গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ১৫

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ১৫ ]❌কপি করা নিষেধ❌


বেশ কয়েকদিন পর বাড়ি ফিরেছে উজ্জ্বল।এলাকার পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক এবার অন্তত বউকে নিয়ে নিজ নীড়ে ফেরা যাক।উঠনে বাইকের শব্দে ছুটে এলেন নার্গিস, ছেলেকে দেখতে পেয়ে অনেকটা অবাক সুরে বলেন,


" তুই যে আসবি বললি না তো।"


" আমি কোন কাজ বলে করেছি?"


" উর্মি কেমন আছে?তাকে নিয়ে এলেও তো পারতি।"


" আসতে বলেছি আসেনি।"


উজ্জ্বল ঘরে প্রবেশ করলো।নিজের কক্ষে ফিরে শটান হয়ে শুয়ে পড়লো।পাশে থাকা বালিশটা আঁকড়ে ধরে ভাবনার সাগরে ডুবে গেল।ইসস বউটা কবে যে আসবে,পাশে শুয়ে খোশ গল্পে মেতে থাকবে।নার্গিস ফিরলেন লেবুর শরবত নিয়ে। যত্নে নিয়ে টেবিলে গ্লাসটা রেখে বলেন,


" কি খাবি? "


" আম্মা ভাত দাও।"


" আমি বাড়ছি তুই আয়।"


নার্গিদ দরজা পর্যন্ত গিয়ে ফিরে এলেন চিন্তিত কণ্ঠে বলেন,


" রুমু কেমন আছে?"


" আমি কি জানি।"


"তুই না বললি সে যেখানে আছে নিরাপদে আছে।"


" হু"


" তাহলে?"


" বাদ দাও।রাশেদ আর ঝামেলা করেছে?"


" সে তো প্রতিদিনি করে ওর বাড়ির উঠন থেকে আমাদের গালাগালি করে কতদিন এসব সহ্য করা যায় বলতো।"


" যত দিন না ওর মুখটা সেলাই করতে পারছি।"


" তোর চাচীর আশকারা পেয়ে ছেলেটা বখে গেছে।"


" বাদ দাও এরা জাহান্নামে যাক।খিদে পেয়েছে খেতে দাও।"


উজ্জ্বল উঠে গিয়ে খেতে বসে খাবার শেষ করে সোফায় বসে টিভি অন করে।নার্গিস হাতের কাজ শেষ করে পুনরায় উজ্জ্বলকে বলে,


" এলাকার সবাই গুজব ছড়িয়েছে রুমু নাকি তোর সাথে পালিয়েছে।"


" হুম।"


" হুম মানে?"


" হুম মানে হুম।"


" উজ্জ্বল তোর মতিগতি আমার ভালো ঠেকছে না।এসব কি সত্যি বাপ?"


উজ্জ্বল নড়েচড়ে বসে।গলা ঝেরে কেশে বলে,


" দশদিন আগে বিয়ে করেছি আম্মা।"


" মজা করছিস?"


" একদম না।তোমার মুরগির বাচ্চগুলার কসম।"


নার্গিস বেশ অবাক হলেন বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন।


" এসব কি বলিস?সত্যি বিয়ে করেছিস?"


" একদম সত্যি পিউর সত্যি আম্মা।কাবিন চল্লিশ লক্ষ।জিন্দেগীতে এই টাকা সহজে পরিশোধ করতে পারবো না রুমুকে ছাড়বোও না ডিসিশন ফাইনাল।"


নার্গিসের কণ্ঠরোধ হয়েছে।তিনি ভূত দেখার ন্যায় তাকিয়ে রইলেন উজ্জ্বলের পানে।


" আম্মা টাস্কি খাইও না।রাশেদ ঝামেলা পাকালেও রুমুরে ছাড়বো না।কাবিন সেচ্ছায় বেশি নিসি।"


" ওই মেয়ে যদি তোরে ছাড়ে?"


" ছাড়বে না।মগজ ধোলাই করছি।"


নার্গিস কিছুই বললেন না তিনি কিয়ৎক্ষণ উজ্জ্বলের পানে তাকিয়ে আচমকা চেতনা হারালেন।উজ্জ্বল তার মাকে ধরার আগেই তিনি মেঝেতে পড়ে মাথায় আঘাত পান।উজ্জ্বল কিংকর্তব্যবিমূঢ়!এটা কি হলো!তখনি ঘরে প্রবেশ করেন সৈয়দ শামসুল।স্ত্রীকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে তিনি নিজেও হতভম্ব। 

.

বিছানায় গড়াগড়ি করে কাঁদছেন নার্গিস ছেলের লুকিয়ে বিয়ে তিনি কিছুতেই মানতে পারছেন না।সবচেয়ে বড় ভয় জমেছে রাশেদের কর্মকান্ড দিনে দুপুরে এই ছেলে খু না খু নি করতে দ্বিধা করবে না।তার একটা মাত্র ছেলে, ছেলেটার মাথার উপর অসীম বিপদ ঘুরপাক খাচ্ছে।কোন মা নিশ্চয়ই এই অবস্থা মেনে নেবে না।সৈয়দ শামসুল গম্ভীর কণ্ঠে শুধায়,


" তুই যে বিয়েটা করবি আমাদের সাথে একটু আলাপ পরামর্শ করলেও তো পারতি।"


" পরিস্থিতি এমন ছিল যে..."


" তুই আমাকে পরিস্থিতি শেখাচ্ছিস?ইচ্ছে করছে গায়ের সব শক্তি দিয়ে মারতে।"


" আব্বা আপনার ছেলে বড় হয়েছে ভুলে গেছেন?"


" আমার ছেলে বড় হয়েও বেকুবের মতো কাজ করেছে।"


" তোমরা তো জানোই আমি রুমুকেই বিয়ে করবো।কি জানতে না?"


" তাই বলে এভাবে!"


সৈয়দ শামসুল উঠে দাঁড়ালেন পাইচারি করে পুনরায় উজ্জ্বলের সম্মুখে বসলেন,


" এরপর যা যা হবে সব কিছু তুই সামলাবি।আমি এসবের কিছু জানি না।"


" ঠিক আছে।বিয়ে করেছি আমি,বউটা আমার ঝামেলাটাও আমার।"


" বউ!বড় বড় কথা ফুটছে মুখে।বউ পালার সাধ্য তোর আছে?ইতর কোথাকার।"


উজ্জ্বলের মেজাজ বিগড়ে গেল।ডানে বামে না তাকিয়ে সোজা বাইরে গিয়ে বাইক স্টার্ট করলো এখানে আর থাকা যাবে না এক মুহূর্তও না।

.

বারান্দার গাছগুলো পরিষ্কার করে রুমু কক্ষে ফিরতে দেখতে পেল উজ্জ্বলকে।ছেলেটা শটান হয়ে শুয়ে আছে।মাথার উপর ঘুরছে ফুল স্প্রিডে ফ্যান।রুমু হাটু ভেঙে বসলো বিছানায় উজ্জ্বলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,


" আপনাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে উজ্জ্বল।"


" গরমে সব ভুলে গেছিরে শুধু মনে আছে, লাউ আর কদু তুমি আমার বধূ।"


রুমু খিলখিলিয়ে হেসে উঠল।


" আম্মাকে আজ বিয়ের কথা বলেছি রুমু।"


" বাড়ি গিয়েছিলেন?"


" হুম।"


" চাচী আম্মা কি বললো?"


" মাথা ঘুরে পড়ে গেছে।"


" কি!"


" জি।"


" আর চাচাজান কি বলল?"


" এই বিয়ে সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না সব দায় আমার।"


" আপনার সাথে রাগারাগি করেছে?"


" খুব বেশি না অল্প।না জানিয়ে বিয়ে করেছিতো হঠাৎ জানায় কষ্ট পেয়েছে।ব্যপার না সব ঠিক হয়ে যাবে।"


উজ্জ্বল চোখ বন্ধ করল।ভেতর থেকে তাকে হতাশায় ঘিরে ধরেছে যদিও এমন একটা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত সে।উজ্জ্বল হঠাৎ অনুভব করল তার গালে পানির ফোঁটা পড়ছে।তড়িৎ গতিতে চোখ তুলতে দেখতে পায় রুমু কাঁদছে।


" এই তুই কাঁদছিস কেন?"


" আমার কারণেই এমনটা হয়েছে।আমি আমি...."


গলা ধরে এলো তার।ভেতর থেকে অপরাধবোধ নিংড়ে ফেলছে তাকে।


" আমি কেন আপনাকে এমন প্রস্তাব দিলাম উজ্জ্বল ভাই।"


" একটা চড় মারবো।কে ভাই?"


" সরি আবেগে বলে ফেলেছি।"


" এই আবেগ দেখিয়ে একটু ভালোবাসার কথাও তো বলতে পারিস।"


রুমুর কান্না বেড়ে যায়।উজ্জ্বল মেয়েটাকে শান্ত করতে নানান কথায় ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা চালায়।


" রুমু কি খাবে?রুমু একটা চুমু খাবে।দিব চুমু?"


" বাজে কথা বন্ধ করুন।"


" এটা বাজে কথা?"


" ভালো লাগছে না আমার।"


 উজ্জ্বল প্রত্যুত্তর করে না।আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরে মেয়েটাকে।রুমু উজ্জ্বলকে আঁকড়ে ধরে, 


" দুই পরিবার যদি না মানে আমরা কোথায় যাব উজ্জ্বল?"


" এইজন্যই তো বলি দুঃখ আসার আগে সুখটা ভোগ করতে দে সময় অপচয় করা যাবে না।চল ঘুরে আসি রেডি হ।"


রুমু চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো।ডয়ার থেকে জামা বের করে দ্রুত ওয়াশরুমে যায়।উজ্জ্বল উঠে বসতে দেখতে পেল রুমুর ফোনটা বিছানায় পড়ে আছে।সাইলেন্ট মুডে থাকায় কেউ যে ফোন করছে আওয়াজ নেই।'Vai' লেখা নাম্বারটা থেকে একেরপর এক ফোন এসেই যাচ্ছে।উজ্জ্বলের বুঝতে বাকি নেই এটা রাশেদের নাম্বার।রুমুকে বারবার বারণ করা হয়েছিল এই সিমটা যাতে না লাগায় তাহলে রুমু কেন এই সিমটা লাগালো?মনের সন্দেহের দরুনে ফোনটা ধরল উজ্জ্বল।অপর পাশ থেকে শোনা গেল রাশেদের তিরিক্ষি ধ্বনি।


" হারামজাদি ফোন কেন ধরিস না?তোকে কি বলেছি আর তুই কি করছিস?আমার কথা মতো কাজ না করলে আমি যে কি করবো তুই ভালো করেই জানিস।সময় মতো ফোন দিচ্ছিস না কেন?"


উজ্জ্বল অবাক হলো।দ্রুত ফোন কেটে কল লিস্টে ডিলেট করে ফোন ছুড়লো বিছানায়।সে ভেবেছিল রাশেদ ফোন করে নিশ্চয়ই বলবে কোথায় আছে ঠিকানা দিতে বা অনন্যা।অথচ রাশেদের কথার ভাজে বোঝাই যাচ্ছে রুমুর সাথে তার যোগাযোগ চলমান।অজানা আতংকে থমকে গেল উজ্জ্বল।রুমু ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আয়নায় দাঁড়ালো।তার গলায় ঝুলে থাকা ওড়নাটা পেছন থেকে টেনে ধরল উজ্জ্বল যার দরুনে গলায় ফাঁস পড়ল রুমুর।শ্বাস আটকে আসায় মেয়েটা ছোটফট করে উঠে নিজেকে বাঁচাতে গলা দিয়ে দেদারসে গোঙানির শব্দ বের হয়।

উজ্জ্বল ওড়না ছেড়ে রুমুকে টেনে কাছে আনে।


" খুব কষ্ট হচ্ছে?একটু বুঝালাম ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে পাওয়া আঘাতগুলো কেমন যন্ত্রণা দেয়।"


রুমু কাশতে কাশতে বিছানায় বসে।উজ্জ্বল পানি নিয়ে তার হাতে দেয়।


" সরি ডার্লিং পানি শেষ করো।"


রুমু পানি শেষ করলো।উজ্জ্বলের এমন আচরণে মেয়েটা অবাক না হয়ে পারে না।


"একটুর জন্য..."


" একটুর জন্য কী?"


" আমার গলা... "


রুমু গলায় হাত রাখে।উজ্জ্বল পরখ করে বুঝতে পারে চামড়া লাল হয়ে গেছে। 


" গলাটাই যদি না থাকে?"


উজ্জ্বলের প্রশ্নে রুমু অবাক হয়ে বলে,


" উজ্জ্বল এসব কি বলছেন?মাথা ঠিক আছে?"


" না ঠিক নেই।"


চলবে..

গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ১৪

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ১৪]❌কপি করা নিষেধ।❌


জেদ নিয়ে বসে আছে রুমু।উজ্জ্বলের প্রতি তার রাগ কমছে না বরং বাড়ছে এই ছেলেটা কতটা বেয়াদব হলে তাকে কথায় কথায় রাগিয়ে দেয়!বৃষ্টি শেষে সূর্য্যি মামা হাসতে হাসতে তার দাপট নিয়ে আকাশটা দখল করেছে।পুঞ্জিভূত সাদা মেঘে ছেয়ে গেছে নীল আকাশ।রুমু জানলার কিনারায় বসে আছে মুখটা ফুলিয়ে।


"ডার্লিং রাগ করে না।আমার মতো বর পেয়ে কী করে রাগ করিস?"


উজ্জ্বল ফুঁ দিল রুমুর গালে।


" আমার বউ,আমার ডার্লিং,আমার জান,আমার প্রাণ রাগ করে না দেখ দেখ তুই রাগ করায় আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।"


" ঢং।"


" হ্যাঁ ঢং তাও কথা বল।


রুমু উঠে গেল রান্না ঘরে গিয়ে নিজের জন্য চা বসালো।মাথাটা ভীষণ ধরেছে রাতে ঘুমাতে পারেনি বলে মাথাটা কেমন টালমাটাল করছে।দরজার খটখট শব্দে দ্রুত দরজা খুলল রুমু।উর্মি এসেছে দেখে মেয়েটা খুশিতে জড়িয়ে ধরে অপরদিকে উজ্জ্বল বউয়ের রাগ ভাঙাতে রুমের দরজা বদ্ধ করে শাড়ি পরার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

সেন্টু গেঞ্জিটাকে ব্লাউজ বানিয়ে উজ্জ্বল প্যাঁচিয়ে শাড়ি পরলো।আঁচল টাকে চিকন করে দিয়ে মেদযুক্ত পেটটা বের করে মেয়েদের মতো হেটে রুমের বাইরে গেল।উজ্জ্বল আঁকাবাঁকা পা ফেলে  রুমুর দেখা পেল রান্না ঘরে।


রান্না ঘরের দরজায় দুই হাত তুলে স্টাইল দিয়ে বলে,


" হেই ডার্লিং।"


রুমু পেছন ফিরে তাকাল।উজ্জ্বলের মেয়েলি বেশভূষা দেখে কয়েক সেকেন্ড থম মেরে পলকে হেসে উঠল।মেয়েটা হাসতে হাসতে মেঝেতে বসে যায় হাতের টান লেগে সেই সাথে চামচ স্টিলের বাটি মেঝেতে পড়ে যায়।মুহূর্তে ঝনঝন শব্দে ছুটে আসে উর্মি এবং তামিম।উজ্জ্বলের এহন রূপে তারা তাজ্জব বনে তাকিয়ে আছে।এর মাঝে রুমু চিল্লিয়ে বলে,


" সো হট সুন্দরী।"


তামিম অবাক স্বরে বলে,


" এটা কে রে!"


উজ্জ্বল পেছেনে তাকাতে বোন আর দুলাভাইকে দেখে হতভম্ব হয়ে যায়।থরথরে কাঁপতে থাকে তার পা।এটা কী হলো!আপু দুলাভাই কখন এলো!উজ্জ্বল কোন মতে শাড়িটা লুঙ্গির ন্যায় তুলে ছুটে পালিয়ে যায় নিজের রুমে।


তামিম হাসতে হাসতে বলে,


" উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতা।রুমু তোমার কপাল পুড়ল।"

.

সারাটা দিন কেটে রাত নেমেছে অথচ উজ্জ্বল রুম ছেড়ে বের হয়নি।রুমুর সাথেও কথা বলেনি।মানসম্মানের আজ রফাদফা হয়ে গেছে যেখানে উজ্জ্বলকে দেখলে সবাই সম্মানের চোখে তাকাতো সেখানে আজ সবাই হাসছে!এসব কি মানা যায়?

রুমু উজ্জ্বলের পাশে বসে হাসিটাকে চেপে রেখে বলে,


" এভাবে আর কতক্ষণ বসে থাকবেন?"


" তোর সাথে আমার কথা নাই।"


" কেন নাই?"


" মানসম্মানের বারোটা বাজিয়ে আবার বলছিস... তুই সর, সর সামনে থেকে।"


" দোষটা কি আমার?নাকি আপনার?আমি কি জানতাম আপনি এই বেশভূষায় আসবেন?"


" তুই ওভাবে না হেসে আমাকে ইশারায় বলতেও তো পারতি আপু দুলাভাই এসেছে।"


" আপনাকে এই লুকে দেখে আমার হাসি কন্ট্রোলে ছিল না বিশ্বাস করুন।আপনার হটি পেটটা যা লাগছিল না.. একটু সুযোগ পেলে আপনার হটি পেটটায় চিমটি কেটে দিতাম।"


রুমু পুনরাত হেসে ফেললো উজ্জ্বল সেই হাসির দিকে তাকিয়ে রইল দাঁত কিড়মিড়িয়ে।


" খুব হাসি হচ্ছে?দাঁড়া তোর হাসি আজ বের করবো।"


উজ্জ্বল রুমুকে চেপে ধরে গালে চুমু খেতে থাকে একটা সময় কাঁমড়ে ধরতে দাঁত খিঁচে চুপসে যায় মেয়েটা।উজ্জ্বল উঠে বসে বিজয়ের হাসি হেসে বলে,


" যা দিলাম হাসি বন্ধ করে এবার উর্মি আপুর সামনে কি করে যাবি আমিও দেখব।"


রুমু শোয়া থেকে উঠে বসে।দ্রুত আয়নায় নিজের গালটা দেখে বুঝতে পারে কামড়ের দাগ বসে গেছে এই দাগটা কমবে না বরং সময়ের তালে তালে আরো বাড়বে।


রাতের খাবার টেবিলে সবাই উপস্থিত হলেও রুমু রুমেই বসে রইল।উর্মি বেশ কয়েকবার তাকে ডেকে পাঠিয়েছে কিন্তু লজ্জায় তার আর বের হওয়ার সাহস হয়নি।শেষ পর্যন্ত উর্মির অতিরিক্ত ডাকাতিতে বের হয়ে আসলো সে।তবে মুখটা ঢেকে ফেলল ওড়নার সাহায্যে।


" একি রুমু এভাবে মুখ ঢেকেছো কেন?"


" এ..এলার্জি আপু।"


" এলার্জি হলে মুখ ঢাকতে হয়?"


"আ...আমি ঢাকি আপু।"


" কি যে বলো তুমি।দেখি কি অবস্থা।"


উর্মি গাল থেকে ওড়না টান দিতে কামড়ের দাগ দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।বুঝতে পারে কি হয়েছে।


" তু..মি রুমে যাও আমি খাবার পাঠিয়ে দিব।"


উর্মি লজ্জায় মাথা নামিয়ে ডাইনিং টেবিলের সামনে আসে।উজ্জ্বলের পিঠে ধুমধাম কিল বসিয়ে বলে,


" খাবার নিয়ে রুমে যা।"


" এখানে খেলে কি সমস্যা?"


" অনেক সমস্যা।"


উজ্জ্বল চুপচাপ খাবার নিয়ে উঠে যায়।উর্মি নিশ্চিয়ই রুমুকে দেখেছে মেয়েটাকি লজ্জা পেয়েছে?

.

এলাকায় খবর ছড়িয়েছে রুমু পালিয়েছে তবে রুমু কার সাথে পালিয়েছে এই ব্যপারটা নিয়ে সবাই এতদিন জানার আগ্রহে থাকলেও বর্তমানে অনেকেই কানাঘুষা করছে উজ্জ্বলের সাথেই রুমু পালিয়েছে।উজ্জ্বল এলাকায় নেই আজ তিন দিন হয়ে গেল।এর মানে কি?নিশ্চিত উজ্জ্বল এসবে জড়িত।রাশেদের রক্ত টগবগিয়ে ফুটছে হাতের কাছে রুমুকে পেলে খু ন করতেও দ্বিধা করবে না।শত্রু পক্ষের ছেলের সাথে এই মেয়ে পালিয়েছে!কত বড় কলিজা হয়েছে মেয়েটার।উজ্জ্বলের খোঁজ লাগাতে লোক ভাড়া করেছে রাশেদ। রুমু যাকেই বিয়ে করুক ডিভোর্স করিয়ে হলেও হিমেলের সাথে বিয়ে দিয়েই ছাড়বে।রাশেদের জেদ রাশেদ কখনো অপূর্ণ রাখে না আর এই জেদটা কি করে রাখবে? 

.

লেকের পাশে সারি বদ্ধ বেশ কিছু স্ট্রিট ফুডের দোকান।রুমু একটি শর্মা নিয়ে বসলো চেয়ারে।ফুরফুরে বাতাসে তার খোলা চুল উড়ে বার বার মুখে লাগছে উজ্জ্বল যত্ন নিয়ে চুলগুলো মুঠোয় পুরে খোপা বাঁধলো।

উজ্জ্বল নিজেও শর্মা নিয়ে বসলো রুমুর পাশে।এক কামড় দিয়ে কিছুটা চবন করতে মুখ কুচকে বলে,


" এই রুমু কাছে আয়।"


" কেন?"


" কানে কানে কথা আছে শুন।"


রুমু তার কান বাড়িয়ে দিল উজ্জ্বল স্বল্প স্বরে বলে,


" ট্রাস্ট মি,এই শর্মার চেয়েও তোর ঠোঁট আরো বেশি ফ্লেভারফুল।"


রুমুর কান গরম হয়ে গেল।আশেপাশে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে বলে,


" লজ্জা লাগে না আপনার?"


" না লাগেনা।তুই পাশে থাকলে লজ্জারা উড়ে যায়।"


" আচ্ছা ওই হিমেল  সাথে আমার বিয়েটা যদি সেদিন হয়েই যেত আপনি কি করতেন?"


" এত সহজ?তুই কবুল বলার আগে এই বান্দা হাজির হয়ে যেত।"


" যদি না হতেন?"


" এই তুই খা তো।বাসর ফাসর শেষ করে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছি তুই আসলি আউল ফাউল কথা বলতে।"


" আমি আউল ফাউল কথা বলি?"


" বলিস,খুব বেশি বলিস।"


রুমু রেগে গেল।অর্ধ খাওয়া শর্মাটা রেখেই উঠে গেল সে।উজ্জ্বল মেয়েটাকে থামাতে বলে,


" বউ রাগ করে না।আসো আসো আর কি খাবে?"


" আমি কিন্তু চার প্লেট ফুসকা একটা বার্গার খাব।"


"এসব না খেয়ে আমায় খেলেও তো পারো।"


চলবে..

গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ১৩

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ১৩]


রান্না বান্নার কাজে মোটেও পটু নয় রুমু।ডিম ভাজা,নুডুলস করা, চা বানানো এই যা এর বেশি কিছু তার ধারনাতেও নেই।উজ্জ্বলের আজ ভীষণ জ্বর যে ছেলেটা সারাদিন বানরের মতো ছুটাছুটি করে সে আজ বিছানায় লেগে গেছে

যদিও এই জ্বরের ঘোরেও তার আবল তাবল বকবক বেশি বেড়েছে।ছেলেটাকে এই অসময়ে স্যুপ খাওয়ালে বেশি ভালো হতো কিন্তু রুমু তো স্যুপ রান্না করতে পারে না।সব মিলিয়ে আজকের দিনটা ভীষণ চিন্তায় চিন্তায় কাটছে তার।


"উজ্জ্বল শুনছেন?"


"হু।"


" কি খাবেন কিছু রান্না করবো?"


" কিছু রাঁধতে পারিস তুই?আমার চুল টানতে থাক বেশি কথা বলিস না।"


রুমু পুনরায় উজ্জ্বলের মাথায় হাত বুলালো।জ্বরে ছেলেটার গা পুড়ছে এসব দেখতে মোটেও ভালো লাগছে না তার।কিন্তু কি করবে?একা বাসায় একা হাতে সে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।

কিয়ৎক্ষণ বাদে উজ্জ্বল উঠে দাঁড়ালো।


" উজ্জ্বল আপনার কিছু লাগবে?"


উজ্জ্বল প্রত্যুত্তর করলো না বরং সারাটা রুমে কাঁথা মুড়িয়ে ঘুরপাক খেতে শুরু করলো।


" আপনি এমন করছেন কেন?"


এবারেও সে কোন জবাব দিল না।কাথা মুড়িয়ে এদিক সেদিক ছুটতে লাগলো।রুমু জানে উজ্জ্বলের এই অভ্যস নতুন নয় ছোট বেলা থেকেই জ্বর হলে পাগলের ন্যায় সারা বাড়ি ছুটতো আর আবোল তাবোল বকবক করতো এসবে তাকে একমাত্র সামলাতে পারতো তার মা।


"আপনার এই অভ্যস এখনো আছে!"


" কথা বলিস না।আমাকে খুঁজতে দে।"


" কি খুঁজছেন?"


" মুরগিগুলো খড়ে ভরতে হবে।"


" কি!মুরগি?কি বলছেন?"


" কাজের কাজ কিছুই করিস না আমার মুরগিগুলো বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে।


উজ্জ্বল পুনরায় ছুটতে লাগলো।সে তার মুরগিগুলো হাত দিয়ে ধরার চেষ্টা করছে।এসব দৃশ্য দেখে রুমুর বেহুশ হওয়ার অবস্থা মনে মনে অবশ্য ভয় লাগলো।ছোট বেলায় দাদীর কাছে শুনেছে নতুন বউদের নাকি জ্বীনে ভর করে, আচ্ছা রুমুর জ্বীনটা কি উজ্জ্বলকে ধরেছে?

একা বাসায় এসব ভেবে রুমুর ভয় বাড়লো উজ্জ্বলের কাছে ঘেষার সাহস করলো না সে।


"দাঁড়িয়ে আছিস কেন?আমার মুরগি ধরছিস না কেন?"


উজ্জ্বল ধমক লাগাল।মেয়েটা ভয়ে উজ্জ্বলের সাথে ছুটতে লাগল।হঠাৎ মেঘলা আকাশে ঠাসঠাস বাজ পড়তে শুরু করে।রুমু ভয়ে জড়িয়ে ধরলো উজ্জ্বলকে।অথচ উজ্জ্বলের মাঝে কোন ভয় নেই ছেলেটা রুমুকে সরিয়ে বলে,


" কৈ মাছ উঠবে।রুমু চল কৈ মাছ ধরি।"


"উজ্জ্বল এসব কী বলছেন?"


" তুই তো কৈ মাছ পছন্দ করিস।"


" হু।"


" চল তাহলে।"


উজ্জ্বল পুনরায় কাঁথা মুড়িয়ে সারা ঘর ছুটলো।ফ্লোরে হাত দিয়ে কৈ মাছ ধরার চেষ্টা চালাল।

রুমুর এসব আর সহ্য হলো না মেয়েটা ফোন করল উর্মিকে। ভিডিও কলে উজ্জ্বলের এসব কান্ড দেখে উর্মি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।


" রুমু তুমি ভয় পেও না।জ্বর উঠলে উজ্জ্বলের এসব পাগলামো নতুন কিছু নয়।একমাত্র আম্মাই ওঁকে এই পরিস্থিতিতে সামলাতে পারে।"


" এটা কেমন অভ্যস আপা।সেই ছোট বেলায় দেখেছি এখন দেখি বড় হয়েও একই অভ্যস আছে।"


" আমার আব্বার এই অভ্যসটা উজ্জ্বল পেয়েছে।বাদ দাও ওঁকে ওষুধ খাইয়ে শুয়ে থাকতে বলো।"


রুমু ফোন রাখলো উজ্জ্বলকে হাতে পায়ে ধরিয়ে বিছানায় শোয়ালো।অনেকক্ষণ যাবৎ তার মাথায় রুমু বিলি কেটে দিতে ঘুমিয়ে পড়লো।সময় কেটে গেল প্রায় তিন ঘন্টা।সন্ধ্যা নেমেছে ইউটিউবের সাহায্যে উজ্জ্বলের জন্য গরম গরম স্যুপ তৈরি করেছে রুমু।উজ্জ্বল ঘুম থেকে উঠতে স্যুপ খাইয়ে রেস্ট নিতে বললো।উজ্জ্বলের পাগলামি এখন কমেছে একদম ভদ্র ছেলের মতো চুপচাপ শুয়ে আছে সে।


" রুমু।"


" হুম।"


" টক খেতে ইচ্ছে হচ্ছে।রান্না ঘরে আচার আছে যা নিয়ে আয়।"


ঠোঁটটা কুচকে তাকিয়ে রইল রুমু।এসব কী বলছে এই ছেলেটা?আচার খাবে!রুমু কথা না বাড়িয়ে আচারের বয়াম আনলো  সবচেয়ে অবাক করা ব্যপার উজ্জ্বল এক সেকেন্ডও দেরি না করে রুমুর হাত থেকে বয়াম নিয়ে আচার খেতে লাগলো।আমের আটির অংশ যে ভাবে চিবিয়ে খাচ্ছে রুমুর জিহ্বে লোল পড়ে যাচ্ছিল।


" রুমু এসব কী হচ্ছে?"


" কোন সব?"


" ভেবেছিলাম জ্বর হবে তোর।মেন্টালি প্রিপারেশ নিয়ে রেখেছিলাম ওমা এখন দেখি উলটা আমার জ্বর হয়ে গেল!"


রুমু মুখে ওড়না গুজে হাসলো।


" আরেকটা লজিক আছে টক খেতে কেন মন চাইছে?টক খাওয়ার কথা তোর আমি কেন খাচ্ছি?"


" নিশ্চয়ই আপনার মধ্যে কোন মহিলা জ্বীন ভর করেছে উজ্জ্বল ভাই।"


" কে ভাই?প্রেক্টিক্যালি আবার বুঝাতে হবে?মানে যখনি তোর প্রেক্টিক্যালি বোঝার ইচ্ছে জাগে তুই আমাকে ভাই ডাকিস যাতে আমি রেগে যাই।বুঝিনা ভাবছিস?বাই দা ওয়ে সেই মহিলা জ্বীনটা কি তুই নয়?"


" একদমি না।"


উজ্জ্বল প্রত্যুত্তর করলো না।থম মেরে বসে রইল।এক বয়াম আচার শেষ করে চলে গেল বারান্দায়।বজ্রের দরুনে আকাশ যেন ভেঙে নিচে নামবে অথচ উজ্জ্বল ঠাই দাঁড়িয়ে রইল।মাঝারি আকারের বৃষ্টিতে ভিজে গেল সে।জ্বরের মধ্যে এই ঠান্ডা বৃষ্টিতে ভিজে তার কাঁপুনি বাড়লো।এমন সাংঘাতিক কর্মকান্ড দেখে রুমুর ভয় বাড়লো।উজ্জ্বল ভাই এত পাগলাটে কেন?মাথায় যখন যা আসবে তাই করতে হবে!রুমু প্রচন্ড রোমান্টিসিজম মেয়ে, বিয়ের আগে কত কি ভেবে রেখেছিল অথচ যেদিন থেকে উজ্জ্বলের সাথে তার বিয়ে হলো এরপর থেকে কোথায় পালালো রোমান্টিকতা।উজ্জ্বলের সাথে সে কিছুতেই পেরে উঠে না মনে হয় যেন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা।


" রুমু এদিকে আয়।"


" আমার ভয় লাগছে।"


" লাগবে না।"


" বললেই হলো।আমার ভয় লাগছে।আপনার রুমে আসা উচিত ভিজে যাচ্ছেন তো।"


" বললাম তো ভয় লাগবে না। কি করে লাগবে না দেখাচ্ছি এদিকে আয়।"


রুমু ছোট ছোট পা ফেলে এগিয়ে গেল উজ্জ্বল তার হাত টেনে বারান্দার গ্রিলে ঠেসে দাঁড় করালো।


" উজ্জ্বল ভয় লাগছে তো।বাজের শব্দে কি আপনার ভয় লাগছেনা?"


" না লাগছে না"


" আমি ভিজে যাচ্ছি।"


" ভেজাতেই তো আনলাম বউ।দেখবি তোর মাঝে এখন বাজ পড়ার ভয় কমে যাবে।"


" কি করে?"


" ওয়েট।"


উজ্জ্বল রুমুর চোখে চোখ রাখলো।ভেজা চোখের পাতায় অন্য কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে।রুমু মাথা নাড়ালো অথচ উজ্জ্বল কী তার বারণ শুনলো?মোটেও না।তিরতির করে কাঁপতে থাকা ভেজা ঠোঁট দুটো উজ্জ্বলের আয়ত্তে চলে এলো।রুমুর দু'হাত টেনে নিল তার ঘাড়ে।তৃষ্ণার্ত উজ্জ্বল এলোপাতাড়ি চুমুতে খেল।তার অবাধ্য ঠোঁট ঘাড়ে নামতে রুমু চোখ খিঁচে রইল।দুটি দেহ ভিজে একাকার এসবে কারো হুশ জ্ঞান নেই।উজ্জ্বলের ছোঁয়া বেপরোয়া হতে রুমু উজ্জ্বলকে টেনে সরায়,


" কি হচ্ছে কি রুমে চলুন।ঔষুধ খেতে হবে।"


" খাচ্ছি তো ঔষুধ।প্রতিদিন ছয় বেলা করে এই ঔষুধ না খেলে বাঁচবো নারে।"


" উজ্জ্বল..."


" এই ঔষুধ, কথা বলে না চুপ।"


উজ্জ্বল ধমকে উঠল।রুমু চাপা হেসে জড়িয়ে ধরল।

হঠাৎ পাশের বিল্ডিং থেকে একজন বৃদ্ধ মহিলা টচ ধরলো উজ্জ্বলের বারান্দায়।বারান্দার দরজা খুলতে আলোর দেখা পেয়ে দুজনে অবশ্য অনেক আগেই সরে গেছে।বৃদ্ধা চেচিয়ে বলল,


" এই তোমরা বৃষ্টিতে ভিজতাছো কেন?"


" ঔষুধ খাচ্ছি দাদী।"


" মশকারা করো?বৃষ্টিতে ভিজা কিসের ঔষুধ খাও?"


" আরেহ মশকারা না দাদী।এটা স্পেশাল ঔষুধ সৈয়দ বাড়ি থেকে আনা হয়েছে।একপিসি আছে তাও সেটা আমি নিয়ে এসেছি।এক ডোজে মন ভরে না দাদী প্রতি ডোজে অমৃত।"


রুমু দাঁত কিড়মিড়িয়ে চলে গেল।উজ্জ্বল যে কতটা বেয়াদব ছেলে তা তার কথার ধরণেই বোঝা যায়।এই লোকটা কি মুখ সামলাতে পারে না?উজ্জ্বলের কথায় বৃদ্ধা কিছুই বুঝলেন না তিনি চলে গেলেন।উজ্জ্বল রুমে এসে জড়িয়ে ধরল রুমুকে।


" লক্ষ্মী বউ রোমান্সে ডিস্টার্ব হয়েছে বলে রাগ করেছো?আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি?এই তো, আমি আছি তো।"

চলবে...


[আমার মাথায় একটা পোকা ঢুকেছে পোকাটার নাম আরশাদ পোকা।তাকে নিয়ে আবার নতুন করে গল্প লিখবো।পড়বেন কে কে?হাত পা ঠ্যাং তুলুন🥹]


গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ১২

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ১২]


ঝড় বৃষ্টি রাতটা কেটে ভোর হয়ে এলো যদিও বৃষ্টির দাপট এখনো কমেনি।স্বামীর বুকে মুখ লুকিয়ে শুয়ে আছে আনিকা।রাশেদ স্বামী হিসেবে যথেষ্ট কেয়ারিং হলেও হুটহাট রেগে গিয়ে ঝামেলা বাঁধিয়ে দেয়।রাশেদকে ভালোবেসে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায় আনিকা।মেয়েটার স্বপ্নের সংসার সাজিয়েছে শুধু রাশেদকে ঘিরে।পড়াশোনা বেশিদূর করা হয়নি তার।


" ঘুমাবে না?সকালে উঠে কাজে যেতে পারবে?"


আনিকার প্রশ্নে রাশেদ হাই তুলে নড়ে চড়ে উঠে।মেয়েটার মাথার পেছনে হাত বুলিয়ে বলে,


" ঘুম আসছে না।"


" তবে আমাকে ঘুমাতে দাও।সারা দিন যদি ঘুমে ঝুরতে থাকি কাজ করবো কখন?"


রাশেদ স্মিত হেসে আনিকাকে আরো কাছে টেনে আনে।মেয়েটার উন্মুক্ত পিঠে চুমু খেয়ে বলে,


" কাজের খালা আছেন তাও কেন কাজ করো?এই বাড়ির ভবিষ্যত কর্তী তুমি হাতে হাতে এগিয়ে দেবে এই যা।"


" কাজ দেখলে আমি বসে থাকতে পারিনা।"


রাশেদ চুপসে রইল।হঠাৎ তার মাথায় ভর করেছে কিছু চিন্তা মনে থাকা সন্দেহকে সঙ্গ দিয়ে বলে,


" রুমু এখন কোথায় বলতো।মেয়েটা পালিয়ে গেল কোথায়।"


" যেখানে আছে নিশ্চয়ই ভালো আছে।"


" ভালো আছে মানে?খারাপও থাকতে পারে।সত্যি করে বলতো রুমুর পালিয়ে যাওয়ার পেছনে তোমার হাত নেই তো?"


" ক.. কি বলছো তুমি!তোমার কোন কথার অবাধ্য আমি আজ পর্যন্ত হয়েছি?"


" জানি হও না হতেও তো পারো।"


" রাশেদ আমাকে শুধু শুধু সন্দেহ করছো কেন!"


" শুধু শুধু নয় আমি বেশ ভালো ভাবেই খেয়াল করেছি রুমুর পালিয়ে যাওয়া নিয়ে তোমার কোন মাথা ব্যথা নেই।মেয়েটা কোথা আছে নাকি মরেছে সেই নিয়েও তোমার দুশ্চিন্তা নেই।"


রাশেদ দাঁতে দাঁত পিষে কথা গুলো বলল।আনিকা ভয় পেল।ভয়ের চোটে কাঁপুনি ছুটে যায় তার।সে জানে রাশেদ একবার ক্ষেপে যাওয়া মানে মানসিক শারিরীক দুটো অত্যাচারি চলবে।রাশেদ আচমকা আনিকার চুলের মুঠি চেপে ধরে এবং কিড়মিড়িয়ে বলে,


" বাড়ির গেটের চাবি আর রুমুর ফোন আমার কাছে ছিল।একমাত্র তুমি দেখেছো আমি এসব কোথায় রেখেছিলাম।তাহলে রুমু পেল কি করে?এসব প্রশ্ন শুরু থেকেই আমাকে ভাবাচ্ছে।শুধু কখনো জানতে পারি রুমু পালিয়ে যাওয়ার পেছনে তোমার হাত আছে তবে কু*ত্তা মারা মারবো মনে রেখ।"


রাশেদ হাত ঝারা দিয়ে ছেড়ে দেয় আনিকার চুল।মেয়েটা কাপঁতে কাঁপতে ছিটকে যায় বিছানার কোনায়।

.

পুনরায় সকালে নামলো মুষলধারের বৃষ্টি।পানি কণা যে এক্ষুনি জানলার থাই ভেঙে ফেলবে।রুমু আড়মোড়া কাটিয়ে নড়ে চড়ে উঠতে উজ্জ্বল বিরক্ত হয়।মেয়েটাকে টেনে শুইয়ে দেয় বুকের কোনে।উজ্জ্বলের এসব প্রচন্ড বিরক্ত লাগলো রুমুর।মনে মনে বিরক্ত হয়ে বলল,ঘুমাচ্ছে ঘুমা আমাকে নিয়ে টানাটানি করছিস কেনরে ভাই।না আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছিস না নিজে ঠিকঠাক ঘুমাচ্ছিস।


" উজ্জ্বল শুনছেন?"


সাত সকালে এমন ডাকে উজ্জ্বলের মস্তিষ্ক সজাগ হয়।এত আদুরে ডাক!ছেলেটা পিটপিট চোখে তাকায় রুমুর পানে,


" বল বউ।"


" আপনি ঘুমাবেন ঘুমান।আমাকে ছাড়ুন আমার ঘুম দরকার।"


" তোকে ছাড়া ঘুমানোর ইচ্ছে নেই বউ।ঘুমাতে হলে আমাকে জড়িয়েই ঘুমা।"


" এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে।সারারাত জ্বালিয়েছেন কিছু বলিনি।"


" আমি তোকে জ্বালিয়েছি!ভালোবেসেছি আর তুই এত বড় অপবাদ দিলি।ঠিক আছে ঘুমা।"


রুমুকে বুক থেকে সরিয়ে উজ্জ্বল পাশ কেটে শুয়ে পড়লো।ছেলেটার এমন রাগে রুমু যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।অত্যান্ত খুশি মনে যখনি সে শুয়ে পড়লো তখনি তার উপর ভর ছেড়ে দিল উজ্জ্বল।


" বউ তোকে ছাড়া ঘুম আসবে না।"


" এতদিন ঘুমিয়েছেন কীভাবে?"


" ধর তুই এতদিন ভাত খাইতি এখন বিরিয়ানি পাইলি তাহলে কি খাবি ভাত নাকি বিরিয়ানি?"


" আপনার এসব যুক্তির কোন মানে নেই সরুন।"


উজ্জ্বল সরলো না বরং আরো চেপে গেল।রুমু বিরক্ত মাখা দৃষ্টিতে নজর বুলাতে গালে বেশ কয়েকটি চুমু খেল। 


" বউ তোর স্কিন কেয়ার প্রডাক্ট কেনা লাগবে না আমার চুমুতে পিম্পল,টিম্পল সব তাদের বংশ গুটিয়ে পালাবে।"


" আপনার ঠোঁটের জীবাণু... "


" কী বললি?"


উজ্জ্বল রুমুর গাল চেপে ধরল।কপাল কুচকে জেদ নিয়ে রুমুর ঠোঁটে চুমু বসালো।একে একে উজ্জ্বলের ঠোঁট ছোঁয়া ছড়িয়ে পড়ল সারা মুখে। এত ধকল সইতে না পেরে রুমু ক্লান্ত হয়ে গেল।


"যদি আমার চুমুতে জীবাণু থাকে তবে জীবাণুই ভালো।দুজন মিলে এখন থেকে  জীবাণু জীবাণু খেলবো।ঠিক আছে?"


" উজ্জ্বল ভাই আপনার পায়ে ধরি আমাকে একটু ঘুমাতে দেন।আমি যদি জানতাম আপনি এমন..."


" কেমন?"


" কন্ট্রোললেস।"


" আমার যে কন্ট্রোল নেই তুই জানিস না?"


" সব ব্যপারে যে নেই তা তো জানতাম না।"


উজ্জ্বল উঠে দাঁড়াল।পড়নের টাউজারটা টেনে টুনে সারা শরীর টানটান করে বলে,


" ওকে ঘুমা।জ্বালাতন করবো না।তবে পাঁচ মিনিট সময় দিলাম জামাকাপড় পড়ে ঘুমাবি।আমি আবার কন্ট্রোল হারাতে পারি এই ক্ষেত্রে নিজেকেও নিজে বিশ্বাস করি না।"


রুমু ঠোঁট বাঁকাল।গায়ে কাথা জড়িয়ে সেও উঠে দাঁড়ালো।ডয়ার থেকে জামা নিয়ে যখনি ওয়াশরুমে যাবে উজ্জ্বল চেচিয়ে বলে,


" সেই সেই আমার বউয়ের কাছে এই জগৎ এর নায়িকারা ফেল।"


" উজ্জ্বল ভা..."


" খবরদার ভাই ডাকবি না।ভাই ডাকলে আবার বুঝিয়ে দেব আগের উজ্জ্বলের সাথে তোর এখনকার উজ্জ্বলের কি সম্পর্ক।"


রুমু চুপসে গেল।সারাটা রাত তার উপর রোলার চলেছে এখন কিছু বললে আবার চলবে।এই মুহূর্তে চুপ থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

.

রুমু আর উজ্জ্বলের একটা দিন কেটে গেল ঘুমে ঘুমে।উজ্জ্বলের ঘুম ভেঙেছে কিয়ৎক্ষণ আগে ছেলেটা গোসল সেরে জলদি জলদি খাবার গরম করলো।গতকালকের সব খাবার ফ্রিজেই ছিল তাদের আর খাওয়া হয়নি।রুমে টুকটাক শব্দে রুমুর ঘুমটাও ভেঙে গেলো।মেয়েটার রক্তিম চোখ দেখে উজ্জ্বল কিছু আঁচ করতে পারলো নিজের দুষ্টুমি ভাবটা কমিয়ে স্বাভাবিক হয়ে বলে।


" যা গোসল করে আয়।ফ্রেশ লাগবে।"


রুমু উঠে বসলো কিন্তু আবার বসা থেকে শুয়ে পড়লো।সারা শরীরে অসহ্যকর ব্যথা ছড়িয়ে আছে।উজ্জ্বলের প্র‍তি ভীষণ রাগ জমলো তার।ঠোঁট খিঁচে হাতের কাছে থাকা চুলের ক্লিপটা ছুড়ে ফেলল উজ্জ্বলের গায়ে।


" বেয়াদব লোক রয়ে সয়ে করা যেত না!আমি কি পালিয়ে যাচ্ছিলাম।"


" আজব!যখন করলাম তুই আমাকে বারণ করেছিস?তখন তো..."


" এই চুপ!"


রুমু চেচিয়ে উঠলো তা দেখে হাসলো উজ্জ্বল।মেয়েটাকে পাঁজাকোল তুলে নিয়ে গেল ওয়াশরুমে।


" গোসল সেরে আয় খেয়ে দেয়ে ওষুধ খাবি দেখবি ভালো হয়ে যাবি।"


" যান বের হন।আবার তো বায়না ধরবেন আমার সাথে গোসল করার জন্য।"


" দেখলি এখন আমি কিছু বলেছি?তুই আমার মাথাটা ঘুরিয়ে দিয়ে সব দোষ আমার দিকে দিয়ে দিস।এখন যখন বললি গোসল আরেকবার করাই যায়।"


উজ্জ্বল নিজের গায়ে থাকা টি-শার্ট টেনে খুলে ফেললো।রুমু এমন পরিস্থিতিতে ধাক্কা দিয়ে উজ্জ্বলকে বের করল।


" আপনার মতো কন্ট্রোললেস পুরুষ মানুষ আমি আর দেখিনি।"


" দেখবি কি করে?যে পুরুষের যেখানে কন্ট্রোললেস হওয়া দরকার সে সেখানেই হয়।যেমনটা আমি হচ্ছি।"

চলবে...

উজ্জ্বল ভাইয়ের পাঠকরা একটু বেশি পচা😒তারা গ্রুপে জয়েন নাই।কেউ আড্ডা দেয় না।



গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ১১

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ১১]


" কী চাই?"


" আব্বা ফোন করে রাগারাগি করছে তোকে বাড়ি যেতে বললো।"


" যাব না বাড়ি।রাগারাগি করছে কেন সেটা বলো।"


" রাশেদ আর চাচি নাকি তোকে নিয়ে ভীষণ গালমন্দ করছে তারা সন্দেহ করছে  তুই রুমুকে লুকিয়ে রেখেছিস।"


" করুক গালমন্দ খালি আমার বাড়ির সীমানায় এসে পা ফেলুক, গালমন্দ করুক ওর গাল আর পা দুইটা আর আস্ত থাকবে না।আমি এমনি এমনি এলাকা ছেড়ে বউয়ের কাছে আসিনি ওখানে সব ব্যবস্থা করেই এসেছি।শুধু রাশেদ একবার গন্ডোগোল করুক আমার বাহিনী তার কি অবস্থা করে দেখবে।আর কিছু বলবে?"


উজ্জ্বলের রাগান্বিত মুখটা দেখে চুপসে গেল উর্মি।ভাই হঠাৎ কেন রেগেছে?


" তুই কি রেগে আছিস উজ্জ্বল?"


" একদমি না।এই যে দেখো আমি হাসছি হি হি হি হা হা হা।"


উজ্জ্বল মেকি হাসলো।উর্মি বুঝতে পারলো ভাই হয়তো কোন ব্যপারে রেগে আছে।বিছানায় গুটিয়ে বসে থাকা রুমুর দিকে তাকিয়ে উর্মি বলে,


" বেলা এগারোটা বাজে বসে থেকো না নাস্তা করে যাও।উজ্জ্বল তুইও আয়।"


উর্মি চলে গেল।উজ্জ্বল তার পানে তাকিয়ে দরজা বন্ধ করে তাকালো রুমুর পানে।মুখটা তার পাংশুটে রেখে অতি আবদার সুরে বলে,


" আরেকবার চান্স দিবি?"


লজ্জায় হঠাৎ প্রস্তুত ভাবে সংকোচে ছিল রুমু।উজ্জ্বলের এমন প্রশ্নে অবাক হয়ে বলে,


" কিসের চান্স?"


" বুঝতে পারছিস না?"


" বুঝিয়ে বলেন।"


" বুঝে নে।"


" পারবো না।আপনি বলেন।"


উজ্জ্বল ফসফস শ্বাস ছাড়লো।তার এত লজ্জা লাগছে কেন?একে তো মনের বাসনা অপরদিকে লজ্জা আর রুমুটাও হয়েছে এক ত্যাড়া সব বুঝেও উজ্জ্বলকে শায়েস্তা কর‍তে না বোঝার ভান করে। উজ্জ্বল কি এসব বোঝেনা?খুব বুঝে।একবার লজ্জা ভেঙে দুটি দেহের সন্ধি হোক আর ছাড়বে না কিছুতেই না সারাটাদিন সারাটাক্ষণ রুমুকে জ্বালানো হবে।এক মাঘে শীত যায়?যায় না।সুযোগ উজ্জ্বলেরো আসবে যখন কাতর হয়ে উজ্জ্বলের কাছে আসবে উজ্জ্বল তাকে বুঝিয়ে দেবে বুঝেও না বোঝার ভান করার শাস্তি।


উজ্জ্বল যখন ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করলো রুমু তখন আঁচলে ঠোঁট গুজে হাসলো।উজ্জ্বলকে জ্বালাতে তার একটু বেশি আনন্দ হয়।গত একবছর যাবৎ বিয়ে করবি?চল বিয়ে করি?তুই কবে রাজি হবি চল বিয়ে করি।এসব বলে রুমুর মাথা খেয়েছে উজ্জ্বল 

অথচ এখন যখন বিয়ে করার সুযোগটা হয়েছে তখন বিয়ের পরেও উজ্জ্বলকে জ্বালানো থামানো যাবে না।

.

সকালের নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়লো উজ্জ্বল তার কাজ এখন এই শহরটা ঘুরে দেখা। তাছাড়া হাত একদম খালি কিছু টাকাও তুলতে হবে।

উজ্জ্বল বেরিয়ে যেতে উর্মির হাতে হাতে কাজ এগিয়ে দিল রুমু।দুজনের মাঝে বেশ আড্ডা চলছিল।যেহেতু তারা পূর্ব পরিচিত তাই কারো মাঝে কোন জড়াতা নেই।

দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলো উজ্জ্বল দুপুরে খেতে আসেনি ছেলেটা কোথায় আছে কে জানে।অসময়ে তামিমকে বাসায় আসতে দেখে বেশ অবাক হয় উর্মি তামিমের অফিস ছুটি এত তাড়াতাড়ি তো হয়না।


" এত তাড়াতাড়ি এলে যে?"


" বাড়িতে সাংঘাতিক কান্ড ঘটেছে আম্মা সিড়ি থেকে পড়ে মাথা ফাটিয়েছেন।আব্বা হসপিটাল নিয়ে যাচ্ছে।"


" সেকি কথা।অবস্থা কি খুব খারাপ?"


" জানি না।আমার মাথা কাজ করছে না তুমি তাড়াতাড়ি তৈরি হও ব্যাগ গুছিয়ে নাও।আমি গাড়ি ধরিয়েছি কিছুক্ষণ পরেই  আসবে।"


উর্মি অপেক্ষা করলো না তাড়াতাড়ি আলমারি খুলে প্রয়োজনীয় জামাকাপড় ব্যাগে ভরলো।এখান থেকে উর্মির শ্বশুর বাড়ি যেতে প্রায় দুই ঘন্টার রাস্তা তাই যত দ্রুত সম্ভব রওনা হলো তারা।বাসায় একা পড়ে রইলো রুমু।তামিম অবশ্য বাসা ছাড়ার আগে উজ্জ্বলকে ফোন করে আসতে বলেছে রুমু বাসায় একা সে যেন তাড়াতাড়ি আসে।


রৌদ্র মাখা আকাশটায় হঠাৎ মেঘ করেছে।অন্ধকারের অতলে ডুবে যাচ্ছে ব্যস্তময় শহর।এতদিনের ভ্যাপসা গরমে হঠাৎ মেঘে শহর জুড়ে স্বস্তির সংকেত দিচ্ছে।তবে এই স্বস্তিতে খুশি হতে পারলো না রুমু।অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল উজ্জ্বল এখনো আসেনি।আকাশ ডাকতে শুরু করেছে সময়ের তালে তালে সেই ডাক বেড়েছে।ধীরে ধীরে বাতাসের তান্ডব বাড়লো অশনি ঝড়ে গাছপালার উথাল-পাতালে ভয়ে কুঁকড়ে গেল রুমু।

একা একটা বাসায় এমন

 ভয় কাতুরে রুমু কি করে শান্ত থাকবে?একে তো ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেল তার উপর বিজলি এবং বজ্রপাত সব মিলিয়ে ভয়ে কাঁপতে থাকে মেয়েটা।এই মুহুর্তে যত প্রকার বিশ্রি গালি আছে উজ্জ্বলকে দিতে মন চাইলো তার কিন্তু আবার মনে পড়লো উজ্জ্বল হয়তো দূরে কোথাও গেছে আসতে নিশ্চয়ই দেরি হচ্ছে সেও হয়তো ঝড়ের কবলে পড়েছে।সব মিলিয়ে অনুভূতি শূন্য হয়ে দম খিঁচে বসে রইলো মেয়েটা।


চিন্তায় চিন্তায় অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলো। উজ্জ্বলকে ফোন করতে পারলে মনে শান্তি পাওয়া যেত।সমস্যা বাঁধলো রুমুর ফোনটা উজ্জ্বলের কাছে।


হঠাৎ দরজার খটখট শব্দে উঠে দাঁড়ালো রুমু।দ্রুত দরজা খুলে উজ্জ্বলকে দেখতে পেয়ে মনে স্বস্তি ফিরলো।


" দেখ ভিজে গেছি।অনেক দূরে গিয়েছিলাম।"


" কাক ভেজা হলেন কি করে?কোথাও থামেননি।"


"না।চাইলে বাইকটা কোথাও রেখে ছাউনিতে অপেক্ষা করতে পারতাম তুই বাসায় একা তাই ঝড় মাথায় নিয়ে ছুটে এসেছি।একি তুই কাঁপছিস কেন?"


" ঠান্ডা লেগে যাবে তো দ্রুত বাথরুমে যান।"


"এই বউ কাঁপছে কেন তোর শরীর?ভয় পেয়েছিস?এইতো চলে এসেছি।

দেখলি তোর কথা কত ভাবি তাও তো ভালোবাসিস না।"


" ভালোবাসার যখন সময় হবে ভালোবাসা যাবে।"


" সময়টা কবে হবে?"


রুমু ঠোঁট বাঁকিয়ে অন্য রুমে চলে গেল।উজ্জ্বল জামা পাল্টে মাথা মুছে বসলো বিছানায়।ঝড়টা তখনো কমেনি বরং তুমুল বৃষ্টি আর বজ্রপাত সময়ের তালে তালে বেড়ে গেল।এই ঠান্ডায় উজ্জলের জন্য একমগ কফি বানিয়ে ফিরলো রুমু।এক চুমুকে বিস্বাদে ভরে গেল উজ্জ্বলের মুখ তবে রুমুকে কিছুই বললো না সে।বউটা প্রথমবার নিজ হাতে বানিয়েছে কিছু বললে কষ্ট পাবে।সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেল এখনো ইলেক্ট্রিসিটি আসার খবর নেই।একটা শীতল দিনে রোমান্টিক ওয়েদারে বউটা আশেপাশে ঘুরঘুর করছে অথচ উজ্জ্বল হাত পা কোলে নিয়ে বসে আছে।একি মানা যায়?


" আমার ফোনটা দিন উজ্জ্বল ভাই।"


" কেন?"


" এভাবে হাত-পা গুটিয়ে কতক্ষণ বসে থাকা যায়?ফেসবুকে যাব।"


" তুই সিম অন কর ফেসবুকে যা আর তোর ভাই লোকেশন পেয়ে তোকে পিস পিস করে বস্তা বাঁধুক এটাই তো চাস?"


" সিম বাদ তাহলে নতুন একাউন্ট খুলে দিন।"


" কেনো ফেসবুকে পোস্ট দিবি?তা কি পোস্ট দিবি.. রোমান্টিক ওয়েদার, জামাই নিয়ে শুয়ে থাকার মতো ওয়েদার,আজ সিঙ্গেল বলে,আজ জামাই নাই বলে কাঁথা জড়িয়ে ঘুমাই। এসব পোস্ট দিবি?"


রুমু বুঝতে পারলো উজ্জ্বলের খোঁচা। প্রতিবার বৃষ্টি হলে রুমু এসব পোস্ট করে আহাজারি করে।তার এই পোস্টকে ঘিরে আমেজে মেতে থাকে তার বন্ধুদল।


" হুম এসব পোস্ট দিব এবার ফোন দিন।"


" তুই এখনো সিঙ্গেল?এই তোর চোখে কি এই জলজ্যান্ত মানুষটাকে নজরে আসে না?"


" উজ্জ্বল ভাই ভালো...."


" কে ভাই?কে ভাই?আগে এই প্র‍শ্নের জবাব দিবি।"


" ভুলে মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।এত রেগে যাচ্ছেন কেন?আপনিতো আমার ভাই...."


রুমু কথা শেষ করার আগে উজ্জ্বল উঠে দাঁড়ায়।শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলে,


" আমি ভাই?আজ তোকে বোঝাবো আগের উজ্জ্বল ভাইয়ের মধ্যে আর এখনকার উজ্জ্বলের মাঝে কি পার্থক্য।"


উজ্জ্বল রুমুর কাছে ক্রমশ এগিয়ে এলো। রুমু দ্বিধাদ্বন্দে পেছাতে পেছাতে দেয়ালের সাথে ধাক্কা লাগে।উজ্জ্বল হাসে, শার্টের বোতাম মাত্র দু'টো খুলতে রুমু উজ্জ্বলকে বাঁধা দেয়।ছেলেটা ভ্রু কুচকে তাকাতে রুমু নিজেই উজ্জ্বলের শার্টের বোতাম খুলে দেয়।উজ্জ্বলের অনাবৃত বুকে আঙুলের ছোঁয়া দিতে উজ্জ্বল হাত ধরে নেয়।রুমুর প্রেম প্রেম চাহনি উজ্জ্বল বুঝতে পারে তবুও সুনিশ্চিত হতে প্রশ্ন করে,


" ইয়েস ওর নো?"


" ধরেনিন কোন উত্তর নেই।"


" তবে নীরবতা সম্মতির লক্ষণ।"


উজ্জ্বল রুমুকে পাঁজাকোলে তুলে নেয়।ভয়ে গলাটা শুকিয়ে যায় রুমুর।খোলা জানলায় উথাল পাথাল বৃষ্টির শব্দ উত্তাল করে দুটো মন।উজ্জ্বল সেচ্ছায় রুমের লাইট অফ করে।অন্ধকারে রুমুকে জড়িয়ে বসে থাকে কিয়ৎক্ষণ।রুমুর সাড়াশব্দ নেই শুধু শ্বাস প্রশ্বাসের আন্দোলন বাড়ি খাচ্ছে উজ্জ্বলের কানে।বেচারা উজ্জ্বলের তৃষ্ণার্ত ঠোঁট জোড়া প্রেয়সীর সংস্পর্শে এসে নিয়ন্ত্রণ হারায়।দু'জোড়া ঠোঁট মিলিত হয় গভীর আলিঙ্গনে।রুমুর বাঁধা দেওয়ার তাড়া নেই বরং উজ্জ্বলকে নিজের আবদার বোঝাতে হাতে হাত মিলিয়ে জড়িয়ে ধরেছে।সময় পেরিয়ে যায় বেশ কিছুক্ষণ,বজ্রের শব্দে কেঁপে উঠে রুমু উজ্জ্বল তাকে পরম আদরে গভীর আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে।মেয়েটার ঘাড়ে গালে গলায় উষ্ম স্পর্শে বেসামাল করে তুললো।রুমু যখন নিজের নিয়ন্ত্রণ হারা তখনি উজ্জ্বল রুমুকে রেখে উঠে দাঁড়ায়।কন্ট্রোললেস উজ্জ্বল নিজেকে কন্ট্রোল করে বিছানা ছেড়ে বারান্দার থাইগ্লাসটা খুলে দেয়।এক দমকা বাতাসে শীতল হয়ে যায় তার শরীর।উদাম শরীরটা টানটান করে কোমড়ে হাত গুজে দাঁড়ায়।রুমু ভীষণ অবাক হয় উজ্জ্বল এমনটা কেন করলো!এই ছেলের মনে চলছে কী?

রুমু উঠে বসে কোন মতে গায়ে শাড়ি জড়িয়ে বিছানা ছেড়ে বারান্দায় আসে।উজ্জ্বল রুমুর অবাক চাহনি পরখ করে বলে,


" এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?"


" কাজটা কি খুব ভালো হলো?"


" সরি,হঠাৎ মাথায় আসলো অনুমতি ছাড়া কিছু করলে সেদিনের মতো যদি তুই অজ্ঞান হয়ে যাস।তাই ভয়ে চলে এলাম।তাছাড়া তুই তো অনুমতি দিলি না।"


" অনুমতি দেওয়া কি খুব দরকার?সব বুঝেন আর.... ফালতু লোক।থাক থাকেন বারান্দায় রুমে আসবেন না।আর কখনো যদি চান্স চান... খু ন করে ফেলবো।"


রুমু রেগে মেগে রুমে ফিরলো।উজ্জ্বল বুঝতে পারলো বউ জবরদস্ত খেপেছে।রুমু যখনি অন্য রুমে পা বাড়ায় তখনি তাকে ধরে নেয় উজ্জ্বল।টেনে এনে জড়িয়ে ধরে বুকের মাঝে।


" এত রাগ!অনুমতি দিচ্ছিস তবে।"


" না।"


" তাহলে বুঝতে পারছি কলিকাতা হারবাল আমার না তোর প্রয়োজন।আমি সৈয়দ উজ্জ্বল আনিস একবার যখন বলেছি প্রেক্টিক্যালি দেখিয়ে ছাড়বো তখন দেখাবই।"


রুমু নিজের জেদটাকে ধরে রেখে উজ্জ্বলের ডাকে সাড়া দিল না।জেদ দেখিয়ে অনেকক্ষণ ঝুটঝামেলা করলো তবে লাভ কী হলো?উজ্জ্বলের বলবান দেহের সাথে কিছুতেই পেরে উঠলো না।উজ্জ্বল যখন তাকে তুলে বিছানায় ফেললো মেয়েটা তখন ভেবেই নিয়েছিল আজ বোধহয় তার পিঠের হাড় ভেঙে খান খান হয়ে গেছে।উজ্জ্বল ক্রমশ অসংলগ্ন হয়ে উঠলো রুমু আবিষ্কার করলো অন্যরকম উজ্জ্বলকে যে প্রতিটি স্পর্শে ভালোবাসার জানান দিতে উঠে পড়ে লেগেছে।গলায় ঘাড়ে এলোপাতাড়ি চুমুগুলো কামড়ে রূপান্তরিত হলো।যত্নে পরা শাড়িটা উজ্জ্বল কোথায় ছুড়ে মেরেছে কে জানে।রুমু ভেবেছে উজ্জ্বল হয়তো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে রুমুর ভালো মন্দে ছেলেটা মাথা ঘামাবে না।

অথচ দুটি দেহের সন্ধিক্ষণে উজ্জ্বল এতটাও বেপরোয়া হয়ে যায়নি বরং নিজের কেয়ারিং স্বভাবটা রেখে প্রশ্ন ছুড়েছে। 


" ঠিক আছো?"


তুই থেকে সম্পর্কটা তুমিতে রূপান্তরিত হলো।এর আগে কি সম্পর্ক ছিল মাথাতেই নেই উজ্জ্বল শুধু রুমুকে চেয়েছে, মেয়েটার দেহের প্রতিটা ভাজে নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়ে মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে ঘুমায়।অবশ্য উজ্জ্বলের এই ঘুম এক ঘন্টাও স্থায়ী হয়নি।বৃষ্টি মাখা সারাটা রাত উজ্জ্বল রুমুকে জ্বালিয়েছে,ভালোবাসার অত্যাচারে বন্দি করেছে রুমু চুপচাপ সব হজম করলেও একটা সময় ঘুমের লোভে ত্যক্তবিরক্ত হয়ে যায়।উজ্জ্বলকে ঝারি দিয়ে গা থেকে সরানোর বৃথা চেষ্টা চালিয়ে বলে,


" আর কত?"


" মাত্র শুরু।অল্পতে অধৈর্য!"

চলবে...


গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ১০

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ১০]


ঘেমে জুবুথবু অবস্থায় বসে আছে উজ্জ্বল।সে কী করবে না করবে ভেবে কোন কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না।ভয়ে কাঁপছে বুক কি থেকে কি হয়ে গেল।সে কী করেছে?একটা চুমুই তো দিয়েছে।তার চুমুতে কি এতটাই ভোল্টেজ যা রুমুকে অজ্ঞান করতে সক্ষম!উজ্জ্বল রুমুর গালে হাত রাখলো মেয়েটাকে ডাকলো বেশ কয়েকবার অথচ কোন সাড়া শব্দ নেই।ফুলে সুভাসিত বাসরটা এক মুহুর্তে তার কাছে আতঙ্কে পরিনত হলো।দ্রুত ফোন হাতে তুলে সিদ্ধান্ত নিল সিয়ামকে ফোন করবে এই মুহুর্তে বন্ধুরা ছাড়া তাকে সাহায্য করার আর কেউ নেই।তবে আবার ভাবলো এরা নিশ্চয়ই তাকে নিয়ে মজা লুটবে।সারাজীবন বন্ধুরা বলে বেড়াবে উজ্জ্বল বাসর ঘরে বউকে অজ্ঞান করেছে।ছিহ ছিহ ছিহ এসব কথা পাঁচ কান হওয়া মানে মানসম্মান ঝুলে যাওয়া।


উজ্জ্বল যখন চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছে তখন রুমু স্বল্প চোখ খুলে উজ্জ্বলের অবস্থা দেখছে।হঠাৎ উজ্জ্বলের আবেগী হওয়াটা সহজ করে নিতে পারেনি রুমু মেয়েটা যদি এখন পালটা প্রতিক্রিয়া দেখায় উজ্জ্বল নিশ্চয়ই ঝামেলা করবে।তাই নিজেকে বাঁচাতে মেয়েটা অজ্ঞানের নাটক করেছে।উজ্জ্বলের বেসামাল কর্মকান্ডতে রুমু নিজেও পা পিছলে বাসরের দুনিয়ায় হারিয়ে যেত কিন্তু সে চায় না এমনটা হোক উজ্জ্বলভাইকে একটু নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরানো যাক।


উজ্জ্বল উঠে গিয়ে জগ থেকে পানি নিয়ে রুমুর মুখে ছিটা দিল।এই মুহুর্তে রুমু আর নাটক ধরে রাখতে পারলো না।পিটপিট চোখ খুলে তাকালো উজ্জ্বলের দিকে।রুমুর জ্ঞান ফিরেছে ভেবে উজ্জ্বল নিশ্চিন্ত হলো।


" রুমু ঠিক আছিস?"


" আমার কি হয়েছে?"


" কিছু না মাথাটা একটু ঘুরে গেছে।"


"আমার কেমন কেমন লাগছে উজ্জ্বল ভাই।সব ঘুরছে,আমি ঘুরছি,আপনি ঘুরছেন।"


" এই তো ঠিক হয়ে যাবে একটু অপেক্ষা কর।বিশ্রাম নে।"


" আপনার ঠোঁটে লিপস্টিক কেন?"


রুমুর প্রশ্নে উজ্জ্বল ঠোঁটে হাত রাখে।দ্রুত ফোন ক্যামেরায় নিজেকে পরখ করে গলা ঝেরে কেশে টিস্যুর সাহায্যে ঠোঁট পরিষ্কার করে।রুমুর ঠোঁটে থাকা লাল টকটকে লিপস্টিক উজ্জ্বলের ঠোঁট লেগে গেছে।ছেলেটার লজ্জা পাওয়া মুখভঙ্গিমা দেখে ঠোঁট কুচকে হাসে রুমু।


" উজ্জ্বল ভাই আপনি কাজটা ঠিক করেননি।"


" কি করেছি?মাত্র একটা চুমু!আমার রুমুকে আমি চুমু খাব না?"


" না খাবেন না।আমি প্রস্তুত ছিলাম না।"


"আশ্চর্য এভাবে সেজেগুজে বসে ছিলি আমার মাথা ঘুরিয়ে দিয়ে এখন বলছিস প্রস্তুত ছিলি না!মানে খেতে ডেকে এখন বলছে রান্না হয়নি।"


" এই জীবনে আমি কখনো অজ্ঞান হইনি।কড়া রোদে স্কুলে পিটি করেছি,আব্বার ধমক খেয়েছি,আম্মার মার খেয়েছি অথচ আপনার একটা চুমুতে আমি কুপোকাত।

বুঝতে পারছেন আপনি?আমি কতটা ভয় পেয়েছি।


" কি বলেছিলাম মনে নেই?প্রমান করবো এই উজ্জ্বলের কলিকাতা হারবাল লাগবে কি না।একদম প্রেক্টিক্যালি বুঝিয়ে দিব।এখন তো আমার মনে হচ্ছে তোর কলিকাতা হারবাল লাগবে।"


" বাজে কথা বলবেন না উজ্জ্বল ভাই।"


" ওও আমি বললেই বাজে!ঠিক আছে তুই যতদিন না প্রস্তুত হচ্ছিস এই উজ্জ্বল ক্ষুদার্ত থাকবে।আরেকটা কথা উজ্জ্বল ভাই উজ্জ্বল ভাই করলে দ্বিতীয়বার অজ্ঞান করার ব্যবস্থা করে দেব।"


" তাহলে কী ডাকবো?"


" যা ইচ্ছা ডাক তবুও ভাই ডাকিস না।"


রুমু শোয়া থেকে উঠে বসলো।শাড়ি পালটে তাকে ঘুমাতে হবে আয়নায় নিজেকে দেখে ভারি অস্বস্তি হলো।সারা ঠোঁটে লিপস্টিক লেপ্টে।অপরদিকে বিছানায় থাকা গোলাপের পাপড়ি গুলোর দিকে ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে উজ্জ্বল।এক মুহুর্তের জন্য মনে হচ্ছে গোলাপের পাপড়িগুলো তার পরিস্থিতি দেখে হামাগুড়ি দিয়ে কাঁদছে।


রুমু বেশ কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুম থেকে বের হলো।উজ্জ্বল তার ভেজা চুল দেখে ভ্রু কুচকে বলে,


" গোসল করলি কেন?আমি কিছু করেছি?"


" গোসল করলে রাতে ঘুম ভালো হবে।আপনি এত রেগে যাচ্ছেন কেন?"


" কই?আমি রেগেছি?"


" আমি ঘুমাবো সরুন তো।পারলে ঝাড়ু দিয়ে ফুলগুলো ডাস্টবিনে ফেলে দিন।"


" তোর মায়া লাগছে না রুমু? আজ আমাদের... "


" আমাদের কি?আমি বাচ্চা মেয়ে এসব...'


" ফাজিল মেয়ে তুই বাচ্চা?তুই যে একেরপর এক রিলেশনে গেলি তখন কি তুই বুড়ি ছিলি?এই উজ্জ্বলকে প্রমান করার সুযোগ দে প্রমান করে দেব তুই বাচ্চা না তুই বাচ্চার মা হওয়ার ক্ষমতা রাখিস।"


রুমু প্রত্যুত্তর করলো না বরং চুপচাপ শুয়ে পড়লো সে।উজ্জ্বল আশাহত নয়নে তাকিয়ে রইল রুমুর পানে।একবার ছুঁয়ে দিয়ে অজ্ঞান হয়েছে দ্বিতীয়বার ছুঁয়ে দিলে যে কী হবে ভাবতেই ঢোক গিললো উজ্জ্বল।


সময় তো স্থির নেই সে গড়িয়ে গেল।মাঝ রাতে এখনো জেগে আছে উজ্জ্বল সে তাকিয়ে আছে রুমুর পানে।উজ্জ্বল ছোট বেলা থেকে একটা বিষয় খেয়াল করেছে যতই সে হাসিখুশি ভাবটা ধরে রাখুক কখনো সে ক্ষুধা,রাগ,জেদ,কান্না,হাসি কন্ট্রোল করতে পারে না।যখন যা মাথায় এসেছে করেছে,যা মনে হয়েছে দরকার তা ছিনিয়ে নিয়েছে।আর বিয়ের পর বুঝতে পারলো এখনো তার কোন কন্ট্রোল নেই।এই যে বিছানায় শুয়ে থাকা ফুটফুটে বউটাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু সে তো পারছে না।


উজ্জ্বল আর বসে থাকলো না।উঠে গিয়ে রুমের বাইরে  গেল এবং ফিরলো ঝাড়ু হাতে।বিছানা ঝেরে ফ্লোরে থাকা সব ফুলের পাপড়ি ঝাড়ু দিয়ে ডাস্টবিনে ফেললো।হাত মুখ ধুয়ে এসে শুয়ে পড়লো রুমুর পাশে।মনে মনে বার বার বললো। " সোনায় সোহাগা কপাল আমার।"

.

বেশ সকাল সকাল রুমু ঘুম থেকে উঠে তৈরি হয়েছে।গায়ে জড়িয়েছে বেগুনি রঙের সুতির শাড়ি।এই শাড়ি উজ্জ্বল গতকাল এনেছিল।অন্ধকার রুমটায় আলোর সঞ্চার হতে ভ্রু কুচকে নেয় উজ্জ্বল চোখ পিটপিট করে তাকাতে রুমুকে দেখে হতভম্ব হয়ে যায়।


" তুই শাড়ি কেন পড়েছিস?"


" আপনি জানেন না নতুন বউরা শাড়ি পড়তে হয়।"


" নতুন বউ?হুহ।বরের খোঁজ রাখিস?গতকাল আমি কিছু করিনি তারপরেও চিটপটাং হয়ে পড়লি, আমাকে একা ফেলে ঘুমিয়ে পড়লি।খোঁজ রেখেছিস আমার?"


" আপনি কি বাচ্চা?"


" হুহ নাদান বাচ্চা।একসময় মাকে জ্বালিয়েছি এখন বউকে জ্বালাবো।"


রুমু প্রত্যুত্তর করলো না।উজ্জ্বলকে তাড়া দিয়ে বলে,


" উজ্জ্বল ভাই আপনার কিডনি দিয়ে আমাকে কয়েকটা ছবি তুলে দিন।"


" কিডনি মানে?"


" আইফোন।"


বউয়ের আবদার ফেলা যায়?উজ্জ্বল উঠে এলো ঘুম ঘুম চোখে রুমুকে বেশ কয়েকটি ছবি তুলে দিল।রুমুর একেরপর এক রংঢং উজ্জ্বলকে পাগল করে তুলছে।বেচারা এবারেও ধীরে ধীরে কন্ট্রোল হারাচ্ছে।রুমু ফোনটা নিয়ে কিছুটা দূরে রাখলো এবং উজ্জ্বলকে বললো,


" আসুন একটা রোমান্টিক পোচ দিয়ে ছবি তুলি।আপনি আমার দিকে তাকিয়ে থাকবেন আমি টাইমার সেট করে দিয়েছি ছবি উঠে যাবে।"


রুমু দ্রুত ক্যামেরা ক্লিক করে উজ্জ্বলের পাশে দাড়ালো।তাকালো উজ্জ্বলের চোখে। অপলক দৃষ্টিতে দু'জোড়া চোখ আটকে গেল এদিকে উজ্জ্বল ক্রমশ ঘোরে পড়ছে শিরায় উপশিরায় ছড়িয়ে পড়ছে অনামিক অনুভূতি।বদ স্নায়ুটা তাকে বার বার নির্দেশ দিচ্ছে এই মেয়েটা তার বউ এক্ষুনি মেয়েটাকে কিস করা উচিত এক্ষুনি।উজ্জ্বল নিজেকে সামলাতে পারলো না রুমুর দু'গাল আঁজলায় পুরে ঠোঁটে ঠোঁট মেশালো।নিজের কন্ট্রোল হারালো সে এলোপাতাড়ি চুমুতে ভরিয়ে দিল মেয়েটাকে।রুমু বাঁধা দিতে গিয়েও পারলো না উজ্জ্বলের করুন চাহনি তাকে বশ করেছে।হঠাৎ দরজায় করাঘাতে রুমু ছিটকে দূরে সরে সেই সাথে ভড়কে যায় উজ্জ্বল নিজেও।

হঠাৎ বাঁধায় ছেলেটার গায়ের কাঁপুনি কিছুতেই কমে না।দু'হাতের সাহায্যে নিজের চুল খামছে বলে,


" এত বাঁধা কেন?

কেন? কেন?কেন?একটু কিছু করতে দে দে দে।সব সহ্য হয় রোমান্সে বাঁধা সহ্য হয় না এই কথা আমি কাকে বোঝাবো?ওহ গড!"

চলবে...



গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ৯

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ৯]


সকাল নয়টায় বিয়েটা সুষ্ঠভাবে সম্পূর্ণ হলো।উজ্জ্বল আজ বেশ খুশি এতটা খুশি কবে সে হয়েছে তার জানা নেই।পরিস্থিতির চাপে নতুন বউকে রেখে তাকে চলে যেতে হবে নিজ শহরে।রুমুকে না পেয়ে চাচি এবং রাশেদ নিশ্চয়ই তার বাড়িতে ঝামেলা করবে।সবাই সন্দেহ করবে উজ্জ্বল রুমুকে নিয়ে পালিয়েছে।পরিস্থিতি ঠান্ডা হোক আবার বউয়ের কাছে ফেরা যাবে।


উজ্জ্বলের ভাবনাটাই সত্যি হলো বাড়িতে বাইক নিয়ে প্রবেশ করা মাত্র রাশেদ ছুটে এসে উজ্জ্বলের শার্টের কলার চেপে ধরলো,


" রুমু কোথায়?ওঁকে তুই পালাতে সাহায্য করেছিস।"


" রুমু পালিয়েছে মানে?"


অবাক চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে উজ্জ্বলের চোখ থেকে।ছেলেটার ভাব ভঙ্গিমা দেখে রাশেদ নিজেও কনফিউশন হয়ে গেল।সৈয়দ শামসুল ছুটে এসে বলেন,


" আমি বলেছিলাম আমার ছেলে এসবের কিচ্ছু জানে না।রাশেদ অযথা আমার বাড়ি এসে বাড়াবাড়ি করবি না"


উজ্জ্বল দ্রুত নেমে গেল বাইক ছেড়ে।উঠনে দাঁড়িয়ে থাকা তার নার্গিসের দিকে তাকিয়ে বলে,


" মা আমার রুমু পালিয়ে গেছে?আমার বউ পালিয়ে গেছে!"


"রুমুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।এখন ওরা সন্দেহ করছে তুই নাকি রুমুকে নিয়ে পালিয়ে গেছিস।"


" আমি যদি পালিয়ে যেতাম তাহলে এখন ফিরে আসবো কেন?তোমরা এসব কি বলছো আমার মাথায় ঢুকছে না।আমার বউ পালিয়েছে!সমাজ আমি মুখ দেখাবো কি করে?সবার হাসির পাত্র হবো সবাই বলবে উজ্জ্বলের বউ পালিয়েছে।ও আল্লাহ এভাবে তুমি আমার মানসম্মান কেড়ে নিলে..."


উজ্জ্বল মাটিতে বসে পড়লো অনেকক্ষণ যাবৎ গড়াগড়ি করে আহাজারি করলো তার বউ পালিয়েছে।রাশেদ ভেবেছিল উজ্জ্বল হয়তো পালটা ঝাঝ দেখিয়ে বলবে, সে নিয়ে গেছে রুমুকে রাশেদ কি করে পারে রুমুকে খুঁজে বের করুক।

অথচ এই উজ্জ্বল কি না পাগলের মতো আচরণ করছে!রাশেদের সন্দেহ নিভে এলো সে চলে গেল নিজ বাড়িতে।


নার্গিস দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলেন,


" উজ্জ্বল তুই সকাল সকাল কোথায় গিয়েছিলি সত্যি করে বল।"


" উর্মি আপার বাসায়।"


" হঠাৎ তুই সেখানে কেন গেলি তাও অবেলায়!"


" ওরা স্বামী স্ত্রী ঝগড়া করছিল।দুলাভাই বললো উর্মি আপা ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে তাই আমি গেলাম আপাকে বোঝাতে।বিশ্বাস না হলে উর্মি আপাকে ফোন দাও।"


নার্গিস এবং শামসুল উজ্জ্বলের কথা বিশ্বাস করলেন।কারণ এতো মিথ্যা নয়।মাঝে মাঝে উর্মি ঝগড়া করে বাপের বাড়ি চলে আসে যদিও এসব ঝগড়ার কোন আগামাথা নেই সব অহেতুক বিষয় নিয়েই তাদের ঝগড়া।


রাশেদ চলে যেতে উজ্জ্বল উঠে দাঁড়ালো প্যান্ট থেকে মাটি ঝেরে বলে,


" আমার ব্যাগ গোছাতে হবে দুলাভাই বললো ছুটি নিয়ে কয়েকদিন শহরের বাইরে ঘুর‍তে যাবেন সাথে আমাকেও যেতে হবে।"


" তাদের স্বামী স্ত্রীর মাঝে তুই ঢুকবি কেন?"


" তোমার মেয়ে যদি সেখানে গিয়েও ঝগড়া করে তখন কি হবে?দুলভাই রিস্ক নিতে চাননা তাই আমাকে যেতে বলেছে বিশ্বাস না হলে ফোন করে জিজ্ঞেস করো।"


উজ্জ্বলের কথা শামসুল এতক্ষণ চুপচাপ শুনছিলেন কিন্তু এই পর্যায়ে এসে তিনি প্রশ্ন না করে থাকতে পারলেন না।


" রুমু যে নিখোঁজ মেয়েটাকে খুঁজে দেওয়ার ব্যবস্থা কর। কোথায় আছে আমারো তো চিন্তা হচ্ছে।"


" চিন্তা করে লাভ নাই।রুমু ওর বান্ধবীর বাড়িতে আছে এই কথা আবার কাউকে জানানো দরকার নাই।মেয়েটা যেখানে আছে সেখানেই তার জন্য বেশি নিরাপদ।"

.

উজ্জ্বল বোনের বাসায় ফিরলো সন্ধ্যায়।রুমু তখন ঘুমে কাবু।টানা একটা দিন মেয়েটার জাহান্নাম কেটেছে ঘুম খাওয়া মানসিক শান্তি কিছুই ছিল না তার।উজ্জ্বল রুমুর জন্য বেশ কিছু জামাকাপড় এনেছে রুমুকে ঘুমাতে দেখে বাইক নিয়ে পুনরায় বেরিয়ে পড়ে সে।রাতের শহর‍টা ঘুরা শেষে বাসায় ফিরে আসে রাত এগারোটায়।নিয়ম অনুসারে আজ তার বাসর সেই অনুযায়ী রুমুর জন্য একটা রিং কেনা হয়েছে কিন্তু সবচেয়ে বড় ব্যপার হঠাৎ একটা মেয়ের সাথে কি করে এক ঘরে থাকবে সে?

ভাবতেই হাঁশফাঁস লাগছে।কেউ শুনলে নিশ্চয়ই হাসবে,হাসারি কথা।


মনের ভেতরে চেপে থাকা প্রলয় কাউকে বোঝাতে পারবে না উজ্জ্বল।

 রুমুকে প্রথম বার কাছে পেয়ে কী করবে সে?জড়িয়ে ধরবে?নাকি চুমু খাবে?নাকি... উফ ভাবতে পারছে না উজ্জ্বল।মনে মনে নিজেকে গালি দিল বেশ কয়েকবার।

জীবনে এত এত রোমান্টিক সিনেমা দেখে লাভ কী হলো যদি সুযোগ মতো কাজে লাগাতে না পারে।

উজ্জ্বল যে এত এত রোমান্টিক সিনেমা দেখলো সব কি বিফলে যাবে!


সবাই একসাথে খাবার খেয়ে যে যার কাজে ব্যস্ত।উজ্জ্বল গেস্ট রুমে এসে শুয়ে পড়লো।এই ফ্লাটে তিনটা বেডরুম।যতবার এখানে এসেছে উজ্জ্বলের এই গেস্ট রুমেই থাকা হয়েছে সবার হাভ ভাবে মনে  হচ্ছে রুমু আজ পাশের রুমটাতে থাকবে তবে কি তার বাসর হবে না!এক সমুদ্র আফসোস নিয়ে কপালে হাত ঠেকালো উজ্জ্বল তখনি তামিম এসে তাকে হেঁচকা টানলো।


" উঠে এসো।"


" কোথায় যাব?"


"নাসার সাথে কথা বলতে।পৃথিবীতে থাকা এই উল্কা পিন্ডটা বিয়ে করে ফেলেছে সেই খোঁজ নাসাকে জানাতে হবে।"


" দূর কেন ফাইজামি করছেন দুলাভাই।"


" আরেহ সারপ্রাইজ রেডি চলো তো।"


উজ্জ্বল প্রত্যুত্তর করার আগে তাকে ধাক্কা দিয়ে অন্য রুমে ঢোকালো তামিম।হঠাৎ এক ঝটকা আলো তার চোখে লাগতে বেশ অবাক হয়।সাদা চাদরে অসংখ্য লাল গোলাপ সেই গোলাপের মাঝে তার গোলাপ এক কোনে পা গুটিয়ে বসে আছে।মেয়েটার গায়ে বিয়ের শাড়ি।উজ্জ্বল মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ায় অবাক হয়ে তামিমের দিকে তাকাতে তামিম বলে,


" এবার অন্তত কঞ্জুস ডেকো না।তোমার বাসরের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।"


উজ্জ্বল প্রত্যুত্তর করার আগে তামিম বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে।একেরপর এক সবকিছুই হঠাৎ হঠাৎ হচ্ছে উজ্জ্বল নিজেই সব কিছুর তালগোল পাকিয়ে ফেলছে।রুমু উঠে এলো উজ্জ্বলের সামমে দাঁড়িয়ে বলে,


" উজ্জ্বল ভাই আমার ঘুম পাচ্ছে।আমি ঘুমাবো।"


" সারাটা দিন মটকা মেরে ঘুমিয়ে ছিলি এখন আবার কিসের ঘুম!"


" আমার ঘুম নিয়ে খোটা দিও না।দেখি পা দাও সালাম করে আমি ঘুমিয়ে যাব।"


রুমু নিজেকে বাঁচাতে ঘুমের তাড়া দিল।মেয়েটার চালবাজি উজ্জ্বল বেশ ভালো করেই বুঝতে পারলো।রুমুকে পাঠিয়ে দিল ওজু করতে তাদের এখন নামায পড়তে হবে।রুমু অবশ্য পালটা প্রতিক্রিয়া জানায়নি মেয়েটা উজ্জ্বলের কথা মতো দুজন মিলে নামায আদায় করলো।


নামায শেষে উজ্জ্বল ঠিক কি করবে বুঝতে পারলো না।রুমু শপিং ব্যাগ থেকে থ্রিপিস নিয়ে ওয়াশরুমে যেতে উজ্জ্বল বলে,


" কোথায় যাচ্ছিস?"


" শাড়ি পরে ঘুমাতে পারবো না।খুলে থ্রিপিস পড়বো।"


" আজ কি তোর শাড়ি খোলার কথা ছিল?নাকি আমার?"


" মা..মানে?"


"Ye raaten ye mausam nadi

Ka kinaara ye chanchal hawa"


উজ্জ্বল সুর টেনে গান ধরলো।রুমু ভয় পেয়ে গুটিয়ে যেতে উজ্জ্বল যেন দ্বিগুণ সাহস পেল।রুমুর ডান হাত টেনে মেয়েটাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাচালো। আট তলায় খোলা জানলা মৃদু হাওয়া সুরেলা কণ্ঠের গান উজ্জ্বল ঘোরে পড়লো।এতটা দিনের অপেক্ষা,মনের মানুষটাকে কাছে পাওয়া সবকিছু মিলিয়ে উজ্জ্বল আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লো।দ্রুত পাঁজাকোলে তুলে নিলো রুমুকে।অপরদিকে আতঙ্কে মুখটা নীল হয়ে উঠলো রুমুর শরীরের কাঁপুনি বাড়লো প্রবল ভাবে।স্বামী-স্ত্রীর মানসিক সম্পর্ক যেখানে গড়ে উঠেনি সেখানে দৈহিক সম্পর্ক কঠিন তার কাছে।একটা আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে না আসতে আরেকটা আতঙ্ক ভর করেছে রুমুর মাথায় উজ্জ্বলের ঘোর চাহনি তার কণ্ঠরোধ করছে।এবার উজ্জ্বল করে বসলো আরেক কান্ড,সে রুমের লাইট অফ করলো জ্বালিয়ে দিল ড্রিম লাইট।আবছা আলোতে রুমুকে নিয়ে বিছানায় গেল।রুমু ভয়ে উজ্জ্বলের কলার চেপে ধরলো নেতিবাচক ইশারায় মাথা নাড়লো।উজ্জ্বল সেসবে পরোয়া করলো না।ছেলেটা ঘোরে পড়েছে গভীর ঘোরে। নতুন বউয়ের কায়ায় মেখে থাকা মিষ্টি সুভাস তাকে আরো কাবু করলো।এই সুভাসে মত্ত হতে চায় সে  যতটা মত্ত হলে একে অপরের মাঝে কোন বাঁধা থাকবে না।উজ্জ্বল তার কন্ট্রোল হারালো রুমুকে বিছানায় শুইয়ে তার দানবীয় শরীরটা ছেড়ে দিল মেয়েটার ছোট্ট দেহে।আচমকা ভরে রুমু চোখ বড় বড় করে তাকালো।এসব কি হচ্ছে তার সাথে!

মুখ ফুটে কিছু বলার আগে উজ্জ্বল তার গাল চেপে ধরলো, লিপস্টিকের টকটকে লাল ঠোঁট দু'টো গোল হতে উজ্জ্বল তার শুষ্ক ঠোঁট মিলিয়ে দিল।উজ্জ্বল উন্মাদ হলো তার উন্মাদনা ক্রমশ বাড়লো।ডান হাতের সাহায্যে ছুয়ে দিল রুমুর গাল গলা সর্বত্র পিঠ।

উজ্জ্বল যখন কন্ট্রোল হারিয়ে বেপরোয়া  তখনি অনুভব করলো রুমুর নিস্তেজ শরীর।ছেলেটা মুখ তুলে তাকাল রুমু জ্ঞান হারিয়েছে।এমন পরিস্থিতির জন্য উজ্জ্বল প্রস্তুত ছিল না দ্রুত উঠে রুমুর শাড়ি ঠিক করে বসলো সে।রুমুর চেতনা হারানো দেহ দেখে তার কাঁপুনি বাড়লো আপন মনে বিড় বিড় করে বলে, আমি কিছু করিনি।আমি কিছু করিনি।


উজ্জ্বল রুমুর গালে হাত রেখে বলে,


" রুমু এই রুমু।কলিজা বউ উঠ কি হয়েছে?উঠ না।"


রুমু উঠলো না।উজ্জ্বল প্রচন্ড ভয় পেল।ভয়ে দরদর করে ঘামতে থাকলো।পুনরায় রুমুর বাহু ঝাঁকিয়ে বলে,


" আমি কিছু করিনি,উঠ না আমি তো কিছু করিনি।"


চলবে...


ইন্না-লিল্লাহ উজ্জ্বল ভাই এই আপনি কি করলেন🤔পাঠক সমাজ কী মেনে নেবে আপনাকে?


আজকের পর্বটা রোমান্টিক ভেবে রেখেছিলাম কিন্তু আজকে আমার মন ভালো নেই তাই উজ্জ্বল ভাইয়ের বাসরটা পন্ড করে দিলাম।এবার শান্তি শান্তি লাগছে😌