গল্প রাজনীতির_রংমহল পর্ব ৭

 #রাজনীতির_রংমহল

#সিমরান_মিমি

#পর্বসংখ্যা_০৭



তোমার কি কোনো সমস্যা হচ্ছে ভাইয়া?আমাকে এর আগে কখনো দেখো নি?এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?


বাকরুদ্ধ হয়ে গেল রাহুল। স্পর্শী যে বাবার সামনেই এমন ভাবে নাকানিচুবানি খাওয়াবে তা ক্ষুনাক্ষরেও বুজতে পারেনি।আবদূর রহমান খাওয়া রেখে স্পর্শীর দিকে তাকালো।তারপর ছেলের দিকে তাকিয়ে বললো-


আমিও তোমার সমস্যাটা'র কথা জানতে চাইছি রাহুল।বেশ অনেকদিন ধরে জিজ্ঞেস করতে চাইলেও সময় বা সুযোগ কোনোটাই হয়ে ওঠে নি।তাছাড়া স্পর্শী মাও তো আর আগের মতো বাড়িতে আসে না যে দুটো কথা বলবো।


বলেই স্পর্শীর দিকে পুনরায় তাকালেন। স্পর্শী নিরব ভাবেই নিচের দিকে তাকিয়ে খেয়ে যাচ্ছে।ভীষণ খারাপ লাগলো আব্দুর রহমানের। সেই জন্মের তিনদিন পর থেকে যে বিপাশা ওকে নিয়ে এলো সেই থেকে বাবার মতো যত্নে-স্নেহে বড় করে তুলেছে।স্পর্শীও বাবার মতো সারাক্ষণ আবদারের মেলা নিয়ে বসতো।খাবার টেবিলে কখনো নিরব হয়ে খেতে পারতো না।দুই ভাই-বোন মিলে কারাকারি -ভাগাভাগি-রাগারাগিতে মেতে থাকতো। কিন্তু হঠাৎ করে মেয়েটা একদম নির্জীব হয়ে গেল৷ বাড়ি তো ছাড়লোই সেই সাথে আগের সেই চঞ্চলতাও ছেড়ে দিলো।হোস্টেলে কত কষ্ট করে থাকছে।আব্দুর রহমান চাইলেই জোর করে স্পর্শীকে বাড়িতে রাখতে পারতেন।কিন্ত তা করেন নি। ভয়ে,পাছে যদি অধিকারের প্রশ্ন ওঠে।বাবার চেয়ে খালুর দরদ বেশি।নিরবে দীর্ঘ শাস ছাড়লেন।মুখের খাবার শেষ করে রাহুলকে বললেন-


বেশ অনেকদিন ধরে তোমার বেহায়াপনা সহ্য করছি।আর নয়,এবার যেকোনো একটা সিদ্ধান্তে যেতে হবে তোমায়।এই মাসের মধ্যে হয় তুমি মেয়ে পছন্দ করবে না হয় আমরা তোমার জন্য মেয়ে দেখবো।অনেক হয়েছে,বয়স তো আর থেমে থাকছে না।দুদিন পরে মেয়ে পাওয়াই মুশকিল হয়ে যাবে।দ্রুত চাকরী নেও আমি বিয়ের ব্যাবস্থা করছি।


রাহুল অসহায় হয়ে স্পর্শীর পানে চাইল।ওর কি একটুও কষ্ট হচ্ছে না।তারপর বাবার দিকে তাকিয়ে বললো-


আব্বু তুমি জানো আমি....


ধমকে উঠলেন রহমান সাহেব।চেচিয়ে বললেন-


খবরদার!আমি তোমাকে শেষ বারের মতো সাবধান করছি স্পর্শী'মাকে ডিস্টার্ব করবে না।তোমার পছন্দ কে গুরুত্ব দিয়েই  এতোদিন অপেক্ষা করেছি।আর নয়,স্পর্শী তোমাকে পছন্দ করে না।তাই ওর জন্য আর বসে থাকবে না।তুমি আমার ছেলে,এতটুকু সেল্ফ রেস্পেক্ট নেই তোমার মধ্যে।মেয়েটা তোমার জন্য বাড়ি পর্যন্ত ছেড়েছে।এবারে কি চাও?


থেমে,


ঠিকাছে,তুমি যদি বিয়ে না করে চিরকুমার থাকতেও চাও তাহলেও আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি আগে তাহলে স্পর্শী'মার বিয়ে দেব।


খুক করে কেশে উঠলো স্পর্শী।এতোক্ষণ তো সব ভালোয় ভালোয়'ই যাচ্ছিলো। হঠাৎ আবার তার বিয়ে কেন?


রেগে টেবিল ছেড়ে উঠে গেল রাহুল।স্পর্শীও গেল নিজের রুমে।আর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়েই হোস্টেলে চলে যাবে।


খালামনির কাছে বিদায় নিয়ে গেটের কাছে এলো স্পর্শী।স্কুটিতে বসতেই ওপাশ থেকে রাহুল হাত ধরে টেনে হিচড়ে নামালো।তেড়ে এসে স্পর্শীর দু-গাল চেপে ধরে বললো-


খুব তেজ না তোর।তোর তেজ কিভাবে কমাতে হয় তা রাহুলের ভালো করে জানা আছে।ওই তুই কোন রাজার ছেলেকে বিয়ে করবি হ্যা?দেখতে তো আহামরি কতটা সুন্দর ও না।এতো দেমাগ কেন?তোর থেকে হাজারগুন সুন্দরী মেয়েরা রাহুলের পায়ের কাছে বসে থাকে এটেনশন পাওয়ার জন্য।


দুহাত দিয়ে রাহুলের হাতের থাবা খুলতে চাইছে স্পর্শী।শেষে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললো-


আমি জানি আমি দেখতে কেমন?সেটা তোমার থেকে জানতে হবে না।এতো সুন্দরী মেয়েরা পেছনে পড়ে থাকলে বেহায়ার মতো এখনো আমার পেছনে ছ্যাচড়ামি করো কেন?খবরদার আমার গায়ে ভুলেও হাত দিবে না।তুমি ছুলেও আমার বমি আসে।


হতভম্ব হয়ে গেল রাহুল।বুকের ভেতরটা কেমন দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে।স্পর্শী কি তাহলে প্রেম করে অন্যকারো সাথে?চোয়াল শক্ত করে স্পর্শীর হাতে থাকা ফোন'টা ছিনিয়ে নিলো।


স্ক্রিন অন করতেই দেখলো "নেতামশাই" লিখে সেভ করা নাম্বার থেকে দুটো মিসডকল।কললিস্টে ঢোকার আগেই ছিনিয়ে নিজের ফোন নিয়ে গেল স্পর্শী।রাহুল দাতে দাত চিবিয়ে বললো-


ওই এই নেতামশাই কে?তুই প্রেম করিস?স্পর্শী, আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।


--তোমার সাহস হলো কি ভাবে আমার ফোন চেক করার?তুমি কোন আক্কেলে আমার ফোন ধরছো?


--ওই নাম্বার টা কার?


--আমার জামাইয়ের।আর কিছু?বিয়ে করছি আমি।প্রেম করে বিয়ে করছি।এই জন্য তোমাকে ইগনোর করি।বুঝতে পারো না তুমি।আর দ্বিতীয়বার আমার চোখের সামনে পড়বে না।


বলেই স্কুটি নিয়ে চলে আসলো রহমান ভিলা থেকে।

প্রায় অনেকটা দূরে নির্জন জায়গায় আসতেই স্কুটি থামায়।ডুকরে স্কুটির পাশে বসে পড়ে।কাদতে থাকে অনবরত।ডান হাতটা ব্যাথায় নীল হয়ে আছে।দুগাল যন্ত্রনায় যেন ছিড়ে যাচ্ছে।তার জীবনটা এমন কেন?বাইরের মানুষ সবসময় অধিকার দেখায়।একটা নিজের মানুষ নেই,যাদের সাথে মনখুলে জেদ ধরে বসে থাকতে পারে।কেউ নেই স্পর্শীর।সবাই শুধু দায়িত্ব টা পালন করে।বাবা তো থেকেও নেই।মাসে মাসে হাজার হাজার টাকা পাঠিয়ে শুধুমাত্র দায়িত্ব টুকু এড়িয়ে যায়।মাঝেমধ্যে মনে হয় ওই টাকা ছুড়ে মারতে।কিন্তু তাহলে চলবে কিভাবে?এতটাও সহজ নয় জীবন।


ফোন অনবরত বাজছে।সেদিকে হুশ নেই স্পর্শীর।সে তো হুহু করে ব্যাথায় জর্জরিত হাতের উপর হাত বুলিয়ে কেদে যাচ্ছে।কতক্ষণ পর পর চারদিকে তাকিয়ে দেখছে কেউ আছে কিনা।সে তো কাউকে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করতে চায় না।


স্পর্শীয়া,এই মেয়ে?স্পর্শীয়া।তুমি কি কাদছো?

এই কি হয়েছে?এইইই?স্পর্শীয়া?


কোলের মধ্যে থেকে ছোট্ট আওয়াজে এমন উত্তেজিত কন্ঠের আওয়াজ শুনতেই  চমকে উঠলো স্পর্শী।শব্দ টা ফোন থেকেই আসছে।হাতে নিতেই দেখলো নেতামশাই নাম্বার টি।হয়তো হাতে টাচ লেগেই রিসিভড হয়ে গেছে। ফোন কেটে দিল স্পর্শী।ভাল লাগছে না তার কথা বলতে। কল কাটার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে আবারো কল আসলো।টানা তিনবার কাটার পরেও যখন ফোনের পর ফোন আসলো তখন রেগে ফোনটা'ই বন্ধ করে রাখলো স্পর্শী।


হতাশ হয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রইলো পরশ।মেয়েটা কাদছিলো,হ্যা।হুহু করে কাদছিলো,পরশ স্পষ্ট শুনেছে সেই কান্নার আওয়াজ। কি এমন হয়েছে যে স্পর্শী কান্না করছিলো। বুকের বাম পাশটা কেমন চিনচিন করে উঠলো। ইচ্ছে করছে ছুটে যেতে ঢাকায়।গিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিতে।কিন্তু কোন অধিকারে যাবে সে?এখনো যে কোনো সম্পর্কের সুত্রপাত'ই ঘটেনি।আর তাছাড়াও সে যে ভীষণ ব্যাস্ত।পিরোজপুর থেকে ঢাকায় যেতে আসতে কমপক্ষে পাচ-ছয় ঘন্টা লাগবে।একজন রাজনৈতিক নেতার কাছে কি এই সময় হবে তাও কোনো মেয়েকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য।মাথার উপর হাত রেখে চোখ বন্ধ করে নিল পরশ।ভীষণ অস্থির অস্থির লাগছে।


সারাদিন শেষ। নিজের অতি ব্যাস্ততা থাকা সত্ত্বেও প্রতি দশ মিনিট পর পর স্পর্শীর নাম্বারে ফোন দিয়েছে পরশ।ফোন আগের মতোই বন্ধ।উফফস, এতোটা অস্থির কেন লাগছে?আচ্ছা,সে ও তো স্পর্শীর সাথে কথা বলার মাঝখানেই ফোন বন্ধ করে দেয়।তখন কি তার ও এমন অস্থির অস্থির লাগে।


রাত নয়টা,পুনরায় ফোন দেওয়ার সাথে সাথেই চমকে উঠে পরশ।রিং পড়ছে।একবার,দুইবার, তিনবার.......কেটে গেল ফোন।রিসিভড হলো না।পুনরায় দশ বারের মতো ফোন দেওয়ার পরেও যখন ধরলো না।তখন পরশ গুটিগুটি অক্ষরে মেসেজ পাঠালো।


স্পর্শীয়া,ফোন ধরছো না কেন?আর সারাদিনে ফোন বন্ধ করে রেখেছিলে কেন?


সাথে সাথেই ওপাশ থেকে ফিরতি বার্তা এলো।


--কেন?এখন খারাপ লাগছে।যখন আপনি কথার মাঝখানে বন্ধ করে রাখেন,তখন?আমি ফোন ধরবো না।


 মেজাজ বিগড়ে গেল পরশের৷ ইচ্ছে করছে কানের উপর দু-তিনটা মারতে।সে কতটা ভয় পেয়ে গেছিলো আর এই মেয়ে ঢং করছে তার সাথে।দাতে দাত চেপে আবারো ফোন দিলো।কিন্তু ধরলো না।শেষে আবারো মেসেজ দিলো-


ফোন ধর,কথা আছে আমার।


--আমার তো কোনো কথা নেই। শুনুন নেতামশাই,নিজের নেতাগিরি অন্যদের উপর ফলান।আমাকে একদম বিরক্ত করবেন না।ফোন ও দিবেন না।আমি অলরেডি সিম চেঞ্জ করে ফেলেছি। 


ব্যাস,মেসেজ আসার সাথে সাথেই ওপাশের ফোন বন্ধ।দাতে দাত চেপে ফোন'টা ছুড়ে ফেলে দিল পরশ।এই মেয়ের কত্তবড় সাহস?তাকে ইগ্নোর করে।এমনকি সে ফোন দিলে বিরক্তও হয়।নাহ,আর ফোন দিবে না পরশ।একটা মেয়ের কাছে এতটা ছোট হওয়াও উচিত হবে না।ভীষণ ভাবে স্পর্শীর কথাগুলো আত্নসম্মানে লাগলো পরশের।


চলবে?


বার্তা:প্রতি পর্ব দেওয়ার পর ২৪ ঘন্টা হওয়ার আগেই আমি পরবর্তী পর্ব আপ্লোড দেই।অথচ পাঠকদের এক তৃতীয়াংশের মন্তব্য হয়,"আমি প্রতি পর্ব দেরী করে দেই, এমন হলে আগ্রহ থাকে না,যেন নিয়মিত দেই ইত্যাদি।সত্যি'ই কি আমি এসবের প্রাপ্য।আপনারা কে কোথা থেকে গল্প পড়েন আমি জানি না।কিন্তু দয়া করে আপ্লোড দেওয়ার সময়টা লক্ষ করে তারপর এরকম মন্তব্য করবেন।ভীষণ হতাশ হই এসব দেখে।


যাই হোক,আজকে ছোট করে হলেও একটা বোনাস পার্ট দেব।দ্রুত এই পর্ব পড়ে নিন এবং রিসপন্স রাখুন।

গল্প রাজনীতির_রংমহল পর্ব ৬

 #রাজনীতির_রংমহল

#সিমরান_মিমি

#পর্বসংখ্যা_০৬


উত্তপ্ত দুপুর,এসির ঠান্ডা পরিবেশের মধ্যে থাকার পরেও বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে কপালের ডগায়।হাতের আঙুল দিয়ে মুছে নিল ঘামটুকু।একদৃষ্টে ফোনের দিকে তাকিয়ে ভাবনাতে মশগুল হলো পুনরায়।সামান্য পরিচয় দেওয়াতেই যে এমন করবে স্পর্শী সেটা আগে জানলে ক্ষুনাক্ষরেও টের পেতে দিত না পরশ।ফোন আরো পাচ মিনিট আগেই কেটে দিয়েছে অপর পাশ থেকে।ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়ছে পরশ।এই যেন কিছু একটা হারিয়ে ফেললো সে।সবকিছু সুন্দরভাবেই তো হচ্ছিলো।ধুর,আজকে ফোন দেওয়াটাই উচিত হয়নি।


পুনরায় মনে মনে স্পর্শীর প্রতি রাগ হলো।এমনিতে তো সারাক্ষণ মুখ চলে অথচ পরিচয় পেয়েই চুপসে গেছে। সময় যত কাটছে ততটাই উদভ্রান্তের মতো হয়ে যাচ্ছে পরশ।উফফফ এ কেমন জ্বালা।নিজেকে কন্ট্রোল করাই দায় হয়ে যাচ্ছে।এমন হলে তো কোনোদিনই ওই মেয়ের সাথে কথা বলাই উচিত হয় নি।মন চাচ্ছে গিয়ে তুলে নিয়ে আসতে।নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে পুনরায় ফোন দিল পরশ।কিয়দংশ পরেই রিসিভড হলো।


সারা শরীর কেমন শীতল হয়ে এলো।বুকের উপর দিয়ে যেন কোনো পাথর সরে গেছে।ঠোট গোল করে সস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।তারপর স্পর্শীর উদ্দেশ্য ধীর কন্ঠে আওড়ালো-


কি ভয় পেয়ে গেলে নাকি আমাকে?নাকি ঘাবড়ে গেছো?ফোন কাটলে কেন?


এটা সত্যি যে এমপি শোনার পরে স্পর্শী কিছুটা অসস্তিতে পড়েছে নিজের পূর্বের বলা কথাগুলোর জন্য।কিন্তু তাই বলে ভয় পাবে?ভীষণ আত্নসম্মানে লাগলো তার।নাকের পাটাতন ফুলিয়ে তেজি কন্ঠে বললো-


কেন কেন?আপনাকে ভয় পেতে যাব কেন?আপনি কোন যুগের আলেকজান্ডার যে আপনাকে শুনে ঘাবড়ে যাব।


স্পর্শীর ত্যাড়া কথা শুনে পুনরায় ক্ষান্ত হলো পরশ।চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বললো-


তাহলে ফোন কাটলে কেন?আগে তো ঠিক'ই কথা বলছিলে।


ভাবনায় পড়ে গেল স্পর্শী।যাই হয়ে যাক না কেন এই লোকের কাছে হার মানা যাবে না।কিন্তু কি বলবে সে এখন?অনেক ভেবে টান দিয়ে বললো-


ওও আমি একটা কথা ভাবছিলাম।


ভ্রু কুচকে নিল পরশ।বললো-


তা কি এমন ভাবছিলে যার জন্য ফোন কাটতে হলো।


মেজাজ বিগড়ে গেল স্পর্শীর।এই লোক তাকে সামান্য ফোন কাটার জন্য জেরা করছে।নিজের এমপি গিরি স্পর্শীর উপর ফলাচ্ছে।একে তো সেকেন্ডের মধ্যে সাবান ছাড়া ধুয়ে রশিতে টাঙিয়ে দেবে স্পর্শী।ত্যাড়া কন্ঠে বলল-


ও আমি ভাবছিলাম আপনি আদোও কোনো এমপি কি'না।আর হলেও কতটা লুচু এমপি যে অচেনা মেয়েদের ফোন দিয়ে বিরক্ত করে।এই বাংলাদেশে আর কি কোনো মেয়ে নেই নাকি।আপনি বেছে বেছে আমাকেই কেন ফোন দিচ্ছেন?হুহ।


বাকরুদ্ধ হয়ে গেল পরশ।এই মেয়ে তার অতো ভালো চরিত্রে সেকেন্ডের মধ্যে দাগ লাগিয়ে দিল।মাত্র দু-বার ফোন করাতেই লুচ্চা বানিয়ে দিলো। কি এমন লুচ্চামি করেছে সে।আর বিরক্ত?উফফফ ভাবতে পারছে না পরশ।কিন্তু পরশের তো রাগ'ও লাগছে না।আশ্চর্য ব্যাপার স্যাপার।দিনদিন সে কেমন কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলছে নিজের উপর। নিজেকে সামলে ধীর কন্ঠে স্পর্শীকে বললো-


অচেনা কাউকে মেসেজ দিয়ে নিজের বাচ্চার বাপ বানিয়ে দিতে পারো তাতে কিচ্ছু হয় না।অথচ সামান্য দুটো কথা বলতেই আমি লুচু হয়ে গেলাম।কি বিচার বলো তো?


রাগ লাগল স্পর্শীর।সেদিন কোন কুক্ষণে যে এমপির নাম্বারে মেসেজ দিতে গেছিলো কে জানে।আল্লাহ জানে আরো কতদিন ঝারে এই লোকে।নিজেকে সংযত করে ভীষণ সিরিয়াস হলো। বললো-


আচ্ছা একটা কথা বলুন তো।আপনি একজন এমপি মানুষ। বিশাল বড়সড় আপনার ব্যাপারস্যাপার। অথচ আপনি আমাকে নিয়ম করে ফোন দিচ্ছেন, দেখা করছেন,শাসন করছেন।কেন বলুন তো?সামথিং সামথিং নাকি হ্যা?


খুক করে কাশি উঠে গেল পরশের।টেবিলের উপর থেকে পানির বোতল খুলে ঢকঢক করে খেল।এ মেয়ে এতো নির্লজ্জ কেন?সব কথা গড়গড় করে মুখের উপর বলতে হবে এমন কোথাও লেখা আছে নাকি।কিছু তো বুঝেও বসে থাকা যায়।মুখে বললো-


তেমন কোনো ব্যাপার না।


-উহুমউহুম তা বললে তো চলবে না নেতা মশাই।আমি একজন মেয়ে। আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় বলছে আপনি আমার প্রেমে হাবু-ডুবু,উহুম না ডুবেন নি এখনো তবে সাতার কাটার জন্য পুরো জ্যাকেট/ট্যাকেট পড়ে রেডি আছেন।কি তাইতো?


ঠোট কামড়ে হেসে দিল পরশ।কি সাংঘাতিক মেয়ে।এর সাথে কিছু লুকানো যাবে না।এই ত্যাড়া মেয়ের সাথে ত্যাড়ামি'ই করতে হবে।চেয়ার থেকে উঠে জানালার কাছে গেল।আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো-


হ্যা,তো । তাতে কি এমন হয়েছে?এমপিদের কি কাউকে পছন্দ হতে পারে না।তারা কি প্রেম করতে পারে না,বিয়ে করে বাচ্চা-কাচ্চা ও আনতে পারে না।নাকি শুধু তুমি'ই বিয়ে ছাড়া মেসেজে বাচ্চা আনা থেকে শুরু করে ক-ঘন্টার মধ্যে ডেলিভারি পর্যন্ত করাতে পারো।


ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল স্পর্শী। এমা এই এমপি দেখছি এখন অন্য সুরে গান গাইছে।নানা,যতটা ভোলাভালা সে ভেবেছে ততটাও সুবিধার এ নয়।একটু বুঝে শুনে কথা বলতে হবে।মুখে বললো-


না,আমি কি সেটা বলেছি নাকি।অবশ্যই পারে।দেশের এমপি-মন্ত্রীরা যদি বউ-বাচ্চা ছাড়া সিংগেল লাইভ পার করে তাহলে  ভবিষ্যতে  তাদের বংশধর গুলো আসবে কোত্থেকে।কিন্তু আমি বলছিলাম কি  নেতা মশাই,এত্তো এত্তো মেয়ে থাকতে আমি'ই কেন?


এবারের উত্তর দিতে সময় নিলো না পরশ।চট করে বলে উঠলো-


হ্যা,সেটা তো আমি'ই ভাবছি।তুমি'ই কেন?পুরোটা আবেগের বয়স কাটিয়ে এলাম অথচ কেউ একটু টলাতেও পারেনি সেখানে তোমার মতো একটা ভয়ংকর মেয়েই কেন?

থেমে,

শোনো মেয়ে,তোমাকে আমার একটু পছন্দ হয়েছে।তাই বলে আবার উড়তে শুরু করো না।


রাগ  লাগলো স্পর্শীর।নাকের পাটাতন ফুলিয়ে বেশ ঘন করে শ্বাস নিলো।উড়ো না মানে কি?সে কি ভাবছে?সে তাকে পছন্দ করেছে বলে কি স্পর্শী ধন্য হয়ে গেছে নাকি।একটুও না।স্পর্শী তো এখন একে বাজিয়েই দেখবে।একদম প্রেমে নাকানিচুবানি খাইয়ে দিশেহারা করে দেবে।প্রথম প্রথম এত্তো ভালো কথা বলবে যে এই নেতাকে একদম তার নেওটা বানিয়ে দেবে আর উদ্দেশ্যে সফল হওয়ার পরপর'ই একদম সিম'ই অফ করে দেবে।এমনিতেই এই সিম'টা রাহুল ভাইয়া জানার কারনে চেঞ্জ করতে হবে। নিজের মনোবাসনাকে পুরণ করার জন্য বেশ গুছিয়ে কিছু প্রেমবাক্য মুখের কাছে আওড়ালো স্পর্শী।ফোনটাকে মুখের কাছে এনে বেশ সুরেলা কন্ঠে বললো-


নেতামশাই শুনুন.........


এরইমধ্যে ওপাশ থেকে ফোন'টা টুট টুট করে কেটে গেলো।আশ্চর্যে হা হয়ে গেল স্পর্শী।তার মুখের উপর ফোনটা কেটে দিলো। কত্ত বড় সাহস?কই স্পর্শী তো কখনো কাটে না,বরং কথা বলতে না ইচ্ছে করলেও ভদ্রতাস্বরুপ কথা বলে।তাহলে সে এমন কেন করলো?কত্ত কষ্ট করে কিছু প্রেমময় বাক্য মনে করলো,স্পর্শী নিশ্চিত এইভাবে পাচ মিনিট কথা বললেই ওই এমপি তার প্রেমে বর্ষার কাদা- পানিতে পিছলে পড়ার মতো আছড়ে পড়তো।কিন্তু,এটা কি হলো?প্রেমে তো পড়লোই না বরং ফোনটা'ই কেটে দিলো।পুনরায় নিজে থেকে দু-বার ফোন দিলো।কিন্তু ফোনটা বন্ধ আসছে।আর কক্ষনো ফোন ধরবে না এই লোকের।কথাও বলবে না।রেগে ঝামটা মেরে বিরবির করে গালি দিলো পরশকে।তারপর পাটি হাতে নিয়ে উঠে ছাদ থেকে নিচে নেমে গেলো।


_____

স্পর্শীর সাথে কথা বলা অবস্থায় সামনে তাকাতেই দেখলো দরজা দিয়ে পাভেল ভেতরে ঢুকছে।তৎক্ষনাৎ তাড়াহুড়ো করে ফোন কেটে বন্ধ করে পকেটে ভরে রাখলো।কেননা,পাভেল একটাবার বিষয়টা আচ করতে পারলেই বিশাল কেলেংকারি বাধিয়ে ফেলবে।সবে মাত্র নিজের অনুভূতি টাকে বুজতে পেরেছে পরশ।এবারে স্পর্শীকেও বোঝার সূযোগ দিতে চায়।তাড়াহুড়ো করে কোনো কাজ করে  পরবর্তীতে পস্তানোর বান্দা তো সে নয়।


সবসময়ের উৎফুল্ল থাকা ভাইটা'কে চিন্তিত দেখে ভ্রু কোচকালো পরশ। পাভেলের সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই বললো-


ভাই,আমার খুব টেনশন হচ্ছে।


--কোন ব্যাপারে?


পাভেল কিছুক্ষণ নিরব রইলো।তারপর পরশের দিকে তাকিয়ে বলল-


সোভাম সরদারের বিষয়টা নিয়ে।আরে ওরা তো এমন চুপ থাকার লোক না।কিন্তু দেখ,এখনো বেশ আনন্দে আছে যেন কিছু হয়'ই নি।আজকে ভার্সিটি থেকে আসার পথে দেখা হলো।ওর লোকজন নিয়ে ওদিকটায়'ই যাচ্ছিলো কি কাজে।আমাকে দেখে বেশ ত্যাড়ামি করে হাসছিলো।মানে আমি বুঝলাম না,হাসির কি আছে।


থেমে,

দাতে দাত চেপে,

ওর ওই বিদঘুটে হাসি দেখে তো আমার গা জ্বলে যাচ্ছিলো।ইচ্ছা করছিলো এক পাঞ্চ মেরে দাত গুলোই ফেলে দেই।শালার,ওই জানোয়ার টাকে দেখলেই আমার গায়ের রক্ত টগবগ টগবগ করে ফুটতে থাকে।তুই ভাবতো আমি নিজেকে ঠিক কিভাবে কন্ট্রোল করেছি,ওই শালা আমাকে দেখে দাত কেলাচ্ছিলো। 


পরশ চেয়ারে গা এলিয়ে দিলো।তারপর পাভেলে'র দিকে তাকিয়ে বললো-


ওরা চায়'ই তো এটা।যাতে আমরা নিজে থেকে কোনোভাবে আক্রমন করি।আর সেই ইস্যু টাকে নিয়ে একদম বেশ ভালো ভাবে ঝামেলা বাধাতে পারে।আমি তোদের বলেছি না,এই ক'টা মাস একটু ধৈর্য ধর।দলের ছেলেদের ও একদম গা কামড়ে থাকতে বলবি।ওরা প্রথমে অনুষ্ঠানে বম রেখেছে।ওরা কোনো প্রমাণ না রাখলেও নিশ্চিত জানতো আমরা ওদের দায়ী করবো।এক্সাটলি এই বিষয়টার জন্যই ওরা বম রেখেছে।যাতে তোরা রেগে গিয়ে ওদের সাথে ঝামেলায় জড়াস। যখন দেখলো তোরা নিজেদের'কে সামলে আছিস তখন বিভিন্ন ভাবে তোদের উশলে দেবে।কিন্তু সাবধান!আমি যেন শুনি না আমার দলের কেউ মারামারি-বা এই ধরনের কোনো ঝামেলায় জড়িয়েছে।নির্বাচন শেষ হলেও এখনো তার রেশ কাটেনি। ক'টা মাস যাক,সবকিছু ঠান্ডা হোক,তারপর ওর ব্যাবস্থা আমি করবো।


পরশ পুনরায় পাভেলের দিকে  তাকালো।এখনো দাত কামড়ে আছে।এই বয়স টাতে রক্ত গরম থাকে।নিজেকে সামলানো খুব মুশকিল হয়ে যায়।শান্ত স্বরে বললো-


খিদে পেয়েছে। 


আহা,খিদের কথা বলা মাত্রই যেন পাভেল নিজের রুপে ফিরে এলো।পেট চেপে ধরে সোফার উপর শুয়ে পড়লো।কাতর কন্ঠে বলল-


খুউউউব।


--আচ্ছা,তাহলে তুই বাড়ি যা।

---তুই ও চল।একসাথে যাই।কাজ তো নেই তেমন।

হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিলো পরশ। তারপর সম্মতি দিয়ে দুজনেই অফিস থেকে বেরিয়ে গেল।


________

দুপুরবেলা,খাবার টেবিলে বসতেই স্পর্শীর অসস্তি হচ্ছে।এমনটা তো এর আগে হয় নি।পাশে তাকাতেই দেখলো রাহুল ওর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।টেবিলের বাম দিকের চেয়ারে বসে আছে খালু আব্দুর রহমান,রাহুল আর ডানদিকে স্পর্শী আর বিপাশা।খালা-খালুর বেশ আদরের একমাত্র ছেলে রাহুল।কোনো মেয়ে নেই বিধায় বেশ আদর করে সবাই স্পর্শীকে। কিন্তু এই আদর গুলো এখন গায়ে কাটার মতো বিধছে। দিন দিন ভাই রুপি রাহুলের দৃষ্টি যেন নোংরা হচ্ছে।ভীষণ ভাবে হাস-ফাস করতে লাগলো খাবার টেবিলে বসে।শেষে বাধ্য হয়ে রাহুলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো-


তোমার কি কোনো সমস্যা হচ্ছে ভাইয়া?আমাকে এর আগে কখনো দেখো নি?এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?


বাকরুদ্ধ হয়ে গেল রাহুল। স্পর্শী যে বাবার সামনেই এমন ভাবে নাকানিচুবানি খাওয়াবে তা ক্ষুনাক্ষরেও বুজতে পারেনি।আবদূর রহমান খাওয়া রেখে স্পর্শীর দিকে তাকালো।তারপর ছেলের দিকে তাকিয়ে বললো-


চলবে?


রিসপন্স ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।গল্পটা কি কোথাও ভালো লাগছে না আপনাদের?নিরব পাঠকরাও সাড়া দিবেন প্লিজ।

গল্প রাজনীতির_রংমহল পর্ব ৫

 #রাজনীতির_রংমহল

#সিমরান_মিমি

#পর্বসংখ্যা_০৫


মাঝরাতে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ কর্কশ কন্ঠে বাজতে থাকা ফোনটা কানে নিতেই ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠের এমন কথা শুনে স্ক্রিনের দিকে তাকালো পরশ।চোখ স্থির করে নাম্বার'টা দেখেই আতকে উঠলো।

এটা তো স্পর্শীয়া।আবার কি ঝট পাকিয়েছে মনে মনে যে এতো মধুর কন্ঠে কথা বলছে।নাকি এই রাত দুটোর সময় কারো সাথে বাজি ধরেছে?হতেও পারে,এ মেয়ে যে ভীষণ ডেঞ্জারাস। 


বারকয়েক ঘুমন্ত চোখের পাপড়িগুলো বন্ধ করে পরশ বললো-

স্পর্শীয়া,আজ নয়।ঘুমানোর সময় এখন।রাখছি।


ওপাশ থেকে চিৎকার করে উঠলো স্পর্শী।ঘনঘন কন্ঠে বলতে লাগলো-


উহুম একদম না।ফোন কাটবেন না কিন্তু।কথা আছে আমার আপনার সাথে।আর তাছাড়াও আপনি ফোন দিলে আমি কি কেটে দিয়েছিলাম নাকি।


দমে গেল পরশ।ঘুমন্ত গরম নিঃশ্বাস টুকু ঠোট গোল করে ছেড়ে দিলো। বারকয়েক নড়ে মাথার বালিশটা উচু করে দিয়ে শুলো।তারপর বললো-


কি বলবে এতো রাতে?বলো?


-আপনি কি বিয়ে করেছেন?সত্যি কথা বলবেন কিন্তু।


চোখ বন্ধ রেখেই পরশ দুষ্টুমির সুরে বললো-

--কেন আমাকে বিয়ে করবে নাকি?


ওপাশ থেকে দ্রুত জবাব এলো।

--হ্যা হ্যা,বিয়ে করবো বলেই তো ফোন দিলাম।তা কবে করছেন আমায় বিয়ে।আমি কিন্তু একপায়ে রেডি আছি।চলে আসুন তাড়াতাড়ি। 


জিহবা দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে নিয়ে পরশ শান্তভাবে বললো-


আবার কার সাথে বাজি ধরেছো। তা বাজিতে জিতলে কি পাবে?আমাকেও তো অর্ধেক দিতে হবে, নইলে তো আমি বিয়েতে রাজি হবো না।


মেজাজ বিগড়ে গেল স্পর্শীর।ওপাশ থেকে বি'ক'ট শব্দে চেচিয়ে উঠে বললো-


ওইইইই ব্যাটা,ভাব বেড়ে গেছে তাই না।স্পর্শী নিজে থেকে তোকে  বিয়ের অফার দিচ্ছে আর তুই এখনো ঢং য়ের মধ্যে পড়ে আছিস।করবো না তোকে বিয়ে।ক্যান্সেল তুই।বুঝলি,বিয়ে করবো নায়ায়ায়ায়ায়ায়া.........


ধড়ফড়িয়ে  বিছানা থেকে উঠে বসলো পরশ।চারদিকে রাতের অন্ধকার বিরাজমান।ঘরে সামান্য আলোর ফোটাও নেই।চোখের সামনে কোনো আলো থাকলে পরশের ঘুম হয় না বলেই ঘর একদম অন্ধকার করে শোয় সে।কান টা ঝিম ধরে গেছে মনে হচ্ছে।বিছানা হাতড়ে ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিন অন করতেই দেখলো ফোন টা বন্ধ। তৎক্ষণাৎ মনে পড়লো রাতে স্পর্শীর সাথে কথা বলার পর ফোন বন্ধ করে রেখেছিলো। পাওয়ার অন করে রুমের আলো জ্বালালো।তারপর বিছানায় বসে স্পর্শীর নাম্বার'টা দেখতে লাগলো।


রাত তিনটা।সে যে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলো তা এই মুহুর্তে ক্লিয়ার।কিন্তু স্বপ্ন হোক আর যাই হোক বা কান'টা ঝিম ধরে আছে। পরশ চিন্তায় পড়লো।এতো এতো মানুষ থাকতে এই ভয়ংকর মেয়েই তার স্বপ্নে আসবে কেন?তাও সরাসরি বিয়ের প্রোপোজাল নিয়ে।মাই গড!এই মেয়ের সাথে বিয়ে। ভাবতেই পরশের শিরদাড়া ঠান্ডা হয়ে যায়।পরক্ষণেই মায়ের বলা কথাগুলো মনে পড়ে যায়।লেখাপড়া শেষ, ক্যারিয়ার ও শুরু করে দিয়েছে,এখন ব্যাস বিয়েটা বাকি।বিয়ে যদি করতেই হয় তাহলে স্পর্শী খারাপ কোথায়?স্পষ্টবাদী,একটু স্বাধীনচেতা,সেটা মানিয়ে নেবে পরশ।মা-পরিবার ছাড়া বড় হওয়া মেয়েটা নিশ্চয়ই তার মাকে শাশুড়ীরুপে পেয়ে অবজ্ঞা করবে না।


পরশ হেটে রুমের বাইরের বেলকনিতে গেল।একজন বউ হিসেবেও স্পর্শী বেশ পার্ফেক্ট।চোখ বন্ধ করে বারকয়েক স্পর্শীর সাথে দেখা হওয়ার ঘটনাগুলো ভাবলো।প্রথম দিন ভালো করে খেয়াল না করলেও দ্বিতীয় দিন বেশ ঘাটিয়ে দেখেছে স্পর্শীকে।সাদা স্যালোয়ার,কামিজ ওড়নায় একদম নিষ্পাপ লাগছিলো।সারা মুখ-চোখ জুড়ে ছিল শুভ্রতা।হলুদ ফর্সা মুখখানি তার উপর ওমন প্রতিবাদী কথাগুলো যেন বারবার টানছিলো পরশ কে। 


বাস্তবিকভাবেই আমরা কেউ কারো কষ্ট,ব্যাথা,সম্পর্কে অবগত হলে আরো ভীষণ ভাবে তার উপর দুর্বল হয়ে পড়ি।পরশের বেলায় ও তার ব্যাতিক্রম নয়।


চমকে উঠলো পরশ।একি হচ্ছে তার সাথে।এখন দিনরাত না ঘুমিয়ে সে কিনা স্পর্শীর ভাবনাতে মশগুল থাকবে।সামান্য একটা মেয়ে তাকে দু দিনেই ছন্নছাড়া  করে দিচ্ছে।নানা এটাতো চলবে না।মাথা থেকে কথাগুলো ঝেড়ে রুমে চলে এলো।লাইট নিভিয়ে চোখ বন্ধ করে পুনরায় ঘুমানোর চেষ্টা করলো।


__________

সকালে ঘুম থেকে উঠেই স্পর্শী কাউকে কিচ্ছু না বলে স্কুটি নিয়ে নবীনগরের দিকে এলো।আজ আর ভালো লাগছে না।ভার্সিটি মিস দেবে সে।আজকে সারাদিন খালামনির কাছে থাকবে সে।গেটের সামনে এসে স্কুটি রেখে ভেতরে প্রবেশ করতেই চমকে উঠলো।থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর গেঞ্জি গায়ে দেওয়া অবস্থায় গেটের পাশের সাদা গোলাপ গাছ টায় রাহুল পানি দিচ্ছে।পানি দেওয়া শেষ হতেই পুনরায় মুখের মধ্যে ব্রাশ দিয়ে দাত মাঝতে শুরু করলো রাহুল।ঘুরে তাকাতেই দেখলো স্পর্শী ঢুকছে বাড়ির মধ্যে।দ্রুতপায়ে ছুটে গিয়ে স্পর্শীর সামনে দাড়ালো। ব্রাশ হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো-


তোর দিন দিন দাম বেড়েই যাচ্ছে তাই না।আমি ওখানে ছিলাম তাও কথা বললি না কেন?


অসস্তিতে হাসফাস করতে লাগলো স্পর্শী।অন্যদিকে তাকিয়ে বললো-


তোমার কেন সেন্স না থাকলেও আমার আছে ভাইয়া।এভাবে এই ড্রেসে কেউ বাইরে বের হয়।মার্জিত ভাবে থাকলে ঠিকই সেধে কথা বলতাম।


চমকে নিজের দিকে তাকালো রাহুল।তারপর স্পর্শিকে বললো-


খুব তো বললি।মনে হচ্ছে এই ভাবে এই প্রথম বার দেখছিস আমাকে?


--নাহ,প্রথম বার দেখিনি।সেই এতটুকু বয়স থেকে তোমাকে শুধু এই ড্রেসে কেন বলতে গেলে হাফ প্যান্ট পড়া অবস্থাতেও দেখেছি। তখন অসস্তি হতো না।এখন হচ্ছে, কেননা সেই রাস্তাটাও তুমি তৈরী করে দিয়েছো।আচ্ছা ভাইয়া তোমার কি বিবেক নেই। সেই ছোটবেলা থেকে এখানে বড় হচ্ছি। খালামনিকে মা না ডাকলেও সেই আমার মা।তোমাকে  আমার নিজের ভাইয়ের থেকেও আপন ভেবেছি।একসাথে থেকেছি,তোমার কাধে চড়িয়ে বেরিয়েছি,খেলেছি কত্ত কি?সেই তুমি কি করলে?এইচএসসি এর আগেই নিজের পরিচয় টা দেখিয়ে দিলে।খালাতো ভাই যে কখনো আপন হয় না সেটা বুঝিয়ে দিলে।তোমার জন্য আমি বাড়িতেও কোনো কথা বলি না।বাবা ফোন দিলেই খালি বিয়ে বিয়ে করে।শান্তি পাচ্ছি না আমি।আচ্ছা,দুনিয়াতে কি আর কোনো মেয়ে নেই।আমার পিছনেই কেন পড়ে আছো?তুমি জানো,হোস্টেলে থাকাটা কতটা কষ্টের। কয়েক মিনিট লস গেলে আর সে ওয়াক্তে খাবার পাওয়া যায় না।মেপে মেপে খেতে হয়।কেন করি এই কষ্ট?শুধু তোমার জন্য?তোমার এই বেহায়া পনার জন্য আমার এই বাড়িতে যেখানে এতটুকু থেকে মানুষ হয়েছি সেখানে আসতে লজ্জা করে।আর তোমার সামনে দাড়াতেই তো আমার গা ঘিনঘিন করে।


দাতে দাত চেপে পুনরায় স্পর্শী বললো-


দেখো,মুড ভালো নেই।মনির কাছে এসেছি।দয়া করে এই ক ঘন্টা আমার থেকে দূরে অবস্থান করো।


বলেই হনহন করে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেল স্পর্শী।রাহুল অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো স্পর্শীর পানে। সে তো কখনো বোনের নজরে ওকে দেখে নি।সেই এতটুকু থেকে নিজের হাতে করে ওই পুতুল টাকে সাজিয়েছে।এই বত্রিশ বছর বয়স পর্যন্ত একটাও প্রেম করে নি।যখনই কেউ এমন কিছু বলেছে তখনই সবাইকে বলেছে পরিবার থেকে কাজিনের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে।এমনকি স্পর্শীর অপছন্দের জন্য নিজের শখের শিক্ষকতা ছেড়েছে।নিজের পরিবার থেকে শুরু করে স্পর্শীর পরিবারকে পর্যন্ত রাজি করেছে।কিন্তু সেই স্পর্শীইই তো আর তার নেই।আচ্ছা স্পর্শি কি কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে?ভাবতেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে এলো রাহুলের। এমনটা কখনো হবে না।সে হতেই দিবে না।এর আগেই প্রয়োজনে জোর করবে স্পর্শীকে,বাধ্য করবে বিয়ের জন্য।একবার বিয়েটা হয়ে গেলেই বাচ্চা নিয়ে নেবে।পরে বাচ্চার জন্য হলেও স্পর্শী বাধা পড়ে যাবে তার সাথে।এতোদিন ভদ্র ভাবে রাজি করিয়েছে রাজি হয় নি।এবারে অভদ্র হবে সে।খুব শীঘ্রই স্পর্শীকে বাধতে হবে।নাহলে,,,,,,


_______

দুপুর বারোটা।পার্টি অফিসের নিজের বরাদ্দকৃত চেয়ারে বসে আছে পরশ।আজকে তেমন ব্যাস্ততা নেই। পাভেল ও পাশে নেই।ভার্সিটির কিছু কাজের জন্য বেরিয়েছে।পরশ চেয়ারে গা এলিয়ে দিলো।হাতের ফোনটা নিয়ে বারকয়েক স্ক্রল করলো ফেসবুকে। ভালো লাগছে না। সত্যিই মানুষ যতই নিজের ক্যারিয়ারের দিকে ছুটুক দিনশেষে একজন সস্তির মানুষ প্রয়োজন৷ যার সাথে কথা বলার জন্য,সময় কাটানোর জন্য অবসর খুজতে মরিয়া হবে সে। এবারে বিয়েটা করাই উচিত।


বিয়ের কথা মনে হতেই স্পর্শীর কথা মনে পড়লো।সে যে তাকে রাতে সপ্নের মধ্যে বিয়ের প্রোপোজাল দিয়েছে এটুকু তো বলাই যায়।সাথে রাতের মতো না হয় আরেকটু রাগিয়ে দিবে তার রাগীনি কে।প্রথমবার কল দিতেও কেউ রিসিভড করলো না।অসস্তিতে পড়লো পরশ।আবার ফোন দেওয়া উচিত কি না।একজন এমপি হয়ে একটা অপরিচিত মেয়ের নাম্বারে এভাবে অনর্গল ফোন দেওয়াটাকে দৃষ্টিকটু ঠেকছে তার কাছে।তাও মন মানলো না।পুনরায় ফোন দিতেই ওপাশ থেকে রিসিভড হলো।সাথে সাথে ভেসে এলো অভিমানি তেজি সুরের আওয়াজ-


কিইইই, বিড়াল টিড়াল কিনে তারপর ফোন দিয়েছেন?এবারে কি আকিকা করবেন কিনা সেই অনুমতি চাইবেন?


ঠোট কামড়ে হেসে দিল পরশ।অদ্ভুদ লাগলো তার কাছে।সারাক্ষণ রোবটের ন্যায় চলতে থাকা এই গম্ভীর মুখশ্রীতে যখনই স্পর্শীর সাথে কথা বলে তখনই অদ্ভুদ্ভাবে হাসি ফোটে।এক অজানা প্রশান্তি পায়। 


--উহুম না,এখনো কেনা হয়নি।একটু বিজি ছিলাম তাই।ভালো করেছো মনে করিয়ে দিয়ে।


স্পর্শী পরশের কথার মাঝখানে এক ক্লান্তির ছোয়া পেল।ঠোট কামড়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললো-


এই আপনি কি কোনো নেতা-টেতা নাকি?


--এরকমটা মনে হওয়ার কারন?


--নাহহ তেমন কিছু না।সেদিনকে দেখলাম আপনার সাথে অনেকগুলো বডিগার্ড৷ আর গাড়ির ভেতরে পুলিশ ও তো দেখলাম।তাই


পরশ ভ্রু কুচকালো।ভাবলো একবার বলে দেবে।কিন্তু সে এমপি এটা শোনার পরে যদি স্পর্শী তার সাথে কথা বলতে অসস্তি বোধ করে।বললো-


ওই ছিলাম একটু  আরকি।


দু ঠোট এক করে ভেবে স্পর্শী বললো-


পাতি নেতা।এই শুনুন,এই সব নেতাগিরি বন্ধ করুন।বড় বড় নেতার পেছনে সারা রাত দিন ঘুরবেন, দিনশেষে আপনার'ই শত্রু বাড়বে।বিপদ হলে তখন আর তাদের পাশে পাবেন না।আপনিই বলুন এই যে এত্তো মারামারি -কাটাকাটি হয়, দেখেছেন কখনো বড় নেতারা আহত হয়।মার খেলে তো সেই চুনোপুটিরাই মার খায়।এখনো বলছি এসব বাদ দিন।হুম্ম,স্পর্শী কাউকে খারাপ বুদ্ধি দেয় না।


ঠোট টিপে হাসলো পরশ।তারপর বললো-


কিন্তু আমি তো এসব এখন ছাড়তে পারবো না।তাহলে ক্ষতি হবে জনগনের।


নাক ছেটালো স্পর্শী।ব্যাঙ্গ করে বললো-


এহহহহ কোন রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী আপনি।যে রাজনীতি ছাড়লে দেশ ডুবে যাবে।


--আপাতত এক রাজ্যের ছোট-খাটো এমপি আছি।ভবিষ্যতে তুমি ভোট দিলে প্রধানমন্ত্রী হয়েও যেতে পারি।কি বলো,দেবে ভোট।


চমকে নাম্বারের দিকে তাকালো স্পর্শী।এই লোক একজন সাংসদ।তার সাথে দিনের পর দিন এভাবে কথা বলেছে ভাবতেই কেমন লাগছে।বেশ কিছুক্ষণ নিরব থাকলো স্পর্শী।ওদিকে পরশ ভীষণ ভাবনায় পড়লো।হুট করে পরিচয় বলাটা মোটেও ঠিক হয় নি।এখন যদি স্পর্শী আর কথাই না বলে।তাহলে?


চলবে?


সবাই রিসপন্স করবেন।

গল্প রাজনীতির_রংমহল পর্ব ৪

 #রাজনীতির_রংমহল

#সিমরান_মিমি

#পর্বসংখ্যা_০৪


সারাদিনের কাজ শেষে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরলো পরশ।শরীরটা কোনো রকমে টেনে দোতলায় তুললো।ইদানীং খুব বেশীই চাপ যাচ্ছে তার উপর।সারাদিন ছোটাছুটি -দৌড়াদৌড়ির উপরেই থাকতে হয়।রুমের মধ্যে ঢুকে ধরাস করে দরজা'টা লাগালো।গায়ের পাঞ্জাবি'টা খুলে বিছানার উপর ছুড়ে ফেললো।তারপর টাওয়াল নিয়ে সোজা বাথ্রুমে ঢুকে পড়লো।


রাত সাড়ে দশটা।শিকদার বাড়ির সবাই ডাইনিং এ  বসে পরশের জন্য অপেক্ষা করছে।বাবা মহিউদ্দিন শিকদার স্থানীয় কলেজের অধ্যক্ষ।সারাদিনে সবাই কাজের চাপে আলাদা আলাদা খেলেও রাতের খাবার'টা যত রাতই হোক না কেন একসাথে খায় তারা।পাভেল চেয়ারের উপর বসে ফোন স্ক্রল করছে। পিয়াশা শিকদার সবার জন্য খাবার বাড়ছেন।এরইমধ্যে ঘুমে ঢুলুঢুলু করতে করতে হাজির হলো চৌদ্দ বছরের এক শ্যামরা ঙা কিশোরী।সিড়ির উপর দাঁড়িয়ে একে একে সবার দিকে তাকালো।তারপর ধীরপায়ে এগিয়ে গিয়ে বাবার পাশের চেয়ারে বসতেই পুনরায় দাঁড়িয়ে পড়লো।পাভেল নিজের চেয়ারে বসেই প্রেমার চেয়ারে পা তুলে দিয়েছে।ছোট্ট প্রেমা ভীষণ ভালোভাবেই বুজতে পারলো তাকে জ্বালানোর জন্য এমনটা করছে পাভেল।তারপরেও কোনোরুপ বাক্যব্যয় করল না।ওপাশের চেয়ারে গিয়ে বসতেই পুনরায় একই ঘটনা ঘটালো পাভেল। চেচিয়ে উঠলো প্রেমা।পাভেলের দিকে তাকিয়ে বললো-


ম্যানার্স লেস কোথাকার?


চোখ বড় বড় করে ফেললো পাভেল।মহিউদ্দিন শিকদার হেসে দিলেন।ছোট্ট মেয়েটাকে দুহাতে জড়িয়ে নিলেন নিজের কোলে।মেয়েটা তার খুবই কম কথা বলে।বলতে গেলে প্রয়োজন ছাড়া কিছুইই নিজ থেকে বলবে না।লেখাপড়া নিয়েই বেশ মশগুল সে।পাভেল ব্যঙ্গ করে প্রেমা কে বলল-


ওই ম্যানার্স অর্থ জানিস তুই?খুব তো বললি।


চোখ ছোট ছোট করে পাভেলের দিকে তাকিয়ে রইলো প্রেমা।বর্তমানে যে সে অষ্টম শ্রেনীতে পড়ে সেটা হয়তো তার গুণধর ভাই ভুলেই গেছেন।নিজের প্লেট সামনে টেনে নিয়ে পাভেলের উদ্দেশ্যে বললো-


আমি তো তোমার মতো ক্লাসের পর ক্লাসে ডাব্বা মেরে উঠি নি।বেশ ভালো ফলাফলের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছি।শোনো ছোট ভাইয়া,আমি পরশ শিকদার নই যে তুমি ঘন্টার পর ঘন্টা আমার পেছনে লেগে থাকবা,আমাকে জ্বালাবা, আর আমি চুপচাপ তা সহ্য করবো।আমার সাথে লাগতে আসবা না একদম।


সিড়ির উপরে দাঁড়িয়ে ঠোট কামড়ে নিঃশব্দে হাসলো পরশ। তার এই ছোট্ট বোনটা বয়সের থেকেও নিজেকে সবার সামনে বড় করতে আগ্রহী। যেন সে ছাড়া পৃথিবীর সবাই কম বুজদার।আলতো পায়ে হেটে গিয়ে বোনের পাশের চেয়ারে বসলো।তারপর নিজের প্লেট সামনে টেনে বললো-


তা আপনি এতো বড় হয়েছেন, এতো বোঝেন অথচ এটুকু ম্যানার্স জানেন না যে বড় ভাইকে নাম ধরে ডাকতে নেই।


সামান্য হতাশ হলো প্রেমা।সে তো কথার কথা বলেছে।করুন চোখে বড় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ইনিয়েবিনিয়ে  বললো-


সব সময় ভাইয়া ভাইয়া বললে সেটা দৃষ্টিকটু দেখায়।বাক্যের প্রয়োজনে নাম-ধাম একটু নিতেই হয়।ও তুমি বুজবে না।


পরশ বোনের দিকে না তাকিয়েই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।বলল-


হ্যা,হ্যা।আমার'ই ভুল।


পাভেল এখনো ফোনের মধ্যে ডুবে আছে। পরশ বার কয়েক বারণ করলেও সেদিকে সে কান দিলো না বাধ্য হয়ে পরশ ছো মেরে ফোন টেনে নিজের হাতে নিলো। তারপর ধমক মেরে পাভেল'কে খেতে হুকুম দিলো।


ডাইনিং টেবিলের নিরবতা ভেঙে পিয়াশা শিকদার অভিমানী গলায় খাবার বারতে বারতে বললেন-


আমার হয়েছে যতো জ্বালা।সারাক্ষণ চাকরের মতো কাজ করতে থাকো,আসামীদের মতো একটা ঘরের মধ্যে একা পড়ো থাকো। কারো কোনো খেয়াল'ই নেই আমার উপর।তিন তিন টা বাচ্চা আমার।অথচ আর মানুষ বাড়ানোর কথা মনেই করছে না তারা।একা একা লাগে না আমার।


আচমকা কেশে দিলেন মহীউদ্দীন শিকদার।ছেলে-মেয়েদের সামনে বউয়ের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন।নিচু কন্ঠে আমতা-আমতা করে বললেন-


ছেলে-মেয়েদের সামনে এসব কেমন কথা পিয়া।তোমার আরো বাচ্চা লাগবে আমায় বললেই পারো।


চোখ বড় বড় করে দাড়িয়ে পড়লো পিয়াশা৷ স্বামীর দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে বললেন-


আপনার মাথা খারাপ নাকি।আমি কি বলছি আর আপনি কি বলছেন?বলছি,ছেলেদুটো তো আমার বুড়ো হয়ে যাচ্ছে,সেদিকে কি আপনার খেয়াল নেই নাকি।বিয়াশাদি কি করানোর ইচ্ছা নেই।


আদরে আটখানা হয়ে মায়ের গায়ের উপর মাথা এলিয়ে দিলো পাভেল।ছোট বাচ্চা দের মতো মুখে বাধিয়ে বললো-


আম্মুউউউ,শুধু তুমিই বোঝো আমার কষ্ট।অলরেডি পচিশ প্লাস হয়ে গেছে আমার।অথচ কেউ কিছু বলেই না।


হাত ঝাড়া দিয়ে ছেলেকে দূরে সরিয়ে দিলেন পিয়াশা।তারপর থমথমে মুখে পরশের দিকে তাকিয়ে বললো-


তোমার সমস্যা কোথায়?সন্ন্যাসী হওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি?


মাথা তুলে একবার মায়ের দিকে তাকালো।তারপর না বোঝার মতো পুনরায় বললো-


কোন ব্যাপারে কথা বলছো?


তেতে উঠলেন পিয়াশা।বললেন-


আমি মেয়ে দেখছি কাল থেকে।এক মাসের মধ্যে বিয়ে করাবো তোমায়।পরের মাসে পাভেল কে করাবো । আর তার পরেই ছোট টাকে সরাবো।তারপর শান্তি।


চমকে মায়ের দিকে তাকালো প্রেমা।রাগত দৃষ্টিতে তাকাতেই পিয়াশা বলে উঠলেন-


কিইই ওমন ভাবে তাকিয়ে আছো কেন?তোমার বয়স কম বলে।কই ভাব তো দেখাও ত্রিশ বছরের বুড়ীদের মতো।বিয়ে দেব না তো কি ঘরে বসিয়ে রাখবো।


কিচ্ছু বললো না প্রেমা।খাবার খেয়ে চুপচাপ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে উপরে চলে গেল।পিয়াশা পুনরায় পরশকে জিজ্ঞেস করতেই বললো-


আচ্ছা ঠিক আছে,আমাকে ক'টা দিন সময় দাও।সবে তো দায়িত্ব টা পেলাম।নিজেকে একটু মানিয়ে নেই।তারপর জানাচ্ছি।


কথাগুলো বলে টিস্যু দিয়ে হাত মুছলো পরশ। পাভেলের ফোন টা টেবিলের উপর রেখে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো।পেছন থেকে করুন স্বরে পাভেল বললো-


ভাই,যা করিস একটু তাড়াতাড়ি করিস।বুঝিস'ই তো, তোর পরেই সিরিয়াল টা আমার। 


______________

খাবার শেষে রুমে ঢুকে বিছানায় টান টান হয়ে শুয়ে পড়লো পরশ।পাশ থেকে ফোন'টা নিয়ে কল লিষ্টে ঢুকতেই অচেনা এক নাম্বারের সম্মুখীন হলো।মস্তিষ্কে চাপ দিতেই মনে পড়লো স্পর্শীর কথা। বেশ কিছুক্ষণ ভেবে গুটি গুটি অক্ষরে নাম্বারটি "স্পর্শীয়া" নামে সেভ করলো।প্রাইভেট ফোন হওয়ার দরুন যে কজন লিস্টে আছে সবার নামই সেভ করা। অচেনা নাম্বারে ভুল করে যদি কখনো কল দিয়ে বসে সেই ভেবেই সেভ করে রাখলো পরশ।আজকে প্রায় প্রত্যেকটা বাক্যে স্পর্শী নিজের নাম বলেছে।সেই জন্যই নামটা একদম মাথায় গেথে রয়েছে।


রাত বারোটা।কতক্ষণ ফেসবুক স্ক্রল করলো পরশ৷রিসেন্টলি হওয়া বিভিন্ন মিটিং,মিছিল,অনুষ্ঠানের ছবি আপ্লোড দিয়েছে সবাই তাকে ট্যাগ করে।সেগুলোর'ই কমেন্টস চেক করছিলো।ঘুম আসছে না একদম।যতই ঘুমানোর চেষ্টা করুক না কেন স্পর্শীর কথাগুলো বারবার কানে বাজছে।এমনটা হচ্ছে কেন?মেয়েটার প্রতিটা কথায় যেন আলাদা এক অনুভূতি মেশানো ছিলো।ছিলো অজস্র কষ্টের অনুভূতি। স্পর্শীর পরিবার নেই।মা নেই,তাহলে তো সে খুব দু ঃখী।তাহলে এতভালো একটা ভার্সিটিতে পড়ছে কিভাবে সে?স্কুটি পেলো কোথায়?আর ততোই যদি কষ্ট থাকে তাহলে রাস্তার অনাথ দের খাবার বিলায় কিভাবে?

পরক্ষণেই মস্তিষ্কে হানা দেয়,"নিশ্চয়ই ও কোনো জব করে নিজের খরচ চালাচ্ছে।বর্তমান সময়ে জব করে খরচ চালানো তো আর খুব বেশী কঠিন না।ভালো স্টুডেন্ট হয়তো ভালো কোনো জব করছে।কিন্তু তারপরেও মেয়েটার খুব কষ্ট।সেদিন থাপ্পড় মারায় হয়তো খুব আত্নসম্মানে লেগেছে।আর পারিবারিক শিক্ষা তুলে কথা বলায় হয়তো বেশীই কষ্ট পেয়েছে।উফফস উচিত হয়নি পরশের এমনটি করা।সরি বলা উচিত।কিন্তু কিভাবে?আর কি কখনো দেখা হবে?


ভাবতেই মনে হলো ফোনের কথা। নাম্বার আছে তো,কল করা যেতেই পারে।পরক্ষণেই মনে পড়লো নিজের অবস্থানের কথা।একজন সংসদ সদস্য হয়ে এতো রাতে কোনো মেয়েকে ফোন দিয়ে সরি বলবে সে।এটা তো তার ব্যাক্তিত্বের সাথে পুরাই বেমানান।তাহলে?পরক্ষণেই ভেতর থেকে এলো-

অবশ্যই বলা যায়,সে বিনা কারনে যখন কাউকে অপমান করেছে।অবশ্যই ক্ষমাও চাইতে পারবে। এটা ব্যাক্তিত্ব আসবে কোত্থেকে?


এরকমই আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে কল দিয়েই বসলো পরশ।সাথে সাথে রিসিভড হলো।ওপাশ থেকে সুন্দর করে সালাম দিলো স্পর্শী।পরশ ও উত্তর দিলো। কিছুক্ষণ নিরব থেকে পরশ বলল-


স্পর্শীয়া,


ওপাশ থেকে ঘন নিঃশ্বাসের আওয়াজ এলো।স্পর্শী কি ঘুমাচ্ছে।কিয়দংশ পর সাড়া দিলো স্পর্শী।


হু,


পরশ-আমাকে চিনেছো?


বিরক্তিতে নাক-মুখ কুচকে ফেললো স্পর্শী।সবেমাত্র কান্না-কাটি থামিয়ে শুয়েছিলো সে এরইমধ্যে পরশ ফোন দেওয়াতে ধরলো।চটচটে কন্ঠে বললো-


আপনি আমার নাম্বার জানেন,আমার নাম ও জানেন,অথচ আমি আপনাকে চিনবো না?কি মনে করেন নিজেকে?স্মৃতি শক্তি শুধু আপনার'ই প্রখর।অন্য সবার মাথার মধ্যে গোবর ভর্তি।


ঠোট কামড়ে হেসে দিলো পরশ।এই মেয়ে আবার নিজের রুপে ফিরে এসেছে।জিহবা দ্বারা ঠোট ভিজিয়ে পরশ বললো-


কিন্তু তোমার নাম তো স্পর্শী।আমি তো আরো সুন্দর নাম দিলাম স্পর্শীয়া।আমাকে ধন্যবাদ দিবেন না।


নাক ছেটালো স্পর্শী। বললো-


আজ্ঞে আমার বাপ বড় করে আকিকা দিয়ে আমার নাম স্পর্শীয়া'ই রাখছে।সংক্ষেপে সবাই স্পর্শী ডাকে।তাই পল্টি খাওয়া বাদ দেন ভাই।আপনি এতোবড় ও কোনো রাজকার্য উদ্ধার করেন নাই যে ধন্যবাদ দিব।কি জন্য ফোন দিছেন তাই বলেন ঘুমাবো। 


হতাশ হলো পরশ।পুনরায় ফোন অন্য কানে নিয়ে বললো-

তোমার কাছে একটা বিশেষ দরকারে ফোন দিয়েছিলাম। বলতে গেলে কিছু একটার অনুমতি নেওয়ার জন্য।বাস্তবিকভাবে,তোমার নামটা আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।


স্পর্শী কথার মাঝখানে বললো

তো?


পরশের কেন জানি ভালো লাগছে কথা বলতে। প্রথম দিনের মতো অসস্তি হচ্ছে না।ফোন অন্য কানে নিয়ে কাত হয়ে শুলো।ডান হাত দিয়ে নিজের ঠোটে হাত বুলাতে বুলাতে বললো-


ভাবছি কালকে একটা বিড়াল কিনবো।আর তার নাম স্পর্শিয়া রাখবো।অনুমতি দেবে কি?


চটে গেল স্পর্শি। এই রাত দুপুরে এই বাজে লোক তাকে আবারো ফোন দিয়েছে অপমান করার জন্য।মুখ দিয়ে কিছু বলার জন্য উদ্যত হতেই টুট টুট করে ফোন কেটে গেল।নিজে থেকে ফোন দিতে গিয়েই শুনলো ওপাশ থেকে কোনো ভদ্রমহিলার কন্ঠ।


"আপনার কাঙ্ক্ষিত নম্বরটিতে এই মুহুর্তে সং্যোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন।ধন্যবাদ"


ফোনটা বন্ধ করে ঠোট কামড়ে হেসে দিল পরশ।এক্ষুণি যে স্পর্শির কিছু বিখ্যাত গালির সম্মুখীন হবে সে, সেটা বুঝেই ফোন বন্ধ করে দিয়েছে।নিরব হাসিতে বার কয়েক গড়াগড়ি খেল বিছানায়।পাভেল থাকলে হয়তো এতক্ষণে রুম কাপিয়ে হেসে উঠতো।


ভীষণ আলাদা রকম সুখের অনুভূতি হচ্ছে পরশের।হয়তো স্পর্শিকে জ্বালাতে পেরেছে তাই।কোথায় ক্ষমা চাওয়ার জন্য ফোন দিয়েছিলো তা না উলটো আবার রাগিয়ে দিয়ে ফোন কেটেছে।হাতের ফোন'টা বিছানায় রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো।কালকে আবার একটু রাগিয়ে দেবে সে স্পর্শীকে।আপাতত এখন ঘুমাক।


__________

এই যে মশাই শুনুন,আপনাকে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।কেন লেগেছে জানি না,তবে এখন আমি চাচ্ছি সারারাত ধরে কথা বলতে।উঠুন ঘুম থেকে,এটাই আপনার শাস্তি।


মাঝরাতে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ কর্কশ কন্ঠে বাজতে থাকা ফোনটা কানে নিতেই ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠের এমন কথা শুনে স্ক্রিনের দিকে তাকালো পরশ।চোখ স্থির করে নাম্বার'টা দেখেই আতকে উঠলো।

এটা তো স্পর্শীয়া।আবার কি ঝট পাকিয়েছে মনে মনে যে এতো মধুর কন্ঠে কথা বলছে।নাকি এই রাত দুটোর সময় কারো সাথে বাজি ধরেছে?হতেও পারে,এ মেয়ে যে ভীষণ ডেঞ্জারাস। 


বারকয়েক ঘুমন্ত চোখের পাপড়িগুলো বন্ধ করে পরশ বললো-


চলবে?


পাঠক প্রশ্ন:পরশ একজন এমপি,তাকে রাস্তার মানুষ বা স্পর্শী চিনলো না কেন?


উত্তর-প্রিয় পাঠকবৃন্দ, একটা দেশে  অজস্র সংসদ সদস্য/এমপি থাকে।আমি বলছি না যে এদেরকে কেউ চিনবে না।অবশ্যই চিনবে।কিন্তু তাই বলে কি পুরো বাংলাদেশের মানুষ চিনে বসে থাকবে নাকি। এই আমিই তো আমাদের সংসদ সদস্য কে ভালো করে চিনি না।সেখানে অন্য এলাকার বা জেলার মানুষ সবাই কি ভাবে চিনবে।তাছাড়া,এখানে আমি উল্লেখ করেছি জাহাঙ্গীর নগরের কথা যেখানে স্পর্শী পড়ছে।ঢাকা যেহেতু আমাদের রাজধানী বা কেন্দ্র শহর সেহেতু একজন এমপি বা রাজনৈতিক কর্মীর অহরহ পার্টির কাজে প্রায়ই যেতে হয়।এখানে আমি বলি নি পরশ ঢাকার এমপি বা তার আশে -পাশের। এই আমাদের এখানকার সংসদ সদস্য পার্টির কাজে ঢাকায় গেলে পথিমধ্যে কতজন তাকে চিনবে?আশা করি বুজতে পেরেছেন।আর যদি এরপরেও কিছু ধোয়াশা থাকে তবে আমি সেটাকে গল্পের মধ্যেই ক্লিয়ার করে দিব।ধৈর্য ধরে পড়তে থাকুন।

গল্প রাজনীতির_রংমহল পর্ব ৩

 #রাজনীতির_রংমহল

#সিমরান_মিমি

#পর্বসংখ্যা_০৩


সকালবেলা ঘুম থেকে উঠতেই পার্টির জরুরি কাজে ঢাকায় এসেছে পরশ শিকদার।বিলাসবহুল তিনটি মাইক্রোর মাঝখানে'র গাড়িটিতে বসে আছে সে।সামনের ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করতে থাকা বডিগার্ডের পাশের সিটে বসেছে পাভেল।তাদের গাড়ির সামনের এবং পিছনের গাড়িটিতে তিনজন করে মোট সাতজন বড়িগার্ড এবং দলীয় সদস্য রয়েছে।নবীনগরের এক নির্জন রাস্তায় আসতেই সংগত কিছু কারনে সামনের গাড়িটি সাময়িক সময়ের জন্য থামানো হয়েছে। ফলস্বরূপ, পরবর্তী গাড়ি দুটোই থামাতে হয়েছে।এরইমধ্যে পেছন থেকে পরিচিত মেয়েলি কন্ঠ শুনতেই নিজের দায়িত্ব কে ভুলে লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে নামলো পাভেল।আশে-পাশে তাকাতেই দেখলো পেছনের গাড়ির পেছন থেকে কথাগুলো ভেসে আসছে।সেই কথা,তর্কাতর্কির রেশ ধরেই সেদিকে হাটা দিল পাভেল।বারকয়েক বারণ করলেও যখন পাভেল পরশের কথা শুনলো না তখন পরশ ও গাড়ি থেকে নেমে পাভেলের পিছু নিলো। 


আমার কি দোষ? আমি কি ইচ্ছা কইরা গাড়ি থামাইছি নাকি।সামনেই তো কত্তগুলা গাড়ি খাড়াইয়া আছে।চোক্ষে দেহেন না। (বেশ রশিয়ে রশিয়ে কথাগুলো বললো চল্লিশোর্ধ্ব এক রিক্সাচালক)


তেতে উঠলো স্পর্শী।স্কুটি থেকে নেমে হেলমেট খুলে রিক্সাওয়ালার সামনে গিয়ে বললো-


একদম চোখ গেলে দিব।চোখ কি শুধু আপনার'ই আছে,আমার নেই।রাস্তার মাঝখানে বসে ঢং শুরু করছেন।মেয়েলোক দেখলেই সারা শরীর বেয়ে ঢং টপটপ করে ঝরতে থাকে।


অনন্দা স্পর্শীকে বারবার টেনে পিছনে নিয়ে যাচ্ছে এখান থেকে যাওয়ার জন্য।কিন্তু স্পর্শী এখনো রিক্সাওয়ালার সাথে তর্কে মেতে উঠেছে। আশেপাশে জনে জনে লোক জমে ঊঠেছে।পাভেল রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে ঘটনা টা বোঝার চেষ্টা করছে।


অনন্দা-স্পর্শী চল এখান থেকে।ঝামেলা করার দরকার নেই।


তেতে উঠলো স্পর্শী। চেচিয়ে উঠে বললো-


আমি ঝামেলা করছি।আর ওই অসভ্য বুড়োটা যে আমায়.......


বলার আগেই ঠাস করে গালের উপর পুরুষালী এক থাপ্পড় পড়লো।অকস্মাৎ আক্রমণে  নিজেকে সামলাতে না পেরে স্কুটির উপর উপুড় হয়ে পড়লো স্পর্শী।রাগে-যন্ত্রনায় দাতে দাত পিষে সামনের দিকে তাকাতেই দেখলো কালো রঙের পাঞ্জাবি এবং জিন্স পরিহিত এক যুবক চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে তার দিকে।অচেনা কোনো ছেলে আঘাত করেছে এটা যতটা না তার আত্নসম্মানে লেগেছে তার থেকেও এই মুহুর্তে আঘাতের যন্ত্রনাটা বেশী পোড়াচ্ছে।বলতে গেলে একদম কোনো শাসন -কটুবাক্য ছাড়া স্বাধীনভাবে বড় হওয়া মেয়েটা হঠাৎ রাস্তায় দাঁড়িয়ে অচেনা কোনো যুবকের শাসনের শিকার হবে সেটা ভাবতেই অজ্ঞান হবার পালা স্পর্শীর।আশে-পাশে তাকিয়ে দেখলো ঠিক কতজন এই থাপ্পড় টা দেখেছে।তার এখন ঠিক কি করা উচিত।এই লোকটাকে আরেকটা থাপ্পড় মারা। তাহলে যদি পুনরায় এই লোকটা আবার তাকে থাপ্পড় মারে বা কিল-ঘুষি। তাহলে?তাহলে সে আবার মারবে এই লোকটাকে।একে একে সে মারবে,লোকটা মারবে, সে মারবে এভাবে তো রাস্তাটা রেস্লিং স্টেইজ হয়ে যাবে।না না, এটা করা যাবে না।তাহলে বাস্তবিক ভাবে ঠিক কি করা উচিত স্পর্শীর?


লজ্জা করে না,নিজের বাবার বয়সী একটা লোককে এভাবে অপমান করতে?পারিবারিক কোনো শিক্ষা নেই?হয়েছো তো মেয়ে অথচ আচরণ করছো ছেলেদের মতো।ছেলে হওয়ার খুব শখ তাই না?


থেমে,

এই চাচা,আপনি যান এখান থেকে(রিক্সাওয়ালাকে উদ্দেশ্য করে বললো পরশ।মাথায় আধপাকা চুল ওয়ালা রিক্সাওয়ালা নিজের পান খাওয়া লাল দাত গুলোকে বিশ্রীভাবে এলিয়ে স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে লালসার দৃষ্টিতে হেসে দিল।তারপর রিক্সা নিয়ে ছূটে গেল নিজের গন্তব্যে যা স্পর্শী বাদে সবার অগোচরে রয়ে গেল।)


পরশ পুনরায় রাস্তায় দাঁড়ানো লোকদের উদ্দেশ্যে বলল-

আপনারা দাঁড়িয়ে কি সিনেমা দেখছেন?যান যে যার কাজে?পাভেল গাড়িতে ওঠ,এদের মতো মেয়েরা শহরে লেখাপড়া করতে এসে নিজেদের ভিত্তিটাকেই ভুলে যায়।বাবা-মা,বয়বৃদ্ধ দের সম্মান তো দূর।অভদ্র মেয়ে কোথাকার?


বলে পাভেলকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো পরশ।


হেরে গেল স্পর্শী। আজ পুরাদমে হেরে গেল সে।রাস্তায় দাঁড়িয়ে একে তো বাবার বয়সী কারোর বাজে দৃষ্টির সম্মুখীন হয়েছে,তার উপরে অচেনা উড়ে আসা কোনো ছেলের হাতে থাপ্পড় খেয়েছে,পারিবারিক শিক্ষার উপর আঙুল তুলেছে।তার উপর তাকে ছেলেদের মতো বলেছে।কষ্টে,গালের যন্ত্রনায় অপমানে ঠোট কামড়ে ধরলো স্পর্শী। চোখ দিয়ে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে অশ্রু ঝরছে।পরশ দের গাড়ি চলতেই পেছনে ছুটলো স্পর্শী।দৌড়ে দৌড়ে দাত কিড়মিড় করে বললো-


অসভ্যের বাচ্চা তুই দাড়া।তোর সাহস কিভাবে হয় আমাকে থাপ্পড় মারার?আমি ছেলেদের মতো করি? ওই হারামি,কি করছি আমি? আমি কি তোর বোনের পেছনে লাগছি নাকি তোর পেছনে বখাটেগিরি করছি? কোন এংগেল থেকে আমি ছেলেদের মতো করছি?হ্যা,


গাড়ি চোখের আড়ালে চলে গেল।রাগে-দুঃখে রাস্তার মাঝখানে আসন দিয়ে বসে পড়লো স্পর্শী। সাথে রয়েছে যাবতীয় গালি-গালাজ।অনন্দা পাশেই স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।প্রায় তিন মিনিট পার হবার পরেও যখন স্পর্শীর থামার কোনো দিক দেখলো না তখন আস্তে করে তার পাশে এসে বসলো অনন্দা।ধীর স্বরে বললো-


এখন এসব বললে কি আর সে শুনবে?যখন মারলো তখন তো কিচ্ছু বলতে পারলি না।


ধাক্কা মেরে অনন্দাকে রাস্তায় ফেললো স্পর্শী। রেগে রেগে বলতে লাগলো-


তুই কি করছিলি তখন?তুই বলবি না?আমায় মারলো,আর তুই চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলি। কোন বা'লের কাজ উদ্ধার করছিলি তুই?একদম ন্যাকামি করতে আসবি না আমার সাথে।ঢং না,আমাকে মেরেধরে চলে গেল আর এখন আসছে তেল মাখতে।যা সর!


বলে স্কুটিতে উঠে অনন্দাকে ফেলেই রেডিও কলানির দিকে চলে গেল স্পর্শী। অনন্দা হতাশ হয়ে সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইলো।কিছুক্ষণ পর একটা বাস আসতেই সেটাতে উঠে পুনরায় জাহাঙ্গীর নগরের দিকে চলে আসলো।


রাত দশটা,বিপাশার কোলের উপর মাথা রেখে চুপচাপ শুয়ে আছে স্পর্শী।ভীষণ চিন্তায় পড়েছেন বিপাশা।মেয়েটা কখনো এমন শান্ত থাকার নয়।কিছু একটা ঘটেছেই যার কারনে আসার পর থেকে এমন নিরব।ইনিয়েবিনিয়ে পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন-


কি হইছে আম্মু,ও পাখি,মনির কাছে বল? 


শান্তভাবেই স্পর্শী বলে উঠল-


খালামনি,আমি কি সত্যিই খুব খারাপ।মানে অভদ্র দের মতো,বেয়াদপ দের মতো,কারো সাথে ভালো ব্যাবহার করি না।মানে আমি বলতে চাইছি আমার কি সত্যিই শিক্ষার অভাব রয়েছে?


আতকে উঠলেন বিপাশা।মেয়েটা একটু দুষ্টু,স্বাধীনচেতা আর প্রতিবাদী প্রকৃতির।তাই বলে এসব কে বলল?

কে বলছে আম্মু এইসব?তোমাকে তো আমি বড় করেছি,মামুনি কি খারাপ শিক্ষা দিয়েছে তোমায়?বল?

থেমে,

যে যাই বলুক,তুই মন খারাপ করিস না একদম।


ধড়াস করে লাফ দিয়ে উঠে বসলো স্পর্শী।বিপাশার গাল দুটো টেনে দুটো চুমু খেয়ে বলল-


উফফফ খালামনি,তুমিও না।যার তার কথায় স্পর্শীর মন খারাপ হয় না।আর স্পর্শী জানে তো,যে এই কথাগুলো বলেছে সে হলো পৃথিবীর সেরা অভদ্র,তার শিক্ষার অভাব আছে।

ও মনি,চিংড়ি মাছ আছে না, আমি এখন আবার ভাত খাবো।


বিপাশা হেসে দিয়ে রান্নাঘরে চললেন খাবার আনার জন্য।


____________

কেটে গেছে প্রায় আরো পাচ দিন।এরমধ্যে ধীরে ধীরে ভীষণ রকম ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে পরশ,পাভেল।সারাদিন বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন,প্রেস-মিডিয়া,নানা অনুষ্ঠান,পার্টির কাজে প্রায়ই দু-দিন পর পর ঢাকায় যেতে হয়েছে তাদের।আজ ও তার ব্যাতিক্রম নয়।


বিকাল চারটা,পার্টির কাজে আজ ও ঢাকায় আসতে হয়েছে পরশকে।তবে নিত্যদিনের মতো পাভেল সাথে নেই।নবীনগরের ভেতর থেকে গাড়ি যেতেই চমকে তাকালো পরশ। আশ্চর্যজনক ঘটনাটি দেখার জন্য দ্রুতই ড্রাইভার রুপি বডিগার্ড কে আদেশ দিল গাড়ি থামাতে।জানালার কাচ ভালো ভাবে খুলে সামনের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।


দুরেই রাস্তার পাশে তিনজন পথশিশুকে বিরিয়ানির প্যাকেট তুলে দিচ্ছে স্পর্শী।অবাক হওয়ার রেশ ধরেই গাড়ি থেকে নামলো পরশ।নিজের ব্যাক্তিত্ব কে সাময়িকভাবে ছুটি দিয়ে বডিগার্ড দের আসতে বারন করে এগিয়ে গেল রাস্তার পাশে।স্পর্শী বিরিয়ানির প্যাকেট খুলে একজনের মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে।


বাহ,এক থাপ্পড়েই এতো পরিবর্তন।তাহলে তো প্রতিদিন মারতে হয় তোমাকে ভালো করার জন্য।


পিছন থেকে পুরুষালী আওয়াজ পেতেই পিছু ঘুরলো স্পর্শী।প্রথমেই চোখে পড়লো কারো বুক।নীল রঙের পাঞ্জাবি তে টানটান হয়ে আছে প্রশস্ত বুকটা।মাথা তুলে উপরে তাকাতেই দেখলো সেদিনের সেই অভদ্র পুরুষ। চোয়াল শক্ত করে ফেললো স্পর্শী। কিন্তু তাও কিচ্ছু বললো না।আজ সে কাউকে কিচ্ছু বলবে না।


মাথা নিচু করে সামনের দিকে তাকিয়ে হেটে গেল দূরে দাঁড়ানো পাগল লোকটার দিকে।যে এখনো স্পর্শীর হাতের বিরিয়ানির দিকে লোভাতুর ভংগিতে তাকিয়ে আছে।পরশ হাতের ঘড়িটার দিকে চাইলো।সময় আছে বেশ।নির্মল এই পরিবেশে স্পর্শীর পায়ের সাথে দু-পা নিজেও চললো।পরশের দিকে একবার তাকিয়ে স্পর্শী শান্ত ভাবে বললো-


 আমার খারাপ হওয়ার কোনো চান্সই নেই।কারন আমি নিতান্তই ভালো মেয়ে।যারা খারাপ,আমি শুধু তাদের সাথেই খারাপ ব্যাবহার করি।বুঝেছেন?


ওহহহ তাই নাকি?সে জন্যই তো অচেনা মানুষ কে মেসেজ দিয়ে সরাসরি বাচ্চার বাপ বানিয়ে দাও।জানো?সেদিন আমি কি ঝামেলায় পড়েছিলাম?(ব্যাঙ্গ করে বললো পরশ)


দুম করে পরশের দিকে তাকালো স্পর্শী।তাহলে এই সেই লোক।স্পর্শীর চমকিত মুখ দেখে নিশ্চিত হয় পরশ।কারো গলার আওয়াজ ধরেই নিশ্চিত হওয়া যায় না তাও সে কথাটা বলেছিলো।কিন্তু এবারে সে নিশ্চিত সেই মেয়েই এটা।স্পর্শী কয়েক পলক পরশের দিকে তাকিয়ে পাগল টার হাতে বিরিয়ানির প্যাকেট টা খুলে দিল।আনন্দে পরপর কয়েকটা লাফ দিলো মানষিক বিকারগস্ত বয়বৃদ্ধা টি।স্পর্শী তুলে খাওয়াতে যেতেই পাগল টি তার হাতকে ঝাড়ি মেরে দৌ ড় দিল দূরে।যেন, স্পর্শী তার খাবার টি আবার নিয়ে যাবে।হেসে দিল পরশ।স্পর্শী তার দিকে তাকালো।বললো-


এই আপনিও ভীষণ খারাপ মানুষ। আপনার সাথেও আমি খারাপ ব্যাবহার করবো।তবে আজ না,পরবর্তীতে দেখা হলেই বুঝবেন স্পর্শী কি জিনিস।আমাকে বেয়াদপ,অভদ্র বলেছেন আপনি।


পরশ-আজ নয় কেন?


স্পর্শী চুপ হয়ে গেল।আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল-


আজ একটা স্পেশাল প্লাস শোকের দিন আমার।তাই,


থেমে,

এই যে শুনুন,কারো ব্যাপারে না জেনে তার পারিবারিক শিক্ষার উপর আ ঙুল তুলবেন না।হতেও তো পারে সে পরিবার ছাড়াই বড় হয়েছে।


চমকে স্পর্শীর দিকে তাকালো পরশ।স্পর্শী পুনরায় বলল-


এই যে সেদিন আপনি আমায় বলেছিলেন না, বাবার বয়সী কারো সাথে খারাপ ব্যাবহার করা উচিত না।আচ্ছা আপনিই বলুন,বাবার বয়সী কেউ যদি বিছনায় নিতে চায় তখন তার সাথে কেমন ব্যাবহার করা উচিত?


পরশ স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো স্পর্শীর দিকে।স্পর্শী আবারো বলল-


শুনুন,আপনি আমায় সেদিন থাপ্পড় টা মেরে ভুল করেছেন।ওই থাপ্পড় টা ওই রিক্সাওয়ালাকে মারা উচিত ছিলো।উনি ইচ্ছে করে বারবার গাড়িটাকে আমার স্কুটির সামনে দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন।বারন করার পর থেমেও ছিলেন কিন্তু ওনার দৃষ্টি আমার আর আমার বান্ধবির শরীরের দিকে ছিলো শকুনের মতো। 

থেমে,

ওই যে আপনি বলেছিলেন না মেয়ে হয়েও কেন ছেলেদের মতো আচরণ করি?তাহলে শুনুন,

এই আচরণ টা না করলে আপনাদের মতো পুরুষের থেকে নিজেদের কে রক্ষা করা খুব কঠিন।এই যে কথায় কথায় ঝগড়া করি,তেজ নিয়ে প্রতিবাদ করি এটাতে আপনাদের মতো ছেলেরা ভয় পেয়ে ঝামেলায় জড়াতে চায় না।যদি চুপচাপ থাকতাম না তাহলে অবলা পেয়ে সেই প্রথম দিনেই ছিড়েখুঁড়ে খাওয়ার চেষ্টা করতো।

যাই হোক,আপনার পাওনা টা পরবর্তী দিন পাবেন। স্পর্শীকে অভদ্র বলে কেউ শুধু শুধু পার পায় না।


কথাগুলো বলে চলে গেল স্পর্শী।স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো পরশ।এখনো যেন স্পর্শীর কথার ঘোর কাটছে না।এরইমধ্যে আবার স্পর্শি দৌড়ে এল।হাতের থেকে দুটো জিলাপি এবং একটা মিষ্টি পরশের হাতে দিয়ে বললো-


এটা খান,তবারক।খেয়ে দোয়া করবেন কিন্তু।


অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো পরশ-


কিসের তবারক?


স্পর্শী-মাজার জিয়ারত করতে গেছিলাম।সেখানে মিলাদ ও পড়িয়েছি। ওই আজ আমার জন্মদিন আর আমার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকি কি না। তাই।


হতভম্ব হয়ে পরশ বলল-

জন্ম,মৃত্যু মানে?


হেসে দিল স্পর্শী।বলল-


ওই আমি জন্মানোর কয়েক মিনিট পরেই মা মারা যায়।এই জন্য পারিবারিক শিক্ষা টা পাই নি। দোয়া করবেন মায়ের জন্য।ওকে বাই বাই।


বলে চলে গেল স্পর্শী।পরশ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সামনের শুভ্রপরির দিকে।সাদা  ঢোলা স্যালোয়ার, কামিজ মাথায় ওড়না পড়া মেঘবালিকা যেন মেঘের সাথে তাল মিলিয়ে সামনের দিকে হেটে যাচ্ছে।


স্যার আসুন,যাবেন না।(বডিগার্ডের ডাকে হুশ ফেরে পরশের। হাতের মিষ্টির দিকে তাকিয়ে কয়েকবার পিছু ফিরতে ফিরতে গাড়িতে ঢুকল।


চলবে?


পাঠকদের প্রশ্ন:আপনাদের মধ্যে একজন পাঠক বলেছেন, নায়িকার চরিত্রটা দৃষ্টিকটু লাগছে।


উত্তর :প্রিয় পাঠক,সব গল্পের প্রধান চরিত্র একরকম হলে একঘেয়েমি লেগে যায়। আমার গল্পের স্পর্শী চরিত্রটা না হয় এমনই থাক।একটু বিগড়ানো,অতিরিক্ত স্বাধীনচেতা,একটু প্রতিবাদী☺️।আর তাছাড়াও,সঠিক সময় এলে এমনিতেই চরিত্রের মধ্যে পরিবর্তন আনবো আমি।সে পর্যন্ত মানিয়ে নিয়ে পড়তে থাকুন।ধন্যবাদ। 


আপনাদের ভালোলাগা -মন্দ লাগা প্রকাশ করুন।মনে রাখবেন,গল্পটা আপনাদের জন্য,তাই আপনাদের মন্তব্য আমার লেখার ক্ষেত্রে অতি জরুরি।

গল্প রাজনীতির_রংমহল পর্ব ২

 #রাজনীতির_রংমহল

#সিমরান_মিমি

#পর্বসংখ্যা_০২


"আপনার হা'গু আপনার সম্পদ। দয়া করে উহা অন্যকে প্রদর্শনের জন্য রাখিবেন না।নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার করবেন।"


মাঝারি আকারের সাইনবোর্ডে সাইনপেন দিয়ে বড় বড় অক্ষরে কথাগুলো লিখে দম নিল স্পর্শীয়া।এরই মধ্যে পিছন থেকে রিংটোন বাজা অবস্থায় ফোন হাতে ছুটে এলো অনন্দা।


এই স্পর্শী,তোর ফোন।


কথাটা বলে সামনের দিকে তাকাতেই হা হয়ে গেল অনন্দা।ফোনের কথা ভুলে টয়লেটের দরজার উপর টানানো সাইনবোর্ডের লেখাগুলো পড়ে হাসতে হাসতে সেখানেই বসে পড়লো।পেট চেপে ধরে কোনোমতে বললো-


এই স্পর্শী,এসব কি উদ্ভট কথা লিখেছিস তুই?


ভ্রু কুচকে অনন্দার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো স্পর্শী। হাতের সাইনপেন দিয়ে অনন্দার মাথার উপর আলতো আঘাত দিয়ে বললো-


হ, এইসব তো তোমাদের কাছে উদ্ভট লাগবেই।সত্য কথা বললেই দোষ। এই শোন,এগুলো হলো বচন।স্পর্শীর বচন। খনার যেমন বচন ছিলো তেমনি স্পর্শীর ও বচন রয়েছে।নাক-চোখ-মুখ বুঝে হোস্টেলের সবাইকে আমার বচন গুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে বলবি।নইলে কালকে ভার্সিটি মাঠে সেইটাকে অপমান করবো।


থেমে,


কত্ত বড় খবিশের দল ভাবা যায়। এরা গোসল করতে গেলে এত্ত এত্ত পানি খরচ করে যেন মনে হয় জামাইয়ের থেকে মোহরানা পেয়েছে। আর টয়লেটে গেলে এত্তো কিপটামি করে যেন জামাই যৌতুক হিসেবে পানি চেয়েছে। খবিশ কোথাকার?পুরো টয়লেট গুলোকেই বিশ্রীভাবে.........ইয়াক থুহ।

এই শোন অনু,আজ থেকে তোর দায়িত্ব একটাই। টয়লেটে যেই ঢুকুক,বের হওয়ার পর তুই চেক করবি ভালো করে পরিষ্কার করেছে কি না।ওকে


নাক ছিটকালো অনন্দা।এরইমধ্যে পুনরায় ফোনের রিংটোন বাজতেই স্পর্শীর হাতে দিলো।বললো-


এই নে, ধর তোর ফোন।এই নিয়ে তিনবার ফোন দিয়েছে।


চোখের চশমা'টা ডান হাতের তর্জনী দ্বারা উচু করে ফিট করলো।তারপর ফোন হাতে নিয়ে নাম্বার দেখতে দেখতে ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে এলো।নাম্বার' টা বেশ অচেনা লাগছে।রিসিভড করে কানে তুলে ভদ্রতাসহিত সালাম দিলো।


ফোনের ও প্রান্ত থেকে মিষ্টিভাষী কোনো মেয়ের সালাম পেয়ে নড়েচড়ে বসলো পরশ।পাভেল খাটের উপর বসে ফোনের দিকে একদম ঝুকিয়ে বসে আছে।লাউড স্পিকারে দেওয়ার পরেও এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন ফোনের মধ্যে ঢুকে যাবে।ভাইয়ের দিকে একবার তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো-


ওয়ালাইকুম আসসালাম।


ভীষণ বিরক্ত হলো স্পর্শী। ফোন দিয়েছে ঝটপট কথা বলবে তা না। থম মেরে বসে বসে উত্তর দিচ্ছে।মুখ কুচকে প্রশ্ন করলো-


কে বলছেন?কি চাই?


অসস্তিতে হাস-ফাস করতে লাগলো পরশ।রাগ ও লাগলো।এই মেয়েই তো বিকেলে মেসেজ করলো অথচ নাম্বার টাই এখন আর চিনতে পারছে না।মেয়ে বিষয়টাকেই বরাবর এড়িয়ে চলে এসেছে পরশ।তবে পাভেল এই বিষয়ে ভীষণ এক্সপার্ট।ভাইকে নিরব থাকতে দেখে কনুই দিয়ে গুতো দিয়ে কথা বলার জন্য বললো পাভেল।চোখ রাঙালো পরশ তারপর ধীর আওয়াজে বললো-


বিকেলে মেসেজ দিয়েছিলেন আপনি?


থমথম করে হাটতে হাটতে স্পর্শী জিজ্ঞেস করলো-


কি রকম মেসেজ?


পুনরায় অসস্তির জোয়ারে ভেসে গেল পরশ।কি বলা উচিত তার।প্রেগ্ন্যান্সির কথা,কিন্তু সেটা তো শুনতে কটু লাগবে।জীবনে এত্তো এত্তো ভাষন দেওয়া রাজনৈতিক নেতাও সামান্য একটা মেয়ের সাথে কথা বলতে গিয়ে কথা জড়িয়ে/গুলিয়ে ফেলছে,গায়ের ঘাম ছুটিয়ে ফেলছে ভাবতেই মুখ চেপে ধরলো পাভেল।ভীষণ হাসি পাচ্ছে তার।ভাইয়ের হাত থেকে ফোনটা ছো মেরে নিয়ে বিছানার উপর আয়েশ করে বসলো।স্পিকারের কাছে মুখ এনে তড়তড় করে বললো-


আপনি কি বাবুর আম্মু নাকি?আমরা বাবুর আম্মুকে খুজছি।শুনুন বাবুর আম্মু,আমি সম্পর্কে  বাবুর কাকা মশাই হই।চিনেছেন?


তড়িৎ গতিতে দাঁড়িয়ে পড়লো স্পর্শী।তাহলে এটা সেই নাম্বার।অনেকগুলো অচেনা নাম্বারের মধ্যে খেয়াল ছিলো না এর কথা।মেজাজ বিগড়ে গেল স্পর্শীর।নাক-মুখ বিরক্তিতে কুচকে বললো-


ওই ব্যাটা,এতক্ষণে সময় হলো কল করার।কেন আরো আগে করতে পারতি না।যে সময় মেসেজ দিয়েছি ওই সময় কল করলে কি জাত যেত?তোর জন্য আজকে আমি বাজিতে হেরে গেছি।চার প্লেট ফুচকা মিস করেছি।


থেমে,

এহহ এখন আসছে বাবুর খোজ নিতে।তোর বাবুর বা'ল ও এখন নাই।নষ্ট হয়ে গেছে,নাহ-এবরোশন করে ফেলেছি,না না, ডেলিভারিই হয়ে গেছে। শয়তান ব্যাটা,তোর জন্য জীবনে ফার্স্ট আমি বাজিতে হারলাম।একদম কল করবি না।


স্তব্ধ হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে পরশ।পাভেল তো পুরাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে।আনমনে পুনরায় পাভেল জিজ্ঞেস করলো-


 মাত্র আট ঘন্টার মধ্যেই ডেলিভারি হয়ে গেল।বলছি আর কটা ঘন্টা রাখা যেত না। খুব কি কষ্ট হতো?বাবুর বাবা-চাচা কে না জানিয়েই ডেলিভারি করে ফেললেন।


পরশ দ্রুতবেগে পাভেলের হাত থেকে ফোন আনলো।পাভেল পুনরায় টেনে নিয়ে গেল।রাগত কন্ঠে পরশ বললো -


এক্ষুনি ফোন কাট।এই ভয়ানক মহিলার সাথে কথা বলার কোনো দরকার নেই।বেয়াদপ মহিলা।


ওপাশ থেকে সরাসরি বেয়াদপ-ভয়ানক উপাধি পেয়ে রনচন্ডির রুপ ধরলো স্পর্শী।এত্তো বড় সাহস তাকে বেয়াদপ মহিলা বলে। চেচিয়ে উঠে বললো-


তোর বউ ভয়ানক মহিলা,তোর বউ বেয়াদপ।শয়তানের বাচ্চা, তোর সাহস কত্ত বড়,আমাকে বেয়াদপ বলিস।স্পর্শীকে বেয়াদপ বলিস।তোর সাহস থাকলে একবার জাবি'র ক্যাম্পাসে আয়?তোর হাড্ডি-গুড্ডি ভেঙে গুড়ো করে দেয়ালে মাখিয়ে রাখবো।


ফোন কেটে দিলো পরশ।দু ভাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বিছানায় কতক্ষণ নিরব হয়ে বসে রইলো।মনে হচ্ছে বিশাল কোনো যুদ্ধ করে সবেমাত্র ফিরেছে।মিনিট পাচে'ক চুপ থাকার পর পাভেল ধীর কন্ঠে উঠে বললো-


ভাই,আমার না একটা শখ জেগেছে।মনে করতে পারিস এটাই আমার অন্তিম ইচ্ছা।


বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা পরশ ভাইয়ের কথা শুনে শান্তভাবে বললো-


কি ইচ্ছা?


লাফ দিয়ে উঠে বসলো পাভেল।পরশের হাটুর উপর আলতো কিল মারতে মারতে বললো-


এই ভয়ানক মেয়েটাকে এক দিনের জন্য হলেও তোর সাথে বিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে আমার।আহাহা,এটা মেয়ে।কি ভালো-কি ভালো।যখন মুখ থেকে যেটা ছাড়ে সেটাই উপচে পড়ে।বিকেল বেলা মোবাইল ভর্তি প্রেম ছাড়লো এখন আবার গালি।তুই সারাদিন অন্যদের ধমকে -ধামকে রাজনীতি করবি।রাত হলে তোর উপর রাজনীতি করবে।কি দারুন তাই না।


এক হাত দিয়ে পাভেলের মাথা চেপে নুইয়ে অন্য হাত দিয়ে পিঠের উপর দুম করে কিল মারলো পরশ।তারপর কলার ধরে টেনে রুম থেকে বের করে দরজা বন্ধ করে দিলো।


দরজার ওপাশ থেকে পাভেল এখনো চেচাচ্ছে-


ভাই, বাবুর আম্মুর নাম্বার'টা একটু দে না।দু-দিনের জন্য প্রেম করবো। 


পরশ কোনো সাড়া দিল না।চুপ করে বিছানার উপর পড়ে রইলো।মেয়েদের মুখের ভাষাও যে এমন হয় তা আজ সরাসরি জানলো সে।মাথা থেকে সমস্ত ঘটনা ঝেড়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো।


স্পর্শীকে চেচাতে দেখে পুনরায় অনন্দা বারান্দায় এলো।ভ্রু কুচকে বললো-


এই রাত একটার সময় ও চেচাবি তুই।ঘুমাবি কখন?

আর কি এমন হয়েছে যে এমন ভাবে গালিগালাজ করছিস?


দুম করে হেটে এসে ছোট্ট সিংগেল বেডের উপর বসলো স্পর্শী।চোখের চশমা খুলে সোজা হয়ে শুয়ে অনন্দাকে বললো-


আরে বিকালে যে বাজি ধরে কয়েকটা রং নম্বরে মেসেজ দিলাম,সেখানকারই একটা নাম্বার থেকে এখন ফোন দিয়েছে।আমাকে ভয়ংকর-বেয়াদব মেয়ে বলেছে।তাই তো একটু আদর দিয়ে দিলাম।যাই হোক,এখন ঘুমাবো।ডিস্টার্ব করবি না একদম।এমনিতেও তোর জন্য তাড়াতাড়ি ঘুমাতে পারি না আমি।


আকাশ থেকে পড়লো অনন্দা।মাথায় হাত দিয়ে নিজের বিছানায় বসে বললো-


আল্লাহ সইবে না স্পর্শী।এরকম মিথ্যা বলিস না।কোথায় তোর জন্য আমি ঘুমাতে পারি না,সেটা না বলে তুই আমাকে দোষারোপ করছিস।সিরিয়াসলি , দিস ইজ ভেরি ব্যাড।


_____________

সকাল এগারোটা।শুক্রবার হওয়ার দরুন এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে স্পর্শী।এ নিয়ে আট বার ফোনে কল আসলেও ইচ্ছাকৃত ভাবে কেটে দিচ্ছে সে।নয় বারের বার কল রিসিভড করে চেচিয়ে বললো-


কি সমস্যা খালামনি?তুমি জানো না এখন আমি ঘুমোচ্ছি।তাও বারবার ফোন দিচ্ছো কেন?তুমি আমার ফোন নাম্বার  ও বাড়িতেও দিয়ে দিছো,রাহুল ভাইয়ের কাছে ও দিয়ে দিছো।বলি এর চেয়ে পত্রিকায় ছাপিয়ে দিলে ভালো হতো না।তোমাদের জালায় কি আমি হোস্টেলেও থাকতে পারবো না নাকি।


ওপাশ থেকে বেশ আদুরে গলায় বিপাশা বললেন-


ওমা,এমন করে না সোনা।আজ তো শুক্রবার,খালামনিকে দেখতে আসো একবার।আর দুলাভাই নাম্বার চেয়েছে দেখে দিয়েছি।উনি তোমার বাবা না বলো।বাবার সাথে কথা বলছো না কেন?


স্পর্শী-মনি তুমি জানো আমি কি জন্য ও বাড়িতে কথা বলি না। তাও বারবার এমন করো কেন?আর তোমার সাধের ছেলে তো আজকাল বাড়িতেই থাকে।এইজন্য আসি না তোমার কাছে।ওকে বাড়ি থেকে কোথাও টুরে পাঠাও দেখবে আমি দুম করে চলে আসবো।


এরইমধ্যে ওপাশ থেকে কর্কশ কন্ঠে কারো আওয়াজ পেলো স্পর্শী।


এই তোর সাহস কত্ত বড়।আমাকে বাড়ি থেকে বের করতে বলিস।এটা কি তোর জামাই বাড়ি যে সবাই তোর কথায় উঠবে বসবে?নাকি আমি তোর জামাই?


মেজাজ বিগড়ে গেল স্পর্শীর।কাঠকাঠ কন্ঠে বললো-


দেখো রাহুল ভাইয়া,একদম ঢং করবা না।আমার এইসব ঢং একদম ভালো লাগে না। তুমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছো।বিয়েশাদি করে ফেলো,তাহলেই আমি চলে আসবো।


হতাশ হয়ে মায়ের দিকে তাকালো রাহুল।পুনরায় দম নিয়ে বলল-


আমিতো সেই কবে থেকেই বসে আছি।ব্যাস, তুই চলে আয়।তাহলেই কাজি ডেকে ফেলবো।

থেমে দুষ্টুমির সুরে,


এই তুই ও তো বুড়ি হয়ে যাচ্ছিস।মেয়েদের কোথায় ক্লাস এইটে থাকতে বিয়ে দিয়ে দেয় সেখানে তুই তো এবার অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়িস।তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে যা।এ বছরই করে ফেলি বিয়েটা। 


স্পর্শীর নিরবতা পেয়ে পুনরায় বললো

আর হ্যা শোন,আজকে আমি বন্ধুর বাড়িতে যাচ্ছি।পিকনিক আছে।আপনি দয়া করে বাড়িতে পদধূলি দিয়ে যান ম্যাডাম।রাখছি


বলে ফোন কেটে বিপাশার হাতে ফোন দিল রাহুল।থমথমে কন্ঠে বললো-


ও আজ এতটা বিগড়েছে শুধুমাত্র তোমার জন্য। কলেজের গন্ডি পেরোনোর সাথে সাথেই বলেছিলাম তোমায় বিয়ের কথা।শোনো নি,জাবি'তে পড়তে দিয়েছো।তাও হোস্টেলে একা একা। যা ইচ্ছা কর তোমরা।


বলেই হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল রাহুল।


__________

এই যে মশাই,রাস্তাটা কি আপনার বাপের? নাকি বিয়েতে যৌতুক হিসেবে পেয়েছেন?গাড়ি সাইডে সরান নইলে একদম পা ভেঙে হাতে ধরিয়ে দিব।


মেয়েলি কন্ঠের এমন হুমকি পেতেই চমকে পিছনে তাকালো পরশ। সামনের সিট থেকে পাভেল চিৎকার করে পরশ কে বলল-


ভাই,এইটা বাবুর আম্মুর স্পেশাল গলার আওয়াজ না।


হনহনিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেল পাভেল।সামনে তাকাতেই দেখলো......


চলবে?


বার্তা ০১-প্রিয় পাঠক,আমি নিতান্তই নতুন এবং বয়সে অতি ছোট্ট লেখিকা।গল্পটা যেহেতু রাজনীতি কেন্দ্রিক সেহেতু অজস্র রাজনীতি সংক্রান্ত তথ্যের প্রয়োজন পড়ছে এবং পড়বে।আমি চেষ্টা করবো তথ্যগুলো সঠিক দেওয়ার।কিন্তু তারপরেও যদি কোথাও ভুল হয়ে যায় দয়া করে আমাকে কমেন্টসে জানাবেন ভদ্রতার সহিত।আমি নিজেকে শুধরে নিব।কিন্তু হেয়ালি করে কোনো কমেন্টস করবেন না।সবাই সব কিছু জানবে এমনটা নয়।


বার্তা-০২:গতকালের পর্বে বলা হয়েছে পরশের চেয়ে পাভেল তিন বছরের ছোট।কিন্তু আপনারা কিছু পাঠক এত্তো বোকা যে পাভেলকে তিন বছরের বাচ্চা বানিয়ে দিলেন।কেউ কেউ তো আবার সমালোচনা ও করছেন যে তিন বছরের বাচ্চা কিভাবে মেসেজ পড়ে।🫠🤣

গল্প রাজনীতির_রংমহল পর্ব ১

 এই মুহুর্তে তোমায় জড়িয়ে ধরে ঠা'স ঠা'স করে দুটো চুমু খেতে ইচ্ছে করছে।ইউ নো, তুমি আমার বাচ্চার বাপ হতে যাচ্ছো।এখন টু'স করে কল দিয়ে ঠু'স করে নিজের অনুভূতি'টা জানাও।ওয়েট করছি।


স্ক্রিনের উপর জ্বলজ্বল করা বার্তাটা পড়তেই মাথা ঘুরে গেল পাভেল শিকদারের।হাত-পায়ে যেন ঘাম ছুটে যাচ্ছে।সামনের দিকে তাকিয়ে অনবরত বক্তৃতা দেওয়া ফোনের মালিককে একবার দেখে নিলো। তারপর আরেকটু কাছে ঘেঁষে নিচু স্বরে বললো-


ভাই,একদিনে দু-দুটো গুড নিউজ।আমি তো হার্ট ফেইল করবো।


বলেই ফোনটা পরশ শিকদারের সামনে ধরলো।স্ক্রিনের বার্তাটা পড়তেই হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো পরশ।বারকয়েক সেক্রেটারি রুপি নিজের ছোট ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে জনসমাবেশের দিকে তাকালো।এরইমধ্যে পুনরায় একই নাম্বার থেকে মেসেজ আসলো-


এই যে মশাই,আপনি যদি এই মুহুর্তে পৃথিবীর সবথেকে ব্যাস্ততম লোক হয়েও থাকেন, তাতেও আমার কিচ্ছু যায় আসে না।এক্ষুনি ফোন দিন নইলে কিন্তু আমার বাচ্চাকে কোলে নিতে দিব না।


হাতের মাইক্রোফন'টা মুখের সামনে নিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো-

এক্সকিউজ মি!

তারপর পাশেই অবস্থানরত অনুষ্ঠানের আহবায়ক সামিউল সাফি'র হাতে মাইক্রোফোন দিয়ে ছোট্ট আওয়াজে বললো-


তোমরা কন্টিনিউ করো।


 পাভেলের হাত থেকে নিজের পারসোনাল ফোন'টা নিয়ে ত্রস্ত পায়ে স্টেইজ থেকে নেমে যায় পরশ শিকদার।কৌতূহল দমাতে না পেরে পাভেল ও পিছু ছোটে পরশের।


স্টেইজের ডানদিকে প্রায় বত্রিশ হাত দুরেই ছোট্ট একটা নিমগাছ।আপাতত ওই জনশূন্য জায়গাটায় গিয়ে দাড়ালো পরশ।ইতোমধ্যে পাভেল ও ছুটে এসেছে।হাত পাচেক দূরে তিনজন বডিগার্ড আসতেই পরশ হাত দিয়ে ইশারা করে থামতে বললো।ব্যাস সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়লো তারা।অনুষ্ঠানে এখনো বলিষ্ঠ ভাবে বক্তৃতা দিচ্ছে সামিউল সাফি।


হাতের ফোনের লক খুলে কিছুক্ষণ নাম্বারটার দিকে তাকালো পরশ।মস্তিষ্কে বারকয়েক চাপ দেওয়ার পরেও এই নাম্বার'টা অচেনা লাগছে তার।পারসোনাল ফোন হওয়ার দরুন মাত্র জন চারে এই নাম্বার জানে।সেখানে হঠাৎ এরকম মেসেজ আসার প্রশ্নই ওঠে না।তাহলে কি রং নাম্বার।ভ্রু কুচকে এসব ভাবতেই পাভেলের দিকে তাকালো পরশ। তিন বছরের ছোট্ট ভাই'টা মুখটাকে বেশ সিরিয়াস করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।এটা মাঠ না হয়ে বাড়ি হলে এতোক্ষণে বিশাল কেলেংকারি বাধিয়ে ফেলতো পাভেল।আর যাই হোক,পাভেলের সামনেই ব্যাপার'টা ক্লিয়ার করতে হবে ভেবেই অচেনা নাম্বার'টিতে কল করলো পরশ।


মুহুর্তে'ই বি'ক'ট শব্দে বিস্ফোরিত হলো স্টেইজ।সেকেন্ডের মধ্যেই আনন্দ উৎসবের স্থান টা পরিণত হলো ভয়াবহ কোনো রণক্ষেত্রে।হাজার-হাজার মানুষ প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে নিজেদের জীবন রক্ষার্থে।চারদিকে ধোয়া-বালি, লোকজনের ছোটাছুটি দেখে কিছুক্ষণের জন্য হতভম্ব হয়ে গেলো পরশ।এরইমধ্যে শ-খানেক গাড়িতে হাজির হলো ডিবি পুলিশ,ফায়ার সার্ভিস,বম ডিটেক্টর ফোর্স,এবং আরো নিরাপত্তা বাহিনীর দল।সাথে রয়েছে অগণিত এম্বুলেন্স।


পরশ পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্টেইজের সামনে।যে লেকচার টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে সে বক্তৃতা দিচ্ছিলো তারই নিচে লুকানো ছিলো ছোট্ট টাইম বোমাটি।অত্যন্ত ছোট্ট হলেও বিস্ফোরক যন্ত্র'টি ভীষণ বাজে ভাবে বিস্ফোরিত হয়ে স্টেইজ এবং তার আশে-পাশের মানুষ মিলিয়ে প্রায় সতেরো জনকে আহত করেছে।সব থেকে বাজে-ভাবে আহত হয়েছে অনর্গল বলিষ্ঠ কন্ঠে বক্তৃতা দিতে থাকা অনুষ্ঠানের আহবায়ক সামিউল সামি।ইতোমধ্যে সবাইকে এম্বুলেন্সে করে স্থানীয় সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।


নিরাপত্তা কর্মীরা নানাভাবে জায়গা গুলোতে ইনভেস্টিগেশন করে জানিয়েছেন আসল সত্য।এটা তারা না বললেও সাধারণ চুনোপুটিরাও বুজবে এই আক্রমণের কারন।দীর্ঘ অনেক মাস ধরে নানা মিছিল-মিটিং এর পরে আজকের সাংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে এমপি হয়েছেন পরশ শিকদার।কৈশোর থেকেই বলিষ্ঠ ভাষন,দুঃসাহস,এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত থাকার কারনে রাজনীতির প্রতি এক আমূল ঝোক তার।সেই ঝোক'কে কেন্দ্র করেই পড়ালেখা শেষ হওয়ার পরে আর চাকরিতে মনোনিবেশ করে নি সে।যুক্ত হয়ে রাজনীতিতে।ফলস্বরূপ, আজ আঠাশ বছরের এই টগবগে যুবক জনসাধনের বিপুল ভোটে জয়লাভ করে হয়েছেন এমপি।


ভোটে জয়লাভ করার পরেই দলের সবাই আনন্দ-উৎসব হিসেবে মাঝারি ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলো নির্বাচন মাঠে।সেই আনন্দ কে ধূলিসাৎ করার জন্যই হয়তো বিরোধী পক্ষ এই নিকৃষ্ট কাজটি করেছে।তবে সরাসরি শক্ত কোনো প্রমাণ ছাড়া কারো উপর আঙুল তোলা উচিত হবে না ভেবেই দলের সমস্ত সদস্যদের চুপ থাকার হুকুম দিয়েছে পরশ। যুবলীগ-ছাত্রলীগ সহ অজস্র টগবগে যুবক নিজেদের কে সামলে রাখছে শুধুমাত্র পরশের কথায়।নইলে এতোক্ষণে বিরোধী দলের নেতা সোভাম সরদারের লোকের উপর ঝাপিয়ে পড়তো মর্মান্তিক ভাবে।


সারাদিন হাসপাতাল,প্রেস-কনফারেন্স,মিডিয়া,অফিস এসবে দৌড়া -দৌড়ি করতে করতে হাপিয়ে উঠেছে পরশ।বাড়ি থেকে লাগাতার কল আসছে একের পর এক।সমস্ত ঝামেলা মিটিয়ে দলের সমস্ত লোকদের বুঝিয়ে শান্ত করে বাড়ি ফিরলো পরশ।এই সমস্ত সময়'টা ভাইকে এক চুল ও ছাড়ে নি পাভেল। ছায়ার মতো সর্বক্ষণ পাশে পড়ে রয়েছে। 


রাত এগারোটা,গোসল সেরে ডাইনিং এ বসে সবেমাত্র ভাতের লোকমা মুখে তুলেছে পরশ।সারাদিনের ক্লান্তি,ঝামেলা,ছোটাছুটি তে পাভেল একরকম ভুলেই গেছিলো ফোনের মেসেজের কথা।মাথায় আসতেই খাওয়া ছেড়ে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-


ভাই,ভাবিকে তো কংগ্রাচুলেশন  করা হয়নি।ফোন দিয়েছিলি তার পরে।এত বড় একটা সু-খবর জানালো তোকে।


স্তব্ধ,হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো পাভেলের মুখের দিকে।যতই সে পরশকে ভয় পাক,কিন্তু বাড়ির ভেতর ঢুকলেই একে একে যত রকম কথা বলে পরিবারের থেকে বকা খাওয়ানো যায় সে ব্যাপারে মশগুল থাকে সে।বাড়িতে এলে যেন চিরশত্রু হয়ে যায় পরশ।ডাইনিং টেবিলে থাকা প্রত্যেকটা মানুষ নিরব হয়ে তাকিয়ে আছে পাভেলের মুখের দিকে। ভাতে তরকারি দিতে দিতে ছোট ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে পিয়াশা শিকদার শুধালেন-


কোন ভাবি?কি সু-খবর?


পাভেল যেন হাতে চাঁদ পেয়ে বসলো।সে তো চেয়েছিলোই এটা। যাতে কেউ একজন তাকে জিজ্ঞেস করুক আর সে গড়গড় করে সারাদিনের পেটে পচানো কথাটা উগড়ে দিতে পারে।মুরগীর লেগ-পিসে কামড় দিয়ে বেশ আয়েশ করে তাকালো পরশের দিকে।ভাই তার শান্ত ভাবে নিচের দিকে তাকিয়ে খেয়ে যাচ্ছে।হয়তো সে বুজতে পেরেই গেছে কথাটা কোনোভাবে তার একার মধ্যে থাকবে না।


আসলে মা হয়েছে কি জানো?আমিও বা কি বলি,তুমি কি ভাবে জানবা?চব্বিশ ঘন্টা ওর সাথে আমি থাকি,সেই আমিই জানি না। আর তো তুমি?বাদ দাও।ঘটনা টা হচ্ছে আজকে একই দিনে দু-দুটো গুড নিউজ পেয়ে বেশ স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম আমি।ঝামেলা টা না বাধলে ঘটনা টা আরো আগেই জানতে পারতে। 


ধমক মেরে বসলেন মহীউদ্দীন শিকদার।খেতে খেতে বললেন-


তোমাকে এতো  সাজিয়ে উপস্থাপন করতে কেউ তো বলেনি।ঘটনা টা কি সেটা বলো?


পাভেল-আহা আব্বু,সুন্দর কথা তো সাজিয়েই বলতে হয়।তোমার ছেলে সুন্দর ভাবে আমাদের থেকে লুকিয়ে বিয়ে করেছে।আজ আবার জানতে পারলাম তাদের বেবিও হবে।আহা সেকি প্রেম?মেসেজে জানিয়েছে কথাটা তাতেই আমি হতভম্ব। বিশ্বাস কর আব্বু,মেসেজ টা তূমি দেখলেই বুজতে পারতে কি প্রেম ওদের মাঝে।মোবাইল উপচে প্রেম গুলো গড়িয়ে পড়ছিলো। আহাহাহাহা।


স্তব্ধ হয়ে গেল পুরো শিকদার মঞ্জিল।পাভেল নিত্যনতুন নানা কথা পরশের নামে বলেই থাকে সেই নিয়ে আজকে তেমন ভাবে কেউ কথাগুলো শোনে নি।কিন্তু তাই বলে সরাসরি বিয়ের কথা। পাভেল আর যাই বলুক,মিথ্যে কথা যে বলবে না এ ব্যাপারে সবাই নিশ্চিত। 


মাথায় হাত দিয়ে পাশের চেয়ারে বসে চুপচাপ পরশের দিকে তাকিয়ে আছে পিয়াশা। ছেলের নিরবতা পেয়ে ধমকে বললেন-


এই কথা শোনার জন্য আল্লাহ আমাকে বাচিয়ে রাখছিলো এতোদিন।তোমার মেয়ে পছন্দ,তাকে বিয়ে করবা,সংসার করবা আমাদের বলতেই পারতা।আমরা কি বাধা দিতাম?কি দরকার ছিলো এভাবে লুকিয়ে বিয়ে করার?


পরশ বুক ভরে দম নিলো। তার খাওয়া শেষ। পাভেলের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। তারপর বাকিদের দিকে তাকিয়ে বললো-


সে রকম কিছু না মা।আজকাল এরকম রঙ নাম্বারে অহরহ মেসেজ আসতেই পারে। আমি ওই নাম্বার টা চিনি না আর নাতো ওই মহিলাকে।আর আমার ফোন তো ওর কাছেই থাকে,ও হয়তো চিনে থাকবে।


দুম করে উঠে বসলো পাভেল।সবার দিকে তাকিয়ে পুনরায় বললো-


তুই কি করে জানিস ওই নাম্বার টা কোনো মহিলার?পুরুষের  ও তো হতে পারে।আগে পিছে কথা না বলে শুধু মেসেজ দেখেই কিভাবে বললি ওটা মেয়ে মানুষ?পাগল পাইছিস আমাদের?


পুনরায় পাভেলের কথায় সায় দিলো শিকদারের মঞ্জিলের সবাই। পরশ দাতে দাত চেপে চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো।পাভেলের পাশে গিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো-


তুই রুমে আয়?তোকে আমি প্রেগন্যান্ট বানাচ্ছি।


বলে ফোন নিয়ে হনহন করে উপরে চলে গেল পরশ।জিহবায় কামড় দিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো পাভেল।


ইশ,ওই মেসেজে তো বলেছিল প্রেগন্যান্ট। তারমানে ওটা মেয়ে'ই ছিলো।(বিরবির করে বললো)


পিয়াশা ছোট ছেলের পাশে এসে বসলেন।ঘাড়ে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন-


ও বাবা,সত্যিই কি পরশ বিয়ে করছে।নাকি তুই আবার মজা করছিস।


পাভেল-ঊফফফ মা,আরে তেমন কিছু না।আমি আগে নিযে ইনভেস্টিগেশন করি।পরে তোমাদের জানাচ্ছি।


নিজের রুমে যেতেই পরশ ফোন হাতে নিয়ে বসলো।যাই হোক,আজ ওই নাম্বার থেকে এমন উদ্ভট মেসেজ না আসলে বমে দগ্ধ হতো সে।কে এই অপরিচিতা?আদোও কি সে অপরিচিত না কি চেনা কেউ।তাকে বাচানোর জন্যই কি কৌশলে এমন মেসেজ পাঠিয়েছে।যেই হোক না কেন এই লোকের ব্যাপারে বেশ খবর নিতে হবে পরশের। সুচ হয়ে ঢুকে যেন পরবর্তীতে ফাল হয়ে না বের হয় সে রাজনীতির প্রতিটা কদমে বেশ পরিক্ষা করে ফেলতে হয় পা।নইলে এখানে টেকা বেশ মুশকিল। ফোন হাতে নিয়ে কল করলো অপর প্রান্তের অচেনা নাম্বারে।


"আপনার হা'গু আপনার সম্পদ। দয়া করে উহা অন্যকে প্রদর্শনের জন্য রাখিবেন না।নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার করবেন।"


মাঝারি আকারের সাইনবোর্ডে সাইনপেন দিয়ে বড় বড় অক্ষরে কথাগুলো লিখে দম নিল স্পর্শীয়া।এরই মধ্যে পিছন থেকে রিংটোন বাজা অবস্থায় ফোন হাতে ছুটে এলো অনন্দা।


এই স্পর্শী,তোর ফোন।


#চলবে?


#সূচনা_পর্ব

#রাজনীতির_রংমহল

#সিমরান_মিমি


নেক্সট পর্ব লিংক👇

https://wwp.ailony.com/redirect-zone/e7dc6d73