গল্প রাজনীতির_রংমহল পর্ব ২৬

 #রাজনীতির_রংমহল

#সিমরান_মিমি

#পর্বসংখ্যা_২৬


দ্রুতবেগে সকালের নাস্তা করে বাইক নিয়ে পার্টি অফিসের দিকে চললো পাভেল।এটা তার প্রতি দিনের রুটিন।আগে তো ভাইয়ের সাথে যেতো,এখন আর ভাই কাছে নেই বলেই নিজে দৌড়ায়।অনেক বড় মুখ করে পাচ দিনের জন্য সমস্ত দায়িত্ব কাধে নিয়েছে সে।অথচ ভাই যাবার পরের দিনই বিরোধী দলের সাথে মারপিট করেছে দলের সদস্য রা।এটা পরশের কানে গেলে যে ভীষণ ক্ষেপে যাবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত পাভেল।তাইতো আর যাতে কোনোরুপ ঝামেলা না বাধে সে জন্যই আগে ভাগে অফিসে ঢুকেছে সে।


বাইক পার্ক করে অফিসে ঢুকতেই দেখলো সুমন হাত-পা হেলিয়ে সোফায় শুয়ে আছে।সেই স্কুলজীবন থেকে আজ পর্যন্ত এই ছেলেটা পাভেল কে ছাড়ে নি।না তো তাদের বন্ধুত্ব কোনোভাবে নষ্ট হয়েছে। এমনকি পাভেল রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছে বলে সেও ছুটে এসেছে পাভেলের সাথে।জোরপায়ে হেটে সামনের চেয়ারে বসলো পাভেল। সুমনের দিকে ভ্রু উচিয়ে তাকিয়ে বললো-


তোর আবার কি হলো?ওমন ভেটকি মাছের মতো পড়ে আছিস কেন?


হতাশার সুর ধরে সুমন আনমনে বললো-


আর বলিস না ভাই,ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে গেছি।


কপাল কুচকে ফেললো পাভেল।তারপর দুম করে সুমনের পিঠের উপর কিল মেরে বললো-


তুই শালা প্রেম করিস।অথচ আজ অবধি আমাকে জানালি না।স্বার্থপর।


লাফ দিয়ে উঠে বসলো সুমন।সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো-


প্রেম আর করলাম কই।তার আগেই তো সম্বন্ধির বাচ্চা বিয়ে দিয়ে দিল আমার বাচ্চা বউটাকে।ওই সোভাম শালা টা যে এত্তো খচ্চর হবে কে জানতো?আগে জানলে তো,আর্শিকে কলেজ যাওয়ার পথেই তুলে নিয়ে আসতাম।


স্তব্ধ হয়ে গেল পাভেল।মুহুর্তেই দাঁড়িয়ে পড়লো।পুরো মাথাটা ফাকা ফাকা লাগছে তার।সে কি ভুল কিছু শুনেছে।পুনরায় উত্তেজিত হয়ে সুমনের দিকে তাকিয়ে বললো-


এসব কি বাজে কথা।আর্শির বিয়ে হয়েছে মানে কি?ওর তো ক-দিন পরেই পরিক্ষা।ধুরর!তুই মজা করছিস আমার সাথে।


বিরক্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো সুমন।তারপর ত্যাড়া কন্ঠে বললো-


হ,তুই তো আমার বেয়াই লাগিস। তাই তো মজা করি।ধুর বা*ল আমি বাচি না আমার জ্বালায় আর তুই মজা নিচ্ছিস।ওর ওই সৎ ভাই, সোভাম কু*ত্তা টায় জোর করে বিয়ে দিয়ে দিছে আর্শিকে।ওই লিট্টি ইদুর টাও নাকি অন্যকারো সাথে প্রেম করতো।সেখানেই ধরা খাইছে।তাই বিয়ে দিয়ে দিছে।আর্শি তো এখন ওর শশুড় বাডিই আছে, ঢাকায়।


ধপ করে চেয়ারের উপর বসে পড়লো পাভেল।তাহলে এটাই কি আর্শির ফোন না ধরার কারন ছিলো।উফফফ!বুকের ভেতরটা যন্ত্রনায় ছিড়ে যাচ্ছে।আর্শি কি করে বিয়ে করতে পারলো?কি করে অন্যকারো সংসারে যেতে পারলো তাকে ছেড়ে।এই কি ভালোবাসা।না না,আর্শি এমনটা করতে পারে না।ওকে জোর করেছে সোভাম।নাহলে ও কিছুতেই তাকে ঠকাতে পারে না।নিজেকে খুব কষ্টে সংযত করলো পাভেল।দম নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার।জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে সুমনকে বললো-


তুই এতোসব জানলি কি করে?কই আর কেউ তো কিচ্ছু জানে না।সাবেক এমপির মেয়ের বিয়ে আর কেউ জানবে না,এটা কি করে হয়।


ক্ষেপে গেল সুমন।বললো-


আরে বাবা তোর কি মনে হয়, আমি মিথ্যা বলবো। ওদের বাড়ির দারোয়ান মফিজ চাচাতো আমাদের বাড়ির পাশেই থাকে।ওর থেকেই আমি আর্শির সব খবর নেই।আর বিয়েটা গোপনে হয়েছে ঘরোয়া ভাবে। তাই কেউ জানে না।


শান্ত হয়ে বসলো পাভেল।পুনরায় বললো-


সোভাম এখন কোথায় থাকতে পারে জানিস কিছু?


ভাবলেশহীন ভাবে কাধ উচিয়ে সুমন বললো-


কোথায় আবার?হয় ওদের পার্টি অফিসে নয়তো ক্লাব ঘরে।


চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো পাভেল।ছোট্ট করে বললো-


এদিক টা দেখিস।আসছি আমি।


বলেই নিচে নামলো।বাইকে উঠে এক টানে সোভামদের পার্টি অফিসের সামনে গেল।কিন্তু হতাশ হয়ে পুনরায় বাইকে উঠলো।অফিসের গেটে তালা লাগানো।হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সাড়ে আটটা মাত্র।হয়তো এতো তাড়াতাড়ি আসে নি।এবারে ক্লাব ঘরের উদ্দেশ্যে যেতে লাগলো পাভেল।বুকের ভেতরটা যেন দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।কলিজা টা কেউ ছিড়ে দু টুকরো করে ফেলেছে।বারবার মন বলছে আর্শি কি একবার ফোন দিয়ে তাকে জানাতে পারতো না।পুনরায় সকল দোষ,ক্ষোভ গিয়ে সোভামের উপরে মজলো। ওই জানোয়ার টা জোর করেছে আর্শিকে। হয়তো মেরেছেও।ওকে তো ছাড়বে না পাভেল।


.


.


.


.


.


★★★★★

ভাই,ওরে তো আমি স্কুলে আনা নেওয়া করি। বাড়ির সবাই ওরে না দেইখা আমারে যখন জিজ্ঞাস করবে তখন কি বলবো?


ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠে সুজন সোভামকে বললো। পাশেই চিন্তিত অবস্থায় নিরব বসা।সোভামের উদ্দেশ্যে বললো-


ভাই,এইটারে কি মাইরা এই জঙ্গলেই কোথাও পুইতা রাখবো।


সামান্য বিরক্ত হলো সোভাম।সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগছে সে।ধমক মেরে সুজনকে বললো-


নিয়া আসার আগে মনে ছিলো না বাড়িতে কি জবাব দিবি।ধুর! 


পাশ থেকে ক্লান্ত হয়ে মাটিতে বসে থাকা আরিফ বললো-


আরে এইটা কোনো ব্যাপার হইলো।মাইরা কোথাও একটা পুইতা রাখবা।তারপর সুজন ভাই সোজা বাড়িতে চইলা যাবা।তারপর চিন্তার ভান কইরা বলবা প্রেমা তো প্রাইভেটে ঢুকলো তারপর আর বাইর হইলো না।অনেক খুজছি পাই নাই।ব্যাস।


.


.


.


★★★

নিস্তেজ হয়ে সামনের ঘরে পড়ে আছে প্রেমা।হাত মুড়িয়ে পিঠের দিকে বাধা।আর মুখেও সেই আগের মতোই ক্রোস বেল্ট দিয়ে বাধা রয়েছে। পেছনের ঘর থেকে আসা কথাবার্তা গুলো কানে বাজছে তার।দু চোখ দিয়ে স্রোতের ন্যায় গরম জল গড়িয়ে পড়ছে।সে তো বাচতে চায়।মৃত্যুকে ভীষণ ভয় পায়। সারা শরীর অবশ হয়ে আছে।সামান্য নড়াচড়াও করতে পারছে না।মাটির উপর অতি কষ্টে গড়াতে গড়াতে দরজার সামনে এলো। চাপানো রয়েছে দরজা মাথাটা সামনের দিকে এলিয়ে কাঠের দরজাটা কে অতি কষ্টে সামান্য খুললো।পুনরায় গড়িয়ে বাইরে আসতেই উচু মাটির পিড়া থেকে ধুপ করে জঙ্গলের শুকনো পাতার উপর পড়লো।


বাইক রাস্তায় পার্ক করতেই অবাক হয়ে গিয়েছিলো পাভেল।তাদের গাড়ি এখানেই পার্ক করা। এটা তো সুজন চালায়। আর নিয়ম অনুসারে প্রেমাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া -আসা করার কথা।কিন্তু এই গাড়ি এখানে কেন?


রহস্য ভেদ করতে না পেরে কৌতুহল বশত ক্লাবের সামনে আসছিলো পাভেল। ধুপ করে কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজে সামনে তাকাতেই দেখতে পেল মুখ থুবড়ে পড়া কোনো মেয়েকে।আরেকটু সামনে এগিয়ে মাথাটাকে তুলতেই দিগবিদিক হারিয়ে ফেললো পাভেল। এটাতো প্রেমা।ভালো করে তাকাতেই চমকে উঠলো পাভেল।মাথায় বজ্রপাতের ন্যায় অদৃশ্য কিছু পড়লো।শুধুমাত্র স্কুলের ইউনিফর্মের নীল রঙা ফ্রক টা গায়ে প্রেমার।আর কিচ্ছু নেই।পুরো নীল জামাটা লাল রক্তের স্রোতধারায় কালো বর্ণ ধারন করেছে।হাত -মুখ বাধা অবস্থায় এভাবে নিজের ছোট্ট বোনটাকে দেখে নিজেকে সামলাতে পারলো না। ঝরঝর করে দুচোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল।দ্রুত হাতের বাধন আর মুখের বাধন খুললো।দুহাত দিয়ে বোনকে তুলে বুকে জড়িয়ে ধরে কিছু বলতেই মুখ চেপে ধরলো প্রেমা।


নিভু নিভু চোখে ভাইকে দেখতেই ঠোট ভেঙে কেদে দিলো।নিঃশব্দের সেই কান্না।চেষ্টা করলেও কন্ঠনালি ভেদ করে কোনো আওয়াজ বের করতে পারছে না প্রেমা।পাভেল প্রায় পাগলের মতো করছে।মাথা শূন্য হয়ে গেছে তার।পুনরায় কে এমনটা করেছে জানার উদ্দেশ্যে প্রেমাকে ধরতেই নিস্তেজ হয়ে গেল সে।দিকবিদিকশুন্য হয়ে কোলে তুলে নিয়ে রাস্তার দিকে দৌড় দিল পাভেল।হস্পিটালে নিতে হবে ওকে।বাইকের সামনে আসতেই নিজের প্রতি ধিক্কার জানালো। আজ কেন গাড়ি নিয়ে আসলো না।বাইকে করে কিভাবে যাবে সে।পাশের গাড়িটাও লক করা।


পাগলের মতো রাস্তা দিয়ে দৌড়াতে লাগলো।কাপা কাপা কন্ঠে চেচিয়ে বোনকে ডাকতে লাগলো।কিন্তু প্রেমা নিরুত্তর,নিস্তেজ,জ্ঞানহীন।হয়তো এতক্ষণে ভরসার কোনো হাত পেয়েই তার কাছে নিজেকে শপে দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে সে।


কিছুদুর যেতেই সামনে ট্যাক্সি পড়লো। দ্রুতবেগে গাড়িতে উঠেই হস্পিটালে যাওয়ার আদেশ করলো।ট্যাক্সির মধ্যে বসা এক মহিলা দ্রুত ব্যাগ থেকে ওড়না বের করে পেচিয়ে দিল প্রেমার নগ্ন পা দুটো।পাভেল একবার রাস্তার দিকে চাইছে তো একবার বোনের দিকে চাইছে।দুচোখ দিয়ে অবিরতভাবে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।মাথাটা নিচু করে প্রেমার দু গালে দুটো চুমু খেয়ে বললো-


ভাই আছে না সোনা।কিচ্ছু হবে না।এই তো এক্ষুনি সব যন্ত্রনা কমে যাবে।


দশ মিনিট অতিবাহিত হতেই স্থানীয় সদর হাসপাতালের সামনে ট্যাক্সি থামলো।দ্রুত প্রেমাকে কোলে নিয়ে দৌড়ে ভেতরে গেল পাভেল।স্ট্রেচারে শুইয়ে দিতেই ডক্টর নার্সে একাকার হয়ে গেল।খুব কমই এসব এলাকায় ধর্ষনের মতো জঘন্য অপরাধ কম হয়।


একটু আগেই প্রেমাকে ওটিতে নেওয়া হয়েছে। ধপ করে ফ্লোরের উপর বসে পড়লো পাভেল।গা ছেড়ে দিচ্ছে তার।ইচ্ছে করছে সেও অজ্ঞান হয়ে যাক।ভাইকে কি জবাব দেবে সে।এতো বড় জোয়ান বড় ভাই থাকতেও ছোট্ট একটা বোনকে রক্ষা করতে পারলো না।কি হবে এই রাজনীতি,ক্ষমতা দিয়ে।যেখানে তার ছোট্ট বোনটাই সারাজীবন ভুগতে থাকবে নিজের সম্ভ্রম হারানোর দায়ে।এত ব্যাস্ত কেন ছিলো সে?এই ব্যাস্ততার জন্যই তো আজ এমন হলো।সে কি পারতো না বোনটাকে স্কুলে নিয়ে আসার কাজ করতে।কেন করলো না এমন।দুহাতে মাথার চুল খামচে ধরলো পাভেল।


বাড়ির কথা মনে পড়তেই দ্রুত ফোন করলো বাবাকে।রিসিভড সাথে সাথে কেদে দিয়ে বললো-


আব্বু,আব্বু তাড়াতাড়ি সদর হাসপাতালে আসো।এক্ষুনি,মাকে নিয়ে আসবা।


এতোক্ষণে প্রেস মিডিয়ার মানুষে পুরো হাসপাতাল কিলবিল করছে।অসংখ্য মানুষের আনাগোনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিরক্ত হয়ে পড়েছে।মা-বাবা,চাচা আসা মাত্রই পাভেল উঠে দাড়ালো।তাদের সামনে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস যে পাভেলের নেই।কারো সাথে কোনো প্রকার কথা না বলেই বেরিয়ে গেল হাসপাতাল থেকে।


চলবে?

গল্প রাজনীতির_রংমহল পর্ব ২৫

 #রাজনীতির_রংমহল

 #সিমরান_মিমি

 #পর্বসংখ্যা_২৫


রাত তখন বারোটা।চারপাশ নিস্তব্ধ। সব রুমের লাইট অফ থাকলেও রাহুলের রুমে তখনো আলো জ্বলছে।সারা দিন জার্নি করে এসে ভীষণ মাথা ধরেছে।বাইরে থেকে এসে খেয়েই রুমে এসেছে শুতে।খাটের মাঝখানে আর্শি শুয়ে আছে।রাহুল কিছুক্ষণ ইতস্তত বোধ করলো।রুমে কোনো সোফা নেই যে সেখানে শোবে।এটা তো মুভি নয় যে সে ছুটে গিয়ে ফ্লোরে শোবে।

তার রুম,তার বাড়ি, তার খাট  ঘুমোলে সে খাটেই ঘুমোবে।আর্শি চুলোয় যাক।তাতে তার কি?

ধীর পায়ে হেটে খাটের এক কোনায় গেল।আলতো করে বিছানায় পা উঠিয়ে টান টান হয়ে শুয়ে পড়লো যেন আর্শির গায়ে টাচ না লাগে।মাঝখানে শোওয়ার কারনে দুপাশে বেশ কম জায়গা।তার মধ্যেই নিজেকে মানিয়ে নিয়ে কাত হয়ে শুয়ে পড়লো রাহুল।প্রায় পাচ মিনিট অতিবাহিত হতেই রাহুলের চোখ লেগে গেল।ঘুমের ঘোরে কোলবালিশ ভেবে রাহুলের গায়ের উপর পা তুলে দিল আর্শি।মুহূর্তেই ৪৪৪ বোল্ডের ঝটকা খেয়ে লাফ দিয়ে উঠলো রাহুল।ফিরে তাকাতেই দেখলো একটা বাদামী রঙের পা তার গায়ের উপর।কাপা কাপা হাতে পা টা ধরে সরিয়ে দিয়েই লাফ দিয়ে খাট থেকে নামলো।গায়ের শাড়ি উপরে উঠে হাটু বেরিয়ে গেছে আর্শির।রাহুল ছুটে আলমারির কাছে গেল। পাতলা একটা চাদর হাতে নিয়ে দূর থেকেই ছুড়ে মারলো আর্শির গায়ের উপর।


পরপর কয়েকবার খাট নড়ায়,গায়ের উপর কিছু পড়ায় ঘুম আলগা হয়ে গেল আর্শির।বারকয়েক খুলতে গিয়েও চোখ বন্ধ করে নিল সে। মাথা টা প্রচুর ধরে আছে। বেশ কষ্ট করে তাকাতেই সামনের সাদা দেয়াল চোখে পড়লো।বারকয়েক চোখে ঝাপটা দিয়ে পলক ফেললো। পুরো অচেনা লাগছে সবকিছু তার কাছে।আশে-পাশে তাকাতেই ফ্লোরের উপর বুক ফুলিয়ে দন্ডায়মান রাহুলকে লক্ষ করলো।অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো আর্শি।মস্তিষ্কে চাপ দিতেই মনে পড়লো তার বিয়ের কথা।ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে কবুল বলার কথা। তাহলে তার বিয়ে হয়ে গেছে বড় ভাইয়ের বন্ধুর সাথে।মুহুর্তে'ই দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে ঢুকরে কেদে উঠলো।


রাহুল এতোক্ষণ ধরে আর্শির দিকে তাকিয়ে লক্ষ করলেও হঠাৎ কান্না করায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল।নিজেকে ধাতস্থ করে কন্ঠে জোর এনে হাক ছেড়ে মাকে ডাকলো-


ওমা,এদিকে আসো তো।ওর ঘুম ভেঙেছে।


শুয়েই ছিলেন বিপাশা।নানা চিন্তায় ঘুম ধরা দিচ্ছিলো না চোখে।মেয়েটা সেই যে ঘুমন্ত অবস্থায় এসেছে আর ওঠে নি।সে নিজেও আর্শির জন্য না খেয়ে বসে আছে।রাহুল আর রহমান সাহেব খেয়েছে মাত্র।মশারি তুলে খাট থেকে নেমে জুতো পড়লো বিপাশা।তারপর ধীর পায়ে রাহুলের রুমে আসতেই ঘাবড়ে গেলেন। আর্শি কাদছে।ছুটে খাটে বসলেন তিনি।দুহাত দিয়ে আর্শিকে আগলে বুকে নিয়ে বললেন-


এই আর্শি, কাদছো কেন মা?


আর্শি এবারে চাইলো বিপাশার দিকে।তারপর অবাক হয়ে বললো-


ভালো আনটি,আপনি এখানে কেন?


অবাক হয়ে গেল বিপাশা।হেসে বললো-


আমি তাহলে কোথায় থাকবো?পাগল মেয়ে এতোক্ষণ ঘুমিয়ে কি আবোল তাবোল বলছো।এতো ঘুমায় কেউ।ঘুমের ওষুধ খেলেও তো এতো ঘুম হয় না।


আর্শি অবাক হয়ে চারদিকে তাকালো।তারপর আবার বললো-


এটা আপনাদের বাড়ি?


হ্যা মা।


তাহলে আমি এখানে কেন?


অবাক হয়ে গেল বিপাশা।সাথে রাহুল ও ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো।বিপাশা সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলোলো-


তুমি এখানে কেন মানে কি?এটা তোমার স্বামীর বাড়ি,তোমার ও বাড়ি।রাহুল তোমার স্বামী।রাহুলের ঘর মানে তোমার ও ঘর।এতো অবাক হওয়ার কি আছে?


ছিটকে দূরে সরে দাড়ালো। ভীত সন্ত্রস্ত কন্ঠে বললো-


না না,আপনার ভুল হচ্ছে।আমার সাথে তো ওই মন্ত্রীর ছেলের বিয়ে হয়েছে। 


ভ্রু কুচকে ফেললো রাহুল।চটপটে কন্ঠে বলল-


এই মেয়ে, এতো ঢং করছো কেন?কবুল বলার আগে খেয়াল ছিলো না কাকে বিয়ে করছো?আরাফের সাথে তোমার বিয়ে ভেঙেছে। তাই তোমার বাবা আমার সাথে বিয়ে দিয়েছে।এখন তুমি ঢাকায় আছো।


চমকে গেল আর্শি।এতোকিছু কখন হলো।মাথায় ই তো ঢুকছে না।শুধুমাত্র কবুল বলেছে সেটুকুই মনে আছে।উফফফ মাথা যন্ত্রনা করছে খুব।ঢুকরে কেদে উঠতেই বিপাশা দুহাতে চিন্তিত ভঙ্গিতে আগলে ধরলো।তারপর জিজ্ঞেস করলো-


তোমার বিয়ে কার সাথে হচ্ছে তা তুমি জানো না?কার নামে কবুল পড়েছো তুমি তাও জানো না।এই রাহুল,এটা কেমন বিয়ে করেছিস,ওতো অন্যকারো নামে কবুল পড়েছে।এটা কেমন বিয়ে।লোকজন শুনলে তো ছি ছি করবে।এই আর্শি,তোমার কিচ্ছু মনে নেই নাকি?


আর্শি ফোপাতে ফোপাতে জড়িয়ে ধরলো ভালো আনটিকে।স্পর্শী আপুকে খুব ভালোবাসে এই মহিলা,তাহলে তাকে খারাপ কেন পাবে। তাকেও ভালোবাসবে।নিজেকে পুরোদমে নিংড়ে কাদতে লাগলো আর্শি। বললো-


আন্টি,ভাইয়া আর আব্বু জোর করে আমাকে বিয়ে দিতে চেয়েছে ওই আরাফ নামে ছেলেটার সাথে।আমাকে মেরেছেও।ভয়ে রাজি হয়ে গেছিলাম। কিন্তু আমার কিচ্ছু মনে নেই।আমার খুব ঘুম পাচ্ছিলো।মাথা যন্ত্রনা করছিলো সবার কথা শুনতে শুনতে।আমাকে সবাই কবুল বলার জন্য জোর করছিলো বারবার তাই বলে দিয়েছি।আমি কাউকে বিয়ে করবো না।আমি তো পাভেল ভাই.........


কান্নায় ভেঙে পড়লো পুনরায়৷কিভাবে যোগাযোগ করবে সে তার পাভেল ভাইয়ের সাথে।একটু কথা বলবে সে।


বিপা শা রাহুলের দিকে তাকিয়ে বললো-


আমি তোর বাবাকে বলছি কাজি নিয়ে বাড়ি আসতে। কালকেই বিয়ে পরাবো ঘরে  বসে।এটা কোনো বিয়ে হলো,জোর জবরদস্তি করে কি বিয়ে হয়।পাড়া-প্রতিবেশী শুনলে হাসাহাসি করবে।


আর্শি নিশ্চুপ হয়ে দুহাত দিয়ে পেট চেপে ধরে আছে।চোখ দিয়ে অনর্গল অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।বিপাশা সেদিকে চাইতেই বুঝে গেল।জোর পায়ে হেটে বাইরে রান্নাঘরে এলো।প্লেটে খাবার বেড়ে নিয়ে গেল আর্শির রুমে।আদুরে কন্ঠে বললো


খিদে পেয়েছে? 


ঠোট ভেঙে কেদে দিয়ে বললো-হুম,


আচ্ছা আমি খাইয়ে দিচ্ছি(হেসে দিয়ে বললো বিপাশা)


রাহুলের মাথা ধরে এসেছে।চোখ ভেঙে ঘুম আসছে।শেষে কাউকে কোনোরুপ পাত্তা না দিয়েই দপদপ করে বিছানার একপাশে উঠে শুয়ে পড়লো।


পেটে খিদে থাকলে দিন দুনিয়ার হুশ থাকে না।আর্শির খাওয়া শেষ। প্লেট হাতে নিয়ে বিপাশা বললো-


তুমি ঘুমিয়ে পড়ো,আমি তাহলে যাই।সকালে কথা হবে।


আর্শি এবারে কান্নায় ভেঙে পড়লো পুনরায়। রাহুল বা আরাফ এদের দুজন'ই এক আর্শির কাছে।আরাফের সাথে বিয়ে হলে যতটা দুঃখ পেতো, রাহুলের সাথে বিয়ে হওয়ায় ও ঠিক ততটা দুঃখ পেয়েছে।এরা তো আলাদা নয়।দুজনই অন্য পুরুষ। কিন্তু সে তো তার পাভেল ভাইকে চেয়েছে।কি করবে এবারে সে।এদের কাছে বলবে যে "সে পাভেল কে পছন্দ করে,রাহুল ভাইয়ের সাথে সংসার করতে পারবে না"। কিন্তু তাহলে তো এই খবর আবার সোভাম ভাই,বাবার কানে যাবে।তারা আবার আসবে।আর্শিকে জোর করবে,গায়ে হাত তুলে বাধ্য করবে এই সংসার করাতে।কিন্তু আর্শির যে এতো কিছু করার সাহস নেই।যদি থাকতো,তাহলে এই বিয়ে থেকেই মুক্তি পেতো।


পুনরায় মাথা চেপে ফ্লোরে বসে পড়লো আর্শি।কি করা উচিত তার?আচ্ছা,সে কি এখান থেকে পালিয়ে যাবে তার পাভেল ভাইয়ের কাছে।হ্যা হ্যা,তাহলে আর কেউ খুজে পাবে না। এরকম টা ভেবেই হাসি হাসি মুখ নিয়ে বিছানার কাছে এলো।উঠে বসতেই ওপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে রাহুল বলে উঠলো-


এই শাড়ি টাড়ি চেঞ্জ করে তারপর ঘুমাবে।সামলাতে জানে না আবার শাড়ি পড়তে এসেছে(বিরবির করে)


আর্শির নিজের ও অসস্তি লাগছিলো শাড়ি পড়ে।রুমের এক কোনায় ব্যাগ রাখা।ধীর পায়ে হেটে গিয়ে ব্যাগ খুললো।নিজের এক সেট থ্রি পিস বের করে আবার খাটের সামনে এলো।আমতা-আমতা করে বললো-


বাথরুম কোথায় ভাইয়া?


চমকে মাথা তুললো রাহুল। নিজেকে ধাতস্থ করে বললো-


রুম থেকে বেরিয়ে ডান কোনায়।


মাথা হেলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আর্শি।চেঞ্জ করে নাকে মুখে পানির ঝাপটা দিলো।স্থির হয়ে কিছুক্ষণ আয়নার দিকে তাকিয়ে রইলো।কালকে যেভাবেই হোক আগে পাভেল ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।তারপর পালাতে হবে।

অনেক কিছু ভেবে চিনতে শেষে রুমে গিয়ে বিছানার এক কোনায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লো।


.


.


.


.


★★★★

সকালের স্নিগ্ধ আলো পুরো পৃথিবী টাকে শান্তিময় করে রেখেছে।আশে পাশে হাটলেই মুহুর্তের মধ্যে অন্তর জুড়িয়ে যাচ্ছে লোকেদের।স্কুলের ইউনিফর্ম পড়ে কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে সিড়ি দিয়ে নামলো প্রেমা।এখান থেকে সোজা সে প্রাইভেট পড়তে ম্যামের বাড়ি যাবে। টানা দু ঘন্টা পড়ে সেখান থেকে স্কুলে যাবে।পিয়াশা বেগম দুপুরের টিফিন এবং সকালের নাস্তা ব্যাগে ভরে দিয়েছে।মায়ের রান্নাঘরের সামনে গিয়ে একবার উকি দিয়ে পুনরায় সদর দরজার দিকে গেল।প্রতিদিন মাকে ডেকে "আম্মু আমি স্কুলে যাচ্ছি" এটা বলা বাচ্চাদের কাজ।সে তো অলরেডি চৌদ্দ বছরের বালিকা।ভীষণ বুঝদার এবং বুদ্ধিমতী সে। তাইতো একঝলক দেখেই চুপচাপ চলে যায়।গেটের সামনে আসতেই দেখলো গাড়ি নিয়ে সুজন ভাই আগে থেকেই অপেক্ষা করছে।মিষ্টি করে অন্যদের মতো হাসলো না সে।এটা তার ব্যাক্তিত্বের বাইরে পড়ে।গম্ভীর মুখশ্রী নিয়ে গাড়িতে উঠে সুজনের উদ্দেশ্যে বললো-


রায় বাড়িতে চলুন সুজন ভাইয়া।

ছোটখাটো এই আদেশ শুনে গাল ভরে হাসলো সুজন।তারপর কোনোরুপ বাক্যব্যায় না করেই হাড়ি স্টার্ট  দিল।পনেরো মিনিটের মধ্যেই ইংলিশ ম্যাডাম কিরণ প্রভা রায়দের বাড়ির সামনে হাজির হলো।দ্রুতপায়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে গেটের ভেতরে ঢুকে গেল প্রেমা।


ক্রিং ক্রিং ক্রিং শব্দে দানবীয় ফোনটা বেজে উঠলো।পকেট থেকে ফোন বের করে সেদিকে তাকাতেই চওড়া হাসি ফুটলো সুজনের।রিসিভড করে লাউড স্পিকারে দিয়ে কানে তুলতেই ওপাশ থেকে রাগী কন্ঠে লোকটি বলে উঠলো- 


ওরা জাফলং গেছে,আর তুই এখনো এখানে বসে ঢ্যাং ঢ্যাং করে ঘুরছিস।এই জন্য মাস শেষে তোকে টাকা দেই আমি।


হাস্যজ্জ্বল মুখশ্রী এতোক্ষণে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।শান্ত কন্ঠে সুজন বললো-


ভাই,আমি যাইতে চাইছিলাম।আপনার বইনেই ক্যাচাল বাজাইছে।বডিগার্ড নেবে না।তারপর আর নিলো না আমারে।


দাতে দাত চেপে বিশ্রী এক গালি দিল সোভাম।সুজন পুনরায় বললো-


ভাই,এইবার আপনার হুকুম পাই আর না পাই ওই পরশ শিকদাররে সত্যি সত্যিই উপরে পাঠাইয়া দিব আমি।আর সহ্য হয় না।সারাক্ষণ বডিগার্ডের মতো খাটায়।আর দিনশেষে সবাইকে বলে ভাইয়ের চেয়েও বেশী ভালোবাসে আমায়।বা*ল ভালো বাসে।মাসের শেষে আঠারো হাজার টাকা ধরাইয়া দেয়।নেহাত ভাই আপনি ছিলেন,নইলে এতো টাকা কোথায় পাইতাম।


তৃপ্তির হাসি হাসলো সোভাম। তারপর বললো-


কি ভাবে মারবি?ও এখন এমপি সামান্য তম ক্ষতি হইলেও পুলিশ প্রথমে আমারে সন্দেহ করবে।


বাকা হাসলো সুজন।বললো-


সেটা নিয়া আপনার ভাবতে হইবে না।বেশী কিছু করবো  না।শুধুমাত্র এবার ঘুইরা ফিরুক।তারপর ঢাকা যাওয়ার সময়ই আসল কাজ টা করবো।


ওপাশ থেকে উত্তেজিত হয়ে সোভাম বললো


কি করবি তুই?


--ব্যাস বেশী কিছু না।ওর গাড়ি আছে তো আমার আন্ডারে।এমন ব্যাবস্থা করে দিব যাতে সবাই ভাবে রোড এক্সিডেন্ট করছে।


কথাটা বলে পিছনে ফিরতেই ঘাবড়ে গেল সোভাম।তার থেকে এক হাত পেছনেই চোখ বড় বড় করে দাঁড়িয়ে আছে প্রেমা।সুজনকে পেছনে ফিরতে দেখে আরো রেগে গেল সে।গাড়িতে মামপট ফেলে গেছিলো। সেটা নিতে এসেই এমন ঘটনার সম্মুখীন হয় সে।রেগে চেচিয়ে উঠে বললো-


আপনার সাহস তো কম নয়।আমার ভাইয়ের খেয়ে পড়ে ওকেই মারার প্লান করছেন।আপনি জানেন, এটা ভাইয়াকে বললে ঠিক কি অবস্থা করবে আপনার। 


ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা সূজনের। একটুর জন্য ভুল হয়ে গেল তার।গাড়ির ভেতর থেকে মাম পট আনতে ঢুকতেই ভয়ের চোটে দরজা বন্ধ করে সুজন।আতকে উঠলো প্রেমা।চিৎকার করতেই গায়ের ক্রোস বেল্ট টেনে খুলে মুখ বেধে দিল সুজন।দ্রুত ড্রাইভিং সিটে বসে বেখেয়ালে গাড়ি চালাতে লাগলো।এখন ঠিক কোথায় যাবে,কি করা উচিত ভাবতেই  সোভামদের ক্লাব ঘরের কথা মনে পড়লো।দ্রুত সেদিকে গাড়ি ঘুরিয়ে চললো।


বিস্তীর্ণ এক জঙ্গল।বাজার থেকে অনেকটা দূরে মেইন রোড থেকে খানিকটা দূরে একটা টিনের ঘর। এদিকে লোকজনের আনাগোনা বেশ কম। রাত-দিন কিশোর-জোয়ান ছেলেরা এই ক্লাব ঘরে বসে জুয়া খেলে, তাস খেলে,মদ গাজা খায়।দশ মিনিটের মাথায় সেখানে আসতেই গাড়ি খুলে প্রেমাকে কাধে নিয়ে ক্লাবের দিকে হাটতে লাগলো। জোর -জবরদস্তি করে মুখ বাধায় বেশ ব্যাথা পাচ্ছে প্রেমা।যন্ত্রনায় চোখ  টলমল করছে তার।এটা কি সেই সুজন ভাই। যাকে দেখে এই টুকু বয়সে হৃদয়ে আবেগের ঘনঘটা দেখা দিয়েছিলো প্রেমার। এটা কি সেই সূজন যাকে একপলক দেখার জন্য ভাইকে অন্য বডিগার্ড দের বাদ দিয়ে নিজের স্কুলে যাওয়া -আসার দায়িত্ব  সুজন ভাইকে দিতে বলেছিলো। অন্তরের অদৃশ্য ব্যাথা,মুখের যন্ত্রনা সব মিলিয়ে ছোট্ট শরীর টা প্রায় নিস্তেজ হয়ে এসেছে।


দুই রুমের টিনের ঘরটার পেছন দিক দিয়ে সুজন প্রেমাকে নিয়ে উঠলো।কাধ থেকে মাটির উপর ছোট্ট শরীর টাকে একপ্রকার ছুড়ে মারলো।পাশেই খাটের উপর নিরব, সোভাম এবং আরো একটি ছেলে আধশোয়া অবস্থায় ছিলো। বাবার হাতে থাপ্পড় খেয়ে রাগে দুঃখে কাল ক্লাব ঘরে  এসেছে সে।প্রতি দিনের তুলনায় সারা রাত ধরে আরো বেশী নেশা করেছে।সোভামের সামনে দাঁড়িয়ে হাপাতে হাপাতে সুজন বললো-


ভাই এই সাপটায় সব শোনছে।ওর ভাইয়ের কাছে বইলা দিলে আমি তো শেষ ই আপনিও বাচতে পারবেন না।আপনার সাথে আমার যোগাযোগ আছে এইটা জানতে পারলেই এর আগে যতবার পরশের উপর আক্রমণ হইছে সব গুলায় আমাগো ধইরা নিবে।কি করবো এরে।


মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া প্রেমাকে এক ঝলক দেখে নিলো সোভাম।নেশাগ্রস্ত চোখ দুটো দিয়ে বারকয়েক তাকিয়ে সুজনকে বললো-


একবার কোনোমতে আমার উপর কেস হইলে সারাজীবনে আর ভোটে দাড়াতে হবে না।আমি তো আমার সপ্ন এভাবে নষ্ট করতে পারবো না।ওর শ্বাস টা বন্ধ করে দে।


আতকে উঠল প্রেমা।বাধা মুখ নিয়ে ভয় পেয়ে গোঙাতে লাগলো বারবার। কষ্ট করে উঠে দাঁড়িয়ে দৌড় দিতেই সুজন দুহাত দিয়ে পেচিয়ে ধরলো।নিরব নেশাক্ত চোখে প্রেমার দিকে তাকালো।গায়ে ক্রোস বেল্ট, স্কাফ কিচ্ছু নেই। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো-


ভাইইই,মাইরাই তো ফালাইবা।আগে আমি একটু খাই।


চোখ দুটোকে টেনে ভাইয়ের দিকে তাকালো।তারপর হেসে দিয়ে বললো-


যা তবে।


লাফিয়ে দাড়ালো পাশের ছেলেটি।কামনার চোখে প্রেমার দিকে তাকিয়ে বললো-


নিরবের পরে কিন্তু আমার সিরিয়াল।ভাই,আমিও কিন্তু আছি।


বিষাক্ত চোখ দুটোকে কয়েকবার বন্ধ করে শুয়ে পড়লো সোভাম।বললো-


যার যার ইচ্ছা নিয়া নে।আমার বোন নিয়া ওরা দু ভাই খেলছে।এবার ওদের বোন নিয়া আমি খেলবো।আমিও দেখতে চাই পরশ শিকদারের ঠিক ধৈর্য কতটা।


চলবে?


পেইজে রেসপন্স খুব কম।ধীরে ধীরে আরো কমে যাচ্ছে।আপনারা যারা পড়ছেন সবাই রিয়াক্ট করবেন আশা করি।

গল্প রাজনীতির_রংমহল পর্ব ২৪

 #রাজনীতির_রংমহল

#সিমরান_মিমি

#পর্বসংখ্যা_২৪


রাত আট টা।নিজের ঘরে দরজা চাপিয়ে চুপচাপ শুয়ে আছে শামসুল সরদার।সোনালী বেগম চা হাতে ধীর পায়ে রুমে ঢুকলো।চোখ দুটো ফুলে আছে ভীষণ। টেবিলের উপর চায়ের কাপ রেখে ধরানো গলায় স্বামীর উদ্দেশ্যে বললো-


আমার আর্শিটা আপনার কাছে খুব বেশী বোঝা হয়ে গেছিলো।তাই না?এবার তো শান্তি আপনার আর আপনার ছেলের।


শামসুল সরদার ঘাড় ঘুড়িয়ে স্ত্রীয়ের দিকে চাইলেন।পুরো বাড়িটা খালি খালি লাগছে।এইতো কাল রাতেও এমন সময় আর্শি বাড়িতে ছিল।আর আজ?


দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন-


তোমার মেয়েকে সামলাতে পারো নি তুমি।তাই এই অল্প বয়সেই মান সম্মান রক্ষার জন্য এমন নিষ্ঠুর হতে হলো আমায়।

থেমে,

কেন?রাহুলকে তোমার পছন্দ হয় নি?না হলে বিয়ের সময়েই বাধা দিতে।


ছলছল চোখে সোনালী বেগম বললেন-


সেটাই তো।রাহুল বাবা না থাকলে আমি কখনোই এই বিয়ে হতে দিতাম না।ভাগ্যিস ছেলেটা বিয়ে করে মেয়েটাকে নিয়ে চলে গেছে।না জানি,আর্শিকে আরো কত নিচু ছেলে এনে বিয়ে দিতেন আপনি আর আপনার ছেলে।


সামান্য ক্ষোভ প্রকাশ করলেন শামসুল।নাকের পাটাতন ফুলিয়ে স্ত্রীয়ের উদ্দেশ্যে কাঠকাঠ কন্ঠে  বলল-


আর্শি আমার ও মেয়ে সোনালী।


আলতো চিৎকার দিয়ে উঠলো সোণালি।বললো-


নাহ,আপনার মেয়ে হলে কখনোই এমন টা করতে পারতেন না।নিজের আদরের ছেলের কথায় আমার মেয়েটাকে ওই জানোয়ার টার সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন।একবার ও খোজ নেওয়ার চেষ্টা করেন নি।মেয়েটা আমার বখে গেছে।ভুল করে এই সব সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে।আমি খেয়াল রাখতে পারে নি।শুধুমাত্র এই দোষ টার জন্যই বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম।আপনারা কি নিজের মেয়ের জন্য খারাপ কিছু করবেন?কিন্তু ভুল ছিলাম আমি।ভুলে গেছিলাম,সোভাম আর্শির আপন নয় সৎ ভাই।


আপনার ছেলে বড় হয়েছে।এমপি পদে দাড়াচ্ছে,রাজনীতি করছে,হারছে,সব জায়গায় নিজের দাপট খাটাচ্ছে।আমি এমনকি আমরা যে ওর বড় চাচী,মা হই তা মনে হয় না।সারাক্ষণ ধমকের উপর রাখে আমাদের।ওর হামকি-ধামকিতে সারাক্ষণ আমরা তটস্থ হয়ে থাকি।আর থাকবোই না কেন?আপনি তো দেখেও না দেখার ভান ধরে কিছু বলেন না আপনার ছেলেকে।আজ ছোট্ট বয়সে শিকদার বাড়ির ছেলের সাথে প্রেম করার জন্য আপনার মানসম্মান গেছে।আমার মেয়েটাকে এই বয়সে বিয়ে দিয়ে দিলেন।একদিন আপনার ছেলের জন্য এর থেকেও বেশী অপমানিত হবেন।সেদিন দেখবো কি শাস্তি দেন আপনার ছেলেকে।


দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ভেতরের কথাগুলো শুনতেই ফুসলে উঠলো সোভাম।গায়ের প্রতিটা শিরা -উপশিরা দাউদাউ করে জ্বলছে।দাতে দাত চেপে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো-


আপনি আব্বুকে আমার বিরুদ্ধে কান পড়া দিচ্ছেন?আপনার সাহস তো কম নয়।


বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন শামসুল সরদার।বিছানা থেকে অবিশ্বাসের সুরে উঠে বসলো।সোনালী বেগম ক্রুর হাসলেন।স্বামীর দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলেন আজ দেখুন আপনার  আদরের ছেলের শিক্ষা।ত্রস্ত কন্ঠে বললেন-


মুখ সামলে কথা বলো।আমি তোমার মা হই।


পুনরায় ক্ষেপে সোভাম।দাতে দাত পিষিয়ে বললো-


আমার বিরুদ্ধে সারারাত ভর কুটনিগিরি করতে লজ্জা করে না অভদ্র,অসভ্য মহিলা।


পরপর দু গালে দুটো ঠাস করে থাপ্পড় মারলেন শামসুল সরদার। অবাকে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল সোভাম।সোনালী বেগম সাময়িক ভাবে উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন।রাগে চোয়াল শক্ত করে শামসুল বললেন-


এই থাপ্পড় গুলো তোমাকে আরো অনেক আগেই আমার মারা উচিত ছিলো। প্রথম সন্তান হিসেবে ঠিক যতটা আদরে রেখেছি ধীরে ধীরে ততটাই পস্তাচ্ছি।


হন হন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল সোভাম।কোনোরুপ সাড়া শব্দ না দাতে দাত চেপে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। যাওয়ার আগে সামনে যা পড়েছে সবকিছু ভেঙেচুড়ে তছনছ করে দিয়ে গেছে সে।






★★★★

রাত নয়টা। সবেমাত্র বাস থেমেছে সাভার রেডিও কলানির সামনে।রাহুল পাশে তাকিয়ে দেখলো আর্শি এখনো ঘুমে।উপরের বড় ব্যাগটা টেনে নিয়ে বাস থেকে নামলো।ওভার ব্রিজের পাশে রেখে পুনরায় বাসে উঠলো।আর্শিকে কোলে নিয়ে ব্রিজের পাশে আসতেই কিছুটা দূরে একটা রিক্সা দেখলো।হাত দিয়ে ইশারায় ডেকে ব্যাগ নিয়ে গাড়িতে রাখতে বললো।তারপর আর্শিকে আলতো করে পাশে বসিয়ে এক হাত দিয়ে আগলে রাখলো।ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে ছোট্ট করে বললো-


সোসাইটি গেট,০১ নম্বর বাড়িটার গেটের সামনে নামাবেন।


ড্রাইভার মাথা হেলিয়ে চলতে শুরু করলো।দশ মিনিটের মাথায় কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌছাতেই আলতো হাতে স্পর্শীকে গাড়িতে হেলান দিয়ে রাখল।ব্যাগ হাতে গেটের সামনে রেখে জোরে ধাক্কা দিতেই ভেতর থেকে বিপাশা ছুটে এলো।মায়ের হাতে ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে রিক্সা থেকে আর্শিকে কোলে নিলো।ব্যাগ হাতে ছেলেকে দেখে খুশী হলেও পরবর্তীতে কোনো লাল শাড়ি পরিহিতা মেয়ে দেখে অবাক হয়ে গেল বিপাশা। 


কে ও?


রাহুল মাকে পাশ কাটিয়ে রুমের দিকে চলে গেল।যাওয়ার আগে ছোট্ট করে বললো-


রুমে আসো বলছি।


সব টা শুনে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে বিপাশা।ছেলের উদ্দেশ্যে বললো-


এরকম হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার কি ছিলো বাবা?


রাহুল একবার বিছানায় শোয়া আর্শির দিকে তাকালো।তারপর মায়ের উদ্দেশ্যে বললো-


মা,তুমি তো সোভাম কে কিছুটা হলেও চেনো। ভীষণ উগ্র আর বদমেজাজি। আর আর্শি ওরই বিপক্ষে থাকা এমপির ভাইয়ের সাথে সম্পর্কে ছিলো। এই জন্যই এক প্রকার আংকেলের ব্রেন ওয়াশ করে একটা অসভ্য, বিবাহিত ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেছি লো।সময় মতো তো ভাঙতে পেরেছি বিয়ে।কিন্তু তারপর?আমি হান্ড্রেড পারসোন শিউর ছিলাম সোভাম আবারো ওর বিয়ের জন্য জোর করতো।মেয়েটা ভীষণ ভীতু মা।হয়তো আরো কোনো বদ লোক এনে বিয়ে পড়িয়ে দিতো।আর তাছাড়াও ওই সময় হুট করে কি হয়ে গেল বুঝলাম না।নিজে থেকেই আংকেলকে প্রস্তাব দিলাম।


দীর্ঘশ্বাস ফেললেন বিপাশা।আর্শির মুখের দিকে তাকাতেই আতকে উঠলেন।ইশ কি মায়াবি চেহারা টা।একদম বাচ্চাদের মতো ইনোসেন্ট হয়ে ঘুমিয়ে আছে।মুহুর্তেই কিছু মনে পড়তে আতকে উঠে রাহুলকে বললেন-


কিন্তু রাহুল, আর্শি তো স্পর্শীর দেবর কে পছন্দ করে।ওদের সম্পর্ক ও ছিলো।তাহলে তুই হুট করে বিয়ে করতে গেলি কেন?মেয়েটা যদি না মানে।কান্নাকাটি করে।তখন?


হেসে দিল রাহুল।মুহুর্তে দাতে দাত চেপে বললো-


সেটাই তো মা।আসল কথা তো এটাই।আর্শিকে স্পর্শীর দেবর পছন্দ করে।ভালোবাসে।তাই আমি ওকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছি।যেমন টা ওই পরশ শিকদার আমাকে পোড়াচ্ছে।হুট করে আমার স্পর্শীর জীবনে এসে ছিনিয়ে নিয়ে গেল আমার প্রাণ পাখিটাকে।ও না আসলে আমি আরো কিছু দিন সময় পেতাম স্পর্শীকে বোঝানোর।হয়তো বুঝতোও।কিন্তু পারলাম কই?ওই পরশ শিকদার তো আমাকে পুড়িয়ে নিয়ে গেল ওকে।প্রতিনিয়ত পুড়ছি আমি। এবার ঠিক সেভাবেই ওর ভাইকে পোড়াবো আমি।কষ্টে কষ্টে জর্জরিত করে ওকে আর ওর ভাইকে বুঝিয়ে দেব"অনেক দিন ধরে পোষা পাখি হুট করে শিকারী হয়ে ধরে নিলে ঠিক কতটা কষ্ট হয়।"


ধমক মারলেন বিপাশা।রেগে বললেন-


একদম চুপ।তোকে না কতবার বলেছি স্পর্শীর কথা মাথায় ও আনবি না।


তেতে উঠলো রাহুল।চেচিয়ে বললো-


চুপ করো।এই ধমক টা তুমি স্পর্শীকে মারতে পারতে।ওকে বলতে পারতে থেকে যা আমার ছেলেটার কাছে।কিন্তু বলো নি তুমি।আমাকে ধমক দিতে একদম আসবে না।আমার মাথা অলরেডি গরম আছে।একা ছেড়ে দাও।






★★★★

রাত দশ টা।ভাই ভাবিকে গাড়িতে তুলে দেওয়ার পরপরই পার্টি অফিসে ছুটেছে পাভেল।একের পর এক কাজের ব্যাস্ততায় এই সবে মাত্র বাড়িতে ফিরেছে।আজকে দলের ছেলেরা মারামারি করেছে একজায়গায়।সেখান থেকেই বহুত কষ্টে সবাইকে ম্যানেজ করে ছাড়িয়ে এনেছে। ভাই থাকলে হয়তো এতোটা কষ্ট হতো না তার।তাই ভাই তো পুরো বাঘ।সারাক্ষণ গম্ভীর মুডে কম কথাবার্তা বলা লোকটা হুট করে একটা গর্জন ছাড়লেই সবাই জড়োসড়ো হয়ে যায়।সেখানে অনেক চেচামেচি চিৎকার করতে হয়েছে পাভেলকে।রুমে ঢুকে টানা আধঘন্টা ধরে গোসল করলো। এরইমধ্যে  খাওয়ার জন্য হাক আসতেই নিচে গেল সে।খেতে খেতে প্রায় এগারোটা বেজে গেল।রুমে ঢুকেই দ্রুত ফোন নিয়ে বসলো। কাল ফোন কাটার পর থেকে আর আর্শির একটা ফোন ও আসে নি।অদ্ভুত!এই প্রথমবার নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে পাভেল ফোন করলো আর্শির নম্বরে। কিন্তু ফোন বন্ধ।বেশ অনেকক্ষণ বিছানায় গড়াগড়ি খাওয়ার পর মস্তিষ্ক নিজেকে বোঝালো-


আর্শির সামনে পরিক্ষা।হয়তো সারাক্ষণ ফোন টিপতো বলেই ফ্যামিলি থেকে কেউ ফোন নিয়ে গেছে।হতেই পারে। একদম স্বাভাবিক এটা।আগে ভালো করে পরিক্ষা টা শেষ করুক।তারপর কথা বলা যাবে।


এসব ভাবতেই এপিঠ- ওপিঠ  করতে করতে একসময়ে ঘুমিয়ে পড়লো।


★★★★

জাফলং (Jaflong) প্রকৃতির কন্যা হিসাবে পরিচিত। সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে জাফলং সবার পছন্দ। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষা প্রকৃতির দানে রুপের পসরা সাজিয়ে আছে জাফলং। পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলা পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানির ধারা, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, উঁচু উঁচু পাহাড়ে সাদা মেঘের খেলা জাফলংকে করেছে অনন্য। একেক ঋতুতে জাফলং একেক রকম রুপের প্রকাশ ঘটায়, যা পর্যটকদেরকে ভ্রমণের জন্য সারাবছরই আগ্রহী করে রাখে।


জফলং যদি থাকতেই হয় তাহলে মামার বাজার এলাকায় জাফলং ইন হোটেল ও হোটেল প্যারিস সহ আরো কিছু রেস্ট হাউজ আছে। এছাড়া জাফলংয়ের কাছে সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ ভিউ সহ জৈন্তিয়া হিল রিসোর্টে যোগাযোগ করতে পারেন। আর সরকারী রেস্ট হাউজে থাকতে পূর্ব অনুমতির প্রয়োজন হয়।পাভেল আগে থেকেই জৈন্তিয়া হিল রিসোর্টে  ২টা রুম বুক করে রেখেছিলো।একটা ড্রাইভার ও অন্যটা তাদের।


প্রায় ঘন্টা দুয়েক আগেই তারা এখানে এসেছে।গোসল সেরে হালকা কিছু খেয়ে যে যার মতো শুতে চলে গিয়েছে।যেহেতু অনেক রাত হয়ে গেছে সেহেতু আজকে আর কোথাও ঘুরতে যাওয়ার প্লান নেই।


রুমের লাইট নেভানো থাকলেও বারান্দা থেকে আসা আশে-পাশের চড়া আলোয় ঘর অনেকটা আলোকিত হয়ে গেছে।জার্নিতে ক্লান্ত থাকায় আসার পরেই  ঘুমের ঘোরে চলে গেছে স্পর্শী।কিন্তু পরশের জ্বালায় এক দন্ড ও ঘুমাতে পারছে না।একট দূরে সরে ঘুমালেই দুহাত দিয়ে কোমড় পেচিয়ে ধরে টেনে বুকের কাছে এনে ধরে। দাতে কিড়মিড় করে বলে-


খবরদার স্পর্শীয়া,একদম দূরে শোবে না।আমাকে জড়িয়ে ধরে শোও।আর এক বার যদি দেখেছি না দূরে গেছো,কোমড় একদম ভেঙে ফেলবো।


বিরক্ত হয়ে চোখ ছোটো ছোটো করে তাকালো স্পর্শী।পরশের দিকে তাকিয়ে ব্যাঙ্গ করে বললো-


কেন?যখন নিজের রাজনৈতিক কাজে যান তখন তো আমাকে চেনেন'ই না।ধমকি-ধামকি মেরে ফোন কেটে দেন।আর রাত হলেও যত আহ্লাদ -ভালো বাসা বাড়ে তাই না?


জিভে কামড় মেরে তাকিয়ে রইল পরশ।তারপর গম্ভীর কন্ঠে বললো-


ছিঃ স্পর্শীয়া।এভাবে কথায় কথায় খোটা দিচ্ছো কেন?নেহাত নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না নইলে তোমার এই খোটার ধার ও ধারতাম না আমি।


বলেই ওদিকে ঘুরে শুয়ে পড়লো।দম ছাড়লো স্পর্শী।মনে মনে ভাবলো-


যাক, আপাতত রাতটা রাগ করে ঘুমিয়ে থাকুক।সকাল হলে ভাঙাবো।


ভেবে এপাশ ঘুরে শুতেই একটানে পরশের বুকের সাথে ধাক্কা খেল।কানের কাছে মুখ এনে পরশ বললো-


আপাতত তোমাকে ছাড়ছি না পাখি। এভাবেই শুয়ে থাকো।দূরে গেলে ঘুমের মধ্যে আমার মনে হয় এই বুঝি তুমি ছেড়ে চলে গেছো।


চলবে?


আমি চাইলেই আজকের থাপ্পড় গুলো বিয়ে ভাঙার সাথে সাথে  সোভামকে দিতে পারতাম। কিন্তু পাঠক,আমার কাহিনী অন্যভাবে সাজানো ছিলো বলেই দেয় নি।আজকের পর্বে সোভাম কে বাড়ি ছাড়া করা অত্যাবশকীয় ছিলো যেটা আগামী কুৎসিত ঘটনাগুলোর সাথে জড়িত।আপনারা না জেনে শুনেই একদম আমার বিপক্ষে গিয়ে সমালোচনা -নেতিবাচক কমেন্টসের ঝড় তুলে ফেললেন।আর স্পর্শী আর রাহুলের বিয়েটা শরীয়ত মোতাবেক অবৈধ হলে অবশ্যই আমি নিজেকে শুধরে নিব।এই ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। যাই হোক,আগামী কাল থেকে এক দিন পর পর গল্প পাবেন। পর্বগুলো সাজিয়ে -গুছিয়ে ধীরে সুস্থে দিতে হবে আমায়।আপনারা তো আবার ভুল ধরার ওস্তাদ।এক্ষেত্রে সময় চাই আমার।অপেক্ষা করুন।ধৈর্যের ফল কখনো খারাপ হয় না।ধন্যবাদ।

গল্প রাজনীতির_রংমহল পর্ব ২৩

 #রাজনীতির_রংমহল

#সিমরান_মিমি

#পর্বসংখ্যা_২৩


★★★

বিনামেঘে বজ্রপাত পড়ার ন্যায় স্তব্ধ হয়ে গেল পুরো সরদার পরিবার।একে অপরের দিকে বারবার চাওয়া-চাওয়ি করে অভিব্যক্তি মেলানোর চেষ্টা করছে।ভীষণ ঘাবড়ে গেছে আরাফ।তারপরেও নিজেকে সামলে আমতা-আমতা করে রাহুলের উদ্দেশ্যে বললো-


এই এই কে আপনি?আর কি সব বাজে কথা বলছেন?আমি বিয়ে করেছি তার প্রমাণ কি?সোভাম,এই বানোয়াট কথা বলে বরাবরের মতো আমাকে অপমান করার মানে কি?


অবাক হয়ে গেল রাহুল।কিন্তু দমলো না।দু -পা আরো সামনে এগিয়ে আরাফের মুখোমুখি দাড়ালো।বুক উচু করে গলায় তেজ এনে বললো-


আপনি এই কিছুক্ষণ আগে আপনার স্ত্রীয়ের সাথে কথা বলেন নি।কি যেন আপনার স্ত্রীর নাম(মনে করার ন্যায় অন্যদিকে তাকিয়ে)ওহ হ্যা,ছোছিয়া।কি মিঃ?


কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে আরাফের।মির্জা আফতার যেন আরো বিপাকে পড়ে গেলেন।ছেলে তো তার বিয়ে সত্যি সত্যিই করেছে।এখন এই মুহুর্তে সে স্বীকার না করলে মানসম্মান কিচ্ছু থাকবে না।কোনোমতে ধরা পড়লে ব্যাপারটা জনগণের মধ্যে ছড়াতে সময় লাগবে না।সবাই বলবে মন্ত্রী সাহেব একজন বাটপার।মুখে আলতো হাসি এনে শামসুল সরদারের দিকে তাকিয়ে বললেন-


সেকি,আরাফ আপনাদের বলে নি যে ও বিবাহিত।আমি তো ভেবেছিলাম সব বলেছে।কি রে তুই এনাদেরকে না বলেই সম্বন্ধতে জড়িয়েছিস।আসলে ব্যাপার টা আমি আপনাদের খুলে বলছি।ঘটনাটা ও লন্ডনে যাওয়ার পরেই ঘটেছে।ওখানেই ও সেটেল হতে চেয়েছিলো।তাই ওখানকার নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য  ছোছিয়া কে বিয়ে করেছিলো।কিন্তু ও ই ভিনদেশী কোনোমতেই বাংলাদেশে আসবে না। আর আরফের ও ওখান টা আর ভালো লাগছিলো না।তাই দেশে চলে এসেছে।এখানেই ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করিয়ে সংসার করতে চেয়েছিলো।আমিই সত্যিই দুঃখিত!ও ব্যাপারটা আপনাদের কাছে বলে নি।


শামসুল সরদার গম্ভীর কন্ঠে বললেন-


আপনার ছেলে তো বললো ও আবার ওখানে যাবে।


হেসে দিলেন আফতার।বললেন-


আরে সেতো যেতেই হবে চাকরি করছে তো ওখানে।


ব্যাস!গর্জন ছেড়ে উঠলেন শামসুল সরদার। মুহুর্তেই রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে গেল তার।সামনের নাস্তার প্লেট ছুড়ে মারলেন ফ্লোরে।আরাফ কিছু বলে উঠতেই ঠাস করে থাপ্পড় মারলেন গালের উপর।রাগে কাপতে কাপতে বললেন-


তোমার সাহস তো কম না।এই জন্যই বিয়ের এতো তাড়া ছিলো তোমার।বিদেশে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য বিয়ে করেছো।এখন দেশে মাঝেমধ্যে বেড়াতে আসবে বলেও একটা বিয়ে করে রেখে যাবে।অসভ্য ছেলে।বের হও আমার বাড়ি থেকে।এক্ষুণি,নইলে খুন করে ফেলবো তোমায়।


আফতার দ্রুত ছেলেকে নিয়ে বের হয়ে গেলেন বাড়ি থেকে।মানসম্মান যা যাওয়ার তা গেছে।বাকিটা বাচানোর জন্য দ্রুত ঢাকায় ব্যাক করতে হবে।


.


.


.


.


★★★★★

থমথমে সরদার বাড়ি।কাজি এক কোনায় বসে আছেন।তিনি ঠিক বুজতে পারছেন না কি করা উচিত।আদোও চলে যাবে নাকি এখানেই বসে থাকবে।একটু আগেই হনহন করে নিজের রুমে চলে গিয়েছেন শামসুল সরদার।রাহুল সোফায় বসে নির্বিকার ভাবে ফোন স্ক্রল করছে।সোভাম এক কোনায় দাড়িয়ে ফুসছে।আরাফ যতই খারাপ হোক না কেন এই মুহুর্তে তার কাছে আর্শির বিয়ে ভাঙাটাই মুখ্য।


বিদেশে থাকলে এরকম দু-একটা বিয়ে করতেই পারে সেখানে সেটেল হওয়ার জন্য।এটা তার কাছে দোষের কিছু না।কিন্তু বিয়েটা ভাঙার পরে আর্শি যে, যেকোনো মুহুর্তে পালিয়ে যেতে পারে সেটাই আসল চিন্তা।যত রাগ,জেদ সব একমুহূর্তে রাহুলের উপর পড়ছে।দ্রুতবেগে হেটে রাহুলের সামনে গেল।হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে সোফার উপর ফেললো।বললো-


তোমার সাহস কি করে হয় আমাদের ফ্যামিলি ম্যাটারে নাক গলানোর?তোমার জন্য আর্শির বিয়েটা ভেঙে গেল। 


সাময়িক ভাবে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো রাহুল।পরবর্তীতেই সোজা হয়ে বুক ফুলিয়ে দাড়ালো সোভামের সামনে।লম্বায়,চওড়ায়,গায়ের রঙে সে সোভামের থেকে এগিয়ে।বিশালদেহী, প্রতিনিয়ত জিম করা বডির সামনে সোভাম তুচ্ছ।ভ্রু কুচকে সোভামকে বলল-


লজ্জা করা উচিত তোর।একটা বিবাহিত,চরিত্রহীন ছেলের সাথে নিজের ওইটুকু বোনের বিয়ে দিচ্ছিলি।এতো তেজ কোথায় পাস তুই?


সারা গায়ে যেন আগুন ধরে গেল সোভামের।চিবিয়ে চিবিয়ে বললো-


আহাহাহাহা!মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশী।আমার বোনকে কার সাথে বিয়ে দেব সেটা আমি ঠিক করবো।তুমি নাক গলানোর কে?নিজে বিয়ে করবে নাকি ওকে।পরক্ষণেই তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো-


হাহ!তুমি আর বিয়ে।তোমার মতো বেহায়া তো আর দুটো নেই।স্পর্শীর পেছনে তো পা চাটা কুকুরের মতো দৌড়িয়েছো।সেই আদোও কোনো লাভ হলো।শেষ অবধি মুখের উপর জুতো মেরে এমপি বিয়ে করে নিলো।আর তোমাকে বিয়ে করবেই বা কেন?আধবুড়ো একটা।মাথার চুল তো অর্ধেকের বেশী পেকে গেছে।প্রয়োজনে আর্শিকে চারটা বিয়ে করা লোকের সাথে বিয়ে দেব তবুও তোমার মতো আধবুড়োর সাথে নয়।


মুহূর্তে'ই মাথাশূন্য হয়ে গেল রাহুলের।মাত্র দু বছরের বড় সে সোভামের থেকে।সেই স্কুলে থাকতেই তার মাথার দু-একটা চুল পাকতে শুরু করেছে।অজস্র ডাক্তার দেখিয়েও লাভ হয় নি।এখনো যে খুব একটা পেকে গেছে তাও না।পুরো মাথা জুড়ে দশ টা চুল ও পাকে নি গোনা গোনা।


অপমানে মুখ থমথমে হয়ে গেল তার।কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল।নিজের রাগকে বরাবরই কন্ট্রোল করতে পারে না রাহুল।চিবিয়ে চিবিয়ে বললো-


এই আধবুড়ো টাকেই তোর বাপ নেচে নেচে মেয়ে তুলে দেবে।আজ এক্ষুণি,তোর চোখের সামনে।পারলে বাধা দিস।


বলেই শামসুল সরদারের রুমের মধ্যে ঢুকলো।সোভাম দাত কেলিয়ে হাসলো।সে বাধা দিবে?কেন দিবে?সেতো ইচ্ছে করেই রাহুলকে রাগিয়ে দিয়েছে। কোনোভাবে আর্শিকে বিদায় করতেই মাতোয়ারা সে।পরশ সিকদারের সাথে কোনোমতেই হারবে না এবার।


.


.


.


.


★★★★★


আংকেল আসবো।


তড়িৎ বেগে দরজার দিকে চাইলেন শামসুল সরদার। মাথা নাড়িয়ে ভেতরে বসতে বললো। বসলো না রাহুল।কাঠকাঠ গলায় কোনো ভণিতা ছাড়াই বললো-


আংকেল আমি আর্শিকে বিয়ে করতে চাই।আপনার কোনো আপত্তি না থাকলে বলুন।কাজি বসে আছে,এই মুহুর্তেই বিয়ে করবো আমি।


অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো শামসুল। রাহুল ভীষণ ভদ্র একটা ছেলে।এ বিষয়ে তার মোটেও সন্দেহ নেই।সেটা ভেবেই তো স্পর্শীর সাথে বিয়েতে রাজি হয়েছিলেন।কিন্তু ভাগ্যে ছিলো না।আজ আবার ছোট  মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছে।কিন্ত কেন?


সন্দেহ কাটিয়ে উঠতে না পেরে বলেই উঠলেন-


তুমি তো স্পর্শীকে বিয়ে করতে চেয়েছিলে।এখন হঠাৎ আর্শিকে কেন?


বুকের ভেতরটা স্পর্শীর নাম শুনতেই চিনচিন করে উঠলো।তারপরেও নিজেকে সংযত করে বললো-


আংকেল স্পর্শী বিবাহিত।ওর স্বামী আছে।আমি ওকে নিয়ে আপাতত ভাবতে চাইছি না।আর্শিকে নিয়ে কোনো আপত্তি থাকলে বলুন।


হেসে দিলেন শামসুল।রাজি হয়ে গেলেন বিয়েতে।বসার ঘরে পুনরায় সব আয়োজন হলো।নতুন করে কাজি লিখতে বসে গেলেন নাম পরিচয়।আর্শি এখনো নেশার ঘোরে রয়েছে।চোখ টেনেও খুলতে পারছে না।হঠাৎ জিহান রাহুলকে বললো-


আপনি এখানে বসুন রাহুল ভাই।


চমকে উঠল আর্শি।মুখে বললো-

ভাই,পাভেল ভাই।পাভেল ভাই এসেছে।


এরইমধ্যে কাজি কবুল বলতে বললো আর্শিকে।নেশাগ্রস্ত আর্শি চোখের সামনে পাভেলকে দেখছে।কানের কাছে বারবার ধ্বনিত হচ্ছে পাভেল ভাই।কাজি আবারো তাড়া দিল।ধীর কন্ঠে কাজির সম্মোহনী কথার সাথে তাল মেলালো সে।ছোট ছোট স্বরে বলল-


কবুল কবুল কবুল।


বিয়ে সম্পন্ন হতেই তড়িৎ বেগে উঠে দাড়ালো রাহুল।এই বাড়িতে আর এক মুহুর্ত ও থাকবে না সে।কথাটা শামসুল সরদারের কানে যেতেই আতকে উঠলেন তিনি।বারবার নাকোচ করলেও দমাতে পারে নি রাহুলকে।আর্শিকে নিয়ে তখনই চলে গেল বাস কাউন্টারে।যদিও বাড়ির গাড়িতে যাওয়ার জন্য বেশ জোর করেছিলেন।কিন্তু রাহুল শোনে নি।তার একটাই কথা-


বেকার ছেলে দেখেই মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন।আমাদেরকে আমাদের মতো ছেড়ে দিন।যদি মেয়েকে নিয়ে টেনশন হয়,তো আমি একাই চলে যাচ্ছি।ওকে আপনাদের বিলাসবহুল গাড়িতে পাঠিয়ে দেবেন।


কথাগুলো শুনতেই দমে গিয়েছিলো সবাই।ঘুমন্ত আর্শিকে কোলে নিয়ে চলে এসেছে রাহুল।বাসে উঠে আর্শিকে একটা সিটে বসিয়ে পাশেই বসল ।আর্শিকে এক হাত দিয়ে আগলে ধরে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো-


তোকে এক পলক দেখা হলো না রে স্পর্শী।


মুহুর্তে'ই চোখ ফিরালো আর্শির মুখের উপর।বাবার কিছুটা আদল দু-বোন ই পেয়েছে।এই যে আর্শির নাক টা একদম স্পর্শীর মতো।চোখ ফিরিয়ে অন্যদিকে চাইলো রাহুল।বাড়িতে গিয়ে কি বলবে সে?






বিকেল বেলা।ব্যাগপত্র গুছিয়ে গাড়ির পেছনে রাখলো পাভেল। সবার থেকে বিদায় নিয়ে ধীর পায়ে বাইরে এলো স্পর্শী।পরশ গাড়িতেই বসা। স্পর্শী আরেকটু এগোতেই ঠোট উলটে পরশকে বললো-


আমরা না গেলে হয় না।আমার কেমন জানি লাগছে।


আহাম্মক বনে গেল দু ভাই।পরবর্তীতেই পাভেল ধমকে ধামকে স্পর্শীকে গাড়িতে উঠালো।দুজন বডিগার্ড এসে গাড়িতে বসতেই আতকে উঠলো স্পর্শী।চিৎকার দিয়ে বললো-


একি!এনারা কোথায় যাচ্ছেন?


পাভেল স্পর্শীকে ব্যাঙ্গ করে বললো-


তোমাদের হানিমুন দেখতে।


পরশ শান্ত দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে তাকালো। তারপর বললো-


বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে পাভেল।আমরা হানিমুনে ঘুরবো আর ওরা পাহাড়া দিবে। কি অসস্তিকর ব্যাপার। 


স্পর্শী বললো-


পাভেল ভাই,ওরা বাড়িতেই থাকুক।


শেষ পর্যন্ত মানলো পাভেল।গাড়ি ছাড়ার আগে ভাইয়ের কাছে গিয়ে বললো-


তোকে এতো এতো ছাড় ইচ্ছায় দিচ্ছি না।আমাকে একটা জিনিস দিতে হবে।


পরশ ভ্রু কুচকালো।বললো

কি লাগবে?


পাভেল হাসলো।তারপর বলল-


এখন বলা যাবে না।আগে তুই বাড়িতে আয়,তারপর চাইবো।না করতে পারবি না কিন্তু।


চলবে?


আর্শির সাথে রাহুলের বিয়ে হয়েছে।এতে অনেকেই হয়তো রাগ করবেন আপনারা।কিন্তু পাঠক,আমার কিচ্ছু করার নেই।গল্পটা যেহেতু আমি লিখছি সেহেতু আমাকেই লিখতে দিন।আপনাদের কথামতো জুটি বানিয়ে আমি গল্পের স্বকীয়তা হারাতে চাইছি না।ধন্যবাদ💓

গল্প রাজনীতির_রংমহল পর্ব ২২

 #রাজনীতির_রংমহল

#সিমরান_মিমি

#পর্বসংখ্যা_২২


থমথমে সরদার বাড়ি।স্তব্ধ হয়ে বসে আছেন শামসুল সরদার। বড়ির সমস্ত মহিলারা ভয়ে তটস্থ হয়ে আছেন।সোনালী বেগম নিজের মেয়ের এমন ঘটনা শুনে মুখে আচল চেপে ঢুকরে কেদে উঠলেন।সোভাম  নিরব হয়ে অন্যদিকে ফিরে আছে।শুধু শব্দ হচ্ছে আর্শির ঢুকরে কান্নার আওয়াজ।ভয়ে হাত-পা কাপছে তার।বাবার সামনে ভীষণ লজ্জা করছে।বার বার নিজেকে তিরস্কার করছে।কি দরকার ছিলো আজকে ফোন দেওয়ার।এখন কি হবে?

ভাবনার মধ্যেই ঠাস করে পুনরায় থাপ্পড় মারলেন শামসুল সরদার। রাগে কাপছেন তিনি।এইটুকুন মেয়ে,অথচ বংশের মুখে চুনকালি দেওয়ার জন্য মরিয়া।চোয়াল শক্ত করে চেচিয়ে বললেন-


তোকে আমি ফোন দিয়েছি কিসের জন্য?বাইরের ছেলেদের সাথে কথা বলার জন্য নাকি ক্লাস করার জন্য?


আর্শির মাথা ভো ভো করে ঘুরছে।পরপর দু দুটো থাপ্পড় খেয়ে ছিটকে সোফার ওইপাশে পড়লো।সোনালী বেগম ঢুকরে কেদে উঠলেন।কিন্তু মেয়েকে ধরার সাহস পেলেন না।রোজিনা(ছোট চাচী) ছুটে এসে আর্শিকে আগলে ধরলো।


তোর সাহস হলো কিভাবে ওই বাড়ির ছেলের সাথে সম্পর্ক রাখার?তুই দেখিস নি স্পর্শীয়ার জন্য কি কি হয়েছে।তার পরেও কোন সাহসে তুই আবার ফোনে কথা বলছিলি।স্পর্শীয়ার না হয় মা,বাপ কেউ কাছে ছিলো না।শাসন,শিক্ষা কিচ্ছু হয় নি।তুই ও কি পাস নি।


থেমে বাড়ির মহিলাদের দিকে তাকিয়ে,


বাড়িতে এতো গুলো মহিলা তোমরা,অথচ একটা মেয়েকে ভালোভাবে শিক্ষা দিতে পারলে না।ও যখন দিনের পর দিন, রাতের পর রাত অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলেছে তখন কই ছিলা তোমরা?কারো নজরে পড়ে নি কিভাবে?


থরথর করে কাপতে লাগলেন শামসুল সরদার। সোভাম দ্রুত পায়ে এসে বাবাকে ধরে সোফায় বসালো।বললো-


আব্বু, তুমি শান্ত হও।আমি দেখছি।বাড়ির মানসম্মান যাওয়ার আগেই যা  ব্যাবস্থা নেওয়ার নেব আমি।


*-**-**-*

বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল সোভাম।এখন বাড়িতে থাকলে রেগে কিছু একটা করে বসবে সে।নিজেকে সামলাতেই পুকুর পাড়ে আসলো। এরইমধ্যে ফোনের শব্দে পকেটে হাত দিলো।আরাফ ফোন করেছে।ও তো নিজস্ব মানুষ। স্পর্শীর সম্পর্কেই তো সব জানে।ওকে বললে হয়তো কোনো সাহায্য করতে পারবে।


হ্যালো,


আরে কেমন আছিস ভাই।কোনো খবরই তো নাই।


আর বলিস না।একটা তো মান সম্মান ডুবিয়ে প্রেমিকের হাত ধরে চলে গেছে।এখন অন্যটাও প্রেম করছে।

থেমে,

আরাফ,একটা সাহায্য করবি?


--কি সাহায্য?কি লাগবে তুই একবার বল।


--একটা ভালো ছেলের সন্ধান দিতে পারবি।আমি দু দিনের মধ্যে আর্শি কে বিয়ে দেব।আমি কোনো রিস্ক নিতে পারবো না।ওই পরশের বাচ্চা আমার নাকের ডগা থেকে বোনগুলো নিয়ে যাবে আর আমি তা কি করে সহ্য করবো।দু দুবার হেরেছি আমি ওর কাছে।আর পারবো না।এরপরে কোনোভাবে যদি পাভেল আর্শিকে নিয়ে পালিয়ে যায় বা আর্শি সেচ্ছায় চলে যায় তাহলে দলের লোক আর কেউ আমার থাকবে না।তখন সবাই বলবে সোভাম সরদার তো ঠিকই তলে তলে আত্নীয়তার সম্পর্ক রেখেছে অথচ আমাদের বিরুদ্ধে রাখছে।আমি বাজারে উঠতে পারবো না।জনগণ হাসাহাসি করবে।


ঠোটের উপর আঙুল বোলালো আরাফ।তারপর বললো-


আর্শির একটা ছবি পাঠা তো আমার হোয়াটসঅ্যাপে। 


চিন্তায় পড়ে গেল সোভাম।আদোও তার ফোনে আর্শির ছবি আছে তো।অনেক খুজেও পেল না। দ্রুত ফেসবুকে ঢুকলো।আর্শির আইডিতে প্রোফাইল পিক দেওয়া আছে একটা।সেটাকেই সেন্ড করলো আরাফের ফোনে।ছবিটা দেখতেই ঢোক গিললো আরাফ।জুম করে নানাভাবে দেখতে লাগলো শকুনি চোখে।ডাগর ডাগর চোখ দুটো,বাচ্চাসুলভ হাসি,উজ্জ্বল শ্যামলা রঙ সব মিলিয়ে ভীষণ পছন্দ হয়ে গেল তার।ফোন কানে নিয়ে সোভামের উদ্দেশ্যে বলল-


এটা তো একদম কচি থুরি বাচ্চা মেয়ে  ভাই।একি আমাকে বিয়ে করবে?


অবাক হয়ে সোভাম বললো-


তোকে বিয়ে করবে মানে?


একটু ধাক্কা খেল আরাফ।ইনিয়েবিনিয়ে বলতে লাগল-

তুই জানিস স্পর্শীকে বিয়ে করতে চেয়েছি আমি। এমনকি বাড়ির সবাইকেও জানিয়েছি।এখন বাবা খুব জোর করছে বিয়ের জন্য।ভাবছি বিয়েটা করেই ফেলবো।তুই বললে কালকেই বাবাকে নিয়ে আসবো।যেহেতু শিকদার বাড়ির সাথে ঝামেলা,তাই যদি ঘরোয়া ভাবেও বিয়ে হয় তাও আমার কোনো আপত্তি নেই। আর্শিকে আমার ভালো লেগে গেছে।আর তুই এতো তাড়াতাড়ি ছেলে কোথায় পাবি?বেশী বাছতে যাস না আবার,আবার পাখি যেন ফুরুৎ হয়ে না যায়।


ভাবনায় পড়ে গেল সোভাম।পরক্ষণেই আর্শি পালিয়ে যেতে পারে ভেবে রাজি হয়ে গেল।বাড়ি ফিরেই দ্রুতপায়ে বাবার রুমে হাজির হয়ে গেল।ধীর পায়ে খাটের উপর বসে বললো-


আব্বু,আমি কিছু বলতে চাইছি।


কপালের উপর থেকে হাত সরিয়ে ধীর কন্ঠে বললো-


কি বলতে চাও?


সোভাম জিভ দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে নিল।তারপর বললো-


আব্বু আরাফ কে তো চেনো।আমার বন্ধু।যার সাথে স্পর্শীর বিয়ে ঠিক হয়েছিলো।তারপর তো তোমার মেয়ে যা করার করলো।ও তো অপমানিত হয়ে চলে গেল।আর্শিকে এখন দু -এক দিনের মধ্যে বিয়ে দিতে হবে।নইলে দেখা গেল,তোমার আদরের মেয়ের মতো মানসম্মান ডুবিয়ে পালিয়ে গেল।

থেমে,

আমি আরাফকে অনেক রিকোয়েস্ট করেছি।ও রাজি হয়নি।তারপর আংকেল কে অনেক রিকোয়েস্ট করার পর রাজি হয়েছে।আমি চাইছি,আপাতত ঘরোয়া ভাবে কালকে ওদের বিয়েটা পড়িয়ে দিই।প্রয়োজনে আর্শি এখানেই থাকলো কিছুদিন। দেখো আব্বু,তুমি দ্বিমত করো না।অনেক রিকোয়েস্ট করার পর আরাফ রাজি হয়েছে।আগেরবারের মতো আবার আমাকে অপমানিত করো না।

আর তাছাড়াও যদি তোমার ছোট মেয়েও পালিয়ে যায়, বাজারে মুখ দেখাতে পারবে তো।


শামসুল সরদার করুন চোখে ছাদের দিকে তাকালেন।বললেন-


তুমি ওর বড় ভাই হও।যা করার ভেবেচিন্তে, সব দেখেশুনে করো।আমার তোমার উপর  ভরসা আছে।


থেমে,


রাহুল কোথায়?ছেলেটা এতোদিন পর বাড়িতে এলো।নিযে থেকে থাকতে চাইলো অথচ ভালো করে আপ্যায়ন ই করা হলো না।দেখো তো কোথায় আছে?


সোভাম বসা থেকে উঠে দাড়ালো।বলল-


রাহুল ভাই মনে হয় জিহানের সাথে বাজারে গেছে।আমি দেখছি।


****-****

সকালবেলা।ঘড়িতে সাড়ে সাতটা।নাস্তার টেবিলে বসে বেশ অনেকক্ষণ ধরে মোড়াচ্ছে পাভেল।শেষে মুখ ফুটেই বলে উঠলো-


ভাই,


পরশ রুটি ছিড়ে মুখে দিয়ে বললো-

বল।


বলছি তোদের বিয়ের তো আজ তিন দিন হয়ে গেল। বলছি,কোথাও হানিমুনে টানিমুনে যাবি না।


খুক খুক করে কেশে উঠলেন মহীউদ্দীন শিকদার। মুখের খাবার টুকু শেষ করে টিস্যু নিয়ে বললেন

আমার খাওয়া শেষ। 

বলেই চলে গেলেন রুমে।


পিয়াশা ভাজি আনার ছুতোয় ছুটে রান্নাঘরে চলে গেলেন।এতোক্ষণে নিচু হওয়া মাথা উপরে তুললো স্পর্শী।ইশ কি লজ্জা!কি লজ্জা!এই ভাই দুটোও হয়েছে একরকম।কারো কোনো হুশ নেই।স্পর্শী পরশের দিকে তাকিয়ে বললো-


কিন্তু পাভেল ভাইয়া,আমি তো চেয়েছিলাম খুব তাড়াতাড়ি আপনার বিয়েটা দিয়ে একসাথে যেতে।


উফফফফ!বাবুর আম্মু, তুমি থামো তো।আমি ভাইয়ের সাথে কথা বলছি তো।


পরশ খেতে খেতেই বললো-


তা হঠাৎ আমার হানিমুন নিয়ে পড়লি কেন?


সোজা হয়ে বসলো পাভেল।গম্ভীর মুখ নিয়ে বললো-


এখন তো একটু ফ্রি আছিস।তেমন কোনো ব্যাস্ততাও নেই।আর যাও আছে তা আমি আর সুজন ভাই সামলে নিতাম।বলছি এখন কোথাও একটা বাবুর আম্মুকে নিয়ে ঘুরে আয়।নইলে পড়ে ব্যাস্ততা বাড়লে আর যেতে পারবি না।তোর যা বউ,দেখা গেল ঘুরতে নিয়ে না যাওয়ার অপরাধে মাথা ফাটিয়ে দিল তোর।


তেতে উঠলো স্পর্শী।বললো-


তা ক বার মাথা ফাটিয়েছি আপনার ভাইয়ের?


উফফফ থামবে তোমরা।


পরশ চেচিয়ে উঠলো।তারপর ধীর কন্ঠে বললো-


খারাপ বলিস নি।কিন্তু কোথায় যাওয়া যায়?


এতোক্ষণে চুপচাপ খাচ্ছিলো প্রেমা।তড়িৎ বেগে মাথা উচু করে বলল-


জাফলং,শ্রীমঙ্গল, বা  পাহাড়ি কোনো জায়গায় যেতে পারো।


লাফিয়ে উঠলো স্পর্শী।বললো-


আমি জাফলং যাব।ওটা আমার ফেবোরেট জায়গা।যদিও এখনো অবধি যাই নি।


পাভেল বললো-তাহলে এটাই ফাইনাল।আগামী পাচ দিন তোমাদের হানিমুনের জন্য কনফার্ম করা হলো।


মনে মনে বললো-


একবার ঘুরে এসে  ফুরফুরা মন নিয়ে ভাই হাজির হোক।ঠিক মুহুর্তের মধ্যেই সে আত্নসমর্পণ করে বলবে-ভাই,তুমি যে গর্তে পা মচকেছো, আমিও ঠিক সেখানেই উলটো হয়ে পড়ে আছি।প্লিজ আর্শিকে আমার করে দাও।প্লিজ!প্লিজ!প্লিজ!


.


.


.


.


.


************

বেবী, তুমি এমন করছো কেন?প্লিজ কাম ডাউন।প্লিজ!


এমন আদুরে কন্ঠস্বর শুনতেই পিছু ফিরলো রাহুল।পাশেই বট গাছের নিচে একটা দামী গাড়ি পার্ক করা।সেখানেই হেলান দিয়ে কথাগুলো বলছে এক অচেনা ভদ্রলোক।ফোনের ওপাশের লোকটির সাথে এমন ভাবে কথা বলছে যেন খুব ভয় পায় তাকে।রাহুলের কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগছে।আরেকটু সামনে এগিয়ে ভালোভাবে কান পাতলো।লোকটি উত্তেজিত হয়ে পড়লো।বললো-


ছোছিয়া,আর ইউ ম্যাড। আমি বললাম তো আর কটা দিন পর তোমার কাছে আসবো।প্লিজ বেবি,বোঝার চেষ্টা করো।ড্যাডের কাছে আর ক'টা দিন থাকি।আমার সুইট বেবি।আমার বউটা ভেরি সুইট। সব বুঝে নেবে মিনিটের মধ্যে।হ্যা না।ওকে বেবী,বায়।আই এম বিজি নাউ।এক সপ্তাহের মধ্যেও চলে আসবো।আই মিস ইউ। 


রাহুল এতোক্ষণে বুঝলো লোকটা তার বউয়ের সাথে  কথা বলছিলো। নামটা ও ভিনদেশী।হয়তো বাহিরে বিয়ে করেছে।আর মাথা ঘামালো না।চুপ চলে এলো সেখান থেকে।


সকাল এগারোটা।সরদার বাড়ির সোফায় একজন বয়স্ক কাজি বসে আছেন। পাশেই শামসুল সরদার এবং তার ভাইয়েরা আছে।সোভাম খুটিনাটি পরিদর্শণ করছে।আর বাড়ির বউয়েরা সবাই ভীষণ ব্যাস্ত।কেউ কেউ আর্শিকে সাজাচ্ছে,কেউ কেউ রান্নাঘরে।কেউ কেউ আবার ঘরদোর গোছাচ্ছে।বিয়ের পর বাসর ঘর এখানেই সাজানো হবে।সোভাম রাহুলকে অনেক আগেই ফোন দিয়েছে বাড়ি আসার জন্য।কিন্তু রাহুল,তার তো বাড়ির মধ্যে মনই টিকছে না।সময়, সুযোগ এবং মানুষ  খুজছে শিকদার বাড়ি যাওয়ার জন্য।শুনেছে বর এমপি।নিশ্চয়ই খুব বড়লোক।ব্যাস,দূর থেকে স্পর্শীটাকে এক নজর দেখেই সে চলে যাবে।কিন্তু আফসোস!কাউকেই পাচ্ছে না।


আরাফ তার বাবাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকতেই ভ্রু কুচকে ফেললেন শামসুল সরদার। পেছনে দুজন গার্ড ছাড়া আর কাউকে দেখছেন না।তাদেরকে সোভাম আপ্যায়ন করে সোফায় বসাতেই শামসুল বললেন-


বিয়ে বাড়ি, যতই ঘরোয়া ভাবে হোক।তাই বলে একেবারে দুজন কিভাবে হয়?


অবাক হয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলেন মির্জা আফতার। কন্ঠে খাদে নামিয়ে ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন-

বিয়ে বাড়ি মানে?তুমি তো বলেছিলে শুধু মেয়ে দেখতে এসেছো।


নড়েচড়ে বসলো আরাফ।ইনিয়েবিনিয়ে বললো -


আব্বু প্লিজ চুপ কর।তুমি রাজি হবে না বলে মিথ্যা বলেছি।হয়েছে এবার।


হতাশ হলেন আফতার।আরাফ পুনরায় শামসুল সরদারের দিকে চাইলো।নিজেকে ধাতস্থ করে তার উদ্দেশ্যে বললো- 


দেখুন আংকেল।সোভাম আমাকে সমস্ত সমস্যার কথাই বলেছে।বিয়েটা যেহেতু ঘরোয়াভাবে বলতে গেলে লুকিয়ে দিচ্ছেন সেক্ষেত্রে আমি বেশী মানুষ আনলে সব জানাজানি হতে সেকেন্ড ও লাগবে না।আপনি চাইলে আমি এক্ষুনি সবাইকে ফোন দিচ্ছে।তবে মন্ত্রীর ছেলের বিয়ে হচ্ছে কত শত মানুষ আসবে তা কি সামলাতে পারবেন আদোও।


আর যাই বলুন,অনুষ্ঠান তো পরেও করা যাবে। 


দমে গেলেন শামসুল সরদার। কাজির নির্দেশে আর্শিকে আনা হলো।টলতে টলতে শাড়ি পড়া অবস্থায় হাজির হলো আর্শি।দু পাশ দিয়ে দুই চাচি এমন ভাবে৷ ধরে আছে যেন ছেড়ে দিলেই পড়ে যাবে আর্শি।চোখমুখে অশ্রু টলমল করছে।চোখ টাকে টেনেও খুলতে পারছে না।শুধু মুখ দিয়ে বিরবির করে বলছে -


আমি বিয়ে করবো না পাভেল ভাই।


সোভাম দূরে দাড়িয়ে আর্শিকে দেখে বাকা হাসলো।সে নিজেই শরবতের সাথে সামান্য নেশার দ্রব্য মিশিয়ে দিয়েছে যাতে বিয়ের সময় চেচামেচি না করতে পারে।সোফায় ধরে বসানো হলো আর্শিকে।এরইমধ্যে রাহুল বাইরে থেকে এলো।আলতো হাসি টেনে বললো-


সরি!আসলে আমার খেয়াল ছিলো না আজ আর্শির বিয়ে।


এরপর কাজির পাশে বসা বর রুপি রাহুলকে দেখেই চমকে উঠলো।অবাকের সুরে বললো-


এর সাথে আর্শির বিয়ে?কিন্তু উনি তো অলরেডি বিবাহিত।


সাথেসাথেই বাজ পড়লো উপস্থিত সবার মাথায়।


.


.


.


.


*******

বর্তমান-


জেলের দেয়ালে হেলান দিয়ে হাটু মুড়িয়ে বসে আছে পরশ।পাশেই চৌদ্দ শিকের ওপাশে টুলে বসে গালে হাত দিয়ে বসে আছে হাবিলদার রামু।ভাবনা থেকে বেরিয়ে রামু পরশের উদ্দেশ্যে বললো-


সব তো ঠিকঠাকই ছিলো এমপিসাহেব।আপনে আবার খুন খারাপি করতে গেলেন কেন?


পরশ হাসলো।কিন্তু নিরব রইলো। 


রামু অনেকক্ষণ ভেবে জিজ্ঞেস করলো-


আর কতদিন সাজা আছে আপনের?


পরশ এবারেও হেসে দিলো।বললো-


কত দিন নয় রামুকাকা।সবে তো চার বছর হলো,এখনো আট বছর বাকি।


রামু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো-


ওহহ,বারো বছর জেল আপনের।


থেমে,

তারপর কি হইলো কইবেন না এমপিসাহেব।


পরশ ধীর চোখে তাকালো রামুর দিকে।তারপর পুনরায় হারিয়ে গেল সুদুর অতীতে.......


চলবে?


রি-চেইক করা হয় নি।ভুল হলে সরি।সবাই সর্বোচ্চ রেসপন্স করবেন।

গল্প রাজনীতির_রংমহল পর্ব ২১

 #রাজনীতির_রংমহল

#সিমরান_মিমি

#পর্বসংখ্যা_২১


কেটে গেছে প্রায় দুদিন।এ সময়টাতে পরশ আর স্পর্শীর মধ্যে দূরত্ব নয় বরং খুনশুটি বেড়েছে।দুজন দুজনকে আরো গভীরভাবে চিনেছে, উপলব্ধি করেছে।স্পর্শীর সে ঔদ্ধত্যপূর্ণ  আচরণ এখন আর লক্ষ করা যায় না বরং বেশ শান্তশিষ্ট হয়ে শাশুড়ীর সাথে পুরো সংসার গুছিয়ে নিচ্ছে।তবে বাধ সেধেছে পরশ।নিত্যনতুন প্রতি মুহুর্তে নানাভাবে জ্বালাচ্ছে সে স্পর্শীকে।যার কারনে বারবার সবার সামনে লজ্জায় পড়তে হয় স্পর্শীকে।


সকাল আটটা।রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে প্লেট গোছাচ্ছে স্পর্শী।পাশেই পিয়াশা আলুর খোসা ছাড়াচ্ছে।প্রেমার ডাক শুনতেই পিয়াশা চলে গেলেন বাইরে।সিড়ি দিয়ে হাত ঘড়ি পড়তে পড়তে পরশ নামলো।রান্নাঘরের সামনে এসে আশে-পাশে বারকয়েক চাইলো।কেউ নেই।গলার আওয়াজ তুঙ্গে তুলে হাক ছাড়লো-


স্পর্শীয়া, তুমি কি ফ্রি আছো?


চকিতে তাকালো স্পর্শী।গলা আওয়াজ খাদে নামিয়ে তড়িৎ বেগে বললো-


হ্যা নেতামশাই,কিছু লাগবে?


ত্রস্ত পায়ে রান্নাঘরে ঢুকতে ঢুকতে পরশ বললো-


হ্যা,আপাতত চুমু লাগবে।পার্টি অফিসে যাচ্ছি,আসতে দেরি হবে।তাড়াতাড়ি এদিকে ঘোরো,চারটা চুমু দিব।ঘড়ি ধরা চার মিনিট লাগবে।পাচ মিনিটের সময় আমাকে গাড়িতে থাকতে হবে।


ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল স্পর্শী।মুহুর্তেই আশে-পাশে তাকালো।কাউকে না দেখে সস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।তারপর চোখ গরম করে বললো-


এই আপনাকে এমপি কে বানিয়েছে হ্যা?অসভ্য পুরুষ। সরুন,কাজ করছি আমি।


পরশ শুনলো না।এক হাত দিয়ে স্পর্শীকে টেনে নিজের কাছে আনলো। তারপর পরপর চার টা চুমু দিয়ে ঠোট কেলিয়ে হেসে দিয়ে বললো-


মিশন সাকসেসফুল। আসছি আমি।


বলেই আবার ত্রস্ত পায়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।স্পর্শী ঠোট মুছতে মুছতে কিছু ভয়ংকর গালি দিল পরশকে।তারপর আবারো কাজে মনযোগ দিল।


সারাদিনে পরশ বা পাভেল কেউই বাড়িতে আসেনি।স্পর্শী শাশুড়ীর সাথে রান্না-বান্না শেষ করে ঘরে আসলো।গোসল করে জানলার সামনে বসে ফোন হাতে নিলো।দেড়টা বাজে।অথচ লোকটা এখনো আসে নি।সেতো তার নেতামশাইকে খুব মিস করছে।পরশের নাম্বার টাতে কল করতেই ওপাশ থেকে কেটে দিল।আশ্চর্য হয়ে গেল স্পর্শী।ওনার এত্তো বড় সাহস স্পর্শীর ফোন কেটে দেয়।ভীষণ ক্ষেপে গেল স্পর্শী।আবারো দিল ফোন।কেটে দিল পরশ।স্পর্শী আবারো দিল।বাধ্য হয়ে ফোন টা রিসিভড করে দাতে দাত চেপে পরশ বললো-


মাথা পুরোটাই বিগড়ে গেছে তোমার?স্পর্শীয়া,আমি বিজি আছি।মিটিং এ আছি এখন।


বলেই কেটে দিল।মনে হলো যেন স্পর্শীর মুখের উপর কোনো দরজা বন্ধ করলো পরশ।একে তো ছাড়বে না সে।বাড়িতে থাকলে সারাক্ষণ ছুকছুক ছুকছুক করতে থাকে,অথচ বাইরে গেলে তাকে চেনেই না।মিটিং করছে,ওর মিটিং য়ের বারোটা বাজিয়ে দেবে স্পর্শী।গুটিগুটি হাতে মেসেজ লিখলো-


নেতামশাই,আপনি আমার কথা না শুনেই ফোন কাটলেন কেন?প্রয়োজনীয় কোনো কথা না থাকলে আমি কি আপনাকে ফোন করতাম?


লিখেই পরশের নাম্বারে সেন্ড করল।মেসেজটা পড়ার সাথে সাথে কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো পরশের।বাড়িতে কি কিছু হয়েছে নাকি?ভাবতেই মিটিং ফেলে দ্রুত স্পর্শীকে ফোন দেয়।ওপাশ থেকে বাকা হেসে স্পর্শী ফোন তোলে।কানে নিয়ে ধীর কন্ঠে শুধায়-


নেতামশাই,ভালো করেছেন ফোন দিয়ে।খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে আপনার সাথে।


পরশ উত্তেজিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে-


কি হয়েছে স্পর্শীয়া।


--আসলে ঘটনাটা হচ্ছে,আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি নেতামশাই। এইমাত্র উপলব্ধি করলাম,তাই ভাবলাম এতো গুরুত্বপূর্ণ কথাটা এক্ষুনি আপনাকে বলা দরকার।


থেমে,

আপনি খুশী হয়েছেন তো শুনে?


পরশ হতভম্ব হয়ে গেলো।পরক্ষণেই রাগে নাকের পাটাতন ফুলে উঠলো। দাতে দাত চেপে নিচু কন্ঠে বললো-


একবার বাড়িতে আসতে দাও।এসেই দাড়িপাল্লা নিয়ে মাপতে শুরু করবো তোমার ভালোবাসার ওজন।আমিও দেখতে চাই কতটা ভালোবাসে যার ভার নিতে পারছিলে না।মিটিং য়ের সময়েই আমায় ডিস্টার্ব করতে হলো।


-আরে,ডিস্টার্ব বলছেন কেন নেতামশাই।আমি তো....


পরশ পুনরায় দাতে দাত চেপে বললো-


আর একবার যদি ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করেছো তো থাপড়ে গাল লাল করে দিব বেয়াদপ মেয়ে।মশকরা হচ্ছে কাজের সময়।


বলেই ফোন কেটে দিল।স্পর্শী তব্দা খেয়ে কতক্ষণ ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো।মনে মনে বললো-


আশ্চর্য! এমন ভাবে বকলো যেন আমি ওনার সাথে বখাটে দের মতো প্রেম করার জন্য পিছু নিয়েছি।আরে বাপ,ঘরের বউ হই আমি তোর।ধুর!আজকে বাড়িতে আসুক তারপর দেখাবো মজা।


*******

রাত আটটা।পড়ার টেবিলে বসে পড়ছে আর্শি।কিন্তু বইয়ের ভাজে ফোন।স্ক্রিনে জ্বলজল করে ভাসছে পাভেলের ছবি।পৃষ্ঠা ওল্টাচ্ছে একবার ছবি দেখছে তো আরেকবার চুমু খাচ্ছে ফোনের উপর।এই মুহুর্তে তার পড়তে ইচ্ছে করছে না।পাভেলের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে।অনেক ভেবে চিনতে নিজেকে দমাতে না পেরে ফোন দিয়েই বসলো পাভেলকে।সাথে সাথেই রিসিভড হলো।ওপাশ থেকে পাভেল শান্ত কন্ঠে বললো -


বলো।


অবাক হয়ে গেল আর্শি। সে ভেবেছিলো হয়তো বড়সড় কোনো ধমক দিবে পাভেল।খুশিতে আটখানা হয়ে আদুরে কন্ঠে বললো-


পড়ছিলাম,কিন্তু মন টিকছিলো না।আপনার সাথে বারবার কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো।তাই টুপ করে ফোন দিয়ে বসলাম।


ঠোট টিপে হাসলো পাভেল।নিজেও আদুরে কন্ঠে বললো-


আচ্ছা,কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো ভালো কথা।আগামী পনেরো মিনিট তোমার।কিন্তু তারপর কিন্তু মন দিয়ে পড়তে বসতে হবে।রাজী।


খুশিতে চেয়ারসহ লাফিয়ে উঠলো আর্শি।উত্তেজিত কন্ঠে বললো-


রাজি,রাজি। এক পায়ে রাজি আমি।


পরশ হাসতে হাসতে বললো-


আস্তে লাফাও,পড়ে যাবা।আর্শি।


দুজন মানব-মানবী কথা বলতে লাগলো।বাস্তবিক ভাবে কথা নয় প্রেমালাপ করতে লাগলো।দুজন নিজেদের মনের কথাগুলো উজার করে দিতে লাগলো একে অপরকে । অষ্টাদশী তার ভালোবাসাকে নিংড়ে দিতে ব্যাস্ত।এমন সময়েই পেছন থেকে দানবীয় হাতটা কান থেকে ফোন টেনে নিয়ে গেল।হকচকিয়ে গেল আর্শি।সামনে তাকাতেই দেখলো জমরুপি বড় ভাই সোভাম শিকদার।গলা শুকিয়ে গেল আর্শির।হাত-পা অনবরত কাপতে লাগলো।সারা শরীর ভয়ের চোটে তরতর করে কাপতে লাগলো।


ফোন হাতে নিয়ে সোভাম লাউডস্পিকারে দিল।ওপাশ থেকে পাভেলের হাসির সাথে কথাগুলো ভেসে আসছে।


তোমার ওই ভাই না মানলে পরশ ভাই যেমন স্পর্শীকে তুলে এনেছে।আমিও তোমায় তুলে আনবো।তুমি আসবে তো আমার সাথে।


সোভামের বুজতে বাকি রইলো না এটা কে।আস্তে করে ফোন কেটে দিল।তারপর হুট করেই ঠাস করে থাপ্পড় বসালো আর্শির গালে।মুহুর্তেই হাউমাউ করে কেদে উঠলো আর্শি।সোভাম চিৎকার করে বাড়ির সবাইকে ডাকতে আরম্ভ করলো।আর্শিকে টেনে হিচড়ে বসার ঘরে নিয়ে সোফায় বসা শামসুল সরদারের সামনে ফেললো।তারপর চিৎকার করে বললো-


দু-দিনের মধ্যে ওর বিয়ে দেব আমি।লেখাপড়ার কোনো দরকার নাই।সরদার বাড়ির মান সম্মান সব ওরা দুবোন মিলে মাটির সাথে মিশিয়ে দিল।ছিঃছিঃ ছিঃ!!


চলবে?


ছোট বলে চিল্লাচিল্লি করলে টমেটো ছুড়ে মারবো।কালকে একসাথে দু পর্ব খেয়েছেন,আজকে কম খান।বিজি আছি আমি😐🫡


নোটবার্তা:রহস্যে প্রবেশ করলাম।ধৈর্য নিয়ে পড়ুন শীঘ্রই সমস্ত সমাধান পাবেন।

বোনাস পর্ব

 #রাজনীতির_রংমহল

#সিমরান_মিমি

#বোনাস_পর্ব


রাতের নিকশ অন্ধকারকে ভেদ করে পৃথিবীতে ধীরে ধীরে শুভ্রতার প্রতীক হিসেবে আলো ছড়িয়ে পড়ছে।সূর্য এখনো ওঠেনি।পূর্ব দিকের আকাশ সামান্য লাল আভা ছড়িয়েছে মাত্র।জানালা দিয়ে রুমের মধ্যে আলোর রেশ পড়তেই আড়মোড়া ভাঙলো স্পর্শী।উপুড় হয়ে উঠতেই পরশের ঘুমন্ত মুখটা দৃষ্টিগোচর হলো।এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো শ্যামলা,তামাটে মুখ খানির উপর।পরক্ষণেই রাতের কথা মনে হতেই দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে হেসে দিলো।বিছানায় শুয়ে পরশের বুকের উপর ভর দিয়ে পুনরায় খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো।আঙুল দিয়ে লোমওয়ালা প্রশস্ত বুকে আকিঝুকি করতে গিয়েই নজরে এলো হাতের লাল দাগ।পরক্ষণেই মনে পড়লো রাতের কথা।


নেতামশাই কে বাধা দিতে গেলে একপর্যায়ে কামড় মেরেছিলো হাতের উপর।মুহুর্তেই মুখ দিয়ে বিরবির করে বললো-


অসভ্য এমপি।


নড়েচড়ে উঠলো পরশ।সে তো গভীর ঘুমে নয়।চোখ বন্ধ করে শুয়েছিলো মাত্র।দপ করে চোখ খুলতেই হকচকিয়ে যায় স্পর্শী।তাড়াহুড়ো করে পরশের গায়ের উপর থেকে সরে আসে।এরইমধ্যে কোমড় ধরে টেনে নিজের বুকের সাথে ঠেস খাওয়ায় পরশ। কানের কাছে মুখ নিয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো-


সভ্য হয়েই তো ঘুমিয়েছিলাম।সহ্য হয় নি তোমার।দুর্নাম রটালে।এবারে যখন অভিযোগ তুলেই ফেলেছো তখন একটু আধটু অসভ্য হতে ক্ষতি কি বল?


হেসে দিল স্পর্শী।পরশ আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরলো তাকে।চুলে নাক ডোবাতেই পরশ নাক কুচকে ফেললো।বলল-


উমমম!চুল টাও মুছতে শেখো নি এখনো।ওঠো আমি মুছে দিচ্ছি।নয়তো পড়ে চুল পড়ে যাবে।


স্পর্শী উঠলো না।ওভাবেই শুয়ে রইলো।পরশ টাওয়াল আনলো।তারপর আলতো করে চুলগুলো মুছতে লাগলো।হঠাৎ কিছু মনে পড়তেই দ্রুত উঠে গেল সেখান থেকে।স্পর্শী ওভাবেই পড়ে রইলো।সারা শরীর ভীষণ ব্যাথা করছে। মাথা টাও ধরেছে।এরইমধ্যে পরশ বললো-


হয়ে গেছে।


বলেই পাচ ইঞ্চি কালার করা চুল  স্পর্শীর সামনে ধরল। আতকে উঠলো স্পর্শী। ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে ছলছল চোখে চুলের দিকে তাকিয়ে রইল।রাগে দুঃখে এক প্রকার কেদেই ফেললো সে।বললো-


এটা আপনি কি করলেন?আমার এত্তোগুলা চুল কোন সাহসে কাটলেন আপনি?আমার চুল!


--তো কি করবো?বাদরের লেজের মতো নিচের চুলগুলো রঙ করে রেখেছো কেন?।বিচ্ছিরি দেখাচ্ছিলো।তাই কেটে দিয়েছি।কান্নাকাটির কিচ্ছু নেই। ক দিনের মধ্যে আবার বড় হয়ে যাবে।


রেগে চেচিয়ে উঠলো স্পর্শী। বললো-


বড় হবে সেটা আমিও জানি।কত্ত শখ করে কালার করেছি আমি।আর আপনি সেটা কেটে ফেললেন।আমি আবার কালার করবো।এবার শুধু নিচের টুকু না।পুরো চুলে করবো কালার। 


কোনোরকম সময় ব্যয় না করেই পরশ বললো-


তাহলে তোমাকে পুরোটাই ন্যাড়া করে দিব।


ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল স্পর্শী।পরশ স্পর্শীকে ওভাবে তাকাতে দেখে বললো-


কি ভেবেছো,বিয়ের আগে তোমার সব বাদরামি সহ্য করেছি বলে বিয়ের পরেও করবো।নো মিসেস শিকদার,এটা তোমার ভুল ধারনা।সব বাদরামি ছুটিয়ে দিব আমি।আমায় চিনতে ভুল করেছো।একদম ভদ্র,নরম বউদের মতো থাকবা।


বলে পরশ বাথ্রুমে চলে গেল।আর স্পর্শী তব্দা খেয়ে পরশের কথাগুলো ভাবছে।


**********

মা,চাচিরা রান্নাঘরে নাস্তা বানাচ্ছে।এইফাকে মোবাইল নিয়ে ছাদে চলে গেল আর্শি।এতো এতো ঝামেলায় পাভেল ভাইকে একদম ফোন দিতে পারেনি।আজ প্রায় দুইদিন পর সে পাভেলের সাথে কথা বলবে।টানা তিনবার ফোন দেওয়ার পরেও ওপাশ থেকে রিসিভড হলো না।বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুচকে আবারো ফোন দিল আর্শি।রিসিভড হতেই ওপাশ থেকে ঘুমঘুম কন্ঠে ধমকে পাভেল বললো-


এই মেয়ে,সমস্যা কি তোমার?ফোন ধরছি না সেটা নজরে আসছে না তোমার।এতোবার ফোন দিচ্ছো কেন?ঘুমোচ্ছি আমি।


আর্শী পাভেলের ধমক শুনে ঘোর লাগানো কন্ঠে বলে উঠলো-


পাভেল ভাই,আবার পড়ে গেলাম।


চমকে উঠলো পাভেল।বিছানায় বালিশ ঠেস দিয়ে বসে জিজ্ঞেস করলো-


কোথায় পড়েছো?


ঠোট টিপে হেসে দিল আর্শি।মুখে বললো-


আপনার প্রেমে।এই যে আপনি ধমক গুলা দিচ্ছেন আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিউর পাভেল ভাই।এটা যদি রেকর্ডিং করে আপনাকে শোনানো যেতো তাহলে আপনি নিজেই প্রেমে পড়ে যেতেন।আমার কি দোষ বলুন?


পাভেল নিঃশব্দে হাসলো।মনে মনে বললো-


এই মেয়ে,আমিতো অলরেডি পটে আছি,এইসব মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে আর পটাতে হবে না।


পরক্ষণেই ভাবলো সেটা বললেও বা ক্ষতি কি?ভাই নিজেই তো ও বাড়ির মেয়ে এনে বাসর করে নিয়েছে।সে প্রেম করলেই বা কি ক্ষতি।

শান্ত কন্ঠে বললো-আর্শিয়া।


--হুম,

--ভালোবাসো আমায়?


--খুউউউব!ভীষন!অনেএএএক!


পাভেল হাসলো।শান্ত কন্ঠে বললো-


বিয়ে করবে আমায়?


আর্শি হোচট খেলো।বার কয়েক নাম্বারের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখল এটা রঙ নাম্বার কি না।আজ এতো মধুর কন্ঠ যে হজম হচ্ছে না তার।উত্তেজিত কন্ঠে বললো-


হ্যা হ্যা চাই।


পাভেল হাসলো।বললো-

তাহলে মন দিয়ে পরিক্ষা টা দাও।আরতো মাত্র পচিশ দিন বাকি।এএক্সাম দেওয়ার পরপরই নিয়ে আসবো আমার কাছে।


নুইয়ে গেল আর্শি।করুন কন্ঠে বললো-


কিন্তু আব্বু আর ভাইয়ারা যে..


বলার আগেই পাভেল বললো-


তোমার বড় বোনের  মতো বাড়ি গিয়ে তুলে আনবো।


আর্শি খুশীতে উৎফুল্ল হয়ে নেচে উঠলো।তার পাভেল ভাই তাকে বিয়ে করবে।ভাবতেই ছাদ থেকে লাফিয়ে নিচে তো আবার উপরে উঠতে করছে।ইশশ।ফোনের দিকে তাকাতেই দেখলো পাভেল ফোন কেটে দিয়েছে।ফোন টাকে বুকের সাথে কিছুক্ষন চেপে ধরে নিচে চলে গেল।


*********

শিকদার বাড়ির সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সরদার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলেন বিপাশা।আসার সময় স্পর্শী খুব কেদেছে।বিপাশার ও ভীষণ কষ্ট হয়েছে স্পর্শীকে ছেড়ে আসতে।মনে হচ্ছিলো কলিজা টা ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছে।বাড়ি ফিরে কি করে ছেলের চোখে চোখ রেখে কথা বলবে সে?ছেলেটার প্রাণভোমরা টাকে নিজ হাতে অন্য ছেলের হাতে সপে দিয়ে গিয়েছে।যদিও রাহুল অনেকবার বলেছে সে সামলে নিয়েছে নিজেকে।কিন্তু বিপাশা তো জানে  ছেলেটা ভেতরে ভেতরে ঢুকরে মরছে।টাকা জমিয়ে স্পর্শীর জন্য আংটি কিনেছিলো রাহুল। সব সময় আংটিটা নিজের পকেটেই রাখে।

এই তো এখানে আসার আগে আংটিটা তার হাতে দিয়ে বলেছিলো, স্পর্শীর স্বামীকে উপহার দিতে।প্রথমে আনে চেয়েছিলো না বিপাশা।বাধ্য হয়ে এনেছে।ইশশ,ছেলেটা মনে করে না দিলে আত্নীয় স্বজনের সামনে মাথা কাটা যেত।হুট করে আসাতে তো কোনো উপহার'ই আনা হয় নি।


খুব শীঘ্রই ভালো একটা মেয়ে দেখে রাহুলের বিয়ে দিতে হবে। নইলে ছেলেটা তার মরেই যাবে স্পর্শীর শোকে।


**********

ফ্লোরের উপর একটা পাটি বিছিয়ে, মাথার নিচে এক হাত দিয়ে অন্যহাত কপালে ঠেকিয়ে শুয়ে আছে পরশ। ভীষণ মাথা যন্ত্রনা করছে।পাশের সেল থেকে ভীষণ চেচামেচির আওয়াজ আসছে।আর শুতে পারলো না পরশ। থালাবাসন ফেলার শব্দ,মারামারি,গালাগালির শব্দে মাথা যন্ত্রনা বাড়ছে।উঠে বসে পাশের হাবিলদারকে জিজ্ঞেস করলো-


ওখানে কি হয়েছে?


--আর বইলেন না এমপি সাহেব। নতুন একটা খুনের আসামী আইছে।সারাদিন মারামারি করতেই থাকে।শুনছি,এই ব্যাটা নিজের বউয়ের গলা কাইট্টা খুন করছে তারপর জেলে আইছে।


থেমে,

এইসব খুনীগুলারে ফাসি না দিয়া সরকার জেলে পাঠাইছে আমাগো ভোগানোর লাইগা।


পরশ হাসলো।কন্ঠে কাঠিন্যতা এনে বললো-


সব খুনীরা খারাপ হয় না।এর স্ত্রীর মতো সমাজে কিছু বিষাক্ত মানুষের জন্য এরা খুন করতে বাধ্য হয়।এইসব বিষধর সাপ গুলোকে ইচ্ছে করে বারবার খুন করি।একাধিকবার জ্যান্ত করি আবার খুন করি।কিন্তু আফসোস!এদের একবার'ই খুন করা যায়।


ঘাবড়ে গেলেন হাবিলদার।আমতাআমতা করে বললেন-


আপনে যেন কয়টা খুন করছেন?


পরশ আবারো হাসলো।যেন খুনের কথাগুলো বলতে তার ভীষণ ভালো লাগছে আনন্দ হচ্ছে।স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো-


তিনটা মার্ডার,আর দুটো পঙ্গু করে জেলে এসেছি।এক দুজন খুন করে পরশ শিকদার জেলে আসবে না।


চলবে?


কেমন লাগলো সারপ্রাইজ 😊ছয় ঘন্টার মধ্যে দিয়ে দিলাম☺️