গল্প: বাধন হারা বেনী পর্ব ৯

 গল্প: বাধন হারা বেনী

লেখিকা: সানজিদা আহমেদ শাহারা

পর্ব:৯


ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে দেখে মেহরাব কালকের পর পুরো বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে দিয়েছে।কি এমন জিনিস বা কি এমন রহস্য রয়েছে যার জন্য এই এতো সমস্যার সম্মুখীন সকলের হতে হচ্ছে।আলোরা অনিমা অনেকটাই ভয় পেয়ে গিয়েছে।তাই তারা আজ লম্বা একটা ঘুম দিচ্ছে।সোমেহরা, তনিমা,সোহরাব,মেহরাব সকলে মিলে আলোচনা করছিলো তারা কতদুর আগাতে পেরেছে এই রহস্যের ব্যাপারে। তারা এসেছিলো গণধর্ষনের শিকার তাসলিমা বেগমের উধাও হওয়া রহস্য বের করতে এসে ফেসে গিয়েছে এই জমিদার বাড়ির রহস্যে।সারাদিন তারা তাদের পাওয়া তথ্য গুলো জুড়ে দেখে এই সিদ্ধান্তে পৌছালো যে এখানে একটা কিছু আছে যা মিথ্যা।কিন্তু তা কি সে বুঝতে পারছে না।

দিন গড়িয়ে রাতের আধার নেমেছে।তনিমার ঘুম না আসায় সে যে রুমে থাকে তার বেলকনিতে হাটাহাটি করছিলো।এমন সময় একটা দমকা গরম বাতাস তার শরিরে এস্পার ওস্পার হয়ে গেলো।সে বিষটা অতটা পাত্তা না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।কারণ তার বেশ ঘুম আসছিলো এখন।রাতে ঘুমের মধ্যে সে কিছু খন্ড চিত্র দেখে চিত্র গুলো এমন যে গ্রামের লোক এক সাথে লাশ নিয়ে কোথা ও যাচ্ছে।তারপর কোন একটা অল্প কিশোরী মেয়ে লাশ জড়িয়ে কাদছে।তার ঘুম ছুটে যায়।যতবারই ঘুমায় ততবারই এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্চে তাকে।এরপর পাশ ফিরে সোমেহরাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।ঘুম তখন তার চোখে পাকাপক্ত হয়ে পড়েনি হঠাৎ তার খেয়াল হলো সোমেহরাকে সে কিভাবে জড়িয়ে ধরতে পারে?  সেমেহরা তো অনিমার কাছে ঘুমিয়েছে আজ।তাহলে তার পাশেকে? ঘুম ছুটে যায় তার কারো গায়ে রাখা হাতটায় ঠান্ডা শরিরের ছোয়া পায় সে।

ভয় ভয় চোখে তাকিয়ে দেখে পাশে কেউ নেই।তখন তার অন্যপাশ থেকে একটা কনকনে শিতল কন্ঠ বলে ওঠে "ঘুমিয়ে পড়ো রাত হয়ে গিয়েছে।"তার ঘুম ছুটে গিয়েছে বহু আগে একটা ঠান্ডা হাত তাকে বেশ শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে।সে না পারছে নড়তে আর না পারছে কোন ভাবে এখান থেকে ছুটে যেতে।সে তো ভয়েই অস্থির।মেহরাব এর চোখটা ঘুমে একটু লেগে আসছিলো এমন সময় একটা বিড়াল এর কর্কশ আওয়াজ কানে এলে ঘুম ভেঙে যায় তার।এদিক ওদিক তাকিয়ে বিড়াল খুজে না পেয়ে ল্যাপটপের স্কিনে তাকাতে চোখে বাধে তনিমাকে সে অদ্ভুতভাবে হেটে চলেছে যেনো কোন এটা কিছু তাকে আকর্ষন করছে মেহরাব খেয়াল করে সে ছাদের দিকে যাচ্ছে।সে দ্রুত সোহরাবকে জাগিয়ে তোলে এবং ছাদের দিকে ছুটে যায় দুই ভাই।সেখানে সোহরাব দ্রুত তনিমাকে আটকে নেয়।তনিমা যেনো নিজের মধ্যে নেই তাকে ধরতে গেলেই গর্জন করে উঠছে।সোহরাব সামলাতে পারছে না দেখে মেহরাম দ্রুত তার ও সোহরাব এর শরির বন্ধ দিয়ে তনিমার কড়ে আঙুল এর নখে চাপ দিয়ে দোয়া পড়তে শুরু করে।একটা সময় এসে তনিমা জ্ঞান হারায় সোহরাব তাকে পাজা কোলে করে নিয়ে যায় তার রুমে। সেখানে গিয়ে তো তারা চরম পর্যায়ের অবাক তনিমা খাটে সুয়ে আছে অচেতন অবস্থায় তাহলে তাদের কোলে কে?

কোলে থাকা তনিমা তখন সোহরাব এর গলা চেপে ধরে বিদঘুটে ভঙ্গিতে হাসতে থাকে।মেহরাব দ্রুত আজান দেওয়া শুরু করে।আজান শেষ হতেই পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে যায় বিছানায় থাকা তনিমা গায়েব হয়ে গিয়েছে।আর সোহরাব এর কোলে থাকা তনিমা নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে।তখন দুর থেকে খুব ক্ষীন আওয়াজে আজান এর শব্দ ভেসে আসছে।

.................................................


সকালে সকলে মিলে একটা রাউন্ড টেবিলে সকালের নাস্তা করতে করতে মিটিং এ বসে।


অনিমা- সেদিন রিসার্চ করার সময় আমি একটা চঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি।কিন্তু গত একদিনে তা বলা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।


সেমেহরা- কি এমন তথ্য আছে তোর কাছে?


আলোরা: রাজেন্দ্রর চারটে নয় তিনটে কন্যা ছিলো। তিন জমিদার গিন্নীর চার কন্যা নয় তিন কন্যায় ছিলো।


মেহরাব- তাহলে চার কন্যার কথা বলে কেনো সকলে?


অনিমা- এই কন্যাটিই হলো ছোট কন্যা রাজ তরঙ্গীনি।তিনি একজন দাসীকন্যা।কিন্তু তার পিতা ছিলো রাজেন্দ্র স্ত্রীরা যখন গর্ভাবস্থায় ছিলো তখন রাজেন্দ্র তার এক দাসীর সঙ্গে কুকর্মে লিপ্ত হয় এবং মাসের মাথায় দাসী সন্তান সম্ভাবা হয়।নিজের এই অপকর্ম লুকাতে সে দাসীকে অন্য এক জায়গায়তে সরিয়ে দেয়। যখন স্ত্রীদের সন্তান প্রসব হয় তখন তাদের সাথে ওই দাসীকন্যাকে মিলিয়ে দেয় এমন ভাবে যেনো তারা ঐ সন্তানের জন্ম দিয়েছে।কিন্তু জমিদার গিন্নীদের সন্দেহ হতে থাকে ছোট কন্যার উপর।একদিন জমিদারকে তার ছোট স্ত্রী সেই দাসীর সাথে দেখে নেয় এবং তাদের গোপন কথা শুনে বাকি গিন্নীদের বলে দেয়।এরপর তিন গিন্নী মিলে ফন্দি এটে রাজাকে ভারতে কামরুপ কামাক্ষাতে যাদু বিদ্যা শিখতে পাঠায়।এরপর নিজেরা ও যায়।তারা ভেবেছিলো জমিদারের অগচরে দাসীকন্যাকে যেকোন ভাবে হত্যা করবে তার মধ্যেই তরঙ্গীনি এক সাধুর প্রণয়ে আসক্ত হয়।এতে করে জমিদার গিন্নীরা তার ক্ষতি করতে ব্যর্থ হওয়ায় এক সাধুকে অর্থ দিয়ে কিনে নিয়ে তাকে দিয়ে তরঙ্গীনির উপর যাদু করায়।এতদিনে জমিদারের ও যাদু শেখা শেষ  তারা বাংলাদেশে ও ফিরে আসে এরপর থেকে যাদুর প্রভাবে তরঙ্গীনি অসুস্থ হতে শুরু করে।আর সব কিছু না জানা রাজা তরঙ্গীনির প্রণয়ে আসক্ত সাধুকে দোষারোপ করে ও খুজতে থাকে।অন্যদিকে তরঙ্গীনিকে খুজতে এসে তার সাথে এমন অন্যায় হয়েছে সেই  খবর গোপনে পেয়ে সেই সাধু রাগের বষবর্তী হয়ে জমিদার গিন্নীদের শিক্ষা দিতে তার কন্যাদের উপর চরম যাদু করে।এরপরের কাহিনী সকলেই জানি তবে এখানে কথা হচ্ছে কোনটা আসল ঘটনা আর কোনটা নকল তা এখন আমাদের কে বলবে? কারণ দুটো ঘটনার মুল কাহিনীই এক।


সোহরাব- ওয়েট ওয়েট এর মানে তুই কি বোঝাতে চাচ্ছিস এখানে সাধু আর রাজতরঙ্গীনি জমিদার গিন্নদের ক্রোধের শিকার।


সোহমেহরা- আরো একটা টুইস্ট আছে গাইজ।


মেহরাব- হোয়াট?


সোমেহরা:তনিমা আর আমি যখন রাহিলা বেগমের বাড়ি গিয়েছিলাম তখন তিনি অসুস্থ ছিলেন তার বাড়িতে কেউ ছিলো আমরা যথাসম্ভব তাকে যত্ন করেছিলাম তিনি আমাদের আবারো কাহিনী ডিটেইলছে বলে তবে এখানে একটা কাহিনী নতুন ছিলো তা হলো ঐ সেই পশুর হাতে ধর্ষন।আমি ঘর পরিষ্কারের সময় একটা বাক্স পেয়েছিলাম তার ঘরে তো সেই বাক্স টা পা দিয়ে আর একটু ভেতরের দিকে ঠেলা দিতে গিয়ে কিভাবে যেনো খুলে গেলো বাক্সটা তখন তাতে আমি কিছু পুরাতন আমলের গয়না পায় এরপর তার ছবি তুলে গুগোল করতেই তার বয়স বেরিয়ে আসে প্রায় ১০০ বছর পুরনো গয়না ওগুলো।এখন কথা হলো সাধারণ মানুষের ঘরে একশো বছরের পুরনো গয়না কিভাবে আসবে?আর কেনোই বা আসবে এর মধ্যে নিশ্চই কিন্তু আছে।


অনিমা- চলো রাহিলা দাদিকে চেপে ধরি সত্যিটা তিনিই জানবেন।


মেহরাব- না এটা আমরা করতে পারি না।


সোহরাব- কেনো?


মেহরাব- কারণ পুরো পাজেল টা উনি ক্রিয়েট করেছে।

উনি সবটা জানেন কিন্তু একটা জিনিস জানেন না আর তা আমরা জানি এখন।


আলোরা- আমরা কি জানি?


মেহরাব- সব বললে মজা থাকবে না।যা তো আলু সবার জন্য গরম গরম চা নিয়ে আয়।


আলোরা- মানে সিরিয়াস মোমেন্ট এ এটা কেমন কথা?


মেহরাব- সোমেহরা আলু আজকাল বড্ড কথা বলে তাই না।


চলবে...


ভালো হয়ে গেছি বলায় আবার ও সমস্যায় ভুগছি তাই এবার আর কিছু কমু না😑।

গল্প: বাধন হারা বেনী পর্ব ৮

 গল্প: বাধন হারা বেনী

লেখিকা: সানজিদা আহমেদ শাহারা

পর্ব:৮


নিস্তব্ধ নিশুতি রাত ঘড়ির কাটায় সবে সাত টা বেজে আট মিনিট।

এর মধ্যেই জঙ্গলে ঘেরা জমিদার বাড়িটা কেমন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে।অনিমা তার জন্য বরাদ্ধ রুমে  বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো।এমন সময় আলোরার চিৎকার তার কানে আসে।সে এগিয়ে যায় নিচের দিকে দোতলার করিডর বেয়ে এসে ডান কর্নারের সিড়ি ঘেসে নিচে তাকিয়ে দেখে দরজাটা বন্ধ করা কিন্তু আলোরা কোথাও নেই।তখন ও একটা ক্ষীন চিৎকারের আওয়াজ কানে আসছে সে একে একে সিড়ি বেয়ে নিচে নামে এরপর আস্তে আস্তে সদর দরজার কাছে এগিয়ে যায় বাইরে থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে আলোরা কাদছে না অন্য কেউ কাদছে। এই জঙ্গলে এমনি সময় দিনের আলোতে মানুষ খুজে ও পাওয়া যায় না এখন কে এলো? দরজার ছিটকিনি খুলবে অনিমা এমন সময় আলোরা পিছে থেকে তার কাধে হাত রাখে অনিমা ভয়ে চিৎকার করলে আলোরা ও তার সাথে চিৎকার জুড়ে দেয়।দুজনেই বেশ ভয় পেয়ে আছে।জমিদার বাড়িটায় এখন তারা দুজন জীবিত প্রানী ছাড়া আর কেউ নেই।দুজনে দোতলায় উঠে খোলা বারান্দা থেকে দেখার চেষ্টা করে বাইরে কে এসেছে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে পুরো এরিয়াটা অন্ধকার হয়ে গিয়েছে।ভাবতেই গা শিউরে ওঠে ওদের।বার বার সোহরাব কে ফোন করতে থাকে আলোরা।কিন্তু তারা ফোন ধরছেনা।কান্নার আওয়াজ টা আবার ও তীব্র হচ্ছে।দুজনে দ্রুত নিজেদের শরির বন্ধ দিয়ে ফেলে।এরপর তারা ভালো ভাবে খুজতে থাকে বেইরের কোন পাশ থেকে আওয়াজ টা আসছে।আওয়াজের মাত্রা এতোই তীব্র হচ্ছে যে যত সময় যাচ্ছে তা শোনা যেনো ততই অসহ্য হয়ে উঠছে। কিছু সময় পর ভারি বাতাসের সৃষ্টি হয়। বাতাসের দাপট এতো বেশি যে তা ঘরের মধ্যের জানালা দরজা ভেঙে ফেলতে সক্ষম এমনিতেই বিদ্যুৎ এর ভালো ব্যবস্থা এখানে ছিলো না।সোলার আর এমনি কিছু মোমবাতি তারা কিনে এনেছিলো।তার মধ্যে এই ঝড় আসবে কে জানতো দুজনে দু  দুদিকে ছুটে জানালা আটকাতে গেলো যাতে করে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো বাতাসের দাপটে ভেঙে না যায়। আলোরা জানালা আটকে দ্রুত বাড়িটা বন্ধ দিয়ে দিলো তারপর একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে অনিমার কাছে গেলো দেখলো অনিমা বাইরে তাকিয়ে আছে।আলোরা ও গিয়ে বাইরে তাকাতেই এক বিভৎস দৃশ্য চোখে এলো তার সেখানে সোহরাব বাড়ির বাইরে বসে কিছু একটা করছে আসলে সে সোহরাব কিনা তা ও বোঝা যাচ্ছে না।অবয়ব টা তার মতো এজন্য সোহরাব মনে হচ্ছে। কি করছে বুঝা যাচ্ছে না দেখে জানালার আরো কাছে এগিয়ে এলো তারা বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় দেখা গেলো বুনো শুকর এর মাংস খুবলে খাচ্ছে সে এবং অনিমা ও আলোরা দিকে ফিরে বিদঘুটে একটা হাসি দিলো ।এরপর এক দৌড়ে এলো জানালার সামনে ঠিক অনিমা আলোরার মুখোমুখি ইংলিশে যাকে বলে Face to Face এতে অনিমা ভয়ে অজ্ঞান হয়ে ঢলে পড়ে মাটিতে আলোরা খুব একটা শক্তি পাচ্ছে না টিকে থাকার।তাদের কপাল ভালো যে তখন শরির বন্ধ দিয়ে দিয়েছিলো।আর বুদ্ধি করে বাড়ি বন্ধ দিয়ে ছিলো।না হলে আজ তারা নির্ঘাত মারা যেতো।জিনিস টা জানালা থেকে সরে যেতেই আলোরা সজোরে জানালার কপাট টা লাগিয়ে দিলো।টেবিল থেকে পানির বোতল এনে অনিমার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু অনিমার কিছুতেই জ্ঞান ফিরলো না এর মাঝে সোহরাব এর মতো দেখতে অবয়ব টা আবার ও চার হাত পা দিয়ে বাড়ির বাইরে টিকটিকির মতো বাওয়া বাই করছে জানালায় ধাক্কা দিচ্ছে এমন সময় বাইরে থেকে সোমেহরার আদুরে ডাক ভেসে আসে আলোরা কান্না করে দেয়।এতো সময় একা ভীষণ ভয় করছিলো তার ।এর আগে একা সে এতটা সময় কোন জিনিসের মোকাবেলা করেনি সবসময় মেহরাব তাকে আগলে নিয়েছে।কোথায় মেহরাব ভাই তার মন টা হু হু করে কেঁদে ওঠে তার জন্য মা-বাবা নেই তার মরে গেলে এই ভাই-বোন গুলো ছাড়া কেউ মনে রাখার মতো নেই।তবে আজ কেনে সবাইকে রেখে শুধু আসন্ন নরকীয় মৃত্যু দেখে বার বার মেহরাব ভাইকে মনে পড়ছে।লোকটা থাকলে আজকে তাকে আগলে নিতো যেমন করে খোলসের আবরনে ডিমের কুসুম লুকিয়ে থাকে। সে দৌড়ে দরজার কাছে যেতেই তার পিলে চমকে যায় কোথায় সোমমেহরা আপু এখানে তো একটা আধমরা শুকর পড়ে আছে।শুকর এর গলা থেকে মাংস খুবলে নেওয়া হয়েছে সেখান থেকে রক্ত বের হচ্ছে দেখে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আলোরা।

এরপর যখন তার জ্ঞান ফেরে তখন মেহরাব তার মুখের কাছে অনেকটা ঝুকে ছিলো। চোখ মুখ কোচকানো মুখে চিন্তার ছাপ।আলোরা তাকে দেখে সাত-পাঁচ না ভেবে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।আর কান্না করে দেয়।বার বার বলতে থাকে।


- আমি আপনাকে ডেকে ছিলাম আপনি কেনো আসেননি আমাকে কেনো একা রেখে গেলেন।


- আমি যদি আজ মরে যেতাম

 

- আমাকে কেনো একা রেখে গেলেন।


- আমি বাসায় ফিরে যাবো।


মেহরাব শান্ত কিন্তু উদ্বিগ্ন স্বরে বলল

-আলু

শান্ত হ

আমি আছি তো কোন চিন্তা নেই দেখ সবাই আছে।


আলোরার তাতে কোন হেলদোল নেই সে যেনো তার সব থেকে নিরাপদ স্থানে আছে।শক্ত পোক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাদঁতে লাগলো।সকলে তাদের কিছু সময় একা ছেড়ে দিলো কারণ আজ সকলের উপর দিয়ে ভীষন ঝড় গিয়েছে।আলোরা ভীষন ভয় পেয়েছে তাকে দেখলেই বোঝা যাচ্ছে ভয় কাটাতে হবে না হলে এই পেশায় টিকে থাকা যাবে না।

সকলে চলে যেতেই মেহরাব আলোরাকে নিজের মতো করে জড়িয়ে নেয় আর বাচ্চা ভোলানোর মতো করে কথার ছলে ভুলাতে থাকে।কিন্তু বার বার সে একই কথা আওড়াতে থাকে মেহরাবকে সে ডেকেছিলো মেহরাব আসেনি।


মেহরাব বোঝে কিছু একটা হাসে সে।জানালার বাইরে দিয়ে চাঁদের চিকচিকে আলো দেখা যাচ্ছে আজকের চাঁদটা একটু বেশি লাল।


আলোরা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে।মেয়েটা এতো ভয় কেনো পেয়েছে সে ছিলো না বলে নাকি তাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে ?


মেহরাব তাকায় চাঁদের দিকে চাঁদ বোদ হয় বোঝে এই চাহনি।তাই তো ভেসে আসা মেঘ কে সরিয়ে দিয়ে বিজ্ঞ দের মতো করে জ্বল জ্বল করে জ্বলে রইলো।

মেহরাব তার পানে তাকিয়ে মনে মনে  বলল


- যাতা কলে ফেল্লি আমাকে?মজা নিস?


চাঁদ হয়তো তার অসহায়ত্বে হাসলো।


মেহরাব আবার ও মনে মনে বলল


- জানিস চাঁদ আমার অষ্টাদশী আমাকে তার বিপদে খোজে দেখ ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে সে আমার বুকে ঠায় খুজেছে।


চাঁদ এবার তাচ্ছিল্য করে হয়তো বলল

- সজ্ঞানে কখনো পাশে বসে?


আলোরা এবার তাদের কথোপকথনে ভাটা টানলে।সে নড়ে চড়ে বসল।মেহরাব তাকে পানি খেতে দিলো।অনিমার থেকে সবটা শুনেছে তার অজ্ঞান হওয়ার পর আলোরার কি হয়েছিলো তা শুনতেই সে অস্থির হয়ে আছে।আলোরা কাঁপা কাঁপা গলায় সব টা বলল।

মেহরাব এর কপালে তখন চিন্তার ভাজ স্পষ্ট।


চলবে।


" এখন থেকে নিয়মিত গল্প দিবো। আর কোন সমস্যা নেই☺️☺️।"

গল্প: বাধন হারা বেনী পর্ব ৭

 গল্প: বাধন হারা বেনী

লেখিকা: সানজিদা আহমেদ শাহারা

পর্ব:৭


পাজেল সমাধান করার কিছুক্ষন পর দেওয়াল কাপিয়ে একটা ছোট্ট রুম তার সামনে উন্মুক্ত হয়।সে এগিয়ে গিয়ে দেখে সেখানে একটা চাবি রয়েছে কিন্তু অনেক গুলো কুচকুচে কালো সাপ তা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে।মেহরাব সর্পভাষী হওয়ায় তার চাবিটা পেতে বেশি বেগ পেতে হয় নি।সে তার মায়ের থেকে এই সর্পভাষা রপ্ত করেছিলো ছোট বেলায়।চাবি নিয়ে সে বের হয়ে আসে।সে বের হতেই দরজা পুনরায় লেগে যায়।সে চাবি নিয়ে হাতে নিয়ে ভাবছিলো এটা কিসের চাবি আর এতো পাহারায় কেনো ছিলো? হাটছিলো ছাদ থেকে নেমে আসতেই তার সামনে থেকে এক অপরুপা রমনী চাঁদের আলোই যার #বাধন হারা বেনী খুলে এলো মেলো হয়ে যাচ্ছিলো কেশগুচ্ছ। সে একের পর এক পা ফেলে তাকে পেরিয়ে সামনের দিকে চলে গেলো।মেহরাব আর আগু-পিছু না ভেবে তার পিছু পিছু এগোতে থাকে।


(এর পর এর কাহিনী তো পর্ব ৫-৬ এ পড়েছেন)

........               .........             .............           ............

 

দুজনে রুম থেকে বেরিয়ে এসে বার রুমের সকলকে জাগায়।সকলে আধা ঘুম থেকে উঠে এসে বসে আলোরার রুমে।তখন দরজা দিয়ে মেহরাব টেপরেকর্ডার টা বাজাতে বাজাতে রুমে প্রবেশ করে।সকলে বিষ্ময়ে তাকিয়ে থাকে একে একে সকলের জিজ্ঞাসু দৃষ্টির উত্তর দেওয়ার জন্য সব টা খুলে বলে তারা।


সোহরাব- এর মানে তোরা বলতে চাচ্ছিস যে এটা শুধুই তহমিনার অলৌকিক ধর্ষণ এর রসহ্য নয় এর সাথে জড়িত পুরো হেমল পুরের রহস্য?


মেহরাব- একদম তাই।


তনিমা- কিন্তু ভাই একটা কথা বোঝাও কাহিনীতে মিল কোথায়?


অনিমা- হ্যা মিল কোথায়?


আলোরা- মিল হলো এই টেপরেকর্ডার টা।দেখ মেহরাব ভাই যেভাবে ঐ রুম এর চাবিটা পেয়েছে তাতে ঐ রুমে আরো সংঘাতিক কিছু থাকার কথা সমান্য অন্ধকার আর একটা টেপরেকর্ডার এর থাকা টা একটু বেশিই অস্বাভাবিক।


সোমেহরা- এর মানে ঐ দরজা আরো আগেই খোলা হয়েছে।


আলোরা- হ্যা।


সোমেহরা- তাহলে তো #দর্পনে ছায়া খোজার সময় চলে এসেছে।


মেহরাব- best of luck guys.


রবির চিকচিকে আলোতে ঘুম ভাঙে তনিমার এটা হেমলপুরের জমিদার বাড়িতে তাদের তৃতীয় দিন।তারা আজ যাবে রাহিলা বেগমের বাড়ি।কারণ তার থেকেই সব টা শুরু।সেই অনুযায়ী তনিমা ও সোমেহরা বেরিয়ে পড়ে।অন্যদিকে সকাল থেকেই অনিমা আর আলোরা ইন্টার নেট থেকে সমস্ত তথ্য জোগাড় করতে শুরু করে এই জমিদার বাড়ি সম্পর্কে।সোহবার ও মেহরাব গিয়েছে সেই কোয়াটার কাছে যেখান থেকে আওয়াজ শুনেছিলো আশার দিন সোহরাব।সকলের কাজের দাপট প্রচন্ড।


বেলা ১১ টা বেজে ১৮ মিনিট......


রাহিলা বেগমের বাড়িতে এসে পৌছালো তনিমা আর সোমেহরা।মাটির প্রাচীরে একটা বাশের বেড়া দিয়ে গেট বানানো।তারা রাহিলা বেগম কে ডাকলেন কিন্তু ভেতর থেকে কোন সাড়া এলো না।তখন তারা বাড়ির দরজা নিজেরাই খুলে ভেতরে গেলেন।সেখানে রাহিলা বেগম বিছানায় কাতর হয়ে শুয়ে আছেন তার ভীষন জ্বর।এটা দেখে তার দ্রুত তাকে পরিষ্কার করে ওষুধ ও খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন।বিকালের দিকে তিনি সুস্থ হলেন অনেক টা।তার রুম তখন পরিষ্কার করছিলো তনিমা।খাটের নিচ টায় একটা ছোট্ট পুরাতন কাঠের বাক্সতে তার হাত লাগে কি আছে এই বাক্সে তা নিয়ে সে ভাবেনি বরং পা দিয়ে আরো খানিকটা দুরে ঠেলে দিয়ে কাজ শেষ করে।যদি ও বা এতো কাজ করতে তাদের কেউ বলেনি।কিন্তু এখানে রাহিলা বেগম একা থাকেন দেখে ভীষন খারাপ লাগে তাদের তারা অসুস্থ মানুষ টাকে দাদী সসম্মোধন করতে চেয়েছিলো বিধায় আর নিজেদের আটকাতে পারেনি। সোমেহরা রাহিলা বেগমের রাতের খাবার টা এনে পাশে রাখে এরপর তার কাছে বসে।তাকে আদুরে স্বরে প্রশ্ন করে


সোমেহরা- দাদি আপনার সন্তানরা কোথায়?


রাহিলা- তারা কিছু কাজে শহরে গিয়েছে দুই চার দিন পর ফিরে আসবে।


তনিমা- দাদি আমরা হেমলপুরের জমিদার বাড়ি সম্পকে আরো কিছু জানতে এসেছিলাম আপনি কি আর কিছু আমাদের বলতে পারনে যা আমাদের জানা জরুরি।


রাহিলা- তোমরা কতটুকু জানো তাতো আমার জানা নেই।


সোমেহরা- আমরা তেমন কিছুই জানি না।


রাহিলা- আমি তাহলে তোমাদের সত্যি টা শুনাই।


তখন জমিদারদের প্রভাব প্রতিপত্তিতে তাদের ধারে কাছে যাওয়া ও যেতো না।সেখানে হেমলপুরের জমিদার রাজেন্দ্র ছিলেন মাটির মানুষ ভগবান সমতুল্য ব্যাক্তি।আমার যারা প্রবীণ ছিলো তারা ওনার গুনোগান করতে ভুলতেন না।তিনি চেয়েছিলে কন্যা সন্তান। একে একে তার কোল আলো করে চার কন্যা এলো।সে কন্যাদের নাম রেখেছিলো রাজেশ্রী,রাজনন্দিনী, রাজলক্ষ্মী, রাজতরঙ্গীনি।কন্যাদের নামের সাথে তিনি সর্বদা চেয়েছিলেন ঐর্শ্বর্য বজায় রাখতে তাই এমন নাম করণ করেন তিনি।সময়ের সাথে কন্যারা বড় হতে শুরু করে।তিন মায়ের চার মেয়ে পুরো গ্রামের দৃষ্টি আর্কষন করত থাকে।জমিদারকন্যা হওয়ার পর ও তাদের মধ্যে অহংকার ছিল না।তারা সর্বদা নিপিড়িত মানুষের পাশে দাড়াতো।একটা সুখ বজায় ছিলো হেমলপুরে।রাজেন্দ্র ছিলো এই এলাকার শেষ জমিদার।তিনি প্রায় বিভিন্ন দেশে যেতেন নিজের মনের আত্মতুষ্টির জন্য।এমনি একবার তিনি যান ভারতে সেখানকার কামরুপ কামক্ষার আশ্চর্য যাদু বিদ্যা তাকে আর্কষন করে।তিনি যাদু বিদ্যা শিক্ষা নেন । নিজের প্রজাদের কল্যাণ এর কথা ভেবে।তখন মাঝে মাঝেই সেই গুহায় তার সাথে দেখা করতে তার সব থেকে আদরের ছেট কন্যা রাজতরঙ্গীনি সেখানে যেতো।যাতায়াতের মধ্যে তরঙ্গীনির একজন সাধুর সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে কিন্তু ভোলাভালা তরঙ্গীনি সাধুর মায়া বুঝতে পারেনি সাধু তার আলাভোলা চেহারার মায়ায় তরঙ্গীনিকে বশীভূত করে তার বলি চড়ায়।তার আত্মা শয়তানের কাছে হস্তান্ত করে সিদ্ধি লাভ করার জন্য।এরপর থেকেই রাজতরঙ্গীনি শারিরিক অসুস্থতা দেখা দেয়।তখন জমিদার রাজেন্দ্রও পরিবার নিয়ে দেশে ফিরে আসে কিন্তু জমিদারিতে আর মনোযোগ দিতে পারেনি আকষ্মিক ভাবেই তার ছোট কন্যাটি বিধস্ত অবস্থায় মারা যায়।কন্যা হারানোর শোকে পাগল প্রায় রাজা শয্যা নিলেন।মনে কারোরই শান্তি ছিলো না।তখন সেই কপট সাধু এ দেশে আসে।জমিদার তার সিদ্ধির জ্ঞানে বুঝতে পারেন কেনো তার আদরের কন্যার প্রান গেলো।এরপর তিনি সেই সাধুকে খুজতে শুরু করলেন।অন্য দিকে শয়তান সাধু তার রাজ্যেই ছিলো সে একদিন জঙ্গলে নিজের সিদ্ধির শক্তি আরো বৃদ্ধির জন্য জমিদার বাড়ির উত্তর পাশের বাগানে ধ্যানে বসেন খড়খড়ে রোদ্দুরের তাপে গাছের নিচে সে ধ্যান করছিলো সেখান থেকে খানিকটা ভেতরে ছিলো জমিদার কন্যাদের অবসর কাটানোর জায়গা তারা সেখানে শুধু মাত্র দাসিদের নিয়ে আমোদ করতো।সেই আমোদ হাসির আওয়াজ ও উচ্চ বার্তা স্বরে সাধুর ধ্যান ভঙ্গ হয় সে তার সঙ্গে থাকা একদল পাপিষ্ঠ জীনদের এই পুরো গ্রামে ছড়িয়ে দেন।এবং কিছু জঘন্য জীনদের জমিদার কন্যাদের উপর চালান করেন। কয়েক দিনের ভেতরে জমিদারকন্যারা অদৃশ্য কিছু পশু দ্বারা ধর্ষনের শিকার হন।রাজেন্দ্র নিজের অক্ষমতায় নিজেকে আরো দোষারোপ করতে থাকে কেনো তিনি কন্যাদের নিরাপত্তা দিতে পারছেন না।এরপর তিনি যখন কন্যাদের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন পাগল প্রায় হয়ে সে তার গুরুকে খবর জানায় তার সাথে হওয়া সব কথা বলে তার গুরু তার হয়ে একটি ভয়ংকর জাদু করে যার ফলে সে সাধু ধরা পড়ে এরপর তাকে জমিদার বাড়িতে জ্যান্ত দাফন করা হয়।

তারপর থেকে জমিদার বাড়িতে আর কেউ থাকতো না

 জমিদার মারা গেলে জমিদার গিন্নীরা কাশি চলে যান।রাজত্বের হাল বেহাল হয়ে পড়ে।জমিদার বাড়ি ধীরে ধীরে পরিত্যাগতো হয়ে যায় এরপর ইউনিয়ান পরিষদ এর আমলে সেই বাড়িটা একটু বাসযোগ্য করে তোলে যাতে কোন বাহির থেকে মেহমান বেড়াতে বা ঘুরতে এলে সেখানে থাকতে পারে। কিন্তু জঙ্গলের ভেতর হওয়াতে কউ আজ পর্যন্ত সেখানে থাকতে চায়নি। 

রাহিলা বেগম থামলেন।বাহিরে সন্ধ্যা নেমেছে।তনিমা ও সোমেহরা রাহিলা বেগম এর থেকে বিদায় নিয়ে বাহির হবে এমন সময় রাহিলা বেগম বলল


রাহিলা- তোমরা যাওয়ার সময় পেছন ফিরে তাকাবে না যাই হয়ে যাক।আর একটা কথা সাধুর কিন্তু এই গ্রামে সেই সব জঘন্য ভয়ংকর জীনদের এখনো ছাড়া রয়েছে ।কারণ তার মৃত্যুর পর আর কেউ তাদের আটকায়নি।সাবধান হিন্দু সাধু বামন গোত্রের ছিলো অতৃপ্ত আশা নিয়ে মরেছে। সে আবার তার প্রতিশোধ নিতে ফেরত আসবে।।


সোমেহরা ও তনিমা মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে পড়ে।আকাশে একটা থালার মতো চাঁদ উঠেছে পরিবেশ টা এতো সুন্দর ভয়ংকর কিছু হবে বা হতে পারে এই পরিবেশে তা মেনে নেওয়া ও যেনো কেমন একটা বিচ্ছিরি ব্যাপার।তারা মেহরাবকে ফোন দিতে দিতে এগিয়ে যায় জমিদার বাড়ির দিকে।কথা বলতে থাকে রাহিলার বলা কথা নিয়ে।তখন তাদের পাশ দিয়ে সাই করে একটি ইন্জিন চালিত ভ্যান চলে যায়।এত দ্রুত যায় যে সোমেহরা রীতিমত ভয় পেয়ে যায়।সে মনে মনে বলে খালি ভ্যান এতো জোরে যাওয়ার দরকার টা কি?মুখে কিছু বলে না।


অন্যদিকে জমিদার বাড়িতে আলোরা আর অনিমা একা।তারা ল্যাপটপে আজ সারা দিন ভীষন কাজ করেছে। বিকালের দিকে সব তথ্য একত্রে করে একটা রহস্য জনক তথ্যের আবিষ্কার করে।


চলবে.....

গল্প: বাধন হারা বেনী পর্ব ৬

 গল্প:বাধন হারা বেনী

লেখিকা: সানজিদা আহমেদ শাহারা

পর্ব: ৬


তোমারে দেখিলো পরণ ও ভরিয়া

       আসমান জমিন দরিয়া....(।।)

               হুমমমমমম

চলিতে চলিতে আমি ও দেখিবো তোমারে

                 হোওও...

      রুপে দিলা তুমি পাগল করিয়া

ও কাজলটা মাখিতে,ডাগরও আখিতে

          নজর পড়িলে কি হবে.....


আড় চোখে তাকিয়ে আছে আলোরা।পাশেই একটা পাথরের উপর বসে গান গাইছে মেহরাব।গানটা প্রতিধ্বনিত হয়ে পুরো রুমে আবার বেজে উঠছে।আলোরা ভীষণ বিরক্ত এখন মেহরাব এর উপর।সে ভেবেছিলো মেহরাব এই রুম থেকে নিজেকে এবং তাকে বের করার চেষ্টা করবে তা না সে মনের আনন্দে গান গাইছে? এটা কেমন কথা ভাই?


-  তুই কি বেয়াদব?

 

- কি?


- সমস্যা কি তোর চোখ দিয়ে একটা ছেলেকে এভাবে গিলে খাচ্ছিস কেন?


- আমি?


- একা ছেলে পেয়ে ওমনি মেয়ে রুপটা বেরিয়ে এসেছে তোর?


- হায় হায় কি বলেন এসব অস্তাগফিরুল্লাহ।


- নাওজুবিল্লাহ পর বেয়াদব।


- এই তো ভালোই গান গাচ্ছিলেন এখন আবার আমার পিছে হাত পা ধুয়ে লেগেছেন কেনো?


- সে'কি'রে  আলু একা একটা ছেলে পেয়ে এভাবে অপবাদ দিলি?


- কি অপবাদ দিলাম আমি?


- এই যে তোকে উতক্ত করছি


- আল্লাহ মাফ করো।


- এই আলু শোন


- জ্বি বলেন


- সত্যি বলবি


- কি সত্যি বলবো


- তুই যে বেয়াদব হয়েছিস আগে বলিস নি কেনো?


-মাথাটা কি গেলো আপনার?


- আবার ও বেয়াদবি।


-ভাই আমরা গত একটা ঘন্টা এই রুমে আটকা ফোন টা ও আনা হয়নি বের হবো কিভাবে তা ও জানি  না আর আপনি কিসব আজগুবি কথা বলছেন?


- তো আমি বলেছিলাম চাবি টা পেয়ে লাফ দিয়ে রুম খুলে ঢুকে যা?


- আটকান নি কেনো?


- আটকালে থেকে যেতি?


- না থেকে যেতাম কোথায়?


- বেয়াদব আলু....


আলোরা বুঝে ওঠে না মাঝে মাঝে তার দোষ টা কোথায় হয়? তখন মেহরাব চাবি দিলে সে কোন বাজ-বিচার না করেই দরজা টা খুলে এই রুমটায় প্রবেস করে। এরপর দরজাটা খট করে আটকে যায় আন্ধকার ঘর থেকে বের হওয়ার কম চেষ্টা সে করেনি।উল্টো মেহরাব চুপচাপ একটা পাথর খুজে তাতে বসে গান গেয়ে যাচ্ছে।কি সাংঘাতিক আপবাদ তাকে দিলো মেহরাব সে নাকি চোখ দিয়ে মেহরাব কে গিলে খাচ্ছে। ছি ছি  কি জঘন্য ভাষা।


- আলু


- জ্বি ভাই


- একটা থাবা খাবি?


- কি?


- বলছি একটা থাবা খাবি?


- না


- খা


- না


- একটা থাবা


- না


- খা না


- আল্লাহ কেনো খাবো


- আমার তোকে থাবা দিতে মন চাচ্ছে তাই খা


- না


- খা না


- না বললাম না


- আপনি এমন কেন?


- কেমন


- ভালো না


- তাহলে একটা থাবা ঠাস করে খেয়ে নে


- না


- খা না


- না


- খা


- না


-ধুর


অনেকক্ষন যাবৎ হাতড়ানোর পর মেহরাব রুমের ভেতর একটা নড়বড়ে পাথর পায়।অন্ধকার টা আরো আগেই কিছুটা চোখে সয়ে গিয়েছিলো।নড়বড়ে পাথর টায় জোরে চাপ দিতেই দরজাটা খুলে যায়।মেহরাব আর আলোরা অবশেষে বের হতে সক্ষম হয়।তবে তারা যে আওয়াজ টা পেতো তার উৎস হিসাবে একটি টেপরেকর্ডার তারা সেই রুমে পেয়েছে বেশ পুরানো এবং তাতে একটা টাইমার সেট করা প্রতি রাতে একটা নির্দিষ্ট সময়ে এটা বেজে ওঠে।অর্থাৎ ভৌতিক এর সাথে মানুষের একটা ষড়যন্ত্রের গন্ধ রয়েছে।মেহরাব আসে আলোরা রা পৌছানোর ঘন্টা দুয়েক পরে।সে কিভাবে নদি পার হয়েছে তা অবশ্য এখনো কেউ জানে না।অনেক বার শুনতে চাওয়ার পর ও সে বলেনি। চাবিটা মেহরাব পেয়েছিলো এই বাড়ির ছাদের পাশের চিলেকোঠার আড়ালের একটা ছোট্ট কক্ষে। তার পাসে অবশ্য কয়েকটা কালো কুচকুচে সাপ ছিলো।মেহরব আলোরা আশার পর পর ছাদ থেকে নেমে আসতে চেয়েছিলো সেখানে কিন্তু চিলেকোঠার ঘর থেকে ফোস ফোস আওয়াজ শুনে সে দুবার চলে আসতে যেয়ে ও আটকে যায়।এরপর সে দোটানা দুর করে এগিয়ে যায় দরজার কাছে। দরজার পাশে দাড়িয়ে ও ভাবে দরজাটা সে খুলবে নাকি খুলবে না। এক পর্যায়ে একটা দীর্ষশ্বাস নিয়ে সে দরজায় কয়েকটা আঘাত করে কিন্তু দরজাটা খোলে না।তখন তার মনে পড়ে এটা একটা জমিদার বাড়ি সহজে দরজা খোলা যাবে এমন হলে তো জমিদার বাড়িতে হর হামেশাই আক্রমন চুরি ডাকাতি হতো।সে বুদ্ধি খাটায় কয়েক মিনিট অতিবাহিত করে সে পুর দরজাটা লক্ষ্য করে।দরজায় সাপলুডুর একটা কোট আকা আছে।এবং ৬টা সাপ আকা আছে কাঠের সেই সাপ গুলো  সব ঐ একটা মানুষের আকৃতি ছোট কাঠের দিকে তাকিয়ে সে মানুষ এর আকৃতিতে একটা কোট আগালে কয়েকটা সাপ তার জায়গা পরিবর্তন করে।সে বুঝলো এটা সাপসিড়ি খেলা তবে অনেকটা পাজেল গেম এর মতো। সাপেরা প্রতিবার মানুষ টা নড়াচড়া করলে নিজেদের আকার ও জায়গা পরিবর্তন করবে এবং মানুষটাকে আটকে দেওয়ার চেষ্টা করবে। মানুষটা যদি শেষ পর্যন্ত যেতে পারে তবে দরজা খুলে যাবে। না হলে.....?

মেহরাব ভাবে না হলে একটা কিছু সাজা তো থাকা উচিত কি হতে পারে সেই সাজা তখন সে দেখতে পায় তার পা টা যেখানে তার পাশে ছোট্ট একটা ফাকা অর্থাৎ যদি সে না পারে এই খেলাটায় এগোতে তবে এখান থেকে একটা সাপ বের হবে এবং তাকে দংশন করবে।কিন্তু কথা হলো দরজার ওপারে এমন কি আছে যে এতোটা কড়া পাহারা? এমন জান এর ঝুকি নেয়ার মতো পাসওয়ার্ড?সে খেলা শুরু করে এটা যেনো তাকে একটা চ্যালেন্জ এর সম্মুখিন করে তুলেছে সে প্রতিবার  মানুষটাকে নড়ালে সাপ গুলো তাকে আষ্টে পিষ্টে ধরতে চায়।প্রায় দুই ঘন্টা সময় ব্যয় করার পর চার বার অসফলতার কাছাকাছি এসে ও সে সফল হয়ে যায়।দরজাটা ও খড়খড় কড়কড় আওয়াজ তুলে নিজে নিজে খুলে যায়।সে ফোনের ফ্লাস লাইট জ্বালিয়ে খুজতে গিয়ে দেখে রুম টা কেমন স্যাঁতসেতে।একটা ভ্যাপসা গন্ধ আর বেশ অনেকটা পানি জমে জমে আছে জায়গায় জায়গা।অনেক গুলো ব্যাঙ।ব্যাঙ যেহেতু আছে সেহেতু সাপ থাকার সম্ভাবনা ও প্রচুর যেহেতু পাসওয়ার্ড টা সাপের। মেহরাব নিজের উত্তেজনাকে চাপিয়ে রাখতে না পেরে রুমটা খুজে দেখতে চায় কি অবস্থা রুমের? কেনো এতো পাহারা প্রতিটা দেয়াল খেয়াল করে দেখে সে একটা পাজেল এর মতো খন্ড চিত্র। চিত্রটা সে জোড়ানোর চেষ্টা করে প্রতিটা ইট নাড়ানো যাচ্ছিলো।নাড়ানো ইট গুলো  সরালে বোঝা যাচ্ছিলো চিলে কোঠার বাইরে যে দেওয়াল তারা দেখেছে এটা তার সাথে তৈরি করা অন্য আর একটি দেওয়াল।সে যখন ইট সরাচ্ছিলো তখন কেবল তিনটে দেওয়ালের ইট সরানো যাচ্ছিলো আর একটা দেওয়ালের ইটের কেবল অধেকটা সরানো গেলো।সে তার সাধ্য মতো পাজেল টা সমাধান করে ফলাফল পেলো এমন একটি চিত্র যা সে কল্পনা ও করেনি।

সে ঐ গল্পটায়ই চিত্র আকারে পেলো যা সোহরাব সকলকে জমিদার বাড়ি ঢোকার আগে শুনিয়েছিলো।কি কথা হলো জমিদার যদি মারা যায় নিঃসন্তান হয়ে তাহলে এই গল্পকে পাজেল এর আকার দেওয়ার কারণ কি আর কেই বা দিলো কেনো দিলো?


চলবে.....

গল্প: বাধন হারা বেনী পর্ব ৫

 গল্প: বাধন হারা বেনী

লেখিকা: সানজিদা আহমেদ শাহারা

পর্ব:৫


প্রকান্ড এক লোহার গেট এর সামনে এসে দাড়ালো তাদের গাড়িটি।গাড়ি থেকে একে একে নেমে এলো আলোরা,সোমেহরা,সোহরাব,তনিমা অনিমা।গাট এর সামনে দাড়িয়ে তারা দেখলো বিশাল দোতলা বিশিষ্ট এক জমিদার বাড়ি।


জমিদার রাজেন্দ্র তরোবারি এই জমিদার বাড়িতে রাজত্ব করতেন তার ছয় পুরুষের কোন কন্যা সন্তান ছিলো না।তার ভীষন ইচ্ছা ছিলো অযোগ্য পুত্র সন্তান থাকার থেকে যোগ্য একটি কন্যা সন্তান তার গৃহে আসুক।সেই মোতাবেক বহু দান ধ্যান যোগ্য তিনি করেন।এরপর একে একে তার তিন টি স্ত্রীর কোল আলো করে চারটি জমিদারকন্যা আসেন।তার খুশির ছটা ছড়িয়ে পরে পুরো হেমল পুরে।তবে সেই খুশিতে ভাটা টানে এক তান্ত্রিক সে একদিন এক বট গাছের নিচে বসে সাধনা করছিলো তখন দুর থেকে জমিদার কন্যা দের হাসির আওয়াজ এ তার সাধনায় ভঙ্গ হয় তখন সে জমিদার কন্যাদের অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং শশানে বলি দিয়ে সিদ্ধি অর্জন করেন।এই খবর রাজার কানে এসে সে শোকে কাতর হয়ে শয্যা নেয় এবং কিছু দিনের ব্যাবধানে মারা যান।মরার আগে তিনি কামরুপ কামাক্ষা থেকে এক সাধু তান্ত্রিক কে এনে সেই শয়তান তান্ত্রীকের সিদ্ধি নষ্ট করে তাকে জীবিত কোন এক জমিদার বাড়ির কক্ষে পুতে রাখেন। এভাবেই হেমল পুরে রাজেন্দ্র তরোবারির জমিদারিত্বের অবসান ঘটে।


কথা গুলো এক টানা বলে থামে সোমেহরা। সকলে অবাক হয়ে দেখতে থাকে জমিদার বাড়িটা।আলোরা এগিয়ে বাড়ির গেট টা ধরে।পুরাতন জংঘরা গেট টা ক্যাচ ক্যাচ আওয়াজ তুলে খুলে যায়।সকলে বাড়িটার দিকে এগিয়ে যেতে যাকে।বাড়িটা ভীষন সুন্দর ছিলো তা এখনো দেখলে বোঝা যায়।


গেট পেরিয়ে ডুকতেই একটা ছোটা খাটো লম্বা ঘর হয়তো এটা সেই সময়কার বিশ্রামাগার।সাথে প্রহরীদের পাহারা দেওয়ার যায়গা।আশে পাশে ভাঙা প্রাচীরের ইট পড়ে  আছে।আরো কিছু দুর এগিয়ে গেলে একটা লম্বা পানিবিহীন সরোবর,তার পাশে বেশ কিছু ভাসকার্য দাড়িয়ে রয়েছে তা ও ভাঙা প্রায়।সরোবরের থেকে দুই মিনিট হাটলেই বাহির মহল।তা পেরিয়ে আরো কিছুদুর এগোলে অন্দরমহল এর দেখা পাওয়া যায়।তনিমার মন টা খারাপ হয়ে গেলো।এতো সুন্দর বাড়িটা কালের বিবর্তনে নিঃশ্ব প্রায় এক সময় এখানে কত কলোরব ছিলো।বাধা নিষেদ ছিলো।কায়দা কানুন ছিলো।আহা'রে এখন সময়ের টানে তা হারিয়ে গিয়েছে।অনিমা হেটে এগিয়ে এসে মাকোড়সার জাল সরিয়ে বড়ো দরজাটা খুলতেই এক ঝাক বাদুর লাল লাল চোখ পাকিয়ে উড়ে গেলো।সকলের হাতের ফোনের ফ্লাস লাইট জ্বালানো। নিচ তলায় কোন রুম নেই তা বিশাল বড় একটা ফাকা জায়গা কয়েক টা রুম  আছে শেষ এর দিকে কিন্তু তা ব্যবহার উপযোগী না হওয়ায় তারা দোতলায় যায়। সেখানে পুরনো খাট সহ কিছু আসবাব পত্র  রয়েছে।হয়তো কোন কালে যদি কেউ এখানে ঘুরতে আসে তবে থাকবে সে জন্য এই ব্যবস্থা কিন্তু জঙ্গল দেখে কেউ হয়তো থাকতেই চায়নি।

সকলে ফ্রেস হয়ে নেয়।নিজেদের সাথে আনা পানি দিয়ে।একটা ছোট্ট কোয়ার ব্যবস্থা আছে তবে এই রাতে আর বাইরে বের হওয়ার ইচ্ছা কারো নেই।

সকলে মোটা মুটি ফ্রেস হয়ে টুকি টাকি কথা বলেই ঘুম দিয়েছে।

তবে নতুন জায়গায় ঘুম হয় না আলোরার। সে এপাশ ওপাশ করতে করতে একটা কাতর আওয়াজ শুনে সচেতন হয়ে যায়।উঠে বসে ভালো করে শোনার চেষ্টা করে কিন্তু সে আওয়াজের উৎস কোথায় তা বুঝতে পারে না।

...................................................................................


-কি রে কি ব্যাপার তোর? আজকাল সামনে আসিস না কেনো আমার?


হঠাৎ মেহরাব এর গলার আওয়াজ শুনে ভড়কে যায় আলোরা।লজ্জায় আড়ষ্ঠ হয়ে ওঠে তার তনুমন।মস্তিষ্ক বলছে চলে যেতে আর মন টা চায়ছে কিছু টা সময় থাকতে।মন মস্তিষ্কের যুদ্ধে দেহখানা মনকেই জিতিয়ে দিলো।একরাশ জড়াতা নিয়ে সে উত্তর দিলো

 

- কোন ব্যাপার ই না এমনিতেই কাজ এর চাপ তাই হয়তো ওভাবে দেখা হয়নি।

মেহরাব এসে তার ঠিক বিপরিত পাশে বসলো।পিঠ তার মুখটা করেছে আড়াল যেনো একে অন্যকে না দেখের পায়তাড়া দুজনেরই।


- আচ্ছা?


- হ্যা


- তাহলে কি বোঝাতে চাইছিস তুই টিম এর সব কাজ নিজে করছিস আমরা নদীর পানিতে ভেসে এসেছি?


- না আপনি সব সময় এক গ্রেড বেশি বোঝেন আমি মোটেই তেমন কিছু বলিনি আপনাকে।


- তাহলে সত্যি বল সামনে আসতেছিস না কেনো?


- আরে বললাম তো কাজে ছিলাম তাই হয় তো সামনা-সামনি হওয়া হয়নি।


- আচ্ছা? আমার চোখে কি তবে নেবা হয়েছিলো?


- আপনি এমন খুতখুতে কেনো?


- তুই এতো সরল-সহজ মার্কা জটিল কেনো?


- জানি না।


- এটা একটা ভালো উত্তর দায় সারার জন্য খুব ভালো পন্থা।


- হয়তো।


-আলু


- জ্বি


- একটা কথা বলি


- বলেন।


- তুই এখনি এখান থেকে চলে যা।


- কেন?


- আমি বললাম তাই।


- আজকে আমি যাবো না,এই ঝিরি ঝিরি বাতাস আমার ভালো লাগছে।


- আমার ও ভালো লাগছে এজন্য চলে যেতে বলছি,যাহ্।


-আপনি সব সময় আমার সাথে এমন করেন।


-আর তুই কি করিস?


-কিছুই না।


কিছু সময় দুজনেই চুপচাপ বসে থাকে।এরপর আলোরা উঠে চলে যায়।নিচে সোমেহরা খাবারের ব্যবস্থা করছে।আজ দুই দিন হলো তারা এখানে এসেছে।কিন্তু জুত সই করে কাজ এগোতে পারেনি।কেউ তেমন সেই ব্যাপারে কথা বলতে আগ্রহী না।তবে এভাবে থেমে থেমে কাজ করলে তো তাদের হবে না।এজন্য ইন্টারনেট এ সার্চ করেছিলো আসলেই এই ধরনের ব্যাপার গুলো ঘটে কিনা? যদি ঘটে তবে কোন কোন জায়গায় ঘটেছে এবং কিভাবে? কয়েকটা ঘটনা জানা গিয়েছে তা ভীষণ আলাদা ধরনের।সোমেহরা আর অনিমা খাবার গুছিয়ে ওদের ডাক দেয়।সকলে এসে খেতে বসে কিন্তু মেহরাব আসেনি।সে পরে আসবে।খেতে বসে তনিমা তোলে দুদিন আগের সেই যাত্রা পথের কাহীনি।


সেদিন গাড়িটা হঠাৎ এসে থামে জঙ্গলের মাঝখানে। গাড়ি এমন অস্বাভাবিক ভাবে থেমে যাওয়াতে সকলে বিরক্ত।সোহরাব বের হয়ে গাড়ির ইন্জিন ঠিক করার চেষ্টা করে প্রচুর গরম হয়ে গিয়েছে পানি ডালতে হবে।সে এগিয়ে যায় একটা বোতল হাতে এদিক ওদিক যদি অল্প সল্প পানি পাওয়া যায়।তার আশা অনুরুপ ভাবে একটা মাঝারি আকৃতির কোয়ার দেখা পায় সে।সেখান থেকে পানি তুলে নিয়ে আশার পথে সে দেখতে পায় বেশ দুরে কিছু একটা নড়ছে।প্রথমে জন্তু জানোয়ার মনে করে নজর আন্দাজ করতে চায়লে একটা চিকন চিন চিনে কন্ঠ এসে সোহরাবের কানে লাগে। 


সে বলে " ফিরে যাও সাহেব,ফিরে যাও।" 


সোহরূব মৃদু হাসে এরপর গাড়ির কাছে এগিয়ে যায়।গিয়ে দেখে তারা গাড়িতে বেশ ভয় পেয়ে আছে।সোহরাব কে দেখে সস্তি পায়।সোহরাব তাদের বলে কি হয়েছে এমন ভয় পেয়ে আছে কেনো তারা।তনিমা বলে সোহরাব জঙ্গলের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষন পর থেকে তার করুন আর্তনাদ এর আওয়াজ ভেসে আসছিলো।সে তো চেয়েছিলো এগিয়ে যেতে কিন্তু সোমেহরা তাকে আটকে দেয়।সোহরাব তাকে আসস্থ করে যে সে ঠিক আছে।তারপর গাড়ি আবার ও চলতে শুরু করলো।


খাওয়া শেষ করে সকলে নিজেদের বরাদ্ধ করা জায়গাতে গিয়ে শুয়ে পড়ে।রাত বেশ গাঢ় ঘুমে আড়ষ্ট প্রায় সবাই।এমন সময় বাইরে থেকে একটা আওয়াজ ভেসে এলো।গত দুদিন ও এমন আওয়াজ এসেছে আলোরা আজ সেই আওয়াজ এর পিছু নেয় ছুটে যায় উপরের ঘর গুলোর দিকে।আওয়াজের দিকে যত এগোচ্ছে আওয়াজ টা তত গাঢ় হচ্ছে।গত দুই দিনে অনেক গল্প কথা তারা শুনেছে এই বাড়ি নিয়ে।একের পর এক ঘর ফেলে এগিয়ে যেতে থাকে আলোরা।ছুটে চলার ফলে তার উড়না পড়ে যায় মাথা থেকে।শেষমেশ কাঙ্ক্ষিত ঘরটির সামনে হাজির হয় আলোরা। দরজাটা বন্ধ যেনো কত বছর কেউ আসে না।আওয়াজ টা কান্নার যেনো তার প্রচন্ড যন্ত্রনা হচ্ছে।এত বড় তালা খোলার চাবিটা সে খুজতে থাকে।চাবি না পেয়ে একরাশ হতাশায় ঢুবে যায় সে। দরজার কাছে বসে পড়ে সে তীরে এসে বোধ হয় তরী ডুবলো।তখন তার সামনে চাবি ধরে মেহরাব।চোখের সামনে চাবি টা দেখে খুশিতে চক চক করে ওঠে। মেহরাব তার দিকে চাবি টা বাড়িয়ে দিয়েছিলো। সে চাবিটা হাতে নিয়ে সাত পাঁচ না ভেবে তালা টা খোলে।অনেক দিনের বন্ধ দরজা একটা ক্যাচ ক্যাচ আওয়াজ তুলে খুলে গেলো।


চলবে.........

গল্প: বাধন হারা বেনী পর্ব ৪

 গল্প: বাধন হারা বেনী

লেখিকা: সানজিদা আহমেদ শাহারা

পর্ব: ৪


রাত পেরিয়ে সূর্যি মামা উকি দিচ্ছে আকাশের বুকে।আলোরা নামাজ পড়ে হাটতে বের হয়েছিলো বাগানে। ফিরে এসে ডাইনিং রুমে হট্টোগোলের আওয়াজ শুনে এগিয়ে যায় সেদিকে।বাড়ির মোটামুটি সকলে সেখানে উপস্থিত কিন্তু জটলা টা পেকেছে কেনো তা জানতে এগিয়ে গেলে সে দেখতে পায় মানকি টুপি পরে বসে আছে ডাইনিং টেবিলে মেহরাব। আর সোহবার ভাই হেসেই লুটপুটি খাচ্ছে সে একটা নয় বাকিরা ও।আর ফুফু মামনি সহ বাকিরা কৌতুহলের নজরে তার কাছে কিছু একটা জানার চেষ্টা করছে।সকলের সামনে এভাবে মানকি টুপি পরে মেহরাব ভাইকে দেখতে পেয়ে আলোরার ও হাসি পাচ্ছে।কিন্তু সে হাসতে পারবে না। তাই সে জোর পায়ে রুমের দিকে হাটা দিলো এমনিতে ও সে কাল রাতের পর আর মেহরাব ভাইয়ের সামনে পড়তে চায় না। কিন্তু জানার বিষয় হচ্ছে এই ভ্যাপসা গরমে সে কেনো মানকি টুপি পরেছে।দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে ফেলে আলোরা।বিষয়টা বুঝতে পেরে ভীষন হাসি পায় তার।সে কামড় দেওয়ার ফলে যেমন তার ঠোটে মেহরাবের রক্ত লেগে গিয়েছিলো ঠিক তেমনি তার দাঁতের ধারে যে ক্ষতোর চিহ্ন হয়েছে তা ঢাকতেই মেহরাব এর এই প্রচেষ্টা।বিষয় টা ভীষন হাসির কিছুক্ষন বিছানায় গড়িয়ে গড়িয়ে হেসে নেয় সে।এরপর উঠে বসে আয়নায় নজর পড়ে তার নিজের প্রতিবিম্ব দেখতেই তার কাল রাতের কথা মনে পড়ে যায়।পুনরায় অসস্তি আর লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে পড়ে সে।

আলোরার গাল দুটো টুকটুকে লাল হয়ে ওঠে লজ্জায়।


সে মেহরাব ভাই এর এতো কাছে গিয়েছিলো।মানুষটার বাহুতে হাত রেখেছিলো।তার চোয়ালে দাঁত দিয়ে দংশন করেছিলো।মেহরাব ভাই বাম হাতে তার কোমড় আকড়ে ধরেছিলো। ইস্! এই লজ্জা নিয়ে সে কিভাবে দ্বিতীয় বার তার সামনে যাবে।কাল সারারাত এই সব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে ঘুমাতে পারেনি।আর এখন আবার।ছি ছি এসব ভাবা ও পাপ জঘন্য পাপ।হায় আল্লাহ আমায় মাফ করো।


তার এমন গড়াগড়ি দেখে ওয়াসরুম থেকে মাথা বের করে দাড়িয়ে থাকা তনিমা ব্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে।এরপর বলে


- পেট গুড় গুড় করছে? টয়লেট যাবি?

হঠাৎ নিজের রুমে কারো গলার আওয়াজ শুনে চমকে ওঠে আলোরা।দরজা তো বন্ধ কথা বলল কে?

 তনিমা বলে 


-এই এদিকে তাকা আমি। আমার ওয়াসরুমের  গিজারে  কাজ করছিলো না তাই তোর রুমে এসেছিলাম।গোসল শেষ এ বেরিয়ে দেখি তুই এভাবে মাছের মতো খাবি খাচ্ছিস।কি হয়েছে?


তনিমাকে দেখে একটা লম্বা শ্বাস ছাড়ে আলোরা আরে না তেমন কিছু না এমনিতেই।তনিমা আবার ও ব্রু কুচকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।সন্ধ্যা বেলায় সকলে ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে হেমলপুর( ছদ্মনাম)  গ্রামের উদ্দ্যেশে। মেহরাব তাদের সাথে যায় নি সে যাবে পরে।সকলের রওনা দিতে বিকাল গড়িয়ে যায়।


গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে শহর পেরিয়ে এসেছে আরো বহু আগে খুলনার রুপসা ব্রীজ পার হয়ে গাড়ি চলতে শুরু করে আরো বহু দুর।একের পর এক বাস স্টপেজ ছাড়িয়ে গাড়ি টোটোন জুট মিলের সামনে এসে দাড়ায় তারপর সেখান থেকে সরু রাস্তা বেয়ে পাঁচ মিনিট চলার পর এসে পড়ে হেমপুর ঘাটে এই ঘাট পেরলেই সেই কাঙ্ক্ষিত গ্রাম। ঘাটে গাড়ি থামিয়ে গাড়ি পার করার জন্য এদিক ওদিক ফেরি খুজতে থাকে সোহরাব কিন্তু সে ব্যার্থ,একটা চিতল মাছের মতো নৌকা ছাড়া কিছুই নজরে এলো না তার।সে ঘাটের নৌকা পারাপারের টাকা নেওয়া লোকটাকে প্রশ্ন করে নৌকা কিভাবে পার করবো? লোকটা নৌকার দিকে ইশারা করে বলে ঐটা দিয়েই পার হয়ে যেতে হবে।সোহরাব একবার গাড়ির দিকে আর একবার নৌকার দিকে তাকায় আর মনে মনে  দোয়া পড়া শুরু করে।এদিকে সন্ধ্যা প্রায় হবে হবে

৬টার পর আর নৌকা পারাপার হয় না এইঘাটে।তাই শেষ বারের বার তারা পার হলো এরপর নৌকা বন্ধ হয়ে গেলো।সকলে নদি পার হয়ে হেমল পুর বাজারের মধ্যে দিয়ে যাওয়া সরু মাটির রাস্তা দিয়ে এগিয়ে  চলল গাড়ি নিয়ে।তারা নানা বিষয় নিয়ে কথা বলছিলো তখন হঠাৎ তারা দেখতে পেলো তাদের গাড়ির পাশ দিয়ে সাইকেল নিয়ে সাঁই সাঁই বেগে কে চলে যাচ্ছে।এখন কথা হলো সাইকেল কিভাবে গাড়ির আগে যেতে পারে?তনিমা চাইলো এবার জানালার কাচ টা নামিয়ে দেখতে কিন্তু সোমেহরা তাকে বাধা দিলো।তার ব্যাপার টা অতি প্রাকৃত মনে হচ্ছে। এসব জিনিস তাদের মনোযোগ আর্কষন করতে চাচ্ছে হয়তো।তাতে ক্ষতি ছাড়া লাভ নেই।


সোহরাব- আমারা রাহিলা বেগম কে দাদী নামেই ডাকবো এখন থেকে কারণ তিনি যথেষ্ট বৃদ্ধ এবং সম্মান পাবার মতোই একজন ব্যাক্তি।


তনিমা- ঠিকই বলেছ ভাই।


অনিমা- আমরা কি সোজা ওনার বাসায় যাবো?


আলোরা- না আমরা যাবো এই গ্রামের পুরনো জমিদার বাড়িতে। বিলিপ্ত ভগ্ন এই জমিদার বাড়ি আপাতত এই গ্রামের অতিথীশালা।আমরা যেহেতু গ্রাম ঘুরে দেখার উদ্দ্যেশে এসেছি সেহেতু এই জায়গাই থাকতে হবে।এতে আমাদের ভালো ও হবে কেউ ইনভেস্টিগেশন এ বাধা দিতে পারবে না।


অনিমা:এই ব্যাপারটা ঠিক বলেছ।আচ্ছা আর কতো দুর সেই জমিদার বাড়ি?


সোহরাব- এই তো প্রায় এসেই পড়েছি।


তাদের কথার মাঝেই গাড়িতে ধুপ করে একটা আওয়াজ হয় গাড়িটা দ্রুত বেগে চলছিলো হঠাৎই ধীর গতিতে চলতে শুরু করে। সোহরাব খানিকটা ভড়কে যায়।ভয় তার হচ্ছে না কারণ এর আগে ও বহুবার এমন ঘটনার শিকার সে হয়েছে।এটা নতুন কিছু নয় তবু ও সে একবার দেখতে চায় কি এমন জিনিস তার গাড়ির ছাদে এসে পড়লো।সেমেহরা তাকে বাধা দেয়।সে বুঝতে পারে এই কৌতুহল ও অতি প্রাকৃত কোন ইংগিত বা ইশারা।এরপর অনিমা সহ সকলে অন্যান্য বারের মতো একসাথে জোরে আয়তুল কুরসি পড়া শুরু করে।মিনিট পেরতেই গাড়ি স্বাভাবিক ভাবে চলতে শুরু করে।

আয়তুল কুরসি পড়া শেষ হলে তারা নিজেদের শরির বন্ধ দিয়ে নেয়।এরপর আবার ও নিজেদের মধ্যে আলাপ চারিতা হতে থাকে আর গাড়ি চলতে থাকে।মাটির রাস্তা, বিলের রাস্তা,বেরিয়ে এখন গাড়ি গিয়ে উঠেছে ঘন জঙ্গলের রাস্তায় এই রাস্তার মাঝ পথেই সেই জমিদার বাড়ি।জি পি এস অবশ্য তাই দেখাচ্ছে।


চলবে

গল্প: বাধন হারা বেনী পর্ব ৩

 গল্প: বাধন হারা বেনী

লেখিকা: সানজিদা আহমেদ শাহার

পর্ব: ৩


- এখানে এভাবে জঙ্গলী পেত্নীর মতো দাড়িয়ে আছিস কেনো আলু?


- এমনি ভালো লাগছিলো।

 

- দুর হ যা এতো ভালে লাগতে হবে না।


- আপনি সব সময় এমন জঘন্য ব্যবহার করেন কেন?


- আহা আলুর কি ভালো ব্যবহার পাওয়ার শখ হয়েছে।


- হবে না কেনো? আমি কি মানুষ না?


- নাহ


- আপনি যান তো এখান থেকে


- কি বললি রে আলু?


- কিছু না।


- যা তো নিচে যা এই অন্ধকারে আমার সামনে কম আসবি।


- আর তো ক'টা দিন তারপর মোটেই আসবো না।


- হ্যা হ্যা আসিস না।


- তখন বুঝবেন আমি কি ছিলাম!


- কি ছিলি তুই?


- কিছু না


কথা আর না বাড়িয়ে নিচে যাওয়ার জন্য ছাদের রেলিং থেকে সরে যায়।মেহরাব এসে তার জায়গা টায় দাড়ায়।সামনের বিশাল চাঁদ হীন তারকা পূর্ন আকাশের দিকে তাকিয়ে ঠোট নাড়িয়ে গলা সুর তোলে...


                সোনা বরণ রুপ কন্যার

                     কুচ বরণ কেশ

                তুই দিনের শুরু কন্যা

                     তুই রাতের শেষ


মেহরাবের গান সে বহু বার শুনেছে।

কিন্তু প্রতিবারই কেনো যেনো আলোরার মনে হয় লোকটা তাকে কিছু বলতে চাইছে,বোঝাতে চাইছে,গান টা সে তার জন্য গেয়েছে।আসলে লোকটা কি বুঝাতে চায়? নতুন কিছু নাকি পুরনো জিনিসে আবার পট্টি দিচ্ছে।আলোরার ভাবনার সাগরে ডুবে যাবে এমন সময় আবারো ডাক পড়ে তার।


মেহরাব- আলু


আলোরা- জ্বি


মেহরাব-তুই যে চুরি করে মানুষের গান শুনিস আগে জানতাম না তো।কবে থেকে চোর হয়েছিস রে ?


আলোরা- আমি চোর?


মেহরাব- হ্যা তুই মস্ত বড়ো চোর।ছি ছি আলু,ব্যাড মেনার্স।


আলোরা- আমি চোর না...


মেহরাব- তুই চোর..


- না আমি চোর না..


- না তুই চোর...


- না আমি চোর না


- তুই চোর


- না 


- তুই


- না


- তুই


- না


- তুই


- না


- তুই


- আর একটা কথা বললে আপনার খবর আছে মেহরাব ভাই


- কি করতে পারবি তুই তুচ্ছ প্রানী জঙ্গলী পেত্নী একটা


- আমি!


- হ্যা তুই


- আমি আপনাকে


- হ্যা তুই আমাকে


- আপনাকে তো আমি


- হ্যা বল বল


আলোরা আর নিজের রাগ অভীমানকে কন্ট্রোল করতে না পেরে শক্ত করে মেহেরাবের দু'বাহু ধরে তার দিকে ঝুকে পড়ে মেহরাদ আকস্মিক আক্রমনে তাল সামলানোর জন্য আলোরার কোমর আকড়ে ধরে এক হাতে অন্য হাতে রেলিং টা শক্ত করে ধরে।মেহরাবের  ডান চোয়ালে ধরালো দাঁতের কামড় বসায় আলোরা মেহরাদ কিনচিত ব্যাথায় গলা দিয়ে আহ্ সূচক শব্দ বের করে।


এভাবেই অতিবাহিত হয় কিছু সময়..


রাগ নিয়ন্ত্রণে এলে লজ্জায় আলোরা গুটিয়ে যায় তার অবস্থান আক্রমন এবং চরম লজ্জা জনক পরিস্থিতে সে দিশেহারা হয়ে পড়ে।লজ্জা ভয়ে তার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে মেহরাব বোঝে।সে ও কম অসস্থিতে পড়েনি এহেন আক্রমনে এটা তার জন্য আশাতীত।মেহরাব ছেড়ে দেয় আলোরাকে।আলোরা একছুটে নিজের ঘরের দিকে দৌড় লাগায় পথি মধ্যে মেহরাব এর ফুফু ও সোমেহরার সাথে আঘাত লাগে তার দুজনে তাকে থামিয়ে প্রশ্ন করে কি হয়েছে। সোমেহরা তাকে হাপাতে দেখে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে জানার জন্য কোন সমস্যা হয়েছে কি তার? 

ফুফু তীক্ষ্ণ চোখে তাকে পর্যাবেক্ষন করে প্রশ্ন করে তার ঠোটে কিসের রক্ত লেগে আছে।আলোরা গুটিয়ে যায় প্রশ্ন এড়াতে সে ছুটে বেরিয়ে যায় নিজের জন্য বরাদ্ধ করা রুমে।দুজনেই তার যাওয়ার পানে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।শান্ত মেয়েটা এমন দুরন্ত হয়ে উঠলো কেনো?রুমে গিয়ে দরজা টা খট করে লাগিয়ে দিয়ে একটা লম্বা শ্বাস নেয় সে।যেনো হাপ ছেড়ে বেঁচেছে।

তার আঠারো বছরের জীবনে আজকের মতো চরম লজ্জা জনক রাতের সম্মুখীন সে এর আগে হয় নি।মেহরাব ভাইকে সে...ছি ছি।সে দ্বিতীয় বার আর কিভাবে যাবে উনার সামনে।অদ্ভুত এক মিশ্র অনুভূতিতে জর্জরিত হয়ে সে দিশেহারা।ঘন ঘন শ্বাস ছেড়ে এগিয়ে যায় ওয়াস রুমের দিকে লম্বা একটা সাওয়ার নেওয়া ভীষন দরকার তার।একটু ঠান্ডা পানির ভীষন প্রয়োজন তার।


অন্য দিকে মেহরাবের গালে আলোরার চার দাঁতের দাগ নিয়ে আকাশের দিকে অভিযোগের নজরে তাকিয়ে আছে।আজ আবার চাঁদ মেঘের আড়ালে লুকিয়েছে।

মেহরাব আকাশ পানে তাকিয়ে চাঁদকে উদ্দ্যেশ্য করে  বলে


 - ঐ চাঁদ তুই আমার বেহাল দশা দেখে মেঘের আড়ালে লুকিয়ে হাসিস? হাস.. তবে

অষ্টাদশীকে বলে দিস আগুন জ্বালালে তাকে ও পুড়তে হবে আমি কিন্তু ভীষন রকম স্বার্থপর একা পুড়ি না।


-চাঁদ হয়তো মেহরাব এর এমন হুমকিতে ভয় পায়নি সে হয়তো হেসেই খুন।


মেহরাবের গাল বেয়ে রক্ত গড়িয়ে কয়েক ফোট এসে পড়ে তার শার্ট এ।মেহরাব মুচকি একটা হাসি দিয়ে আবার ও আকাশের দিকে তাকিয়ে গেয়ে ওঠে...

                     

            একটা ছিলো সোনার কন্যা

                    মেঘ বরন কেশ

            ভাটি অঞ্চলে ছিলো 

                 সেই কন্যার দেশ (।।) 


চলবে....