গল্প রাজনীতির_রংমহল পর্ব ৩৯

 #রাজনীতির_রংমহল

#সিমরান_মিমি

#পর্বসংখ্যা_৩৯


★★

বেলা বারোটা।এই রৌদ্রতপ্ত দুপুরে ছাদের এক কার্ণিশে আকাশের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর্শি।চোখ দুটো পানিতে টইটম্বুর। বিগত চার বছরের সংসার জীবনে যতই মনমালিন্যতা হোক না কেন রাহুল কখনো তার গায়ে হাত তোলে নি।অথচ আজ প্রথমবারের মতো তাকে মেরেছে।কিই বা দোষ ছিলো তার।


নিত্যদিনের অভ্যাস মতোই কাপড়ের ভাজের মধ্যে রাখা পাভেলের ছবিটা দেখছিলো।দেয়ালে লাগানো পোস্টার ছিড়েই বহু বছর আগে এই ছবিটা কেটে রেখেছিলো আর্শি।এর আগে লুকিয়ে দেখলেও আজ প্রথমবারের মতো ধরা পড়ে যায় রাহুলের কাছে।যার দরুন ঠাস করে এক দাবাং মার্কা চড়ের সম্মুখীন হয় সে।


সেও তো একজন রক্তমাংসের গড়া মানুষ। কিশোরী জীবনের প্রথম ভালোবাসা কিভাবে ভুলবে।যদিও লোকটা মারা গেছে,যদিও বাস্তবতার সম্মুখীন হয়ে আর্শিকে অন্য কারো সংসার করতে হচ্ছে তাও তো সেই লোকটাকে ভোলা যাচ্ছে না।সুখে দুখে বরাবরই প্রথম তার কথা মনে পড়ে তার।এটা তো সে ইচ্ছে করে করে না।


নিজের ভাবনায় মশগুল থাকা কালীন নিচ থেকে কর্কশ কন্ঠে রাহুলের স্বর ভেসে আসলো।


--আর্শি,,,,ইশি কাদছে।দ্রুত আসো।


মেয়ের কথা মাথায় আসতেই দ্রুত সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো।রুমের সামনে আসতেই পা দুটো আটকে গেল।ভেতরে রাহুল ও আছে।ইশি কে কোলে নিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে।ধীর পায়ে ভেতরে ঢুকে দেড় বছরের মেয়ে ইশি কে রাহুলের কোল থেকে একপ্রকার টেনেই নিয়ে গেল।রাহুল প্রথমে থমকালেও পরবর্তীতে নিজেকে সামলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।আলতো হাতে বিছানায় শুইয়ে মেয়ে খাওয়াতে লাগলো।মন অন্যকোথাও পড়ে থাকলেও বাস্তবতার সম্মুখীন হয়ে আজ প্রথম কিশোরী জীবনের প্রেমকে ভুলে সংসার করতে হচ্ছে।


সবই তো ঠিক ছিলো। এখানে বিয়ে হওয়ার পর রাহুলের শাসনে বেশ ভালোভাবেই লেখাপড়ায় মনযোগ হয়েছিলো।এদিকে আর্শির পরিক্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ভার্সিটিতে জয়েন্ট করে রাহুল।রেজাল্টের দিন এমন রেজাল্টে বেশ অবাকই হয়েছিলো আর্শি।সে আর পাশ।পাশ তো দুরের কথা তার থেকেও খুব ভালো রেজাল্ট করেছে সে।৩.১৩ জিপিএ তার।এটা ভাবা যায়।নিজের রেজাল্টে নিজেই যখন মাতোয়ারা ঠিক তখনই আর্শির এমন রেজাল্ট শুনে নাক ছেটকালো রাহুল।এরকম রেজাল্ট তার চৌদ্দ পুরুষের ও কেউ করেনি।গায়ে মাখে নি আর্শি।নিজের মতোই থাকতে রইলো।এরই মধ্যে রাহুলের একমাত্র ফুপি এসে চিৎকার চেচামেচি করে কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন।তার একমাত্র ভাইপো র বিয়ে হয়েছে তাতে তিনি উপস্থিতই থাকতে পারে নি।এমনকি কেউ জানায়ই নি।এই চেচামেচির রেশ ধরেই পাড়া-প্রতিবেশী নিয়ে পুনরায় বিয়ে হয় রাহুল আর্শির। প্রথমে রাজি না হলেও পরবর্তীতে এই ঝামেলার অবসান ঘটাতে মুখ বুঝে বিয়ে করে নিলো সে সজ্ঞানেই।


বাড়ি না যাওয়ার জেদে সেখানেই থাকতে লাগলো বেশ স্বাধীনভাবে।এভাবেই থাকতে থাকতে একটা ভালো বন্ধুত্ব সৃষ্টি হলো তাদের মাঝে।এই যেমন প্রতিদিন একসাথে খাওয়া,মাঝে মধ্যে ঘুরতে যাওয়া,জ্বর বা কোনো কারনে অসুস্থ হলে দুজন দুজনকে সেবাযত্ন করা,রাহুলের চুলের যত্ন নেওয়া ইত্যাদি।এরকম ভাবেই দিন দিন চলতে চলতে এক অজানা মায়া সৃষ্টি হয় দুজনার মধ্যে।রাহুল বুঝতে পারলেও আর্শি বুঝেও সেটাকে অস্বীকার করেছিল।

তবে বুঝতে পারলো সেইদিন।


সদ্য ভার্সিটিতে পা রেখেছে আর্শি। যাওয়া-আসার সুবিধার কারনেই রাহুলের ভার্সিটিতেই আর্শিকে ভর্তি করিয়েছিলো।বেশ ভালোই চলছিলো জীবন।কিন্তু বাধ সাধলো ভার্সিটির মেয়েগুলো।আজকাল কার মেয়ে গুলো বেশিরভাগ'ই হ্যান্ডসাম টিচারদের নিয়ে কল্পনায় ভেসে চলে।তেমনই হলো রাহুলের ক্ষেত্রে।ক্লাসে আসলে তারই সহপাঠী গুলো একে অন্যের সাথে রাহুলকে নিয়ে মেতে উঠতো।কোন শার্ট পড়লে ভালো লাগে, কোন ঘড়ি পড়লে চোখে হারায় তারা এসবই নিয়ে দিনকে দিন মেতে উঠলো।রাহুল আর্শিকে নিয়ে কেন আসে জিজ্ঞেস করাতে একদিন আর্শি বলেছিলো তার খালাতো ভাই।ব্যাস সেদিন থেকে তার সামনে বসেই অশোভন আচরণ করে তারা।এই যেমন লুকিয়ে লুকিয়ে ফ্লাইং কিস,তাকে নিয়ে করা কল্পনার বহিপ্রকাশ ইত্যাদি তার সামনে বসেই করতো।


কোনো এক অজানা কারনেই জন্যই বেশ হিংসে লাগতো আর্শির।রাহুলের যে শার্টের প্রশংসা তারা করতো বাড়ি ফিরে সেই শার্টটাকেই লুকিয়ে ছিড়ে পুড়িয়ে ফেলতো আর্শি। এমনই করতে করতে হঠাৎ একদিন ধরা পড়ে গেল সে।


মাথায় হাত দিয়ে ছাদে উঠে অবাকের চোখে ছাদের ফ্লোরে অর্ধপোড়া শার্ট টার দিকে তাকিয়ে রইল রাহুল।আলতো ধমকের সাথে বললো-


আর্শি,এটা কি করছো তুমি?মাই গড আমার এত্তো পছন্দের শার্ট টা পুড়িয়ে ফেলেছো।এই এই আমার আগের লাপাত্তা হওয়া শার্ট গুলোও তুমি পুড়েছো?


ভয়ে বাকহারা হয়ে গেল আর্শি।এভাবে হাতে নাতে ধরা খাবে তা কস্মিন কালেও ভাবতে পারে নি আর্শি।ফুপিয়ে ভয়ের চোটে কেদে উঠলো।আমতা আমতা করে বললো-


ও ওই এই শার্ট টাতে তেলাপোকা ছিলো। 


জোরে ধমক দিলো রাহুল।চেচিয়ে বললো-


তেলাপোকা ছিলো মানে?তোমাকে কি কামড়ে দিতো।আমার এত পছন্দের শার্ট টা কেন নষ্ট করলে? 


ফুপিয়ে কান্না করে উঠলো স্পর্শী।ভয়ের চোটে অস্পষ্ট গলায় বললো-


আপনি এই শার্ট পড়ে গেলে ক্লাসের মেয়েরা বাজে কথা বলে।


সোজাসাপ্টা গলায় রাহুল বললো-


কি বলেছে?


ঢেকুর দিয়ে আর্শি বললো-


বলে আপনার ফিগার সুন্দর,চোখ কাড়ার মতো।আপনি সুন্দর,আপনার ঠোট সুন্দর আর...


বিস্ময়ে বাকহারা হয়ে গেল রাহুল।আর্শির পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই ধমক দিয়ে চুপ করে থাকতে বলল।তারপর বলল-


তুমি বলো নি আমি বিবাহিত।


এবারে চোরের মতো মুখ টাকে লুকালো আর্শি।যেটা দেখেই রাহুলের মেজাজ গরম হয়ে গেল।ধমক মেরে চেচিয়ে বলল-


শোনো আর্শি,তোমার বাবার কাড়ি কাড়ি টাকা থাকলেও আমার নেই।এভাবে আমার পছন্দের শার্ট গুলো নিত্যদিন নতুন ভাবে পুড়িয়ে ফেলবে এটা একদম বরদাস্ত করবো না আমি।সেকেন্ড টাইম আমার শার্টে হাত দিবে না।পোড়াতে ইচ্ছে হলে তোমার ড্রেস পুড়িয়ো।


বলেই হনহন করে হাটতে হাটতে নিচে চলে গেলো।


রাত সাড়ে এগারোটা।ঘরে কোনো আলোর ছিটেফোঁটা ও নেই।প্রায় পাচ মিনিট হয়ে গেছে বিদ্যুৎ নেই।আর্শি বিছানায় বসে ছটফট করছে।পাশেই রাহুল কপালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে আছে।


রাহুল স্যারের ঠোট দেখেছিস আর্শি।কি সুন্দর।ঠোটের কালার টা একদম স্ট্রবেরি র মতো।ওই ঠোটে চুমু খেতে পারলে একদম ধন্য হয়ে যেতাম।


আলোর বলা কথাগুলোই সেই সন্ধ্যা থেকে মাথাচারা দিয়ে উঠেছে।সত্যিই তো রাহুল ভাইয়ের ঠোট দুটো অনেক সুন্দর।আচ্ছা,সে তো তার স্বামী।তাহলে ওই ঠোটে চুমু খেয়ে আর্শি নিজে কেন ধন্য হচ্ছে না।এরকম টা ভেবেই সারাটা রাত সুযোগের অপেক্ষা করেছে আর্শি।কারেন্ট নেই,রাহুল ও ঘুমে।এই সুযোগ টা কাজে লাগানোর জন্যই উঠে বসলো।রাহুলের শরীরের উপর ঝুকে ঠোট দুটোকে আলতো ছোয়ালো রাহুলের ঠোটে।কেবল হালকা ঘুমের রেশ ধরেছিলো রাহুলের।এরইমধ্যে এমন ঠান্ডা ছোয়ায় অবাকের রেশ ধরে চোখের উপর থেকে হাত সরালো।অন্ধকার ঘরে এরইমধ্যে আলোর উপস্থিতি হয়ে কারেন্ট চলে আসলো।


হতভম্ব হয়ে গেল আর্শি।এটা কি হলো?আল্লাহ তার উপর এতো নারাজ কেন?কেন?ভয়ের চোটে চোখ দুটো বড় বড় করে সেভাবেই রাহুলের দিকে তাকিয়ে রইলো।নিজের সমস্ত ইচ্ছা,আকাঙ্খা, উত্তেজনাকে সামলে নিয়ে সারারাত আর্শির পাশে শক্ত হয়ে পড়ে থাকে।কিন্তু আজ নিজে থেকেই  যে ছুয়ে দিল তাকে কিভাবে সে অবজ্ঞা করবে।দুহাত দিয়ে আর্শিকে বিছানায় ফেলে হামলে পড়লো তার উপর।প্রথম দিকে বাধা দিলেও নিমিষেই শান্ত হয়ে যায় আর্শি।এই মুহুর্তে তার মন ও চাইছে এই স্বামী নামক পুরুষ টার সান্নিধ্যে আসতে।


আচমকা ইশির কান্নার আওয়াজেই ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো আর্শি।মেয়েকে নিয়ে বিপাশার রুমে এনে তার কাছে দিয়ে রান্না করতে বসলো।নাতনিকে কোলে নিয়ে ত্রস্ত পায়ে রান্নাঘরে ঢুকলো বিপাশা।শান্ত স্বরে বললো-


দেখো মা,তুমি একদম ছোট না।পর্যাপ্ত বয়স হয়েছে তোমার,মেয়েও হয়েছে।এখনও কেন এমন ছেলে মানুষী করো।রাহুল ও তো স্পর্শীকে পছন্দ করতো,ও তো কখনো তোমার সামনে ওকে নিয়ে কিছু বলেনি।তাহলে তুমি কেন বারবার তোমার প্রেমিকের নাম তোলো। রাহুল তোমার স্বামী,তোমাদের মেয়েও আছে একটা। সংসার টাকে টেকাও।আর ভুলেও নিজের স্বামীর সামনে পর পুরুষের নাম নিও না।এটা কেউই সহ্য করতে পারবে না।


বিকাল তিনটা।খাটের এক পাশে চুপচাপ সিলিং য়ের দিকে তাকিয়ে আছে রাহুল।মাঝখানেই আর্শি শুয়ে বাম দিকে শোয়া মেয়ের গায়ে হাত রেখে ঘুম পাড়াচ্ছে।হঠাৎই রাহুল বললো-


আমি মারা গেলে কখনো কি এতটা কাদবে যতটা পাভেলের জন্য কাদছো?


চমকে উঠল আর্শি।হঠাৎ ই যেন নিজেকে খুব অসহায় মনে করলো।এই মানুষ টা না থাকলে সে কিভাবে থাকবে।না না, এমনটা যেন না হয়।চোখ দুটো ভরে উঠলো।পাশ ফিরে রাহুলকে জড়িয়ে ধরে বলল-


আপনি এসব কেন বলছেন?


শুনলো না রাহুল।শান্ত কন্ঠে বললো-


আমার প্রতি কি গত চার বছরে একটুও মায়া জন্মায় নি তোমার?


হাউমাউ করে কেদে উঠলো আর্শি।আজকে সারাদিন শাশুড়ির বলা কথা গুলো ভেবেছে সে।বারবার নিজের কাছে ছোট লেগেছে নিজেকে।আরো গভীর ভাবে রাহুলকে জড়িয়ে ধরে সেভাবেই পড়ে রইলো।কান্নারত কন্ঠে বললো-


আমি আর কখনো এমন করবো না।আপনি প্লিজ এমন কথা বলবেন না।আমার কষ্ট হয় ভীষণ। 


রাহুল কিচ্ছু বললো না।ওভাবেই চোখ বন্ধ করে পড়ে রইল।তার জীবন টা এমন কেন?সে কি কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়।কত কষ্ট করে স্পর্শীকে ভুলছে সে।মেয়ে,আর্শিকে নিয়ে একটা সুন্দর সংসার করার চেষ্টা করছে।অথচ বার বার ই মুখ থুবড়ে পড়ছে।


★★


জানালার কাছের সিটে বসে মাথা হেলিয়ে পরশের বুকের উপর পড়ে রইলো স্পর্শী।এ যাবৎ চার বার বমি করেছে।লোকাল বাসে চড়ার অভ্যাস থাকলেও এভাবে লং জার্নি কখনো করা হয় নি। ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছে সে।এভাবেই থাকতে থাকত একসময় ঘুমিয়ে পড়লো পরশের বুকে।


এরই মধ্যে আরো একবার সামনের বাসের সাথে ধাক্কা লাগতে লাগতে বেচে গেল তাদের বাস।যাত্রীরা চিৎকার করে উঠলো।টানা তিন দিন ঘুমহীন বাস চালাচ্ছে  ড্রাইভার।চোখ তার গুলিয়ে যাচ্ছে।যাত্রীদের কথা দিয়েছে  সামনের বাজারেই চা খাবে এবং বরিশাল পর্যন্ত যেয়েই ড্রাইভার চেঞ্জ করবে।সামান্য সন্তুষ্ট হলো যাত্রীগন।এ যাবৎ তিনবার  এক্সসিডেন্ট করতে করতে বেচেছে।


বাসের স্পিড বারিয়ে দিলো ড্রাইভার।যত দ্রুত সম্ভব বরিশাল যাবে সে।এরইমধ্যে সামনে একটা হলুদ বাস  পড়লো।একপাশে বিশাল গভীর খাল।অন্যপাশে ধান ক্ষেত, মাঝখানে রাস্তা।দুটো বাস দুদিকে ব্রেক কষতে গিয়ে এক বিশাল সংঘর্ষের সৃষ্টি হলো।অন্য বাসটা ব্রেক সামলাতে না পেরে কাত হয়ে পাশের ধানক্ষেতের মধ্যে পড়লো।আর পরশদের বাসটা ব্রেক কষতে গিয়ে রাস্তার পাশের বড় গাছটার সাথে ধাক্কা খেল।মুহুর্তেই উলটো হয়ে ছিটকে পড়লো গভীর খালে।ইতোমধ্যে বাসের দুই তৃতীয়াংশ অলরেডি ডুবে গিয়েছে।


সেকেন্ড না গড়াতেই দূর  থেকে কিছু লোক চিৎকার করতে করতে এগিয়ে এলো এক্সসিডেন্ট স্পটে।


চলবে?


প্রিয় পাঠক,ফোন টা দিয়ে কোনোভাবেই গল্প লেখা সম্ভব হচ্ছে না। দ্রুতই এটাকে সার্ভিসিং এর জন্য পুনরায় পাঠাবো।আমি চেষ্টা করবো সপ্তাহে দু-বার হলেও গল্প দেওয়ার।


যারা নেগেটিভ কমেন্টস করছেন তাদের উদ্দেশ্যে একটাই কথা।আমি প্রতিদিন গল্প দেই বলেই আপনারা কয়েকটা দিন ধৈর্য নিয়ে থাকতে পারছেন না।যদি অন্যদের মতো ৪/৫/৬/৭ দিন পর পর অনিয়মিত গল্প দিতাম তখন ঠিকই সহ্য করে পড়তে পারতেন।যাই হোক,আপনাদের মাত্র কয়েকটা নেগেটিভ মন্তব্যকে আমি আমলে নিচ্ছি না।তবে এই মন্তব্য গুলো র জন্য আমার যতটা আগ্রহ থাকে অন্যদের ফোন থেকে গল্প দেওয়ার,সেটা নিমিষেই শেষ হয়ে যায়।

গল্প রাজনীতির_রংমহল পর্ব ৩৮

 #রাজনীতির_রংমহল

#সিমরান_মিমি

#পর্বসংখ্যা_৩৮


★★

নিরব হয়ে দুহাত দিয়ে পরশের বাহু আঁকড়ে ধরে তার কাধে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে স্পর্শী। দুরেই একটা ছোট্ট পরটার হোটেল।আলতো ভাবে পরশকে ছাড়িয়ে উঠলো সে।তারপর দোকানের দিকে ইশারা করে বললো-


আমার ও অনেক খিদে পেয়েছে নেতামশাই।চলুন,কিছু খেয়ে নেই।


পরশ কোনো বাক্যব্যয় করলো না।ধীর পায়ে স্পর্শীর সাথে পা মেলালো।এ যেন সে কোনো ঘোরের মধ্যে আছে।আদোও সে যে মুক্ত তা বিশ্বাস হচ্ছে না।হোটেলের মধ্যে ঢুকেই সেখানকার কিশোর ছেলেটার কাছে স্পর্শী বললো-


ছয়টা পরোটা,ভাজি আর দুটো ডিম দিয়ে যাও এই টেবিলে।


বেশ কিছুক্ষণ পর তাদের বলা খাবারগুলো নিয়ে এলো টেবিলে।তৃপ্তির সাথে খেয়ে নিল পরশ।স্পর্শীও যেন আজ বহুবছর পর তৃপ্তির সাথে খাচ্ছে।খাওয়ার পর্ব শেষ হতেই আলতো হাতে পরশের দাড়ি ধরে হেসে দিলো স্পর্শী।বললো-


ইশশ!একদম দাড়ি,গোফ,চুলে দাদা শ্বশুর-দাদা শ্বশুর লাগছে।তা বুড়ো মশাই,আপনার নাতি গুলো কোথায়?


পরশ হাসলো।সত্যিই চুল, দাড়ি-গোঁফ বড় হয়ে গেছে।চেয়ারের ফাঁক দিয়ে হাতটা কে গলিয়ে স্পর্শীর কোমড় চেপে ধরলো।শিউরে উঠলো স্পর্শী।পরশ তাকে আরেকটু কাছে নিয়ে নিচু স্বরে বললো-


আগে তো বাসায় যাই।তারপর না হয় প্রমাণ দেব আমি আদোও বুড়ো নাকি জোয়ান'ই আছি।


থরথর করে স্পর্শীর পুরো শরীর এক পরিচিত অনুভূতিতে দগ্ধ হয়ে কেপে উঠলো।এপাশ-ওপাশে তাকিয়ে আলতো স্বরে পরশকে বললো-


নেতামশাই,চলুন তো এখন।আগে সেলুনে যাব।তারপর বাসায় যাওয়া যাবে।


পরশ ছেড়ে দিলো।তারপর একটা রিক্সা নিয়ে চললো সামনের সেলুনে।পরশের দাড়ি কাটছে সেলুনের ছেলেটা।স্পর্শী পাশেই আয়নার দিকে তাকিয়ে পরশকে দেখছে।হঠাৎ ই উত্তেজিত কন্ঠে বললো-


এই  না না।একদম ক্লিন সেইভ করবেন না।সামান্য দাড়ি রাখবেন।


দোকানদার মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।পরশকে রেখেই পাশের বিরিয়ানির দোকানে গেল স্পর্শী।মাস প্রায় শেষের দিকে।বাসায় তেমন কোনো বাজার'ই নেই।এখন গিয়ে কে রান্না করবে?ভেবেই দু প্যাকেট বিরিয়ানি কিনে পুনরায় সেলুনে চলে এলো।তারপর পরশকে নিয়ে বাস ধরে  ধরে চলে এলো বাসার সামনে।চারতলা বিল্ডিং।এর তিনতলাতেই স্পর্শী থাকে।পরশকে নিয়ে তিন তলায় উঠে ফ্লাটের সামনে এলো।চাবি দিয়ে খুলতেই দৃশ্যমান হলো সামনের অফিস রুমটা।ভারী ভারী মোটা বইয়ে ভর্তি আশেপাশের টেবিল।বেশ সাজানো -গোছানো অফিস পেরোতেই ভেতরের রুমে ঢুকলো স্পর্শীয়া।পেছনে পরশ ও গেলো।ভেতরে ঢুকতেই অবাক হয়ে গেলো।অফিস  রুমে ঠিক যতটা আভিজাত্যপূর্ণ ভেতরের রুমটা ঠিক ততটাই সাদামাটা।রুমের এক কোনায় একটা পাটি বিছানো।তার উপরে পাতলা একটা চাদর আর বালিশ। কিছুটা দুরেই একটা র‍্যাক।আর তার পাশেই একটা টেবিল।


পরশ ভ্রু কুচকে স্পর্শীর দিকে তাকাতেই পাত্তা দিলো না সে।টাওয়াল হাতে ধরিয়ে ঠেলে বাথ্রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে বললো-


যান তো।সেলুন থেকে এসেছেন দ্রুত গোসল করে নিন।


গতকালকেই পরশের মুক্তির আবেদন টি স্পর্শীর হাতে এসেছে।দেখামাত্রই মার্কেটে গিয়ে দুটো শার্ট,প্যান্ট নিয়ে এসেছে।গোসল করে বের হতেই সেগুলো ধরিয়ে দিয়ে নিজে গোসল করতে গেল।


মাথা মুছতে মুছতে স্পর্শী বাইরে বের হতেই পরশের থমথমে মুখের সামনে পড়লো।ভ্রু কুচকে তাকাতেই পরশ গম্ভীর কন্ঠে বললো-


এসব কি?


স্পর্শী কিছুটা বুঝলো।পরক্ষণেই অস্বীকার করে বললো-


কোথায় কি?


পরশ কোনোরকম ভণিতা ছাড়াই থমথমে কন্ঠে বললো-


রুমে খাট নেই কেনো?কোনো আসবাব নেই কেন?রান্নাঘরে কোনো বাজার নেই কেনো?শুধুমাত্র দুটো ডিম আর আলু,ডাল পড়ে আছে।


স্পর্শী থমকালো।ভীষণ অসস্তিতে পড়লো৷ইনিয়ে-বিনিয়ে আলতো হেয়ালী করে বললো-


এ মা,রুমে আসতে পারেন নি,এর মধ্যেই গোয়েন্দা গিরি শুরু হয়ে গেল।চলুন এখানে বসুন।আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।একটু ঘূমাবো।


পরশকে একপ্রকার টেনে পাটির উপর শোয়ালো।তারপর আলতো ভাবে বুকের উপর মাথা দিয়ে ঝাপটে ধরলো স্পর্শীয়া।পরশ নিজেও জড়িয়ে ধরলো স্পর্শীকে।বেশ কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর পরশ বললো-


এরকম পাগলামী করার কি কোনো দরকার ছিলো পাখি?তুমি তো অবুজ নও।তাও এসব ছেলেমানুষী কেন?


আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরলো স্পর্শী।এই যে নগ্ন বুকটায় আজ কত বছর পর নাক ঘষছে সে।এই পুরুষালী গন্ধ টা তো অক্সিজেনের থেকেও বেশী দরকার ছিলো তার কাছে।তাও আজ এতোবছর ধরে দুরত্বে ছিলো। ঠোট ভেঙে এলো স্পর্শীর।নিচু কন্ঠে ভাঙা ভাঙা স্বরে বলল-


আমি পারতাম না নেতামশাই।কিভাবে পারতাম?আপনি ওই চার দেয়ালের মধ্যে ছোট্ট একটা পাটির উপর সারা শীত -গরম মিলিয়ে চার বছর কাটিয়েছেন।আপনাকে রেখে ওই নরম বিছানায় কিছুতেই আমার ঘুম আসতো না।ভালো-মন্দ কিছু খেতে গেলেই আপনার কথা মনে আসতো।দু-বেলা ওই আধপোড়া রুটি,এক বেলার ওই অসহ্য গরম ভাতের সাথে বিদঘুটে তরকারি কিভাবে খাচ্ছেন আপনি।আমার গলা দিয়ে কোনো ভালো খাবার একদম নামতো না নেতামশাই।প্লিজ এ বিষয়ে কোনো কথা বলবেন না।আমার সহ্য হয় না।ভীষণ কান্না পায়।আমি এতটাও বুঝদার হতে চাই না।চাই না।


কান্নার বেগ বেড়ে গেল স্পর্শীর।যেন বহুদিনের কষ্টকে উগড়ে দিচ্ছে  পরশের সামনে।পরশ উত্তেজিত হয়ে গেলো।জোরে বুকের সাথে ঝাপটে ধরলো।বললো-


এভাবে কাদে না পাখি।আমি তো চলে এসেছি।প্লিজ থামো।


স্পর্শী থামলো না।হঠাৎ ই সেই কান্নাভেজা ঠোট দুটো  আকড়ে ধরলো পরশ।হতভম্ব হয়ে গোল গোল হয়ে তাকিয়ে রইলো স্পর্শী।নিজেকে ছাড়াতে গেলেই আরো গভীরভাবে আকড়ে ধরলো পরশ।যেন আজ বহু বছরের তৃষ্ণা একসাথে মেটাচ্ছে।পরিচিত এই অনুভূতির থেকে অনেকদিন দুরত্বে রয়েছে দুজন।আজ সেই দুরত্ব ঘুচতেই মেতে উঠেছে অজানা সুধার ছোয়া নিতে।


পরশের বুকের উপর শুয়ে আছে স্পর্শী।পুরুষালী এই প্রশস্ত বুকটায় আজ বহুদিন পর  আঙুল দিয়ে আঁকি বুকি করে সে।অনেকক্ষণ পর বললো-


আজকে সন্ধ্যায়'ই আমরা বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিবো।ওকে।আর এই ঢাকায় আসবো না।


পরশ অবাক হলো।বললো-


তাহলে তোমার ওকালতি কে করবে?


ব্যাস্ত কন্ঠেই স্পর্শী বললো- 


সব বাদ।এইসব পেশায় আর নিজেকে জড়াবো না।এতোদিন ও তো থাকতাম না।শুধু আপনাকে ছাড়ানোর জন্য পড়ে রয়েছি।জানেন নেতামশাই,ভেবেছিলাম অন্য সবার মতো নয়।আমি নিজে সত্যের প্রতিষ্ঠা করবো।কিন্তু বিশ্বাস করুন এই ওকালতিতে সত্যের ভিত অনেক দুর্বল।আমি সত্যের উপর বিশ্বাস করেই এই পেশায় নেমেছিলাম।কিন্তু না, জীবনের প্রথম কেস টাতেই হারলাম।আমি আর এসব চাকরী-বাকরী কিচ্ছু করবো না।শখ মিটেছে আমার।এবার শুধুমাত্র সংসার করবো।শশুর -শাশুড়ীর সেবা করবো আর স্বামীকে নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকবো।এসব পুলিশ-কেস,জেল-জরিমানা এসবে আর আমি নেই।


পরশ আলতো হাসলো।বললো-


মা কেমন আছে?ওদের কিছু জানিয়েছো?


নিমিষেই মুখে বিষাদ ছেয়ে গেল স্পর্শীর।বেশ কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল-


আমার কারো সাথে দেখা বা কথা হয় না নেতামশাই।সেই যে বাড়ি ছাড়লাম আর পিরোজপুরে পা রাখিনি।কিভাবেই বা রাখবো?মায়ের মুখের দিকে তাকানো যায় না।বাবাও চুপচাপ থাকে। সেদিনই প্রতিজ্ঞা করেছি আপনাকে না নিয়ে ও বাড়িতে আর ফিরবো না।তবে বাবা আর প্রেমার সাথে মাঝেমধ্যে কথা হয়।এই আপনি শুনেছেন না প্রেমা এইচএসসি তে গোল্ডেন পেয়েছে।


পরশ হাসলো। বললো-


হ্যা, আব্বু বলেছে। 


দুজনের চোখে কোনো ঘুম নেই।একে একে মনের সকল কথাকে উগড়ে দিচ্ছে স্পর্শী।আর পরশ মুগ্ধ হয়ে তার তোতাপাখির কথা শ্রবণ করছে।


চলবে?


বিকালে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।হঠাৎ ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে দেখি পাঁচ  টা বেজে গেছে।তারপরেও ছোট্ট করে দিলাম।ভুল-ত্রুটি মানিয়ে নিবেন।

গল্প রাজনীতির_রংমহল পর্ব ৩৭

 #রাজনীতির_রংমহল

#সিমরান_মিমি

#পর্বসংখ্যা_৩৭


★★★

(আজ থেকে বর্তমান শুরু)


সকাল সাড়ে আটটা।ধীর পায়ে জেলারের হাটার গতির সাথে তাল মেলাতে মেলাতে নির্দিষ্ট লকাবের সামনে এলো স্পর্শী।ভেতরে ফ্লোরের উপর বিছানো ছোট্ট পাটি'র উপর পরশ শিকদার পা ভাজ করে অন্য দিকে তাকিয়ে বসে আছে।হাবিল তীব্র শেখ কে দেখা মাত্রই উঠে দাড়িয়েছিলো।এখনো সেভাবেই আছে।জেলারের থেকে আদেশ পেতেই দ্রুত চাবি বের করে লকাবের দরজা খুলে দিলো।পরশ আড়চোখে একবার স্পর্শীর দিকে তাকালো।স্পর্শী তার দিকেই এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে।মুহূর্তে'ই চোখ সরিয়ে নিলো অন্যদিকে।আলতো হাসলো স্পর্শী।শান্ত কন্ঠে বললো-


কি হলো নেতামশাই?বাইরে আসবেন না।নাকি আমাকে ভেতরে ঢোকাতে  চাইছেন?


পরশ একবার স্পর্শীর দিকে তাকালো।পরক্ষণেই জেলারের দিকে তাকাতেই পুনরায় চোয়াল শক্ত হয়ে গেল।আড় চোখে তীব্র শেখ এখনো স্পর্শী কে দেখছে।গা জ্বলে যাচ্ছে পরশের।দাতে দাত চেপে তীব্র শেখ কে বললো-


জেলার সাহেব,আপনি কি কিছু বলবেন?না বললে প্লিজ আমাদের একটু প্রাইভেসি দিন।আমি আমার ওয়াইফের সাথে কথা বলবো।


থতমত খেয়ে গেল জেলার।আমতা আমতা করে বললো-


হ্যা হ্যা,প্লিজ কন্টিনিউ(বলেই নিজের ডেস্কের দিকে চলে গেল।


পরশ সস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।কটমট চোখে স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে বলল-


তোমাকে না বলেছিলাম এই জেলারের থেকে দূরে থাকবে।ওর নজর ভালো না।সারাক্ষণ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে।আমার একটুও সহ্য হয় না।কসম স্পর্শীয়া,আমার সহ্যের বাধ ভাঙলে কিন্তু একদম ওটাকে খুন করে দিব।


চোখ রাঙালো স্পর্শী।ত্যাড়া কন্ঠে বললো-


হ্যা,তিন তিনটা খুন করে তো আপনার হাত এত্তো বড় লম্বা হয়ে গেছে।এখন যাকে দেখবেন তাকেই খুন করতে ইচ্ছে হবে।


পরশ স্পর্শীর গা জ্বালানো কথা একদম গায়ে মাখলো না।চোখ সরিয়ে হাতের দিকে তাকিয়েই অবাক হয়ে গেল।কোনো টিফিন বক্স নেই।গত আটাশ  দিন ধরে দেখাও করেনি।পরক্ষণে আজকের দিনের কথা মনে হতেই বললো-


আজ তো শুক্রবার নয়।তাহলে আজকে কি করে দেখা করতে দিলো তোমায়?আর গত একুশ দিন ধরে তুমি দেখা করতে আসো নি কেন?গত শুক্রবারে ও আসো নি।অপেক্ষা করছিলাম আমি।


সামান্য খারাপ লাগলো স্পর্শীয়ার।দুহাত দিয়ে পরশের গাল আলতো করে ধরে বললো-


আমার এক ক্লাইন্টের কেস নিয়ে খুব বিজি ছিলাম নেতামশাই।আর গত শুক্রবার তো আব্বুর আশার কথা ছিল।ব্যাস্ত ছিলাম বলে দেখাও করতে পারি নি।কেন?উনি আসে নি আপনার কাছে?


পরশ মাথা নেড়ে বললো-


হ্যা,এসেছিলো।


স্পর্শী মাথা নাড়ালো।পরক্ষণেই কিছু মনে আসতেই তড়িঘড়ি করে বললো-


আব্বু কি টিফিন এনেছিলো?


পরশ ত্রস্ত হেসে বললো-


নাহ, হয়তো মনে ছিল না।


ভীষণ খারাপ লাগলো স্পর্শীর।পরশের গাল দুটো আকড়ে ধরে বললো-


আপনি না খেয়ে অপেক্ষা করছিলেন বুঝি?সে বেলায় তো না খেয়ে থাকতে হয়েছিলো তাই না।


পরশ আলতো হাসলো।মাথা নাড়িয়ে লজ্জালু হেসে বললো-


গত তিন শুক্রবারেই না ওয়েট করেছিলাম।বাদ দাও,এটা কিসের ফাইল?(স্পর্শীর হাতের মোটা একটা ফাইল দেখিয়ে বলল)


স্পর্শী আলতো হেসে বললো-


এক ক্লাইন্টের।আচ্ছা বাদ দিন নেতামশাই।উঠুন।


বলেই টেনে লকাপের বাইরে বের করে আনলো স্পর্শীয়া।জেলারের ডেস্কের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো সে।জেলসুপারের কাছে গিয়ে আলতো হেসে কিছু বলতেই একটা ফাইল বের করলো সে।তারপর পরশের কাছে এগিয়ে এসে বললো-


এদিকে আসুন।এখানে একটা সই করুন।দ্রুত।


পরশ ভ্রু কুচকে থমথমে মুখে চেয়ে রইলো স্পর্শীর দিকে।এই যে সে হেসে হেসে কথা বলছে এটা তার একদমই সহ্য হচ্ছে না।এখানে যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ ওই জেলার আড়চোখে তাকিয়ে থাকবে স্পর্শীয়ার দিকে।এটা পরশ কিছুতেই দেখতে পারবে না।কোনো রুপ প্রশ্ন না করেই দ্রুত হাতে জেলারের দিকে তাকিয়ে সই করে দিলো পরশ। 


কিছুটা দূরে যেতেই পরশ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।স্পর্শীকে টেনে কিছুটা নিজের দিকে দাড়া করলো।কঠিন কন্ঠে বললো-


ওর সাথে হেসে হেসে কথা না বললে তোমার পেটের ভাত হজম হয় না?


কথা টা বেশ উচ্চস্বরে বলায় চোখ বড় বড় করে ফেললো স্পর্শী।আশেপাশে কেউ শুনতে পেয়েছে কি না তা দেখতে আড়চোখে চারপাশে বারকয়েক তাকালো।নাহ কেউ নেই।পরশের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো-


নেতামশাই,আমি জানি জেলসুপার তীব্র শেখ আমার দিকে অন্য নজরে চায়।উনি আমাকে পছন্দ করে।এটাকে আমি ভালো বলছি না কেননা আমি বিবাহিত,আমার হাসবেন্ড আছে তা স্বত্তেও উনি এমন নজরে তাকায়।কিন্তু তাই বলে আমি ওনাকে কিছু বলতে পারছি না।এতো কিছুর পরেও আপনার জন্য আমাকে ওনার সাথে সু সম্পর্ক রাখতে হচ্ছে।এই যে আপনার সাথে আমি প্রতি শুক্রবার দেখা করি।কোনো পাহারাদার ছাড়াই উনি আপনাকে আমার কাছে ছেড়ে দেয়।অন্য আসামীদের ক্ষেত্রে দেখেছেন সেটা?


অন্য আসামীদের অভিবাবক দের সাথে দেখা জেলের মধ্যে নির্দিষ্ট বেঞ্চিতে বসে করতে হয়।আর আপনার সাথে প্রায়ই এখানের পেছনের মাঠ পর্যন্ত আসতে পারি আমি তাও পাহারাদার ছাড়া।যদিও এর চারপাশে উচু দেয়াল,চব্বিশ ঘন্টা টহল দেওয়া পুলিশ থাকে তাও কিন্তু সবাইকে এই সূযোগ দেয় না।ওনার সাথে ভালো সম্পর্ক আছে বলেই আলাদা ভাবে কথা বলার সুযোগ পাই আমি।


পরশ হাসলো।পরক্ষণেই দাতে দাত চেপে বললো-


তা এখন এই দিকে আসার অনুমতি উনি কিসের জন্য দিয়েছেন?এটাতো পেছনের মাঠে যাওয়ার পথ নয়।এখান থেকে তো সোজা বাইরে যাওয়ার গেট  পড়ে।


চোখ দুটো ছোট ছোট করে স্পর্শী পরশের দিকে তাকালো।কন্ঠে ঝাঝ এনে বললো-


আপনি ঠিক কি মিন করতে চাইছেন নেতামশাই?


পরশ সাময়িক ভাবে থমকালো।সে কি কোনো খারাপ কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছে?আচ্ছা স্পর্শীয়া কি রাগ করবে?নিজেকে সামলে তটস্থ হয়ে শান্ত কন্ঠে বললো-


আমি এমন কিছুই মিন করতে চাইছি না পাখি।আমার ওই লোকটাকে সহ্য হয় না ব্যাস।তুমি তো একজন উকিল।হতেও পারে তোমার উপর ভরসা করে ছেড়েছেন আমায়।আচ্ছা,তুমি সম্পুর্ন গাইড নিয়ে আমাকে নিয়ে এলে।এখন যদি আমি এখান থেকে পালাই তাহলে তো তোমার চাকরী শেষ। সাথে কেস ও পড়বে তোমার উপর। আর ওই জেলারের ও চাকরী নিয়ে টানাটানি পড়বে।তাই না।


হাটতে হাটতে স্পর্শী জবাব দিলো-


আপনি ভীষণ বাচ্চামো করছেন নেতামশাই।মুখটাকে একটূ বন্ধ রাখুন।আর চুপচাপ আমার সাথে আসুন।


বলতে বলতেই গেট পেরোলো স্পর্শীয়া।প্রায় প্রত্যেকটা ছোট-বড় গেটের সামনে দায়িত্ব রত পুলিশ রয়েছে।কথা বলতে বলতেই প্রত্যেক জায়গায় জেলারের দেওয়া সেল মারা একটা কাগজ তাদের কে দেখিয়ে যাচ্ছে স্পর্শী।আর তারা কোনোরুপ বাক্যব্যয় না করেই আসামীর পোশাক পরিহিত পরশ কে স্পর্শীর সাথে যেতে দিচ্ছে।


গেটের বাইরে আসতেই পরশ দাঁড়িয়ে পরলো।ভ্রু কুচকে স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ।তারপর অবাকের সুরে বলল-


আশ্চর্য!কি হচ্ছে এসব?কারাগারের বাইরে অবধি চলে এসেছি অথচ কেউ বাধা দিল না কেন আমায়?


স্পর্শী কাধ ঝাড়া দিয়ে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো-


কেন বাধা দিবে আপনাকে।কারন আপনার তো সাজা শেষ। 


পরক্ষণেই হেসে দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো "সারপ্রাইজ "


বাকহারা হয়ে গেল পরশ। কিছুক্ষণের জন্য থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো।মাথায় কিছুই ঢুকছে না।যেন অনুভূতিরা দলা পাকিয়ে যাচ্ছে।স্নায়ুতন্ত্র তার নির্দিষ্ট কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।অনেকক্ষণ পর আলতো কন্ঠে বললো-


তুমি কি আমার সাথে মজা করছো সোনা।আমার তো এখনো আট বছর সাজা বাকি রয়েছে।মুক্তি পাবো কি করে?


স্পর্শী হাসলো।প্রাণখোলা সেই  হাসি।এ যেন অনেকদিন পর মন খুলে হাসলো।প্রাপ্তির খাতায় এই প্রথম যেন শূন্যতার অনুপস্থিতি। পরশের মাথা টা নিচু করে কপালে কপাল ঠেকালো।ধীর কন্ঠে বললো-


টানা আড়াই বছরের ফল এটা নেতামশাই।কম ছোটাছুটি করি নি এই দিনটার জন্য।গত এক মাসে দাড়ানোর সময় টুকুও পাই নি।এই জন্যই তো আপনার সাথে দেখা করতে পারি নি।


থেমে 

এখন থেকে আর শুধু শুক্রবার নয়।প্রতিদিন,প্রতিটা ঘন্টা, প্রতিটা সেকেন্ড আপনি আপনার পরিবারের সাথে থাকবেন।একদম আগের মতো।


পরশ যেন কথার খৈ হারিয়ে ফেলছে।ধীর কন্ঠে স্পর্শীকে ঝাকিয়ে বলল-


কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব?আর তুমি আমাকে এ ব্যাপারে আগেই কিছু জানাও নি কেন?


স্পর্শী কিছুক্ষণ নিরব রইলো।দুরেই একটা চায়ের বন্ধ দোকান দেখা যাচ্ছে।তবে সামনেই বসার একটা বেঞ্চ রয়েছে।ধীর পায়ে পরশকে নিয়ে সেখানে বসলো।কাধে মাথা রেখে বললো-


আপনাকে সরকার মুক্তি দিয়েছে।প্যারোল পদ্ধতিতে।প্যারোল হচ্ছে অপরাধীর চারিত্রিক সংশোধনের একটা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা।কোনো অপরাধী আদালত কর্তৃক শাস্তি ভোগের একটা সময় বিশেষ করে শাস্তির এক তৃতীয়াংশ সময় পার হবার পর  শর্তাধীনে তাকে মুক্তি দেওয়ার যে আইনগত ব্যাবস্থা টা নেওয়া হয়,ওটাকেই আইনের ভাষায় প্যারোল বলা হয়।এই প্যারোল যে কেউ পায় না।এটার জন্য ও শর্ত প্রয়োজন হয়। কোনো অপরাধী যদি নিজের করা অপরাধের জন্য অনুশোচনা করে এবং সেই অনুশোচনা অনু্যায়ী সদি তার ব্যাক্তিত্বে ইতিবাচক পরিবর্তন পুলিশ কর্মকর্তারা লক্ষ করে তখনই তাকে প্যারোলের আওতায় আনা হয়।


মানুষ মাত্রই ভুল করে, এবং সেই সুযোগ পেলে  ভুল সংশোধনের জন্য চেষ্টাও করে।এই কথাটাকে যৌক্তিক মেনেই আদালত এই পদ্ধতি টা প্রণয়ন করে।আপনার শাস্তি ১২ বছর।অলরেডি ৪ বছর শেষ। তাই এই আবেদন টা করতে পেরেছি।আর তাছাড়াও এর আগে আপনার ব্যাপারে আইনী কোন মামলা পায় নি এবং জেলে থাকাকালীনো কোনো ত্রুটি বা বিশৃঙখলা খুজে পায় নি তাই মুক্তি পেয়েছেন। আর প্রত্যেক কারাগার থেকেই নির্দিষ্ট একটা সময়ে সকল আসামীর চারিত্রিক একটা সমীকরণ উপর মহলে যায়।আপনার মুক্তির ক্ষেত্রে সেটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। 


আর আমি ভাবিনি যে এই কাজে সফল হবো।আপনাকে আমি আশাহত করতে চাই নি নেতামশাই।তাই বলি নি।শুধু শুধু মুক্তির আশা দেখিয়ে যদি সফল না হতাম তাহলে?তাই কাউকেই বলি নি


শেষের কথা গুলো ছলছল চোখে বললো স্পর্শীয়া।পরশ প্রাণখুলে হেসে দিয়ে জড়িয়ে ধরলো স্পর্শীকে। এখনো তার বিশ্বাস হচ্ছে না। মনে হচ্ছে এই বুঝি পেছনে পুলিশরা দাঁড়িয়ে আছে।


চলবে?


কেমন ভয় দিলাম সবাইকে?🤭😂জানি সবাই অনেএএক ভয় পেয়েছেন।কালকের কমেন্টস গুলো পড়ে আমি ভীষণ হেসেছি।

যাই হোক,আজকে পরশের মুক্তি উপলক্ষে সবার রেসপন্স এবং সুন্দর কমেন্টস চাই আমি।আজকে সবাই সাড়া দিবেন।


ভালোবাসা 🥰

গল্প রাজনীতির_রংমহল পর্ব ৩৬

 #রাজনীতির_রংমহল

#সিমরান_মিমি

#পর্বসংখ্যা_৩৬


★★

সকালের শুভ্র আলোয় ছটফট করতে করতে ছাদে উঠলো আর্শি।হাতের চেয়ারটা সেখানে রেখে বাটি'টা নিচে রাখলো।পুনরায় ছুটে রুমে গেল।রাহুল বই পড়ছিলো।এই মাসের ১ তারিখ থেকে ভার্সিটিতে জয়েন্ট হওয়ার কথা তার।আর্শি ছুটে তার কাছে যেতেই হাতের বইটা ছিনিয়ে নিয়ে টেবিলে রাখলো।রাহুলের হাত ধরে টেনে ছাদের উদ্দেশ্যে চলতে চলতে বললো-


চলুন,চলুন।ছাদে চলুন।আমার হেয়ার প্যাক বানানো শেষ। এখন এটাকে মাথায় লাগিয়ে টানা আধঘন্টা বসে থাকবেন।তার পর স্যাম্পু করে নিবেন।রাতে আবার তেল দিয়ে দিবো।


নাক ছেটকালো রাহুল।কোন দুঃখে যে এই মেয়ের সাথে বাজি ধরতে গেছিলো কে জানে।আজ চারদিন ধরে এমন করছে।পাকা চুল নিয়ে আর্শির সাথে সামান্য কাটাকাটি লাগতেই রাহুল বলেছিলো-


আর্শি যদি তার চুল কালো করতে পারে তাহলে সে তার এক্সামের পরেই জাফলং ঘুরতে নিয়ে যাবে। 


ব্যাস সেদিন থেকেই এখন পর্যন্ত রাহুলের উপর একপ্রকার হামলে পড়েছে।কোনো দিন তেল দিতে মিস হলে রাত দুইটা'র সময় হলেও তাকে ঘুম থেকে টেনে তুলবে আর্শি।থমথমে কন্ঠে বললো-


আর্শি এসব বাদ দাও। পড়তে বসো।


বিরক্ত হলো আর্শি।সেই পাভেল ভাইয়ে'র মতোই সারাক্ষণ একইভাবে পড়া নিয়ে ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকে কানের কাছে।বিরক্তির সাথে বললো-


উফফফ!আর মাত্র তিনটা পরিক্ষা আছে তো।আরো চারদিন বাকি আছে পরবর্তী পরিক্ষায়। এমন ঘ্যানর ঘ্যানর করবেন নাতো কানের কাছে। আসুন এখানে বসুন।


অবশেষে বাধ্য হয়ে রাহুল চেয়ারে বসলো।আর আর্শি আলতো হাতে তার চুলের সেবা করতে ব্যাস্ত।


গত একমাসে স্পর্শীর এক্সাম ও শেষ। এই একমাসে এক-বার দেখা করতে পেরেছে পরশের সাথে।যেহেতু কেস টা নতুন ভাবে আদালতে উঠানোর জন্য তারা চেষ্টা করছে সেহেতু উকিল ছাড়া অন্যকাউকে অভিযুক্তর সাথে দেখা করতে দিতে তারা নারাজ।যদিও অন্য আসামীদের প্রতি  সপ্তাহের শুক্রবার এক ঘন্টার জন্য নিজ পরিবারের যেকোনো একজনের সাথে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়।কিন্তু পরশের ক্ষেত্রে সেটা আলাদা।কেননা তার মামলা আবার ও আদালতে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।


নিরব হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো স্পর্শী।কালকেই খালামনির বাসা থেকে ঘুরে এসেছে।কিন্তু এতো আনন্দ তাকে একটুও ছুতে পারেনি।সেই একমাস আগে আবেদন করেছে অথচ এখনো কোনো ফিরতি মেসেজ আসে নি।আদোও তারা আবেদন মঞ্জুর করবে কি না কে জানে?চোখ থেকে এক ফোটা গরম জল বের হলো।মাটিতে পড়ার আগ মুহুর্তেই স্পর্শীর ফোন বেজে উঠলো।"প্রসেনজিৎ মন্ডল"ফোন দিয়েছেন।ক্ষানিকটা আশার আলো দেখতে পেল স্পর্শী।রিসিভড করতেই ওপাশ থেকে তিনি বললেন-


স্পর্শী মা,আবেদন তো মঞ্জুর হয়েছে তোমার।আমি তো ভেবেছিলাম আরো দু-তিনমাস ঘুরবে।এতো তাড়াতাড়ি মঞ্জুর হবে ভাবতেই পারি নি।তোমার লাক খুব ভালো।


উৎফুল্ল হয়ে স্পর্শী বললো-


আংকেল, কেস টা কবে আদালতে উঠছে?


মিইয়ে গেলেন প্রসেনজিৎ। শান্ত গলায় বললেন-


তা তো বলা যায় না মা।অনেক দৌড়াদৌড়ি করতে হবে আবেদনের ফর্ম টা নিয়ে।কবে নাগাদ কেস টা আদালতে উঠবে কে জানে?তবে আমি চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রাখবো না।


আবারো চিন্তায় মগ্ন হলোয়া স্পর্শী।আজ প্রায় এক মাস ধরে জেলখানায় নেতামশাই।কে জানে কতটা কষ্ট হচ্ছে।ঠোট ভেঙে কেদে দিলো।


কেটে গেল প্রায় আরো পনেরো দিন।এরমধ্যেই স্পর্শী শুনতে পেল খুব শীঘ্রই পরশের কেস টা কোর্টে উঠছে।মামলা শুনানির দিন আর দুই দিন পরে।উৎফুল্ল হয়ে কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে নিরব হয়ে তাকিয়ে রইলো।হয়তো খোদাকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে সে।ফোন হাতে মহীউদ্দীন কে ফোন দিলেন।সবটা জানাতেই ব্যাস্ত কন্ঠে বললেন-


আমি শীঘ্রই আসছি মা।কোনো সাক্ষি বা প্রেমার কোনো রিপোর্ট লাগলে জানিও আমায়।


স্পর্শী শান্ত কন্ঠে বললো-


না আব্বু।আপাতত কিছু লাগবে না।জেলা জজ কোর্টে তো সকল প্রমাণ'ই দেওয়া হয়েছে।তারপরেও যদি কিছু লাগে তো আমি আপনাকে জানাবো।তবে...


থেমে আবার নুইয়ে যাওয়া কন্ঠে বললো-


কিছু টাকা লাগবে আব্বু।এডভোকেট কে তো এখনো কিছু দেওয়াই হয়নি। 


---আমি নিয়ে আসবো।তুমি চিন্তা করো না মা।


.


.


.


.


.


★★★★

সুপ্রিম কোর্ট:


আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে আছে স্পর্শী।সামনেই পরশ আলতো হেসে দাঁড়িয়ে আছে।হাতে হ্যান্ডকাফ। দুটো হাতকেই আলতো উপরে তুলে স্পর্শীর গাল ধরলো।বললো-

 বলেছিলাম না শুধু শুধু কষ্ট করো না।কিচ্ছু হবে না।


ছলছল চোখে  পরশের দিকে তাকালো স্পর্শী।এবারের রায় ও তার পছন্দ হয় নি।একটুও পছন্দ হয় নি।বাইশ বছর থেকে মাত্র দু-বছর কমিয়ে বিশ বছরের সাজা দিয়েছে।নেতামশাই এতটা বছর কি করে থাকবে ওখানে। আচমকাই চোয়াল শক্ত করলো স্পর্শী। কন্ঠে কাঠিন্যতা এনে বললো-


আমি আবারো মামলা'টা আদালতে উঠাবো।হয়তো তাতে আরো দুটো মাস আপনাকে জেলে অপেক্ষা করতে হবে।কিন্তু তাও আমি হারবো না।একদম চিন্তা করবেন না আপনি।আমি আছি তো।


★★★


হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের মধ্যবর্তী সেতু হলো চেম্বার জজ আদালত। কোনো মামলা হাইকোর্টে নিষ্পত্তি হওয়ার পর আপিল করতে হলে প্রথমে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করতে হয় । এ ছাড়া আপিল বিভাগ ছুটিতে থাকাকালীন জরুরি বিষয়ে নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতি আপিল বিভাগের একজন বিচারককে চেম্বার জজ হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। তিনি আবেদনকারীর আবেদন বিবেচনা করে প্রয়োজনে নির্দেশ দেন, কিংবা নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য বিষয়টি পাঠিয়ে দেন। তিনি অফিস সময়ের বাইরেও আবেদন শুনতে পারেন, এমকি বাসায়ও আবেদন বিবেচনা করে রায় দিতে পারেন। তবে দেরি করলে আবেদনকারীর ক্ষতি হতে পারে কেবল এমন আবেদনই তিনি বিবেচনা করেন।


আপিল বিভাগ:


হাইকোর্ট বিভাগে মামলা নিষ্পত্তির পর কোনো পক্ষ অসন্তোষ্ট হলে তিনি আপিল বিভাগে আবেদন করতে পারবেন। বাংলাদেশে আপিল বিভাগের রায় চূড়ান্ত রায়। তবে কোনো ব্যক্তি আপিল বিভাগের রায়ে অসন্তোষ্ট হলে একই বিভাগে পুনরায় রায়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারেন। যাকে আমরা রিভিউ হিসেবে জানি। বর্তমানে আপিল বিভাগে দুটি বেঞ্চ রয়েছে।টানা দেড় মাস ছোটাছুটি করার পরে আপিল বিভাগ থেকে রায় এসেছে বারো বছরের জেল।যদিও স্পর্শী এতেও সন্তুষ্ট নয়।সে চেয়েছিলো আবারো পুনর্বিবেচনা অর্থাৎ রিভিউয়ের জন্য আবেদন করতে কিন্তু প্রসেনজিৎ মণ্ডল তাকে বাধা দিয়েছেন।শান্ত কন্ঠে বুঝিয়েছেন-


দেখো এমনটা নয় যে তোমার হাসবেন্ড অপরাধ করেনি বা তাকে ফাসানো হয়েছে।দেখো স্পর্শী,কেস টা যে পর্যন্ত এসেছে এ পর্যন্তই থাকুক।এর পরে যদি তুমি আবারো রিভিউএর জন্য আবেদন করো হতেও পারে জজ বিবেচনা করে এর থেকেও সাজা পুনরায় বাড়াতে পারে।এ পর্যন্ত লাখ টাকা খরচ করা শেষ। আর এগিয়ো না।শুধু শুধু টাকা নষ্ট করার কোনো প্রয়োজন নেই।


সেদিন কে  হোস্টেলে এসে বইয়ের পর বই,পাতার পর পাতা ওল্টালেও আইনি কোনো সমধান পায় নি স্পর্শী।হতাশ হয়ে ঝিম মেরে টানা তিন দিন বসে ছিল। যেন এ যাবৎ সকল শক্তি তার হারিয়ে গিয়েছে।


পরশ জেলে যাওয়ার প্রথম সপ্তাহের শুক্রবার।ধীর পায়ে টিফিনের বক্স হাতে কারাগারে গেল স্পর্শী।এখন আর কেউ তাকে বাধা দিবে না।প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার একঘন্টার জন্য আসামীর সাথে দেখা করার সুযোগ রয়েছে।স্পর্শী থানায় উপস্থিতির স্বাক্ষর দিতেই হাবিলদার পরশ কে নিয়ে এলো। বেঞ্চিতে বসিয়ে নিজ হাতে খাইয়ে দিলো স্পর্শী।কারো তোয়াক্কা করলো না।খাওয়া শেষে মুখ মুছিয়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বললো-


একদম চিন্তা করবেন না নেতামশাই।বারোটা বছর এমন কিছু না।বলতে বলতে চলে যাবে।আমি মানিয়ে নিতে পারবো।ওকে।আর আপনি একদম ভেঙে পড়বেন না। আমি প্রতি শুক্রবার এসে আপনাকে দেখে যাবো।পরবর্তী শুক্রবার হয়তো আব্বু মা কে নিয়ে আসবে।আমি না হয়  তার পরের শুক্রবারে আসব।


স্থির হয়ে স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে রইল পরশ।প্রায় অনেকক্ষণ চুপ থাকার পরে শান্ত কন্ঠে বললো-


নিজের জীবন'টা সাজিয়ে নিয়ো স্পর্শীয়া। আমার জন্য অপেক্ষা করে তোমার লাইফটা নষ্ট করো না।ভালো কাউকে দেখে আবারো মুভ অন করো।


স্পর্শী স্তব্ধ হয়ে পরশের দিকে তাকিয়ে রইলো।সেদিনের পরশ আর আজকের পরশের মধ্যে যেন কোনো মিল'ই পাচ্ছে না।পরক্ষণেই ঠোট কামড়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বললো-


আচ্ছা।


হতভম্ব হয়ে গেল পরশ। স্পর্শীর হাত দুটো জোরে চেপে ধরে নিজের দিকে এনে চোখ পাকিয়ে দাতে দাত পিষে  বললো-


কি বললি তুই?


আর নিজেকে সামলাতে পারলো না স্পর্শী।আশেপাশের দেয়াল ফাটিয়ে অট্টহাসিতে মেতে উঠলো।পরশ ও হেসে দিলো।হাসতে হাসতেই একপর্যায়ে হাউমাউ করে কেদে দিয়ে পরশকে জড়িয়ে ধরলো স্পর্শী।মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে আলতো স্বরে পরশ বলতে লাগলো-


এভাবে কাদে না  ময়না পাখি।মাত্র বারোটা বছর'ই তো।হুট করে কেটে যাবে।তারপর আবারো আমি 

আবারো তোমার কাছে ফিরে আসবো।ওকেহ!!!


বলতে বলতেই আলতো হেসে দিলো পরশ।হাবিলদার ও হেসে উঠলো।ঘাড় ঘুড়িয়ে পেছনে তাকাতেই দুম করে দাড়ালো।দ্রুত কন্ঠে পরশকে বললো-


এমপি সাহেব,ম্যাডাম তো আবারো আইছে।


চমকে জেলের সামনে তাকালো পরশ।দুরেই সাদা শাড়ির উপর কালো কোর্ট পড়া এক পরিপূর্ণ যুবতী এগিয়ে আসছে তার দিকে।পাশেই এই কারাগারের জেলসুপার তীব্র শেখ।মুহুর্তে'ই চোয়াল শক্ত হয়ে গেল পরশের।রক্তরাঙা চোখ  দুটো অন্য দিকে ফিরিয়ে  নিরব হয়ে তাকিয়ে রইলো।


চলবে?.......


ব্যাস্ত ছিলাম,তবুও আপনাদের খুশি করার চেষ্টা। সামান্য ছোট হয়েছে।মানিয়ে নিন।পরবর্তী পর্বে গল্পের মোড় পুনরায় বদলাবে।প্রস্তুত তো আগামী পর্বের জন্য?


(আপনাদের চাই গল্প।আমার চাই রিসপন্স এবং সুন্দর মন্তব্য।হিসেব বরাবর🙆‍♀️🙂)

বুঝেছো পাখিগণ'স🫣

গল্প রাজনীতির_রংমহল পর্ব ৩৫

 #রাজনীতির_রংমহল

#সিমরান_মিমি

#পর্বসংখ্যা_৩৫


বিকেল তিনটা।চারদিকে এখনো ভ্যাবসা গরম।সূর্য নিজের তেজ কে খানিকটা কমিয়ে দিক পরিবর্তন করে পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে।ক্লান্ত পায়ে স্পর্শী এগিয়ে গেল পরিচিত কেবিনের দিকে।পিয়াশা বেগম প্রেমার সাথে কথা বলছেন।স্পর্শী ধীর পায়ে তাদের দিকে এগিয়ে গেলেন।টুলের উপর ধপ করে বসে পড়তেই পিয়াশা বেগম চাইলেন।উত্তেজিত কন্ঠে জানতে চাইলেন পরশের কথা।মাথা তুললো স্পর্শী।অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ।তারপর ধীর কন্ঠে বললো-


ওনার বাইশ বছর সাজা হয়েছে মা।


আঁতকে উঠলেন পিয়াশা।হাউমাউ করে কেদে দিলেন।প্রেমা ও কেদে মাকে জড়িয়ে ধরলো।স্পর্শী উঠে প্রেমার পাশে গেল।মাথায় হাত দিতেই চোখ তুলে চাইলো। স্পর্শী কাদতে বারন করলো।তারপর শাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে বললো-


মা,আব্বু আর চাচ্চু ও এসেছে। ওরা বাইরে আছে।আমি একটু ঢাকায় যাচ্ছি। ক-দিনের মধ্যে ফিরে আসবো।আপনি এভাবে কাদবেন না। তাহলে প্রেমাকে কে সামলাবে?


অশ্রুসিক্ত চোখ নিয়ে অবাক চোখে স্পর্শীর দিকে তাকালো পিয়াশা।অবাকের সুরেই বললো-


তুমি ঢাকায় কেন যাবে?


জিহবা দিয়ে গলা ভেজালো স্পর্শী।ভীষণ খিদে পেয়েছে তার।হস্পিটালে বসে কোনো কালেই সে খেতে পারে না। বমি পায়।শান্ত কন্ঠে বললো-


আমার একটু ভার্সিটিতে যেতে হবে মা।এক্সামের নোটিশ দিয়ে দিয়েছে।


তাচ্ছিল্য করে হাসলেন পিয়াশা।কড়া গলায় বললেন-


আমার পরিবারের এই অবস্থা। ছেলেটা জেলে।এরমধ্যেও তোমার লেখাপড়ার কথা ভাবছো।ভালো,যাও তুমি।তোমাকে কে আটকাবে?


স্পর্শী অবাক হয়ে শাশুড়ীর দিকে চাইলো।এই যে প্রতিদিন পিরোজ পুর থেকে বরিশাল, আবার বরিশাল থেকে পিরোজপুরে দৌড়ের উপর থেকেছে।যেখানে সেখানে পাগলিনীর মতো ছুটে বেরিয়েছে সেটা কারো চোখে পড়লো না।অথচ লেখাপড়াটাই পড়লো। না খেয়ে,না নেয়ে দিনের পর দিন ছুটছে। চোখ গুলো টলমল করে উঠলো স্পর্শীর।ত্রস্ত কন্ঠে আলতো চিৎকার করে বললো-


মায়ায়া,আপনি ভুল ভাবছেন।যদিও ভার্সিটিতেও যাচ্ছি আমি।কিন্তু তার থেকে ও আপনার ছেলের জন্য ঢাকায় যেতে হচ্ছে আমায়।হাই কোর্টে আপিল করতে হবে।বাইশ টা বছর কম নয়।উনি এতোটা বছর কি করে জেলে থাকবে।আমি আবার ওনার কেসটা আদালতে উঠাবো।আর সে জন্যই একজন উকিলের প্রয়োজন।ঢাকায় আমার পরিচিত একজন ভালো উকিল রয়েছে।ওনার কাছেই যাচ্ছি আমি।


কিছুটা শান্ত হলেন পিয়াশা।অভিমানী কন্ঠে বললেন-


এই যে সুমন রা যে উকিল কে হায়ার করেছে সেও তো অনেক নামকরা উকিল।আবার কার কাছে যাবা তুমি?


ঠোট দুটো গোল করে গরম নিঃশ্বাস ফেললো স্পর্শী।তারপর শান্ত কন্ঠে বললো-


উচ্চ আদালতে যে কেউ কেস লড়তে পারে না মা।বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কর্তৃক যেসব আইনজীবী উচ্চ আদালতে মামলা পরিচালনার জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছেন, শুধু তাঁরাই উচ্চ আদালতে মামলা পরিচালনা করতে পারেন।এছাড়া অন্য কোনো আইনজীবী মামলা লড়তে পারবেন না।


অভিমানী কন্ঠে পিয়াশা ইনিয়েবিনিয়ে বললেন-


তো আমি অতোসব বুঝি নাকি।তুমি তো উকিলি পড়ো বলে জানো।আচ্ছা,তুমিও তো ওর কেসটা লড়তে পারতা।


আলতো হাসলো স্পর্শী।তারপর বললো-


মা আমার কোর্স এখনো কম্পিলিট হয়নি।সবে তো তৃতীয় বর্ষে পড়ছি আমি।


স্পর্শী আর কিছু না বলেই সুটকেস হাতে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলেন।এরই মধ্যে মহীউদ্দীন শিকদার তার সামনে এলেন।পাচ হাজার টাকা বের করে স্পর্শীর হাতে দিয়ে বললেন-


এটা লাগতে পারে।রেখে দাও।


কিছুটা অসস্তিতে পড়লো স্পর্শী।এই মুহুর্তে টাকা টা খুব দরকার।বাবা তো আর টাকা দিবে না।একমুহূর্তে তার হাতে ভাড়া টাকা ছাড়া তেমন টাকা ও নেই।মহীউদ্দীন শিকদার গাড়ি দিতে চাইলে স্পর্শী আপত্তি করলো না।বাসে চড়লে রীতিমতো বমি করে অজ্ঞান হয়ে যায় সে।পরবর্তী দু-তিন দিনে আর সুস্থ থাকে না।এই মুহুর্তে অসুস্থ হওয়াটা মোটেও কাম্য নয় তার।


.

.

★★★★

হোস্টেলে পৌছাতেই ড্রাইভারকে পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিল স্পর্শী।এখানে বেশ কিছুদিন থাকতে হবে তাকে।ত্রস্ত পায়ে হোস্টেলে ঢুকতেই অনন্দা হামলে পড়লো ওর উপর।তাকে বুঝিয়ে সোজা বাথরুমে চলে গেল স্পর্শী।টানা এক ঘন্টা ধরে গোসল করে রুমে ফিরলো।আসার সময় দোকান থেকে খাবার নিয়ে এসেছে।রাত নটায় হোস্টেলে খাবার পাওয়া যাবে।এখন বাজে আটটা।খাবার খেয়ে সোজা হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।এইমুহুর্তে একটা লম্বা ঘুমের প্রয়োজন।কিন্তু ঘুম এলো না।বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠলো পুরনো স্মৃতি গুলো। দমবন্ধ হয়ে পড়ে রইলো বিছানায়।দুচোখ ভেসে যাচ্ছে স্মৃতির টানে।


সকাল হতেই বই নিয়ে পড়তে বসলো স্পর্শী।পুরনো পড়াগুলো মাথায় পুনরায় সেট করে নিলো।সাড়ে টটা বাজতেই নাস্তা খেয়ে রেডি হয়ে  সাড়ে নটার দিকে চলে গেল ভার্সিটিতে।


বিকেল চারটা।আটতলা ভবনের সামনে  দাঁড়িয়ে আছে স্পর্শী।থার্ড ফ্লোরেই রয়েছে কাঙ্ক্ষিত লোকটির অফিস।আদোও সে স্পর্শীকে চিনবে তো।নাকি অচেনা ভেবে তাদের মতোই আচরণ করবে।এরকমই আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে লিফটে উঠে পড়লো স্পর্শী। থার্ড ফ্লোরে নেমে কাঙ্ক্ষিত রুমটির দরজায় টোকা দিতেই ভেতর থেকে সহায়ক ছেলেটি দরজা খুলে দিলো। ধীর পায়ে ভেতরে ঢুকে শান্ত কন্ঠে সালাম দিলো স্পর্শী।সাথে সাথেই অবাক হয়ে তাকালেন প্রসেনজিৎ মণ্ডল। ঠোট এলিয়ে হেসে বললেন-


আরে আমার রাগীনি যে।এমা আজ এতো শান্ত কেন?তোমাকে তো এমন মানায় না।


সামান্য অসস্তি তে পড়লো স্পর্শী।লোকটা তাহলে তাকে চিনতে পেরেছে।নবীনগরের রাস্তায় বশেই একবার কোমর বেধে ঝগড়া করে ছিলো স্পর্শী।লোকটাও কম না।তিনি যে একজন উকিল সেটা ঝগড়া করেই বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন।তখন থেকেই খুটিনাটি পরিচয় ছিলো।স্পর্শী আলতো হাসলো।ইতস্তত ভাবে বললো-


আংকেল, একটা দরকারে এসেছিলাম।আপনার সাহায্য প্রয়োজন।


স্পর্শীকে এমন নরম, ভেঙে পড়া কন্ঠে কথা বলতে দেখে সিরিয়াস হলেন প্রসেনজিৎ মণ্ডল। শান্ত কন্ঠে বললেন-


কি হয়েছে মা?


ঠোট ভেঙে আসলো স্পর্শীর।উফফ এ কেমন যন্ত্রনা।কেউ একটু ভালোবেসে কথা বললেই আজকাল কেদে ফেলে স্পর্শী।বিয়ের পর বেশ ছিচকাদুনে হয়ে গেছে সে।নিজেকে সংযত করে বললো-


আংকেল,আমার হাসবেন্ড পিরোজপুরের এমপি।রিসেন্টলি রাজনৈতিক শত্রুতা আর পারিবারিক ক্রোধের বশবর্তী হয়ে তার বিপক্ষ দল ওনার ভাইকে খুন আর বোনকে ধর্ষন করছিলো।উনি সহ্য করতে পারে নি।তাদেরকে কুপিয়ে খুন করেছে।তিনটা মার্ডার আর দুটো হস্পিটালে এডমিট আছে।


--আরে এটাতো  আমি  জানি।এই তো সেদিনকে পত্রিকায় পড়লাম।পরশ শিকদার তোমার হাসবেন্ড।


--জ্বী আংকেল।জেলা জজ কোর্টে ওনাকে বাইশ বছরের সাজা দিয়েছে।আমি এখন হাইকোর্টে আপিল করতে চাইছি।আপনি প্লিজ আমাকে সাহায্য করুন।প্লিজ আংকেল।


শান্ত ভঙ্গিতে কিছুক্ষণ ভাবলেন প্রসেনজিৎ মণ্ডল। তারপর বললেন-


দেখো,হয়তো প্রতিশোধের বশবর্তী হয়ে তোমার হাসবেন্ড খুন করেছে।ওনার ফ্যামিলির সাথে যা হয়েছে সেটা অনেক খারাপ হয়েছে।কিন্তু অপরাধ তো অপরাধই।সাজা তো পেতেই হবে।শুনেছি সেখানে হাজার হাজার লোক উপস্থিত ছিলো। ভিডিও ফুটেজ ও আছে।অপরাধ তো প্রমাণিত হয়ে গেছে।এখানে আমার কি করার?


আশাহত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লো স্পর্শী।মাত্র পাচটা দিন সংসার করতে পেরেছে লোকটার সাথে। এরইমধ্যে সেই সং সার টা ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো।


স্পর্শীর কান্না দেখে প্রসেনজিৎ মণ্ডল অস্থির হয়ে পড়লেন।উত্তেজিত কন্ঠে বললেন-


তুমি কান্নাকাটি করো না মা।আমি দেখছি কি করা যায়।মুক্তি না দিতে পারি কিছুটা সাজা অবশ্যই কমাতে পারবো।তার আগে আমি উচ্চ আদালতে আবেদন করার ব্যাবস্থা টা করি। এই দু-দিন সময় দাও আমাকে।


কিছুটা আশার আলো পেলো স্পর্শী।সেখান থেকে বিদায় নিয়ে ভার্সিটিতে চলে গেলো।বাড়িতে ফোন দিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলে পড়ায় মনোযোগ দিলো।

প্রায় দু-দিন পরে আবারো সেই অফিসে উপস্থিত হলো স্পর্শী।প্রসেনজিৎ মন্ডল একটা ফর্ম স্পর্শীর হাতে দিয়ে বললো-


এখানে আসামীর সিগনেচার লাগবে।উনি যে বিগত বিচারে সন্তুষ্ট নয় এবং ন্যায় বিচার চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করছে সে জন্যই এই সিগনেচার টা লাগবে।যত দ্রুত পারো সইটার ব্যাবস্থা করো।এটা যত তাড়াতাড়ি জমা দিব তত তাড়াতাড়িই কোর্টে শুনানি পড়বে।


স্পর্শী সেখান থেকে সোজা ভার্সিটিতে এলো।হলসুপার কে বলে আবারো পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।


পিরোজপুর কেন্দ্রীয় কারাগার:


বিরক্ত হয়ে পড়েছে জেলার হামিদুর রহমান।স্থানীয় পুলিশ বারবার ব্যার্থ হচ্ছে বর্তমান সমস্যাকে সমাধান করতে।বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা সহ দলের সবাই এবং সাধারণ জনগণ প্রতিনিয়ত মিছিল,মিটিং,ধর্মঘট, মানববন্ধন করেই যাচ্ছে।তাদের নেতার এমন করুন সাজা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।দিন দিন সাধারণ জনগণ ক্রুদ্ধ হয়ে পড়ছে আইনের প্রতি।স্থানীয় পুলিশদের সাথে নানা সংঘর্ষে মেতে উঠেছে তারা।


স্পর্শী কারাগারের সামনে এসেই অবাক হয়ে গেল।আজকে সারাদিন এখানে মানব বন্ধন চলেছে।জেল সুপার বিরক্ত হয়ে তাকে ঢুকতে দিতে নারাজ।আশ্চর্য হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো স্পর্শী।নেতামশাইয়ের সই না পেলে এতো পরিশ্রম যে বৃথা যাবে।টানা আধঘন্টা কারাগারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার পর এক হাবিলদারের থেকে আসল কথা শুনতে পারলো স্পর্শী।বাকরুদ্ধ হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো।


"আজ রাতের মধ্যেই পরশ শিকদারকে অন্য জেলে ট্রান্সফার করা হবে।পিরোজপুরের বর্তমান পরিস্থিতি সামলে উঠতে পুলিশ হিমশিম খাচ্ছে।"


আতকে উঠলো স্পর্শী।নেতামশাইকে সবার থেকে লুকিয়ে কোন জেলে শিফট করা হবে?কিচ্ছু জানে না সে।অনেক বাকবিতন্ডা করার পরে জেলার দেখা করার অনুমতি দিলো।মুহুর্তেই ছুটে গেল কাঙ্ক্ষিত সেলের সামনে।দ্রুত কোনো কথা না বলেই কাগজ আর কলম টা এগিয়ে দিলো তার দিকে।উত্তেজিত কন্ঠে বললো-


নেতামশাই দ্রুত এখানে সই করুন।আমি হাইকোর্টে আপিল করবো।আপনি একদম চিন্তা করবেন না।


পরশ কিছু বলতে গিয়েই থামলো।ত্রস্ত হাতে সই করে দিয়ে বললো-


এতে কোনো লাভ হবে না সোনা।শুধু শুধু এতো কষ্ট করার কোনো দরকার নেই।


স্পর্শী শুনলো না।দ্রুত বলল-


নেতামশাই,আপনি কি কিছু জানেন?না মানে কোন জেলে নেওয়া হচ্ছে আপনাকে?


পরশ লোহার শিকের মধ্যে হাত গলিয়ে স্পর্শীর গাল ধরলো।পরিস্থিতি কতটা খারাপ হলে সে এই পাখিটার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো।নানা কষ্টে, যন্ত্রনায় তখন মাথা ঠিক ছিলো না তার।শান্ত কন্ঠে বললো-


শুনলাম  তো ঢাকায় নিবে।


একগাল হাসলো স্পর্শী।মুখ দিয়ে উৎফুল্ল কন্ঠে বললো-


ঢাকায়?


চলবে?......


তোমাদেরকে বলার পর লেখা শুরু করেছি আমি।সবাই একটু রেসপন্স করো প্লিইইইজ🙆‍♀️1k. চাই কিন্তু🫣


ভালোবাসা🖤

গল্প রাজনীতির_রংমহল পর্ব ৩৪

 #রাজনীতির_রংমহল

#সিমরান_মিমি

#পর্বসংখ্যা_৩৪


★★★

চেয়ারে বসে টেবিলের উপর রাখা বইয়ে মাথা রেখে ঝিমুচ্ছে আর্শি।মন-মেজাজ কিচ্ছু ভালো নেই।একে তো সারাবছর বইয়ের ধারে-কাছে না যাওয়ার কারনে সম্পুর্ন অচেনা বস্তু এগুলো।তার উপর পড়তে গেলেও পাভেল ভাইকে নিয়ে নানা জল্পনা -কল্পনায় মেতে থাকে।একজন মৃত মানুষকে নিয়ে এমন কল্পনা করা বরাবর'ই অনুচিত। তা জেনেও মন বারবার ভেসে যাচ্ছে অযৌক্তিক কল্পনায়।


এই যেমন পাভেল ভাই বেচে থাকলে তাদের বিয়ে হতো,খুব সুন্দর একটা সংসার হতো,আর্শি সারাক্ষণ দুষ্টুমি করতো তার সাথে, তাদের একটা ছোট্ট বাচ্চা থাকতো।পরক্ষণেই বাস্তবে আসতেই বিষাদে ছেয়ে পড়ে পুরো মুখমন্ডল।আবারো ভাবনায় মশগুল হয় সে।আচ্ছা,যদি এখন হুট করে পাভেল ভাই বেচে উঠতো।তার কাছে এসে চিৎকার করে বলতো "আর্শি আমি তোমার ভালোবাসার জোরেই ফিরে এসেছি।তখন?তখন দেশ-বিদেশের মানুষ ছুটে আসতে আর্শি নামের এই প্রনয় প্রেয়সীকে দেখতে। ইশশ এটা তো কেমন সিনেমাটিক ভাবনা হয়ে গেল।


ভাবনাতে মশগুল থাকতেই হঠাৎ করে খালি পায়ের উপর চিকন বেতের বাড়ি পড়লো।আতকে উঠে লাফ দিয়ে চেয়ারের উপর দাড়ালো আর্শি। পা টা বারকয়েক ঝাড়ি দিয়ে ছলছল চোখে রাহুলের দিকে তাকালো।মুহুর্তেই অশ্রুরা হানা দিলো বড় বড় মায়াবী চোখ দুটোতে।পায়ের উপর টা লাল হয়ে গেছে।রাহুল ধমকে সামনের চেয়ারে বসলো।কন্ঠে কাঠিন্য এনে বললো-


কি ভাবছিলে তুমি?কতটুকু পড়েছো?


আর্শি নাক টেনে অন্য দিকে তাকালো।এটা তো তার জামাই।অথচ ভাব দেখো,যেন একে বেতন দিয়ে হোম টিউটর হিসেবে রেখেছে।তার উপর এতো বড় মেয়ে সে।তার গায়ে কথায় কথায় হাত দেয়।অসভ্য শিক্ষক।এর নাকি ভার্সিটিতে চাকরি হয়েছে।দু-দিন ও টিকবে না এই চাকরী।কান ধরে টেনে গেটের বাইরে বের করে দেবে স্টুডেন্ট রা।থমথমে মুখে বললো-


হয়েছে তো প পড়া।


রাহুল ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বই হাতে নিলো।গ্রামারের রুলসের মধ্যে অসংখ্য A+P  লেখা।ফোস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো সে।ইচ্ছে করছে আরো দুটো দিতে।নিজেকে ক্ষান্ত করে ত্যাড়া কন্ঠে বললো-


শোনো আর্শি,সকাল সাতটা থেকে এগারোটা,আবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে এগারোটা।অন্তত এই আট ঘন্টা পড়ায় মন দাও।বাকি পুরো ষোলো ঘন্টা তোমার মরে যাওয়া প্রেমিককে নিয়ে ভাবনা চিন্তা করো আমার কিচ্ছু যায় আসে না।এতো বড় মেয়ে অথচ গ্রামারের গ ও পারো না।কে পাস করাইছিলো এসএস সি তে।মাথায় ঢুকিয়ে নিয়ো,যদি কোনো রকমে এইচএসসি তে ফেল করো বা করার আশাও থাকে।তাহলে তোমায় পিরোজপুরো ছুড়ে মারতে আমার দু মিনিট ও লাগবে না।সেখানে যাওয়ার পর আরো তো দুইটা ভাই আছে বেচে।এবারে ওরা ধরে বিয়ে দিয়ে দিবে।


যদি এখানে শান্তিমতো স্বাধীন ভাবে থাকতে চাও তাহলে লেখাপড়ায় মন দাও।নইলে দরজা খোলা আছে সোজা চলে যাও।আমি চাই না পাড়ার কেউ বলুক রাহুলের বউ ফেল করছে। মাথায় রেখো।


এগুলো দশ মিনিটের মধ্যে মাথায় ঢুকিয়ে নাও।নইলে ওই মাথা আবার ফাটাবো।


বলেই হনহন করে বাইরে বেরিয়ে গেল রাহুল।আর আর্শি।সেতো টলমল করা চোখ নিয়ে রাহুলের দিকে তাকিয়ে রইলো।


কি করে এতোগুলো কথা তাকে শোনালো সে?থাকবে না সে এই বাড়িতে।চলে যাবে।


মুহুর্তেই চোয়াল শক্ত হয়ে গেল আর্শির।নাহ,মরে গেলেও ওই বাড়িতে সে আর হুশ থাকতে পা রাখবে না।প্রয়োজনে এখানে সবার কটু কথা শুনে তার পর বসে থাকবে।না না,সে মন দিয়ে পড়বে।এই বুড়ো ব্যাটাকে ভালো রেজাল্ট করে তারপর দেখিয়ে দেবে।হুহ।


.


.


.


.


.


★★★★★★

দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ঢুকরে কেদে উঠলো স্পর্শী। হাতের ঘড়িতে চেয়ে দেখলো ১০:৪৭ বাজে।চোখের কোন মুছে সামনের দিকে তাকালো।লম্বা জ্যাম।তাহলে কি সে পারবে না নেতামশাইয়ের সাথে দেখা করতে?ওদিকে কি হলো কিচ্ছু জানে না সে।টানা আধ ঘন্টা ধরে সে জ্যামে আটকে রয়েছে।


এরইমধ্যে জ্যাম ছেড়ে দিলো।দ্রুত গাড়ি চলতে লাগলো জেলা জজ আদালতের উদ্দেশ্যে।গাড়ি থামতেই দ্রুত ভেতরে ছুটলো স্পর্শী।অজস্র উকিল,পুলিশ, আসামীদের আনাগোনা।সে তো কিছুই চেনে না।এতটা লম্বা ভবনগুলোর মধ্যে কিভাবে খুজে পাবে সে।একজন পুলিশের কাছে জিজ্ঞেস করতেই দেখিয়ে দিলো কাঙ্ক্ষিত ভবন টি।দ্রুত সেদিকে ছুটলো।আদালতে জাস্ট দশটায় কেসটা ওঠার কথা।বরিশাল থেকে আসতে আসতে যে এতটা দেরী হয়ে যাবে সেটা ক্ষুনাক্ষরেও বুঝতে পারেনি স্পর্শী।কে জানতো আজকে রাস্তায় এতটা জ্যাম হবে।


হঠাৎ আলতাফ শিকদার,মহীউদ্দীন শিকদার, সুমন সহ দলের অন্যান্যদের ম্লান মুখে বের হতে দেখেই পিলে চমকে উঠলো স্পর্শীর।ছুটে তাদের সামনে যেতেই সুমন ম্লান মুখে বললো-


ভাবি , আসতে এতো দেরী হলো কেন?


নিজেকে সংযত করে থমথমে কন্ঠে বললো-


জ্যাম ছিলো রাস্তায়।ওদিক টায় কি হলো?


বিতৃষ্ণায় উকিলের দিকে তাকালো সুমন।উকিল রাগত স্বরে বললো-


আমি না থাকলে ফাসি না হয় জেল হয়ে যেত।আসামীর খুনের ভিডিও ফুটেজ সহ অসংখ্য লোকের সাক্ষী আছে।তার উপরে এমপি সাহেব নিজে দোষ স্বীকার করছে।এখানে আমার আর কি করার ছিলো।তাও তো অনেক টেকনিক খাটানোর পর বাইশ বছর সাজা দিলো জজ সাহেব। 


থমকে গেল স্পর্শী।অস্পষ্ট কন্ঠে মুখ দিয়ে আওড়ালো -


বাইশ বছর।


পরক্ষণেই  উত্তেজিত কন্ঠে বললো-


নেতামশাই কোথায়?আমি ওনার সাথে দেখা করবো।


উকিল সাহেব গম্ভীর কন্ঠে বললো-


একটু পরেই পুলিশ নিয়া আসবে ওনাকে।এখান থেকে হাজতে নিয়ে যাবে।


আচমকা দূর থেকে চারজন পুলিশের মাঝখানে হ্যান্ডকাফ বাধা পরশ কে দেখেই ছুটলো সেদিকে। মাত্র তিনদিনের মধ্যে একদম শুকিয়ে ম্লান হয়ে গেছে মুখটা।গায়ে আসামীদের সাদা কালো ডোরাকাটা পোশাক। পুলিশের সামনে যেতেই স্পর্শী গম্ভীর কন্ঠে বললো-


আমি ওনার স্ত্রী।মাত্র পাচ মিনিট কথা বলবো। প্লিজ।


ইনস্পেকটর মাথা নাড়িয়ে একটু সাইডে গেলেন।তবে ওনাদের কঠোর দৃষ্টি আসামীর দিকে।যতই সম্মানীয় হোক না কেন সে,যদি পালিয়ে যায়।


পরশ স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে আলতো হাসলো।মনে মনে এই মুখ টা দেখার খুব ইচ্ছে ছিলো তার। আদালতে ঢুকতেই সমস্ত পাবলিকের মধ্যে চোখ জোড়া চাতক পাখির ন্যায় এই তোতা পাখি টাকে খুজছিলো।কিন্তু আফসোস!পায় নি।


--কেন করলেন এমন নেতামশাই?কি দরকার ছিলো ওদের এভাবে খুন করার?পুলিশের কাছে বলতেন।ওরা সাজা দিতো।


মুহুর্তেই হাস্যজ্জ্বল মুখটিতে বিষাদ ছেয়ে গেল।চোয়াল শক্ত করে স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে বলল-


রক্তে টান লাগছে?আমার'ও লেগেছিলো।


থেমে করুন কন্ঠে,


এতোটা স্বার্থপর হো'স না বউ।সইতে পারবো না।


স্পর্শী থমকালো।সে কি সত্যিই স্বার্থপর।পরক্ষণেই ছলছল চোখে পরশের দিকে তাকিয়ে বললো-


আপনি বুজতে পারছেন না নেতামশাই।পাভেল নেই,আম্মু-আব্বু ভীষণ ভেঙে পড়েছে,প্রেমা অসুস্থ, আপনিও নেই।কি ভাবে বাচবে এই পরিবার টা। 

আর আমি?আমি আপনাকে ছেড়ে কিভাবে থাকবো এতটা বছর।এক নয়,দুই নয় পুরো বাইশ টা বছর।


চোয়াল শক্ত করে ফেললো পরশ।দুহাত দিয়ে স্পর্শীর গাল আকড়ে ধরে কঠিন কন্ঠে বললো-


শুধু বাইশ বছর কেন পাখি?প্রয়োজনে আজীবন অপেক্ষা করবে আমার জন্য।যদি কখনো শুনেছি ও না আমার অনুপস্থিতিতে  অন্যকারো কারো সাথে  জড়িয়েছো।খোদার কসম,আমার হাতের চতুর্থ খুন টা তুমি হবে।


বাক হারা হয়ে গেল স্পর্শী । নেতামশাই কি তাকে অবিশ্বাস করছে?মুহুর্তেই ভালোলাগায় ছেয়ে গেল হৃদয়।সে তো চেয়েইছিলো কেউ একজন এতটা কঠোর ভাবে তার উপর অধিকার ফলাক।তাকে শাসন করুক। লোকজন,পুলিশ সবাইকে অগ্রাহ্য করে পরশের বুকের উপর হামলে পড়লো স্পর্শী।কান্নারত কন্ঠে বলতে লাগলো-


আপনি একদম কোনো চিন্তা করবেন না নেতামশাই।আমি আছি তো।কিচ্ছু হবে না আপনার।প্রয়োজনে আমি হাইকোর্টে আপিল করবো।তাও আপনাকে এতো কষ্ট পেতে দেব না।আর বাড়ি?বাড়ির সবাই কে নিয়ে একদম কোনো চিন্তা করবেন না।প্রেমা  এখন অনেকটা সুস্থ।আমি আছি তো।সব সামলে নেব।


এরইমধ্যে ইনস্পেকটর তাড়া দিয়ে নিয়ে গেল পরশ কে।হেচকি তুলে সে দিকে তাকিয়ে রইলো স্পর্শী।আচমকা বসে পড়লো সেখানেই।শরীর যে আর মানছে না।এতটা মানসিক চাপ,যন্ত্রনা,এতটা পথ জার্নি করে আসা -যাওয়া,শরীর টা যে আর মানছে না।


এরই মধ্যে হাতের ফোন টা বেজে উঠলো।অনন্দা ফোন দিয়েছি।রিসিভড করে কানে তুলতেই ওপাশ থেকে তড়িঘড়ি করে বললো-


স্পর্শী,তুই কি আর ভার্সিটি তে আসবি না।এদিকে এক্সামের নোটিশ দিয়ে দিয়েছে।তুই প্রায় তেরো দিন ধরে ক্লাস করিস না।এতটা অনিয়মিত হলে তোর উপর তো চাপ পড়বে।


দেয়ালে মাথা হেলিয়ে দিলো স্পর্শী।অস্পষ্ট কন্ঠে ওকেও বললো-


আমি সামলে নেব অনু।আমি সব টা সামলে নেব।


বলেই ফোন কেটে দিলো।


চলবে?


আজকে ফ্রি আছি বলে দিয়ে দিলাম একটা পর্ব।তাই বলে প্রতিদিন অনুরোধ করবেন না কিন্তু🫥কেমন হয়েছে জানাবেন।

ভালোবাসা🖤

গল্প রাজনীতির_রংমহল পর্ব ৩৩

 #রাজনীতির_রংমহল

#সিমরান_মিমি

#পর্বসংখ্যা_৩৩


★★

বিয়েটা যেভাবেই হোক,যে পরিস্থিতিতেই হোক,তাদের মধ্যকার সম্পর্ক যেমনই থাকুক কিন্তু সেটা তাদের দুজনের মধ্যেই থাকুক।অন্যকাউকে জানাতে নারাজ রাহুল।এ জন্যই শাশুড়ীর সামনে অসস্তিতে পড়েছে সে।সোনালী বেগম যেন জামাইকে দেখেই তার ভেতর'টা পড়ে ফেললেন।ছেলে-মেয়ে দুটো যে এতো তাড়াতাড়ি নিজেদের কে মানিয়ে নিতে পারবে না সে ব্যাপারে নিশ্চিত সে।আলতো হেসে রাহুল'কে বললো-


আমার কষ্ট হবে কেন বাবা?আমি পালটে দিচ্ছি।


রাহুল যেন স্বস্তি পেল।মাথা নাড়িয়ে ঘরের বাইরে চলে গেল।শামসুল সরদারের রুমের সামনে যেতেই থমকে দাড়ালো।এ বাড়ির সমস্ত টাই সে জিহানের কাছ থেকে বাসে বসে জেনে নিয়েছে।দরজা'য় আলতো করে টোকা দিয়ে বললো-


আংকেল,আমি রাহুল।


কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজা খুললেন তিনি।আলতো হেসে রাহুলের সাথে কুশল বিনিময় করতে করতে বিছানায় বসলো।তার চোখ দুটো ভয়ংকর ভাবে লাল হয়ে আছে।পুরুষ মানুষের এটাই দোষ।রাগলেও তাদের চোখ লাল দেখায় আবার কষ্ট পেলেও চোখ দুটো অশ্রুর পরিবর্তে রক্তের ন্যায় হয়ে যায়।

কিছুক্ষণ বসে শান্ত কন্ঠে রাহুল বললো-


আংকেল,যাই হোক না কেন?সোভাম তো আপনার নিজের ছেলে।ওকে দাফন টা তো করাতে হবে।আপনি যাবেন না লাশ আনতে?


বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো শামসুল।ভেঙে যাওয়া কন্ঠে বললো-


পারি না বাবা।নিজেকে একদম সামলাতে পারি না।আমি মানুষ হয়ে একটা জানোয়ারের জন্ম দিয়েছি।যখনই ভাবি ওর লাশ আনতে যাবো।তখন'ই ওই ছোট্ট মেয়েটার অবয়ব সামনে ভেসে ওঠে।ওই মেয়েটা তো আমার আর্শির মতোই।আর্শির থেকেও অনেক ছোট ও।মাত্র এইটে পড়ে। সদ্য কিশোরী জীবনে পা দিতেই জীবন'টা শেষ করে দিল আমার জন্ম দেওয়া জানোয়ার'টা।


রাহুল আর কিচ্ছু বললো না।চুপ চাপ বের হয়ে গেল ঘর থেকে।বৃদ্ধ লোকটাকে আবারো নিজের কষ্টের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া তার উচিত হয় নি। 


রুমে ঢুকতেই দেখলো আর্শির পোশাক চেঞ্জ করা। আর আশেপাশে সোনালী ও নেই।খুব খিদে পেয়েছে তার। টেবিলে বসে খাবার মুখে দিতেই দেখলো দেয়ালের উপরে কয়েকটা কাগজ আটকানো।উপরের সাদা কাগজটার নিচ থেকে নিচের লাল অবয়ব টা চোখে বিধছে।কাগজ'টা উল্টাতেই দেখলো নিচের কাগজ টার উপর শুকিয়ে যাওয়া একটা লাল গোলাপ পেরেকের সাথে ঝোলানো।গোলাপ'টা সরাতেই কাগজে লেখা বড় বড় অক্ষর গুলো ভেসে উঠলো।


"আর্শি,তোকে প্রচুর পড়তে হবে।পরিক্ষায় পাস করতে হবে।নইলে পাভেল ভাই তোকে বিয়ে করবে না।সে বারবার লেখাপড়া নিয়ে তোকে সাবধান করেছে।তুই লেখাপড়া'টাকে পাভেল ভাই মনে করে হামলে পড় বইয়ে'র উপর।"


মুহূর্তে'ই হাসির চোটে খুক খুক করে কেশে উঠলো।একটা মেয়ে কতটা আবেগী হলে এমন বাচ্চামো করে।খেয়ে দেয়ে  রুমের লাইট নিভিয়ে চুপচাপ আর্শির পাশে এসে শুয়ে পড়লো। 


ঘড়ির ঘন্টার কাটা'টা তখন তিনটার ঘরে উপস্থিত হয়েছে।কানের মধ্যে অজস্র হাহাকার,চিৎকার, চেচামেচির আওয়াজের রেশ ঢুকছে।আচমকাই ধড়াস করে উঠে বসলো আর্শি।ঘরের লাইট জ্বলছে।লাইটের কড়া আলোয় চোখ যেন ঝলসে যাচ্ছে।বারকয়েক চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলে নিলো।ধীরে ধীরে কান্না,চিৎকারে'র আওয়াজ টা স্পষ্ট ভাবে কানে যাচ্ছে।আশেপাশে তাকাতেই ত্রস্ত পায়ে ভেতরে ঢুকলো রাহুল।আর্শি তার দিকে তাকিয়ে কয়েকবার পলক ঝাপটা  দিয়ে বললো-


কি হয়েছে ভাইয়া?সবাই এতো কাদছে কেন?আবার চিৎকার কেন হচ্ছে?


ঘুমন্ত আর্শির  পলক ঝাপটে ঘুম ঘুম কন্ঠে কথাগুলো শুনতেই থমকে দাড়ালো রাহুল।কেমন যেন ঘোর লেগে যাচ্ছে।পরক্ষণেই নিজেকে কড়াভাবে শাসিয়ে বললো-


নিরব হস্পিটালে বসেই মারা গেছে।এই আড়াইটার দিকে।


অবাক হয়ে আর্শি বললো-


নিরব ভাইয়া ও মারা গেছে।পরক্ষণেই বিরবির করে বললো"ভালোই হয়েছে।ওটাকে একদম সহ্য হয় না আমার❞।


রাহুল ভ্রু কুচকালো।সে স্পষ্ট"ই আর্শির কথা শুনতে পেরেছে।থমথমে কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো-


কেন?


ঘুমের রেশ এখনো কাটে নি আর্শির।উৎফুল্ল মনে রাহুলের দিকে তাকিয়ে বললো-


ওনার নজর খুব খারাপ।একদম চোখ দিয়েই গিলে খাবে মনে হয়।আমিতো ওনার সামনে খুব কম পড়ি।স্পর্শী আপু আসার পরে ওর দিকেও অনেক বাজে ভাবে তাকিয়েছিলো।


চোয়াল শক্ত হয়ে গেল রাহুলের। দাতে দাত পিষে দাঁড়িয়ে রইলো সেখানেই।আর্শি আলতো পায়ে বিছানা দিয়ে নামতেই পরিচিত রুমটাকে খেয়ালে এলো।সে এখানে কেন?এই অভিশপ্ত বাড়িতে আবার কেন নিয়ে আসা হয়েছে তাকে।ছলছল চোখে রাহুলের দিকে তাকিয়ে বললো-


আমরা না পাভেল ভাইদে'র বাড়িতে যাচ্ছিলাম।তাহলে এখানে কেন এসেছি?


চমকে তাকালো রাহুল।ধীর কন্ঠে বলল-


কিছুক্ষণ আগেই আমরা পিরোজপুরে পৌছেছি।এতো রাতে কোথায় যেতাম?তাই এখানে আসতে হয়েছে।সকাল হতেই আমরা এখান থেকে চলে যাব। 


চেচিয়ে উঠলো আর্শি।রাহুলের বলিষ্ঠ শরীর টার সামনে এসে আঙুল নাড়িয়ে দাতে দাত চেপে অশ্রুসিক্ত নয়নে বললো-


আপনাকে আমি বলেছিলাম না এই বাড়িতে আমি আর পা ও রাখবো না।তাহলে কেন নিয়ে এলেন আমাকে?


সাময়িক ভাবে হতভম্ব হয়ে গেল রাহুল।সামনে দাঁড়ানো এইটুকু শরীর'টা যাকে দেখতে হলে নুয়ে তাকাতে হয়,সে কিনা তাকে ধমকে কথা বলছে।হাস্যকর ব্যাপার।গা ঝাড়া দিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো-


পা তো রাখো নি।কোলে করে নিয়ে এসেছিলাম।প্রয়োজনে যাওয়ার সময়েও কোলে করে নিয়ে যাব।দরকার পড়লে ওয়াশ রুম অবধি ও তোমাকে কোলে করে দিয়ে আসতে পারি।কি যাবে?


বলেই চোখ টিপ মেরে দাত মেলে হেসে দিলো।আর্শি ভীষণ বিরক্ত এই মুহুর্তে। হতবাক হয়ে রাহুলের দিকে তাকিয়ে রইলো।সে যেতেই ঢুকরে কেদে ফ্লোরে বসে পড়লো।


এই রুমের,এই বাড়ির প্রতিটা কোনায় পাভেল ভাইয়ের স্মৃতি রয়েছে।কখনো এখানে লুকিয়ে,কখনো ওখানে লুকিয়ে কত্ত মেসেজ,কল,ভয়েস পাঠিয়ে জ্বালিয়েছে তার পাভেল ভাইকে।এমনি ডাইনিং টেবিলটার উপরেও ছোট করে P+A লিখে রেখেছে।ছাদ,কলেজের বেঞ্চ,বাড়ির দেয়াল,রুমের দরজা,কাগজ,বই খাতা সব জায়গায় তার পাভেল ভাই রয়েছে।কেন বুজতে চায় না রাহুল ভাইয়া।কেন?


মাথা ঝুকে কাদতে কাদতেই গায়ের দিকে চোখ পড়লো আর্শির।মুহুর্তে'ই চমকে উঠে দাড়ালো।সে তো এই পোশাক পরে আসেনি।তাহলে?তাহলে তার জামা কে বদলে দিলো?রাহুল ভাইয়া না তো।


নানা উনি তো এমন নয়।একটুও এমন নয়।তাহলে কে করলো আমার পোশাক চেঞ্জ?আচ্ছা ওনাকে কি জিজ্ঞেস করবো?মুহুর্তে 'ই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললো আর্শি।


.


.


.


.


.


.


★★★★

সকাল সাতটা।প্রেমাকে খাইয়ে তার চুল আচড়ে বেধে দিলো স্পর্শী।তারপর সামনে এসে হাত দুটো ধরে বলল-


প্রেমা,ভাবি একটু পিরোজপুরে যাচ্ছি।রাতের মধ্যেই চলে আসবো,ওকে।একদম ভয় পাবে না।নার্স রা আছে না। চাচ্চু ও তো এখানে আছে।তোমার ভাইয়া'কে তো পুলিশ নিয়ে গেছে।ওখানেই একটু যাবো আর আসবো।ওকে


প্রেমা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো।স্পর্শী সস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে দ্রুত কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো।আলতাফ উদ্দিন কে বুঝিয়ে বলে ব্যাস্ত পায়ে হস্পিটাল থেকে বেরিয়ে আসলো। ন'টার মধ্যেই তাকে থানায় পৌছাতে হবে।ঘন্টাখানেক আগেই সুমন তাকে ফোন দিয়ে নিরবের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে।নিরবের কারনে খারাপ না লাগলেও নেতামশাইয়ের কথা ভেবে বেশ ঘাবড়ে আছে স্পর্শী।দুটো খুন কি যথেষ্ট ছিলো না।এখন আরো একটা খুনের দায় পড়বে নেতামশাইয়ের উপর।থানায় পৌছাতে পৌছাতে সাড়ে ন'টা বেজে গেছে স্পর্শীর।সামনেই বড় রাস্তার মধ্যে সুমন সহ বেশ কিছু দলের লোক দাঁড়ানো।গোল হয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছে।


এখন এদের সাথে প্রত্যহ আলাপ-আলোচনায় মেতে থাকতে হবে স্পর্শীর।ভাবতেই কেমন অসস্তি হলো। তারপরেও নিজেকে সং;যত করে জোরপায়ে হেটে গেল তাদের মধ্যে।সুমন তাকে দেখতেই সামনে এগিয়ে এলো।ব্যাস্ত কন্ঠে বললো-


ভাবী,ইনস্পেকটর সাহেব তো দেখা করতে দিচ্ছে না।আমরা বেশ অনেকক্ষণ ধরে তাকে বোঝাচ্ছি।কিন্তু কিছুতেই রাজী হচ্ছে না।


স্পর্শী থমকালো।কিছুক্ষণ ভেবে বললো-


ঠিকাছে।আপনারা ওর দলের লোক তাই হয়তো দেখা করতে আপত্তি জানাচ্ছে।কিন্তু আমি তো ওনার স্ত্রী।নিশ্চয়ই  বাড়ির লোকদের বারণ করবে না।আপনারা এখানেই থাকুন আমি আসছি।


বলেই ত্রস্ত পায়ে ভেতরে ঢুকলো।স্পর্শীকে দেখেই এগিয়ে এলো ইনস্পেকটর।কিছুটা বিনয়ী কন্ঠে বললো-


দেখুন ম্যাডাম।এমপি সাহেব বর্তমানে তিন তিনটা খুনের আসামী।আরো দুজন অলরেডি হস্পিটালে এডমিট আছেন।আদোও আমরা জানি না সে দুজন বাচবে কিনা।একজন জনগণের প্রতিনিধির থেকে এমন টা সরকার কখনোই আশা করেন না।উপরমহল থেকে প্রচুর চাপ আসছে আমার উপর।প্লিজ আপনারা আমাকে এভাবে জোর করবেন না।আমার চাকরী নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে।ওনাকে আনার পর থেকে থানার সামনে লোকজনের ভিড় লেগেই আছে।রাতের মধ্যেই ওনাকে চালান করা হবে।এর মধ্যে কোনোভাবেই দেখা করা যাবে না,সে যেই হোক।অনুমতি নেই।প্লিজ আসতে পারেন আপনি।


স্পর্শী অনেক অনুরোধ করলেও শেষ পর্যন্ত ব্যার্থ হয়ে ফিরে আসতে হলো।চোখ দুটো টলমল করছে তার।এতো দূর থেকে কত আশা নিয়ে এসেছিলো নেতামশাই কে এক পলক দেখবে বলে।কিন্তু পারলো না।


নিজেকে ধাতস্থ করে পুনরায় চললো শিকদার মঞ্জিলের দিকে।গাড়ি থেকে নেমে বাড়িতে ঢুকতেই অবাক হয়ে গেল।সামনেই সোফার উপর পিয়াশা কে বসিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে চলেছে বিপাশা।আর পিয়াশাও তাকে ধরে কাদছে।খালামনিকে দেখে যেন পুনরায় ভেঙে পড়লো স্পর্শী।সব কষ্ট,ব্যাথা,যন্ত্রনা যেন অশ্রু হয়ে ঝরে পড়লো মা রুপি খালামনির উপর।ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করলো স্পর্শী।পিয়াশা অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলো।এই মেয়েটাকে তো এতো বিপদের মধ্যেও কখনো নিজ চোখে কাদতে দেখেনি।


বিপাশা দুহাত দিয়ে স্পর্শীকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিলো।এতোক্ষণে হুশ ফিরলো পিয়াশার। দ্রুত বেগে স্পর্শীর সামনে এসে প্রেমার কথা জিজ্ঞেস করলো-


আমার প্রেমা কোথায়?আমার মেয়ে?


--স্পর্শী শান্ত চোখে শাশুড়ীর দিকে তাকালো।ক্লান্ত কন্ঠে বললো-


ও হস্পিটালে আছে।চাচ্চু ও ওখানে আছে। আমাকে থানায় আসতে হয়েছিলো দেখে চলে এসেছি।বিকালেই আবার যাবো।


এতোক্ষণে পরশের কথাও মাথায় এলো পিয়াশার।কান্নারত অবস্থায় বললো-


আমার পরশের সাথে দেখা হয়েছে?


ফুপিয়ে উঠলো স্পর্শী।ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বললো-


নাহ,ওরা দেখা করতে দিলো না।রাতের মধ্যেই ওনাকে চালান দিবে।কাল -পরশুর মধ্যেই কেস আদালতে উঠবে।


থেমে,


আপনি চিন্তা করবেন না মা।যথেষ্ট চেষ্টা করবো আমি।


কথাগুলো বলেই উপরে নিজের রুমে দ্রুতপায়ে ছুটলো স্পর্শী।গোসল করতে হবে।


.


.


.


.


★★★★

সদ্য মাটি দ্বারা তৈরীকৃত কবর টি আকড়ে ধরে বসে আছে আর্শি।এ যেন তার পাভেল ভাইকেই জড়িয়ে ধরে বসে আছে।চেনা অনুভূতি,পরিচিত গন্ধ যেন সে পাচ্ছে।পাশেই রাহুল দাঁড়িয়ে আছে।আর্শির এই বোবা কান্না তার একদম সহ্য হচ্ছে না।নিজ স্ত্রী তার পুর্ব প্রেমিকের জন্য এতটা আকুল এ যেন সহ্য করতে বেশ কষ্ট হচ্ছে।হিংসারা দলা পাকাচ্ছে মনের ভেতর । প্রায় আধ ঘন্টা ধরে এখানেই বসে আছে তারা।সহ্যহীন হয়ে ধমকে উঠলো রাহুল।


-এতো কান্নাকাটির কি আছে বুঝলাম না।এবারে ওঠো।

ক্লান্ত,পরিশ্রান্ত,অসহায় টলমলে চোখ দুটো নিয়ে আর্শি রাহুলের দিকে তাকালো। কেমন খারাপ লাগলো তার। নিজেকে সং যত  করে রাহুল বললো-


মৃত মানুষের জন্য কাদতে হয় না আর্শি।এতে ওরা কষ্ট পায়।তার থেকে বরং তুমি ওর জন্য নামাজ পড়ে দোয়া করতে পারো।ও খুশি হয়, এমন কাজ গুলো করতে পারো।এই যেমন তোমার পাভেল পাই তোমাকে বারবার পড়ার জন্য চাপ দিতো।ক-দিন পরেই তোমার এক্সাম।অথচ তুমি পড়া তো দূর এক্সাম ও দিবে না।এতে তো কষ্ট পাচ্ছে ও।তুমি যদি এখন মন দিয়ে পড়াশোনা করে একটা ভালো রেজাল্ট করো।তাহলে তো পাভেল ই খুশি হবে তাই না।


কান্নারত অবস্থায় অস্পষ্ট কন্ঠে আর্শি মাথা উচুনিচু করলো।রাহুল অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে কবরের পাশ থেকে সরিয়ে নিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকলো।এ বাড়িতে রাহুলের স্ত্রী হিসেবেই তাকে পরিচয় দিয়েছে।এতো এতো বিপদের মধ্যে ঠিকভাবে কেউ খেয়াল করেনি তাকে।আর করলেও এতটা গুরুত্ব দেয় নি।


চলবে?


আগামী দু-পর্বের মধ্যেই অতীতকে শেষ করে বর্তমানে চলে আসবো।আপনারা খুবই উদগ্রীব বর্তমান কে জানার জন্য।আমিও খুব উদগ্রীব আপনাদের রেসপন্স এবং সুন্দর সুন্দর কমেন্টস পাওয়ার জন্য।ভালোবাসা💝