘরে আপনি ছিলেন। খবরদার মিথ্যে বলবেন না। আমি আপনার গায়ের ঘ্রাণ পেয়েছিলাম। (রুদ্রর দিকে আঙুল তাক করে বলে মেহের)

~আমার ঘরে আমি না থাকলে আর কে থাকতো? (ভাবলেশহীন ভাবে বলে রুদ্র)

রুদ্রর কথা শুনে মেহেরের চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। কিছুটা চিল্লিয়েই বলে,

তার মানে কাল রাতে অন্ধকারে ওই ঘরে আপনি ই ছিলেন!

~কেনো তখন অন্য কাউকে এক্সপেক্ট করেছিলে নাকি তুমি?

~ফাইজলামি বন্ধ করেন! আপনার সাহস কি করে হলো আমাকে ছোঁয়ার!

~সাহসটা জন্মগতভাবেই পেয়েছি। আর তোমাকে ছোঁয়ার জন্য আমার সাহস লাগবে কেনো? তুমি তো একান্তই আমার।

~আপনার মানে কি! আমি মোটেও আপনার নই। খবরদার আর কখনো আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করবেন না।

মেহেরের বলতে দেরি কিন্তু রুদ্রর মেহেরের হাত টেনে নিজের কাছে আনতে দেরি হয় না। মেহের আর রুদ্রর মধ্যে এতক্ষণ যথেষ্ট দূরত্ব থাকলেও এখন মেহের রুদ্রর গা ঘেসে বসে আছে। হটাৎ এমন করায় মেহের তাজ্জব বনে যায়। রুদ্র শান্ত ভাবেই বলে,

তুমি বললেই তো হলো না রুদ্রানী। চেয়েছিলাম তোমার কাছে খুব সহজে ধরা দিবো না। পরে ভাবলাম আমি তো তোমারই। তোমার কাছে নিজেকে গোপন রাখার মনে হয় বলো। এতে উল্টো তোমার থেকে দূরে থাকা লাগতো। তাই তো গটগট করে সব বলে দিলাম।

~ছাড়ুন বলছি। অসভ্য, বেহায়া লোক! বিনা অধিকারে এভাবে আমাকে ছোঁয়ার আপনার সাহস কি করে হলো! এভাবে ছোঁয়ার পারমিশন কে দিয়েছে আপনাকে! ছাড়ুন বলছি!!! (রুদ্রর হাত সরানোর চেষ্টা করতে করতে বলে মেহের।)

~ইশশ ইয়ার রুদ্রানি!!! তোমাকে ধরলেই এমন ছাড়ুন ছাড়ুন করো কেনো বলোতো! শুনো মেয়ে তোমার প্রতি এই রুদ্র ছাড়া আর কারো অধিকার নেই। কথা টা তোমার ছোট্ট মাথায় ঢুকিয়ে নাও। (হালকা হেসে বলে রুদ্র)

~আপনি বললেই হলো! আমার প্রতি আমার ভবিষ্যৎ স্বামীর অধিকার আছে। আপনার না বুঝলেন! সো আমাকে ছোঁয়ার অধিকার আপনার নেই। এই কথাটা আপনার অসভ্য মাথায় ঢুকিয়ে নিন। হুহ! (রেগে বলে মেহের)

~আমি ছাড়া অন্য কেউ তোমার স্বামী হওয়ার চেষ্টা করলে তার মৃত্যু নিশ্চিত মেহেরীন। ভুলেও আমি ব্যতীত অন্য কাউকে ওই নজরে দেখার চেষ্টা করবে না। তোমাকে কিছু না করলেও তোমার সামনেই ওদের *খুন* করবো বলে দিচ্ছি।

রুদ্রর কথা শুনে মেহের ভয় পেয়ে যায়। পরে করুন স্বরে বলে,

আপনি আমার সাথে এমন করছেন কেনো বলুন তো। আমাদের তো কালই প্রথম দেখা হলো। আপনি প্লীজ এমন করবেন না।(বলতে বলতেই মাথা নিচু করে কেঁদে দেয় মেহের)

~হুশশ!!! মেহেরজান। প্লীজ ডোন্ট ক্রাই। তুমি জানো না তুমি আমার জন্য কত্ত বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। তোমাকে আমার প্রয়োজন। খুব করে প্রয়োজন। জীবনে ভালো থাকতে হলে আমার তোমাকে চাই।

রুদ্রর কথা শুনে মেহের চোখ তুলে তাকাতেই রুদ্র মেহেরের চোখের পানি মুছে দিয়ে, মেহেরের দু গালে আলতো করে হাত রাখে। মিহি কণ্ঠে বলে,

তোমাকে কালকেই প্রথম দেখিনি আমি। অনেক আগে থেকে চিনি তোমায় আমি। তোমার অজান্তেই।

~কিভাবে?

~তা নাহয় বিয়ের পরেই জেনো। কোনো এক গোধূলি বিকেলে তোমার পাশে বসে সব বলবো তোমায়।

মুচকি হেসে বলে রুদ্র। মেহের রুদ্রর হাসি দেখে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। কি অমায়িক এই হাসি। কিন্তু লোকটা ভীষণ রগচটা স্বভাবের তা হারে হারে বুঝে গেছে মেহের। কিছুক্ষণ থেমে রুদ্র আবার বলে উঠে,

ইভান এর সাথে বেশি কথা বলবে না। ওর সাথে যেনো আর তোমাকে না দেখি। (হাত ঘড়ির দিকে এক নজর চেয়ে আবার মেহেরের দিকে তাকায়) এতক্ষণে হয়তো একটা ক্লাস শেষ। তুমি বরং বাকি ক্লাসগুলো করো যেয়ে। আমি আসি। নিজের খেয়াল রেখো।

বলেই মেহেরের কপালে হালকা ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়। এতে মেহের অবাক হয়ে তাকাতেই মাথা চুলকে চোখ এদিক সেদিক ঘুরিয়ে হেসে চলে যায় রুদ্র। আর রুদ্রর যাওয়ার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে মেহের। মনে মনে ভাবে,

লোকটা এমন কেনো? এই ভালো তো এই খারাপ। এনাকে বোঝা মুশকিল। আচ্ছা যাওয়ার সময় ওনার গালে কিছুটা লাল আভা ছড়িয়ে ছিল। উনি কি লজ্জা পাচ্ছিল? হয়তো।

ফোন unlock করে দেখে যে ইভান মেসেজ দিয়েছে জরুরি এক কাজে বাড়িতে চলে যেতে হয়েছে তাই সে নোটস নিয়ে আজকে আসতে পারছে না। ফোন ব্যাগ এ রেখে হাত ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারে আসলেই একটা ক্লাস শেষ হয়ে গেছে। মেহের এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে দ্বিতীয় ক্লাস এর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

~~~

চলবে?

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৯

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 9


🍂🍂🍂


মনে একরাশ ভয় আর চিন্তা নিয়ে সিড়ি দিয়ে দৌড়ে নীচে নামতে থাকে মেহের। নিচে নামতেই স্নেহার সাথে দেখা হয়। স্নেহা অনেকবার কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলেও মেহের জবাব দেয় না। দিয়ার সাথে আগে এই ব্যাপারে কথা বলে তবেই স্নেহাকে কিছু জানাবে বলে ঠিক করে মেহের। পার্টি শেষে সকলের থেকে বিদায় নিয়ে বাড়িতে চলে আসে ওরা।

.

সারা ঘরে পায়চারি করছে মেহের। ভ্রু কুচকে চিন্তা করতে থাকে সেই অচেনা লোকটির কথা। অনেক চিন্তার পরও খুঁজে বের করতে না পারায় হাল ছেড়ে দেয় মেহের। ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখে রাত ১ টা ৪৭ বাজে। এই সময় দিয়া জেগে আছে কিনা মেহেরের জানা নেই। তাও সাত পাঁচ না ভেবে কল দেয় দিয়া কে। প্রথম রিংয়েই কল রিসিভ হওয়ায় কিছুটা আশ্চর্য হয় মেহের।

~হ্যা বল মেহের।

~তুই এখনও জেগে আছিস! ঘুমাস নি কেন?

~ভাবছিলাম।

~কি ভাবছিলি?

~পার্টি তে কি কিছু হয়েছে মেহের? (শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করে দিয়া)

মেহের মনে মনে ভাবে, এই মেয়েটা মনের খবর বুঝে কিভাবে?

~এই চিন্তায় জেগে ছিলি? (মেহের)

~কথা ঘুরাস না মেহের। তুই ভালো মত জানিস যে তোর চেহারা দেখলেই আমি বুঝতে পারি তুই ভালো আছিস নাকি নেই। যদি না বুঝতে পারতাম তবে অবশ্যই একে ওপরের প্রিয় বন্ধু হতে পারতাম না তাইনা! জলদি বল কি হয়েছিল পার্টিতে?

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়া কে একে একে সব বলে মেহের। দিয়া মনোযোগ দিয়ে সব কথা শুনে। 

~তোর কি মনে হয় লোকটা কে হতে পারে?(দিয়া)

~নো আইডিয়া। কিন্তু এই টুকু বুঝতে পেরেছি লোকটা বড্ড অসভ্য। পরের বার সামনে পেলে কেলানি দিয়ে উগান্ডা পাঠাবো। কত্ত বড় সাহস আমাকে জড়িয়ে ধরে! (মুখ ফুলিয়ে বলে মেহের)

মেহের এর এমন কথা শুনে গম্ভীর মুহূর্তেও হেসে দেয় দিয়া।

~জানিস লোকটার যখন আমার কাছে ছিল তখন তার গায়ের থেকে মিষ্টি একটা ঘ্রাণ আসছিল। এই ঘ্রাণ টা এর আগেও পেয়েছিলাম হয়তো। কিন্তু মনে পড়ছে না। (ঠোঁট উল্টে বলে মেহের)

~চিন্তা করিস না। আমরা খুঁজে বের করবো। বেটাকে পেলে আচ্ছা করে ধোলাই দিয়ে দিবো। ঠিক আছে। (দিয়া)

~হুঁ, আচ্ছা শুন। বাকিদের এখন কিছু বলিস না। শুধু শুধু টেনশন করবে। স্নেহার বাড়িতে প্রথম গিয়েই এমন একটা সিটুয়েশন এ পড়েছি জানলে ওর মন খারাপ হবে। (মেহের)

~আচ্ছা মেহের ওই রুমটা কি এক্সাক্ট স্নেহার ছিল? 

~হয়তো। হয়তো না। (মিনমিন করে বলে মেহের)

মেহের এর কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে দিয়া,

আচ্ছা চিন্তা করিস না। ওই লোক তো বলেছেই আবার আসবে। আবার এলে একদম বেধে উত্তম মাধ্যম দিবো বেটাকে। এখন চিন্তা না করে ঘুমা।

~তুইও ঘুমা।

দিয়ার সাথে কথা বলা শেষে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে মেহের। বন্ধুত্ব ব্যাপারটাই এমন। হাজার দুশ্চিন্তার মাঝেও এদের সাথে এক মিনিট কথা বলতে পারলে মুহূর্তেই মন ভালো হয়ে হয়ে যায়।


🍂🍂🍂


ভার্সিটির মাঠে বসে আছে মেহের, দিয়া, আহিল আর কাব্য। স্নেহা এখনও না আসায় কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে বসে অপেক্ষা করছে ওরা। গালে হাত দিয়ে বিরক্তি ভঙ্গিতে বলে কাব্য,

ওই স্নেহার বাচ্চাটায় কখন আসবে রে? লেট লতিফ এর পদবীটা মনে হয় মেহেরের থেকে স্নেহা নির্দ্বিধায় ছিনিয়ে নিতে মাঠে নামছে।

কথাটা বলে হাসতে হাসতে মেহেরের দিকে তাকাতেই হাসি বন্ধ হয়ে যায় ওর। মেহের কটমট দৃষ্টিতে চেয়ে আছে কাব্যের দিকে। কাব্য জোর পূর্বক হেসে বলে,

খেপস কেন! তোরে লেট লতিফ এর পদ থেকে বহিষ্কৃত করায় তো তোর খুশি হওয়ার কথা।

কথা টা বলতেই ধুম করে এক কিল বসে কাব্যের পিঠে।

লেট লতিফ এর পদবী দিলেও মারে। আবার পদবী ফেরত নিলেও মারে। বাহুবলীর বইন জানি কোথাকার। 

কাব্যের কথা শুনে দিয়া আর আহিল খিল খিল করে হেসে উঠে। মেহের কাব্যকে মুখ ভেংচি দিয়ে অন্য দিকে তাকাতেই দেখে ইভান মুচকি হেসে তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। ইভান এসেই মেহেরের পাশে বসে। ভার্সিটির গেট দিয়ে তিনটি প্রাইভেট কার এক সাথে ঢুকতেই দিয়া সহ অনেকেই সেদিকে তাকায়। প্রথম আর তৃতীয় গাড়ি থেকে কত গুলো কালো পোশাক পরিহিত লোক বের হয়। দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনারা বডিগার্ড। মাঝের গাড়িটি থেকে প্রথমেই স্নেহা নামে, এরপর একে একে রুদ্র আর আয়মান নেমে আসে। স্নেহা মিষ্টি হেসে ওদেরকে নিয়ে মেহেরদের কাছে যায়। দিয়া যেনো আয়মানকে দেখে আরেক দফা ক্রাশ খায়। আয়মান একবার দিয়ার দিকে চেয়েই চোখ ফিরিয়ে নিয়ে মুচকি হাসে। মেহের ইভান এর সাথে কথা বলতে থাকায় খেয়াল ই করেনি যে এক জোড়া চোখ তাদের গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। মেহের আর ইভান কে এক সাথে হেসে কথা বলতে দেখেই রাগে দাতে দাঁত কামড়ে চেয়ে থাকে রুদ্র।

স্নেহা যেয়ে ওদের সাথে বসে। রুদ্রকে বেশ কয়েকবার টিভি ম্যাগাজিন এ দেখার পর রুদ্রকে চিনতে আর বেগ পেতে হয় না ইভানের। কিন্তু এত বড় মাপের মানুষ এখানে কি করছে তা আন্দাজ করতে না পেরে রুদ্রর দিকে হা করে চেয়ে থাকে ইভান। স্নেহা হেসে রুদ্র আর আয়মান এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় ইভানের,

~উনি হচ্ছেন সুফিয়ান আহমেদ রুদ্র আমার দেবর। আর উনি হচ্ছেন আয়মান হাসান আমার ছোট দেবর আর সুফিয়ান ভাইয়ার পি এ। আর ভাইয়ারা উনি হচ্ছেন ইভান ভাইয়া, আমাদের সিনিয়র।

ইভান হেলো বলে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়াতেই রুদ্র শক্ত করে ইভানের হাত চেপে ধরে। এতে ইভান কিছুটা ব্যাথা পেলেও ইভান কিছু বলে না। রুদ্র ইভানের হাত ছাড়তেই আয়মানের সাথে হ্যান্ডশেক করে ইভান। ইভান ওদের বিদায় জানিয়ে চলে গেলে মেহেরের দিকে তাকায় রুদ্র। ইভানের যাওয়ার দিকে মেহেরকে ভ্রু কুচকে চেয়ে থাকতে দেখে মেহেরের সামনে যেয়ে দাড়ায় রুদ্র। গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করে,

আপনাদের ক্লাস শুরু হবে কখন?

~এইতো পনেরো মিনিট পর। (কাব্য)

~তো এখনও এখানে বসে আছেন কেন! দ্রুত ক্লাস এ যান। গো! (কিছুটা ধমকের সুরে)

ধমকের আওয়াজে মেহের সহ ওর পুরো পল্টনও কেপে উঠে। মেহের বাদে সকলেই দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। মেহেরকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রুদ্রর এতক্ষন যাবত জমিয়ে রাখা রাগ যেনো আরো কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বিরবির করে "জান বাঁচান ফরজ" বলে আয়মান দৌড় দিয়ে গাড়িতে যেয়ে বসে। রুদ্র ভ্রু কুঁচকে মেহেরকে জিজ্ঞেস করে,

এখনও দাড়িয়ে আছো কেনো? জলদি ক্লাসে যাও।

~আপনি বললেই যেতে হবে নাকি আজব!

~তোমার সাহস তো কম না তুমি আমার মুখে মুখে তর্ক করো! (মেহেরের দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলে রুদ্র)

ঝাড়ি খেয়ে আর রুদ্র কে এত কাছে দেখে মেহেরের মনে জমানো সাহসটুকু যেনো ফুস করে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। মেহের এদিক ওদিক নজর ঘুরিয়ে মিন মিন করে বলে,

আসলে ভা ভাইয়া ই ই ইভান ভাইয়ার থেকে কিছু নোট নেওয়ার কথা ছিল। সে ওইগুলো তার বান্ধবীর কাছে রেখে এসেছিল। এখন ওইগুলো আনতে গেছে আর আমাকে এখানে ওয়েট করতে বলে গেছে। 

মেহের এর দিকে কিছুক্ষন শান্ত দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে রুদ্র। তারপর মেহেরের পাশে বসে পড়ে। মেহের অবাক হয়ে তাকায় রুদ্রর দিকে,

~আপনি এখানে বসলেন কেনো?

~কেনো? এখানে বসার অধিকার কি শুধু তোমার সো কল্ড ইভান ভাইয়ার ই নাকি!

~আপনি তো ভারী অসভ্...

কালকের সেই মিষ্টি ঘ্রাণটা আবারও পেতেই কথার মাঝেই থেমে যায় মেহের। তার ঘ্রাণেন্দ্রিয় জানান দেয় যে মিষ্টি ঘ্রাণটির অধিকারী আর কেউ নয় বরং তারই পাশে বসে থাকা মানুষটি। মেহের এর বুক ধক করে উঠে। একরাশ ভয় এসে মনে ভয় করে। কালকেও যখন পরিচয় হওয়ার জন্য রুদ্র সামনে দাড়িয়েছিল তখনও এই ঘ্রাণটিই পেয়েছিল মেহের। আবার অন্ধকারের মধ্যেও ওই লোকটির গায়ের থেকে এই একই ঘ্রাণটিই পেয়েছিল মেহের। তবে কি উনি ই সেই লোক? নাহ! আর ভাবতে পারছে না মেহের। সোজা রুদ্রকেই জিজ্ঞেস করে,

কালকে পার্টিতে কি তবে আপনিই ছিলেন?

~~~

চলবে~

(নেক্সট আর নাইস ছাড়া আর কিছু বলেন না দেখি আপনারা। সবাইকে কি নেক্সট ভূতে ধরলো নাকি হু!!!)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৮

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 8


🍂🍂🍂


আহমেদ ভিলার দ্বিতীয় তলায় উঠে অনেকক্ষণ যাবৎ স্নেহার রুম খুঁজছে মেহের। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার সময় ভুলবশত এক ওয়েট্রেস এর সাথে ধাক্কা লাগায় কিছুটা জুস মেহেরের জামায় পড়ে। সাদা ড্রেস এ দাগ বসে গেলে বিচ্ছিরি এক অবস্থা হবে বলে স্নেহা মেহেরকে নিয়ে নিজের রুমের দিকে উদ্দ্বত হয়। কিন্তু দোতলায় উঠতেই একটি মেয়ে এসে জানায় যে স্নেহা কে তার শাশুড়ি মা জরুরী তলব করেছে। স্নেহা একটু পর যাবে জানালেও মেয়েটা জোর করে স্নেহাকে নিয়ে যেতে থাকে। স্নেহা ওর রুমের দিক নির্দেশনা বলে গেলেও মেহেরের মাথায় ঠিক মত ঢুকে না তাই সে নিজেই খুজে নিতে শুরু করে। যে ব্যক্তি এই বাড়িটা এভাবে বানানোর আইডিয়া দিয়েছে বিরক্ত হয়ে তাকে ইতিমধ্যে মনে মনে কয়েকশ বকাও দিয়েছে মেহের। প্রায় অনেকক্ষণ যাবৎ ঘুরার পরও মেহের বুঝে উঠতে পারছে না যে কোনটা স্নেহার ঘর। হাঁটতে হাঁটতে একটি রুমের সামনে এসে থেমে যায় মেহের। বাড়িতে অনুষ্ঠান হলেও এদিকটায় কেউ ই নেই দেখে একটু ভয় অনুভব করে মেহের, পরে এই রুমটাই হয়তো স্নেহার রুম ভেবে নিয়ে রুমে প্রবেশ করে। বাম দিকে তাকাতেই ওয়াশরুম দেখতে পায় মেহের তাই ডানে বামে নজর না দিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায় সে। জামা পরিষ্কার করে বের হতেই অন্ধকার দেখে কিছুটা ভরকে যায়।

"একটু আগেই দেখলাম আলোতে অতিমাত্রায় ঝকঝক করছিল পুরো ঘর, এই টুকু সময়ের মধ্যে আবার কালো আঁধার নামলো কিভাবে! আজব বাড়ি। মোবাইলটাও তো দিয়ার কাছে রেখে আসছি। এখন এই অন্ধকার এ গেট কই খুজবো কচু!" বলেই ভয়ে ভয়ে হাতড়ে ঘরের দরজা খুজার চেষ্টা করতে থাকে মেহের। হটাৎ ঘাড়ে কারো গরম নিঃশ্বাস অনুভব হতেই পিছন ফিরতে নেয় মেহের কিন্তু তার আগেই এক জোড়া বলিষ্ঠ হাত তাকে আষ্ঠেপিষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। হটাৎ এভাবে কারো জড়িয়ে ধরায় অবাক হয়ে নিঃশ্বাস আটকে যাওয়ার মত অবস্থা তার। লোকটি হটাৎ মেহেরের ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে ঘাড়ে থুতনি রাখে আর ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে,

~কেমন আছো রুদ্রানী? ডিড ইউ...মিসড মি?

মেহের যেনো ভয়ে জমে গেছে কিন্তু পরক্ষণেই লোকটির আবদ্ধ হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করে মেহের কিন্তু ফলাফল শূন্য। লোকটির হাত থেকে যতই ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করছে, লোকটি ততই শক্ত করে তাকে নিজের সাথে চেপে ধরছে।

~ইশশশ!!! এত মোচড়ামোচড়ি করছো কেনো রুদ্রানী! চুপচাপ শান্ত হয়ে কিছুক্ষন দাড়াও তো।

~ক্ কে আ আপনি? ছা ছাড়ুন বলছি! (আমতা আমতা করে বলে মেহের)

~তোমাকে ছাড়ার জন্য তো ধরিনি মায়াবতী। তোমাকে তো সারাজীবন আমার সাথে রেখে দিবো আমি। (ঘাড়ে থুতনি রেখেই নিঃশব্দে হেসে বলে)

~কি সব আবোল তাবোল বলছেন! ছাড়ুন আমাকে! আমি কিন্তু এবার চিৎকার করবো। ছাড়ুন বলছি! অসভ্য, বজ্জাত লোক! (মেহের)

মেহেরের কথায় লোকটি হো হো করে হেসে উঠে যেনো মেহের ভীষণ মজার কৌতুক বলেছে এখন। মেহের আহাম্মক এর মত দাড়িয়ে থাকে। লোকটি হাসি থামিয়ে বলে,

~তুমি দেখছি খুব ভুলো মনের মায়াবতী। তোমার বান্ধবী কি বলেছে মনে নেই? এই বাড়ির প্রতিটা রুম সাউন্ড প্রুভ। তুমি এই ঘরে চিৎকার করে গলা ভেঙে ফেললেও কেউ শুনতে পাবে না।

এইবার মেহেরের মন চাইছে শুধু বকা দিতে না বরং যে ব্যক্তি এই বাড়িটা বানিয়েছে তার মাথায় ১০ ইঞ্চির ইট দিয়ে গুনে গুনে ৩০ টা বারি দিতে। মেহের মনে মনে বলে,

বেটির ঘরে বেটা! এমন বাড়ি বানানোর জন্য আর কারো বাড়ি পেলো না, আমার বান্ধবীর শ্বশুরের বাড়িটাই পেলি! মন তো চাইছে...

~মনে মনে বকা হলে আমার দিকে একটু নজর দাও না রুদ্রানী। সারাক্ষণ দেখি বন্ধুবান্ধব নিয়ে মত্ত থাকো। আমার দিকে তো একবারও চোখ তুলে তাকাতে দেখলাম না। জানো তোমার চোখে চোখ রেখে মনের অনেক কথা বলার আছে। কিন্তু এখন না। সময় হোক তখন কথার ঝুড়ি নিয়ে বসবো তোমার সাথে।

লোকটির কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না মেহের।


এক ফোঁটা অশ্রু গাল গড়িয়ে ছেলেটির হাতে পড়তেই আঁতকে উঠলো ছেলেটি। সঙ্গে সঙ্গে মেহেরকে ছেড়ে তার দিকে ঘুরিয়ে মেহেরের দু গালে হাত রাখতেই মেহের বলে,

~কে আপনি? এমন করছেন কেনো? আমাকে যেতে দিন প্লীজ! (কান্না ভেজা গলায় বলে মেহের)

~কে আমি, কেনো এমন করছি ধীরে ধীরে সব জানতে পারবে মায়াবতী। তুমি শুধু এটুকু জানো যে তুমি শুধু আমার। #আমার_রুদ্রাণী।

বলেই মেহেরের চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে হালকা ঠোঁট ছুঁইয়ে চলে যায় সে। দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় মেহের লোকটির অবয়ব দেখতে পায়। ভ্রু কুচকে ভাবতে থাকে যে ব্যক্তিটি কে হতে পারে। ব্যক্তিটি রুম থেকে বের হতেই রুমের সব লাইট জ্বলে উঠে। মেহের দরজা দেখতে পেয়ে দ্রুত সে রুম ত্যাগ করে।

মেহের রুম থেকে বেরিয়ে নিচে চলে যেতেই আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে রুদ্র। মুচকি হেসে বলে,

তোমার ঐ ভীত হরিণী চোখ দেখেই তো আমি মুগ্ধ হয়েছি রুদ্রাণী। তোমার প্রতি ভয়ানক ভাবে আসক্ত আমি। তোমার মায়া কেটে উঠা আমার পক্ষে সম্ভব না। শীঘ্রই তোমাকে আমার বানিয়ে নিবো। তখন তুমি আমাকে ছাড়া আর কাউকে নিয়ে ভাবতে পারবে না। শুধু মাত্র আমার_রুদ্রাণী হয়ে থাকবে তুমি।

~~~

চলবে?

(রুদ্রর চরিত্র টা কেমন লাগে আপনাদের কাছে?)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৭

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 7


🍂🍂🍂


রুদ্র সিড়ি দিয়ে নামার সময় সব স্পট লাইট তার দিকে স্থির করা হয়। রুদ্রর থেকে ২ কদম পেছনেই দাড়িয়ে আছে আয়মান। সকলেই মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকে রুদ্র আর আয়মান এর দিকে। রুদ্র সাদা শার্ট এর ওপরে নীল রঙের ব্লেজার পড়েছে, হাতে ব্র্যান্ডেড ঘড়ি, চুলগুলো স্পাইক করা। অন্যদিকে আয়মান সাদা আর কালোর কম্বিনেশন এর একটি সুট পড়েছে। সকলের দৃষ্টি ওদের দিকে থাকলেও রুদ্রর দৃষ্টি দূরে দাড়িয়ে থাকা মেহের এর দিকে। রুদ্র কে দেখেই তীব্র, আর ওদের বাবা মা রুদ্রর দিকে এগিয়ে যায়। নিচে নেমেই রুদ্র সোজা তার মা বাবা আর ভাই এর কাছে যায়। তারা মেহমান দের সাথে রুদ্রকে পরিচয় করিয়ে দিতে থাকে।

.

অবাক হয়ে চোখ গোল গোল করে আহিল আর কাব্য এক সাথেই স্নেহা কে জিজ্ঞেস করে,

সুফিয়ান আহমেদ রুদ্র তোর দেবর!!!

স্নেহা জোরপূর্বক হেসে মাথা হ্যাঁ বোধকে মাথা নাড়ায়।

ওদের এমন আচরণ মেহেরের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আর দিয়া তো এখনও এক ধ্যানে আয়মানের দিকেই চেয়ে আছে।

~তুই যে দ্যা সুফিয়ান আহমেদ রুদ্র এর ভাবি তা আগে বলিস নি কেন? (রেগে প্রশ্ন করে আহিল)

~তোদের ভাইয়া বলেছিল যে রুদ্র আসার আগ পর্যন্ত ওর ব্যাপারে কাউকে না বলতে। আর ওনার সাথে আমার এমনিও আগে দেখা হয়নি। আমার বিয়েতেও উপস্থিত ছিলেন না তাই আর বলিনি। (মাথা নিচু করে হাত কচলাতে কচলাতে বলে স্নেহা)

~এভাবে রিয়েক্ট করছিস কেনো তোরা? ওনাকে কি তোরা আগের থেকেই চিনিস? কে উনি?(মেহের)

কাব্য আর সাহিল একে ওপরের দিকে একবার চেয়ে তারপর মেহের, দিয়া আর স্নেহা কে টেনে এনে এক সাইড এ দাড়ায়। হাতে টান পড়ায় দিয়ার ধ্যান ভাঙে আর ভ্রু কুচকে ওদের দিকে তাকায়। কাব্য ধীর স্বরে বলে,

~সুফিয়ান আহমেদ রুদ্র। যাকে এক নামেই সবাই চিনে। বিশ্বের টপ কোম্পানিগুলোর মধ্যে তার কোম্পানি একটি। এতদিন ফ্রান্স এ ছিল। সেখানেও নাকি তার বিশাল নাম ডাক রয়েছে। একটা আর্টিকেলে পড়েছিলাম যে মাফিয়া জগতেও নাকি তার আনাগোনা রয়েছে।

~মা...মাফিয়া! (ভীতস্বরে বলে মেহের)

~হুঁ। কিন্তু তা শুধু গুঞ্জন মাত্র। জানিস  তার খ্যাতি দেশে বিদেশেও ছড়িয়ে আছে। ওনাকে এক প্রকার সেলিব্রিটি বললেও চলে। (আহিল)

আহিল আর কাব্যর কথা শুনে ভয়ে ঢোক গিলে মেহের।

~আচ্ছা উনি যদি সত্যিই মাফিয়া ওয়ার্ল্ড এর হয়ে থাকে তার মানে কি সে মানুষ খুন করে? (দিয়া)

~যারা মাফিয়া তাদের কাছে এইসব খুন খারাপী হাতের ধুলার মত।

~উফফো! তোরা এত ভয় পাচ্ছিস কেন! সুফিয়ান ভাইয়া খুব ভালো। তোরা শুধু শুধু ভয় পাচ্ছিস।

~আমার তো ওনার কাজের ওপর আগের থেকেই অনেক ইন্টারেস্ট ছিল। ভালোই হলো আজকে দেখা হলো। (এক্সসাইটেড হয়ে বলে কাব্য)

কাব্যের কথা শুনে দিয়া, আহিল আর মেহের আড় চোখে কাব্যের দিকে তাকায়।

~পাগল হয়েছিস! এই লোককে দেখেই কি গম্ভীর মনে হয়। মাফিয়া মানে তো ভয়ানক মানুষ। তোরা খবরদার ওনার কাছে যাবি না। আর স্নেহা! তুই বিয়ে করার জন্য আর পরিবার পেলি না! আমার তো ভয় করছে। যদি মেরে টেরে দেয়? (মেহের)

~কি বলছিস! আমার মনে হয় না সুফিয়ান ভাইয়া কোনো মাফিয়া। উনি তো বিজনেসম্যান। উনি মারতে যাবে কেন! তুই টেনশন নিস না তো।

.

তীব্র মেহেরদেরকে রুদ্রর সাথে পরিচয় করাতে চাইলে সকলে রাজি হলেও মেহের ভয় পেয়ে না করে দেয়, পরে স্নেহা আর দিয়া মেহেরকে জোর করে সাথে নিয়ে যায়। তীব্র রুদ্র আর আয়মানকে ডাক দিতেই তারা তীব্রদের কাছে আসে। সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে মেহেরের দিকে খেয়াল করে দেখে যে মেহের স্নেহার পেছনে লুকিয়ে কাধের দিক দিয়ে উকি দিয়ে ভীতু চোখে চেয়ে আছে। সকলে মেহেরকে সামনে আসতে বললে মেহের মাথা নেড়ে না জানায়। রুদ্রকে ভ্রু কুঁচকে মেহেরের দিকে চেয়ে থাকতে দেখে এতে যেনো মেহের ভয়ে আরো গুটিয়ে যায়। দিয়া বিরক্ত হয়ে মেহেরকে টেনে সামনে আনে। তীব্র রুদ্র আর আয়মানের সাথে মেহেরকে পরিচয় করিয়ে দেয়। মেহের মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়ে, জোরপূর্বক হেসে ওদের সাথে পরিচিত হয়। ওদের সাথে পরিচিত হওয়ার পরপরই রুদ্রকে রেদোয়ান আহমেদ ডাক দিতেই সে অন্যদিকে চলে যায়। এতে যেনো মেহেরের আত্মায় পানি ফেরে।

~তুই এত ভয় পাচ্ছিস কেনো মেহের? আরে বাবা ওনাকে ভয় পাওয়ার কি হলো! আর মাফিয়া হলেও তুই কি ওনার কোনও ‌ক্ষতি করেছিস যে উনি মারতে যাবে। (স্নেহা)

~হ্যাঁ তাইতো। ধুর!!! আমি কেনো ওনাকে ভয় পাচ্ছি। আমি কি ওনাকে কিছু করেছি নাকি! (ভাবার মত করে বলে মেহের)

এতে সবাই চোখ গোল গোল করে মেহেরের দিকে তাকাতেই মেহের বলে,

আসলে তোরা তো জানিস ই আমি মারামারি পছন্দ করি না। তার ওপর রক্ত এসব ভয় পাই। তখন তোরা ওইসব কথা বলছিলি বলে একটু ভয় পেয়ে গেছিলাম। এখন আর ভয় পাবো না। সত্যি!!!

~আমরা আছি তো তোর সাথে। আমরা থাকতে ভয় কিসের!!!(মেহের এর মাথায় গাট্টা মেরে বলে কাব্য)

এতে মেহের কাব্যের পিঠে এক কিল বসিয়ে দেয়। একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে সবাই এক সাথে হেসে উঠে আর পার্টি এনজয় করতে শুরু করে।


🍂🍂🍂


এত কিছুর মধ্যে মেহের খেয়াল করেনি যে কেউ একজন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেহেরের দিকে চেয়ে আছে আর বিড়বিড় করে বলছে,

'কে বলেছে তোমায় এত মায়াবতী হতে রুদ্রানী! দিন দিন নিজের প্রতি আসক্ত করে চলেছো আমায়। এজন্য ইউ ডিজার্ভ আ পানিশমেন্ট।' বলেই বাকা হাসে ছেলেটি।

~~~

চলবে~

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৬

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 6


🍂🍂🍂


প্রায় ১ ঘণ্টা যাবৎ কোমরে হাত দিয়ে সারা রুমে পায়চারি করছে মেহের। বিরক্তিভাব নিয়ে আলমারির পাশে দাড়িয়ে আছে মেহেরের নানি। মেহের পায়চারি থামিয়ে আরেকবার বিছানায় ছড়িয়ে রাখা জামাগুলোর দিকে নজর দেয়। সব কাপড়ে চোখ ঘুরাতেই হটাৎ সাদা রঙের থ্রি পিসটির দিকে নজর পড়ে তার, সেলোয়ার আর কামিজ সাদা আর ওড়নাটা নীল রঙের। বিছানা থেকে থ্রি পিসটি হাতে নিতেই নানি বলে,

~এটা পড়বি?

~হুঁ (মুচকি হেসে জামা দেখতে দেখতে)

~যাক অবশেষে জামা সিলেক্ট করলি। তুই রেডী হ। এখন আমি আমার রুমে গেলাম।

~আচ্ছা।

নানি যেতেই মেহের রেডী হতে শুরু করে। সালোয়ার কামিজ পড়ে, নীল রঙের ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে নেয়, হাতে নীল রেশমি চুড়ি, কানে ঝুমকো, সোজা সিথি করে কোমর অব্দি ঘন চুলগুলো ছেড়ে দেয়। সাজ হিসেবে শুধু মুখে একটু পাউডার, চোখে মোটা করে কাজল আর ঠোটে নুড লিপস্টিক। মেহের রেডী হয়েই বন্ধুদের গ্রুপ কল করে,

~কিরে কই তুই। এখনি তোকে কল দিতাম(দিয়া)

~আমি মাত্র রেডী হয়েছি। তোরা কই?(মেহের)

~তোর বাসার নিচে (আহিল)

~জলদি আয় ছেমরি। কত সুন্দর করে রেডী হয়ে আসছি। তোর জন্য অপেক্ষা করতে করতে অবস্থা কাহিল হইয়া গেলে পরে তো আর পার্টিতে কোনো মাইয়া পটাইতে পারমু না। (কাব্য)

কাব্যের কথায় মেহের হেসে বলে, আসছি, দাড়া একটু।

মেহের তার নানিকে বিদায় জানিয়ে রওনা দেয়।


🍂🍂🍂


রেডী হয়েই বারান্দার দোলনায় গা এলিয়ে বসে আছে রুদ্র। এক ধ্যানে দূরে রাস্তার দিকে চেয়ে আছে। থেকে থেকেই দোলনা দোলাচ্ছে রুদ্র। পাশের কাউচ এ গালে হাত দিয়ে বসে আছে আয়মান। যেনো পারলে এখনই হাত পা ছড়িয়ে কান্না করে দিত সে। "এত সুন্দর করে রেডী হওয়ার কোনো মানে আছে! সেই তো বারান্দায় এসে বসে থাকা লাগছে। ধুর!!! ভাবছিলাম আজকে পার্টিতে অন্তত একটা গার্লফ্রেন্ড পটিয়েই ছাড়বো আর কই এদিকে বসে আছি।" বিড়বিড় করে বলে আয়মান।

কতক্ষন এদিক সেদিক চোখ ঘুরিয়ে আয়মান রুদ্রকে বলে,

স্যার প্রায় সব মেহমানই চলে এসেছে। ভাইয়া ভাবি কয়েকবার এসে ডেকে গেছে। সবাই আপনার অপেক্ষায় বসে আছে।

আয়মান কথাটা শেষ করতেই রুদ্র রাস্তার দিকে দৃষ্টি স্থির রেখেই বাকা হাসে। ঘাড় ঘুরিয়ে আয়মানের দিকে চেয়ে বলে, চলো নিচে যাই। সবাই অপেক্ষা করছে তো, জলদি চলো।

বলেই দ্রুত দোলনা ছেড়ে উঠে দাড়ায়।

আয়মান কতক্ষন হা করে চেয়ে থেকে বলে, আব হ্যাঁ চলুন।


🍂🍂🍂


মেহের আর ওর বন্ধুরা স্নেহার শশুর বাড়ী এসে সদর দরজা দিয়ে ঢুকেই মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। সাদা রঙের ডুপ্লেক্স বাড়ি, সদর দরজা দিয়ে ঢুকতেই দু পাশে মস্ত বড় বাগান, বাগানের মাঝেই সাদা ফাউন্টেইন বসানো, বাগানে বিভিন্ন ধরনের ফুল ও ফল গাছ রয়েছে। মেহেরের মন চাইছিলো বাগানের মধ্যে কিছুটা দূরে রাখা দোলনাটায় যেয়ে বসতে কিন্তু সে আগে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করাকে বেশি গুরুত্ব দিলো। বাড়ির ভিতর প্রবেশ করেই ৪ জন অবাক, চারিদিকে অনেক মানুষ রয়েছে কিন্তু সারা বাড়ি সাউন্ড প্রুভ হওয়ায় বাহির থেকে বোঝার উপায় নেই যে এখানে পার্টি হচ্ছে। ওদের দেখেই স্নেহা দৌড় ওদের কাছে আসে।

~ফাইনালি তোরা এলি! সে কখন থেকে তোদের অপেক্ষা করছিলাম জানিস!(স্নেহা)

~একে তো রাস্তায় জ্যাম ছিল। তারওপর এই ছেমরি গুলায় সাজতে যাইয়া দেরি করছে। আমার আর আহিল এর দোষ নেই। (কাব্য)

~মিথ্যা বলস কেন! আমি উল্টা রেডী হয়ে তোকে বার বার কল দিচ্ছিলাম আমাকে নিয়ে আসার জন্য।(দিয়া)

~থাম থাম আর ঝগড়া করা লাগবে না। বাই দ্যা ওয়ে, মাশাল্লাহ তোদের তো অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। যে কোনো ছেলে আজকে তোদের দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়বে দেখিস। (স্নেহা)

~উহুম! উহুম! আসার সময় আমিও তাই বলেছিলাম, এজন্য মেহের আমার মাথায় গাট্টা মেরেছে (আড় চোখে মেহেরের দিকে চেয়ে বলে দিয়া)

~তোকেও অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। ভাইয়া কোথায়? ভাইয়া তো আজকে তোর থেকে নজরই সরাতে পারবে না। (স্নেহাকে উদ্দেশ্য করে দুষ্টু কণ্ঠে বলে মেহের)

~আমার কথা কেউ জিজ্ঞেস করছিল বুঝি? (তীব্র)

~আরে ভাইয়া! কেমন আছেন?(কাব্য)

~আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। তা এত লেট করলে কেনো তোমরা?(তীব্র)

আবারো কাব্য দিয়া আর মেহেরকে দোষ দিয়ে কিছু বলার আগেই দিয়া ধুম করে কাব্যের পিঠে এক কিল বসিয়ে দেয় আর মেহের কাব্যের পায়ে এক পারা দেয়। এতে কাব্য এক চিৎকার দিয়ে লাফাতে থাকে তা দেখে দিয়া আর মেহের হাত তালি দিয়ে হাসতে থাকে।

~চলো তোমাদেরকে বাবা মায়ের সাথে দেখা করিয়ে আনি।(তীব্র)

~আচ্ছা (সবাই এক সাথে বলে)

তীব্র মি. এন্ড মিসেস আহমেদ এর কাছে নিয়ে যায় আর পরিচয় করিয়ে দেয় ওদের। ওদের সাথে এর আগে দেখা না হলেও স্নেহা ওর বন্ধু বান্ধবদের ব্যাপারে বাসায় অনেকবার বলেছে। মিসেস তিথি ওদের বাসায় আনতে বললেও ওদের আসা হয়ে উঠেনি। মি. এন্ড মিসেস আহমেদ অত্যন্ত মিশুক প্রকৃতির মানুষ হওয়ায় ওনারা মেহের আর তার বন্ধুদের সাথে কথা বলতে শুরু করে।

~আচ্ছা যার জন্য এত বড় পার্টি রাখলেন সে কোথায়? (কাব্য)

~ওই তো আসছে (সিড়ির দিকে উদ্দেশ্য করে বলে তীব্র)

তীব্র এর দৃষ্টি অনুসরণ করে সকলেই সেদিকে তাকায়।

~~~

চলবে~

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৫

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 5


🍂🍂🍂


তীব্র সকাল থেকেই বেশ কয়েকবার রুদ্রকে কল করেছে। তার প্ল্যান অনুযায়ী আজ বাবা মাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার কথা। আহমেদ ভিলায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়িতে বসে আছে রুদ্র। ড্রাইভার এর পাশের সিটেই বসে আছে আয়মান। আরেকবার তীব্র কল করায় রিসিভ করে রুদ্র,

~হ্যা বলো (রুদ্র)

~কিরে কোথায় তুই? সেই সকাল থেকে অপেক্ষা করছি। তুই আসবি বলে আজ বাবাকে অফিসে যেতে আর তোর ভাবীকেও ভার্সিটিতে যেতে নিষেধ করেছি। বাসার সবাই কতে বললাম কেন। (ধীর স্বরে বলে তীব্র)

~আসছি ভাইয়া কিন্তু তুমি এখন কোথায় বসে কথা বলছো বলোতো।

রুদ্রর কথা শুনে তীব্র এবার ডানে বামে তাকায় তারপর জবাব দেয়,

বাথরুমে বসে আছি। বাথরুমে এসে লুকিয়ে লুকিয়ে তোকে কল করেছি।

ফোনের ওপাশ থেকে হাসির শব্দ শুনে তীব্র করুন স্বরে বলে,

হাসিস না রে ভাই। বাবা বাগানে বসে আছে, রহিমা খালাকে নিয়ে মা ছাদে গেছে, তোর ভাবীকে আজ ভার্সিটি যেতে না দেওয়ার কারণ বলিনি বলে মুখ ফুলিয়ে রুমে বসে আছে। তাই কথা বলার জন্য বাথরুম ই বেস্ট স্পেস মনে হয়েছে।

কোনো রকমে হাসি থামিয়ে রুদ্র জানায় যে পাঁচ মিনিটের মধ্যে সে আহমেদ ভিলায় পৌঁছে যাবে।

.

গাড়ি আহমেদ ভিলার সামনে থামতেই রুদ্র গাড়ি থেকে নেমে দাড়ায়। তীব্র আগে থেকেই গেট এর সামনে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছিল। তীব্র যেই না রুদ্রকে জড়িয়ে ধরতে যাবে তার আগেই রেদোয়ান আহমেদ (রুদ্র ও তীব্রর বাবা) দৌড় এসে তীব্র কে ধাক্কা দিয়ে নিজে যেয়ে রুদ্র কে জড়িয়ে ধরেন। ধাক্কা খেয়ে তীব্র পাশেই দাড়িয়ে থাকা আয়মানের ওপর পড়ে। সোজা হয়ে তীব্র তার বাবা এবং ভাই এর দিকে চোখ ছোট ছোট করে চেয়ে থাকে আর বলতে থাকে,

ছোট ছেলেকে পেয়ে আমাকে পর করে দিলো! মীরজাফর বাপ!

তীব্রর কথা শুনে আয়মান ঠোঁট টিপে হাসে। রেদোয়ান আহমেদ তীব্রর কথা শুনে তীব্রকে রাম ধমক দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতেই রুদ্র বলে,

বাইরেই দাড় করিয়ে রাখবে নাকি বাবা। বাড়িতে ঢুকতে তো দাও।

~হ্যা হ্যা চল। আমি তো ভুলেই গেছিলাম।(রেদোয়ান আহমেদ)

~ভুলবাই তো। বয়স হইছে না!(তীব্র)

~গেলি তুই!!!(মেকি রাগ দেখিয়ে বলেন রেদোয়ান আহমেদ)

তীব্র হেসে দৌড় দেয় বাড়ির ভেতর। হেসে রুদ্র, আয়মান আর রেদোয়ান বাড়ির ভিতর যেয়ে দেখে যে এতক্ষণ এ বাড়ির সকলে ড্রয়িং রুমে উপস্থিত। তিথি বেগমকে(রুদ্রর মা) তীব্র তাড়া দিয়ে ড্রয়িং রুমে নিয়ে আসছে আর উনি বার বার তীব্রকে জিজ্ঞেস করছেন যে আসলে কি হয়েছে। তীব্র তার মা কে সামনের দিকে ইশারা করতেই তিনি তাকায়, সামনে এত বছর পর রুদ্র কে দেখে তিনি দৌড়ে যেয়ে রুদ্র কে জড়িয়ে ধরেন। কান্না করতে করতে জিজ্ঞেস করেন, এতদিন পর বাড়িতে ফিরতে মন চাইলো! আমাকে জানিয়ে এলি না কেন?

রুদ্র হেসে তার মাকে জড়িয়ে ধরতে ধরতেই বলে,

কেমন আছো মা? জানিয়ে এলে কি তোমাদের চোখে এত খুশি দেখতে পারতাম! বাই দ্যা ওয়ে, সারপ্রাইজ দেওয়ার আইডিয়া কিন্তু ভাইয়ার ছিল।

তীব্রর দিকে চেয়ে দেখেন তীব্র দাত কেলিয়ে হেসে যাচ্ছে। তা দেখে তিথি বেগম বলেন, তোরা দুই ভাই ই এক। বজ্জাত দুটো।

কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে সকলকে দেখছে স্নেহা। রুদ্রকে কখনো সামনাসামনি না দেখলেও ছবিতে বেশ কয়েকবার দেখেছে তাকে। তাই আর চিনতে বেগ পেতে হয়নি স্নেহার। স্নেহার দিকে নজর পড়তেই রুদ্র গিয়ে স্নেহার পাশে দাঁড়ায় আর বলে,

তুমি বুঝি বউমনি? ভাইয়ার সাথে কথা হলে বেশিরভাগ সময় সে তোমার কথা বলতো। কোনো এক কারণে তোমাদের বিয়ে তে আসতে পারিনি। তাই হয়তো তুমি আমাকে চিনতে পারছো না, তাই না?

স্নেহা হালকা হেসে বলে,

না না ভাইয়া আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি। উনি আপনার ব্যাপারেও অনেক কথা বলেছেন আমাকে আর অনেক ছবিও দেখিয়েছেন।

~বাহ! তাহলে তো ভালোই। আমি ভাবলাম আমার বুঝি এসে আবার নিজের পরিচয় দেওয়া লাগবে। যাক বেশি কষ্ট করতে হলো না।(রুদ্র)

রুদ্রর কথা শুনে স্নেহা হেসে দেয় আর ভাবতে থাকে, উনার ব্যাপারে শুনেছিলাম উনি অনেক গম্ভীর কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে অনেক মিশুক স্বভাবের।

~হ্যা কিন্তু আমি মিশুক শুধু মাত্র আমার বাড়ির মানুষ আর হাতে গুনা কয়েকটা বন্ধুর সাথেই।(রুদ্র)

স্নেহাকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুদ্র বলে,

ভাইয়া নির্ঘাত বলেছে যে আমি গম্ভীর স্বভাবের কিন্তু এখন দেখছো যে আমি হেসে হেসে কথা বলছি। তাই ভাবছো তো?

স্নেহা একবার হ্যা বোধক এ মাথা নাড়িয়ে আবার দ্রুত না বোধক এ মাথা নাড়ায়। তা দেখে সকলেই হেসে উঠে। এর পর রুদ্র জানায় যে তার বিশ্রাম প্রয়োজন তাই সে রুমে যাচ্ছে। পাশাপাশি আয়মানকেও যেনো তার জন্য বরাদ্দকৃত রুমটা দেখিয়ে দেওয়া হয়।


🍂🍂🍂


ভার্সিটির মাঠে বসে আছে মেহের আর তার বন্ধুরা। সকলের মনই কিছুটা খারাপ কারণ আজ স্নেহা আসেনি। বন্ধুদের মধ্যে একজন না থাকলেই যেনো পুরো ফ্রেন্ড সার্কেলটাই খালি খালি লাগে। হটাৎ একটি ছেলে এসে মেহেরের পাশে বসতেই মেহের ঘাড় ঘুরিয়ে চেয়ে দেখে তাদের সিনিয়র ইভান এসে বসেছে। মেহের এতে কিছুটা বিরক্ত হলেও তা প্রকাশ করে না। ইভান একটা টেডি হাসি দিয়েই সকলের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করে,

কেমন আছো সবাই?

~আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া। (এক সাথে সবাই জবাব দেয়)

~মন খারাপ নাকি? (মেহের যে জিজ্ঞেস করে ইভান)

~ না তো ভাইয়া। (মেহের)

মেহের জানে যে ইভান মেহেরের প্রতি ক্রাশড কিন্তু মেহের এর মনে তার জন্য কোনো ফিলিংস না থাকায় সে জেনেও না জানার ভান করে থাকে। মেহের ইভানকে ইগনোর করার জন্য যত দ্রুত সম্ভব সবাইকে বিদায় জানিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।


🍂🍂🍂


রাত ১০ টা বাজে। মেহের তার রুমে বই নিয়ে বসে আছে। হটাৎ পাশে থাকা মোবাইলটা ভাইব্রেট হওয়ায় বিরক্তিতে চোখমুখ কুচকে ফোনের দিকে তাকায় মেহের। কিন্তু ফোনের স্ক্রীনে চেয়ে যেনো মুহূর্তেই বিরক্তি ভাব টা দুর হয়ে যায়। বন্ধুদের গ্রুপ কল দেখে জলদি জলদি রিসিভ করে মেহের। স্নেহা এক্সসাইটেড হয়ে জানায় যে আগামীকাল বিকেলে স্নেহার দেবর দেশে ফেরার খুশিতে তাদের বাসায় গেট টুগেদার হবে। এবং তাতে স্নেহার বন্ধুবান্ধবদের তীব্র স্পেশালি ইনভাইট জানিয়েছে। পার্টির কথা শুনে সবাই অনেক খুশি হয় পাশাপাশি এক্সসাইটেড ও।

.

ছাদে দাঁড়িয়ে আছে রুদ্র। দৃষ্টি আকাশের দিকে। রুদ্রর পিছনেই দাড়িয়ে আছে আয়মান। ঘাড় ঘুরিয়ে আয়মানকে কাচুমাচু করতে দেখে রুদ্র বলে,

এত মোচড়ামুচড়ি না করে যা বলার বলে ফেলো মান।

আয়মানকে অবাক হয়ে চেয়ে থাকতে দেখে দুষ্টুমিশ্রিত কণ্ঠে বলে,

আমি জানি মান বেশিক্ষণ চুপ করে থাকতে পারে না। পেটের মধ্যে জমানো কথা বলতে না পেরে যদি পেট ফেটে যায়? তখন আমি আরেকটা মান কোত্থেকে আনবো?

রুদ্রর কথা শুনে আয়মান মাথা চুলকে হেসে দেয়। আর বলে,

আপনি মনের খবর বুঝেন কিভাবে স্যার?

~যার সাথে চলাচল করি তার মনের খবর বুঝে যাওয়া আমার কাছে অস্বাভাবিক না। তুমি তো আমার ছোট ভাই এর মত সো তোমার খবর রাখাটাও আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তা এতক্ষণ যা বলার জন্য ঘুরঘুর করছিলে তা বলে ফেলো। (আয়মানের দিকে ঘুরে রেলিং এ হেলান দিয়ে বলে রুদ্র)

~কালকের পার্টির জন্য সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে স্যার।

~ হুঁ তো?

~বলতে চাইছিলাম যে, স্নেহা ভাবি আর তীব্র ভাইয়া সকলকে আসতে রাজি করিয়েছে। তার মানে মেহের ম্যামও আসবে। (কিছুটা এক্সসাইটেড হয়ে)

আয়মানের কথা শুনে নিঃশব্দে হাসে রুদ্র আবার পরক্ষণেই চোখ মুখ গম্ভীর করে আয়মানের দিকে তাকায় রুদ্র। জিজ্ঞেস করে,

কালকে কে আসছে মান?

রুদ্রর ইঙ্গিত বুঝতে পেরে আয়মান বেক্কল মার্কা এক হাসি দিয়ে বলে,

ম্যাম না, ম্যাম না! ভাবিমা।

~কতবার বলেছি তোমায় যে বাকি সবার জন্য ম্যাম হলেও তোমার জন্য সে ভাবি। বার বার কেন ভুলে যাও তুমি!

~সরি স্যার।

~হুঁ। রাত অনেক হয়েছে, যাও ঘুমাও।

~জ্বি স্যার, শুভ রাত্রি।

যেতে যেতেই মুচকি হেসে বিড়বিড় করে বলে আয়মান, যতটা গম্ভীর হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করে তার থেকেও বেশি নরম সে মনের দিক থেকে। মেহের ম্যাম আই মিন ভাবিমা স্যার কে পেয়ে আপনি জিতছেন!!!

~~~

চলবে~

(এই গল্পের কোন চরিত্রটা বেশি ভালো লাগে আপনাদের?)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৪

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 4


🍂🍂🍂


তীব্র গাড়ি চালাচ্ছে, উদ্দেশ্য ভাই এর কাছে যাওয়া। কিছুক্ষণ আগেই জানতে পারলো যে তার ছোট ভাই কয়েকবছর পর দেশে ফিরেছে অথচ তাদের বাসায় না গিয়ে সে নিজের আলাদা বাড়িতে উঠেছে। বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখে ড্রয়িং রুমে সোফায় একটি সুদর্শন ছেলে পা এর ওপর পা দিয়ে বসে আছে। দেখতে উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের, লম্বায় ৫ ফিট ৯ কি ১০ ইঞ্চি এর কাছাকাছি হবে, চোখদুটো বাদামি মনি বিশিষ্ট, ঠোঁটগুলো হালকা গোলাপি বর্ণের, মাথার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপালে লেপ্টে আছে, পড়নে সাদা রঙের t-shirt আর কালো ট্রাউজার। এতেই যেনো যে কাউকে যেনো আকর্ষিত করতে পারবে মুহূর্তেই। মনোযোগ দিয়ে ছেলেটি কিছু ফাইল দেখছে। পাশেই দাড়িয়ে আছে তার পি এ।

তীব্র হালকা কেশে তার ভাই এর দিকে এগিয়ে গেলো। তিব্রর দিকে নজর পড়তেই ছেলেটির ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠে এক মিষ্টি হাসি। মুহূর্তেই উঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরে তীব্রকে। তীব্রও হালকা হেসে জড়িয়ে ধরে তার আদরের ছোট ভাইকে। ছেলেটি জড়িয়ে ধরেই জিজ্ঞেস করে,

কেমন আছো ভাইয়া?

তীব্র তার ভাইকে ছেড়ে দিয়ে পাশের সোফায় বসতে বসতে বলে,

আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?

তীব্রের প্রশ্ন শুনে হেসে নিজেও সোফায় বসতে বসতে বলে,

ভালো।

কিছু মুহূর্ত থেমে ফের প্রশ্ন করে, বাড়ির সবাই কেমন আছে ভাইয়া?

~ভালো আছে। আহমেদ ভিলা তে না যেয়ে তুই এই বাড়িতে কেনো এলি? মা বাবা তোকে কত মিস করে জানিস!

~জানি। মা কি জানে যে আমি দেশে ফিরেছি?

~জানে না হয়তো। আমি জানানোর সুযোগ পাইনি। তোর কল পেয়েই তো তোর সাথে দেখা করার জন্য ছুটে এলাম। চল না সুফিয়ান এখন হুট করে বাসায় যেয়ে মা বাবাকে সারপ্রাইজ দেই।(এক্সসাইটেড হয়ে বললো তীব্র)

ছোটদের মতো তীব্রকে এক্সসাইটেড হতে দেখে সুফিয়ান হেসে দিলো। তারপর বললো,

আচ্ছা দিবো কিন্তু এখন না।

তীব্রর যেনো কথাটা ভালো লাগলো না। ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করলো,

কেনো? এখন নয় কেনো?

সুফিয়ান তীব্র এর চোখের দিকে চেয়ে বললো,

এখন বাড়িতে গেলে মা কিছুদিন নিজের চোখের সামনে সামনেই রাখতে চাইবে ভাইয়া। তাহলে আর কাজের দিকে নজর রাখতে পারবো না। তাই চাইছি আগে বাহিরের ঝামেলা শেষ করি তবেই বাড়িতে যেতে।

তীব্র আর মানা করে না। প্রশ্ন করে, কবে বাড়ি যাবি?

সুফিয়ান ফট করে জবাব দেয়, পরশু। তার আগে তুমি বাসায় কাউকে জানিয়ো না।

তীব্র সায় দিয়ে বলে, ঠিক আছে।


🍂🍂🍂


রেষ্টুরেন্ট এ পৌঁছে অ্যাকাউন্ট্যান্ট জনাব রহমান এর সাথে কথা বলে বন্ধুদের সাথে এসে বসে মেহের। মেহের কে দেখেই কাব্য বলে উঠে,

~স্নেহা কখন আসবে রে? তোকে কিছু বলেছে?

~তীব্র ভাইয়া দিয়ে যাবে বলেছে। একটু পরই চলে আসবে হয়তো। কেনো? কিছু হয়েছে?(মেহের)

~ওরে জ্বালাইতে না পারলে ভালো লাগে না। একটু ত্যাড়া কথা বললেই কিভাবে ক্ষেপে যায় দেখস না। বুঝি না আমি ওর মত পেত্নীর কপালে তীব্র ভাই এর মত ভালো মানুষ কেমনে জুটলো!

দিয়া, মেহের আর আহিল ঠোঁট টিপে হাসছে। পেছন থেকে হটাৎ হাসির শব্দ শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখে একজন ছেলে তাদের দিকেই চেয়ে হাসছে। মনে হচ্ছে পারলে সে এখানেই গড়াগড়ি খেয়ে হাসতো। তার পাশেই স্নেহা কোমরে হাত দিয়ে কাব্যের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। হাতের কাছে ভারী কিছু থাকলে নির্ঘাত ধুম করে এক বারি দিয়ে কাব্যের মাথা ফাটিয়ে দিতো।

কাব্য জোর পূর্বক এক হাসি দিয়ে তীব্রর উদ্দেশ্যে বলে,

~আরে তীব্র ভাই! আসেন আসেন। দাড়িয়ে আছেন কেনো বসেন।

তীব্র হাসতে হাসতেই এসে কাব্যের পাশের চেয়ারে বসে। তা দেখে কাব্য করুনস্বরে ফিসফিস করে তীব্র কে বলে,

ভাই হাসি থামান। আপনার বউ এর দিকে একবার তাকাইয়া দেখেন আমার দিকে কেমনে চল্লিশ বছর ধরে না খাওয়া ডাইনোসরের মত চেয়ে আছে। আপনার হাসির জন্য আজ আমার মার খাওয়া নিশ্চিত।

কাব্য ফিসফিস করে কথা বলার চেষ্টা করলেও তা সকলেই শুনতে পায়। কাব্যের কথা শুনে সকলেরই হেসে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। তা দেখে স্নেহা কটমট দৃষ্টিতে কাব্যের দিকে চেয়ে থাকে। আর কাব্য একবার স্নেহার দিকে তো একবার সকলের দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকায়।

~~~

চলবে ~

(বলছি নেক্সট নেক্সট না বলে একটু আধটু উৎসাহ দিয়ে কমেন্টও তো করতে পারেন নাকি!😒)