গল্প: বাধন হারা বেনী পর্ব ২৩

 গল্প:বাধন হারা বেনী

লেখীকা:সানজিদা আহমেদ শাহারা

পর্ব:২৩


ভোর চারটে জাপান সূর্যদ্বয়ের দেশ হওয়ায় সূর্য উদিত হওয়ার এই দৃশ্য প্রায়শই উপভোগ করা যায়।শেষ রাতে মেহরাব একটু ঘুমিয়েছে আলোরার আর ঘুম হয়নি।হাসপাতাল থেকে ইমারজেন্সি ফোন করেছিলো তাদের হেড ডক্টার জাফর আহমেদ।ঘটনার কিছু কিছু সে জেনেছে আর কিছু কিছু সে আন্দাজ করে নিয়েছে তবু ও সরজমিনে না দেখলে ঠিক বিশ্বাস যোগ্য নয় ব্যাপার টা।ভোরের আভা ফুটতে না ফুটতেই আলোরা ছুটলো হাসপাতাল এর উদ্দ্যেশে সাথী হয়েছে তার সোহরাব ও সোমেহরা।মেহরাব তার কলেজ এর স্টুডেন্টদের নিয়ে বের হয়েছে কাজে।সেখান থেকে সরাসরি রাতে এসে তাদের সাথে জয়েন করবে।অনিমা ও তনিমা  হোটেলেই ছিলো আজকাল তনিমা একটু বেশিই ফোন ব্যাবহার করে যা অনিমার একদম পছন্দ না কাজ ছাড়া সারাদিন কেনো সে ফোন চালাবে?অনিমা সকালের নাস্তা অর্ডার দিয়ে গোসলে যায় দুপুরের পর তাদের ও বের হতে হবে আলোরার হাসপাতাল এর উদ্দ্যেশে। অনিমা ফিরে এসে দেখে তনিমা ফোন টি-টেবিলের পাশে রেখেই নিচে গিয়েছে খাবার আনতে।এই সুযোগে অনিমা তনিমার ফোন চেক করে তাস্কি খেয়ে আবার ও ফোন জায়গা মতো রেখে নিজের কাজে মন দেয়। তনিমা খাবার নিয়ে এলে দুজনে খাবার খায় এরপর তৈরি হতে যায়।অনিমা তনিমাকে দেখে মিচকি মুচকি হাসছে এই ব্যাপার টা তনিমা বেশ কিছুক্ষন পর লক্ষ্য করে। সে আড় চোখে অনিমার ব্যাপার স্যাপার লক্ষ্য করে এরপর সোজা সাপটা তাকে প্রশ্ন করে কিন্তু অনিমা ও সুকৌশলে ব্যাপারটা এড়িয়ে যায়।


অন্যদিকে তাহিয়ানা মেহরাব সহ আরো ছেলে-মেয়েরা এসেছে একটি পুরাতন কবর স্থানের সম্পর্কে আলোচনা করতে এবং সেই কবর স্থান এর সঠিক বয়স সহ নানান বিষয় খুজে বের করতে।প্রত্নতত্ত্ব এমনি একটা বিষয় যা আমাদের অতীতকে আমার ভবিষ্যৎ এর সামনে বহমান নদীর মতোই তুলে ধরে।তাহিয়ানা বারবার মেহরাব এর আশে পাশে ঘুরছে দেখে মেহরাব তাকে এড়িয়ে চলছে প্রতিবার কিন্তু লাভের লাভ কিছু হচ্ছে না।সেই আবার তার আশে পাশে ঘুরছে।মেহরাব বিরক্ত হয়ে কবরস্থানের পিছনের দিকে হাটা দেয়।সেখানটা ভীষন নিরিবিলি এতটাই নিরিবিলি যে মেহরাব তার নিশ্বাসের আওয়াজ এই চকচকে দিনের আলোতে ও শুনতে পাচ্ছে।মেহরাব একটু শান্ত হয় কেনো যেনো সে তাহিয়ানাকে একটু ও সহ্য করতে পারে না বড্ড বিরক্তিকর একটা মেয়ে।


-আপনি আমার থেকে পালাচ্ছেন কেনো।


-আমার বউ আছে।


-কে আপনার বউ।


- আমার বউই আমার বউ।


- আমি হলপ করে বলতে পারি সে আপনার বউ নয়।


- আমি আপনাকে ভালোবাসি।


- আমি তোমাকে আগেই বলেছি আমি আমার বউ আছে।


- আমি যা চাই তা আমি পেয়েই ছাড়ি।


- আমাকে পেতে মরিয়া হইয়ো না আমি আমার নারীতেই আসক্ত।


- আর আমি আপনাতে আসক্ত।


ঠাস ঠাস করে কয়েকটা থাপ্পড় পড়ে তাহিয়ানার গালে।থাপ্পড় খেয়ে তাহিয়ানা ছল ছল চোখে তাকায় মেহরাব এর দিকে। 


ক্রোধে মেহরাব চোখ-মুখ লাল হয়ে গিয়েছে সে তাহিয়ানাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে


-ভদ্র ঘরের মেয়ে ভদ্র হয়েই থাকো।অসভ্যতা করবে না।

তাহিয়ানা গালে হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে বলল


- আপনি আজকের জন্য ভীষন অনুতপ্ত হবেন।

তাহিয়ানা চলে যেতেই মেহরাব একটা বড়ো পাথরের আড়ালে যেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বাকা হাসে।নিচে আর একটি মেহরাব এর দেহ পড়ে আছে।দাড়িয়ে থাকা মেহরাব মাটিতে পড়ে থাকা মেহরাবকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল


- তোমার জীবন ধংসের সব প্রচেষ্টায় আমি প্রায় কামিয়াব।তুমি তো জানোই না আমি কে আর কেনো তোমার এই অবস্থা।


মাটিতে পড়ে থাকা মেহরাবকে জোরে হাওয়ায় উঠিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয়।এরপর সে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।

অন্যদিকে হাসপাতালে কাফির অবস্থা ধীরে ধীরে আরো খারাপ হতে থাকে। প্রথমে কাফিকে দেখে আলোরা ভয় পেয়ে যায়।রাতের পরিপাটি ছেলেটা কিভাবে কয়েক ঘন্টায় জীবন্ত কঙ্কালে পরিনত হয়েছে। চোখের নিচে হাড়ির কালি হয়ে আছে।সারা শরির শুকিয়ে যা তা অবস্থা।আলোরা এই প্রথমবার কাফির হাত ধরল।হালকা স্বরে বলল


- তোমার ভীতর যে হায়না বাসা বেধেছে তার সাথে তোমাকেই লড়তে হবে।আমি হয়তো তোমাকে প্রিয় মানুষ হিসাবে ভালোবাসি না।কিন্তু আমার চরম দুরবস্থায় আমার সব থেকে আপন বন্ধু তুমি।তোমাকে ছাড়া আমি জাপানে হয়তো এতগুলো বছর থাকতে পারতাম না।আর আমি জানি কাফি তুমি নিশ্চই তোমার ভীতরে গেড়ে বসা জীন টাকে তাড়িয়ে জয়ী হবে।আমার প্রিয় বন্ধু নিশ্চই আমার কাছে আবার ও ফিরে আসবে।


কোমায় চলে যাওয়া কাফির চোখ বেয়ে পানি আসতে দেখে আলোরা সস্তি পায় সে সফল হয়েছে কাফি তাকে শুনতে পেয়েছে।

এরপর সে বের হয়ে ফজলে হাসান আবেদ এর কেবিনে যায় তিনি কথা বলতে পারছেন না স্ট্রোক করেছেন সাথে হার্ট অ্যাটাক।পিতা সমতুল্য একজন মানুষ আলোরার মাথায় যার স্নেহের হাত শুরু থেকেই ছিলো হঠাৎ এভাবে নিথর হয়ে যাওয়াতে আলোরা কেমন নিঃস্ব অনুভব করছে নিজেকে।কিন্তু সে জানে ভেঙে পড়লে চলবে না এটা তার একার লড়াই।সোহরাব,সোমেহরা,অনিমা,তনিমা সকলে কেবলি তার সহযোদ্ধা।


কেবিন থেকে বেরিয়ে এসে করিডরের পাতানো চেয়ার গুলোর একটায় বসে সে।পাশে এসে বসে মেহরাব আলোরা তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মুখ লুকিয় তার বুকে কান্নায় ভেঙে পড়ে।মেহরাব তাকে বলে


- চলো ফিরে যায়।


আলোরা হঠাৎ মেহরাব এর বুক থেকে মাথা তুলে বলে আপনি কে? আপনি তো মেহরাব ভাই না।কে আপনি?

আলোরাকে অবাক করল দিয়ে সে বলল


- চলো আমরা কিছু একান্তে সময় কাটায়।


আলোরা বিষ্ময়ে তাকিয়ে রইলো মেহরাব এর দিকে একেবারে নিখুদ চেহারা কিন্তু মানুষটার স্পর্ষ আলাদা কেনো? যে স্পর্শে শান্তি লুকানো থাকতো সে স্পর্শে কেমন একটা লালসার ছাপ স্পষ্ঠ। আলোরা ভীত হয়ে পড়ে।এমন সময় দুজন মিস্ত্রি যারা হাসপাতালের  পনেরো তলার কিছু কাজ করছিলো তারা একটি আয়না নিয়ে এক লিফ্ট থেকে অন্য পাশের লিফ্টের দিকে যাচ্ছিলো সে আয়নার প্রতিবিম্বে মেহরাব এর প্রতিচ্ছবির জায়গায় একটি জ্বলেপুড়ে যাওয়া মানুষের প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে। তাতে আলোরা যা বুজার বুঝে যায়।এতে করে আলোরা আরো অসহায় মনে করতে থাকে নিজেকে।কিন্তু তবু ও সে নিজেকে শক্ত করে মেহরাব এর সাথে তালে তাল দিতে থাকে।যাতে মেহরাব রুপী এই জিন কিছু বুঝতে না পারে।


চলবে....

গল্প: বাধন হারা বেনী পর্ব ২২

 গল্প:বাধন হারা বেনী

লেখীকা:সানজিদা আহমেদ শাহারা

পর্ব:২২


দুজনেই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।মেহরাব আর আলোরার মাঝে কঞ্চিত ফাক রয়েছে।সামনের বেলকনিতে থাকা কাপল দুজন রুমের ভীতরে ঢুকে গিয়েছে আরো বেশ কিছু সময় আগেই।আলোরার চুপ-চাপ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ টা নামিয়ে মেহরাব এর মুখ পানে তাকায় মেহরাব আলোরার তাকানো বোঝে তবু ও সে আকাশ পানেই তাকিয়ে রইলো। আলোরা মেহরাব এর দাড়ির গুলো হয়তো গুনে গুনে দেখছিলো তার দম যেনো থেকে থেকে বন্ধ হয়ে  আসছে।এই দাড়ি গুলো তার কিশোরী জীবনের প্রথম আর্কষনের বিষয় বস্তু ছিলো সেই যে ছোট্ট বেলায় মেহরাব যেদিন প্রথম জীবনে গোফ দাড়ি কেটেছিলো সবার আগে আলোরা তা বুঝতে পেরেছিলো। সেদিন সে হায় রে কি কান্না, কেনো মেহরাব দাড়ি কেটেছে।সকলে তাকে থামাতে সেদিন কত কথায় না বলেছিলো এখনো ভাবলে তার ঠোটের কোনে হাসির রেখা ফুটে ওঠে।আলোরা ভাবে মেহরাব এর দাড়ি গুলো একবার ছুয়ে দেখবে, নিজে ইচ্ছা করে তো কখনো দাড়ি গুলো ছোয়া হয় নি।পুরুষ মানুষের সৌন্দর্য যেনো দাড়িতেই বেশি সুন্দর।মেহরাব আলোরাকে বেলি ফুল গাছটার ডালের নিচে বেলকনিতে বসায়।এই বেলি ফুল গাছ টা বহু পুরানো তার লম্বা লম্বা ডাল গুলো উপরের ছাদ থেকে ঝুলে নিচে এসে ঝুকে পড়েছে তা এক অপরুপ দৃশ্য সৃষ্টি করেছে মেহরাব আলোরার পায়ের উপর শুয়ে পড়ে।আজ অনেক দিন পরে মেহেরাব আলোরার দিকে পূর্ন দৃষ্টিতে তাকালো।হেসে বলল একটা গান শুনাবি?

আলোরা ও আর দেরি করলো না গান গেয়ে উঠলো..মেহেরাব তার হাত টা নিয়ে নিজের দাড়িতে রাখলো।

আলোরা গাইতে থাকে মেহেরাব প্রশন্ন চিত্তে গান শুনতে থাকে।


           এই তো হেথায় কুঞ্জ ছায়ায়

স্বপ্ন মধুর মোহে

এই জীবনে যে কটি দিন পাবো

তোমায় আমায় হেসে খেলে

কাটিয়ে যাবো দোঁহে

স্বপ্ন মধুর মোহে


কাটবে প্রহর তোমার সাথে

হাতের পরশ রইবে হাতে

রইবো যেদিন মুখোমুখি মিলন আগ্রহে


এই বনেরই মিষ্টি মধুর

শান্ত ছায়া ঘিরে

মৌমাছিরা আসর তাদের জমিয়ে দেবে জানি

গুঞ্জরনের নীড়ে আসর জমিয়ে দেবে জানি


অভিসারের অভিলাষে রইবে তুমি আমার পাশে

জীবন মোদের যাবে ভরে

রঙের সমারোহে...


গান গাইতে গাইতে হালকা বাতাসে ছয়-সাত টা বেলি ফুল এসে পড়ে তাদের উপর টুপ-টাপ করে। মেহরাব সেই ফুল থেকে একটা কুড়িয়ে আলোরার কানে গুজে দেয় আলোরা হাসে তার গজ দাঁতটা তার হাসির সৌন্দর্য আলো বহু গুন বাড়িয়ে দেয়।আলোরা ও স্বইচ্ছায় তিন-চারটে ফুল মেহরাব এর দাড়িতে গুজে দেয়।মেহরাব হেসে ওঠে।


মেহরাব: আমি তোকে গভীর ভাবে স্পর্শ না করে ও ভীষন ভালোবাসবো আলু,বিয়ে করবি আমায়?


আলোরা: মামনিকে আমি কথা দিয়েছিলাম।


মেহরাব: আমি মা কে বোঝাবো,আমি তোকে কখনো স্পর্শ করবো না।স্পর্শ না করে ও ভালোবাসা যায়।


মেহরাব: আমায় বিয়ে করবি আলু?


আলোরা:আপনার কিছু হলে আমি বেঁচে থেকে ও মরে যাবো মেহরাব ভাই।


মেহরাব: তোকে পেয়ে ও নিজের করতে না পেরে আমি বেঁচে থেকে ও মরে আছি আলু।


আলোরা: মামনি বললে আমি রাজি মেহরাব ভাই।


মেহরাব: আচ্ছা?কিসে রাজি তুই?


আলোরা: ঐতো


মোহরাব: বল বল


আলোরা: ঐ যে বিয়েতে


মেহরাব: কার সাথে বিয়ে


আলোরা : আপনার সাথে।


কথা টা শেষ করেই আলোরা দু হাতে নিজের মুখ ঢেকে নেয়।মেহরাব হাসে বিস্তার হাসে তার লাল টুকটুকে একটা বউ।মেহরাব দু হাতে ধরে আলোরা মুখ থেকে হাত সরায়।আলোরা লাজুক চোখে চাঁদের দিকে তাকায় আর মেহরাব আলোরার দিকে এই সুন্দর দৃশ্য ক্যামেরায় ক্যাপচার করে আড়াল থেকে সোহরাব।

............................


আকাশ ভরা তারা একটা থালার মতো গোল চাঁদ, সুন্দর আঁকা বাঁকা রাস্তা দিয়ে একটি কালো গাড়ি মোটা মুটি বেগে সামনের দিকে গতিশীল। গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছে একটি জাপানিজ হিপহপ সং।কাফি ড্রাইভ করে যাচ্ছিলো বাড়ির দিকে পথে তার মনে হতে থাকে গাড়ির পেছনে কেউ আছে। বারংবার লুকিং গ্লাসের দিকে তাকাচ্ছিলো সে কিন্তু আসলে সেখানে কিছু ছিলো না। বার বার লুকিং গ্লাসের দিকে তাকানোর জন্য হঠাৎ তার গাড়ির এক্সিডেন্ট হয়।

এক্সিডেন্ট হওয়ার প্রায় সাত আট ঘন্টা পরে তাকে রেস্কিউ করা হয় একটি পাহাড়ি খাদ থেকে।তার তখন ও কোন চেতনা ছিলো না।ডাক্তাররা তাকে আই সি ইউ এ অবজারভেশনে রেখেছে। গাড়িটির খুব বাজে অবস্থা এমন সময় বদ্ধ আই সি ই তে দরজা ভেদ করে একটি দমকা হাওয়া ঢুকে পড়ে, হাওয়া গিয়ে সোজা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় কাফির নিথর দেহটিকে।এরপর হঠাৎ করেই কাফির হুশ ফিরে আসে সে পুরো সুস্থ তবে তার চোখ অসমম্ভব রকমের লাল হয়ে আছে।তাকে ইনজেকশন পুশ করার জন্য নার্স আসলেই সে নার্সের হাত ধরে তাকে এ দেওয়াল থেকে  ও দেওয়ালে ছুড়ে ছুড়ে মারতে থাকে।এক পর্যায়ে নার্সের আর্ত চিৎকারে হাসপাতালের সব লোক আই সি ইউ এর সামনে জড়ো হয়। তখন আই সি ইউ এর দরজা ভেঙ্গে এক দলা মাংস এসে সকলের সমানে পড়ে আর তা ছিলো সেই নার্সের। নার্সের রক্তে সাদা টাইলস লাল হতে শুরু করে।এরপর সকলে এগিয়ে যায় কাফির দিকে কিন্তু কাফি নিস্তেজ হয়ে পড়ে যায় ফ্লোরে।হাসপাতালে মুহূর্তের মধ্যে জনরব শুরু হয়ে যায় ঘটনাটা মুহূর্তেই ইউ টিউব সহ বিভিন্ন গণ মাধ্যমে ভাইরাল হতে থাকে।সাথে সাংবাদিকরা ও এসে হাজির হয়।ফোন টা বেজে ওঠে আবেদ নিবাসের দ্বিতীয় তলার তিন নম্বর বেড রুমের।ফজলে হাসান আবেদ ভীত হাতে ফোন তুলে কানে দেয় হাসপাতালের এই ভীষন বাজে অবস্থার কথা শুনে তিনি হার্ট এট্যাক করেন।


চলবে...


[ আমাদের এখানে বিদ্যুৎ না থাকায় চাইলে ও কিছুতেই গল্প দিতে পারছিলাম না।আশা করি কালকে থেকে আবার গল্প দিতে পারবো]

গল্প: বাধন হারা বেনী পর্ব ২১

 গল্প:বাধন হারা বেনী

লেখীকা:সানজিদা আহমেদ শাহারা

পর্ব:২১


সোহরাব- ভাই নানা কাম ডা করলো কি?


মেহরাব- সালা নানা বেটারে তো একটু ওয়াসিংম্যাসিনে ঘুল্লি দিতে হবে।


সোহরাব- তোর বাস দিলো ভালা কথা আমরা বাস টা ও দিলো?


মেহরাব- তুই মেয়ে কোথায় পেলি?


সোহরাব- কেন আমার তাহু বেবিজান।


মেহরাব-হ্যা? সে আবার কে?


সোহরাব- ওহ ভাই, তাহিয়ানার কথা বলছি।


মেহরাব- বেদ্দপ মেয়ে একটা


সোহরাব- আরে না ভালো।


মেহরাব একবার তাকায় সোহরাব এর দিকে আর সোহরাব লাজুক একটা হাসি দেয়।মেহরাব হতাশায় মাথা নাড়ায়।সোমেহরা এখন ও আলোরার দিকেই তাকিয়ে আছে।অতপর কৌতুহল দমাতে না পেরে বলল


সোমেহরা- আমি ও কি?


আলোরা - না আপু তুমি না শুধু ওনারা দুজন।তুমি হওয়ার আগেই মামনি নিজের জ্বীন সত্তাকে ত্যাগ করে মানুষে পরিনত হয়েছিলো।


সোহমেহরা- ঘটনা বলার সময় তো বললি না।


আলোরা- একটু তো বলায় ভুল হতেই পারে তায় না?


সোহমেহরা- আচ্ছা আমি তো মানুষ?


আলোরা- হ্যা 


সোমেহরা- তাহলে ঠিক আছে বাবা।


সোহরাব - কেমন সার্থপর বোন রে তুই এখানে দুই ভাই রোমান্স এর নাম নিলেই মরবে বলে খাড়া ঝুলছে আর তুই চিল করতে চাচ্ছি  হ্যা রে তোর ফুফু হওয়ার শখ নেই?


সোমেহরা- তোদের বিয়ে করতে মানা করছে বাসর করতে না।আর হ্যা ফুফু হওয়ার শখ আমার আছে, অনেক বেশিই আছে। কারণ আমার ডা জঘন্যিয়া।


অনিমা- সত্য কথা বলছো আপু।


তনিমা- বড়দের নামে এমন বলতে নেই অনিমা।


সোহরাব- তোর আজ কাল ফুফুর জন্য একটু বেশি পড়ে তাই না।


তনিমা-তেমন কোন ব্যাপার না।


মেহরাব- নানার ব্যাপার টা পরে দেখছি,আর তোকে তো আমি এমনই দেখে নেবো বেয়াদপ মেয়ে (আলোরার দিকে তাকিয়ে)।এখন কাজের কথায় আয়।বল হাসপাতাল এর কি সমস্যা।

কাফি নিরব দর্শকের মতো সব টা দেখলে ও এবার বলতে শুরু করে।


কাফি- ঘটনাটা নতুন নয় বহু পুরাতন।১৯৮০ সালে যখন এই হাসপাতাল এর নির্মান কাজ শুরু হয় তখন থেকেই এখানে কিছু সমস্যা এখানকার কর্মীরা অনুভব করে যে, ধরেন হাসপাতটির কোন এক সাইটে কাজ বন্ধ থাকলে ও সেখানে মানুষের বিচরনের অস্তিত্ব থাকে।আবার ধরেন কোন সময় কোন কর্মী কাজ করতে থাকলে সে অনুভব করে পেছন থেকে তাকে কেউ এসে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।এগুলো ছোট খাটো ইনসিডেন্ট প্রধান সমস্যা হলো সেদিন যেদিন আবেদ স্যার এর মেয়ে রানঝা হাসান আবেদ এই হাসপাতালটি পরিধর্শনে আসে।সেদিন ঠিক কি হয়েছিলো জানা যায় না তবে উনি যে সাইটে সেদিন ছিলেন সেদিন ওখানে তিনটে খুন ও একপাশের দেয়াল ধষে পড়ায় আশিজনের মতো গুরুতর আহত হয়।এরপর হাসপাতাল এর কাজ বন্ধ ছিলো প্রায় ১২ বছর।বারো বছর পর আবেদ স্যারের নাতি পুনরায় এই হাসপাতাল এর নির্মান কাজ শুরু করেন এবং সফল হন।এরপর থেকে একটানা হাসপাতাল এর কার্যক্রম চলতে থাকে।গত তিন বছর যাবৎ একটি গুরুতর সমস্যায় আমরা ভুগছি এই হাসপাতাল নিয়ে তা হলো হাসপাতালের দেওয়াল এর ভেতর থেকে একধরনের মিউজিকের সাউন্ড শোনা যায়।এবং তা শুনার পরপর রুগী রিকোভার হয় প্রায়  ৯৫% কিন্তু এরপরই হঠাৎ রুগী হৃদক্রীয়া বন্ধ হয়ে মারা যায়।ব্যাপারটা প্রথম প্রথম অতটা গুরুত্ব না পেলে ও বিগত তিন বছর যাবৎ একই ঘটনা ঘটছে।ফলে সকলে ভীষন ভীত অনেক যাচাই বাছাইয়ের পর ও কোন সুরাহা করতে না পেরে ঐ সাইড টা বন্ধ করে মর্গ বানানো হয়েছিলো কিন্তু সেখান থেকে গত দুই বছর যাবৎ বেওয়ারিশ লাশ গায়েব হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু সমস্যা হলো যে পুলিশি অভিযান হওয়ার পরে ও লাশ কেন চুরি হচ্ছে, কে করছে কিছুই জানা যায় না।


মেহরাব- ওকে মিস কাফি আমরা কাল থেকেই ব্যাপার টা দেখবো।


কাফি- সরি স্যার বাট আমি ছেলে।


মেহরাব- ওহ আই এম সো সরি মিসেস ওহ সিট সরি সরি মিস্টার কাফি।


কাফি - ইট'স ওকে( রেগে যায় কিন্তু স্বাভাবিক থাকে।

.............................


কাফি চলে গিয়েছে অনেক আগেই সোমেহরা আলোরাকে রেখে দিয়েছে। আরোরা ও যেতে চেয়েছিলে কিন্তু যেতে দেয় নি।সকলে গল্প করতে করতে ড্রইংরুমেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো।মেহরাব ড্রইং রুমের সাথে লাগোয়া বারান্দায় দাড়িয়ে ছিলো আরোরা হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়ায় সে উঠে যায় দেখে সামনে মূর্তমান মেহরাব চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে।আলোরার সাহস হয় না মেহরাব এর কাছে যাওয়ার।তখনি মেহেরাব এর রাশভারী গলার আওয়াজ কানে আসে।


- আলু,


- জ্বি ভাই।


- এদিকে আয়।


- না


- কেনো


- ভয় করে


- মারব না,আয়


আরোরা দোয়া পড়তে পড়তে আগায় মেহরাব দিকে।মেহরাব এর পাশে দাড়াতেই আলোরা দেখতে পায় অপর পাশের বেলকনিতে এক নারী ও পুরুষ নিষিদ্ধ ছোয়াতে মেতে উঠেছে।দেখে বুঝা যাচ্ছে তারা বিবাহিত সম্ভাবত ভারতীয় হয়তো মধুচন্দ্রিমায় এসেছেন।আলোরা লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে দাড়ায়।তার কানে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ঝাঁ ঝাঁ আওয়াজ শুরু হলো তখন যখন একই ছোয়া সে তার শরিরে অনুভব করতে শুরু করলো।মেহরাব আলোরা হাতের কনিষ্ঠা আঙুল টি নিজকর হাতের মধ্যে নিয়ে তা মুখে পুরে ছোট বাচ্চাদের নেয় খেতে শুরু করে।

আলোরা ভড়কে যায় সে হতভম্ব হয়ে বলে আপনি কি করছেন।


- সাজা দেবো আজ ভয়ংকর সাজা।


- সবাই জেগে যাবে


মেহবার মুচকি হেসে বলে,,,,


- হ্যা' রে আলু আমি তোকে ছুলে ক্ষতি নেই ওরা জেগে গেলে সমস্যা।আচ্ছা আলু আমি কি এমন করবো যে ওরা সবাই এক সাথে জেগে যাবে? আর তুই ই বা এমন কি রিয়াক্ট করবি ভাবছিস?


আলোরার কানের লতিতে ঠোট নাক মিশিয়ে কথাটা বলে মেহরাব।যখন আলোরার ছোট্ট মস্তিষ্ক এই কথাটার তাৎপর্য উপলব্ধি করে তার পুরো শরির টা  একবার নড়ে ওঠে,চোখ খিচে বন্ধ করে নেয়।পরনে  থাকা কুর্তিটা শক্ত করে খামচে ধরে।


চলবে।


[ দুঃখিত ঝড় বৃষ্টির জন্য আমি গল্প টা দিতে পারিনি।আর আমাদের এখানে পল্লী বিদ্যুৎ এর লাইন হওয়ায় ভুগান্তী আরো বেশি। বিকালের আগে দিতে চেয়ে ও বিদ্যুৎ না থাকার ফলে আমি গল্প দিতে ব্যার্থ হয়েছি।আমি দুঃখিত 🤧।]

গল্প: বাধন হারা বেনী পর্ব ২০

 গল্প:বাধন হারা বেনী

লেখীকা:সানজিদা আহমেদ শাহারা

পর্ব:২০


আমি নিজে ও ভীষন এক্সাইটেড ছিলাম আপনাকে আপন করে পাওয়ার প্রতিক্ষা করছিলাম।কিন্তু আমার সেই প্রতিক্ষা বহু বছরের অপেক্ষায় পরিনত করে দিলো মামনি।মামনি আমার রুমে এসে আমার পা জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলতে থাকে এই বিয়ে হলে আপনার জীবন সংকটে পড়বে।আমি আদ্য প্রান্ত বুঝতে না পেরে মামনিকে পা থেকে তুলে খাটে বসিয়ে পানি খেতে দিলাম।তারপর বললাম সব টা খুলে বলো 

আমাকে মামনি।


মামনি বলল

- আমি কোন সাধারন মানুষ না আমি একজন জ্বীন সাপ।আমি মানুষ এবং সময় বিশেষ সাপে পরিনত হতে পারি।আমি জ্বীন রাজ্যের সর্পজ্বীনের সরদার মোসলেম এর কন্যা আমার বাবা সর্পজ্বীনের সরদার।তার ভীষন ইচ্ছা ছিলো সে আমাকে মানুষদের মাঝে পাঠাবে লেখাপড়া শিখে আবার রাজ্যে ফিরে যাওয়ার জন্য।তোমাদের এখানে যেমন লেখা পড়ার কদর আছে ঠিক তেমন আমাদের ওখানে ও লেখা পড়ার কদর অনেক বেশি।বাবার কথায় মনে একরাশ ভয় নিয়ে হাইস্কুলে ভর্তি হই।প্রথম প্রথম ভীষন ভয় করতো মানুষদের এরপর আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব হতে লাগলো।বুঝলাম মানুষ শুধু খারাপ না ভালো ও আছে।


একদিন সকাল টা ছিলো ভীষন সুন্দর নীল আকাশে সাদা সাদা মেঘ উঠে বেড়াচ্ছিলো।সকালে স্কুলের গেট দিয়ে ঢুকতে পথে একটা ছেলের সঙ্গে আমার ধাক্কা লাগে।আমি বেশ ব্যাথা পায়।ছেলে টা নতজানু হয়ে সরি বলে আমার তার এই ব্যবহার ভালো লাগে আমি ও তাকে মাফ করে দিয়ে ক্লাসে চলে যায়।ক্লাস শেষে আমি বাড়ি ফিরছিলাম।হঠাৎ সুন্দর আকাশ টা কালো মেঘে ছেয়ে গেলো।রাস্তার দু পাশে তেমন কোন ছাউনি ও নেই যে ঠায় নেবো দেখতে দেখতে এক ফোটা দু ফোটা করে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়ে গেলো আমি তো নিরুপায়। নিমেষেই মন খারাপ হয়ে গেলো।কিন্তু পুরো বৃষ্টিতে ভেজার আগেই একটা ছাতা আমায় ঢেকে দেয়।সেই সকালে ধাক্কা লাগা ছেলেটা।প্রথমবার আমি আর কোন একটা ছেলে ছাতার নিচে এতটা কাছাকাছি লজ্জায় আমার দাড়িয়ে থাকা দায় হয়ে পড়ে।দুজনে মিলে সেই ঝুম বৃষ্টিতে কিছুটা পথ হেটে একটা দোকানের সামনে এসে দাড়ালাম।এরপর আমাদের বন্ধুত্ব হলো কথা বাড়তে লাগলো।একসময় আমরা কলেজ এ উঠলাম একই কলেজ এ হওয়ার সুবাদে আমাদের মধ্যের বন্ধত্বের গভীরতা বাড়তে লাগলো।


একদিন সে আমাকে জানালো সে আমাকে ভালোবাসে। আমার পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে যায়।মানুষ হিসাবে সে অমায়িক হলেও আমি তো আর মানুষ না।আমি তো তাকে ভালো বাসতে পারি না।আমার তো ভালেবাসা বারন।আমি তাকে ফিরিয়ে দেয়।সে ফিরে যায় সেদিনের পর সে আবার আমার বন্ধু হয় আমার যত্ন নিতে থাকে।আস্তে আস্তে আমি তার প্রতি ভীষন দুর্বল হয়ে পড়ি।এরপর এক রাতে টিউশন শেষ করে বাসায় ফিরছিলাম সে ও আমার সাথে ছিলো হঠাৎ কাল বৈশাখি ঝড় শুরু হয়।সেই ঝড়ে আমার জীবনেও এক সুখের ঝড় ওঠে।আমরা একটি দোকানের ভেতরে ঠায় নেই।দোকানে কেউ ছিলো না সম্ভাবত অনেক পুরনো দোকান ছিলো।বাতাসের দপট থেকে আর বৃষ্টির ছাট থেকে বাচতে আমরা সেই দোকানের মরিচা ধরা তালা ভেঙে সেই দোকানে  ডুকি।দোকানের ভেতরে একপাশে একটা মাটির চুল্লি আর কয়েকটা কেটলি, চায়ের কাপ আরো কিছু জিনিস পড়ে আছে অন্য পাশে একটা খাট।আমি ভিজে জুবুথুবু অবস্থা।সাথে সে ও ভীজে জুপজাপ।আমার কাপুনি দেখে সে তো দিশেহারা।এক সময় ঠান্ডার কারনে আমার শ্বাসকষ্ট শুরু হয় সে তো হাসফাস করছে কি করবে আস্তে আস্তে আমার গা ঠান্ডা হতে থাকে উপায় অন্ত না পেয়ে সে আমাকে নিজের মধ্যে লুকিয়ে ফেলে যখন আমাদের সংবদ ফিরে আসে তখন সব থেকে পাপ কাজটি আমাদের করা হয়ে গিয়েছিলো।কিন্তু এত বড় পাপের পরে ও মনে কেনো যেনো কোন রকম ভয় হচ্ছিলো না।মনে হচ্ছিলো দুটি পবিত্র আত্মার মিলন ঘটেছে।কিন্তু যখন ঝড় বৃষ্টি থেমে যায় বাহিরে আলো ফুটতে শুরু করে নিজেদের করা পাপের জন্য অনুশোচনা হতে থাকে।সেই সাথে আমার ভয় বাড়লো বাড়তে থাকে আমি তো মানুষ না।সে আমার পাশেই ঘুমিয়ে ছিলো আমি তার কপালে চুমু দিলাম কারন আমি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার জীবন বাচানোর পরিবর্তে আমি ও তার জীবন বাচাবো।আমি এই কলেজ ছেড়ে অন্য কলেজ এ ভর্তি হয়।আর আমার পরিবার এর কাছে ফিরে যায় কিন্তু কিছু মাসের মধ্যে আমি আমার শরিরে পরিবর্তন দেখতে পায়।আমার ভয় বাড়তে থাকে আমার পরিবার আমার আচর আচারন দেখতে পয়ে সব জানতে চায় আমি ভয় পেয়ে সব বলে দেয়।তারা আমাকে এই সন্তান নষ্ঠ করতে বলে।আমি ততদিনে নিজের অস্তিত্বে সন্তানকে মিশিয়ে নিয়েছি।এটা আমার প্রিয় মানুষের ভালোবাসার নিশানি কিভাবে নষ্ঠ করতাম।তখন আমার বাবা আমাকে অভীশাপ দিলেন যে তুই যেমন ভালোবেসে আমার মান সম্মান নষ্ঠ করে দিলি।তেমন এই সন্তান ও একদিন বড় হয়ে কাউকে ভালোবাসবে আর বাসর রাতে সর্পাঘাত এ তার মৃত্যু হবে।এটি এই জ্বীন সরদার এর অভিশাপ লানত তোর উপর।বের হয়ে যায় এই রাজ্য থেকে তোর মতো নষ্ঠ মেয়ের এ রাজ্যে কোন জায়গা নেই।আমাকে সাত মাসের অসুস্থ অবস্থায় রাজ্য থেকে বের করে দেওয়া হলো।আমার শরির এতো অসুস্থ ছিলো যে আমি হাটতে ও পারছিলাম না এরপর যখন আমি এলোমেলো হয়ে রাস্তায় হাটছিলাম তখন একটি গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট হতে হতে আমি বেচে যায়।সেই গাড়িতে ছিলেন আমার শ্বশুর আমাকে বাড়িতে আনলে আমার শ্বাশুড়ি ভীষন রেগে যান।আমি তখন ও জানতাম না এই বাড়ি সেই মানুষটার ও যাকে আমি ভালোবাসি।রাতে তার সাথে যখন খাবার টেবিলে দেখা হলো সে আমাকে দেখে কেঁদে দেয় আর তার বাবা মার কাছে আমার ব্যাপারে সব সত্যিটা বলে।তারা সব শুনে প্রথমে মানতে চান না কিন্তু পরে আমার পেটের সন্তানের কথা চিন্তা করে রাজি হয়ে যান।তারা তো আর জানতেন না আমি কে।আমি ও তাদের আদর স্নেহে সব ভুলতে বসি।এরপর আমি এক সাথে দুটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়।আমার শ্বশুর তাদের নাম রাখে মেহরাব ও সোহরাব।সন্তার হওয়ার দিনই আমাদের বিয়ে হয়।কারণ সন্তান পেটে থাকলে বিয়ে বা তালাক হয় না। আমাদের একটা সুখের সংসার শুরু হয়।একে একে বহু বছর পার করে আজকের এই দিনে এসে উপস্থিত হয়েছি।কেউ জানে না মা, শুধু তুই জানিস।আমার এই সন্তানদের জন্য আমি সব ছেড়েছি।তুই ওদের জান ভিক্ষা দে তুই চলে যা।


আমি সেদিন শুধু চোখের পানি ফেলেছিলাম আর কিছুই আমার করার ছিলো না।কারণ ঐ মানুষ টাকে ও আমি ভালো বাসি আর যেখানে আপনার ভালো থাকার প্রশ্ন ছিলো সেখানে আমি কিভাবে থেকে যেতাম।দাদী তোফার সাথে আপনাকে বিয়ে দিতে চয়ে ছিলো আমি ভেবেছিলাম।আপনার তোফার সাথে বিয়ে হবে কিন্তু হয় নি।


সকলে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।তাদের বড়মা যার কোলে তারা মানুষ সে জ্বীন সাপ? সোমেহরা ও জ্বীন সাপ?এজন্য এদের গড়ন এতো সুন্দর এতো অমায়িক?কাফি সোমেহরাকে পরখ করে দেখতে থাকে।তার একটু একটু ভয় ও হচ্ছে যদি তাকে কামড়ে দেয়।


চলবে?

গল্প: বাধন হারা বেনী পর্ব ১৯

 গল্প: বাধন হারা বেনী

লেখনী: সানজিদা আহমেদ শাহারা

পর্ব: ১৯


কত কথা বলা হলো না প্রিয়

কত সূর্যমুখীর মন ভার,

আমার শহর জুড়ে কুয়াশা ঘুম

নীরবে জমা ব্যথার পাহাড়। 

ভুলে যাওয়া গানের কলির মতো সময়

ফিরে ফিরে আসে শিশির ভেজা ঘাসে,

ভুলে যাওয়া গানের কলির মতো সময়

ফিরে ফিরে আসে শিশির ভেজা ঘাসে,

ছায়াপথ হেঁটে রোজ একা বাড়ি ফিরি

জোনাকিরা আমায় ভালোবাসে।

কত পথ হাঁটা বাকি রয়েছে প্রিয়

কত সন্ধ্যের পথ অন্ধকার,

হেঁটে চলি আজ সে পথ ধরে

যে পথ আমার একার।


-আপনি এতো সিরিয়াস সময়ে গান গাচ্ছেন? আপনার তো হাসপাতালের বেড এ রেস্ট নিতে হতো।আপনার জন্য আমি কতো চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম।


মেহরাব ব্রু কুচকে তাকায় তাহিয়ানার দিকে।কিছুটা অবজ্ঞা মিশ্রিত স্বরে বলে

- মিস তাহিয়ানা আপনার কি মনে হয় না আপনি একটু বেশি চিন্তা করছেন?এটা জাস্ট একটা প্যানিক এ্যার্টাক আর কিছু না।আর হ্যা আমি আপনার ডিপার্টমেন্ট এর প্রধান তো নিজের জায়গা থেকে কথা বলবেন।এখন আপনি আসতে পারেন বিনা করনে আমার রুমে আপনাকে দ্বিতীয় বার যেনো না দেখি।

তাহিয়ানা আপমান টা গায়ে মাখলো না কিন্তু তার মনে ভীষন আঘাত করেছে।অবশ্য পছন্দের মানুষের কড়া কথা সকলেরই হৃদপিন্ডে দহনের সৃষ্টি করে।

তাহিয়ানা হতাশ হয় তবু ও গলায় তেজ রেখে বলে


- আপনি ডিন তো কি হয়েছে? সবার আগে আপনি মানুষ, আমি আপনাকে সাহায্য করেছি তাহলে আপনার স্বাস্থের খবর নেওয়া আমার দায়িত্ব আর হ্যা আমি গায়ে পড়া মেয়ে না।


মেহরাব আবার ও কড়া গলায় বলে

- গায়ে পড়া মেয়ে যখন না তখন এই রুমে এখনো দাড়িয়ে আছো কেনো? রাত বাড়ছে নিজের রুমে যাও।

তাহিয়ানার এবার ভীষন কান্না পায় সে তবু ও চোখ মুখ শক্ত রেখে বেরিয়ে চলে যায়।বাইরে এসে নিজের রুমে গিয়ে ঠাস করে দরুজা আটকে কান্না করতে থাকে।তাকে কখনো তার বাবা-মা ভাইয়েরা একটু উচু আওয়াজে কথা পর্যন্ত শুনাইনি সেখানে মেহরাব তার সাথে এমন জঘন্য আলাপ করলো?সে কি সস্তা নাকি যে, যে কেউ তাকে কথা শুনাতে পারে।কান্নার বেগ বাড়তে থাকে। এমন সময় তাহিয়ানার দরজায় নক করে কেউ সে চোখ মুছে স্বাভাবিক হয়ে দরজা খোলে।

দরজার বাহিরে দাড়িয়ে আছে মেহরাব কিন্তু একটু আগে ও উনার মুখে দাড়ি ছিলো এখন নেই কেনো? ব্যাপার টা ভাবতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায় তাহিয়ানার এর।


- উহুম উহুম...আমি সোহরাব, মেহরাব এর ছোট ভাই।আসলে ৫ মিনিট এর ছোট(কথাটা বলে একটা বেক্কাল মার্কা হাসি দেয়)।

তাহিয়ানা চোখ ছোট ছোট করে দেখতে থাকে তাকে।সোহরাব এবার মুচকি হেসে বলে 


- আসলে আমরা টুইন, জমজ।

তাহিয়ানা আবাক হয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে থাকে সোহরাব এর দিকে।সোহরাব তার তাকানো দেখে বলে


- আপনি যদি কিছু মনে না করেন আমি কি ভেতরে আসতে পারি?

 তাহিয়ানা হ্যা না কোন উত্তরই দিতে পারছেনা তার মাথা টা কেমন ঘুরছে।হঠাৎ তাহিয়ানাকে ঢলে পড়তে দেখে সোহরাব তাকে যত্ন করে আগলে নেয়।এরপর তাকে তার রুমের বেড এ শুইয়ে দিয়ে ডাকতে থাকে তার শাড়া না পেলে টি-টেবিল থেকে গ্লাস নিয়ে পানির ছিটে দেয় চোখে মুখে।পানি চোখে মুখে পড়তেই তাহিয়ানার হুস আসে।সে এবার ও চোখের সামনে সোহরাব কে দেখে ভড়কে যায়।সোহরাব তাকে শান্ত করে।এরপর তাকে সবটা বুঝিয়ে বলে আর এ ও বলে তাকে দর্পনে ছায়া টিমে যুক্ত হওয়ার জন্য সিলেক্ট করা হয়েছে সে কি রাজি? তাহিয়ানা পুরো বিষয় টা জানতে পেরে বেশ হকচকিয়ে যায়।সে এই ব্যাপারে ভাবতে সময় চায়।


আজকে প্রায় অনেকদিন পর তনিমা অনিমা সোমেহরা সোহরাব আর মেহরাব এক জায়গা হয়েছে।এতো গুলো বছরে তারা কাজের সময় ছাড়া হয়তো খুব একটা এক জায়গায় হয়নি।তারা এর মধ্যে প্রায় আরো পঞ্চশটির বেশি কেস সমাধান করেছে।সর্বমোট তাদের কেস সংখ্যা এখন যটি ইনভেস্টিগেশন করবে সেটি নিয়ে বায়ান্ন টি।তনিমা সহ সকলে খোস হল্প করছিলো।মেহরাব তখন দৃঢ় কন্ঠে কেস টা সম্পর্কে জানতে চায়।অনিমা বলে কেস টার সব টা জানাতে একটু পর হাসপাতালে দুজন ডক্টার আমাদের সাথে দেখা করতে আসবে।মেহরাব ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৯টা ৪৫।অর্থাৎ ১০ টায় আসবে।আবার ও সকলে খোস গল্প করতে শুরু করে।মেহরাব বরাবরের মত চুপচাপ ফোন টিপছে।


অন্যদিকে কাফি আর আলোরা দুজনে গাড়িতে বসে আছে এখান থেকে প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেশন টিম যে বাসায় উঠেছে সেখানে যেতে হেটে গেলে ১০ মিনিট লাগে আর গাড়িতে গেলে ৫ মিনিট লাগে।আলোরা ভীষন নার্ভাস লাগছে এতো গুলো বছর পর আবারো সেই মানুষ টা,তার কন্ঠস্বর, তার গায়ের সুবাস, তার সাক্ষাৎ নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে আলোরার।কাফি বার বার আলোরাকে পরখ করছে মেয়েটা শান্ত স্বভাবের কিন্তু তার মানে এই না যে সে নিশ্চুপ।তাহলে হঠাৎ এমন আমুল পরিবর্তন কেনো এই মেয়ের।কাফি কিছু জিজ্ঞাসা করতে গিয়ে ও তা করে না পাছে আলোরা যদি রেগে যায়।গাড়ি থেকে নেমে তারা লিফ্টের ১০ তলায় চাপ দেয়।৫ মিনিট পর তারা ১০ তলার ১২৩০ নম্বর রুমের সামনে এসে পড়ে।রুমের দরজায় নক করতেই ভেতর থেকে কে একজন এসে দরজা খুলে দেয়।আলোরাকে দেখে বিষ্ময় নিয়ে 


মেহরাব বলে


-আলু....


মেহরাবের  আবেগ সব কিছু কে ছাপিয়ে যায় তার ছোট্ট কলিজাটা এতো দিতে শীতলতা পায় সকলকে উপেক্ষা করে সে আলোরাকে জড়িয়ে ধরে।ছোট্ট আলোরার চিকন দেহ খানা মেহরাব এর সুঠাম দেহের মাঝে বিলিন হওয়াই যেন বাকি।মেহরাব কাদে না তবে আলোরা তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে,হাও মাও করে কাঁদছে কত দিনের হাহাকার সে নিজের মাঝে লুকিয়ে রেখেছিলো সে নিজে ও জানে না।মেহরাব কে জাপটে ধরে এভাবে কাঁদতে দেখে কাফি অবাক হয় সাথে আলোরার উপর তার অদৃশ্য রাগ হয়। হঠাৎ  মেহরাব নিজের থেকে আলোরাকে ছাড়িয়ে কষে তার গালে দুটো থাপ্পাড় দেয়।থাপ্পড় এর ঘটনায় সকলে বোকা হয়ে যায় এমন টা তারা আশা করেনি।আলোরার কান্না তখনো থামেনি তবে এবারের কান্নায় আর জোর নেই আছে নিরবতা।আলোরার কান্না কিছুটা থামলে সোমেহরা তাকে এক গ্লাস পানি দেয় খেতে।আলোরা পানিটা ঢক ঢক করে গিলে খায়।এরপর চোখ মুছে কিন্তু ফাপাতে থাকে।মেহরাব তার আবেগ নিয়ন্ত্রণে এনে আলোরাকে কঠিন কন্ঠে প্রশ্ন করে 


- আমি কোন বাহানা শুনতে চায় না সব টা সত্য শুনতে চায়।কেন? কিভাবে? কিসের জন্য?সবটা বলতে হবে।


- আলোরা নিষ্পলক চায় সকলের দিকে তাকে খুজে পাওয়া মুখ গুলো একদিকে যেমন আনন্দে ভাসছে তেমন অন্যদিকে অভিমান আর কৌতুহলে কোন ঠাসা হয়ে পড়ছে।এতক্ষনের কথা বার্তা কিছুই কাফির বোধগম্য হচ্ছে না।সে কথার মধ্যে কথা বলে ওঠে।


- আপনি কি আলু আলু শুরু করেছেন? ওনার নাম আলোরা।ডা.আলোরা শিকদার। তিনি আপনাদের হায়ার কথা এই হাসপাতাল এর একজন বিশিষ্টা হার্ট সার্জন।আর এভাবে মিস বিহেব করছেন কেনো ওনার সাথে? হাত ছেড়ে কথা বলেন ওনার।ওনি ওনাকে কেউ স্পর্শ করুক পছন্দ করে না।

মেহরাব একবার বাকা চোখে কাফিকে পরখ করে নেয়।ছেলেটা বড্ড বেশি কথা বলে।আলোরা কাফির দিকে তাকিয়ে বলে


- এরা আমার ভাই-বোন।আমার কলিজা আর উনি...

কাফি তার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলে 


-তোমার বড় ভাই?তাই তো?

আলোরা একবার তাকায় কাফির দিকে আর একবার মেহরাব এর দিকে।

তখন পেছনের ওয়াসরুম থেকে গান গাইতে গাইতে সোহরাব বের হলে কাফি দুটো মেহরাবকে দেখে তব্ধা খেয়ে হুস হারায়।মেহরাব মনে মনে বলে


-আপদ একটা।


চলবে

গল্প: বাধন হারা বেনী পর্ব ১৮

 গল্প: বাধন হারা বেনী

লেখনী: সানজিদা আহমেদ শাহারা

পর্ব: ১৮


-তুমি থ্রি ইডিয়েট মুভিটা দেখেছো কাফি?


- না আমি কখনো বলিউডের মুভি দেখিনি।


- তোমার মুভি টা দেখা উচিত ছিলো।


- বলিউডের মুভিতে এমন কি বিশেষত্ব আছে? যা আমার দেখা উচিত ছিলো।


- ওখানে প্রধান চরিত্র যে ছিলো সে কোন বিপদে পড়লে বুকে হাত দিয়ে চাপড় দিতো আর বলতো অল ইজ ওয়েল।তখন তার কথা বিশ্বাস করে ভাবতাম আসলেই তা বললে জীবন সহজ হয়ে যাবে।কিন্তু আসলে সত্যি টা কি জানো?


- কি?


- সত্যিটা এই যে বোকা হতে হতে মন ও চালাক হয়ে গিয়েছিলো,তাই সে সব ভালো, না বুঝিয়ে আমাদের বোঝাতে লাগলো সব ঠিক আছে।আর একদিন উপলব্ধি করলাম কিছুই আসলে কখনো ঠিক ছিলোই না।শুধু ভেবে গেছি ঠিক আছে।


- তাহলে এখানে শিখার কি আছে।


- না দেখলে তুমি বুঝবে না আসলে শিখার কি আছে সেই মুভিতে।


- আমি আজকেই দেখার ট্রাই করবো।


- গুড লাক।


- তুমি কি জানো কেনো চেয়ারম্যান স্যার আমাদের ডেকেছেন?


- না সঠিক কিছুই বলল না তো কেউ।


- আসো গিয়ে দেখি কি হয়।


আলোরা ও কাফি হাসপাতালের চেয়ারম্যান ফজলে হাসান আবেদ এর সামনে দাড়িয়ে আছে।তিনি তাদের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন।গত দুই বছর যাবৎ চেষ্টা করার পর বাংলাদেশের একটি প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেশন টিমকে রাজি করাতে পেরেছি আমাদের হাসপাতাল আসার জন্য।তারা রাজি হয়েছে আমি চায় তোমরা তাদের সব দিক থেকে সাহায্য করো তবে হাসপাতালের রেপুটেশন বজায় রাখতে তাদের কর্মকান্ড যাতে প্রকাশ্যে না আসে সেদিকে একটু খেয়াল রাখবে।আশা করি তোমরা আমাকে হতাশ করবে না।


- টিম এর নাম?


- কিছু একটা তো বলেছিলো,উম আসলে খেলাল আসছে না ওভাবে। ও হ্যা মনে পরেছে।


- কি নাম স্যার 


- shadow of mirror.


- দর্পনে ছায়া।


- হ্যা।


আলোরার শরিরের প্রতিটা পরদ কেঁপে ওঠে।সে ভুল শুনেছে।না ভুল সে শোনেনি।তবে কি শেষ রক্ষা আর হবে না?আলোরা চোখের সামনে সব অন্ধকার দেখে।

এরপর যখন তার চোখ খোলে সে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ছিলো।সেলাইন চলছিলো পাশে তার হাতে হাত রেখে কাফি বসে রয়েছে।তার হুস ফিরতে দেখে কিছু টা সস্তি পায় কাফি।তুমি তো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে আলোরা।


আলোরা উঠে বসতে চায়লে কাফি তাকে সাহায্য করতে চায় আলোরা তাকে ইশারায় না করে দেয়।জাপানে আশার দিন গুলো আলোরার জন্য সহজ ছিলে না।স্কলারশিপ এ আসলে ও তার প্রয়োজন ছিলো অনেক টাকার।সে শুরুর দিকে দিন গুলো ভীষন কষ্টে কাটায়।এরপর একটা লিপলেট দেখে যায় একটি রেস্টুরেন্ট এ।এরপর সেখানে কাজ করতে থাকে সেই রেস্টুরেন্ট এ গান গাইতো কাফি তার মা জাপানিস হলে ও বাবা ছিলেন খাটি বাঙালি। এরপর বাংলাদেশি হওয়ার সুবাদে তাদপর মধ্যে সখ্যতা হয়।তারা জানতে পারে তারা এক মেডিকেল এ পড়াশুনা করছে।তারপর থেকে টানা প্রায় সাত বছর আলোরার সাথেই আছে কাফি।বন্ধু হিসাবে তাদের সম্পর্ক ভীষন ভালো তবে যত ভালো বন্ধুত্বই হোক না কেনো তা বন্ধুত্বর বাইরে এক পা আগাতে দেয়নি আলোরা।কাফির আচরনে বোঝা যায় এক আকাশ সমান অপেক্ষা নিয়ে  আলোরার সাথে পথ চলার আশায় বসে আছে সে।কিন্তু প্রতিবারেই আলোরা তাকে উপেক্ষা করে।


- এখন কেমন লাগছে?


- ভালো লাগছে।


- তখন কি হয়েছিলো,দেখলাম তুমি ভীষন নার্ভাস ফিল করছিলে।


- কিছু না।


- কিছু একটা ছিলো খুলে বলো আমাকে।


- তোমার জানার মতো তেমন আগ্রহ সূচক কোন বিষয় না কাফি।


কাফি পুনরায় হতাশ হয় কিন্তু আশা ছাড়ে না।আলোরা উঠে দাড়ায় নিজের কাপড় ঠিক করে হাটা ধরে। কেবিনে যেতে হবে।কাফি তার পিছু পিছু যায়।আলোরা ভাবে কিভাবে সে সবাইকে ফেস করবে? এতো বছর পর? সবার সাথে দেখা হবে তারা এখন কেমন আছে সকলে? আর মেহরাব ভাই! সে কি তার আলু কে মনে রেখেছে?হয়তো, হয়তো বা না।


অন্যদিকে মেহরাব সহ বাকি স্টুডেন্টরা সব গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে সকলে এয়ারর্পোটে দেখা করবে।তাদের সাথে তাদের ফ্যামেলি মেমবাররা ও এসেছে।মেহরাব এর সাথে আরো দুজন প্রফেসার  এসেছেন।সকলের থেকে বিদায় নিয়ে প্লেন যাত্রা শুরু করে তারা।প্লেনের শিড়ি দিয়ে উঠে ভেতরে প্রবেশ করতেই মেহরাব এর মাথা ঘুরতে থাকে।তার ভীষণ শরির দুর্বল লাগছে।আর কানের কাছে হাজারো সাপের ফস ফস শব্দ ভেসে আসতে থাকে।সে তার জায়গায় ব্যাগ টা রেখে ওয়াসরুমের দিকে আগায়।হাতে মুখে বার বার পানি দিতে থাকে।তার প্যানিক এ্যাটাক শুরু হবে এমন সময় তাহিয়ানা আসে তার কাছে অসুস্থা অনুভব করায় কোন ভাবে সে দরজাটা ভালো করে আটক দিতে পারেনি ওয়াসরুমের।এজন্য তাহিয়ানা আসে, সে মেহরাবকে এ অবস্থায় দেখে চমকে ওঠে।ভয় পায় এগিয়ে এসে তার মাথায় হাত বুলায় তার চোখ মুখ পানি দিয়ে মুছিয়ে দেয় আর তার হাত শক্ত করে ধরে বসে থাকে অনেক্ষন।বেশ অনেক সময় পর মেহরাব এর শরিরে শক্তি আসতে শুরু করে।সে আস্তে আস্তে উঠে বসে।এরপর নিজের শরিরটা তাহিয়ানার কোলে দেখতে পেয়ে ছিটকে সরে আসে আর সরি ও ধন্যবাদ বলে নিজের ছিটে গিয়ে বসে।তহিয়ানা মনে মনে চিন্তিত হয়ে পড়ে মেহরাব এর কি হয়েছে হঠাৎ এমন হলো কেনো? আজ সে না থাকলে কি হতো।আবার সে এতো কাছাকাছও গিয়েছিলো মেহরাব এর ভাবতেই খুশিতে সে নেচে ওঠে।তার গালে লজ্জারা এসে ভর করে।


চলবে...

গল্প: বাধন হারা বেনী পর্ব ১৭

 গল্প: বাধন হারা বেনী

লেখনী: সানজিদা আহমেদ শাহারা

পর্ব: ১৭


- শব্দ ভান্ডারে কি শব্দরা নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে নাকি হারিয়ে যাচ্ছে? নাকি শব্দের সাথে শব্দের জোড়া লাগাতে ভুলে যাচ্ছেন সেই বেপার টা আমি বুঝতে পারছি না মিস তাহিয়ানা।


- আসলে,মানে,হয়েছে কি...


- অযথা বাক্য অপচয় না করে সমস্যা খুলে বলুন।


-নাহ কিছু না( আপনার সামনে এলেই তো শব্দরা আমাকে ধোকা দিয়ে বনে পালায়)।


- তাহলে আপনি যেতে পারবেন না তাই তো?


- না না আমি যাবো। শুধু আমার বাসায় বলে দিতে হবে।

 

আচ্ছা ঠিক আছে, আপনার ডির্পাটমেন্ট এর প্রোফেসর এর সাথে কথা বলুন।


- আপনি বললে...


- নো মিস তাহিয়ানা, আপনি এখন আসতে পারেন।


তাহিয়ানা মেহরাব এর রুম থেকে বের হয়ে একটা লম্বা শ্বাস নিলো।মেহরাব স্যারের সামনে গেলে তার ভীষন প্রেম প্রেম পায় ইশ লজ্জা লজ্জা।


তাহিয়ানা ভাবতে থাকে আনমনে,

-আচ্ছা মেহরাব স্যারের মুখে তাহিয়ানা নাম টা আরো বেশি সুন্দর লাগে শুনতে তাই না।তবে যতটা ভালো

 ভেবে ছিলাম তত টা ভালো না। কচ্ছোপের খোলসে সিংহ টাইপ লোক।তাতে আমার কি?  আমার তো তাকেই লাগবে হায় হায় উনি এতো কিউট! না জানি আমার ভবিষ্যৎ বাচ্চা কাচ্চা,নাতি-পুতি কত্তো কিউট হবে।আহা টমেটো বড়ই সুস্বাদু....।


মনে মনে এসব আবল তাবল বকতে বকতে চলল প্রফেসর'স দের রুমের দিকে।তাহিয়ানা অর্নাস ফাস্ট ইয়ারে পড়ে।বাবা- মায়ের তৃতীয় সন্তান।বাবার অনেক সখের মেয়ে সে আগেই দুই ভাই আছে তার।তার বাবার বরাবরই সখ ছিলো একটি কন্যার একে একে দুটি ছেলের পর এই মেয়ে যেনো তার আস্তো কলিজা।দুনিয়া এদিক ওদিক হবে কিন্তু মেয়ের চোখে পানি আসবে না।তাহিয়ানার বড় ভাই কামরুল শেখ একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্ম কর্তা।অন্য ভাই আমিরুল শেখ একজন ইন্জিনিয়ার।তার বাবা আসলাম শেখ একজন বিশিষ্ট ব্যবসাহী।তহিয়ানার মা তহমিনা বেগম একজন গৃহীনি আবার ফ্রিলেন্সিং ও করেন।তাহিয়ানার পরিবারের ইচ্ছা সে একজন ব্যারিস্টার হবে।তাই তাকে এত দুরে পড়তে পাঠানো।ফাস্ট ইয়ারে মাত্র ছয় মাস হলো ক্লাস শুরু হয়েছে ইতি মধ্যে পুরো ক্যাম্পাস তার উৎপাতে অতিষ্ঠ।সবার একটায় কথা এতো লাফায় কেন এই মেয়ে?দেশের মধ্যে যেকোন জায়গায় যেতে তার কারো অনুমতি লাগে না তবে দেশের বাইরে যেতে তো অনুমতি লাগবেই। তার পরিবার তাকে এখনি যেতে দেবে কি না সে বুঝতে পারছে না।এজন্যই প্রফেসর কে দিয়ে বাসায় বলাবে যাতে না বলার সুযোগ না থাকে।তার ভাবনা অনুযায়ী কাজ হয়ে যায় একজন বৃদ্ধ প্রফেসর রাজি হয় বাসায় জানাতে।বাসায় প্রথমে আপত্তি দেখালে ও নিরাপত্তার কথা জানতে পেরে যেতে দিতে রাজি হয়।অবশেষে তাহিয়ানা যাবে স্টাডি ট্যুরে।তার কাছে এটা যতটা না স্টাডি ট্যুর তার থেকে দিগুন হলো ক্যাম্পাসের বাহিরের আউট ফিটে মেহরাবকে দেখতে পাওয়ার আকুল ইচ্ছা।


মেহরাব আজকে অনেক দিন পর তার বাগানে এসেছে।এটা সেই বাগান যেখানে সে একসময় দিনের ও রাতের অধীকাংশ সময় পার করতো।তবে এখন শুধু কাজের জন্যই আশা পড়ে।ব্যাস্ততা বড়ই খারাপ জিনিস।বাগানের গাছ গুলোর যত্ন নিতে নিতে সে ডুব দেয় অতীতে।


সেবার যখন তাসলিমা বেগম এর কেস টা সমাধান করে বাড়িতে এলো।তারপর একদিন মতো সে বেশ অসুস্থ ছিলো।সেদিন রাতে ভীষন পিঠে ও ঘাড়ে ব্যাথা করছিলো তার।বাগানে কাজ করলেই রাতে তার এই ব্যাথার উৎপত্তি হয়।সে ব্যাথায় বেশ নাজেহাল পেইন কিলারে ও বিশেষ কাজ হয়নি।ঘন ঘন দম নিচ্ছিলো  আলোরা তখন কোথা থেকে এসে হাজির। মেহরাব একটা প্যান্ট পড়া আর উদাম গায়ে উপুড় হয়ে শুয়ে ছিলো।আলোরা মাথা নিচু করে তার কাছে এসে দরজাটায় ছিটকিনি দিতে গিয়ে নাজেহাল সে ছোট কিনা লম্বায়।মেহরাম হুশ করে একটা দম ছাড়ে।উঠে গিয়ে দরজায় ছিটকিনি আটকায়।আর সরু চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করে


-কি চায়?


আলোরা নির্ভয়ে উত্তর দেয়।

- আপনি ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলেন তাই একটু গরম পানি করে এনেছি ছেক দিলে ভাল্লাগবে।


- কে দেবে ছেক?


- আমি দিবো।


- তুই দিবি? চোখ তুলে তাকাতে পারছিস না আর তুই কি না দিবি ছেক?কই তাকা আমার দিকে?


- আমি পারবো, শুধু আপনি তাকাবেন না।


- আমি তাকাবো না?


- না


- কেনো?


- আপনার চোখ দুইটা কেমন জানি?


- কেমন?


- জানি না


- আচ্ছা যা করতে আসছিস কর আর বিদায় হ'।এমন রাত-বিরাতে আর আসবি না আমার রুমে।ব্যাড ম্যানর্স।


- সে দেখা যাবে


- আগে আপনি শুয়ে পড়েন।


- মেহরাব গিয়ে শুয়ে পড়ে।


টিউব লাইট অফ করা সাধা ডিম লাইট জ্বলছে।আলোরা গরম পানির পাত্র থেকে ভাব নিয়ে মেহরাব এর পেটের কাছে বসে পিঠে আর ঘাড়ে ভাব দিতে থাকে।মেহরাব এর আরাম লাগতে শুরু করে।সে মনে মনে ভীষন খুশি হয় আচ্ছা এই উপকারের বদলে সে আলোরাকে  কি উপহার দেবে?আচ্ছা টুক করে একটা চুমু খেলে কি ও চমকে যাবে?না থাক এমন করা ঠিক না।হঠাৎ মেহরাব আলোরার দিকে ঘুরে শোয় আর 

সরু চোখে তাকায়।


-কি হয়েছে?খারাপ লাগছে?


-না রে


-তাহলে


-এখন অনেক রাত তো ক্ষুধা লাগছে


-কি খাবেন বলেন এনে দেয়।


- আলু ভার্তা


- এতো রাতে?


- হুম


- এখন আলু সিদ্ধ করে মাখতে তো  সময় লাগবে।


- আলু সিদ্ধ করা আর মাখানো সাথে খাওয়া সব আমার দায়িত্ব।


- আপনি করবেন?


- আমার জিনিস আমি ছাড়া কে করবে?


- আচ্ছা বেশ চলুন তাহলে


- কোথায় যাবো?


- আলু ভর্তা করতে।


- আরে আমার ভোলাভালা আলু আমি তো তোকে ভর্তা করবো।


কথাটা বলেই মেহরাব আলোরার গলায় মুখ ডুবায়।মেহরাব নিজের নিয়ন্ত্রণে ছিলো না সেদিন আলোরা তার চুল খামচে ধরে তাকে আটকাতে চেষ্টা করে কিন্তু ব্যার্থ হয়।একটা সময় মেহরাব শান্ত হয়ে আসে নিজে থেকেই। কিন্তু গলায় একটা লাল কাচশিটে দাগ পড়ে যায় আলোরার।লজ্জায় সে মাথা তুলে দ্বিতীয় বার আর তাকাতে পারে না মেহরাব এর দিকে।দরজার কাছে দৌড়ে যেয়ে ও বের হতে পারে না।মেহরাব তার ছটফটানি দেখে হাসে।উঠে দরজা খুলে দিলে এক ছুটে আলোরা বের হয়ে যায় রুম থেকে।


মেহরাব তাদের এই অতীত স্মৃতি গুলো যত্ন করে তুলে রেখেছে।একদিন সে খুব কড়া করে জবাব চাইবে আলুর থেকে কেন তাকে মাঝ পথে একা ফেলে পালালো? কি দোষ করেছিলো সে?বাগানের কাজ শেষে উঠে হাত ধুয়ে চেয়ার এ বসে চুপ চাপ আকাশ পানে তাকায়।


-তুই বড্ড নিষ্ঠুর চাঁদ।কেউ না জানুক তুই তো জানিস সে কোথায়?তাও বলবি না?হ্যা রে চাঁদ বেঁচে আছে তো?শ্বাস নেয়?


মেহেরাব একটা শুকনো হাসি হাসে তার গলা দিয়ে বেরিয়ে আসে এক করুন সুর...


Ek din aap yoon hamko mil jaayenge

Phool hee phool raahoon mein khil jaayenge, maine sochaa naa tha


Ek din aap yoon hamko mil jaayenge

Phool hee phool raahoon mein khil jaayenge, maine sochaa naa tha


Ek din zindagi itanee hogee haseen

Jhoomegaa aasamaan, gaaegi ye zameen

Ek din zindagi itanee hogee haseen

Jhoomegaa aasamaan, gaaegi ye zameen, maine sochaa naa tha।


- আমাদের গন্তব্য তো একই ছিলো চাঁদ।তাহলে আমাদের পথ ভিন্ন হলো কেনো? আমার সবটা জুড়ে তো সে তাহলে তার বিশালতায় আমি নেই কেনো?


তার চোখের কোনা বেয়ে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে এসে নিচে পড়ে যায়।চাঁদ টা ডুবে যায় আধারের দুনিয়াতে সে লজ্জিত বোবা হওয়ার কারণে।


চলবে?