গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৪৫ সমাপ্ত

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 45


🍂🍂🍂


এক রাশ বিরক্তি নিয়ে মিটিং এ বসে আছে রুদ্র। সামনেই আয়মান প্রেজেন্টেশন দিচ্ছে কিন্তু তাতে বিন্দু মাত্র মনোযোগ নেই তার। বসে বসে শুধু মিটিং শেষ হওয়ার অপেক্ষা করছে সে। আপাতত মেহেরের ওপর তার বেশ রাগ লাগছে। সে আজ অফিসে আসবে না জানিয়েও দিয়েছিল। কিন্তু আসতেই হলো।


🍂সকালে 🍂


~ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং থাকতেও আপনি অফিসে যাবেন না কেনো?

রুদ্র টিভির থেকে মনোযোগ সরিয়ে মেহেরের দিকে তাকালো। পুনরায় টিভিতে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে বললো,

ভালো লাগছে না, যাবো না।

মেহের তেতে উঠে বললো,

ফাজলামো করছেন! আমার প্রেগনেন্সির খবর পেয়েছেন পর থেকে দেখছি আপনি অফিসে ঠিক মতো যেতে চাইছেন না। এভাবে করলে চলে!

রুদ্র টিভি বন্ধ করে মেহেরের দিকে ঘুরে বসলো। গাল ফুলিয়ে বললো,

তোমাকে এই অবস্থায় বাড়িতে একা রেখে যেতে মন চায় না মেহেরজান। তোমার ডেলিভারী এর ডেটও চলে আসছে। যদি দরকার পড়ে যায়? ডেলিভারি না হওয়া পর্যন্ত আমি কোথাও যাচ্ছি না।

মেহের দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। রুদ্রর গালে হাত ঠেকিয়ে বললো,

আমার কিছু হবে না রুদ্র। আপনি প্লীজ আমার জন্য এভাবে কাজ ফেলে রাখবেন না। এমনিও আমি বাড়িতে একা না। মামনি, বাবা, দিয়া, স্নেহা তো আছেই। আবার আপনি অফিসে গেলে তীব্র ভাইয়াও বাড়িতে চলে আসে। কাব্য আহিল ও রোজ বিকেল হতেই দেখা করতে আসে। আপনি অযথা চিন্তা করবেন না। আমার কাছে সবাই ই আছে।

~সবাই থাকলেও আমি তো নেই। মেয়েদের কাছে পৃথিবীর সবার কাছে থাকা এক দিকে আর তার স্বামীর কাছে থাকা এক দিকে। এদিকে আমি থাকতে চাইছি আর তুমি ঠেলে দূরে পাঠাচ্ছে কেনো?

রুদ্রর গাল ফুলানো দেখে এবার বেশ হাসি পাচ্ছে মেহেরের। সত্যিকারের ভালোবাসা নাকি এ যুগে খুজে পাওয়া দুঃষ্কর তবে সে কি করে রুদ্রর মত পাগল প্রেমিক পেয়ে গেলো? রুদ্রর পাগলামি দেখে ভালো লাগলেও ডেলিভারি এর কথা মনে হলে তার মনেও খুব ভয় হয়। যদি তার কিছু হয়ে যায়? মেহের নিজের মনকে বুঝালো এমন কিছুই হবে না, সব ঠিক হবে। রুদ্রকে অনেক বুঝিয়ে অবশেষে অফিসে পাঠাতে সক্ষম হলো মেহের।


🍂বর্তমানে🍂


মিটিং এর মাঝে রুদ্রর ফোনটি বেজে উঠায় সকলেই তার দিকে তাকালো। মিটিং এর সময় সবার ফোন সাইলেন্ট রাখতে হবে এটা রুদ্রর ই বলা নিয়ম আর আজ সে নিজেই এই নিয়ম ভঙ্গ করছে! বেশ ভাবার বিষয়! রুদ্র দেখলো স্ক্রিনে তীব্রর নাম জ্বলজ্বল করছে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বললো,

সরি এভরিওয়ান, আজকের মিটিংটা এখানেই শেষ করা লাগছে। খুব শীঘ্রই মি. হাসান আপনাদের মিটিংয়ের নেক্সট ডেট জানিয়ে দিবে।

রুদ্রর কথায় সকলেই চুপচাপ রুম থেকে বিদায় নিলো। রুদ্র কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে তীব্রর তটস্থ কণ্ঠস্বর,

রুদ্র! রুদ্র জলদি আয়মানকে নিয়ে হাসপাতালে আয়। আমরা মেহেরকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি।

ওপাশ থেকে মেহেরের চিৎকার, আর্তনাদ স্পষ্ট শুনতে পেলো রুদ্র। রুদ্রর বুক ধকধক করছে। প্রিয় মানুষটাকে হারানোর ভয় জেকে ধরছে। এই মুহূর্তে মেহের হয়তো নিজের পাশে তাকেই খুঁজছে। রুদ্র আয়মানকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

________________________________


হাসপাতালে আসতেই তীব্রর কথা মত অপারেশন থ্রিয়েটারের কাছে এসে দাঁড়ালো রুদ্র। রুদ্রর চোখে মুখে ভয় স্পষ্ট। রুদ্রকে দেখতেই তীব্র এগিয়ে এলো। রুদ্রকে আশ্বাস দিয়ে বললো,

ভয় পাস না। মেহের আর বেবি দুজনেই সুস্থ হবে ইন শাহ্ আল্লাহ।

রুদ্র মাথা নেড়ে সায় জানালো। একজন নার্স এসে মেহেরের গার্ডিয়ানকে ডাকতেই রুদ্র দৌড়ে তার কাছে গেলো। রুদ্র মেহেরের অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করলে নার্স জানালো,

আপনারা দ্রুত রক্তের ব্যবস্থা করুন।

মেহের আর আয়মান এর রক্ত এক গ্রুপের হওয়ায় আয়মানই রক্ত দিতে চলে গেলো। অন্যদিকে মেহেরের অবস্থা ক্রিটিক্যাল ভেবে নিয়েই রুদ্র থম মেরে দাড়িয়ে রইলো। তীব্র গিয়ে রুদ্রর কাধে হাত রাখতেই রুদ্র জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়লো তীব্রর ওপর। হটাৎ এমন হওয়ায় তীব্র টাল সামলাতে না পেরে রুদ্রকে নিয়েই পড়লো পাশে থাকা চেয়ারের ওপর। তীব্রর অবস্থা এবার দেখার মতো। একদিকে বউ অপারেশন রুমে অন্যদিকে বউ এর টেনশনে বর বেহুঁশ। এদের কান্ড দেখে হাসবে না কাদবে বুঝে পাচ্ছে না তীব্র। অন্য দিকে দিয়া কান্না রেখে ফ্যালফ্যাল করে রুদ্রর দিকে চেয়ে আছে। এমনিই নাহয় ফাইজলামি করে বলতো রুদ্র বেহুঁশ হবে, জ্ঞান হারাবে তাই বলে সত্যি সত্যি! ঘণ্টা কয়েক পর রুদ্রর জ্ঞান ফিরলো। জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে হাসপাতালের বেড এ আবিষ্কার করে লাফ দিয়ে উঠে বসলো রুদ্র। সামনেই দিয়া আর আয়মান টাওয়ালে কিছু একটা পেঁচিয়ে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে আর রুদ্রর দিকে চেয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। আয়মানকে দেখতেই রুদ্র প্রশ্ন করলো,

আমার রুদ্রাণী কেমন আছে?

~আলহামদুলিল্লাহ্ সে এখন সুস্থ আছে। কেবিনে রেস্ট নিচ্ছে।

~আমাদের বাচ্চা? ও... ও কেমন আছে? ও সুস্থ আছে?

রুদ্রর প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আবারো মুচকি হাসলো আয়মান। আয়মানকে অকারণেই হাসতে দেখে রুদ্রর আপাতত মন চাইছে আয়মানকে এক লাথি মেরে সামনে থেকে বিদায় করতে। ধমকে বললো,

জবাব দিচ্ছিস না কেনো? আর হাসছিস কেনো? জবাব দে! আমিই যাচ্ছি ওদের সাথে দেখা করতে।

রুদ্রর ধমকে উঠতেই বাচ্চার কান্নার আওয়াজ কানে এলো রুদ্রর। মুহূর্তেই বুঝতে পারলো আয়মানের কোলে টাওয়াল পেঁচানো তারই সন্তান। আয়মান এগিয়ে এসে বাচ্চাটিকে রুদ্রর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

আপনার আর ভাবিমার ছেলে।

রুদ্রর চোখ ছল ছল করে উঠলো, কম্পনরত হাতে কোলে নিলো তার সন্তানকে। বাচ্চাটি রুদ্রর কোলে আসতেই কান্না থামিয়ে ফ্যালফ্যাল করে রুদ্রর দিকে চেয়ে রইলো। রুদ্র এক আঙ্গুল দিয়ে বাচ্চাটির গালে স্পর্শ করতেই সে খিল খিল করে হেসে উঠলো। বাচ্চাটি রুদ্রর আঙ্গুলটি তার ছোট্ট হাতে চেপে ধরলো। রুদ্র মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলো তার সন্তানের দিকে। তার আর মেহেরের সন্তান, তাদের অস্তিত্ব।

~কিছুক্ষণের মধ্যেই ভাবিমার জ্ঞান ফিরবে। আপনি যাবেন না?

রুদ্র ফট করে উঠে দাড়ালো। হাসি দিয়ে বললো,

যাবো না কেনো? অবশ্যই যাবো।

________________________________


মেহের বেড এ হেলান দিয়ে বসে আছে। সামনের সোফায় মেহরিশ, তিথি, আর মেহেরের নানি বসে আছে। মেহেরের নানি বেবিকে কোলে নিয়ে নানান কথা বলছে, আর তিথি আর মেহরিশ আড্ডায় মশগুল। অন্যদিকে মেহেরের পাশের সিটে রুদ্র বসে আছে আর তার পাশে দাড়িয়ে আয়মান ফোন টিপছে। মেহের প্রশ্ন করলো,

বেবির কানে আযান দেওয়া হয়েছে?

রুদ্র ঘাড় ঘুরিয়ে আয়মানের দিকে চোখ পিট পিট করে তাকালো। আয়মান ফোনেই দৃষ্টি স্থির রেখে ঠোঁট চেপে হাসছে। দিয়া ফল কাটতে কাটতে বললো,

আয়মান আর তীব্র ভাইয়া দুজনের মধ্যে কে আগে আযান দিবে তা নিয়ে ঠেলা ঠেলি করছিলো। শেষে বাবা ওনাদের ঠেলাঠেলি থামাতে নিজেই আযান দিলো। আযান দিতে না পারায় এই নিয়ে আরও টানা ১৫ মিনিট একে অপরকে খুঁচিয়েছে এরা।

দিয়ার কথা শুনে হাসলো মেহের। রুদ্রকে বললো,

আপনি আযান দিতে চাননি?

মেহেরের প্রশ্নে দিয়া ফিক করে হেসে দিলো। মেহের তাকাতেই দিয়া বললো,

ভাইয়া হুশ এ থাকলে না আযান দিবে। তোর রক্ত লাগবে শুনেই ভাইয়া জ্ঞান হারিয়েছে।

মেহের অবাক হয়ে তাকালো। রুদ্র মাথা নিচু করে বসে রইলো। রুদ্রর কোলে তাদের ছেলেকে দিয়ে বেরিয়ে এলো রুদ্র বাদে সকলেই। স্বামী স্ত্রী একান্ত কিছু সময় কাটাক, কথা বলুক।

~আমি আজ খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

বাচ্চার গালে নিজের হাত ছুঁয়ে শান্ত কণ্ঠে বললো রুদ্র। মেহের চুপ করে ওদের দিকে চেয়ে রইলো। রুদ্র আবারো বললো,

আমরা আর বাবু নিবো না। প্রতিবার তোমার লাইফ রিস্ক নেওয়া দেখতে পারবো না আমি। এবারই মনে হচ্ছিলো জান হাতে নিয়ে ঘুরছি। পরবর্তীতে মরে না যাই।

মেহের রুদ্রর মুখ চেপে ধরে বললো,

ইশ! এসব কি কথা!

রুদ্র আলতো হাসলো। মেহেরের ললাটে অধর ছুঁইয়ে বললো,

ধন্যবাদ মেহেরজান। আমাকে জীবনের এতো সুন্দর একটা অনুভূতির সাথে পরিচিত করানোর জন্য।

মেহের হাসলো। রুদ্রর বুকে মাথা গুঁজে বসে রইলো অনেকক্ষণ। এই যেনো তার শান্তির স্থান, তার ভরসার স্থান।

 

🍂 আট বছর পর 🍂


সকলেই আড্ডায় ব্যস্ত। আজ মেহেরের আর রুদ্রর বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে পুরো পরিবার আর বন্ধুরা সকলে এক হয়েছে। অনুষ্ঠান শেষে সকলেই আড্ডা দিতে বসলো। আড্ডার মূল টপিক হচ্ছে তাদের অতীতের স্মৃতি। সময়ের সাথে সাথে পাল্টেছে অনেক কিছু। দিয়া আর আয়মানের সাড়ে চার বছরের মেয়ে আয়ানা। কাব্যর এখন বেশির ভাগ সময়ই কাজের ক্ষেত্রে দেশের বাহিরে থাকা হয়। নিজের প্রিয় পাত্রীকে ইতিমধ্যে বাড়িতে পরিচয় করিয়েছে সে। খুব শীঘ্রই হয়তো ওদের বিয়ে হবে। আর আহিল! সে বাবা মাকে এতো বছর পর কাছে পেয়েছে বলে বিদেশে স্কলারশিপ পেয়েও যায়নি। পড়ালেখা শেষে বর্তমানে বাবার ব্যবসায় ই সামলাচ্ছে সে। আহিলের পছন্দের মেয়ের সাথেই আগামী মাসে বিয়ে। স্নেহা আর তীব্র বড় ছেলে তাজওয়ার আর ছোট মেয়ে স্নিগ্ধাকে সুশিক্ষা কিভাবে প্রদান করা যায় তা নিয়ে চিন্তায় মগ্ন। মেহেরের নানা নানীর মৃত্যুর পর রুদ্র আর আহমেদ ভিলার সকলেই জোর করে মেহরিশকে তাদের সাথে আহমেদ ভিলায় নিয়ে আসেন। মিসেস তিথি, রেদোয়ান, আর মেহরিশ এখন গল্প গুজব আর নাতি নাতনীদের সাথে খেলাতেই দিন পার করেন। রুদ্র আর মেহের! রুদ্রর ভালোবাসা বিন্দুমাত্র কমেনি মেহেরের জন্য। তাদের ভালোবাসা যেনো সময়ের সাথেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে তো প্রতিদিন, প্রতিক্ষণে, বার বার প্রেমে পড়ে তার প্রেয়সীর। এতো বছর পরেও এখনো অপলক চেয়ে থাকে তার রুদ্রাণীর পানে। হৃদযন্ত্রটি যেনো বার বার চিৎকার করে বলে,

তুমি শুধুই #আমার_রুদ্রাণী।


________________________________


কোমড় এ হাত ঠেকিয়ে পেছনে ঘুরে দাঁড়াতেই একটা বাচ্চা মেয়ে ফোকলা দাতে হেসে বললো,

~লুদলাণী আনতি! তোমাতে থোতো তাততু দাকতে।

আয়ানার কথা শুনে ফিক করে হেসে উঠলো মেহের। আয়ানাকে কোলে নিয়ে ঘরে এসেই রুদ্রর উদ্দেশ্যে ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বললো,

আপনাকে কতবার বলেছি ওদের আমাকে রুদ্রাণী ডাকতে বলবেন না!

রুদ্র ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বললো,

আমি শিখিয়েছি? দেখলি রওনক তোর মা আমাকে কত বড় অপবাদ দিলো!

~নিজের মিথ্যায় আমার ছেলেকে সাক্ষী বানালে আজকে আপনার খবর আছে।

রওনক এগিয়ে গিয়ে মেহেরের সামনে দাড়ালো। মেহেরের মতো কোমড় এ হাত রেখে বললো,

এই পিচ্চির কথায় বিশ্বাস করো রুদ্রাণী আম্মু!  এই পিচ্চি তো কি বলতে কি বলে ফেলে।

মেহের আয়ানাকে নামিয়ে রওনককে কাছে ডাকলো। রওনক কাছে যাবে না বললে মেহের চোখ গরম করে তাকায়। রওনক কাছে যেতেই তার কান টেনে বলে,

বজ্জাত ছেলে! বাবার মতো ফাজিল হয়েছিস! নিজে পিচ্চি হয়ে আরেকজনকে পিচ্চি বলিস।

রওনক কান ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,

আহ! আম্মু! ও তো আমার থেকে সাড়ে তিন বছরের ছোট। তাহলে ও তো পিচ্চিইইইই!!!

~ইশ! কেমন দজ্জাল মহিলার মত চেপে ধরেছে আমাদের ছেলে! দেখো দেখছি! (রুদ্র)

মেহের চোখ গরম করে তাকাতেই রুদ্র ওদের হাতে দুটো চকলেট ধরিয়ে ওদের নিচে পাঠিয়ে দিলো রুদ্র। মেহের রাগান্বিত কণ্ঠে বললো,

আপনি ওদের রুদ্রাণী ডাকতে শিখাচ্ছেন কেনো!

~বাচ্চাদের মুখে তোমার এই নামটা শুনতে অনেক কিউট লাগে তাই।

রুদ্র মেহেরের কোমড়ে হাত ছোঁয়াতেই মেহের  নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,

কি করছেন কি! ছাড়ুন!

রুদ্র ছাড়লো না। আরেকটু কাছে টেনে বললো,

ভালোবাসি রুদ্রাণী।

মেহের লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে তাকালো রুদ্রর দিকে। রুদ্র মুচকি হাসলো। মেহেরের হাত ধরে বারান্দায় গিয়ে বসলো সেই প্রথম রাতের মতোই। আজও আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে। রুদ্র মেহেরের কাধে মাথা রেখে বসে রইলো দীর্ঘক্ষণ। লহুস্বরে ডেকে উঠলো,

রুদ্রাণী!

~হু?

~মাঝে মাঝে ভাবতেই অনেক ভালো লাগে এই তুমি পুরোটাই আমার, একান্তই আমার।

মেহের লজ্জায় চুপ করে রইলো। রুদ্র আবারও বললো,

ভালোবাসি।

মেহেরকে এবারও চুপ থাকতে দেখে রুদ্র বললো,

বলবে না কিছু?

~আমিও

~আমিও কি?

মেহের রুদ্রর বুকে মাথা রেখে বললো,

ভালোবাসি আমার রুদ্রকে।

মুহূর্তেই রুদ্রর ঠোঁটে এক বিস্তর হাসি ফুটে উঠলো। মেহেরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

ভালোবাসি রুদ্রাণী, #আমার_রুদ্রাণী।


~সমাপ্ত~


(ইয়ে!!! হ্যাপি এন্ডিং~~~ সম্পুর্ণ গল্পটা কেমন লেগেছে অবশ্যই জানাবেন। গঠনমূলক কমেন্টস করবেন। খুব শীঘ্রই নতুন গল্প নিয়ে ফিরবো ইন শাহ্ আল্লাহ। আমাকে আবার কেউ ভুলে যাবেন না। হ্যাপি রিডিং~)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৪৪

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 44


🍂🍂🍂


গালে হাত ঠেকিয়ে রুদ্রকে দেখছে মেহের। গত আধঘন্টা যাবৎ রুদ্র সারাঘর জুড়ে পায়চারি করছে। পায়চারি বললে ভুল হবে। সে তো রীতিমতো দৌড়াদৌড়ি করছে।

~এভাবে দৌড়াদৌড়ি করছেন কেনো?

মেহের প্রশ্ন কর্ণপাত হতেই দাড়ালো রুদ্র। একবার মেহেরের দিকে চেয়ে আবারো পায়চারি করতে করতে বললো,

আমি দৌড়াচ্ছি না হাঁটছি।

মেহের ঠোঁট বাঁকিয়ে প্রশ্ন করলো,

এটাকে হাঁটা বলে? তবে দৌড় কাকে বলে?

রুদ্র আবারো দাড়ালো। মেহেরের দিকে চেয়ে রইলো কিছু মুহূর্ত। মেহেরও রুদ্রর দিকে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে তাকালো। রুদ্র দ্রুত পায়ে মেহেরের কাছে এসে বসলো। মেহেরের দু হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে তাতে ঠোঁট ছোঁয়ালো। মেহের চুপচাপ রুদ্রর কার্যক্রম দেখছে। ইদানিং অতিরিক্ত চিন্তায় মগ্ন থাকতে থাকতে লোকটা নিজের যত্ন নিতেই ভুলে গেছে। দিনে দিনে যেনো রুদ্রের চোখে মুখে এক প্রকার অসহায়ত্বের ছাপ ফুটে উঠেছে। রুদ্র অনুযোগের সুরে বললো,

আমার খুব ভয় করছে মেহেরজান! তুমি প্লীজ নিজের যত্ন নিবে। তুমি খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো না করলে আমার খুব চিন্তা হয়। তোমাকে ছাড়া আমার পক্ষে ভালো থাকা সম্ভব না। তুমি অন্তত আমার জন্য হলেও সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে বেচেঁ থাকার চেষ্টা করবে।

মেহের রুদ্রের কপালে ছড়িয়ে থাকা এলোমেলো চুলগুলোকে হাত দিয়ে নেড়ে আরেকটু এলোমেলো করে দিলো। রুদ্র চোখ বুজে নিতেই খিল খিল করে হেসে উঠলো মেহের। বললো,

আপনি এতো চিন্তা করেন কেনো সবসময়? কিছু হবে না আমার।

রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেহেরের কোলে মাথা রাখলো। মেহের পেটে কান পেতে বললো,

শোনো বাচ্চা! আমি সব থেকে বেশি তোমার আম্মুকে ভালোবাসি। তাই পৃথিবীতে আসার সময় তোমার আম্মুকে বেশি কষ্ট দিবে না। নাহলে কিন্তু আব্বু ভীষণ রাগ করবে তোমার সাথে। তখন কিন্তু আর কোলে নিবো না।

মেহের আবারো খিল খিল করে হেসে উঠলো। রুদ্র মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইলো তার প্রেয়সীর পানে। একটু গলুমলু হওয়ায় আগের থেকেও অনেক বেশি সুন্দর লাগে এখন মেহেরকে তার কাছে। মেহের ভ্রু নাচিয়ে "কি?" জিজ্ঞেস করতেই রুদ্র মাথা নাড়িয়ে "কিছু না" বুঝালো।


.


মেহের একটু নড়ে বসতেই রুদ্র ধড়ফড়িয়ে এসে মেহেরের কাছে বসলো। বিচলিত হয়ে বললো,

কি হলো? ব্যাথা করছে? হাসপাতাল নিয়ে যাবো?অনেক বেশি খারাপ লাগছে? কথা বলছো না কেনো? জবাব দাও!

মেহের বিরক্তি নিয়ে তাকালো। গত কয়েকমাসে এক প্রশ্ন শুনতে শুনতে কান যেনো ঝালাপালা হয়ে গেলো তার। একটু নড়েচড়ে বসলেই ভাবে মেহেরের পেইন শুরু হয়ে গেছে। মেহেরের বিরক্তিমিশ্রিত চাহনী দেখতেই চুপ করে উঠে ঘরে চলে গেলো রুদ্র। অন্যদিকে আহিল আর কাব্য রুদ্রর এ অবস্থা দেখে গড়াগড়ি খেয়ে হাসছে, পাশে বসে স্নেহা আর তিথি বেগমও ঠোঁট চেপে হাসছে। দিয়া এক প্লেট ফল মেহেরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে তার পাশে বসে জানতে চাইলো,

হাসছিস কেনো তোরা?

কাব্য তাদের হাসার কারণ বলতেই আড়চোখে একবার মেহেরের দিকে তাকালো দিয়া। বললো,

ওইদিন এই ফাজিল মাইয়া! রুদ্র ভাইয়ারে ভয় দেখানোর জন্য উফফ বলে উঠছে। আর রুদ্র ভাইয়া আমাকে ধমকাইছে। আমি নাকি ওর খেয়াল রাখি নাই ঠিক মতো।

মেহের ফিক করে হেসে উঠতেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো দিয়া। চেঁচিয়ে বললো,

হাসবি না ফাজিল! তোর জন্য শুধু শুধু বকা খাইছি।

মেহের তাও থামলো না। হাসির রেশ আরেকটু বাড়িয়ে দিলো। কাব্য বললো,

আর যা ই বলিস না কেন! রুদ্র ভাই কিন্তু মেহেরকে নিয়ে হেব্বি পসেসিভ।

~আই এগ্রি (দিয়া)

~ধমক খাওয়ার পর এগ্রি না করে উপায় আছে?

আহিলের কথায় আরো একবার হাসির রোল পড়ে গেলো সারাঘর জুড়ে।


🍂🍂🍂


~এই নে ধর।

~আবার খাবার?

মেহের গাল ফুলিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো। বাটিতে থাকা আম ভর্তা দেখেই চোখ চিক চিক করে উঠলো। বাটিটা ছো মেরে দিয়ার হাত থেকে নিয়ে খেতে খেতে বললো,

এই বিকেলের সময় কই পেলি? ইশ! আমার আসলেই খেতে ইচ্ছে করছিল।

দিয়া আলতো হেসে মেহেরের সামনে বসলো। মেহেরের পেটে হাত ছুঁয়ে বললো,

আগে বললেই হতো, এনে দিতাম। আচ্ছা ভাগ্নি হবে নাকি ভাগ্নে? ভাগ্নি হলে খুব ভালো হবে।

মেহের হাসলো। বললো,

তুই কবে বাবু নিবি?

দিয়া চোখ তুলে মেহেরের দিকে তাকালো। মিহি স্বরে বললো,

এখন না। আয়মান বলেছে আরো ২ বছর পর নিবে। রুদ্র ভাইয়া আর তীব্র ভাইয়াকে দেখে নাকি তার এতো জলদি বাবু নেওয়ার সখ জানালা দিয়ে পালিয়েছে। ভাইয়াদের মতো সে নাকি সাহসী না। প্রেগনেন্সির খবর পেলেই নাকি সে জ্ঞান হারাবে। তার আর বেহুঁশ হওয়ার জন্য ডেলিভারি পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগবে না।

মেহের জোরে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে তাও যেনো তার হাসি থামছে না। অনেক কষ্ট হাসি আটকানোর চেষ্টা করলো। হটাৎ ই তার চোখের কোণে অশ্রুর অস্তিত্ব দেখতে পেলো দিয়া। বিচলিত হয়ে মেহেরের গাল ধরে বললো,

কাদছিস কেনো?

মেহের হাসি থামালো। হাতে থাকা বাটিটা পাশে রেখে দিয়ার হাত ধরে বললো,

বাবু হওয়ার সময় রিস্ক অনেক থাকে। মা বাঁচে নাকি মরে ঠিক নেই। আমার যদি কিছু...

দিয়া মেহেরের মুখ চেপে ধরলো। কড়া গলায় বললো,

এসব কি ধরনের কথা! ঠাটিয়ে একটা লাগবো।

মেহের দিয়ার হাতটি সরিয়ে বললো,

আমার কথা শেষ করতে দে দিয়া।

দিয়ার কাতর চাহনী উপেক্ষা করে আবারো বললো,

আমার কিছু হয়ে গেলে আমার বাচ্চাকে আর তোদের ভাইয়াকে তোরা দেখে রাখিস। তোর ভাইয়া আমি বলতে পাগল। আমার কিছু হয়ে গেলে সে যেনো নিজের ক্ষতি না করে। আমি চলে গেলে আমার সন্তানের মাঝেই আমাকে খুঁজে নিবি তোরা।

দিয়ার চোখ ছলছল করে উঠলো। মেহের বিছানায় শুয়ে বললো,

মন খারাপ করার কিছু নেই। আমার কিছু হবে না। যা ঘরে যা। আমি একটু ঘুমাবো।

দিয়া প্রতিবাদী কণ্ঠে বললো,

কেনো তোর ঘরে থাকলে কি হবে?

~ঐযে ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাদছিস। কান্নার আওয়াজে ঘুম আসবে না।

দিয়া দ্রুত চোখ মুছে বললো,

আমি মোটেও কাদঁছি না।

মেহের মুচকি হাসলো। এই পরিবার, বন্ধুবান্ধব সকলকে পেয়ে নিজেকে বেশ ভাগ্যবতী মনে করে। মাঝে মাঝে নিজের মধ্যেও ভয় কাজ করে যদি ডেলিভারির সময় তার কিছু হয়ে যায়? তখন রুদ্র আর তার বাচ্চার কি হবে? তাকে হারানোর শোকে রুদ্র কি তার বাচ্চার থেকেই মুখ ফিরিয়ে নিবে? নাকি মেহেরের শেষ চিন্হ বলে বুকে আগলে রাখবে?

~~~

চলবে~

(এই! এই! গঠনমূলক কমেন্ট না করলে নায়িকাকে পরলোকে পার্সেল করে দিবো বলে দিচ্ছি। তখন কিন্তু বলতে পারবেন না যে স্যাড এন্ডিং দিলাম কেনো। অবশ্যই গঠনমূলক কমেন্টস করবেন। আর হ্যা, হ্যাপি রিডিং~)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৪৩

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 43


🍂🍂🍂


দিয়ার কল পেতেই দ্রুত মেহেরের বাড়িতে এলো রুদ্র। বাড়িতে ঢুকতেই মেহরিশ বেগমের সাথে দেখা হলো রুদ্রর। তিনি শীতল কণ্ঠে রুদ্রকে মেহেরের ঘরে যেতে বললে রুদ্র এক মুহূর্ত দেরি না করেই মেহেরের ঘরের দিকে পা বাড়ালো। ঘরে ঢুকতেই দেখতে পেলো মেহেরের একপাশে দিয়া আর অন্য পাশে মেহেরের নানি বসে আছে। রুদ্রকে দেখতেই মেহেরের নানা নানি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। দিয়া গেলো না। সে মেহেরের পাশেই বসে রইলো। রুদ্র গিয়ে মেহেরের পাশে বসলো। অতি সন্তপর্নে মেহেরের হাতটি নিজের হাতে নিলো। মেহেরের মলিন মুখখানার দিকে তাকাতেই বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো তার "এক দিনেই নিজের কি হাল করেছে মেয়েটা!" আনমনেই বলে উঠলো সে। দিয়ার দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জিজ্ঞেস করলো,

ওর এ অবস্থা কি করে হলো?

দিয়া মেহেরের দিকে চেয়ে শুকনো ঢোক গিললো। জিভ দিয়ে নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,

বাড়িতে আসার কিছুক্ষণ পরই ঘুমাবে বলে ঘরে এসেছে। কড়াভাবে বলেছে কেউ যেনো ঘুমে ডিস্টার্ব না করে। সারাদিন বাহিরে না আসায় ভেবেছিলাম ঘুমিয়ে আছে। রাতের ডিনার নিজেই উঠে খেয়ে নিবে ভেবে খাবার টেবিলে সাজিয়ে রেখে গিয়েছিলাম। সকালে উঠে দেখি খাবার যেমন রেখে গিয়েছিলাম তেমনই আছে। ও কাল থেকে কিছুই মুখে দেয়নি বুঝতে পেরেই দরজা ধাক্কাচ্ছিলাম। এক্সট্রা চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখলাম বারান্দায় বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছে।

দিয়ার সব কথা মেহেরের দিকে চেয়ে থেকেই শুনলো রুদ্র। জানতে চাইলো,

ডক্টর কি বলেছে? ও আর... ও আর আমার বাচ্চা ঠিক আছে?

দিয়া উত্তপ্ত গলায় প্রশ্ন ছুড়লো,

প্রেশার লো হয়ে গিয়েছিলো, চিন্তার কোনো বিষয় নেই। কিন্তু ওদের খেয়াল কি আপনার আছে?

রুদ্র কপাল কুঁচকে তাকাতেই দিয়া আবার বললো,

বউ যে বাড়ি থেকে রাগ করে চলে এসেছে তার খবর রাখেন? মেয়েটা আপনাকে কতবার কল দিয়েছে? একবারও ব্যাক করার সুযোগ পাননি?

রুদ্র জবাব দিলো না। মেহেরের হাতে নিজের ঠোট চেপে বসে রইলো। মেহের নড়েচড়ে উঠতেই রুদ্র দিয়াকে চলে যেতে বললো। মেহেরের জ্ঞান ফিরলে সে সামনে রুদ্রকে দেখেই এক লাফ দিয়ে উঠে বসে। রুদ্র মেহেরকে বাধা দিয়ে বললো শুয়ে থাকতে। মেহের শুনলো না, অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে বসে রইলো। রুদ্র নরম গলায় বললো,

ঠিক আছো? এ অবস্থা কেনো করলে নিজের?

মেহের জবাব দিল না। রুদ্র কপট রাগ দেখিয়ে বললো,

শুনেছি বউ নাকি রাগ করে বাপের বাড়ি চলে এসেছে? এতো সাহস এলো কি করে?

মেহের রুদ্রর দিকে তাকালো। নির্মল কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,

আপনি এই বাচ্চাটা চাইছেন না রুদ্র? আপনি কি আমাকে এবর্শন করতে জোর করবেন?

রুদ্রর অবাক চাহনিকে উপেক্ষা করে মেহের আবার বললো,

আমি এই বাচ্চাটা রাখতে চাইছি রুদ্র। আপনার যদি এতে আমাকে ছেড়ে দিতে ইচ্ছে হয় তবে...

~তবে?

রুদ্রর গম্ভীর কণ্ঠ। মেহের কম্পিত গলায় বললো,

আমি মানা করবো না। আপনি চাইলেই আমাকে ডিভোর্স দিতে পারেন। আমি সাইন করে দিবো।

রুদ্র হটাৎ ই ভয়ানক রেগে গেলো। মেহেরের গাল খুব শক্ত করে চেপে ধরলো। মেহের ভয় পেয়ে গেলো রুদ্রর এই রূপে। কিছুক্ষন আগের শান্ত রুদ্রটা মুহূর্তেই এমন ভয়ানক রূপ নিলো কেনো? সে তো খারাপ কিছুই বলেনি। মেহেরের চোখের কোনে জমে থাকা অশ্রুকেও উপেক্ষা করলো রুদ্র। কেনো এই চোখের পানি দেখে নরম হবে? এতো ভালোবাসার পরও আজ আবার এই মেয়ে বলছে ডিভোর্স এর কথা? এ যেনো তার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করাতে সক্ষম হলো। রাগে রুদ্রর চোখেও পানি জমা হলো। মেহেরকে চেপে ধরে হিসহিসিয়ে বললো,

কি বললেন মেহেরীন? ডিভোর্স? হ্যা? ডিভোর্স বলেছেন আপনি? আপনার সাহস কি করে হলো এই শব্দগুলো উচ্চারণ করার? আর কি বললেন? আমি... আমি আমার বাচ্চা মেরে ফেলবো?

মেহের ভয়ে চোখ চেপে বন্ধ করে নিলো। রুদ্রকে সে ভয় পাচ্ছে। রুদ্রর এতো রাগী রূপ সে বিয়ের সময়ও দেখেনি। ভীতুস্বরে বললো,

ছাড়ুন রুদ্র! আমার ব্যাথা লাগছে। রুদ্র তৎক্ষণাৎ তার গাল ছেড়ে দিলো। নিজের মাথার চুল দু হাতে টেনে ধরলো। উন্মাদের মতো বললো,

আপনার ব্যাথা লাগছে? আর আমার?

মেহেরের ডান হাত নিজের বুকের বা পাশে চেপে ধরে বললো,

আমার যে এখানে ব্যাথা করছে? সেই ব্যাথা আপনার নজরে আসছে না?

মেহের নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলেও রুদ্র হাত ছাড়লো না। শক্ত করে চেপে ধরলো নিজের বুকের সাথে। চিৎকার করে বললো,

আপনি নিজেই বলেছিলেন আমার সাথে নতুন করে জীবন শুরু করবেন। এখন? এতো মাসেও আমায় চিনতে পারলেন না রুদ্রাণী? এই! এই মেয়ে! আমার প্রতি মায়া হয় না?

রুদ্রর চিৎকারে কেপে উঠলো মেহের। কান্না আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেলো। রুদ্র করুন স্বরে বললো,

আমাকে এতটাই খারাপ মানুষ মনে হয় আপনার? আমি? আমি আমার সন্তান মারতে বলবো আপনাকে? আমার সাথে কোনো প্রকার কথা না বলে আপনি বাড়ি ছেড়ে চলে এলেন? আমার কথা আপনার ভাবনায়ও এলো না? আপনাকে ছেড়ে দিবো আমি? ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিয়ে করেছি আমি?

মেহেরের জবাব না পেয়ে যেনো আরো রেগে গেলো রুদ্র। ধমকে উঠে বললো,

জবাব দিচ্ছেন না কেনো?

মেহের হটাৎই রুদ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। বুকে মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠলো।

~সরি রুদ্র। প্লীজ আমাকে ক্ষমা করে দিন। আর কক্ষনো এমন করবো না।

রুদ্র মেহেরকে দূরে সরানোর চেষ্টা করলে মেহের আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রুদ্রকে। রুদ্র ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে,

ছাড়ুন আমাকে! আর কখনো আপনার কাছে ভালোবাসার দাবি নিয়ে আসবো না। চলে যাবো আমি। ছাড়ুন!

মেহের বুক থেকে মুখ তুলে রুদ্রর দিকে তাকালো। নাক টানতে টানতে বললো,

আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেন আপনি?

রুদ্র মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললো,

যে আমাকে ছাড়া থাকতে পারে তাকে ছাড়া আমিও থাকতে পারবো। না পারলে নিজেকে মেরে...

মেহের রুদ্রর মুখ চেপে ধরলো। পুনরায় রুদ্রর বুকে মাথা গুঁজে বললো,

এসব কথা কখনোই বলবেন না রুদ্র। আমার কষ্ট হয়।

~আমার কষ্ট হয় না? আমার চোখ দেখেছেন? কাল সারারাত ঘুমাইনি। আজ বিকেলেই আপনাকে নিয়ে যেতে আসতাম। প্রয়োজন পড়লে এখানেই থেকে যেতাম তাও আপনাকে ছাড়া থাকতাম না। আর আপনি? আমাকেই ছেড়ে দেওয়ার প্ল্যান করছিলেন। আপনি ছাড়ুন আমাকে!

মেহের চেঁচিয়ে বললো,

মাফ চাইছি তো! এতো রাগ করলে দেখবেন আমাদের বাচ্চাকে পৃথিবীতে আনার সময় আপনার প্রতি রাগ করে আমি সত্যি সত্যি চলে গেছি। তখন বুঝবেন মজা।

রুদ্র মেহেরকে জড়িয়ে ধরতেই মেহের মুচকি হাসলো। রুদ্র মাথা নেড়ে বললো,

এমন কথা কখনো বলবে না বউ, কখনোই না। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। আমার কষ্ট হয়।

মেহের হাসলো। রুদ্রর বুক থেকে মাথা তুলে বললো,

রাগ কমেছে?

রুদ্র জবাব দিলো না। মেহেরকে জড়িয়ে ধরেই বসে রইলো বেশ অনেক সময়। রুদ্র ধীর কণ্ঠে  বললো,

আমি কখনোই আমার বউ বাচ্চাকে কষ্ট পেতে দিবো না রুদ্রাণী। আমার বাচ্চাকে আমি কি করে মারতে বলবো? এই বাচ্চা তোমার আর আমার অংশ। আমি তোমাকে নিয়ে অবশ্যই পসেসিভ কিন্তু আমি খারাপ মানুষ কিংবা খারাপ বাবা হতে চাই না যে নিজের সন্তানের অস্তিত্ব মিটিয়ে দিতে চায়। কখনোই পারবো না আমি এমন কাজ করতে।

মেহের তৃপ্তির হাসি হাসলো। অনেক সময় পর আজ যেনো তার মনে শান্তি লাগলো। মেহের রুদ্রর থেকে তার সাথে কথা না বলার, তাকে ইগনোর করার কারণ জিজ্ঞেস করতেই রুদ্র অবাক হলো। তার মতে সে মেহেরকে ইগনোর করেনি। মেহের অভিযোগের সুরে সব জানাতেই রুদ্র হু হা করে হেসে উঠলো। পরে তার চুপ থাকার কারণও সব বুঝিয়ে বললো। মেহের নিজের কাজে নিজেই অনেক লজ্জিত বোধ করলো। কোনো প্রকার পদক্ষেপ নেওয়ার আগে তার অবশ্যই রুদ্রর সাথে বসে সময় নিয়ে কথা বলা উচিত ছিল। তবে হয়তো আজ এমন কিছুই হতো না।


🍂৬ মাস পর🍂


সকালে নাস্তার সময় আয়মান রুদ্রকে জানালো আজ অনেক ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে। সে আজ না গেলে কিছুতেই হবে না। রুদ্র যেনো আয়মানের কথা শুনলোই না। চুপ চাপ নিজে খাচ্ছে আর মেহেরকে খাইয়ে দিচ্ছে। মেহের চোখ পিটপিট করে সকলের দিকে তাকাচ্ছে। আয়মানের কথায় সকলে আয়মানের দিকে তাকালেও যাকে বলেছে সে ই তাকালো না। আয়মান হতাশার শ্বাস ফেলে মেহেরের দিকে তাকাতেই মেহের ঠোঁট উল্টে বুঝালো তার করার কিছুই নেই। নিজের ভাইকে সে পারলে নিজেই টেনেটুনে কাধে তুলে নিয়ে যাক। এই কয়েকমাসে রুদ্র যথাসম্ভব বাড়িতে থেকেই সকল কাজ করেছে। আয়মান অফিসে যাওয়ার কথা বললেই রুদ্র এমনভাবে বেকে মাথা নিচু করে বসে থাকে যেনো সে কিছু শুনেইনি। আগে রুদ্র আয়মানকে টেনে অফিসে নিয়ে যেতো আর এখন আয়মান রুদ্রকে ঠেলে ধাক্কিয়ে সাথে নিয়ে যায়। মেহের আড়চোখে রুদ্রর দিকে তাকাতেই রুদ্র এক গ্লাস দুধ মেহেরের সামনে ধরলো। মেহের মাথা নেড়ে বললো,

আমার পেটে বাবু আছে। এতো খাবার খেলে তো বাবুর থাকতে কষ্ট হবে। এই টুকু জায়গায় কি করে থাকবে? তাই এত খাবার খাওয়া উচিত না।

মেহেরের কথায় তীব্র ফিক করে হেসে উঠলো। স্নেহা তার ছেলে তাজওয়ারের গালে আঙুল ছুইয়ে বললো,

খাবারের সময়ই তোর যত বাহানা। তুই এই কয়েক মাসে কত বাহানা দিয়েছিস তা নিয়ে নির্দ্বিধায় দুই শত বা তিন শত পেজ এর একটা বই লিখে ফেলতে পারি।

দিয়া তাল মিলিয়ে বললো,

বইয়ের নাম হতো "খাবার না খাওয়ার হাজার ধরনের বাহানা"

মেহের রুদ্রর দিকে চোখ পিট পিট করে তাকাতেই রুদ্রর সাবধানতার সুরে বললো,

আমার মন গলানোর চেষ্টা করবে না। যবে থেকে শুনেছি তুমি প্রেগনেন্ট তবে থেকে এমনিই দিনে ১০/১২ বার আমার প্রেসার আপ ডাউন করে। বউ মনির ডেলিভারি দেখে আমার কলিজা এমনিই শুকিয়ে আছে। তুমি ঠিক মত না খেলে আমি নির্ঘাত হার্ট এ্যাটাক ফ্যাটাক করে বসবো মেহেরজান। প্লীজ নিজের একটু যত্ন নাও।

দিয়া স্বশব্দে হেসে উঠে বললো,

আমার মনে হয় মেহেরের পেইন উঠলে মেহেরের চিন্তায় ভাইয়াই আগে জ্ঞান হারাবে।

দিয়ার কথা শুনেই তীব্র ঘর কাপিয়ে হেসে উঠলো। দিয়াকে হাই ফাইভ দিয়ে হা হা করে হাসতে থাকলো। রুদ্র চোখ ছোট ছোট করে আয়মানের দিকে চেয়ে বললো,

তুই একবার বাবা হ। আমিও এমন খেপিয়ে খেপিয়ে এর শোধ তুলবো দেখিস। 

আয়মান রুদ্রর দিকে একবার চেয়ে রেদোয়ানের দিকে তাকালো। সকালের নাস্তায় এমন সভা রোজই বসে। এ আর নতুন কিছু নয়। আজ রুদ্রকে মিটিংয়ের জন্য অফিসে নিয়ে যেতে পারলেই যেনো বাঁচে আয়মান। সারাদিন অফিসের পেছনে ছুটতে থাকা মানুষটিকে আজকাল ঘর থেকে বের করাও বেশ দুষ্কর কাজ। কি অদ্ভুত!

~~~

চলবে~

(কেমন আছেন সবাই? অবশ্যই গঠনমূলক কমেন্টস করবেন। আপনাদের সুন্দর কমেন্টস আমাকে গল্প লিখতে উৎসাহ দেয়। হ্যাপি রিডিং~)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৪২

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 42


🍂🍂🍂


রুদ্রর কাছে যেতে সাহস পাচ্ছে না মেহের। তখন থেকে একদম চুপচাপ। মেহের অনেক চেষ্টা করেও রুদ্রর অভিব্যক্তি বুঝতে সক্ষম হলো না। রাতে মেহের ডাকলেও রুদ্র খেতে গেলো না। চুপ করে শুয়ে রইলো। না খেলে মেহের আর তার বাচ্চা অসুস্থ হয়ে যেতে পারে তাই স্নেহা জোর করে মেহেরকে খাইয়ে দিলো। মেহের না চাইতেও একটু খেয়েই ঘরে ফিরে এলো। বাড়িতে স্নেহা আর দিয়া বাদে নিজের প্রেগনেন্সির ব্যাপারে এখনও কাউকে জানায়নি মেহের। রুদ্রর মনে কি চলছে তা এখনও বুঝে উঠতে পারছে না মেহের। ঘরে এসে দেখলো রুদ্র ঘরের বাতি নিভিয়ে ঘুমিয়ে আছে। মেহের দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিজেও ঘুমাতে চলে গেলো। আজ কেনো যেনো ঘুম আসছে না মেহেরের। রুদ্রর এমন ব্যবহার খুব ভাবাচ্ছে মেহেরকে। সারা রাত এপাশ ওপাশ করতে করতেই ভোরের দিকে চোখে ঘুম নেমে এলো মেহেরের। সকালে ঘুম থেকে উঠতেই দেখলো রুদ্র পাশে নেই। ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখলো সকাল দশটা বাজে। দিয়া জানালো রুদ্র আর আয়মান খুব সকালেই আজ অফিসে চলে গেছে। মেহের মন খারাপ করে ঘরে চলে এলো। দিয়া নাস্তা করতে বললেও করলো না মেহের। ঘরে এসে রুদ্রকে বেশ কয়েকবার কল করলেও রুদ্র রিসিভ করলো না। এমনিতে প্রথম বার রিং হতেই কল রিসিভ করে নেয় রুদ্র। এবার মেহেরের কান্না পেলো। মাথায় হাত ঠেকিয়ে খাট ঘেসে বসে রইলো মেহের। গাল বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু পড়ছে। রুদ্র আগেই বলেছিলো সে বাচ্চা নিতে চায় না। মেহের তবুও নিলো। এবার কি রুদ্র আর তার সাথে কথা বলবে না? রুদ্র কি তার কাছ থেকে দূরে চলে যাবে? সে কি এই বাচ্চা নষ্ট করতে বলবে? রুদ্র কি রাগ করে তাকে ডিভোর্স দিবে? হাজারো চিন্তায় মশগুল হয়ে গেলো মেহের।

~আমি এই বাড়িতে আর থাকবো না। রুদ্র নিজেই যখন দূরত্ব তৈরি করছে তবে তাতেই সই।

মেহের বেরিয়ে আসতে চাইলো আহমেদ ভিলা থেকে। মিসেস তিথি, স্নেহা আর দিয়াকে বললো কিছু দিনের জন্য মায়ের বাড়ি যাচ্ছে। রুদ্রর কথা জিজ্ঞেস করায় মেহের থমথমে কণ্ঠে শুধালো,

তার খবর কি আমি নিয়ে বসে আছি? আমি মায়ের বাড়ি যাচ্ছি।

~আমিও আসছি তোর সাথে চল। (দিয়া)

~তুই কেনো যাবি? (মেহের)

~কেনো ওটা কি তোর রেজিস্ট্রি করা বাড়ি নাকি? হলেও আমি যাবো। তোর পারমিশন নিতে রাজি না আমি। চল চল।

মেহের চুপ করে দিয়ার পিছু পিছু গেলো। মেহেরকে একা ছাড়তে চাইছে না তা ইতিমধ্যে বুঝতে পারছে মেহের। 

________________________________


দরজা খুলে এতদিন পর নাতিনকে দেখতে পেয়ে বেশ আবেগী হয়ে পড়লেন মেহেরের নানি। মেহেরকে জড়িয়ে ধরে কান্না করলেন প্রায় আধঘন্টা। রুদ্রর কথা জিজ্ঞেস করলে দিয়া বললো,

ভাইয়া কাজে ব্যস্ত একটু। পরে আসবে।

মেহেরের নানা মেহরিশকে কল করে জানাতেই তিনি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। মেহরিশ বাড়ি এসে মেয়েকে দেখতেই ছুটে তার কাছে গেলো।

~বলে এলি না যে?

~কেনো এখন এই বাড়িতে আসতেও মানা নাকি?

তাচ্ছিল্য হাসলো মেহের।

~সে কি কথা? মানা হবে কেনো? তোরই তো বাড়ি এটা।

মেহের কিছু বললো না। এক ধ্যানে মায়ের দিকে চেয়ে রইলো। হুট করে জড়িয়ে ধরতেই মেহরিশ হকচকালো। মেহের মিহি স্বরে মা কে বললো,

মাফ করে দিও মা। আমি তোমার যোগ্য সন্তান হতে পারিনি।

মেহরিশ বুঝলো না মেয়ের কথার মানে। মিনিট দুয়েক পরেই মেহের তার মাকে ছেড়ে উঠে দাড়ালো। নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে যেতেই বললো,

আমার এক লম্বা ঘুম প্রয়োজন মা। কেউ ডিস্টার্ব করো না প্লীজ। একটু শান্তির ঘুম চাই।

মেহের যেতেই দিয়া ওদের সব জানালো। মেহরিশ এই ব্যাপারে কিছুই বললো না। মেয়ে আর মেয়ের জামাইয়ের ব্যাপারে আগ বাড়িয়ে কথা না বলাই ভালো। নিজেদের সমস্যা নিজেরা ঠিক করতে পারলেই ভালো।

_________________________________


রুদ্র মিটিং শেষে কেবিনে এসেই চেয়ারে গা এলিয়ে দিলো। টানা চারটা মিটিং করে ক্লান্ত সে। আপাতত মেহেরকে নিয়ে ভাবতে চাইছে না সে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো মেহের উনিশবার কল করেছে। রুদ্র চেয়েও কল ব্যাক করলো না। আয়মান এসে ডাক দিতেই আবারো চলে গেলো মিটিং রুমে।

_____________________________________


আজ সারাদিনেও ঘর থেকে বের হয়নি মেহের। মেহরিশসহ বাড়ির সকলেই ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার দরজা ধাক্কা দিয়ে মেহেরকে ডেকেছে। এত ঘুম তো মেহের ঘুমায় না। ঘুমালেও এক ডাকেই উঠে যায় মেহের। আজ কি তবে একটু বেশিই ক্লান্ত নাকি? দিয়া মেহেরের এমন খামখেয়ালীপানায় ক্ষুব্ধ হয়ে বললো,

এই অবস্থায় ঠিক মত খাবার না খেলে যে অসুস্থ হয়ে পড়বে তা এই মেয়ের চিন্তায় আছে? এতো ডাকছি কোনো সাড়া দেয় না। কি এক ঝামেলা!

মেহরিশ বললেন,

রুদ্রকে কল করেছিস?

স্নেহা হতাশার সুরে বললো,

দিয়েছি কিন্তু ধরলো না। আয়মানও ধরলো না। আসুক আজ এই লোক। কুরুক্ষেত্র যদি না বাধিয়েছি!

মেহরিশ হাসলেন। বিদ্রুপের কণ্ঠে বললেন,

বর পেটাস নাকি তুই? এমন ফাজিল হলি কবে থেকে?

দিয়া মাথা চুলকে হেসে বললো,

কি বলো না আন্টি! ওনাকে মারতে গেলে আমাকেই তুলে এক আছার মারবে।

মেহরিশ সশব্দে হেসে উঠলেন। দিয়াকে আশ্বাস দিয়ে বললেন ঘরে যেতে। মেহের হয়তো ঘুমিয়ে আছে। ঘুম ভাঙলে নিজেই খেতে আসবে।

____________________________________


বাড়ি ফিরে রুদ্র যখন শুনলো মেহের মায়ের বাড়িতে গেছে তখন কিছুই বললো না। নিজে মা হতে চলেছে বলে হয়তো এবার মায়ের কষ্টগুলো অনুভব করতে শুরু করেছে সে। মা মেয়েকে ডিস্টার্ব না করাই উচিত হবে ভেবে নিয়ে আর কল করলো না মেহেরকে। আয়মানের থেকে খবর পেলো দিয়া বলেছে মেহের ঘুমাচ্ছে। হাতে থাকা বেলী ফুলের মালাটা খাটের ওপর ছুড়ে ফেলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো রুদ্র। মেহের না থাকায় ঘরটা কেমন খালি খালি লাগছে ভেবে স্টাডি রুমে চলে গেলো। গিয়ে দেখলো আয়মানও ওই রুমে গালে হাত ঠেকিয়ে বসে আছে। রুদ্র গিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসতেই আয়মান উদাসীন কণ্ঠে বললো,

বউ থাকলেও জ্বালা না থাকলেও জ্বালা। থাকলে মনে হয় এই মাইয়া এত কথা বলে কেমনে? আর না থাকলে মনে হয় কানের মধ্যে এত শান্তি সইছে না। দুদিকেই অশান্তি। আপনার বউ গেলো তো গেলো আমি কি দোষ করলাম? আমার বউরে নিয়ে কেনো গেলো?

রুদ্র হেসে উঠলো। আপাতত মেহেরকে যে খুব মিস করছে। কাল মেহেরের প্রেগনেন্সির খবর পাওয়ায় হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল রুদ্র। কি রিয়েকশন দিবে বুঝতে পারছিল না। হটাৎ মাথা ব্যাথা হওয়ায় ওষুধ খেয়েছিল। যার ফলে জলদিই ঘুমিয়ে পড়েছিল। সকালে মিটিং থাকায় কথা হয়নি মেহেরের সাথে। আর সারাদিন ব্যস্ত থাকায় কল করতে গিয়েও করেনি। রাতে ফুল নিয়ে এসেছিল মেহেরকে সারপ্রাইজ দিতে। কিন্তু এসে যেনো সে নিজেই বেক্কল হয়ে গেলো। রুদ্র বললো,

ঘরে যাবি না আজকে?

~ঘরে বউ নাই। গিয়ে কি করবো? এই ঘরেই থাকি। আপনি যাবেন না ভাইয়া?

রুদ্র চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললো,

তোর আর আমার দশা একই। দুজনই বউ পাগলা। এখন এদিকে বসে আজ বউ বাপের বাড়ি যাওয়ার দুঃখ পালন করি আয়।

~ড্রিঙ্কস আনবো?

~রুদ্রাণীর নেশায় পড়ার পর থেকে আর কোনো নেশা কাজে লাগে না। 

রুদ্রর কথা শুনে আয়মান হাসলো। সে নিজেও তো এমন নেশাতেই মত্ত। ভালোবাসা নামক অসুখে পড়েছে সে নিজেও।

~~~

চলবে~

(রিচেক করা হয়নি। বানান ভুল হলে অবশ্যই কমেন্ট এ জানাবেন। হ্যাপি রিডিং~)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৪১

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 41


🍂🍂🍂


~বউ? বউ? এই বউ? রুদ্রাণীইইইই!!!!!!

~ইশ! কানের পোকা মেরে ফেলছেন। কি সমস্যা? চেঁচাচ্ছেন কেনো?

রুদ্রর চিৎকারে খুন্তি হাতে রান্না ঘর থেকে দৌড়ে এলো মেহের। মেহেরের হাতে খুন্তি দেখে জোরপূর্বক হাসলো রুদ্র।

~একটু এদিকে এসো না।

~আমি রান্না করছি। কি বলবেন বলুন।

~বাড়িতে কাজের মানুষের অভাব? তুমি রান্না করছো কেনো? তুমি না অসুস্থ? ঘরে বসো চুপচাপ। আমি রান্না করে আনতে বলছি।

~আজ নিজ হাতে রান্না করে খেতে ইচ্ছে করছে তাই। কি জন্য ডেকেছেন তা বলুন। আমার তরকারি পুড়ে যাবে তো!

রুদ্র বত্রিশ পাটি বের করে হাসলো। মেহেরের কোমর জড়িয়ে ধরে বললো,

একটু রুদ্র বলে ডাকো না! বড্ড মিস করছি তো।

~আপনি এই জন্য ডেকেছেন আমাকে?

রুদ্র দ্রুত মাথা নেড়ে হ্যা বুঝালো। মেহের রাগান্বিত স্বরে বললো,

যেদিন থেকে আপনার নাম ডেকেছি এর পর থেকে এভাবে জ্বালিয়ে মারছেন। কি সমস্যা?

~সমস্যা তো এখানে।

রুদ্র মেহেরের এক হাত নিয়ে তার বুকের বা পাশে রাখলো। বললো,

যেদিন থেকে তোমার মুখে নিজের নাম শুনেছি সেদিন থেকে দিনে কয়েকবার তোমার মুখে আমার নাম না শুনলে মনে হয় শ্বাসকষ্টে মারা যাচ্ছি। ইশ বউ! তুমি চাও তোমার বর তোমার মুখে ডাক শুনার অভাবে মারা পড়ুক?

~মশকরা করছেন আমার সাথে?

রুদ্র গাল ফুলিয়ে বললো,

মোটেও না রুদ্রাণী। তোমাকে আমি কত্তওওও ভালোবাসি। তোমার সাথে মজা কেনো করবো? ডাকো না প্লীজ!

~তরকারি পুড়ে যাবে। ছাড়ুন প্লীজ। পরে ডাকবো।

~না! না! এখনি ডাকো। ডাকো না!!!!

~উফফ! রুদ্র! রুদ্র! রুদ্র! ছাড়ুন এবার।

রুদ্র চোখে মুখে এক উজ্জ্বল হাসি দেখা দিলো। মেহেরের ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ ছুঁইয়ে বললো,

ধন্যবাদ মেহেরজান। ভালোবাসি।

বলেই খাটে গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। গত দুইদিন যাবত রুদ্র অফিসে যাচ্ছে না। দরকারি সব কাজ বাড়িতেই করে। মেহেরের শরীরটা ইদানিং ভালো যাচ্ছে না। মাথায় ঘুরায়, ঠিক মত খেতেও পারে না, একটু খেলেই বমি করে ভাসিয়ে দেয়। রুদ্র মেহেরের হেলথ নিয়ে বেশ চিন্তিত। মেহেরের খাওয়া দাওয়া তে বেশ কঠোরভাবে নজর রাখছে। গতকাল হাসপাতালে গিয়ে ডক্টর এর কথামত কিছু টেস্ট করিয়ে এসেছে। আজ সন্ধ্যায় রিপোর্ট দিবে। রুদ্র বেশ কড়াভাবে মেহেরকে বলেছে রিপোর্ট খারাপ এলে মেহেরের খবর আছে। একদম নিজের খেয়াল রাখে না। সবসময় বেখেয়ালিভাবে চলা ফেরা ভালো লাগে না রুদ্রর। সকলের প্রয়োজন অপ্রয়োজনের খেয়াল রাখে আর নিজের বেলায়ই যত তালবাহানা এই মেয়ের।

__________________________________


~রিপোর্ট কখন দিবে? (তিথি)

~আজ সন্ধ্যায়। (রুদ্র)

~মেহেরকে সাথে নিয়ে যাবি না? (তিথি)

~শুধু রিপোর্ট ই তো দেখাবো। ও না গেলেও চলবে। তাও নিয়ে যাবো। যদি কোনো দরকার হয়। (রুদ্র)

মেহের নিজের প্লেট এ খাবার নিতে নিতে বললো,

দরকার পড়লেও আমি যাচ্ছি না। ডক্টর দেখবেন অকারনেই এক বোঝা ওষুধ ধরিয়ে দিবে। আমি বলছি কি রুদ্র আপনারও যাওয়ার দরকার নেই।

রুদ্রর দিকে তাকালে দেখলো রুদ্র অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে তার দিকেই চেয়ে আছে। তিথি বললো,

এই মেয়ের নিজের যত্ন নেওয়ার বেলায়ই যত বাহানা। ঠিক মত খাস না আবার কথা বলিস! রুদ্র তুই ডক্টরকে বলে ওর জন্য রুচির ওষুধ নিয়ে আসিস তো!

~মামনি! (মেহের)

~ভাইয়া আপনি ওর জন্য ওষুধের পাশাপাশি কিছু চকোলেট নিয়ে আসবেন। মহারানীর ওষুধের পর চকোলেট না পেলে পরে মুখখানা বাংলার পাঁচ বানিয়ে ঘুরবে। (দিয়া)

~হ্যা পিচ্চি নিয়ে এসেছি না! বাড়িতে চকোলেট চিপস এগুলো না থাকলে চলে?

রুদ্র কথায় স্নেহা আর দিয়া খিল খিল করে হেসে উঠলো।

__________________________________


কতক্ষন যাবত রুদ্রর পেছন পেছন ঘুরছে মেহের। রুদ্রকে সে কোনোমতেই হাসপাতালে যেতে আটকাতে পারছে না। হাসপাতালে গেলেই তার জন্য এক বোঝা ওষুধ দিয়ে দেবে ভেবে নিয়েই রুদ্রকে মানানোর যত চেষ্টা।

~শুনুন না!

রুদ্র গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

তুমি একটু চুপ থাকবে? দ্রুত রেডী হয়ে এসো। নয়তো তোমাকে রেখেই চলে যাবো আমি।

~রুদ্র

~হাজার বার নাম ধরে ডাকলেও পটছি না আমি রুদ্রাণী। তোমার হেলথ নিয়ে কোনো হেরফের নয়। যাও রেডী হয়ে এসো।

মেহের ভেংচি কেটে আলমারি থেকে বোরকা নিয়ে তা পড়তে শুরু করলো। বিড়বিড় করে অসংখ্য বকা ঝাড়লো রুদ্রর উদ্দেশ্যে। রেডী হয়ে রুদ্রর কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই রুদ্র উঠে মেহেরের এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে গাড়ির কাছে এলো। রাস্তায় রুদ্র অনেক কথা বললেও মেহের গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। রুদ্রর কোনো কথার জবাব দিলো না।

____________________________________


ডক্টর এর কেবিনের বাহিরে দাড়িয়ে আছে রুদ্র। হার্ট প্রচন্ড বেগে বিট করছে। মেহেরের হাত টা কে আরেকটু শক্ত করে ধরলো। লম্বা এক শ্বাস নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করলো। ডক্টর রিপোর্ট দেখে কি বলবে তা নিয়েই গভীর চিন্তা রুদ্রর। চেয়ারে বসে নিচের ঠোঁট কামড়ে ডক্টর এর হাতে থাকা রিপোর্ট এর দিকে চেয়ে আছে রুদ্র। ডক্টরের রিপোর্ট দেখা শেষেই বিস্তর হাসলেন তিনি। রুদ্র আর মেহের কেউই তার এই হাসির কারণ বুঝলো না। ডক্টর রেহানা হেসে বললেন,

কংগ্রেচুলেশনস! আপনারা মা বাবা হতে চলেছেন।

রুদ্র বিস্ফোরক দৃষ্টিতে চেয়ে বললো,

মানে?

~মানে ইউর ওয়াইফ ইজ প্রেগনেন্ট।

কেবিন থেকে বেরিয়ে আসতেই মেহের রুদ্রর দিকে চেয়ে তার অভিব্যক্তি বোঝার চেষ্টা করলো। মেহের খুশি হয়েছে কিন্তু রুদ্র এতে খুশি কিনা তা বুঝতে পারছে না মেহের। এবার সারা রাস্তা রুদ্র নিজেই কোনো কথা বললো না। মেহের চাইলেও আগ বাড়িয়ে কথা বলতে পারলো না। বাড়িতে এসেও রুদ্র মেহেরের সাথে কোনো কথা বললো না। সোজা নিজের রুমে চলে এলো। মেহেরের মনে অজানা ভয় বাসা বাঁধলো। ওইদিন রুদ্রর কথায় মেহেরের রাগ উঠলেও মেহের ভেবেছিলো রুদ্র ভয়ের কারণে এমন করেছে। কিন্তু আজ রুদ্রর এমন ব্যবহার মেহেরকে ভাবতে বাধ্য করছে। রুদ্র কি সত্যিই এই বাচ্চা চাইছে না?

~~~

চলবে~


(ঈদের তৃতীয় দিন আজকে। Late wish "ঈদ মোবারক"। সবাই নিজ দায়িত্বে সালামি পাঠিয়ে দিবেন 😁 গল্পটা ২/৩ পর্বের মধ্যেই শেষ করে দিবো। এর পর লেখিকাকে ভুলে যাবেন না। গল্প কেমন লেগেছে তা অবশ্যই গঠনমূলক কমেন্ট এর মাধ্যমে জানাবেন। হ্যাপি রিডিং~)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৪০

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 40


🍂🍂🍂


~তুই কি সত্যিই আন্টির বাড়ি যাবি না?

মেহের শান্ত চাহনী নিক্ষেপ করলো স্নেহার দিকে। হাতে থাকা আপেলটা কাটতে কাটতে বললো,

না। ইচ্ছে নেই। তোর এসব চিন্তা করা লাগবে না।

ফলভর্তি প্লেটটা স্নেহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

ফল খা।

স্নেহা নাক মুখ কুচকে প্লেটটা পুনরায় মেহেরের দিকে দিয়ে বললো,

সারাদিন খেতে ভালো লাগে না। এখন আর খাবো না।

মেহের প্লেটটা নিয়ে স্নেহার পাশে এসে বললো,

ভালো না লাগলেও খেতে হবে। আমার ভাগ্নি হেলথি হতে হবে। একদম গুল্লুমূল্লু টাইপ।

~সুফিয়ান ভাইয়া শুনলে আবার তোর সাথে কোমড় বেধে ঝগড়া শুরু করবে দেখিস। চাচীর জায়গায় নিজেকে খালা দাবি করিস কেনো তুই?

~তোর সুফিয়ান ভাইয়া পরে এসেছে। তাই চাচীর অধিকার পরে। আমি আগে আমার ভাগ্নির খালামণি।

~ভাগ্নি ভাগ্নি করছিস যে! সিওর কিভাবে যে ভাগ্নি ই হবে?

~হবে হবে। অবশ্যই হবে। আমার মেয়ে বাবু বেশি পছন্দ।

~তাহলে চলো আমরা একটা মেয়ে বাবু নেই?

রুদ্র কথায় চমকালো মেহের। চোখ বড় বড় করে বললো,

আপনি এখন? এখানে? কেনো?

বউকে মিস করছিলাম। ভাবলাম জলদি বাড়ি চলে যাই। তাই চলে এলাম। মিসড ইউ সো মাচ মেহেরজান!

মেহের রুদ্রর পেটে কনুই দিয়ে গুতা মেরে বললো,

যেখানে সেখানে এভাবে কথা না বললে ভালো লাগে না আপনার? ঠোঁটকাটা স্বভাবের মানুষ কোথাকার!

~খারাপ কি বললাম? বউকে মিস করার কথা বলা যাবে না? (রুদ্র)

~অবশ্যই যাবে ভাইয়া। যাবে না কেনো? (স্নেহা)

~দেখলে বউমনি! তোমার জা আমার সাথে কি করে কথা বলে। সাজা স্বরূপ তুমি ওকে দিয়ে স্টার জলসার বউদের মতো কাজ করাবে। একদম দজ্জাল জা হয়ে যাবে। বুঝলে? 

রুদ্রর কথায় স্নেহা খিল খিল করে হেসে উঠলো। মেহের ধমকে উঠতেই রুদ্র দ্রুত ঘরে চলে এলো। বনের বাঘও তো তার বাঘিনীকে ভয় পায়। সেদিকে রুদ্র তো মনুষ্য। মেহের স্নেহার পাশের চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লো। স্নেহার দিকে তাকালে দেখলো স্নেহার হাসতে হাসতে চেহারা লাল হয়ে গেছে। এখনও হাসছে। প্রেগনেন্সির পাঁচ মাস চলছে। প্রেগনেন্সির কারণে স্নেহা আগের থেকে কিছুটা গোলুমোলু হয়েছে। দিয়া আর মেহেরের কাছে এখন স্নেহাকে বেশ কিউট লাগে। যখন তখন গাল টেনে দেয়। মাঝে মাঝে তো তীব্র ওদের সামনেই স্নেহার গাল টেনে বলে,

ওরে আমার ডোরেমন রে!

স্নেহা রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে সবাই হেসে উঠে। স্নেহার পেটটা আগের থেকে বেশ ফুলে উঠেছে। মেহের প্রায় সময় স্নেহার পেটে হাত দিয়ে এটা সেটা বলে। তার কাছে মনে হয় বাচ্চাটা যেনো তার কথা মন দিয়ে শুনছে।

__________________________________


~ওই কামের বেটি! আমার জন্য এক কাপ চা নিয়ে আয়। জলদি জলদি।

কাব্যর কথা শেষ না হতেই দিয়া ধুম করে কাব্যর পিঠে এক কিল বসিয়ে দেয়। কাব্য ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠতেই দিয়া রাগান্বিত স্বরে বলে,

কোন এঙ্গেল দিয়ে আমারে কাজের বেটি মনে হয় তোর?

~তোর চেহারা দেখলেই মনে হয় তুই কাজের মহিলা। তোর নাম দিয়া না রেখে জরিনা রাখা উচিত ছিলো।

দিয়া আহিলের দিকে রাগী চোখে তাকালে আহিল নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলে,

চেয়ে আছিস কেনো? মেহমানদের খেয়াল রাখতে জানিস না?

রেদোয়ান আহমেদ আর তিথি আহমেদের দিকে চেয়ে বললো,

এই মেয়ে তো বহুত ফাজিল। বাড়ির বউ এত ফাজিল হয়? মেহমানদের খেয়াল রাখতে জানে না। কাজের মেয়েকে বিদায় করে দিন আংকেল আন্টি।

আহিলের কথায় রেদোয়ান আর তিথি হেসে উঠলো। দিয়াকে রেদোয়ান আহমেদ নিজের পাশে বসিয়ে বললো,

আমার বাড়ির ছোট কন্যা ইনি। মোটেও কাজের মেয়ে জরিনা বলবে না।

~হ্যাহ্! আমার বাবা আমার সাথে আছে। ইউ হতদরিদ্রের দল! যা বিদায় হ! (দিয়া)

~তুই যা। আমরা স্নেহার সাথে দেখা করতে এসেছি। তুই বললেই যাবো নাকি! সর সামনের থেকে! (কাব্য)

~মেহের কই রে? এসেছি পর থেকে দেখছি না যে?(আহিল)

___________________________________


মেহের ঘর থেকে বের হতে নিলেই রুদ্রর কণ্ঠ শুনে থেমে যায়।

~সারাদিন ছোটাছুটি করো। একটু পাশে এসে বসতে কি ক্ষতি?

মেহের রুদ্রর কাছে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো। বললো,

আপনি কি রাগ করলেন?

রুদ্র মাথা নেড়ে না বুঝালো। মেহের রুদ্রর পাশে বসতেই রুদ্র মেহেরের কোলে মাথা দিয়ে তার কোমড় জড়িয়ে শুয়ে পড়লো। মেহের আগের মতো আর চমকালো না। অসস্তি অনুভবও করলো না। একরাশ ভালো লাগা তার মন ছুঁয়ে গেলো। রুদ্রর মাথায় হাত বুলাতে থাকলো। রুদ্র শীতল কণ্ঠে ডাকলো,

মেহেরজান!

~হু?

~একটা কথা বলবো। রাখবে?

~বলুন। যথা সম্ভব চেষ্টা করবো।

~আমার বাচ্চা লাগবে না। আমার কোনো বাচ্চা লাগবে না।

রুদ্র এই এক কথায় মেহেরের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। রুদ্রর থেকে ছিটকে দূরে সরে এলো। কম্পিত কণ্ঠে বললো,

মানে? কি বলছেন?

রুদ্র উঠে বসলো। মেহেরের দিকে এগিয়ে যেতেই মেহের পিছিয়ে গেলো। রুদ্র টান দিয়ে মেহেরকে আগের স্থানে এনে মেহেরের কোলে পুনরায় মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো। কিন্তু আগের বারের মত আর মেহেরের পেটে মুখ গুজলো না। মেহেরের মুখের পানে চেয়ে বললো,

প্রেগনেন্সিতে অনেক রিস্ক। বউমনি প্রেগনেন্ট হওয়ায় ভাইয়ার অবস্থা দেখেছো? চিন্তায় কেমন সারাক্ষণ উদাসীন হয়ে ঘুরে। তোমার কিছু হলে আমি বেচেঁ থেকেও মরে যাবো বউ। আমার লাগবে না কোনো বাচ্চা।

মেহেরের চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো। তেজপূর্ণ কণ্ঠে বললো,

কি বলছেন ভেবে বলছেন? প্রতিটা মেয়েই চায় মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করতে। হোক তাতে রিস্ক।

~তুমি বললে আমরা বাচ্চা এডপ্ট করবো। তবুও আমি চাই না তুমি রিস্ক নাও।

~রিস্কের ভয় করলে এই পৃথিবীতে আপনি, আমি কেউই থাকতাম না রুদ্র।

~রুদ্রাণী!

~প্লীজ রুদ্র! আপনার কথা আমার ভালো লাগছে না।

রুদ্র কিছু বলার আগেই দরজায় করাঘাতের শব্দ এলো। রুদ্র উঠে বসলো। গলা উচিয়ে বললো,

কে?

~ভাইয়া আমি রুমি।

রুদ্র উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই রুমি হেসে বললো,

আহিল ভাইয়া আর কাব্য ভাইয়া এসেছে। তোমাদের ডাকে। রুদ্র রুমিকে কোলে নিতেই মেহের ঘর থেকে বের হলো। রুদ্রর আগে সে নিজেই নিচে চলে গেলো। মেহের রাগ করছে তা বুঝতে পারছে রুদ্র। কিন্তু সে তার ব্যাপারে কোনো রকমের রিস্ক নিতে চাইছে না। তার রুদ্রাণীর কিছু হলে সে ভালো থাকবে কি করে?

~~~

চলবে~

(কেমন আছেন সবাই? গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। আর নেক্সট নেক্সট না বলে গঠনমূলক কমেন্ট করবেন প্লীজ। পরের পর্ব খুব দ্রুত দিবো ইন শাহ্ আল্লাহ। হ্যাপি রিডিং~)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৩৯

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 39


🍂🍂🍂


রোদের প্রকোপ আজ যেনো একটু বেশিই অনুভব হচ্ছে। মেহের আকাশের দিকে চেয়ে কপালের ঘাম মুছে দিয়া, কাব্য আর আহিলের দিকে তাকালো। বললো,

ফুচকা খেতে যাবি? আজ বেশ ইচ্ছে করছে। চল না যাই।

~হ্যাঁ, হ্যাঁ। চল যাই। (দিয়া)

~কি যাই? দিয়াইন্না! এই ফুচকার মধ্যে পাস কি তোরা? কি নোংরা! (কাব্য)

~ফুচকাকে নোংরা বলিস! তোর সাহস তো কম না! তোর নামে তো ফুচকার মানহানির* মামলা করা উচিত! (দিয়া)

~এই আইন কি তুই বের করলি? (কাব্য)

~হ্যা। করলাম। (দিয়া)

~তোরা ঝগড়া করতে থাক। আমি গেলাম ফুচকা খেতে। (মেহের)

~এই না! আমিও আসছি। (কাব্য)

ফুচকার স্টলে যেতে যেতেই কাব্য প্রশ্ন করলো,

স্নেহার শরীর কি বেশি খারাপ?

মেহের কাব্যর মুখশ্রীর দিকে তাকালো। ছেলেটার চেহারায় চিন্তার রেশ বিদ্যমান। চোখ দুটো জবাবের আশায় তার দিকেই স্থির। মেহের মুচকি হেসে বললো,

প্রেগনেন্সির সময় এমন একটু আধটু অসুস্থ সকলেই হয়। চিন্তা করিস না।

~মা হতে গেলে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়। তাই না?

মেহের ফের মুচকি হাসলো তবে জবাব দিলো না। কাব্যর চোখে পানি চিকচিক করছে এই ভেবে যে তার মা ও তো না জানি কত কষ্ট সহ্য করেছে তাকে পৃথিবীতে আনতে। স্টলে ওদের দেখে ইভান আর ফারাজও ওদের কাছে এলো। ইভান গিয়ে মেহেরের পাশে আর ফারাজ দিয়ার পাশে বসতে নিলেই রুদ্র ধপ করে মেহেরের পাশে আর আয়মান দিয়ার পাশে বসে পড়ে। এই মুহূর্তে এখানে রুদ্র আর আয়মানকে দেখে সকলেই বেশ অবাক হয়ে তাকায়। রুদ্রকে দেখে ফারাজ আর ইভানও অন্যদিকে চলে যায়। মেহের প্রশ্ন করে,

আপনি এখানে কি করছেন?

~তার আগে তুমি বলো ফোন ধরছিলে না কেনো? কত চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। জানো?

মেহের দ্রুত ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে ৭ বার কল দিয়েছে রুদ্র। ফোন সাইলেন্ট থাকায় বুঝতে পারেনি। রুদ্র গম্ভীর কন্ঠে কাব্য আর আহিলের উদ্দেশ্যে বলে,

তোমরা থাকতে ওর পাশে অন্য ছেলে বসতে আসছে কেনো? হাত পা ভাঙতে জানা নেই? 

~না জানলে বলো আমি নিজে ট্রেনিং দিবো। (আয়মান)

মেহের কপাল কুঁচকে বললো,

হাত পা ভাঙার ট্রেনিং মানে? আপনি আবারো গুন্ডাগীরি শুরু করেছেন!

~শোনো! বউকে বা বোনকে প্রোটেক্ট করার জন্য মারপিট করলে তাকে গুন্ডামি বলে না।

~আপনি বললেই তো হলো না।

রুদ্র বিরক্তিতে "চ্" শব্দ করে বললো,

এইখানে কি করছো?

~ফুচকার স্টলে কি করে মানুষ? অবশ্যই বিয়ে পড়ায় না।

 ~বড্ড সাহস বেড়ে গেছে দেখছি তোমার। মুখে মুখে তর্ক করো।

মেহের মুখ ভেংচি কেটে অন্যদিকে ঘুরে বসে রইলো। রুদ্র নিঃশব্দ হেসে আরেকটু মেহেরের গা ঘেসে বসলো। কাব্য বললো,

ভাই আপনার কোনো দুর সম্পর্কের বোন বা কোনো সিঙ্গেল মেয়ে নেই?

রুদ্র কপাল কুঁচকে বললো,

না তো! কেনো?

কাব্য হতাশার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

আমার মতো সিঙ্গেলদের আপনাদের প্রেম দেখলে দেবদাস টাইপ ফিল আসে। চিল্লিয়ে তখন গাইতে ইচ্ছে করে "বড় একা একা লাগে আমার, লাগে না ভালো আর... ওওও~"

দিয়া ধমকে উঠে বললো,

এই বেসুরা কাক! চিল্লানো বন্ধ কর! আমার কানের পর্দা শহীদ হলো বলে।

~তুই চুপ কর শয়তান মহিলা। বিয়া করছস সব বান্ধবী এক পরিবারে। একটাও ননদ নাই। এই খেয়াল করলি না তোদের ভাই দুইটা সিঙ্গেল থাকবো। ঢেং ঢেং করতে করতে নিজেরা বিয়া কইরা নিলি। আবার চিল্লাস!

কাব্যর কথায় আহিল সায় জানিয়ে বললো,

একদম ঠিক বিয়ে করেছিস তো করেছিস আবার আমাদের সামনে বসে প্রেম করিস। লজ্জা করে না?

কাব্য আর আহিলের কথায় আয়মান আর রুদ্র হেসে উঠলো। কাব্য উদাসীন কণ্ঠে বললো,

এককালে সিঙ্গেল অবস্থায় আমাদের সাথেই বসে হাসতেন আয়মান ভাই। আর আজকেও আপনি হাসতেছেন তবে বিবাহিত অবস্থায় তাও আমাদের ওপর হাসেন। সবই কপাল বুঝলেন!

______________________________________


~আপনি কি ইভান ভাইয়াকে মার দেওয়ার প্ল্যানিং করছেন?

আয়নায় মেহেরের প্রতিবিম্বর দিকে চেয়ে বাকা হাসলো রুদ্র।

~আমার সাথে থাকতে থাকতে বেশ বুদ্ধিমতী হয়ে যাচ্ছো দেখি বউ। স্বামীর মন, মস্তিষ্ক বুঝার চেষ্টায় আছো দেখছি? ভালো, খুব ভালো। আই লাইক ইট।

~ফাজলামো রাখেন রুদ্র। আপনি ওনাকে কোনো আঘাত করবেন না।

~আচ্ছা।

রুদ্রর কথায় চমকালো মেহের। উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললো,

আপনি সত্যিই মারবেন না?

~অলরেডী যথেষ্ট মার খেয়েছে। আরও খেলে তো সে পটল তুলবে মেহেরজান।

~মানে?

~মানে তুমি তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে একটু বেশিই দেরি করে ফেলেছো। অলরেডী সে আর ফারাজ মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি।

~কিহ?

~জ্বি। তাদের নিজ পায়ে দাড়াতেই কয়েকমাস লেগে যাবে দেখে নিও।

~কেনো? কেনো মারলেন এত?

~আমার বউ আর আমার বোনের দিকে পা বাড়িয়েছিল তাই। বাই দ্যা ওয়ে, আমি মারিনি। গার্ডস দিয়ে মার খাইয়েছি।

মেহের বিরক্ত হয়ে আর জবাব দিলো না। মানুষ অভ্যাসের দাস। এই দাসত্ব ছাড়াতে বেশ সময় লাগবে তা জানে মেহের। এখন ওর বা আয়মানের সাথে চিল্লিয়েও লাভ নেই। ফারাজ আর ইভান এর জন্য একরাশ খারাপ লাগা অনুভব করলো মেহের। বেচারারা চেয়ারে বসতে চেয়েছিল একটু। আর রুদ্র সোজা বেড এ পাঠিয়ে দিয়েছে। তাও যেনো তেনো জায়গার বেড নয়। সোজা হাসপাতালের বেড এ। একেই বলে যেচে বাঁশ খাওয়া। আরো যাও বিবাহিত মেয়েদের পাশের চেয়ারে বসতে।

~~~

চলবে~

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৩৮

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 38


🍂🍂🍂


মিটিং শেষে কেবিনে ফিরেই চেয়ারে গা এলিয়ে বসলো রুদ্র। হাতে থাকা ফোনটি বেজে উঠতেই তাতে "রুদ্রাণী" নামটি জ্বলজ্বল করতে দেখেই মুচকি হাসলো রুদ্র। বিড়বিড় করে বললো,

আমার মানসিক শান্তি।

দ্রুত রিসিভ করে কানে রাখতেই মেহেরের আর্তনাদ শুনে চমকে উঠলো রুদ্র। মেহের চিল্লিয়ে বললো,

রুদ্র! আপনি শুনতে পাচ্ছেন? প্লীজ জলদি আসুন।

~আমি আসছি মেহেরজান। তুমি একটু wait করো প্লীজ।

ফোন রেখে রুদ্র চিৎকার করে আয়মানকে ডাকতেই সে কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই কেবিনে চলে এলো। রুদ্র আয়মানের কাছে দৌড়ে এসে বললো,

জলদি গাড়ি বের কর মান। হাসপাতালে যেতে হবে আমাদের।

________________________________


হাসপাতালে পৌঁছে মেহেরের সামনে যেতেই মেহের রুদ্রর হাত ধরে কাদতে কাদতে বললো,

ক্লাস শেষে গাড়ির কাছে আসছিলাম আমরা। হটাৎ জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেল। ওর কিছু হবে না তো রুদ্র?

রুদ্র মেহেরকে জড়িয়ে ধরে বললো,

কাদে না মেহেরজান। কিছু হয়নি বউমনির। সুস্থ হয়ে যাবে সে। আমি... ডক্টর এর সাথে কথা বলে আসছি।

মেহের মাথা নেড়ে সায় দিতেই রুদ্র ডক্টর এর কেবিনে চলে যায়। কিছুক্ষন পর ফিরে এসে ধপ করে মেহেরের পাশের চেয়ারে বসে। মাথার চুল দুহাতে চেপে ধরে জিজ্ঞেস করলো,

~ভাইয়াকে বলেছো?

মেহের মাথা না বোধকে নেড়ে নাক টানতে টানতে বলে,

বলিনি। আমি আর দিয়া খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আপনাকেই বলেছি শুধু।

রুদ্র মুচকি হেসে মেহেরের গাল টেনে বলে,

ওরে আমার কিউট বউ রে!

মেহের ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই রুদ্র ঠোঁটের হাসি চওড়া করে বলে,

কংগ্রেচুলেশনস! তুমি চাচী হতে চলেছো।

~মানে? (আয়মান)

~মানে তুই ছোট চাচা হতে চলেছিস আর আমি বড় চাচা। (রুদ্র)

~স্নেহা প্রেগনেন্ট? (দিয়া)

রুদ্র দ্রুত মাথা নেড়ে হ্যা বলে। মেহের লাফ দিয়ে দাড়িয়ে বলে,

সত্যি বলছেন রুদ্র?

~সত্যি মেহেরজান।

মেহের আর দিয়া একে অপরকে জড়িয়ে ধরে লাফাতে লাফাতে বললো,

দোস্ত!!! আমরা খালা হতে চলেছি!!! ইয়াহু!!!

~খালা মানে? কিসের খালা? চাচী হবে তুমি। (আয়মান)

~চাচী কেনো হবো? স্নেহা আমার বোন। আমি খালামণি আর তুমি খালু হবে। (দিয়া)

~হোয়াট রাবিশ! (আয়মান)

~আরে রাখেন আপনার রাবিশ খবিশ। রুদ্র! কংগ্রেচুলেশনস! আপনিও খালু হচ্ছেন। (মেহের)

~মোটেও না। আমি চাচা আর তুমি চাচী হবে। (রুদ্র)

~ইহ! আপনি বললেই হলো? (মেহের)

~অবশ্যই (রুদ্র)

~তোদের ঝগড়া রাখ! আমার বউ কই?

তীব্রর কথায় সকলে তার দিকে তাকালো। রুদ্র আর আয়মান দৌড়ে গিয়ে তীব্রকে জড়িয়ে ধরে বললো,

তুমি বাবা হচ্ছো ভাইয়া!!! কংগ্রেচুলেশনস!

তীব্র বিস্তর হেসে বললো,

তোদেরও কংগ্রেচুলেশনস। কিন্তু আমার বউ কই?

রুদ্র হেসে বললো,

তোমার বউ কেবিনে। ঠিক আছে উনি। ডক্টর বলেছে কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান ফিরবে।

~আচ্ছা তোরা আয় তবে। আমি ওর কাছে যাচ্ছি।


🍂🍂🍂


রাতে ঘরে ফিরতেই মেহের দেখলো রুদ্র চুপ করে জানালার বাইরের দিকে চেয়ে বসে আছে। মেহের গিয়ে রুদ্রর সামনে বসলো। গালে হাত ঠেকিয়ে রুদ্রর দিকে সম্পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকালো।

~আপনি কি কোনো ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত?

রুদ্র মেহেরের দিকে চেয়ে আলতো হাসলো। মেহেরের কাছে আরেকটু এগিয়ে বসে তার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিলো। মেহেরের চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে বললো,

ভালোবাসি রুদ্রাণী।

মেহের চোখ নামিয়ে নিলো। মুহূর্তেই গালে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়লো। রুদ্রর মেহেরের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। 

~একটা জিনিস চাইলে দিবে?

মেহের চোখ তুলে রুদ্রর দিকে তাকালো। রুদ্রর চোখের চাহনী আজ বেশ অদ্ভুত লাগলো মেহেরের কাছে। মাথা নেড়ে হ্যা বুঝাতেই রুদ্র আলতো হাসলো।

~বউমনি যেমন ভাইয়াকে বাবু এনে দিচ্ছে তেমনি আমারও তোমার কাছ থেকে একটা ছোট্ট বাবু চাই। এনে দিবে? 

মেহের অবাক হয়ে রুদ্রর দিকে তাকালো। গাল, কান দিয়ে যেনো ধোয়া বের হচ্ছে। মেহেরের লজ্জা রাঙ্গা মুখ দেখে রুদ্র নিঃশব্দে হাসলো।

__________________________________


~ঘুম কেমন হলো দোস্ত?

দিয়ার প্রশ্নে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকালো মেহের।

~মানে? (মেহের)

~লাভ বাইট দেখা যাচ্ছে।

আপেলে এক কামড় দিয়ে বললো স্নেহা। মেহের শাড়ির আঁচল দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করতে লাগলো। দিয়া বাকা হেসে বললো,

আমি আবারও শীঘ্রই আরেকবার খালা হওয়ার সুখবর পাবো মনে হচ্ছে।

~আমারও তাই মনে হচ্ছে।

দিয়া আর স্নেহার কথায় মেহের লজ্জায় গুটিয়ে গেলো। সে পারলে এখন কোনো এক কোনায় গিয়ে লুকিয়ে পড়ে। স্নেহার আর দিয়ার কথায় লজ্জায় আটখানা হয়ে ঘরের দিকে দৌড় লাগালো মেহের।

~~~

চলবে~


(দেরি করানোর জন্য দুঃখিত। আজ রাতেই আরেকটা বোনাস পার্ট দিবো। হ্যাপি রিডিং~)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৩৭

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 37


🍂🍂🍂


রাত প্রায় বারোটা বাজে। চারিদিকে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। মেহের সোফায় বসে রুদ্রর ঘরে ফেরার অপেক্ষা করছে। বিয়ের দিন স্নেহার বলা কথাগুলো যথাযথ মানতে চেষ্টা করছে সে। রুদ্রর প্রতি দূর্বল সে তবে রুদ্রর মাফিয়াগিরির জন্য তার কাছে যেতে ভয় পায় মেহের। আয়মান এর বিয়ে ঠিক হওয়ার পর পরই জানতে পেরেছে শরীফ মির্জাকে তার প্রাপ্য শাস্তি দিয়েছে রুদ্র। যেনো তেনো শাস্তি নয় বরং বেশ নির্মম আর ভয়ংকর শাস্তি। কাব্যর কাছ থেকে শরীফ মির্জাকে মার দেওয়ার বর্ণনা শুনে গা গুলিয়ে এসেছিল মেহেরের। এমন শাস্তি পেলে হয়তো মানুষ নিজের মৃত্যুকেই সব থেকে বেশি শান্তির মনে করে। কিন্তু রুদ্র তাকে মৃত্যু দেয়নি। বেচেঁ থাকার চেয়ে হয়তো তার কাছে মৃত্যুই বেস্ট উপায় ছিলো কিন্তু রুদ্র তাকে সেই উপায় দিলো না। সুস্থ হলে সে পাগল রূপে সারাজীবন হাসপাতালে পড়ে থাকবে এমন শাস্তিই সে ঠিক করেছে শরীফ মির্জার জন্য। মেহেরের ইচ্ছা করছিল কাব্যকে আধঘন্টা উত্তম মাধ্যম দিতে। মানুষ কিভাবে মারা গেছে, কতটা জখম পেয়েছে সব তার জানা লাগবে। জানবে তো জানবে আবার এসে ওদের সবাইকে জানাবেও। অদ্ভুত এক চরিত্র এই ছেলে। রুদ্রকে নিজের আদর্শ বলে সারাদিন লাফায়। ভবিষ্যতে নাকি সেও রুদ্রর মতো মাফিয়া হতে চায়। এ জন্য মেহের আর স্নেহার কাছে কম ধমক খায়নি সে। আজ রুদ্রর সাথে কথা বলে সে তাদের সম্পর্কের একটা পরিণতি ঠিক করে তবেই দম নিবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছে মেহের। দিয়ার ধমক খেয়ে কেউ আর ওদের বাসরে ডিস্টার্ব করেনি। মেহের নিজের ঘরে চলে এলেও রুদ্র এখনও আসেনি। সে এলেই আজ কথা বলবে তার সাথে মেহের। রুদ্র ঘরে ঢুকতেই নড়েচড়ে বসলো মেহের। কণ্ঠস্বরে বেশ গম্ভীরতা এনে বললো,

বিছানায় কাপড় রাখা আছে। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমার কিছু কথা আছে আপনার সাথে।

রুদ্রও ভদ্র ছেলের মত দ্রুত ফ্রেশ হয়ে এলো। মেহের চোখের ইশারায় রুদ্রকে তার পাশে বসতে বললো। রুদ্রও তাই করলো। মেহের লম্বা এক শ্বাস নিয়ে বললো,

আজ আপনার কাছে কিছু চাইলে দিবেন রুদ্র? মানা করবেন না প্লীজ।

রুদ্র মেহেরের দিকে তাকালো। বিয়ের এত মাসের মধ্যে মেহের কখনোই কিছু আবদার করেনি রুদ্রর কাছে। এই প্রথম তার রুদ্রাণীর মুখে সে নিজের নাম শুনলো। সে যথাসম্ভব তার বউয়ের আবদার পূরণ করার চেষ্টা করবে। তবে কি চাইবে মেহের? যদি ডিভোর্স চেয়ে বসে? ভাবতেই বুকটা কেপে উঠলো রুদ্রর। মেহেরের এমন আবদার সে কখনোই পূরণ করতে পারবে না, কখনোই না। দরকার পড়লে সে হাত পা বেঁধে মেহেরকে নিজের সাথে রেখে দিবে তাও সে ছাড়তে পারবে না। রুদ্র ঢোক গিলে তটস্থ কণ্ঠে বললো,

কি? কি চাও তুমি? আমি আগেই বলে দিচ্ছি রুদ্রাণী, তোমাকে ছাড়া আমার পক্ষে অসম্ভব। ডিভোর্স বাদে যা ইচ্ছা চাও তাতে সমস্যা নেই। আমি প্রাণ দিয়ে হলেও তা পূরণ করার চেষ্টা করবো তবে তোমাকে ছাড়তে পারবো না। মোটেও না, ভুলেও না।

মেহের ফিক করে হেসে দিলো রুদ্রর কথায়। ডিভোর্সের কথা তো সে স্বপ্নেও ভাবেনি কখনো আর রুদ্র এসব ভেবে ভয় পেয়ে আছে। ব্যাপারটা আসলেই বেশ হাস্যকর। রুদ্র নিষ্পলকভাবে চেয়ে রইলো মেহেরের হাসি মাখা মুখটির পানে। প্রেয়সীর হাসি রাঙা মুখ দেখার মত সুযোগ কোনো প্রেমিক পুরুষই মিস করতে চাইবে বলে তার মনে হয় না। এমন সুযোগ মিস করলে তার নিজেকে প্রেমিক পুরুষ দাবি করা উচিত না। মেহের হাসি থামিয়ে বললো,

আমি ডিভোর্স চাইছি না রুদ্র। আপনি আগে বলুন আমার কথা রাখবেন কি না।

রুদ্র নির্মল কণ্ঠে বললো,

বলো। রাখার চেষ্টা করবো।

মেহের মুচকি হেসে রুদ্রর ডান হাতটা জড়িয়ে ধরে কাধে মাথা রাখলো। রুদ্রর অবাক চাহনী উপেক্ষা করে বললো,

আমি চাইছি আমাদের সম্পর্ককে একটা সুযোগ দিতে। কিন্তু...

রুদ্র দেরি না করে বললো,

কিন্তু কি? জলদি বলো মেহেরজান।

মেহের রুদ্রর কাধ থেকে মাথা তুলে তাকালো। রুদ্রর হাতটা নিজের গালে ছুইয়ে বললো,

আপনার এই মাফিয়া জগৎটা আমাকে আপনার কাছে আসতে দেয় না রুদ্র। যাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য এ পথে এসেছিলেন তাকে তো শাস্তি দেওয়া শেষই। আপনি প্লীজ এসব ছেড়ে দিন। এসবে লাইফের খুব রিস্ক থাকে রুদ্র। আমি খুব সাধারণ একটা জীবন চাই রুদ্র। এসব খুন খারাবি আমার ভালো লাগে না।

রুদ্র এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো তার প্রেয়সীর পানে। প্রেয়সীর এই নিঃসংকোচ আবদার যেনো তার মনে আজ খুশির স্রোত নিয়ে এসেছে। ঠিক এ কারণেই তো সে তার রুদ্রাণীকে এতো ভালোবাসে। খারাপ কাজ মেহেরের অপছন্দ। সে যেভাবেই হোক বুঝিয়ে ঠিক পথে তাকে ফিরিয়ে আনবে তা বেশ জানতো রুদ্র। রুদ্র প্রশান্তির হাসি হেসে বললো,

আজ থেকে ছেড়ে দিচ্ছি। আমি সত্যিই ওই জগৎ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করবো। তুমি শুধু আমার সাথে থেকো।

মেহের মাথা দুলিয়ে সায় জানালো। তার ঠোঁটের কোনেও দেখা মিললো হাসির রেখার।

____________________________________


ইদানিং বাড়ির মানুষের কাজে, আচরণে বেশ অবাক হচ্ছে আহিল। বাবা মা এক সাথে খাওয়া দাওয়া করে, বেশ হেসে কথা বলে, আহিলের সাথেও যথেষ্ট সময় কাটায়। এমন পরিবর্তনের কারণ তার বুঝে আসছে না। কি এমন হলো যে আহিলের মা বাবার এত পরিবর্তন হলো? ভেবেছিলো আজ আহমেদ ভিলাতেই থাকবে। কিন্তু তার বাবা মা ফোন করে বাড়ি ফেরার জন্য পাগল প্রায় করে তুলছিল। বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখলো তার মা বাবা সোফায় বসে আড্ডা দিচ্ছে। আহিল ভেবেই নিয়েছে যে আজ জেনেই ছাড়বে তাদের এই পরিবর্তনের কারণ। আহিলকে দেখতেই আহীলের বাবা বললো,

আহি এসে গেছে। আয় বস।

আহিল তাদের ঠিক সামনের সোফায় গিয়ে বসলো। ভ্রু কুঁচকে বললো,

হটাৎ এই পরিবর্তনের কারণ কি? কখনো তো এক সাথে ঘরে দাড়াতেও দেখলাম না আপনাদের। আর ইদানিং এক সাথেই খাওয়া, ঘুরা, ইভেন আজ আড্ডাও দিচ্ছেন।

আহিলের বাবা মলিন হাসলেন। স্বামী স্ত্রীর দ্বন্দ্বে যেনো তার ছেলের দিকে তাকাতেই ভুলে গিয়েছিল তারা। মেহের, দিয়া, স্নেহা আর কাব্য তাদের না বুঝালে হয়তো কখনোই তাদের এই ভুল শুধরানো হতো না। আহিলের মা আহিলের হাত ধরে কেঁদে উঠলো,

মাফ করে দে বাবা। আমরা ভালো বাবা মা হতে পারিনি। আমাদের নিজ দ্বন্দ্বে আমরা যেনো ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমরা এখন শুধু স্বামী স্ত্রীই নয়, মা বাবাও। আমাদের উপর রাগ করে থাকিস না বাবা। আমরা আর ঝগড়া করবো না। একদম স্বাভাবিক একটা পরিবার হবে আমাদের।

আহিল অবাকের পাশাপাশি বেশ অপ্রস্তুত হয়ে বললো,

প্লীজ কান্না করবেন না। আমি... আমি আপনাদের এমন ঝগড়া দেখে কষ্ট পেয়েছি ঠিকই তবে আপনাদের চোখে কখনো অশ্রু দেখতে চাইনি। প্লীজ কান্না থামান। 

তার মা কান্না থামালো না বরং কান্নার পরিমাণ আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেলো। এক পর্যায়ে আহিল জানতে পারলো এসব তার বন্ধুদের জন্যই সম্ভব হয়েছে। কাব্য নাকি তাকে খুঁজতে ওদের বাসায় এসেছিল। আহিল না থাকায় সেদিন আব্দুল্লাহর কাছে থেকে আহিলের ব্যাপারে জেনেছিল সব। আহিল বাবা মাকে শান্ত করে তাদের রুমে পাঠিয়ে নিজের ঘরে চলে এলো। লম্বা এক শ্বাস নিলো। আজ মনে হচ্ছে এটা তার শান্তির নীড়। আজও আহিলের চোখের কোণে জলের আভাস পেলো তবে তা দুঃখের নয় বরং খুশির। পকেট থেকে ফোন বের করেই কাব্যর নাম্বারে কল লাগালো সে।

~কোন শালায় রে? আমার এত সাধের ঘুমটা নষ্ট করতে কল দিছে।

~শালা বলদ! নম্বর দেখে কল রিসিভ করস না?

আহিলের ধমকে হুড়মুড় করে উঠে বসলো কাব্য। কান থেকে ফোন সরিয়ে দেখলো এটা আহিলের নম্বর। চেঁচিয়ে বললো,

আমার কোনো বইন নাই। তুই আমারে শালা কস কেন? আর এত রাইতে কল দিলি কেন!

আহিল হেসে বললো,

তুই নিজে আমাকে আগে শালা বলেছিস। যাই হোক বাসার নিচে নাম। আমি দাড়িয়ে আছি।

~তুই আমার বাড়ির নিচে কি করস? আমি তো আহমেদ ভিলায়।

~লাথি মেরে ছাদ থেকে ফেলে দিবো একদম। আমি চলে এসেছি বলে তুইও চলে এসেছিস। আমি জানি না মনে করিস!

কাব্য হাসলো। "আসছি" বলেই দ্রুত নিচে চলে এলো। কাব্যকে দেখতেই আহিল দ্রুত গিয়ে কাব্যকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। হটাৎ এভাবে জড়িয়ে ধরায় দু কদম পিছিয়ে গেলো কাব্য। আহিলের পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

এই কাদিস কেন? ও মাই আল্লাহ! আহিল! তুই প্রেম করিস? ব্রেক আপ হইছে? একদম ঠিক আছে। আমাদের বলিস নাই তো তাই উচিত বিচার হইছে।

আহিল ওকে ছেড়ে দিয়ে বললো,

বেক্কল! সব সময় উল্টা পাল্টা কথা! দেখছস কোনো মেয়ের পিছে ঘুরতে কখনো?

~তাইলে কান্দস কেন?

~আমার মা বাবাকে বুঝিয়ে আমাকে একটা স্বাভাবিক পরিবার এনে দেওয়ার জন্য থ্যাংকস ভাই। তোরা না বুঝালে হয়তো কখনোই এমন দিন দেখতে পেতাম না আমি।

বলেই আবার ডুকরে কেঁদে উঠলো আহিল। কাব্য আহিলের মাথায় এক থাপ্পর দিয়ে বললো,

তোর মত গরু আর একটা দেখি নাই আমি। বন্ধুরা হয়ই এই জন্য যেনো তাদের সাথে মনের সব দুঃখ কষ্ট শেয়ার করতে পারি আমরা। তাই যদি না করি তবে বন্ধু হলাম কেমনে? তুই কি আদৌ আমাদের ওপর বিশ্বাস আনতে পারিসনি আহি?

আহিল আবারো কাব্যকে জড়িয়ে ধরে বললো,

মাফ করে দে ভাই। আর কখনো কোনো কথা লুকাবো না। সব বলবো তোদের।

কাব্য হেসে বললো,

বুঝলাম। কিন্তু দোস্ত! ছাড় আমারে। পাশের বাড়ির দারোয়ান যেমনে তাকাইয়া আছে! নির্ঘাত গে ভাববো আমাদের। তুই সন্ন্যাসী হইয়া ঘুর সমস্যা নাই। আমার তো বিয়ার কইরা বাচ্চা কাচ্চার মুখ দেখার সখ আহ্লাদ আছে। গে মনে করলে আর কেউ মাইয়া দিবো না ভাই। ছাড় আমারে!

আহিল কাব্যকে ছেড়ে দিয়ে দারোয়ানের দিকে তাকালো। লোকটা আসলেই আড়চোখে ওদের দিকে চেয়ে আছে। কাব্য দু হাত দুদিকে ছড়িয়ে দারোয়ানের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,

এমনে তাকাইয়া আছো কেলা? আহো তোমারেও একটু জড়াইয়া ধইরা কষ্ট প্রকাশ করি। আহো, আহো!

কাব্যর কথা শুনে লোকটা দৌড়ে বাড়ির ভেতর ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। দারোয়ানের দৌড় দেখে আহিল আর কাব্য হু হা করে হেসে উঠলো।

~~~

চলবে~

(আজকের পর্ব কেমন লেগেছে অবশ্যই বলবেন। গল্পটা খুব শীঘ্রই শেষ করে দিবো ভাবছি। হ্যাপি এন্ডিং দিবো নাকি স্যাড এন্ডিং তা নিয়ে আম কনফিউজড। আপনারা সাজেস্ট করেন দেখি। হ্যাপি রিডিং~)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৩৬

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 36


🍂🍂🍂


~মেহেরজান রেডী? দেরি হয়ে যাচ্ছে তো!

রুদ্রর কথায় তার দিকে ঘুরে দাড়ালো মেহের। রুদ্র মোহনীয় দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো মেহেরের দিকে। মেহের আরেকবার আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বর দিকে চেয়ে দেখলো সব ঠিক আছে কি না। রুদ্রর সামনে গিয়ে কোমরে হাত রেখে বললো,

দাড়িয়ে আছেন কেন? জলদি চলুন! যেতে হবে তো।

রুদ্র সন্ধি ফিরে পেলো। মেহেরকে কাছে টেনে বললো,

তুমি এত সুন্দর কেনো বউ? আমি ব্যতীত অন্য কেউ তোমাকে দেখুক তা আমার ভালো লাগে না।

মেহের লজ্জায় মাথা নুয়ে দাড়িয়ে রইলো। স্নেহা এসে ডাক দিতেই দুজনে ছিটকে দূরে সরে দাড়ালো। স্নেহা বাকা হেসে বললো,

বেচারা আয়মান ভাইয়ারও তো রোমান্স এর জন্য বউ দরকার নাকি! জলদি চলো নাহলে দিয়া আবার বিয়ে করবে না বলে বেকে বসবে।

রুদ্র উদাসীন কণ্ঠে বললো,

তুমিও না বউমনি! পাঁচ মিনিট পরে আসলে কি হতো? এক চুমুও দিতে পারলাম না। ধুর!

স্নেহা আর মেহের দুজনেই অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালো। একটা মানুষ এতটা ঠোঁট কাটা স্বভাবের হয় কি করে! মেহের লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে স্নেহার দিকে তাকালো। রুদ্র ভ্রু কুঁচকে বললো,

আরেহ বউ! এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে? বউমনি কি শুধুই আমার ভাবি নাকি? আমার শালীও।

মেহের কপাল চাপড়ে বললো,

এখন দেরি হচ্ছে না?

~হ্যা তাইতো! তুমিও না মেহেরজান! দিলে তো দেরি করিয়ে!

মেহের আর স্নেহাকে দ্বিতীয় বারের মতো অবাক করে দিয়ে হন হন করে চলে গেলো রুদ্র।

রুদ্র আর মেহেরের বিয়ের তিনমাস চলছে। তাদের সম্পর্কটা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। আজ আয়মান আর দিয়ার বিয়ে। আয়মান হটাৎ জিদ ধরে বসেছে সে যত দ্রুত সম্ভব দিয়াকে বিয়ে করবে। বিয়েতে প্রথমে দিয়া রাজি না হলেও পরে আয়মানের জোরাজুরিতে অবশেষে বিয়ে করতে রাজি হয়। 

_____________________________


~একজন চাকরের বিয়েতে এতো তামঝাম করার কি দরকার ছিল ভাবি? অযথাই টাকা নষ্ট করছো কেনো?

~রুদ্র আর আমাদের পরিবারের সকলের ইচ্ছেতেই বিয়েটা এভাবে করছি ভাবি। আয়মান মোটেও চাকর নয়। সে আমার ছোট ছেলের মতোই।

~ওই ছেলে নির্ঘাত তোমাদের ওপর কোনো জাদু করেছে ভাবি। নয়তো একটা বাহিরের ছেলের জন্য এত কিছু....

মেহের রাগান্বিত হয়ে বললো,

মুখ সামলে কথা বলুন আন্টি। কিসের এতিম সে? মামনি কে চোখে পড়ছে না আপনার? আর আমার ভাই কে চাকর বলার সাহস কি করে হলো আপনার!

জুমানা বেগম ফের কিছু বলার আগে কোনোকিছু ভাঙার আওয়াজে সেদিকে ঘুরে তাকালো মিসেস তিথি আর জুমানা বেগম। পেছনে ঘুরেই এক জোড়া চক্ষুদ্বয় দেখে রুহ কেপে উঠলো জুমানা বেগম এর। রুদ্রকে বরাবরই ভয় পায় সে। রুদ্র যেই এক চরিত্র! রেগে গেলে সামনে কে আছে তার পরোয়া সে করেই না যেনো। রুদ্র গর্জে উঠে বললো,

আপনার সাহস কি করে হলো ওকে বাইরের ছেলে বলার!

মিসেস তিথি দৌড়ে এসে রুদ্রকে ধরে বললো,

বাবা রাগ করিস না। শান্ত হ।

~কিসের শান্ত মা! এই মহিলার সাহস কি করে হলো মানকে বাহিরের ছেলে বলার। কে এই মহিলা?

মিসেস তিথি শান্ত চোখে তাকালেন। কাউকে একবার দেখলে তাকে খুব সহজেই ভুলে যাওয়ার মতো মানুষ রুদ্র না। কারো সাথে একবার সাক্ষাৎ হলে তাকে যেনো তার মেমোরি সেভ করে নেয়। আর আজ বলছে "এই মহিলা কে?"। স্নেহা, তীব্র ওরা দ্রুত পায়ে নিচে এসে দাড়ালো। রুদ্রর চেহারা দেখে কারণ না জানলেও রুদ্র রেগে আছে তা বুঝতে অসুবিধা হলো না। জুমানা বেগমকে দেখতেই স্নেহার চোখে মুখে যেনো রাজ্যের অন্ধকার নেমে এলো। এই মহিলাকে তার একদম অপছন্দ। এসেছে পর থেকে "বিয়ের দু বছর হতে চললো বাচ্চা নিচ্ছো না কেনো?, তুমি কি বাচ্চা দিতে অক্ষম?, এই কাজ এভাবে করছো কেন?, এভাবে চলছে কেনো?, বাড়ির বউ হিসেবে কিভাবে চলতে হয় জানো না!" এমন অনেক কথা বলেই জ্বালিয়ে মারছে। নেহাৎ সে এ বাড়ির বড় বউ নয়তো খুব কথা শুনিয়ে ছাড়তো সে। মেহেরের দিকে চেয়ে দেখলো তার চোখে মুখেও বিরক্তিভাব বিদ্যমান। রুদ্রর ভয়ে মেহেরকে জুমানা বেগম কিছু না বললেও স্নেহাকে একেকটা বলায় বেশ রেগে ছিল মেহের। এমনিও মেহের যে স্নেহার মত ঠান্ডা মেজাজের মেয়ে না তাও বেশ বুঝতে পেরেছেন তিনি। জুমানা বেগম সাহস যুগিয়ে বললো,

ঠিকই তো বলছি রুদ্র। একটা চাকরের জন্য এতো কিছুর মানে হয়! এতিম তো তাই তোমাদের পটিয়ে খাচ্ছে।

রুদ্র এবার বেজায় রেগে গেলো।

~একে তো আমি!

বলেই পিস্তল নিয়ে তেড়ে জুমানা বেগমের কাছে যেতে নিতেই আয়মান এসে আটকালো রুদ্রকে। তীব্র তেড়ে যেতে নিলে তাকেও আরেক হাত দিয়ে আটকায় আয়মান। দু হাত দিয়ে দুজনকে টেনে আনার চেষ্টা করতে করতে বললো,

~স্যার! স্যার! কি করছেন কি স্যার!

~মান! ছাড় আমাকে! এই মহিলাকে আজ আমি খুন করবো।

~স্যার প্লীজ শান্ত হোন। প্লীজ স্যার!

রুদ্র শান্ত হলো না। চেঁচিয়ে বললো,

তুই জানিস না মান এই মহিলা কত বড় দুঃসাহস দেখিয়েছে। ছাড় আমাকে! ছাড় বলছি!

আয়মান ছাড়লো না। আরো শক্ত করে ধরে বললো,

আমি জানি। শুনেছি আমি। আপনি প্লীজ শান্ত হোন।

মেহের আর স্নেহার দিকে চেয়ে বললো,

ভাবিমা! ভাবি! আপনারাই বুঝান না!

মেহের মুখ ফুলিয়ে বললো,

ঠিকই করছে ভাইয়া। ওনার সাহস কি করে হলো আপনাকে এতিম বলার। আমি তো বলি রুদ্রকে ছেড়েই দিন। দু চারটে গুলি খেয়ে দেন বুঝবে উল্টো পাল্টা কথা বলার মজা।

স্নেহাও সায় জানিয়ে বললো,

একদম ঠিক বলেছে মেহের। ভাইয়া ছাড়ুন ওনাদের!

রুদ্র আর তীব্রকে দেখে ভয় পেয়ে মিসেস তিথির পিছনে লুকালেও মেহের আর স্নেহার কথায় আরো গুটিয়ে যায় জুমানা বেগম। আয়মান পারে না এবার দেয়ালে মাথা ঠুকে। কিছু মাস আগেই না বিয়ে করবে না বলে লাফাচ্ছিলো? এখন কেমন স্যার এর কাজে সাপোর্ট করছে দেখো! একেই বলে "সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে"। আয়মান ফোঁস করে দম ছেড়ে বললো,

আজ আমার বিয়ে স্যার। এই খুশিতেই মাফ করে দিন। আবার কখনো কিছু বললে তখন শাস্তি দিয়েন।

তীব্র ফুঁসে উঠে বললো,

তার আবারো এমন কিছু বলার সুযোগ দেওয়ার দরকার নেই। রুদ্র তুই এখান থেকেই গুলি কর। তোর নিশানা ভালো।

জুমানা বেগম হু হু করে কেঁদে উঠে বললো,

মাফ করে দাও বাবা। আমি আর কখনোই এমন ভুল করবো না।

আয়মান করুন চোখে মেহেরকে ইশারাতে অনুরোধ করতেই তার মুখ দেখে যেনো মেহেরের মনে মায়া হলো। এগিয়ে গিয়ে রুদ্রকে বললো,

উনি মাফ চাইছেন রুদ্র। মাফ করে দিন। আর কখনো এমন করবে না বললোই তো।

তীব্রকে স্নেহা বুঝালে দুজনে একটু শান্ত হয়। তবে রুদ্র রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চেয়ে রইলো জুমানা বেগমের দিকে। আয়মান জানে রুদ্র এখন শান্ত থাকলেও কিছু একটা তো করবেই তাকে শাস্তি দিতে। আয়মানকে সে পি এ নয় বরং ভাই মানে এতে কোনো কোনো সন্দেহ নেই। আয়মান রুদ্র আর তীব্রকে নিয়ে সোফায় বসে বললো,

আপনি খুবই ভালো একজন মানুষ স্যার। আপনি দয়া করে আর রাগ করে থাকবেন না।

রুদ্র আয়মানের দিকে তাকালো। আয়মান এর চোখে জল স্পষ্ট। রুদ্র গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

আর কখনো যদি দেখেছি আমাকে স্যার ডাকতে! আই স্বয়ার সবার আগে তোকেই গুলি করবো আমি।

~আমাকে মা আর রেদওয়ানকে বাবা বলে ডাকবি। নয়তো তোর খাওয়া বন্ধ।

মিসেস তিথি এর কথায় আয়মান হেসে উঠলো। মনে মনে বললো,

নির্দ্বিধায় এ মানুষগুলো ভালো মনের। ভাগ্যবানদেরই শুধু এমন পরিবার নসিব হয়। আর ওই ভাগ্যবানদের তালিকায় আমিও আছি।

_______________________________


আয়মান আর দিয়ার বাসর ঘরের সামনে দাড়িয়ে আছে মেহের, আহিল, কাব্য আর স্নেহা। উদ্দেশ্য ওদের বাসরে ব্যাঘাত ঘটানো।

~কি করবি ভেবেছিস? (আহিল)

~জানালা দিয়ে পানি মারি চল। (কাব্য)

~হোয়াট আ লেইম আইডিয়া!

স্নেহার কথায় ফুঁসে উঠলো কাব্য। ফিসফিসিয়ে বললো,

ওই বেডি! আমার আইডিয়া মোটেও লেইম না।

~ঠিক। তোর আইডিয়া লেইম না বরং বেটা তুই নিজেই লেইম। এদিকে ঝগড়া করলে ধরে দিবো এক লাথি। (আহিল)

~মীরজাফর! তোর বাসরে যদি ডিস্টার্ব না করছি!

ওদের কথার মধ্যেই হাজির হলো তীব্র আর রুদ্র। মেহেরকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুদ্র বলে,

কি?

~আপনারা এখানে কি করছেন?

~যা তোমরা করতে এসেছো।

~কি! আপনারা ডিস্টার্ব করতে এসেছেন? আপনারা না আয়মান ভাইয়ার বড়?(স্নেহা)

~হ্যা কিন্তু দিয়া তো আমাদের শালী। (রুদ্র)

~আমার বাসরে বহুত ডিস্টার্ব করেছে ফাজিল গুলায়। আজকে আমার পালা। (তীব্র)

~কি করবেন? (মেহের)

~দেখাচ্ছি।

দরজায় জোরে করাঘাত করে "ভাগো!" বলেই দৌড় দিলো রুদ্র। রুদ্রর কাণ্ডে হকচকিয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে তারাও সব দৌড় দিয়ে লুকালো। আয়মান দরজা খুলে দেখলো কেউই নেই। দরজা লাগাতেই ওরা সকলে বেরিয়ে এলো। মেহের ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বললো,

না বলে এমন করতে গেলেন কেনো আপনি! এখনি তো ধরা পড়ে যেতাম।

একটা ৭ বছরের বাচ্চা ছেলে গেট এর সামনে এসে দাড়াতেই রুদ্র বাকা হাসলো। বাচ্চাটিকে বললো,

যা বলেছিলাম মনে আছে?

বাচ্চাটি দ্রুত বেগে মাথা নাড়ালো। রুদ্র ঠোঁটের হাসি বিস্তর করে বললো,

যা বলেছি করো। তবেই এত্তোওওও গুলা চকোলেট দিবো।

বাচ্চাটি ঘাড় কাত করে আচ্ছা বলতেই রুদ্র সবাইকে লুকাতে বললো। সকলেই আড়াল হতে বাচ্চাটির কার্যকলাপ দেখতে লাগলো। 

~কিরে? এই ছোট প্যাকেট আর কি ডিস্টার্ব করবে? (কাব্য)

~আমি কি জানি? চুপ চাপ দেখ! (মেহের)

হটাৎ ই বাচ্চাটা "দেখেছি তোমারে তুরাগ নদীর পাড়ে" বলে সুর নিয়ে চেচিয়ে উঠলো। গান নামক চিল্লানিতে কান চেপে ধরলো ওরা।

~এটা দেখতে পিচ্চি হলেও এ তো দেখি চলতি ফিরতি ফাটা বাঁশ রে! আল্লাহ গো! আমার কান শেষ! (আহিল)

~এইটা আবার কি গান রে? বাপের জন্মে তো শুনি নাই। (স্নেহা)

~আরেহ! এটা তো আমার প্রিয় গান!

কাব্য ওই ছেলেটির সাথে তাল মিলিয়ে গাইতে নিতেই কাব্যর মুখ চেপে ধরে আহিল। ফিসফিসিয়ে বলে,

~বেটা গর্ধব! ধরা খাওয়াবি নাকি! চুপ!!!

আয়মান হুড়মুড়িয়ে দরজা খুলতেই বাচ্চাটা হেসে বললো,

ভাইয়া ভালো আছো?

আয়মান ভ্রু কুচকে তাকাতেই ছেলেটি বললো,

থাক চলে যাই। টাটা।

বলেই আবারো গান গাইতে গাইতে সিড়ি বেয়ে নিচে চলে গেলো। আয়মান স্তব্ধ হয়ে বাচ্চার যাওয়া দেখলো। কিছুক্ষণ পরেই আবারো রুদ্র একজন গার্ডকে পাঠালো। লোকটি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে কাশতে শুরু করলো।

~এই বেটা তো কাশির অ্যাক্টিং ই পারে না! দেখি আমি যাই সর।

যেতে নিতেই কাব্যকে আহিল টেনে ধরে বলে,

একটা উষ্টা দিমু তোরে এখন! চুপচাপ দাড়া এদিকে!

কাব্য হতাশ হয়ে বললো,

দেখলি! বুঝলি না আমার মতো ট্যালেন্টেড মানুষের কদর। আপসুস!

আয়মান এবার আর দরজা খুললো না। ওরা এবার বাগান দিয়ে আয়মান এর ঘরের জানালার কাছে এসে জড়ো হলো। একটা ইট জানালায় ছুড়ে মারতেই আয়মান দ্রুত জানালা খুললো। কাউকে না দেখতে পেয়ে জানালা বন্ধ করতেই আবারো দরজায় ইট ছুড়লো রুদ্র। এবার দিয়া জানালা খুলে বললো,

আরেকবার কেউ ইটের টুকরা মারলে আমি ডিরেক্ট দশ ইঞ্চি ইট ছুঁড়ে মারবো। ফাজিলের দল! ঘুমা গিয়ে!

রুদ্র হতভম্ব হয়ে গাছ ধরে দাড়িয়ে রইলো। আড়াল থেকে একে একে সবাই বের হয়ে খিল খিল করে হেসে উঠলো। বেচারি দিয়া হয়তো ভেবেছে তার বন্ধুরা এমন করছে তাই ঝাড়ি দিয়েছে। যদি জানতো রুদ্র এমন করেছে তবে হয়তো শকের বশে বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকতো।

~~~

চলবে~

(আজকে যদি কেউ বলছে গল্প ছোট। তবে রুদ্রর পিস্তল দিয়ে মেহেরকে উড়িয়ে দিবো😒 দেন একদম শান্তিময় এক এন্ডিং। হ্যাপি রিডিং~)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৩৫

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 35


🍂🍂🍂


বাইক থেকে নেমে এক নজর হাতের অ্যানালগ ঘড়িটির টিকে তাকালো আহিল। মাত্র সাড়ে দশটা বাজে। বাড়িতে প্রবেশ না করে সে বাগানের দিকে হাঁটা দিল। ঠিক বাগানের মাঝে গিয়ে ঘাসের ওপর ধপ করে পা টান করে বসলো। একধ্যানে নিজের বাবা মা এর ঘরের ব্যালকনি এর দিকে চেয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর বাড়ির কেয়ার টেকার আবদুল্লাহ এসে দাড়ালেন আহিলের পাশে। দাদা দাদীর মৃত্যুর পর এই বাড়িতে এক তার সাথেই টুকটাক কথা হয় আহিলের। এই মানুষটাই তার যাবতীয় সব কিছুর খেয়াল রাখেন। তিনি পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বুঝলেও আহিল তার দিকে তাকালো না। আবদুল্লাহ বললেন,

সোজা বাগানে চলে এলেন যে? ঘরে যাবেন না আহিল বাবা?

আহিল স্বশব্দে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতেই ঘাসের ওপর শুয়ে পড়লো। আবদুল্লাহ এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো আহিলের চোখের দিকে। দুর থেকে ওকে দেখলে বেশ হাসি খুশি লাগলেও, কাছ থেকে না দেখলে বুঝতেই পারবে না যে তার চোখে এখন অশ্রুকনারা চিক চিক করে তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। আহিল হাসি থামিয়ে চুপ করে কিছুক্ষণ হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে রইলো। বাড়ির দিকে দৃষ্টি রেখেই মাথার নিচে হাত রেখে বললো,

ঘর মানেই তো শান্তির নীড়, তাই না চাচা? তবে আমার এই ঘরে ফিরে আসতে এত বিতৃষ্ণা লাগে কেনো? এটা কি আদৌ আমার শান্তির নীড় নাকি শুধু মাত্র ইট পাথরে তৈরি এক দালান?

আবদুল্লাহ জবাব দিলেন না। মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলেন। নিজেদের দ্বন্দ্বে যে তাদের সন্তান একাকীত্বের মাঝে গুটিয়ে যাচ্ছে তা কি কখনোই তাদের চোখে পড়ে না? তাদের কি চিন্তা হয় না? এ বাড়ির মানুষগুলোকে সে বরাবরই পাষাণ মানুষের তালিকায় ধরে। আহিলকে দেখলেই তার মন টা কেমন হুহু করে উঠে। প্রায় সময়ই আহিল বাড়িতে ফিরে না তাতেও তার মা বাবার মধ্যে তেমন ভাবাবেগ দেখে না সে। আহিল আবার বলে,

দাদু যাওয়ার পর আর এই বাড়িতে কারো হাসি মুখ দেখেছো চাচা? আমার না মনে পড়ছে না। তুমি দেখে থাকলে একটু বলো তো!

আবদুল্লাহ এর মৌনতা দেখে আহিল আবারো হেসে উঠলো। হাসতে হাসতেই এক ফোঁটা অশ্রু চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়লো। হাসির মাত্রা না কমিয়ে কণ্ঠে বিদ্রুপের সুর টেনে বললো,

চলো যাই ঘরেএএএ।

______________________________


মেহের ফ্রেশ হয়ে ঘরে এসেই দেখলো রুদ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তার দিকে চেয়ে আছে। মেহের পাত্তা না দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো। রুদ্র দ্রুত মেহেরের সামনে এসে কপাল কুঁচকে চেয়ে রইলো। মেহের বললো,

কি সমস্যা?

রুদ্র হতাশ কণ্ঠে বললো,

বিদেশে যাওয়ার আগে তো তোমাকে একদম নাদুস নুদুস পিচ্চি দেখে গিয়েছিলাম। হুট করে এমন পাটকাঠি হলে কি করে?

মেহের অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালো রুদ্রর দিকে। বিস্ময় নিয়ে বললো,

আমি মোটেও পাটকাঠি না। আপনার পাটকাঠি মনে হচ্ছে কেন!

রুদ্র ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ঘাড় ঘুরিয়ে মেহেরের দিকে চেয়ে বললো,

ডায়েট করেছো না? আগেই তো ভালো ছিলে।

মেহের চোখ ছোট ছোট করে চেয়ে রইলো। মানুষ টা বড্ড অদ্ভুত! সে মোটেও পাটকাঠি নয়। একদম পারফেক্ট দেখতে। আর তার কাছে পাটকাঠি মনে হচ্ছে! সিরিয়াসলি!

রুদ্র আবার বললো,

আমি এখন থেকে নিজে সামনে বসে তোমাকে খাবার খাওয়াবো। ডায়েট ফায়েট করতে হবে না। এতো শুকনা পাটকাঠি আমার ভালো লাগে না। খেয়ে গলুমলু হবা। বুঝলা?

মেহের প্রতিবাদী কন্ঠে বলে উঠলো,

মোটেও না। বললেই হলো! কত কষ্ট করে স্লিম হয়েছি জানেন আপনি!

রুদ্র নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললো,

তো?

~তো মানে! দেখুন! আপনি বাইরে গিয়ে মাফিয়াগিরি করুন গিয়ে। বাড়িতে কিন্তু আমি আর মামনিই বড় মাফিয়া বুঝলেন! মোটেও জোর জবরদস্তি করতে আসবেন না।

রুদ্র হু হা করে হেসে উঠলো। বিদ্রুপের সুরে বললো,

মা নাহয় বাড়ির মাফিয়া বুঝলাম। তোমার মতো চুনোপুটিকে মাফিয়া মানবে কে শুনি?

মেহের হা হয়ে চেয়ে রইলো। মানুষটা এবার রীতিমতো তাকে অপমান করছে। এতো অপমান মানা যায়! যায় না।

~আমি এখনি মামনিকে যেয়ে বিচার দিচ্ছি যে আপনি আমাকে চুনোপুটি বলেছেন।

~মাকে গিয়ে কি বলবে? গেলে দেখবে উল্টো তোমাকে এক হাড়ি খাবার দিয়ে বসিয়ে দিয়েছে। এই ব্যাপারে কিন্তু বাবাও মায়ের পক্ষে।

মেহের গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। জব্দ করতে এই লোকটা বেশ ভালো পারে। নির্ঘাত বিদেশ থেকে জব্দ করার কোনো কোর্স করে এসেছে। বেত্তমিজ লোক!

হটাৎ করেই রুদ্র মেহেরের হাত ধরতেই। মেহের ছিটকে দূরে সরে গিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

আস্তাগফিরুল্লাহ! আপনি হাত ধরছেন কেনো? সরুন বলছি!

রুদ্র গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

আমি তোমার বর রুদ্রাণী! আস্তাগফিরুল্লাহ এর কি আছে?

মেহের নিজ মাথায় এক চাটি মেরে জোরপূর্বক হেসে বললো,

সরি, সরি! আমি ভুলে গেছিলাম।

রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

হ্যাঁ! বিয়ের ২ দিন পর কেউ কি করে ভুলে যায় যে সে বিবাহিত? তুমি আসলেই একটা চিজ।

কিছুক্ষণ থেমে আবার বললো,

দেখি বুকে আসো! জড়িয়ে ধরো।

মেহেরের গাল লজ্জায় লাল রঙ ধারণ করলো। মাথা নেড়ে না বললো যার অর্থ সে আসবে না। রুদ্র বললো,

তোমাকে রুদ্রাণী না ডেকে লজ্জাবতী ডাকা উচিত ছিলো। দেখি জলদি আসো।

বলেই জড়িয়ে ধরেই বেশ খানিক সময় বসে রইলো। মেহের ছাড়াতে চাইলেও ছাড়লো না রুদ্র। কিছু সময় পর রুদ্র মেহেরকে ছেড়ে দিয়ে তার মুখপানে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। মেহের একবার তার চোখের দিকে তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিলো। রুদ্রর এই দৃষ্টিতে মেহের অসীম মায়া, ভালোবাসা, আর সম্মান দেখতে পায়। আদৌ কি এর মূল্য দিতে পারবে মেহের? যদি ব্যর্থ হয়?

~~~

চলবে~

(ভুলেও কেউ ছোট বলবেন না😒 অসুস্থ থাকায় এই কয়েকদিন গল্প দিতে দেরি হয়েছে। ইশ! আপনারা দেখি রীতিমতো রেগে বোম হয়ে আছেন। রাগ করা স্বাস্থ্যের জন্য হানিকারক তাই রাগ না করে গঠনমূলক কমেন্ট করবেন যেনো গল্প লিখতে আরো উৎসাহ পাই। তাহলে গল্পও শীঘ্রই দিবো। হ্যাপি রিডিং~)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৩৪

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 34


🍂🍂🍂


স্নিগ্ধ সকাল। পাখিরা তার নীড় ছেড়ে বেরিয়েছে আহার খোঁজার উদ্দেশ্যে। নতুন দিন, নতুন এক সূর্যোদয়, নতুন আশা নিয়ে শুরু হয় এক নতুন যাত্রার।

সকালে ঘুম থেকে উঠে মেহের বিছানায় রুদ্রকে পায় না। সেদিকে মাথা না ঘামিয়ে ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখে ৭ টা ১৫ বাজে। মেহের দ্রুত ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। নিচে বাগানের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো রুদ্র আর তীব্র ব্যায়াম করছে। রুদ্রকে দেখে মেহেরের দ্রুত পায়ে ঘরে চলে এলো। ওয়াশরুম থেকে এক বালতি পানি এনে বারান্দা দিয়ে ছুড়ে মেরেই ডানে বামে না চেয়ে দিলো ভো দৌড়। নিচ থেকে তীব্র সহ আরো কয়েকজনের হাসির আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। এই মুহূর্তে কিছুতেই ঘরে থাকা যাবে না, মোটেও না, ভুলেও না। রুদ্র নাহলে ঘরে এসেই এক দফা ধমকাবে তাকে। নিচে নামতেই দেখতে পেলো মিসেস তিথি, স্নেহা আর দিয়া বসে আছে। মেহের গিয়ে তাদের পাশে বসতেই দেখলো তীব্র আর রুদ্র স্বশব্দে হাসতে হাসতে বাড়িতে প্রবেশ করছে। পাশেই আয়মান, আহিল আর কাব্য ঠোঁট চেপে হাসি আটকানোর প্রয়াস চালাচ্ছে। এক বালতি পানি মারার পরও রুদ্র একদম শুকনো, ঝরঝরে, ফুরফুরে। এক বালতি পানি তো দূরে থাক, তার গায়ে এক ফোটা পানি পড়েছে কিনা সন্দেহ। মেহের চোখ ছোট ছোট করে রুদ্রর দিকে চেয়ে রইলো। রুদ্রর পেছনে আসা মানুষটাকে দেখেই মেহের চমকালো। রেদোয়ান আহমেদ এক প্রকার কাক ভেজা হয়ে বাড়িতে প্রবেশ করছেন। রুদ্রকে পানি মারতে গিয়ে সে না দেখেই শ্বশুরের ওপর পানি মেরে এসেছে জানতেই জিভ কামড়ালো মেহের। মিসেস তিথি এগিয়ে গিয়ে অবাক কণ্ঠে বললেন,

একি অবস্থা! এতো সকালে তুমি সুইমিং পুলে নামতে গেলে কেনো?

রেদোয়ান আহমেদ তার স্ত্রীর দিকে কাতর চোখে তাকালেন। বললেন,

এই মনে করেন খুশিতে, ঠেলায়।

~মানে? কি বলছো এসব!

তিথির কথায় জবাব দিলেন না রেদোয়ান। তীব্র হাসতে হাসতে বললো,

রুদ্র আর আমি ব্যায়াম করছিলাম মা। বাবা এসে বললো সে নাকি আমাদের থেকে বেশি ফিট। আমাদের সরিয়ে নিজের ফিটনেস দেখানোর জন্য দাড়াতেই কে যেনো ওপর থেকে ফুলের বদলে এক বালতি পানি ছুড়ে বাবাকে সম্বর্ধনা জানিয়েছে।

তীব্র আর রুদ্র আবারো এক সাথে হু হা করে হেসে উঠলো। এবার কাব্য ওরাও আর হাসি আটকে রাখতে পারলো না।

~কিন্তু পানিটা মারলো কে?

স্নেহার প্রশ্নে মেহের আড় চোখে তাকালো। কাপা হাত বাড়িয়ে পানির গ্লাসটা নিয়ে পানি পান করতেই রুদ্র বলে,

~কি জানি বউমনি? আমার তো জানা নেই। আচ্ছা! পানিটা কে মারতে পারে বলোতো মেহেরজান।

রুদ্রর কথা কর্ণপাত হতেই বিষম খেলো মেহের। কাশতে কাশতে যেনো যক্ষারোগীর পদবীটা এবার জয় করেই ছাড়বে সে। মিসেস তিথি মেহেরের পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। রেদোয়ান আহমেদ মেহেরকে বললো,

পানি দেখে মারিসনি বুঝলাম। কিন্তু পানি পান তো সাবধানে করবি নাকি রে মা! 

মেহের করুন দৃষ্টিতে শশুরের দিকে তাকালো। লজ্জায় সে পারলে এখন মিলখা সিং এর মতো এক দৌড় লাগায় এখান থেকে। কিন্তু তা আর সম্ভব হচ্ছে না তাই মাথা নিচু করে বললো,

সরি বাবা। আমি একটু দুষ্টুমি করতে চেয়েছিলাম। আমি খেয়াল করিনি যে তুমি ওখানে। তুমি প্লীজ রাগ করো না।

রেদোয়ান আহমেদ আলতো হাসলেন। মেহেরের মাথায় হাত রেখে বললেন,

বাড়ির সব থেকে ছোট তুই। তুই আর স্নেহা দুষ্টামি না করলে আর কে করবে?

মেহের জবাব না দিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলো। যে শয়তানের তাড়নায় সে এমন বাঁদরামি করেছে তাকে পেলে এখন বেধে রেখে ফুল ভলুমে আধ ঘন্টা কুরআন তেলাওয়াত শুনাতো। তার শয়তানি ছুটিয়ে তবেই দম নিতো সে। মিসেস তিথি বললেন,

~তুমি দাড়িয়ে আছো কেনো? যাও কাপড় পাল্টে আসো আগে!

~যাচ্ছি যাচ্ছি! এতো ধমকানোর কি আছে!

~যাবে তুমি!

বউয়ের রাগী চেহারা দেখে দৌড়ে ঘরে চলে গেলেন রেদোয়ান। মেহের শাশুড়ির দিকে ঘুরে বললেন,

মামনি তুমি কি রাগ করেছো?

~পাগলী একটা! রাগ করবো কেনো? পরের বার থেকে আমরা এক সাথে প্র্যাঙ্ক প্ল্যান করবো ঠিক আছে?

~আমি সাথে আছি।

স্নেহার কথায় একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে ফিক করে হেসে উঠলো মেহের আর মিসেস তিথি।

~মেহেরজান ঘরে আসো তো। ইটস আর্জেন্ট।

বলেই রুদ্র ঘরে চলে গেল। শাশুড়ি চোখ দিয়ে ইশারা করে যেতে বলতেই মেহেরও ঘরে চলে এলো।

ঘরে ঢুকতেই দেখতে পেলো রুদ্র ঘরে পায়চারি করছে। মেহেরকে দেখতেই দু হাত দুদিকে মেলে দিয়ে বললো,

ব্যায়াম করে খুব ক্লান্ত আমি। একটু জড়িয়ে ধরো তো মেহেরজান!

~~~

চলবে~

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৩৩

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 33


🍂🍂🍂


~কি সমস্যা ফারাজ ভাই! কতবার বলেছি আমাকে অকারণে কল দিবেন না। আমার এটা অপছন্দ।

ফোনের ওপাশ থেকে দিয়ার ঝাঁঝালো কণ্ঠস্বর শুনেও মুচকি হাসলো ফারাজ। কারণে অকারণে দিয়াকে ডিস্টার্ব করতে তার ভীষণ আনন্দ লাগে। প্রায় সময়ই দিয়া কথা শুনায় তাতেও সে দমে যাবার পাত্র নয়। ঠোঁটের হাসি আরেকটু প্রশস্ত করে বললো,

রাগ করো না দিয়াপাখি। আমার আজকে সত্যিই তোমার সাহায্যের দরকার তাই কল করেছি।

ফারাজের 'দিয়াপাখি' ডাকায় বিরক্তিতে 'চ্' শব্দ করে বললো,

~কতদিন বলেছি এই নামে আমাকে সম্বোধন করবেন না। কি দরকার সেটা বলুন।

ফারাজ ফোঁস করে এক দম ছেড়ে বললো,

~পরশু মায়ের জন্মদিন। আমি চাইছিলাম তাকে একটা শাড়ি গিফট্ করতে। কিন্তু...

~কিন্তু কি? কথার মাঝে থামেন কেনো। আজব!

~আরে বলছি তো! এতো রেগে যাচ্ছো কেনো? শাড়ির ব্যাপারে আমার মাথা সম্পূর্ণ খালি। কাল গিয়ে একবার দোকানে ঘুরে এসেছি। কিছুই বুঝিনি, উল্টো মাথা চক্কর দিচ্ছিলো। তুমি একটু চলো না আমার সাথে।

দিয়া ভ্রু কুঁচকে বলে,

ফারাজ ভাই! আপনার না কত্ত গুলা মেয়ে ফ্রেন্ড! তাদের সব গুলোকে দোকানে নিলে আই বেট তারা অর্ধেক দোকান খালি করে দিবে। সবাইকে না নিলেও তাদের মধ্যে একজনকে ধরে নিয়ে হাটা ধরলেই হয়।

~ওদের নিয়ে যাওয়া আর দেওয়ালে কপাল ঠুকা এক ব্যাপার।

~মানে?

~ওদের বুঝিয়ে নিয়ে যেতে গেলেও আগে ওদের বয়ফ্রেন্ড এর পারমিশন লাগবে, তারপর তাদের মা বাবার, তারপর তাদের যদি মন চায় তবেই যাবে। গেলেও কল এর মধ্যে বয়ফ্রেন্ড এর সাথেই লেগে থাকে। এর থেকে ভালো তুমিই চলো প্লীজ। আমি ফুচকা খাওয়াবো।

~সত্যি?

~যাবে তুমি?

~ফুচকা খাওয়ালে যাবো।

~আচ্ছা। তবে তুমি রেডী হও। আমি আধ ঘণ্টা পর নিতে আসছি।

~আচ্ছা।


🍂🍂🍂


শপিং মলের বাইরে আসতেই দিয়া বিদায় জানিয়ে চলে আসতে নেয়। তবে ফারাজ বাঁধা দিয়ে বলে সে নিজেই বাড়ি পৌঁছে দিবে। দিয়া কিছু একটা বলবে তার আগেই একটা গাড়ি দিয়াদের সামনে থামে। দিয়া এক লাফে ফারাজের পিছনে যেয়ে তার হাত চেপে ধরে। দিয়া হতভম্ব হয়ে ফারাজের দিকে চেয়ে থেকে আবার উকি দিয়ে গাড়িটির দিকে তাকায়। গাড়িতে আয়মানকে দেখে দিয়ার কপাল কুঁচকে আসে। তার এখনও খেয়াল নেই যে সে ফারাজের হাত জড়িয়ে দাড়িয়ে আছে। বিড়বিড় করে বলে,

এবার আমাকেও মারার প্ল্যান করছে নাকি? ভালোই তো!

আয়মান দিয়াদের সামনে এসে ফারাজের হাতের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,

ভাবিমা তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছেন। কাল বৌভাত তাই আজকে ওই বাড়িতে থাকতে বলেছেন তোমাকে। কাব্য আর আহিলকেও গার্ডরা নিয়ে গেছে ইতিমধ্যে।

~আপনি চলে যান। মেহেরকে বলবেন আমি কাল আসবো। আজকে যেতে পারবো না।

~ভাবিমা নিয়ে যেতে বলেছেন। আমি চাইছি না তার মন খারাপ করতে। দ্রুত গাড়িতে উঠো। আম ওয়েটিং।

বলেই গাড়ির দিকে যেতে নিয়েও দিয়ার পাশে দাড়িয়ে থাকে। দিয়া ফারাজের দিকে চেয়ে বলে,

আমি তবে মেহেরের বাসায় যাই। আপনি চলে যান।

দিয়া যেতে নিতেই ফারাজ দিয়ার হাত ধরে আটকে বলে,

এইটা তোমার জন্য।

ফারাজ এর হাতে থাকা ব্যাগ এর দিকে চেয়ে বলে,

এর কোনো প্রয়োজন নেই।

~আজকে সময় দেওয়ার জন্য মনে করে নাও এটা থ্যাংক ইউ গিফট্। তোমার পছন্দ আসলেই অনেক সুন্দর।

দিয়া একবার আয়মান এর দিকে চেয়ে দেখলো সে চোয়াল শক্ত করে তার দিকেই চেয়ে আছে। দিয়া দ্রুত ফারাজ এর হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে এক হাসি দিয়ে ধন্যবাদ জানিয়েই গাড়ির দিকে দৌড় লাগায়। পেছনের সিটে বসতে নিলেই আয়মান ওকে টেনে এনে সামনের সিটে বসায়। দ্রুত ড্রাইভ করে সেখান থেকে চলে আসে। দিয়া চুপচাপ চোখ বন্ধ করে গাড়িতে বসে থাকে। গাড়ি থামলেই বের হতে নিলে দেখে দরজা লক করা। গাড়ির বাইরের দিকে চেয়ে দেখে তারা এখনও আহমেদ ভিলায় পৌঁছায়নি। দিয়া কিছু বলার আগেই আয়মান দু হাত ছড়িয়ে বলে,

~জড়িয়ে ধরো।

দিয়ার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। গম্ভীরতা বজায় রেখে প্রশ্ন করে,

~এখানে গাড়ি থামালেন কেনো?

~কি বললাম শুনোনি? জড়িয়ে ধরো!

~পারবো না।

'চ্' শব্দ করে নিজেই দিয়াকে টেনে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলে,

~ইদানিং খুব জ্বালাচ্ছ তুমি। বিয়েটা একবার হতে দাও। তখন দেখবো আর কিভাবে জ্বালাও।


🍂🍂🍂


মাথায় লম্বা এক ঘোমটা দিয়ে বসে আছে মেহের। তাকে ঘিরে বসে আছে রুদ্রর নানি আর মামীরা। রুদ্র কেমন মানুষ, তার কি পছন্দ-অপছন্দ, রুদ্র রাগ হলে তার কি করণীয় এসব তাকে রুদ্রর নানি বলছে আর মেহের ক্লাসের ভালো ছাত্রীর মতো মনোযোগ দিয়ে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে শুনছে। রুদ্রর নানি এক জোড়া বালা মেহেরের হাতে পড়িয়ে দিতে নিলেই মেহের দ্রুত মানা করে দেয়।

~এত দামী গহনা দিয়ে আমি কি করবো নানি? এর প্রয়োজন নেই।

~মানা করতে হয় না মেহের। মা দিচ্ছেন তো! নাও।

শাশুড়ির কথা শুনে করুন চোখে তাকালো মেহের। এত দামী গহনা সে কিছুতেই নিতে চাইছে না।

~কিছু মা এগুলো তো!

~শোনো পিচ্চি নাতবউ! বড়রা কিছু দিলে মানা করতে হয় না। এতে তাদের দোয়া মিশে থাকে তাই বড়রা কিছু দিলে চুপচাপ নিবে। বুঝলে?

নানীর পিচ্চি বলতেই মুখ ফুলালো মেহের। নানি, নাতি দুজনই পিচ্চি বলে ডাকে তাকে। এতো বড়ো মেয়েকে পিচ্চি ডাকার মানে হয়! নানী হাতে বালা পড়িয়ে দিতে থাকলে মেহের গাল ফুলিয়ে বলে,

আমি মোটেও পিচ্চি না। তোমরা সবাই আমাকে পিচ্চি ডাকো কেনো? স্নেহা আর আমি তো সমবয়সী।

মেহেরের কথা রুদ্রর নানী আর মামীরা হেসে উঠে। ছোট মামী মেহেরের গালে হাত রেখে বলে,

রুদ্র তো এই বাড়ির ছোট ছেলে। ওই হিসেবে তুমি এই বাড়ির ছোট বউ মানে সব থেকে ছোট। তাই তোমাকে পিচ্চি বলে।

সকলের কথা শুনে মেহের মাথা নিচু করে বসে থাকে। একে একে সকলেই মেহেরকে বিভিন্ন উপহার দেয়। মেহের প্রথমে নিতে না চাইলেও পরবর্তীতে শাশুড়ির কথায় নিতে হয়।

.

রাতে ডিনার করে ঘরে ফিরতেই রুদ্র দেখে মেহের ঘরের মধ্যে পায়চারি করছে। পায়চারি করছে বললে ভুল হবে। সে রীতিমতো দৌড়াদৌড়ি করছে। রুদ্র বিছানায় গিয়ে বসতেই মেহের প্রশ্ন করে,

আমি কোথায় ঘুমাবো?

মেহেরের প্রশ্নে রুদ্র সারা বিছানায় এক বার চোখ বুলিয়ে উল্টো প্রশ্ন করে,

কেনো? এই বিছানা কি তোমার কাছে ছোট মনে হচ্ছে?

~আপনার সাথে ঘুমাবো?

~তোমার কি আরো একটা বর আছে যে তার সাথে গিয়ে ঘুমাবে?

রুদ্রর এমন ত্যাড়া কথায় মেজাজ খারাপ হয় মেহেরের। দাতে দাত চেপে বলে,

আমি মোটেও আপনার সাথে ঘুমাবো না।

~তবে অন্ধকার ঘরে এক বস্তা তেলাপোকার সাথে দিয়ে আসি? ওখানেই আজ ঘুমাও। চলো তোমাকে দিয়ে আসি।

বলেই মেহেরের হাত ধরে টান দিতে নেয়। তার আগেই মেহের দৌড় দিয়ে সোফায় গিয়ে হাত পা গুটিয়ে বসে বলে,

~আমি যাবো না ওই ঘরে। আমি এই ঘরেই থাকবো।

~তবে বিছানায় যাও।

মেহের মাথা নেড়ে না বুঝাতেই রুদ্র বলে,

~তাহলে চলো ঐ ঘরে রেখে আসি।

মেহের দ্রুত খাটে গিয়ে কম্বল গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পড়ে। রুদ্র হালকা হেসে বারান্দায় চলে যায়। গিটারের টুংটাং শব্দ কানে আসতেই মেহের কম্বলের ভেতর থেকে মাথা বের করে সারা ঘরে চোখ বুলায়। নাহ! রুদ্র ঘরে নেই। বারান্দা থেকে গিটারের আওয়াজ আসায় বুঝতে পারে যে রুদ্র বারান্দায় আছে। মেহের ধীর পায়ে গিয়ে বারান্দায় উকি দেয়। রুদ্র সেখানেই বসে গিটারে সুর তুলছে। মেহের রুদ্রর পাশে গিয়ে বসতেই রুদ্র মেহেরের দিকে চেয়ে মুচকি হেসে গাইতে শুরু করে,


তুমি না ডাকলে আসব না

কাছে না এসে ভালোবাসব না

দুরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়?

না কি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়?

দূরের আকাশ নীল থেকে লাল

গল্পটা পুরনো

ডুবে ডুবে ভালোবাসি

তুমি না বাসলেও আমি বাসি

ডুবে ডুবে ভালোবাসি

তুমি না বাসলেও আমি বাসি।


মেহেরের মনে হলো গানটা রুদ্র তাকেই উদ্দেশ্য করে গাইছে। আকাশের চাঁদটা যেনো আজ মেঘেদের সাথে লুকোচুরি খেলতে ব্যস্ত। মেহের উঠে রেলিং ধরে আকাশে দৃষ্টি স্থির করলো। বসন্তের মৃদু বাতাস থেমে থেমেই গায়ে এসে লাগছে। হটাৎ রুদ্র ধীর কণ্ঠে ডাকলো,

মেহেরজান!

মেহের চোখ চেপে বন্ধ করে নিলো। এই ডাকটাই তার হৃদপিণ্ডের গতি বাড়িয়ে দিতে সক্ষম। এমন শীতল আবহাওয়াতেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। রুদ্র আবারো সম্মোহনী কণ্ঠে ডাক দিলো,

রুদ্রাণী?

মেহের রুদ্রর দিকে ঘুরে মাথা নুয়ে দাড়িয়ে রইলো। রুদ্র আবারো বললো,

এদিকে এসো।

মেহের ধীর পায়ে রুদ্রর সামনে গিয়ে দাড়াতেই রুদ্র এক টানে মেহেরকে নিজের কোলে বসিয়ে মেহেরের অধরে অধর ছোঁয়ালো। মেহেরের হৃদপিণ্ড এবার বেরিয়ে আসার উপক্রম। এমন ছোঁয়া আর পরিস্থিতির সাথে সে বরাবরই অপরিচিত। রুদ্র মেহেরের অধর ছেড়ে কপালে কপাল ঠেকালো। বেশ কিছুক্ষণ পর লম্বা শ্বাস নিয়ে বললো,

যাও ঘরে যাও।

রুদ্রর কথা যেনো মেহেরের কান অব্দি গেলো না। সে তার কোলে বসেই ফ্যাল ফ্যাল করে রুদ্রর দিকে চেয়ে রইলো। রুদ্র বাকা হেসে বললো,

আবার চাই?

রুদ্রর কথায় এবার মেহেরের টনক নড়লো। মুহূর্তেই গালে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়লো। দ্রুত পায়ে রুদ্রর থেকে দূরে সরে এলো। বিড়বিড় করে বললো,

অসভ্য একটা!

বলেই দৌড়ে ঘরে চলে এলো। ঘরে এসেই কম্বল পেঁচিয়ে শুয়ে পড়লো। এই মুহূর্তে সে রুদ্রর মুখোমুখি হতে চায় না, কিছুতেই না। নয়তো দেখা গেলো আগামীকাল খবর ছেপেছে "স্বামীর চুমু দেওয়ার ফলে বিয়ের পরদিনই লজ্জায় পটল তুলেছে মেহের নামের এক রমণী"। ভুত সমাজেও তো লজ্জায় মুখ দেখাতে পারবে না। তখন কি এক বাজে পরিস্থিতি হবে। ভাবা যায়!!!

~~~

চলবে~

(পরের পর্বের জন্য নাকি অনেকেই অপেক্ষা করছেন? আমি অনেক অসুস্থ থাকায় গল্প দিতে দেরি হলো। কেউ রাগ করবেন না। আর অবশ্যই গঠনমূলক কমেন্ট করবেন। হ্যাপি রিডিং~)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৩২

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 32


🍂🍂🍂


নাস্তা সেরে ঘরে ফিরে রুদ্রকে দেখেই হেসে উঠে মেহের। তাকে পিচ্চি ডাকার অপরাধে রুদ্রকে ভয়ংকর এক শাস্তি দিবে বলে ইতিমধ্যে মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে সে। ভার্সিটির সিনিয়র ইভান ভাইয়ার বান্ধবী মৃণয়ীকে সে দেখেছে প্রায় সময়ই তার বয়ফ্রেন্ডকে ভাইয়া বলে ক্ষেপাতে। স্নেহাও একদিন জানিয়েছিল যে ছেলেদের নাকি তার বউ/গার্লফ্রেন্ড ভাইয়া বলে ডাকলে তারা বেশ চটে যায়। তাই মেহেরকে পিচ্চি ডাকার অপরাধে সেও ঠিক করেছে সে এখন রুদ্রকে ভাইয়া বলে ক্ষেপাবে। মেহেরকে একা দাড়িয়ে মিটমিটিয়ে হাসতে দেখে রুদ্র সন্দিহান চোখে তাকায়। মেহেরের ক্ষুদ্র মস্তিকে এখন কোনো উল্টাপাল্টা বুদ্ধি বুনতে ব্যস্ত তার বুঝতে বেগ পেতে হয় না। রুদ্র সন্দিহান ভঙ্গিতেই জিজ্ঞেস করে,

কি ব্যাপার? একা একা হাসছো কেন?

মেহের জবাব দেয় না। ঠোঁটের হাসি আরেকটু বিস্তর করে। রুদ্র সোফা থেকে উঠে এসে ভ্রু কুঁচকে পুনরায় কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই মেহের প্রশ্ন ছুড়ে,

কি করেন ভাইয়া।

মুহূর্তেই কিছু ভাঙার তীব্র আওয়াজ কানে এলো। মেহের থমকালো। এক দফা মাটিতে সদ্য ভেঙে ছড়িয়ে পড়া কফি মগটির দিকে নজর বুলায়। আরেকবার চোখ তুলে রুদ্রর দিকে তাকায়। মেহের ভেবেছিলো বউ এর মুখে ভাই ডাক শুনে হয়তো রুদ্র রাগ করবে কিন্তু না রুদ্রর মুখ ভঙ্গিই যেনো মেহেরের কানে চিৎকার করে বলছে "আরে গরু আমি রাগ করিনি। আমি এখন অবাক, প্রচন্ড অবাক, একদম মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মত অবাক"। মেহের যেনো বুঝলো রুদ্রর মনের অবস্থা। বিয়ের পরদিন সকালেই বউ এর মুখে "ভাই" সম্বোধন শুনলে অবশ্যই কোনো স্বামী ধেই ধেই করে নাচানাচি করবে না। এই মুহূর্তে রুদ্রকে ডাক দিয়ে অবাকের দুনিয়ার থেকে ফিরিয়ে আনার থেকে বেশি সুবিধাজনক মনে হলো আপাতত স্নেহাদের সাথে যেয়ে বসা। যেই ভাবা সেই কাজ। মেহের এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করেই ভো দৌড় দিল। মেহেরের দৌড়ের কারণে পায়েলের রিনঝিন শব্দে যেনো হুশ আসে রুদ্রর। এই মুহূর্তে কি ঘটলো তা বুঝতেই "মেহেরজান" বলে চিল্লিয়ে উঠলো। মেহের সেই ডাক উপেক্ষা করেই দৌড় এর গতি আরো দ্বিগুণ করে ছুট লাগালো স্নেহার ঘরের দিকে।

_______________

মেহেরের হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে ধুম করে খাটে বসতেই ভয়ে লাফিয়ে উঠে স্নেহা, তীব্র আর আয়মান। স্নেহা ভয়ে "আম্মাগো" বলে চিৎকার দিয়ে খাটে উঠে দাড়িয়ে পড়ে আর তীব্র, আয়মান ইতিমধ্যে হকচকিত হয়ে দোয়া দুরুদ পড়াও শুরু করে দিয়েছে। মেহের কিছুক্ষণ ওদের কান্ড দেখে ভেবাচেকা খেয়ে চেয়ে থাকে। পরক্ষনেই খিল খিল করে হেসে উঠে। মেহেরকে হাসতে দেখে বুকে ৩ বার ফু দিয়ে মেহেরের পাশে বসে স্নেহা। এতক্ষণে তীব্র আর আয়মানও সোজা হয়ে বসেছে। মেহেরকে এভাবে হাসতে দেখে তীব্র আয়মানকে কনুই দিয়ে গুতা মেরে বলে,

বুঝলি কিছু?

আয়মান অবুঝের মতো মাথা নাড়ায়। যার অর্থ সে বুঝেনি। তীব্র প্রচন্ড বিরক্ত নিয়ে আয়মানের দিয়ে তাকায়।

~রুদ্রর সাথে বিয়ে হতে না হতেই মেয়েটা পাগল হয়ে গেলো। ইশ! বেচারি। আগে জানলে চার বছর আগেই আমার হিটলার বাপকে সাপোর্ট দিয়ে বিয়ে ঠেকাতাম।

আয়মান নাক কুচকে তীব্রর দিকে আড়চোখে চেয়ে বলে,

আপনার আর রেদোয়ান স্যার এর যেই খোঁচাখোঁচির সম্পর্ক! আমি ডেম সিওর আপনি রাজি হলে স্যার নরমালি যেই বেগে রাজি হয়েছে তার থেকেও সুপার স্পিড এ রাজি হয়ে যেতো ভাবিমা আর রুদ্র স্যার এর বিয়ে দিতে। ইতিমধ্যে হয়তো আমি মামা আর আপনি চাচা ডাকও শুনতে পেতেন।

আয়মানের কথা শুনে তীব্র হতাশার নিঃশ্বাস ছাড়ে। দারুন হতাশাসহিত কণ্ঠে বলে,

আমার সাথে থাকতে থাকতে চালাক হয়ে যাচ্ছিস আয়মান। দেখলি কি সুন্দর চম্পট জবাব দিলি! কথাটা কলিজায় গিয়ে বিধেছে। গুরুজনদের মনে কষ্ট দিতে নেই জানিস না! মাফ চাওয়া লাগবে না শুধু বল "তীব্র স্যার আপনি মহান মানুষ। আজ থেকে আমি আপনার শিষ্য আর আপনি আমার গুরু"

আয়মান হু হা করে হেসে উঠতেই তীব্র ভ্রু কুঁচকায়। হতাশার মাত্রা আরেকটু বাড়িয়ে বলে,

বুঝলি না রে বাছা! বিয়েটা হোক তোর তখন দেখবি নিজেই বউ এর সাথে ঝগড়ার পর ঝগড়া মিটমাট এর টিপস চাইছিস। আসিস তখন হ্যহ!

তীব্রর কথা শুনে আর জবাব দিলো না আয়মান। এই মুহূর্তে দিয়ার কথা মনে পড়ছে যেকিনা এখন তার প্রতি রাগ। স্নেহার খিল খিল হাসির শব্দে দুজনের মনোযোগ সেদিকে চলে যায়। স্নেহার হাসি দেখে করুন দৃষ্টিতে চেয়ে আছে মেহের। মেহের বিরক্তি নিয়ে ঝাড়ি দেওয়ার আগেই আয়মান আর তীব্র এসে স্নেহাকে তার হাসির কারণ জিজ্ঞেস করতেই সে গটগট করে সব বলে দেয়। স্নেহার হাসি যেনো থামছেই না। তার সাথে এবার তাল মিলিয়ে হেসে উঠলো আয়মান আর তীব্র। ওদের এবার রীতিমতো গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। হাসি থামলেই যেনো পাশের বাড়ির টাকলা বুড়োর মাথায় এক ঝাঁক চুল গজিয়ে যাবে। তাই একদম নো থামাথামি, ডিসিশন ফাইনাল।

_______________


রুমির দেওয়া বার্তা শুনেই করুন চোখে তাকায় মেহের। মালি চাচার মেয়ে রুমি, ক্লাস ওয়ান এ পড়ে। সুযোগ পেলেই এই বাড়িতে খেলতে চলে আসে। আহমেদ বাড়ির সবাই ওকে ভীষণ আদরও করে বটে। মেয়েটাও বেশ মিশুক, মেহেরেরও বেশ মনে ধরেছে তাকে। তার গলার স্বরটা বেশ পছন্দ হয়েছে মেহেরের। কিন্তু এই মিষ্টি স্বরেই যেনো এই মুহূর্তে তাকে ভয়ানক কোনো খবর জানালো। রুমির বার্তা শুনে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে এর থেকে ভালো যদি শুনতো যে কেউ তার কিডনি খুলে নিয়ে যাচ্ছে তাতেও যেনো তার এত কষ্ট হতো না। ঘাড় ঘুরিয়ে স্নেহাদের দিকে চেয়ে দেখলো তাদের হাসির মাত্রা এবার আরো বেড়েছে। মেহের হতাশার শ্বাস ছাড়লো। বান্ধবীটা যে বিয়ের এক সাইনের মধ্যেই বান্ধবী থেকে স্টার জলসার সিরিয়ালের জা দের মত হিটলারি মেজাজের হয়ে গেলো তা যেনো টের ই পায় নি সে। পাওয়ার কথাও না কারণ সে গতরাতে ঘুমিয়ে ছিল। ভার্সিটি গেলে সব বন্ধুবান্ধব মিলে ওঝা দেখে স্নেহার মাথা থেকে হিটলার জা এর ভুত নামাবে ভেবে নিয়েই রুদ্রর ঘরের দিকে পা বাড়ালো।

______________________


মাথা নিচু করে ঘরে প্রবেশ করেই মেহের বুঝতে পারলো এক জোড়া চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তার ওপরই আবদ্ধ। রুদ্রর থমথমে কণ্ঠ,

এদিকে এসো।

মেহের ধীর পায়ে খাটের কাছ এগিয়ে কিছুটা দূরত্ব নিয়েই দাড়ালো। রুদ্র ধমক দিলেই যেনো দৌড়ে পালাতে পারে সেই মহা সাহস নিয়েই সে এখানে দাড়িয়ে ভেবেই লম্বা শ্বাস নেয় মেহের। একবার সোফার দিকে চেয়ে দেখলো। ইতিমধ্যে সব ভাঙ্গা টুকরো পরিষ্কার করানো শেষ। কিছুক্ষণ আগে যে একটা মগ শহীদ হয়ে ছ্যাঁকা খাওয়া প্রেমিকের ন্যায় ছিন্ন ভিন্ন হয়ে পড়ে ছিল তা এই মুহূর্তে আন্দাজাও করা মুশকিল। 

~তখন কি বলছিলে আমাকে?

~কি বলছিলাম?

~মনে করানো লাগবে?

বলেই শার্ট এর হাতা গুটিয়ে কাছে আসতে নিলেই মেহের দ্রুত মাথা নাড়িয়ে বলে,

মনে পড়েছে, মনে পড়েছে।

~কি মনে পড়েছে?

~ঐযে জিজ্ঞেস করেছিলাম।

~কি জিজ্ঞেস করেছিলে?

~কি করেন।

~এটাতো অর্ধেক বললে। 'কি করেন' এর পরে কি বলছিলে?

মেহের চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। রুদ্র আবারো বলে,

~উমমমম? ভাইয়া, রাইট?

~আস্তাগফিরুল্লাহ! আপনি আমার জামাই লাগেন। জামাই রে কেউ ভাই বলে! তওবা তওবা।

~আচ্ছা! তো একটু আগে কে ডেকে গেলো? তোমার ভুত?

~আচ্ছা সরি। আর বলবো না।

~সরি বললে তো কাজ হবে না। ইউ ডিজার্ভ আ পানিশমেন্ট।

মেহের এবার রাগী চোখে তাকায়। বিরোধিতার সুরে বলে,

আমি কোনো পানিশমেন্ট নিতে রাজি নই। আপনার পানিশমেন্ট আপনিই ই নেন। হুহ! আমি চললাম।

প্রখর সাহসী নারী ভাব নিয়ে চলে আসতে নিলেই রুদ্র শান্ত কণ্ঠে বলে,

ঠিক আছে। নিজের মন মতো রাজি হলে না তো! আমি আমার মতই জোর করে শাস্তি দেই তবে। তোমাকে সহ অন্ধকার ঘরে একঝাঁক তেলাপোকা ছেড়ে দিলে কেমন হয়? আইডিয়া টা সুন্দর না!

মেহের থমকে দাড়ায়। তেলাপোকাতে ভয় নেই তার। কিন্তু এসবে গা ঘিন ঘিন করে। রুদ্র যেই ধরনের মানুষ সে এমন কান্ড ঘটাতে পারে তাতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই মেহেরের। যেই বেগে চলে যাচ্ছিলো তার থেকে দ্বিগুণ বেগে আগের জায়গায় ফিরে আসে। দাতে দাত চেপে বলে,

কি শাস্তি দিবেন? বলুন আমি রাজি।

~তেমন কিছু না। জাস্ট পা টিপে দিবে। এমনিও তুমি বিয়ের আগে যা দৌড়াদৌড়ি করিয়েছো! তোমার পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে পা ব্যাথা করছে এখন। তাই পা টিপে দিবে। আর হ্যাঁ আরেকটা কাজ পা টিপতে টিপতে গান ও গাইতে হবে।

মেহের বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকায়। স্বামীর পা টিপতে সমস্যা নেই, প্রয়োজন পড়লে গলাও টিপে দিতে রাজি সে। কিন্তু গান! এমন পরিস্থিতিতে কোনো গান মাথায় আসে। শাস্তির সময় গান মনে পড়বে না তাই মেহের জানায় যে সে গান গাইতে পারবে না। রুদ্র পুনরায় ধমকে উঠতেই মেহের মুখ কালো করে রুদ্র পাশে বসে পা টিপতে টিপতে গান গাইতে শুরু করে,


আমি ফাইসা গেছি, আমি ফাইসা গেছি,

আমি ফাইসা গেছি মাইনকার চিপায়~

আমারো দিলের চোট বোঝে না কোনো হালায়~


মেহের গান শুনে রুদ্র থম মেরে যায়। তেজী কণ্ঠে বলে,

এটা কোন ধরনের গান! এইসব ফালতু গান পাও কোথায়!

রুদ্রর ধমক শুনে মেহের ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে। এই মুহূর্তে তার মাথায় কাব্যর গাওয়া এই গানটাই এলো। তাইতো এই গান গাওয়া। এর জন্যও ধমক দেওয়া লাগে! এমনিও এমন এক পরিস্থিতির সাথে এই গান একদম পারফেক্ট বলে মনে হচ্ছে মেহেরের।

রুদ্র ফের বলে,

ভালো একটা গান গাইবে। আমাদের আজ বিয়ের প্রথমদিন। সো প্রাণপ্রিয় স্বামীকে ডেডিকেট করে গাইছো ভেবে নাও। একদম রোমান্টিক একটা গান যাইবে। ওকে?

মেহের ঘাড় কাত করে আচ্ছা বলে। দু সেকেন্ড সময় নিয়ে কোন গান গাইবে ভেবে নেয়। স্নেহার প্রায়শই গাওয়া গান মনে পড়তেই এক ঝমকালো হাসি হেসে চোখ বন্ধ করে স্নেহার মতই সুর তুলে গাইতে শুরু করে,


আমি জুয়ান একটা মাইয়া~

বুড়া বেটার কাছে আমার বাবার দিছে বিয়া,

বুইড়ার কাশিতে কাশিতে লুঙ্গি যায় খুলিয়া~


মেহেরের গান শুনেই রুদ্রর কাশি উঠে যায়। কাশতে কাশতে যেনো যক্ষ্মা রোগীর পদবী হাসিল করেই ছাড়বে তা ঠিক করে নিয়েছে রুদ্র। কোনো মতো কাশি থামিয়ে রুদ্র করুন চোখে মেহেরের দিকে তাকায়। স্বামীকে ডেডিকেট করার মতো এমন রোমান্টিক গান সে ইহজন্মে শুনেছে কিনা তা নিয়ে আপাতত সে দ্বিধায় আছে। উদাসীন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

এমন উদ্ভট গান কোথা থেকে শিখেছো মেহেরজান?

মেহের নির্লিপ্তভাবেই জবাব দেয়,

কাব্য আর স্নেহার থেকে। মাইনকা চিপা গানটা কাব্য গায়। আর...

~লুঙ্গি খোলার গান বউমনি গায়?

মেহের মাথা নেড়ে হ্যা বোঝাতেই রুদ্র কপাল চাপড়ায়। বিড়বিড় করে বলে,

ভাইয়াকে নিয়ে বউমনি এই গান গায় শুনলে বেচারা মুহূর্তেই পটল তুলবে। আহারে আমার ভাইটা রে! আরে ধুর আমার কষ্ট বেশি। আমার বউ তো বউমনির থেকেও আপডেটেড। আমার সামনেই এই গান গায়। কি কপাল আমাদের! দিয়ার বিয়ে আয়মানের সাথে হলে বেচারার কি অবস্থা হবে ভেবেই আফসোস হচ্ছে। দ্রুত ওদের বিয়ে দেওয়া লাগবে। একা কপাল চাপড়ে শান্তি নেই। ৩ ভাই নাহয় এক সাথে বসেই কপাল চাপড়াবোনে। 

~~~

চলবে~

(পাঠক/পাঠিকারা তো মেহেরের থেকেও ফাস্ট। আমি যদি বলি নেক্সট কমেন্ট না করে গঠনমূলক কমেন্ট করতে তবে তাদের কমেন্ট বি লাইক "পরের পর্ব?, পর্ব নো...কোথায়?, সুন্দর নেক্সট প্লীজ"। একটু গঠনমূলক কমেন্টস করে আমাকে জানতে সাহায্যও তো করতে পারেন নাকি যে আমার লেখা আদৌ আপনাদের পছন্দ হচ্ছে কি না। আমি ইদানিং অসুস্থ থাকায় রেগুলার গল্প দিতে পারছি না। আমি খুব দ্রুতই পরের পর্ব পোষ্ট করবো। কেউ রাগ করবেন না। হ্যাপি রিডিং~)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৩১

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 31


🍂🍂🍂


অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরে চাঁদের আলো ছেয়ে আছে সারা ঘরে। বারান্দায় বসে আকাশের দিকে চেয়ে আছে আহিল। চোখে মুখে বিষন্নভাব বিদ্যমান। আকাশ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বাম হাতে থাকা সিগারেট এর প্যাকেট আর লাইটার এর দিকে দৃষ্টি বুলিয়ে আবারো আকাশে দৃষ্টি স্থির করে। বারান্দাটা প্রায় সম্পূর্ণই খোলা, মাথার ওপরে ছাদ নেই, সামনে কাঠের তৈরি রেলিং। দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে, এক পা ছড়িয়ে, আরেক পা ভাজ করে তাতে ডান হাত রেখে বসে আছে। আকাশে মেঘ এর আনাগোনা খুব একটা নেই, ভরা পূর্ণিমা আজ, আকাশের তারাগুলো মিটমিট করে জ্বলছে। আহিল চোখ বন্ধ করতেই এক বিন্দু অশ্রু তার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। আহিল চোখ বন্ধ করেই দীর্ঘ সময় পার করে। বাড়িটা শহর থেকে কিছুটা দূরে। আহিলের ১৫ তম জন্মদিনে তার দাদা তাকে এই বাড়িটা উপহার হিসেবে দিয়েছিল। ছোট বেলা থেকেই সে তার দাদা-দাদির খুব কাছের ছিল। বাড়িটা আহিল এর ঠিক পছন্দ মতই বানিয়েছিলেন আহিলের দাদা। কাঠের তৈরি দোতলা বাড়িটি, বেশ পরিপাটি আর মুগ্ধকর, বাড়ির সামনেই পিচঢালা রাস্তা, রাস্তার এক পাশে বিশাল দীঘি আর অন্যপাশে ক্ষেত। আহিল এর ১৫ তম জন্মদিনের বেশ কয়েকমাস পরেই তার দাদা হার্ট এ্যাটাক করে মৃত্যু বরণ করেন। স্বামীর শোকে তার দাদীও সে বছরই পরলোক গমন করেন। আহিল দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবারো আকাশের দিকে তাকায়।

.

দাদুর পছন্দেই বাবা মাকে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পর প্রায় সময়ই মন মালিন্য চলতো এদের। আহিল জন্মের পর হয়তো সম্পর্কটা ভালো হয়ে যাবে তা সকলের ভাবনায় থাকলেও এমন কিছুই হয় না। আহিল তার দাদা দাদীর সাথেই বেশি সময় ব্যয় করতো। বাবা মা এর ঝগড়া দেখে ভয় পেলেই দাদা দাদীর কাছে ছুটে যেতো। দাদা দাদীর মৃত্যুর পর সে প্রায় ভেঙে পড়েছিল। মা বাবার সম্পর্কও যেনো দিন দিন নষ্টই হচ্ছিলো। সে যে একজন সেই বাড়িতে আছে তা যেনো তাদের মনেই থাকে না। মা বাবার ঝগড়ায় অতিষ্ট হয়ে উঠলেই সে এই বাড়িতে এসে পড়ে। যেনো এই বাড়িই সব থেকে শান্তির। সারাদিন একা একা থাকা, প্রয়োজন ছাড়া কথা না বলা, কিছুটা গম্ভীর স্বভাবেরও হয়ে উঠেছিল। কলেজ এ পদার্পণ এর পর তার দেখা হয় মেহের আর তার বন্ধুদের সাথে। সারাদিন ভাই বোনের মতো খুনসুটি, আড্ডাগুলো আহিলকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনছিল। এই মানুষগুলোই যেনো এখন তার ভালো থাকার খোড়াক। আমরা পরিবারে শান্তি না পেলে বন্ধুদের মধ্যেই নিজের ভালো থাকার কারণ খুঁজি। আহিলের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। বন্ধুদের সাথে থাকলে মা বাবার ঝগড়া, একাকিত্ব যেনো আর তার মন, মস্তিষ্ককে ছুঁতেই পারে না। আহিল হাতে থাকা সিগারেট এর প্যাকেটটা পাশে রাখে। কখনোই এইসব ছাইপাশ সে ছুঁয়ে দেখেনি, আজ সখের বশে কিনে এনেছে। মেহের, দিয়া আর স্নেহা জানতে পারলে হয়তো তার সাথে এখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাঁধিয়ে দিতো, হয়তো তাদের সাথে কাব্যও সায় দিয়ে তার পিঠে কয়েক ঘা বসিয়ে দিতো। বন্ধুদের পাগলামির কথা মনে পড়তেই কান্নারত অবস্থায় ই ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠে। ছলছল দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ আকাশের দিকে চেয়ে থেকে ঘরে ফিরে আসে আহিল। যাওয়ার আগে সিগারেট এর প্যাকেটটা বারান্দা হতে বাইরের দিকে ছুড়ে মারে।


🍂🍂🍂


সকালের রোদটা চোখে মুখে পড়তেই বিরক্তিতে ভ্রু জোড়া কুঁচকে দোলনা ছেড়ে উঠে দাড়ায় রুদ্র। কাল রাতে কথা বলতে বলতে দোলনাতেই ঘুমিয়ে পড়ে ছিল রুদ্র আর মেহের। মেহেরের কথা মাথায় আসতেই ঘুরে দাঁড়ায় রুদ্র। মেহেরকে বারান্দায় না দেখে দ্রুত পায়ে ঘরে এসে সেখানেও মেহেরকে না পেয়ে কপাল কুঁচকায়। ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখে সবে মাত্র ৬:১৫ বাজে। এই সময়ে হয়তো বাড়ির কেউই ঘুম থেকে উঠেনি। মেহের কি তাকে রেখে চলে গেলো? সে কি তার থেকে পালিয়ে গেছে? ভাবতেই ঘামতে শুরু করে রুদ্র। মুহূর্তেই যেনো মাথায় রাগ চড়ে বসে। দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে। বাড়ির সকল গেটই বন্ধ দেখে সারাবাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজে আবারো ঘরে ফিরে আসে রুদ্র। মেহের যদি পালিয়ে থাকে তবে মেহেরকে এবার খুব কঠোর শাস্তি দিবে তা ভেবে নেয় রুদ্র। চোখে পানি টলমল করছে, আয়মানকে কল করার জন্য ফোন হাতে নিতেই ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে সেদিকে ঘুরে তাকায় রুদ্র। সামনে মেহেরকে দেখে সস্তির নিশ্বাস ছেড়ে দ্রুত পায়ে মেহেরের কাছে এগিয়ে যায়। রুদ্রর হটাৎ জড়িয়ে ধরায় মেহের দু কদম পিছিয়ে যায়। মেহের ছাড়াতে চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়। বেশ সময় পর রুদ্র মেহেরের থেকে দূরে সরে দাঁড়াতেই মেহের প্রশ্ন করে,

কি হয়েছে? সকাল সকাল এমন করছেন কেনো?

~আমাকে না বলে কোথায় গিয়েছিলে?

রুদ্রর এমন প্রশ্নে কপাল চাপড়ায় মেহের। বিরক্তিমাখা কণ্ঠে বলে,

ওয়াশরুমে মানুষ কি করতে যায়? আর আমাকে দেখে অবশ্যই আপনার বোঝা উচিত যে আমি কি করছিলাম।

রুদ্রকে সরিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে যেয়ে দাড়ায়।এবার খেয়াল করে রুদ্র। মেহের কলাপাতা রঙের শাড়ি পড়েছে, চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে, স্নিগ্ধতা মেহেরের চোঁখে মুখে ফুটে উঠেছে। রুদ্র ফের প্রশ্ন করে,

এখন গোসল কেনো করলে?

মেহের আয়নায় রুদ্রর প্রতিবিম্বের দিকে তাকায়। রুদ্র বাঁকা হেসে আবারো বলে,

আমি তো কিছুই করিনি।

মেহের লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যায়। রোজ সকালে গোসল করা মেহেরের অভ্যাস তাই আজও তার ব্যতিক্রম করেনি। কিন্তু এখন রুদ্রর কথা শুনে মন চাইছে কোথাও যেয়ে লুকাতে পারলে ভালো হতো। মেহের আমতা আমতা করে জবাব দেয়,

সকালে গোসল করা আমার অভ্যাস তাই করেছি।

~ওওওও আচ্ছা আচ্ছা।

রুদ্র এসে মেহেরকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই মেহের চোখ বড় বড় করে আয়নায় রুদ্রর দিকে তাকায়। রুদ্রর ছোয়ায় মেহেরকে কাপতে দেখে রুদ্র নিঃশব্দে হেসে মেহেরের কানে ফিসফিস করে বলে,

শীত করছে? কম্বল এনে দিবো?

মেহের মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। রুদ্র নিজ হাতে মেহের গলায় চেইন, কানে ছোট এক জোড়া দুল, হাতে চুড়ি আর নাকে নথ পড়িয়ে দিয়ে কতক্ষন মুগ্ধ দৃষ্টিতে মেহেরের দিকে চেয়ে থাকে।

~এখন থেকে এইগুলা পড়ে থাকবা। কালকে রাতে দিতে ভুলে গিয়েছিলাম তাই এখন দিলাম।

মেহের ঘাড় কাত করে 'আচ্ছা' বলতেই রুদ্র আলতো হাসে। মেহেরের দুগাল টেনে বলে,

আমার বউ। ইশ! আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না এই পিচ্চি মেহেরজান আমার বউ।

মেহের চেয়ে থাকে রুদ্রর দিকে। একবার পিচ্চি বলছে আবার বউ বলছে। অনার্সে পড়ুয়া মেয়েকে তার কাছে পিচ্চি মনে হচ্ছে! মেহের কপাট রাগ দেখিয়ে বলে,

আমি মোটেও পিচ্চি নই।

~অবশ্যই তুমি পিচ্চি। ছোটো খাটো, গুল্লুমুল্লু পিচ্চি বউ।

মেহের রেগে গিয়ে কিছু বলার আগেই রুদ্র দৌড় দিয়ে দ্রুত কাবার্ড থেকে জামা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। মেহের কপাল কুঁচকে চেয়ে থাকে। রুদ্রর যাওয়া দেখে মেহেরের হাসি পেলেও রুদ্র তাকে পিচ্চি বলেছে ভেবেই গাল ফুলিয়ে বসে থাকে মেহের।

~~~

চলবে~

(দেরি করে গল্প দেওয়ায় আবার কেউ মেহেরের মতো গাল ফুলিয়ে থাকবেন না।)