গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৪৫ সমাপ্ত

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 45


🍂🍂🍂


এক রাশ বিরক্তি নিয়ে মিটিং এ বসে আছে রুদ্র। সামনেই আয়মান প্রেজেন্টেশন দিচ্ছে কিন্তু তাতে বিন্দু মাত্র মনোযোগ নেই তার। বসে বসে শুধু মিটিং শেষ হওয়ার অপেক্ষা করছে সে। আপাতত মেহেরের ওপর তার বেশ রাগ লাগছে। সে আজ অফিসে আসবে না জানিয়েও দিয়েছিল। কিন্তু আসতেই হলো।


🍂সকালে 🍂


~ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং থাকতেও আপনি অফিসে যাবেন না কেনো?

রুদ্র টিভির থেকে মনোযোগ সরিয়ে মেহেরের দিকে তাকালো। পুনরায় টিভিতে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে বললো,

ভালো লাগছে না, যাবো না।

মেহের তেতে উঠে বললো,

ফাজলামো করছেন! আমার প্রেগনেন্সির খবর পেয়েছেন পর থেকে দেখছি আপনি অফিসে ঠিক মতো যেতে চাইছেন না। এভাবে করলে চলে!

রুদ্র টিভি বন্ধ করে মেহেরের দিকে ঘুরে বসলো। গাল ফুলিয়ে বললো,

তোমাকে এই অবস্থায় বাড়িতে একা রেখে যেতে মন চায় না মেহেরজান। তোমার ডেলিভারী এর ডেটও চলে আসছে। যদি দরকার পড়ে যায়? ডেলিভারি না হওয়া পর্যন্ত আমি কোথাও যাচ্ছি না।

মেহের দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। রুদ্রর গালে হাত ঠেকিয়ে বললো,

আমার কিছু হবে না রুদ্র। আপনি প্লীজ আমার জন্য এভাবে কাজ ফেলে রাখবেন না। এমনিও আমি বাড়িতে একা না। মামনি, বাবা, দিয়া, স্নেহা তো আছেই। আবার আপনি অফিসে গেলে তীব্র ভাইয়াও বাড়িতে চলে আসে। কাব্য আহিল ও রোজ বিকেল হতেই দেখা করতে আসে। আপনি অযথা চিন্তা করবেন না। আমার কাছে সবাই ই আছে।

~সবাই থাকলেও আমি তো নেই। মেয়েদের কাছে পৃথিবীর সবার কাছে থাকা এক দিকে আর তার স্বামীর কাছে থাকা এক দিকে। এদিকে আমি থাকতে চাইছি আর তুমি ঠেলে দূরে পাঠাচ্ছে কেনো?

রুদ্রর গাল ফুলানো দেখে এবার বেশ হাসি পাচ্ছে মেহেরের। সত্যিকারের ভালোবাসা নাকি এ যুগে খুজে পাওয়া দুঃষ্কর তবে সে কি করে রুদ্রর মত পাগল প্রেমিক পেয়ে গেলো? রুদ্রর পাগলামি দেখে ভালো লাগলেও ডেলিভারি এর কথা মনে হলে তার মনেও খুব ভয় হয়। যদি তার কিছু হয়ে যায়? মেহের নিজের মনকে বুঝালো এমন কিছুই হবে না, সব ঠিক হবে। রুদ্রকে অনেক বুঝিয়ে অবশেষে অফিসে পাঠাতে সক্ষম হলো মেহের।


🍂বর্তমানে🍂


মিটিং এর মাঝে রুদ্রর ফোনটি বেজে উঠায় সকলেই তার দিকে তাকালো। মিটিং এর সময় সবার ফোন সাইলেন্ট রাখতে হবে এটা রুদ্রর ই বলা নিয়ম আর আজ সে নিজেই এই নিয়ম ভঙ্গ করছে! বেশ ভাবার বিষয়! রুদ্র দেখলো স্ক্রিনে তীব্রর নাম জ্বলজ্বল করছে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বললো,

সরি এভরিওয়ান, আজকের মিটিংটা এখানেই শেষ করা লাগছে। খুব শীঘ্রই মি. হাসান আপনাদের মিটিংয়ের নেক্সট ডেট জানিয়ে দিবে।

রুদ্রর কথায় সকলেই চুপচাপ রুম থেকে বিদায় নিলো। রুদ্র কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে তীব্রর তটস্থ কণ্ঠস্বর,

রুদ্র! রুদ্র জলদি আয়মানকে নিয়ে হাসপাতালে আয়। আমরা মেহেরকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি।

ওপাশ থেকে মেহেরের চিৎকার, আর্তনাদ স্পষ্ট শুনতে পেলো রুদ্র। রুদ্রর বুক ধকধক করছে। প্রিয় মানুষটাকে হারানোর ভয় জেকে ধরছে। এই মুহূর্তে মেহের হয়তো নিজের পাশে তাকেই খুঁজছে। রুদ্র আয়মানকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

________________________________


হাসপাতালে আসতেই তীব্রর কথা মত অপারেশন থ্রিয়েটারের কাছে এসে দাঁড়ালো রুদ্র। রুদ্রর চোখে মুখে ভয় স্পষ্ট। রুদ্রকে দেখতেই তীব্র এগিয়ে এলো। রুদ্রকে আশ্বাস দিয়ে বললো,

ভয় পাস না। মেহের আর বেবি দুজনেই সুস্থ হবে ইন শাহ্ আল্লাহ।

রুদ্র মাথা নেড়ে সায় জানালো। একজন নার্স এসে মেহেরের গার্ডিয়ানকে ডাকতেই রুদ্র দৌড়ে তার কাছে গেলো। রুদ্র মেহেরের অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করলে নার্স জানালো,

আপনারা দ্রুত রক্তের ব্যবস্থা করুন।

মেহের আর আয়মান এর রক্ত এক গ্রুপের হওয়ায় আয়মানই রক্ত দিতে চলে গেলো। অন্যদিকে মেহেরের অবস্থা ক্রিটিক্যাল ভেবে নিয়েই রুদ্র থম মেরে দাড়িয়ে রইলো। তীব্র গিয়ে রুদ্রর কাধে হাত রাখতেই রুদ্র জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়লো তীব্রর ওপর। হটাৎ এমন হওয়ায় তীব্র টাল সামলাতে না পেরে রুদ্রকে নিয়েই পড়লো পাশে থাকা চেয়ারের ওপর। তীব্রর অবস্থা এবার দেখার মতো। একদিকে বউ অপারেশন রুমে অন্যদিকে বউ এর টেনশনে বর বেহুঁশ। এদের কান্ড দেখে হাসবে না কাদবে বুঝে পাচ্ছে না তীব্র। অন্য দিকে দিয়া কান্না রেখে ফ্যালফ্যাল করে রুদ্রর দিকে চেয়ে আছে। এমনিই নাহয় ফাইজলামি করে বলতো রুদ্র বেহুঁশ হবে, জ্ঞান হারাবে তাই বলে সত্যি সত্যি! ঘণ্টা কয়েক পর রুদ্রর জ্ঞান ফিরলো। জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে হাসপাতালের বেড এ আবিষ্কার করে লাফ দিয়ে উঠে বসলো রুদ্র। সামনেই দিয়া আর আয়মান টাওয়ালে কিছু একটা পেঁচিয়ে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে আর রুদ্রর দিকে চেয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। আয়মানকে দেখতেই রুদ্র প্রশ্ন করলো,

আমার রুদ্রাণী কেমন আছে?

~আলহামদুলিল্লাহ্ সে এখন সুস্থ আছে। কেবিনে রেস্ট নিচ্ছে।

~আমাদের বাচ্চা? ও... ও কেমন আছে? ও সুস্থ আছে?

রুদ্রর প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আবারো মুচকি হাসলো আয়মান। আয়মানকে অকারণেই হাসতে দেখে রুদ্রর আপাতত মন চাইছে আয়মানকে এক লাথি মেরে সামনে থেকে বিদায় করতে। ধমকে বললো,

জবাব দিচ্ছিস না কেনো? আর হাসছিস কেনো? জবাব দে! আমিই যাচ্ছি ওদের সাথে দেখা করতে।

রুদ্রর ধমকে উঠতেই বাচ্চার কান্নার আওয়াজ কানে এলো রুদ্রর। মুহূর্তেই বুঝতে পারলো আয়মানের কোলে টাওয়াল পেঁচানো তারই সন্তান। আয়মান এগিয়ে এসে বাচ্চাটিকে রুদ্রর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

আপনার আর ভাবিমার ছেলে।

রুদ্রর চোখ ছল ছল করে উঠলো, কম্পনরত হাতে কোলে নিলো তার সন্তানকে। বাচ্চাটি রুদ্রর কোলে আসতেই কান্না থামিয়ে ফ্যালফ্যাল করে রুদ্রর দিকে চেয়ে রইলো। রুদ্র এক আঙ্গুল দিয়ে বাচ্চাটির গালে স্পর্শ করতেই সে খিল খিল করে হেসে উঠলো। বাচ্চাটি রুদ্রর আঙ্গুলটি তার ছোট্ট হাতে চেপে ধরলো। রুদ্র মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলো তার সন্তানের দিকে। তার আর মেহেরের সন্তান, তাদের অস্তিত্ব।

~কিছুক্ষণের মধ্যেই ভাবিমার জ্ঞান ফিরবে। আপনি যাবেন না?

রুদ্র ফট করে উঠে দাড়ালো। হাসি দিয়ে বললো,

যাবো না কেনো? অবশ্যই যাবো।

________________________________


মেহের বেড এ হেলান দিয়ে বসে আছে। সামনের সোফায় মেহরিশ, তিথি, আর মেহেরের নানি বসে আছে। মেহেরের নানি বেবিকে কোলে নিয়ে নানান কথা বলছে, আর তিথি আর মেহরিশ আড্ডায় মশগুল। অন্যদিকে মেহেরের পাশের সিটে রুদ্র বসে আছে আর তার পাশে দাড়িয়ে আয়মান ফোন টিপছে। মেহের প্রশ্ন করলো,

বেবির কানে আযান দেওয়া হয়েছে?

রুদ্র ঘাড় ঘুরিয়ে আয়মানের দিকে চোখ পিট পিট করে তাকালো। আয়মান ফোনেই দৃষ্টি স্থির রেখে ঠোঁট চেপে হাসছে। দিয়া ফল কাটতে কাটতে বললো,

আয়মান আর তীব্র ভাইয়া দুজনের মধ্যে কে আগে আযান দিবে তা নিয়ে ঠেলা ঠেলি করছিলো। শেষে বাবা ওনাদের ঠেলাঠেলি থামাতে নিজেই আযান দিলো। আযান দিতে না পারায় এই নিয়ে আরও টানা ১৫ মিনিট একে অপরকে খুঁচিয়েছে এরা।

দিয়ার কথা শুনে হাসলো মেহের। রুদ্রকে বললো,

আপনি আযান দিতে চাননি?

মেহেরের প্রশ্নে দিয়া ফিক করে হেসে দিলো। মেহের তাকাতেই দিয়া বললো,

ভাইয়া হুশ এ থাকলে না আযান দিবে। তোর রক্ত লাগবে শুনেই ভাইয়া জ্ঞান হারিয়েছে।

মেহের অবাক হয়ে তাকালো। রুদ্র মাথা নিচু করে বসে রইলো। রুদ্রর কোলে তাদের ছেলেকে দিয়ে বেরিয়ে এলো রুদ্র বাদে সকলেই। স্বামী স্ত্রী একান্ত কিছু সময় কাটাক, কথা বলুক।

~আমি আজ খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

বাচ্চার গালে নিজের হাত ছুঁয়ে শান্ত কণ্ঠে বললো রুদ্র। মেহের চুপ করে ওদের দিকে চেয়ে রইলো। রুদ্র আবারো বললো,

আমরা আর বাবু নিবো না। প্রতিবার তোমার লাইফ রিস্ক নেওয়া দেখতে পারবো না আমি। এবারই মনে হচ্ছিলো জান হাতে নিয়ে ঘুরছি। পরবর্তীতে মরে না যাই।

মেহের রুদ্রর মুখ চেপে ধরে বললো,

ইশ! এসব কি কথা!

রুদ্র আলতো হাসলো। মেহেরের ললাটে অধর ছুঁইয়ে বললো,

ধন্যবাদ মেহেরজান। আমাকে জীবনের এতো সুন্দর একটা অনুভূতির সাথে পরিচিত করানোর জন্য।

মেহের হাসলো। রুদ্রর বুকে মাথা গুঁজে বসে রইলো অনেকক্ষণ। এই যেনো তার শান্তির স্থান, তার ভরসার স্থান।

 

🍂 আট বছর পর 🍂


সকলেই আড্ডায় ব্যস্ত। আজ মেহেরের আর রুদ্রর বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে পুরো পরিবার আর বন্ধুরা সকলে এক হয়েছে। অনুষ্ঠান শেষে সকলেই আড্ডা দিতে বসলো। আড্ডার মূল টপিক হচ্ছে তাদের অতীতের স্মৃতি। সময়ের সাথে সাথে পাল্টেছে অনেক কিছু। দিয়া আর আয়মানের সাড়ে চার বছরের মেয়ে আয়ানা। কাব্যর এখন বেশির ভাগ সময়ই কাজের ক্ষেত্রে দেশের বাহিরে থাকা হয়। নিজের প্রিয় পাত্রীকে ইতিমধ্যে বাড়িতে পরিচয় করিয়েছে সে। খুব শীঘ্রই হয়তো ওদের বিয়ে হবে। আর আহিল! সে বাবা মাকে এতো বছর পর কাছে পেয়েছে বলে বিদেশে স্কলারশিপ পেয়েও যায়নি। পড়ালেখা শেষে বর্তমানে বাবার ব্যবসায় ই সামলাচ্ছে সে। আহিলের পছন্দের মেয়ের সাথেই আগামী মাসে বিয়ে। স্নেহা আর তীব্র বড় ছেলে তাজওয়ার আর ছোট মেয়ে স্নিগ্ধাকে সুশিক্ষা কিভাবে প্রদান করা যায় তা নিয়ে চিন্তায় মগ্ন। মেহেরের নানা নানীর মৃত্যুর পর রুদ্র আর আহমেদ ভিলার সকলেই জোর করে মেহরিশকে তাদের সাথে আহমেদ ভিলায় নিয়ে আসেন। মিসেস তিথি, রেদোয়ান, আর মেহরিশ এখন গল্প গুজব আর নাতি নাতনীদের সাথে খেলাতেই দিন পার করেন। রুদ্র আর মেহের! রুদ্রর ভালোবাসা বিন্দুমাত্র কমেনি মেহেরের জন্য। তাদের ভালোবাসা যেনো সময়ের সাথেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে তো প্রতিদিন, প্রতিক্ষণে, বার বার প্রেমে পড়ে তার প্রেয়সীর। এতো বছর পরেও এখনো অপলক চেয়ে থাকে তার রুদ্রাণীর পানে। হৃদযন্ত্রটি যেনো বার বার চিৎকার করে বলে,

তুমি শুধুই #আমার_রুদ্রাণী।


________________________________


কোমড় এ হাত ঠেকিয়ে পেছনে ঘুরে দাঁড়াতেই একটা বাচ্চা মেয়ে ফোকলা দাতে হেসে বললো,

~লুদলাণী আনতি! তোমাতে থোতো তাততু দাকতে।

আয়ানার কথা শুনে ফিক করে হেসে উঠলো মেহের। আয়ানাকে কোলে নিয়ে ঘরে এসেই রুদ্রর উদ্দেশ্যে ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বললো,

আপনাকে কতবার বলেছি ওদের আমাকে রুদ্রাণী ডাকতে বলবেন না!

রুদ্র ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বললো,

আমি শিখিয়েছি? দেখলি রওনক তোর মা আমাকে কত বড় অপবাদ দিলো!

~নিজের মিথ্যায় আমার ছেলেকে সাক্ষী বানালে আজকে আপনার খবর আছে।

রওনক এগিয়ে গিয়ে মেহেরের সামনে দাড়ালো। মেহেরের মতো কোমড় এ হাত রেখে বললো,

এই পিচ্চির কথায় বিশ্বাস করো রুদ্রাণী আম্মু!  এই পিচ্চি তো কি বলতে কি বলে ফেলে।

মেহের আয়ানাকে নামিয়ে রওনককে কাছে ডাকলো। রওনক কাছে যাবে না বললে মেহের চোখ গরম করে তাকায়। রওনক কাছে যেতেই তার কান টেনে বলে,

বজ্জাত ছেলে! বাবার মতো ফাজিল হয়েছিস! নিজে পিচ্চি হয়ে আরেকজনকে পিচ্চি বলিস।

রওনক কান ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,

আহ! আম্মু! ও তো আমার থেকে সাড়ে তিন বছরের ছোট। তাহলে ও তো পিচ্চিইইইই!!!

~ইশ! কেমন দজ্জাল মহিলার মত চেপে ধরেছে আমাদের ছেলে! দেখো দেখছি! (রুদ্র)

মেহের চোখ গরম করে তাকাতেই রুদ্র ওদের হাতে দুটো চকলেট ধরিয়ে ওদের নিচে পাঠিয়ে দিলো রুদ্র। মেহের রাগান্বিত কণ্ঠে বললো,

আপনি ওদের রুদ্রাণী ডাকতে শিখাচ্ছেন কেনো!

~বাচ্চাদের মুখে তোমার এই নামটা শুনতে অনেক কিউট লাগে তাই।

রুদ্র মেহেরের কোমড়ে হাত ছোঁয়াতেই মেহের  নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,

কি করছেন কি! ছাড়ুন!

রুদ্র ছাড়লো না। আরেকটু কাছে টেনে বললো,

ভালোবাসি রুদ্রাণী।

মেহের লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে তাকালো রুদ্রর দিকে। রুদ্র মুচকি হাসলো। মেহেরের হাত ধরে বারান্দায় গিয়ে বসলো সেই প্রথম রাতের মতোই। আজও আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে। রুদ্র মেহেরের কাধে মাথা রেখে বসে রইলো দীর্ঘক্ষণ। লহুস্বরে ডেকে উঠলো,

রুদ্রাণী!

~হু?

~মাঝে মাঝে ভাবতেই অনেক ভালো লাগে এই তুমি পুরোটাই আমার, একান্তই আমার।

মেহের লজ্জায় চুপ করে রইলো। রুদ্র আবারও বললো,

ভালোবাসি।

মেহেরকে এবারও চুপ থাকতে দেখে রুদ্র বললো,

বলবে না কিছু?

~আমিও

~আমিও কি?

মেহের রুদ্রর বুকে মাথা রেখে বললো,

ভালোবাসি আমার রুদ্রকে।

মুহূর্তেই রুদ্রর ঠোঁটে এক বিস্তর হাসি ফুটে উঠলো। মেহেরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

ভালোবাসি রুদ্রাণী, #আমার_রুদ্রাণী।


~সমাপ্ত~


(ইয়ে!!! হ্যাপি এন্ডিং~~~ সম্পুর্ণ গল্পটা কেমন লেগেছে অবশ্যই জানাবেন। গঠনমূলক কমেন্টস করবেন। খুব শীঘ্রই নতুন গল্প নিয়ে ফিরবো ইন শাহ্ আল্লাহ। আমাকে আবার কেউ ভুলে যাবেন না। হ্যাপি রিডিং~)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৪৪

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 44


🍂🍂🍂


গালে হাত ঠেকিয়ে রুদ্রকে দেখছে মেহের। গত আধঘন্টা যাবৎ রুদ্র সারাঘর জুড়ে পায়চারি করছে। পায়চারি বললে ভুল হবে। সে তো রীতিমতো দৌড়াদৌড়ি করছে।

~এভাবে দৌড়াদৌড়ি করছেন কেনো?

মেহের প্রশ্ন কর্ণপাত হতেই দাড়ালো রুদ্র। একবার মেহেরের দিকে চেয়ে আবারো পায়চারি করতে করতে বললো,

আমি দৌড়াচ্ছি না হাঁটছি।

মেহের ঠোঁট বাঁকিয়ে প্রশ্ন করলো,

এটাকে হাঁটা বলে? তবে দৌড় কাকে বলে?

রুদ্র আবারো দাড়ালো। মেহেরের দিকে চেয়ে রইলো কিছু মুহূর্ত। মেহেরও রুদ্রর দিকে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে তাকালো। রুদ্র দ্রুত পায়ে মেহেরের কাছে এসে বসলো। মেহেরের দু হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে তাতে ঠোঁট ছোঁয়ালো। মেহের চুপচাপ রুদ্রর কার্যক্রম দেখছে। ইদানিং অতিরিক্ত চিন্তায় মগ্ন থাকতে থাকতে লোকটা নিজের যত্ন নিতেই ভুলে গেছে। দিনে দিনে যেনো রুদ্রের চোখে মুখে এক প্রকার অসহায়ত্বের ছাপ ফুটে উঠেছে। রুদ্র অনুযোগের সুরে বললো,

আমার খুব ভয় করছে মেহেরজান! তুমি প্লীজ নিজের যত্ন নিবে। তুমি খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো না করলে আমার খুব চিন্তা হয়। তোমাকে ছাড়া আমার পক্ষে ভালো থাকা সম্ভব না। তুমি অন্তত আমার জন্য হলেও সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে বেচেঁ থাকার চেষ্টা করবে।

মেহের রুদ্রের কপালে ছড়িয়ে থাকা এলোমেলো চুলগুলোকে হাত দিয়ে নেড়ে আরেকটু এলোমেলো করে দিলো। রুদ্র চোখ বুজে নিতেই খিল খিল করে হেসে উঠলো মেহের। বললো,

আপনি এতো চিন্তা করেন কেনো সবসময়? কিছু হবে না আমার।

রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেহেরের কোলে মাথা রাখলো। মেহের পেটে কান পেতে বললো,

শোনো বাচ্চা! আমি সব থেকে বেশি তোমার আম্মুকে ভালোবাসি। তাই পৃথিবীতে আসার সময় তোমার আম্মুকে বেশি কষ্ট দিবে না। নাহলে কিন্তু আব্বু ভীষণ রাগ করবে তোমার সাথে। তখন কিন্তু আর কোলে নিবো না।

মেহের আবারো খিল খিল করে হেসে উঠলো। রুদ্র মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইলো তার প্রেয়সীর পানে। একটু গলুমলু হওয়ায় আগের থেকেও অনেক বেশি সুন্দর লাগে এখন মেহেরকে তার কাছে। মেহের ভ্রু নাচিয়ে "কি?" জিজ্ঞেস করতেই রুদ্র মাথা নাড়িয়ে "কিছু না" বুঝালো।


.


মেহের একটু নড়ে বসতেই রুদ্র ধড়ফড়িয়ে এসে মেহেরের কাছে বসলো। বিচলিত হয়ে বললো,

কি হলো? ব্যাথা করছে? হাসপাতাল নিয়ে যাবো?অনেক বেশি খারাপ লাগছে? কথা বলছো না কেনো? জবাব দাও!

মেহের বিরক্তি নিয়ে তাকালো। গত কয়েকমাসে এক প্রশ্ন শুনতে শুনতে কান যেনো ঝালাপালা হয়ে গেলো তার। একটু নড়েচড়ে বসলেই ভাবে মেহেরের পেইন শুরু হয়ে গেছে। মেহেরের বিরক্তিমিশ্রিত চাহনী দেখতেই চুপ করে উঠে ঘরে চলে গেলো রুদ্র। অন্যদিকে আহিল আর কাব্য রুদ্রর এ অবস্থা দেখে গড়াগড়ি খেয়ে হাসছে, পাশে বসে স্নেহা আর তিথি বেগমও ঠোঁট চেপে হাসছে। দিয়া এক প্লেট ফল মেহেরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে তার পাশে বসে জানতে চাইলো,

হাসছিস কেনো তোরা?

কাব্য তাদের হাসার কারণ বলতেই আড়চোখে একবার মেহেরের দিকে তাকালো দিয়া। বললো,

ওইদিন এই ফাজিল মাইয়া! রুদ্র ভাইয়ারে ভয় দেখানোর জন্য উফফ বলে উঠছে। আর রুদ্র ভাইয়া আমাকে ধমকাইছে। আমি নাকি ওর খেয়াল রাখি নাই ঠিক মতো।

মেহের ফিক করে হেসে উঠতেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো দিয়া। চেঁচিয়ে বললো,

হাসবি না ফাজিল! তোর জন্য শুধু শুধু বকা খাইছি।

মেহের তাও থামলো না। হাসির রেশ আরেকটু বাড়িয়ে দিলো। কাব্য বললো,

আর যা ই বলিস না কেন! রুদ্র ভাই কিন্তু মেহেরকে নিয়ে হেব্বি পসেসিভ।

~আই এগ্রি (দিয়া)

~ধমক খাওয়ার পর এগ্রি না করে উপায় আছে?

আহিলের কথায় আরো একবার হাসির রোল পড়ে গেলো সারাঘর জুড়ে।


🍂🍂🍂


~এই নে ধর।

~আবার খাবার?

মেহের গাল ফুলিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো। বাটিতে থাকা আম ভর্তা দেখেই চোখ চিক চিক করে উঠলো। বাটিটা ছো মেরে দিয়ার হাত থেকে নিয়ে খেতে খেতে বললো,

এই বিকেলের সময় কই পেলি? ইশ! আমার আসলেই খেতে ইচ্ছে করছিল।

দিয়া আলতো হেসে মেহেরের সামনে বসলো। মেহেরের পেটে হাত ছুঁয়ে বললো,

আগে বললেই হতো, এনে দিতাম। আচ্ছা ভাগ্নি হবে নাকি ভাগ্নে? ভাগ্নি হলে খুব ভালো হবে।

মেহের হাসলো। বললো,

তুই কবে বাবু নিবি?

দিয়া চোখ তুলে মেহেরের দিকে তাকালো। মিহি স্বরে বললো,

এখন না। আয়মান বলেছে আরো ২ বছর পর নিবে। রুদ্র ভাইয়া আর তীব্র ভাইয়াকে দেখে নাকি তার এতো জলদি বাবু নেওয়ার সখ জানালা দিয়ে পালিয়েছে। ভাইয়াদের মতো সে নাকি সাহসী না। প্রেগনেন্সির খবর পেলেই নাকি সে জ্ঞান হারাবে। তার আর বেহুঁশ হওয়ার জন্য ডেলিভারি পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগবে না।

মেহের জোরে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে তাও যেনো তার হাসি থামছে না। অনেক কষ্ট হাসি আটকানোর চেষ্টা করলো। হটাৎ ই তার চোখের কোণে অশ্রুর অস্তিত্ব দেখতে পেলো দিয়া। বিচলিত হয়ে মেহেরের গাল ধরে বললো,

কাদছিস কেনো?

মেহের হাসি থামালো। হাতে থাকা বাটিটা পাশে রেখে দিয়ার হাত ধরে বললো,

বাবু হওয়ার সময় রিস্ক অনেক থাকে। মা বাঁচে নাকি মরে ঠিক নেই। আমার যদি কিছু...

দিয়া মেহেরের মুখ চেপে ধরলো। কড়া গলায় বললো,

এসব কি ধরনের কথা! ঠাটিয়ে একটা লাগবো।

মেহের দিয়ার হাতটি সরিয়ে বললো,

আমার কথা শেষ করতে দে দিয়া।

দিয়ার কাতর চাহনী উপেক্ষা করে আবারো বললো,

আমার কিছু হয়ে গেলে আমার বাচ্চাকে আর তোদের ভাইয়াকে তোরা দেখে রাখিস। তোর ভাইয়া আমি বলতে পাগল। আমার কিছু হয়ে গেলে সে যেনো নিজের ক্ষতি না করে। আমি চলে গেলে আমার সন্তানের মাঝেই আমাকে খুঁজে নিবি তোরা।

দিয়ার চোখ ছলছল করে উঠলো। মেহের বিছানায় শুয়ে বললো,

মন খারাপ করার কিছু নেই। আমার কিছু হবে না। যা ঘরে যা। আমি একটু ঘুমাবো।

দিয়া প্রতিবাদী কণ্ঠে বললো,

কেনো তোর ঘরে থাকলে কি হবে?

~ঐযে ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাদছিস। কান্নার আওয়াজে ঘুম আসবে না।

দিয়া দ্রুত চোখ মুছে বললো,

আমি মোটেও কাদঁছি না।

মেহের মুচকি হাসলো। এই পরিবার, বন্ধুবান্ধব সকলকে পেয়ে নিজেকে বেশ ভাগ্যবতী মনে করে। মাঝে মাঝে নিজের মধ্যেও ভয় কাজ করে যদি ডেলিভারির সময় তার কিছু হয়ে যায়? তখন রুদ্র আর তার বাচ্চার কি হবে? তাকে হারানোর শোকে রুদ্র কি তার বাচ্চার থেকেই মুখ ফিরিয়ে নিবে? নাকি মেহেরের শেষ চিন্হ বলে বুকে আগলে রাখবে?

~~~

চলবে~

(এই! এই! গঠনমূলক কমেন্ট না করলে নায়িকাকে পরলোকে পার্সেল করে দিবো বলে দিচ্ছি। তখন কিন্তু বলতে পারবেন না যে স্যাড এন্ডিং দিলাম কেনো। অবশ্যই গঠনমূলক কমেন্টস করবেন। আর হ্যা, হ্যাপি রিডিং~)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৪৩

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 43


🍂🍂🍂


দিয়ার কল পেতেই দ্রুত মেহেরের বাড়িতে এলো রুদ্র। বাড়িতে ঢুকতেই মেহরিশ বেগমের সাথে দেখা হলো রুদ্রর। তিনি শীতল কণ্ঠে রুদ্রকে মেহেরের ঘরে যেতে বললে রুদ্র এক মুহূর্ত দেরি না করেই মেহেরের ঘরের দিকে পা বাড়ালো। ঘরে ঢুকতেই দেখতে পেলো মেহেরের একপাশে দিয়া আর অন্য পাশে মেহেরের নানি বসে আছে। রুদ্রকে দেখতেই মেহেরের নানা নানি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। দিয়া গেলো না। সে মেহেরের পাশেই বসে রইলো। রুদ্র গিয়ে মেহেরের পাশে বসলো। অতি সন্তপর্নে মেহেরের হাতটি নিজের হাতে নিলো। মেহেরের মলিন মুখখানার দিকে তাকাতেই বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো তার "এক দিনেই নিজের কি হাল করেছে মেয়েটা!" আনমনেই বলে উঠলো সে। দিয়ার দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জিজ্ঞেস করলো,

ওর এ অবস্থা কি করে হলো?

দিয়া মেহেরের দিকে চেয়ে শুকনো ঢোক গিললো। জিভ দিয়ে নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,

বাড়িতে আসার কিছুক্ষণ পরই ঘুমাবে বলে ঘরে এসেছে। কড়াভাবে বলেছে কেউ যেনো ঘুমে ডিস্টার্ব না করে। সারাদিন বাহিরে না আসায় ভেবেছিলাম ঘুমিয়ে আছে। রাতের ডিনার নিজেই উঠে খেয়ে নিবে ভেবে খাবার টেবিলে সাজিয়ে রেখে গিয়েছিলাম। সকালে উঠে দেখি খাবার যেমন রেখে গিয়েছিলাম তেমনই আছে। ও কাল থেকে কিছুই মুখে দেয়নি বুঝতে পেরেই দরজা ধাক্কাচ্ছিলাম। এক্সট্রা চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখলাম বারান্দায় বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছে।

দিয়ার সব কথা মেহেরের দিকে চেয়ে থেকেই শুনলো রুদ্র। জানতে চাইলো,

ডক্টর কি বলেছে? ও আর... ও আর আমার বাচ্চা ঠিক আছে?

দিয়া উত্তপ্ত গলায় প্রশ্ন ছুড়লো,

প্রেশার লো হয়ে গিয়েছিলো, চিন্তার কোনো বিষয় নেই। কিন্তু ওদের খেয়াল কি আপনার আছে?

রুদ্র কপাল কুঁচকে তাকাতেই দিয়া আবার বললো,

বউ যে বাড়ি থেকে রাগ করে চলে এসেছে তার খবর রাখেন? মেয়েটা আপনাকে কতবার কল দিয়েছে? একবারও ব্যাক করার সুযোগ পাননি?

রুদ্র জবাব দিলো না। মেহেরের হাতে নিজের ঠোট চেপে বসে রইলো। মেহের নড়েচড়ে উঠতেই রুদ্র দিয়াকে চলে যেতে বললো। মেহেরের জ্ঞান ফিরলে সে সামনে রুদ্রকে দেখেই এক লাফ দিয়ে উঠে বসে। রুদ্র মেহেরকে বাধা দিয়ে বললো শুয়ে থাকতে। মেহের শুনলো না, অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে বসে রইলো। রুদ্র নরম গলায় বললো,

ঠিক আছো? এ অবস্থা কেনো করলে নিজের?

মেহের জবাব দিল না। রুদ্র কপট রাগ দেখিয়ে বললো,

শুনেছি বউ নাকি রাগ করে বাপের বাড়ি চলে এসেছে? এতো সাহস এলো কি করে?

মেহের রুদ্রর দিকে তাকালো। নির্মল কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,

আপনি এই বাচ্চাটা চাইছেন না রুদ্র? আপনি কি আমাকে এবর্শন করতে জোর করবেন?

রুদ্রর অবাক চাহনিকে উপেক্ষা করে মেহের আবার বললো,

আমি এই বাচ্চাটা রাখতে চাইছি রুদ্র। আপনার যদি এতে আমাকে ছেড়ে দিতে ইচ্ছে হয় তবে...

~তবে?

রুদ্রর গম্ভীর কণ্ঠ। মেহের কম্পিত গলায় বললো,

আমি মানা করবো না। আপনি চাইলেই আমাকে ডিভোর্স দিতে পারেন। আমি সাইন করে দিবো।

রুদ্র হটাৎ ই ভয়ানক রেগে গেলো। মেহেরের গাল খুব শক্ত করে চেপে ধরলো। মেহের ভয় পেয়ে গেলো রুদ্রর এই রূপে। কিছুক্ষন আগের শান্ত রুদ্রটা মুহূর্তেই এমন ভয়ানক রূপ নিলো কেনো? সে তো খারাপ কিছুই বলেনি। মেহেরের চোখের কোনে জমে থাকা অশ্রুকেও উপেক্ষা করলো রুদ্র। কেনো এই চোখের পানি দেখে নরম হবে? এতো ভালোবাসার পরও আজ আবার এই মেয়ে বলছে ডিভোর্স এর কথা? এ যেনো তার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করাতে সক্ষম হলো। রাগে রুদ্রর চোখেও পানি জমা হলো। মেহেরকে চেপে ধরে হিসহিসিয়ে বললো,

কি বললেন মেহেরীন? ডিভোর্স? হ্যা? ডিভোর্স বলেছেন আপনি? আপনার সাহস কি করে হলো এই শব্দগুলো উচ্চারণ করার? আর কি বললেন? আমি... আমি আমার বাচ্চা মেরে ফেলবো?

মেহের ভয়ে চোখ চেপে বন্ধ করে নিলো। রুদ্রকে সে ভয় পাচ্ছে। রুদ্রর এতো রাগী রূপ সে বিয়ের সময়ও দেখেনি। ভীতুস্বরে বললো,

ছাড়ুন রুদ্র! আমার ব্যাথা লাগছে। রুদ্র তৎক্ষণাৎ তার গাল ছেড়ে দিলো। নিজের মাথার চুল দু হাতে টেনে ধরলো। উন্মাদের মতো বললো,

আপনার ব্যাথা লাগছে? আর আমার?

মেহেরের ডান হাত নিজের বুকের বা পাশে চেপে ধরে বললো,

আমার যে এখানে ব্যাথা করছে? সেই ব্যাথা আপনার নজরে আসছে না?

মেহের নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলেও রুদ্র হাত ছাড়লো না। শক্ত করে চেপে ধরলো নিজের বুকের সাথে। চিৎকার করে বললো,

আপনি নিজেই বলেছিলেন আমার সাথে নতুন করে জীবন শুরু করবেন। এখন? এতো মাসেও আমায় চিনতে পারলেন না রুদ্রাণী? এই! এই মেয়ে! আমার প্রতি মায়া হয় না?

রুদ্রর চিৎকারে কেপে উঠলো মেহের। কান্না আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেলো। রুদ্র করুন স্বরে বললো,

আমাকে এতটাই খারাপ মানুষ মনে হয় আপনার? আমি? আমি আমার সন্তান মারতে বলবো আপনাকে? আমার সাথে কোনো প্রকার কথা না বলে আপনি বাড়ি ছেড়ে চলে এলেন? আমার কথা আপনার ভাবনায়ও এলো না? আপনাকে ছেড়ে দিবো আমি? ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিয়ে করেছি আমি?

মেহেরের জবাব না পেয়ে যেনো আরো রেগে গেলো রুদ্র। ধমকে উঠে বললো,

জবাব দিচ্ছেন না কেনো?

মেহের হটাৎই রুদ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। বুকে মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠলো।

~সরি রুদ্র। প্লীজ আমাকে ক্ষমা করে দিন। আর কক্ষনো এমন করবো না।

রুদ্র মেহেরকে দূরে সরানোর চেষ্টা করলে মেহের আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রুদ্রকে। রুদ্র ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে,

ছাড়ুন আমাকে! আর কখনো আপনার কাছে ভালোবাসার দাবি নিয়ে আসবো না। চলে যাবো আমি। ছাড়ুন!

মেহের বুক থেকে মুখ তুলে রুদ্রর দিকে তাকালো। নাক টানতে টানতে বললো,

আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেন আপনি?

রুদ্র মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললো,

যে আমাকে ছাড়া থাকতে পারে তাকে ছাড়া আমিও থাকতে পারবো। না পারলে নিজেকে মেরে...

মেহের রুদ্রর মুখ চেপে ধরলো। পুনরায় রুদ্রর বুকে মাথা গুঁজে বললো,

এসব কথা কখনোই বলবেন না রুদ্র। আমার কষ্ট হয়।

~আমার কষ্ট হয় না? আমার চোখ দেখেছেন? কাল সারারাত ঘুমাইনি। আজ বিকেলেই আপনাকে নিয়ে যেতে আসতাম। প্রয়োজন পড়লে এখানেই থেকে যেতাম তাও আপনাকে ছাড়া থাকতাম না। আর আপনি? আমাকেই ছেড়ে দেওয়ার প্ল্যান করছিলেন। আপনি ছাড়ুন আমাকে!

মেহের চেঁচিয়ে বললো,

মাফ চাইছি তো! এতো রাগ করলে দেখবেন আমাদের বাচ্চাকে পৃথিবীতে আনার সময় আপনার প্রতি রাগ করে আমি সত্যি সত্যি চলে গেছি। তখন বুঝবেন মজা।

রুদ্র মেহেরকে জড়িয়ে ধরতেই মেহের মুচকি হাসলো। রুদ্র মাথা নেড়ে বললো,

এমন কথা কখনো বলবে না বউ, কখনোই না। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। আমার কষ্ট হয়।

মেহের হাসলো। রুদ্রর বুক থেকে মাথা তুলে বললো,

রাগ কমেছে?

রুদ্র জবাব দিলো না। মেহেরকে জড়িয়ে ধরেই বসে রইলো বেশ অনেক সময়। রুদ্র ধীর কণ্ঠে  বললো,

আমি কখনোই আমার বউ বাচ্চাকে কষ্ট পেতে দিবো না রুদ্রাণী। আমার বাচ্চাকে আমি কি করে মারতে বলবো? এই বাচ্চা তোমার আর আমার অংশ। আমি তোমাকে নিয়ে অবশ্যই পসেসিভ কিন্তু আমি খারাপ মানুষ কিংবা খারাপ বাবা হতে চাই না যে নিজের সন্তানের অস্তিত্ব মিটিয়ে দিতে চায়। কখনোই পারবো না আমি এমন কাজ করতে।

মেহের তৃপ্তির হাসি হাসলো। অনেক সময় পর আজ যেনো তার মনে শান্তি লাগলো। মেহের রুদ্রর থেকে তার সাথে কথা না বলার, তাকে ইগনোর করার কারণ জিজ্ঞেস করতেই রুদ্র অবাক হলো। তার মতে সে মেহেরকে ইগনোর করেনি। মেহের অভিযোগের সুরে সব জানাতেই রুদ্র হু হা করে হেসে উঠলো। পরে তার চুপ থাকার কারণও সব বুঝিয়ে বললো। মেহের নিজের কাজে নিজেই অনেক লজ্জিত বোধ করলো। কোনো প্রকার পদক্ষেপ নেওয়ার আগে তার অবশ্যই রুদ্রর সাথে বসে সময় নিয়ে কথা বলা উচিত ছিল। তবে হয়তো আজ এমন কিছুই হতো না।


🍂৬ মাস পর🍂


সকালে নাস্তার সময় আয়মান রুদ্রকে জানালো আজ অনেক ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে। সে আজ না গেলে কিছুতেই হবে না। রুদ্র যেনো আয়মানের কথা শুনলোই না। চুপ চাপ নিজে খাচ্ছে আর মেহেরকে খাইয়ে দিচ্ছে। মেহের চোখ পিটপিট করে সকলের দিকে তাকাচ্ছে। আয়মানের কথায় সকলে আয়মানের দিকে তাকালেও যাকে বলেছে সে ই তাকালো না। আয়মান হতাশার শ্বাস ফেলে মেহেরের দিকে তাকাতেই মেহের ঠোঁট উল্টে বুঝালো তার করার কিছুই নেই। নিজের ভাইকে সে পারলে নিজেই টেনেটুনে কাধে তুলে নিয়ে যাক। এই কয়েকমাসে রুদ্র যথাসম্ভব বাড়িতে থেকেই সকল কাজ করেছে। আয়মান অফিসে যাওয়ার কথা বললেই রুদ্র এমনভাবে বেকে মাথা নিচু করে বসে থাকে যেনো সে কিছু শুনেইনি। আগে রুদ্র আয়মানকে টেনে অফিসে নিয়ে যেতো আর এখন আয়মান রুদ্রকে ঠেলে ধাক্কিয়ে সাথে নিয়ে যায়। মেহের আড়চোখে রুদ্রর দিকে তাকাতেই রুদ্র এক গ্লাস দুধ মেহেরের সামনে ধরলো। মেহের মাথা নেড়ে বললো,

আমার পেটে বাবু আছে। এতো খাবার খেলে তো বাবুর থাকতে কষ্ট হবে। এই টুকু জায়গায় কি করে থাকবে? তাই এত খাবার খাওয়া উচিত না।

মেহেরের কথায় তীব্র ফিক করে হেসে উঠলো। স্নেহা তার ছেলে তাজওয়ারের গালে আঙুল ছুইয়ে বললো,

খাবারের সময়ই তোর যত বাহানা। তুই এই কয়েক মাসে কত বাহানা দিয়েছিস তা নিয়ে নির্দ্বিধায় দুই শত বা তিন শত পেজ এর একটা বই লিখে ফেলতে পারি।

দিয়া তাল মিলিয়ে বললো,

বইয়ের নাম হতো "খাবার না খাওয়ার হাজার ধরনের বাহানা"

মেহের রুদ্রর দিকে চোখ পিট পিট করে তাকাতেই রুদ্রর সাবধানতার সুরে বললো,

আমার মন গলানোর চেষ্টা করবে না। যবে থেকে শুনেছি তুমি প্রেগনেন্ট তবে থেকে এমনিই দিনে ১০/১২ বার আমার প্রেসার আপ ডাউন করে। বউ মনির ডেলিভারি দেখে আমার কলিজা এমনিই শুকিয়ে আছে। তুমি ঠিক মত না খেলে আমি নির্ঘাত হার্ট এ্যাটাক ফ্যাটাক করে বসবো মেহেরজান। প্লীজ নিজের একটু যত্ন নাও।

দিয়া স্বশব্দে হেসে উঠে বললো,

আমার মনে হয় মেহেরের পেইন উঠলে মেহেরের চিন্তায় ভাইয়াই আগে জ্ঞান হারাবে।

দিয়ার কথা শুনেই তীব্র ঘর কাপিয়ে হেসে উঠলো। দিয়াকে হাই ফাইভ দিয়ে হা হা করে হাসতে থাকলো। রুদ্র চোখ ছোট ছোট করে আয়মানের দিকে চেয়ে বললো,

তুই একবার বাবা হ। আমিও এমন খেপিয়ে খেপিয়ে এর শোধ তুলবো দেখিস। 

আয়মান রুদ্রর দিকে একবার চেয়ে রেদোয়ানের দিকে তাকালো। সকালের নাস্তায় এমন সভা রোজই বসে। এ আর নতুন কিছু নয়। আজ রুদ্রকে মিটিংয়ের জন্য অফিসে নিয়ে যেতে পারলেই যেনো বাঁচে আয়মান। সারাদিন অফিসের পেছনে ছুটতে থাকা মানুষটিকে আজকাল ঘর থেকে বের করাও বেশ দুষ্কর কাজ। কি অদ্ভুত!

~~~

চলবে~

(কেমন আছেন সবাই? অবশ্যই গঠনমূলক কমেন্টস করবেন। আপনাদের সুন্দর কমেন্টস আমাকে গল্প লিখতে উৎসাহ দেয়। হ্যাপি রিডিং~)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৪২

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 42


🍂🍂🍂


রুদ্রর কাছে যেতে সাহস পাচ্ছে না মেহের। তখন থেকে একদম চুপচাপ। মেহের অনেক চেষ্টা করেও রুদ্রর অভিব্যক্তি বুঝতে সক্ষম হলো না। রাতে মেহের ডাকলেও রুদ্র খেতে গেলো না। চুপ করে শুয়ে রইলো। না খেলে মেহের আর তার বাচ্চা অসুস্থ হয়ে যেতে পারে তাই স্নেহা জোর করে মেহেরকে খাইয়ে দিলো। মেহের না চাইতেও একটু খেয়েই ঘরে ফিরে এলো। বাড়িতে স্নেহা আর দিয়া বাদে নিজের প্রেগনেন্সির ব্যাপারে এখনও কাউকে জানায়নি মেহের। রুদ্রর মনে কি চলছে তা এখনও বুঝে উঠতে পারছে না মেহের। ঘরে এসে দেখলো রুদ্র ঘরের বাতি নিভিয়ে ঘুমিয়ে আছে। মেহের দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিজেও ঘুমাতে চলে গেলো। আজ কেনো যেনো ঘুম আসছে না মেহেরের। রুদ্রর এমন ব্যবহার খুব ভাবাচ্ছে মেহেরকে। সারা রাত এপাশ ওপাশ করতে করতেই ভোরের দিকে চোখে ঘুম নেমে এলো মেহেরের। সকালে ঘুম থেকে উঠতেই দেখলো রুদ্র পাশে নেই। ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখলো সকাল দশটা বাজে। দিয়া জানালো রুদ্র আর আয়মান খুব সকালেই আজ অফিসে চলে গেছে। মেহের মন খারাপ করে ঘরে চলে এলো। দিয়া নাস্তা করতে বললেও করলো না মেহের। ঘরে এসে রুদ্রকে বেশ কয়েকবার কল করলেও রুদ্র রিসিভ করলো না। এমনিতে প্রথম বার রিং হতেই কল রিসিভ করে নেয় রুদ্র। এবার মেহেরের কান্না পেলো। মাথায় হাত ঠেকিয়ে খাট ঘেসে বসে রইলো মেহের। গাল বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু পড়ছে। রুদ্র আগেই বলেছিলো সে বাচ্চা নিতে চায় না। মেহের তবুও নিলো। এবার কি রুদ্র আর তার সাথে কথা বলবে না? রুদ্র কি তার কাছ থেকে দূরে চলে যাবে? সে কি এই বাচ্চা নষ্ট করতে বলবে? রুদ্র কি রাগ করে তাকে ডিভোর্স দিবে? হাজারো চিন্তায় মশগুল হয়ে গেলো মেহের।

~আমি এই বাড়িতে আর থাকবো না। রুদ্র নিজেই যখন দূরত্ব তৈরি করছে তবে তাতেই সই।

মেহের বেরিয়ে আসতে চাইলো আহমেদ ভিলা থেকে। মিসেস তিথি, স্নেহা আর দিয়াকে বললো কিছু দিনের জন্য মায়ের বাড়ি যাচ্ছে। রুদ্রর কথা জিজ্ঞেস করায় মেহের থমথমে কণ্ঠে শুধালো,

তার খবর কি আমি নিয়ে বসে আছি? আমি মায়ের বাড়ি যাচ্ছি।

~আমিও আসছি তোর সাথে চল। (দিয়া)

~তুই কেনো যাবি? (মেহের)

~কেনো ওটা কি তোর রেজিস্ট্রি করা বাড়ি নাকি? হলেও আমি যাবো। তোর পারমিশন নিতে রাজি না আমি। চল চল।

মেহের চুপ করে দিয়ার পিছু পিছু গেলো। মেহেরকে একা ছাড়তে চাইছে না তা ইতিমধ্যে বুঝতে পারছে মেহের। 

________________________________


দরজা খুলে এতদিন পর নাতিনকে দেখতে পেয়ে বেশ আবেগী হয়ে পড়লেন মেহেরের নানি। মেহেরকে জড়িয়ে ধরে কান্না করলেন প্রায় আধঘন্টা। রুদ্রর কথা জিজ্ঞেস করলে দিয়া বললো,

ভাইয়া কাজে ব্যস্ত একটু। পরে আসবে।

মেহেরের নানা মেহরিশকে কল করে জানাতেই তিনি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। মেহরিশ বাড়ি এসে মেয়েকে দেখতেই ছুটে তার কাছে গেলো।

~বলে এলি না যে?

~কেনো এখন এই বাড়িতে আসতেও মানা নাকি?

তাচ্ছিল্য হাসলো মেহের।

~সে কি কথা? মানা হবে কেনো? তোরই তো বাড়ি এটা।

মেহের কিছু বললো না। এক ধ্যানে মায়ের দিকে চেয়ে রইলো। হুট করে জড়িয়ে ধরতেই মেহরিশ হকচকালো। মেহের মিহি স্বরে মা কে বললো,

মাফ করে দিও মা। আমি তোমার যোগ্য সন্তান হতে পারিনি।

মেহরিশ বুঝলো না মেয়ের কথার মানে। মিনিট দুয়েক পরেই মেহের তার মাকে ছেড়ে উঠে দাড়ালো। নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে যেতেই বললো,

আমার এক লম্বা ঘুম প্রয়োজন মা। কেউ ডিস্টার্ব করো না প্লীজ। একটু শান্তির ঘুম চাই।

মেহের যেতেই দিয়া ওদের সব জানালো। মেহরিশ এই ব্যাপারে কিছুই বললো না। মেয়ে আর মেয়ের জামাইয়ের ব্যাপারে আগ বাড়িয়ে কথা না বলাই ভালো। নিজেদের সমস্যা নিজেরা ঠিক করতে পারলেই ভালো।

_________________________________


রুদ্র মিটিং শেষে কেবিনে এসেই চেয়ারে গা এলিয়ে দিলো। টানা চারটা মিটিং করে ক্লান্ত সে। আপাতত মেহেরকে নিয়ে ভাবতে চাইছে না সে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো মেহের উনিশবার কল করেছে। রুদ্র চেয়েও কল ব্যাক করলো না। আয়মান এসে ডাক দিতেই আবারো চলে গেলো মিটিং রুমে।

_____________________________________


আজ সারাদিনেও ঘর থেকে বের হয়নি মেহের। মেহরিশসহ বাড়ির সকলেই ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার দরজা ধাক্কা দিয়ে মেহেরকে ডেকেছে। এত ঘুম তো মেহের ঘুমায় না। ঘুমালেও এক ডাকেই উঠে যায় মেহের। আজ কি তবে একটু বেশিই ক্লান্ত নাকি? দিয়া মেহেরের এমন খামখেয়ালীপানায় ক্ষুব্ধ হয়ে বললো,

এই অবস্থায় ঠিক মত খাবার না খেলে যে অসুস্থ হয়ে পড়বে তা এই মেয়ের চিন্তায় আছে? এতো ডাকছি কোনো সাড়া দেয় না। কি এক ঝামেলা!

মেহরিশ বললেন,

রুদ্রকে কল করেছিস?

স্নেহা হতাশার সুরে বললো,

দিয়েছি কিন্তু ধরলো না। আয়মানও ধরলো না। আসুক আজ এই লোক। কুরুক্ষেত্র যদি না বাধিয়েছি!

মেহরিশ হাসলেন। বিদ্রুপের কণ্ঠে বললেন,

বর পেটাস নাকি তুই? এমন ফাজিল হলি কবে থেকে?

দিয়া মাথা চুলকে হেসে বললো,

কি বলো না আন্টি! ওনাকে মারতে গেলে আমাকেই তুলে এক আছার মারবে।

মেহরিশ সশব্দে হেসে উঠলেন। দিয়াকে আশ্বাস দিয়ে বললেন ঘরে যেতে। মেহের হয়তো ঘুমিয়ে আছে। ঘুম ভাঙলে নিজেই খেতে আসবে।

____________________________________


বাড়ি ফিরে রুদ্র যখন শুনলো মেহের মায়ের বাড়িতে গেছে তখন কিছুই বললো না। নিজে মা হতে চলেছে বলে হয়তো এবার মায়ের কষ্টগুলো অনুভব করতে শুরু করেছে সে। মা মেয়েকে ডিস্টার্ব না করাই উচিত হবে ভেবে নিয়ে আর কল করলো না মেহেরকে। আয়মানের থেকে খবর পেলো দিয়া বলেছে মেহের ঘুমাচ্ছে। হাতে থাকা বেলী ফুলের মালাটা খাটের ওপর ছুড়ে ফেলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো রুদ্র। মেহের না থাকায় ঘরটা কেমন খালি খালি লাগছে ভেবে স্টাডি রুমে চলে গেলো। গিয়ে দেখলো আয়মানও ওই রুমে গালে হাত ঠেকিয়ে বসে আছে। রুদ্র গিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসতেই আয়মান উদাসীন কণ্ঠে বললো,

বউ থাকলেও জ্বালা না থাকলেও জ্বালা। থাকলে মনে হয় এই মাইয়া এত কথা বলে কেমনে? আর না থাকলে মনে হয় কানের মধ্যে এত শান্তি সইছে না। দুদিকেই অশান্তি। আপনার বউ গেলো তো গেলো আমি কি দোষ করলাম? আমার বউরে নিয়ে কেনো গেলো?

রুদ্র হেসে উঠলো। আপাতত মেহেরকে যে খুব মিস করছে। কাল মেহেরের প্রেগনেন্সির খবর পাওয়ায় হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল রুদ্র। কি রিয়েকশন দিবে বুঝতে পারছিল না। হটাৎ মাথা ব্যাথা হওয়ায় ওষুধ খেয়েছিল। যার ফলে জলদিই ঘুমিয়ে পড়েছিল। সকালে মিটিং থাকায় কথা হয়নি মেহেরের সাথে। আর সারাদিন ব্যস্ত থাকায় কল করতে গিয়েও করেনি। রাতে ফুল নিয়ে এসেছিল মেহেরকে সারপ্রাইজ দিতে। কিন্তু এসে যেনো সে নিজেই বেক্কল হয়ে গেলো। রুদ্র বললো,

ঘরে যাবি না আজকে?

~ঘরে বউ নাই। গিয়ে কি করবো? এই ঘরেই থাকি। আপনি যাবেন না ভাইয়া?

রুদ্র চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললো,

তোর আর আমার দশা একই। দুজনই বউ পাগলা। এখন এদিকে বসে আজ বউ বাপের বাড়ি যাওয়ার দুঃখ পালন করি আয়।

~ড্রিঙ্কস আনবো?

~রুদ্রাণীর নেশায় পড়ার পর থেকে আর কোনো নেশা কাজে লাগে না। 

রুদ্রর কথা শুনে আয়মান হাসলো। সে নিজেও তো এমন নেশাতেই মত্ত। ভালোবাসা নামক অসুখে পড়েছে সে নিজেও।

~~~

চলবে~

(রিচেক করা হয়নি। বানান ভুল হলে অবশ্যই কমেন্ট এ জানাবেন। হ্যাপি রিডিং~)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৪১

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 41


🍂🍂🍂


~বউ? বউ? এই বউ? রুদ্রাণীইইইই!!!!!!

~ইশ! কানের পোকা মেরে ফেলছেন। কি সমস্যা? চেঁচাচ্ছেন কেনো?

রুদ্রর চিৎকারে খুন্তি হাতে রান্না ঘর থেকে দৌড়ে এলো মেহের। মেহেরের হাতে খুন্তি দেখে জোরপূর্বক হাসলো রুদ্র।

~একটু এদিকে এসো না।

~আমি রান্না করছি। কি বলবেন বলুন।

~বাড়িতে কাজের মানুষের অভাব? তুমি রান্না করছো কেনো? তুমি না অসুস্থ? ঘরে বসো চুপচাপ। আমি রান্না করে আনতে বলছি।

~আজ নিজ হাতে রান্না করে খেতে ইচ্ছে করছে তাই। কি জন্য ডেকেছেন তা বলুন। আমার তরকারি পুড়ে যাবে তো!

রুদ্র বত্রিশ পাটি বের করে হাসলো। মেহেরের কোমর জড়িয়ে ধরে বললো,

একটু রুদ্র বলে ডাকো না! বড্ড মিস করছি তো।

~আপনি এই জন্য ডেকেছেন আমাকে?

রুদ্র দ্রুত মাথা নেড়ে হ্যা বুঝালো। মেহের রাগান্বিত স্বরে বললো,

যেদিন থেকে আপনার নাম ডেকেছি এর পর থেকে এভাবে জ্বালিয়ে মারছেন। কি সমস্যা?

~সমস্যা তো এখানে।

রুদ্র মেহেরের এক হাত নিয়ে তার বুকের বা পাশে রাখলো। বললো,

যেদিন থেকে তোমার মুখে নিজের নাম শুনেছি সেদিন থেকে দিনে কয়েকবার তোমার মুখে আমার নাম না শুনলে মনে হয় শ্বাসকষ্টে মারা যাচ্ছি। ইশ বউ! তুমি চাও তোমার বর তোমার মুখে ডাক শুনার অভাবে মারা পড়ুক?

~মশকরা করছেন আমার সাথে?

রুদ্র গাল ফুলিয়ে বললো,

মোটেও না রুদ্রাণী। তোমাকে আমি কত্তওওও ভালোবাসি। তোমার সাথে মজা কেনো করবো? ডাকো না প্লীজ!

~তরকারি পুড়ে যাবে। ছাড়ুন প্লীজ। পরে ডাকবো।

~না! না! এখনি ডাকো। ডাকো না!!!!

~উফফ! রুদ্র! রুদ্র! রুদ্র! ছাড়ুন এবার।

রুদ্র চোখে মুখে এক উজ্জ্বল হাসি দেখা দিলো। মেহেরের ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ ছুঁইয়ে বললো,

ধন্যবাদ মেহেরজান। ভালোবাসি।

বলেই খাটে গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। গত দুইদিন যাবত রুদ্র অফিসে যাচ্ছে না। দরকারি সব কাজ বাড়িতেই করে। মেহেরের শরীরটা ইদানিং ভালো যাচ্ছে না। মাথায় ঘুরায়, ঠিক মত খেতেও পারে না, একটু খেলেই বমি করে ভাসিয়ে দেয়। রুদ্র মেহেরের হেলথ নিয়ে বেশ চিন্তিত। মেহেরের খাওয়া দাওয়া তে বেশ কঠোরভাবে নজর রাখছে। গতকাল হাসপাতালে গিয়ে ডক্টর এর কথামত কিছু টেস্ট করিয়ে এসেছে। আজ সন্ধ্যায় রিপোর্ট দিবে। রুদ্র বেশ কড়াভাবে মেহেরকে বলেছে রিপোর্ট খারাপ এলে মেহেরের খবর আছে। একদম নিজের খেয়াল রাখে না। সবসময় বেখেয়ালিভাবে চলা ফেরা ভালো লাগে না রুদ্রর। সকলের প্রয়োজন অপ্রয়োজনের খেয়াল রাখে আর নিজের বেলায়ই যত তালবাহানা এই মেয়ের।

__________________________________


~রিপোর্ট কখন দিবে? (তিথি)

~আজ সন্ধ্যায়। (রুদ্র)

~মেহেরকে সাথে নিয়ে যাবি না? (তিথি)

~শুধু রিপোর্ট ই তো দেখাবো। ও না গেলেও চলবে। তাও নিয়ে যাবো। যদি কোনো দরকার হয়। (রুদ্র)

মেহের নিজের প্লেট এ খাবার নিতে নিতে বললো,

দরকার পড়লেও আমি যাচ্ছি না। ডক্টর দেখবেন অকারনেই এক বোঝা ওষুধ ধরিয়ে দিবে। আমি বলছি কি রুদ্র আপনারও যাওয়ার দরকার নেই।

রুদ্রর দিকে তাকালে দেখলো রুদ্র অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে তার দিকেই চেয়ে আছে। তিথি বললো,

এই মেয়ের নিজের যত্ন নেওয়ার বেলায়ই যত বাহানা। ঠিক মত খাস না আবার কথা বলিস! রুদ্র তুই ডক্টরকে বলে ওর জন্য রুচির ওষুধ নিয়ে আসিস তো!

~মামনি! (মেহের)

~ভাইয়া আপনি ওর জন্য ওষুধের পাশাপাশি কিছু চকোলেট নিয়ে আসবেন। মহারানীর ওষুধের পর চকোলেট না পেলে পরে মুখখানা বাংলার পাঁচ বানিয়ে ঘুরবে। (দিয়া)

~হ্যা পিচ্চি নিয়ে এসেছি না! বাড়িতে চকোলেট চিপস এগুলো না থাকলে চলে?

রুদ্র কথায় স্নেহা আর দিয়া খিল খিল করে হেসে উঠলো।

__________________________________


কতক্ষন যাবত রুদ্রর পেছন পেছন ঘুরছে মেহের। রুদ্রকে সে কোনোমতেই হাসপাতালে যেতে আটকাতে পারছে না। হাসপাতালে গেলেই তার জন্য এক বোঝা ওষুধ দিয়ে দেবে ভেবে নিয়েই রুদ্রকে মানানোর যত চেষ্টা।

~শুনুন না!

রুদ্র গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

তুমি একটু চুপ থাকবে? দ্রুত রেডী হয়ে এসো। নয়তো তোমাকে রেখেই চলে যাবো আমি।

~রুদ্র

~হাজার বার নাম ধরে ডাকলেও পটছি না আমি রুদ্রাণী। তোমার হেলথ নিয়ে কোনো হেরফের নয়। যাও রেডী হয়ে এসো।

মেহের ভেংচি কেটে আলমারি থেকে বোরকা নিয়ে তা পড়তে শুরু করলো। বিড়বিড় করে অসংখ্য বকা ঝাড়লো রুদ্রর উদ্দেশ্যে। রেডী হয়ে রুদ্রর কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই রুদ্র উঠে মেহেরের এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে গাড়ির কাছে এলো। রাস্তায় রুদ্র অনেক কথা বললেও মেহের গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। রুদ্রর কোনো কথার জবাব দিলো না।

____________________________________


ডক্টর এর কেবিনের বাহিরে দাড়িয়ে আছে রুদ্র। হার্ট প্রচন্ড বেগে বিট করছে। মেহেরের হাত টা কে আরেকটু শক্ত করে ধরলো। লম্বা এক শ্বাস নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করলো। ডক্টর রিপোর্ট দেখে কি বলবে তা নিয়েই গভীর চিন্তা রুদ্রর। চেয়ারে বসে নিচের ঠোঁট কামড়ে ডক্টর এর হাতে থাকা রিপোর্ট এর দিকে চেয়ে আছে রুদ্র। ডক্টরের রিপোর্ট দেখা শেষেই বিস্তর হাসলেন তিনি। রুদ্র আর মেহের কেউই তার এই হাসির কারণ বুঝলো না। ডক্টর রেহানা হেসে বললেন,

কংগ্রেচুলেশনস! আপনারা মা বাবা হতে চলেছেন।

রুদ্র বিস্ফোরক দৃষ্টিতে চেয়ে বললো,

মানে?

~মানে ইউর ওয়াইফ ইজ প্রেগনেন্ট।

কেবিন থেকে বেরিয়ে আসতেই মেহের রুদ্রর দিকে চেয়ে তার অভিব্যক্তি বোঝার চেষ্টা করলো। মেহের খুশি হয়েছে কিন্তু রুদ্র এতে খুশি কিনা তা বুঝতে পারছে না মেহের। এবার সারা রাস্তা রুদ্র নিজেই কোনো কথা বললো না। মেহের চাইলেও আগ বাড়িয়ে কথা বলতে পারলো না। বাড়িতে এসেও রুদ্র মেহেরের সাথে কোনো কথা বললো না। সোজা নিজের রুমে চলে এলো। মেহেরের মনে অজানা ভয় বাসা বাঁধলো। ওইদিন রুদ্রর কথায় মেহেরের রাগ উঠলেও মেহের ভেবেছিলো রুদ্র ভয়ের কারণে এমন করেছে। কিন্তু আজ রুদ্রর এমন ব্যবহার মেহেরকে ভাবতে বাধ্য করছে। রুদ্র কি সত্যিই এই বাচ্চা চাইছে না?

~~~

চলবে~


(ঈদের তৃতীয় দিন আজকে। Late wish "ঈদ মোবারক"। সবাই নিজ দায়িত্বে সালামি পাঠিয়ে দিবেন 😁 গল্পটা ২/৩ পর্বের মধ্যেই শেষ করে দিবো। এর পর লেখিকাকে ভুলে যাবেন না। গল্প কেমন লেগেছে তা অবশ্যই গঠনমূলক কমেন্ট এর মাধ্যমে জানাবেন। হ্যাপি রিডিং~)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৪০

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 40


🍂🍂🍂


~তুই কি সত্যিই আন্টির বাড়ি যাবি না?

মেহের শান্ত চাহনী নিক্ষেপ করলো স্নেহার দিকে। হাতে থাকা আপেলটা কাটতে কাটতে বললো,

না। ইচ্ছে নেই। তোর এসব চিন্তা করা লাগবে না।

ফলভর্তি প্লেটটা স্নেহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

ফল খা।

স্নেহা নাক মুখ কুচকে প্লেটটা পুনরায় মেহেরের দিকে দিয়ে বললো,

সারাদিন খেতে ভালো লাগে না। এখন আর খাবো না।

মেহের প্লেটটা নিয়ে স্নেহার পাশে এসে বললো,

ভালো না লাগলেও খেতে হবে। আমার ভাগ্নি হেলথি হতে হবে। একদম গুল্লুমূল্লু টাইপ।

~সুফিয়ান ভাইয়া শুনলে আবার তোর সাথে কোমড় বেধে ঝগড়া শুরু করবে দেখিস। চাচীর জায়গায় নিজেকে খালা দাবি করিস কেনো তুই?

~তোর সুফিয়ান ভাইয়া পরে এসেছে। তাই চাচীর অধিকার পরে। আমি আগে আমার ভাগ্নির খালামণি।

~ভাগ্নি ভাগ্নি করছিস যে! সিওর কিভাবে যে ভাগ্নি ই হবে?

~হবে হবে। অবশ্যই হবে। আমার মেয়ে বাবু বেশি পছন্দ।

~তাহলে চলো আমরা একটা মেয়ে বাবু নেই?

রুদ্র কথায় চমকালো মেহের। চোখ বড় বড় করে বললো,

আপনি এখন? এখানে? কেনো?

বউকে মিস করছিলাম। ভাবলাম জলদি বাড়ি চলে যাই। তাই চলে এলাম। মিসড ইউ সো মাচ মেহেরজান!

মেহের রুদ্রর পেটে কনুই দিয়ে গুতা মেরে বললো,

যেখানে সেখানে এভাবে কথা না বললে ভালো লাগে না আপনার? ঠোঁটকাটা স্বভাবের মানুষ কোথাকার!

~খারাপ কি বললাম? বউকে মিস করার কথা বলা যাবে না? (রুদ্র)

~অবশ্যই যাবে ভাইয়া। যাবে না কেনো? (স্নেহা)

~দেখলে বউমনি! তোমার জা আমার সাথে কি করে কথা বলে। সাজা স্বরূপ তুমি ওকে দিয়ে স্টার জলসার বউদের মতো কাজ করাবে। একদম দজ্জাল জা হয়ে যাবে। বুঝলে? 

রুদ্রর কথায় স্নেহা খিল খিল করে হেসে উঠলো। মেহের ধমকে উঠতেই রুদ্র দ্রুত ঘরে চলে এলো। বনের বাঘও তো তার বাঘিনীকে ভয় পায়। সেদিকে রুদ্র তো মনুষ্য। মেহের স্নেহার পাশের চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লো। স্নেহার দিকে তাকালে দেখলো স্নেহার হাসতে হাসতে চেহারা লাল হয়ে গেছে। এখনও হাসছে। প্রেগনেন্সির পাঁচ মাস চলছে। প্রেগনেন্সির কারণে স্নেহা আগের থেকে কিছুটা গোলুমোলু হয়েছে। দিয়া আর মেহেরের কাছে এখন স্নেহাকে বেশ কিউট লাগে। যখন তখন গাল টেনে দেয়। মাঝে মাঝে তো তীব্র ওদের সামনেই স্নেহার গাল টেনে বলে,

ওরে আমার ডোরেমন রে!

স্নেহা রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে সবাই হেসে উঠে। স্নেহার পেটটা আগের থেকে বেশ ফুলে উঠেছে। মেহের প্রায় সময় স্নেহার পেটে হাত দিয়ে এটা সেটা বলে। তার কাছে মনে হয় বাচ্চাটা যেনো তার কথা মন দিয়ে শুনছে।

__________________________________


~ওই কামের বেটি! আমার জন্য এক কাপ চা নিয়ে আয়। জলদি জলদি।

কাব্যর কথা শেষ না হতেই দিয়া ধুম করে কাব্যর পিঠে এক কিল বসিয়ে দেয়। কাব্য ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠতেই দিয়া রাগান্বিত স্বরে বলে,

কোন এঙ্গেল দিয়ে আমারে কাজের বেটি মনে হয় তোর?

~তোর চেহারা দেখলেই মনে হয় তুই কাজের মহিলা। তোর নাম দিয়া না রেখে জরিনা রাখা উচিত ছিলো।

দিয়া আহিলের দিকে রাগী চোখে তাকালে আহিল নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলে,

চেয়ে আছিস কেনো? মেহমানদের খেয়াল রাখতে জানিস না?

রেদোয়ান আহমেদ আর তিথি আহমেদের দিকে চেয়ে বললো,

এই মেয়ে তো বহুত ফাজিল। বাড়ির বউ এত ফাজিল হয়? মেহমানদের খেয়াল রাখতে জানে না। কাজের মেয়েকে বিদায় করে দিন আংকেল আন্টি।

আহিলের কথায় রেদোয়ান আর তিথি হেসে উঠলো। দিয়াকে রেদোয়ান আহমেদ নিজের পাশে বসিয়ে বললো,

আমার বাড়ির ছোট কন্যা ইনি। মোটেও কাজের মেয়ে জরিনা বলবে না।

~হ্যাহ্! আমার বাবা আমার সাথে আছে। ইউ হতদরিদ্রের দল! যা বিদায় হ! (দিয়া)

~তুই যা। আমরা স্নেহার সাথে দেখা করতে এসেছি। তুই বললেই যাবো নাকি! সর সামনের থেকে! (কাব্য)

~মেহের কই রে? এসেছি পর থেকে দেখছি না যে?(আহিল)

___________________________________


মেহের ঘর থেকে বের হতে নিলেই রুদ্রর কণ্ঠ শুনে থেমে যায়।

~সারাদিন ছোটাছুটি করো। একটু পাশে এসে বসতে কি ক্ষতি?

মেহের রুদ্রর কাছে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো। বললো,

আপনি কি রাগ করলেন?

রুদ্র মাথা নেড়ে না বুঝালো। মেহের রুদ্রর পাশে বসতেই রুদ্র মেহেরের কোলে মাথা দিয়ে তার কোমড় জড়িয়ে শুয়ে পড়লো। মেহের আগের মতো আর চমকালো না। অসস্তি অনুভবও করলো না। একরাশ ভালো লাগা তার মন ছুঁয়ে গেলো। রুদ্রর মাথায় হাত বুলাতে থাকলো। রুদ্র শীতল কণ্ঠে ডাকলো,

মেহেরজান!

~হু?

~একটা কথা বলবো। রাখবে?

~বলুন। যথা সম্ভব চেষ্টা করবো।

~আমার বাচ্চা লাগবে না। আমার কোনো বাচ্চা লাগবে না।

রুদ্র এই এক কথায় মেহেরের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। রুদ্রর থেকে ছিটকে দূরে সরে এলো। কম্পিত কণ্ঠে বললো,

মানে? কি বলছেন?

রুদ্র উঠে বসলো। মেহেরের দিকে এগিয়ে যেতেই মেহের পিছিয়ে গেলো। রুদ্র টান দিয়ে মেহেরকে আগের স্থানে এনে মেহেরের কোলে পুনরায় মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো। কিন্তু আগের বারের মত আর মেহেরের পেটে মুখ গুজলো না। মেহেরের মুখের পানে চেয়ে বললো,

প্রেগনেন্সিতে অনেক রিস্ক। বউমনি প্রেগনেন্ট হওয়ায় ভাইয়ার অবস্থা দেখেছো? চিন্তায় কেমন সারাক্ষণ উদাসীন হয়ে ঘুরে। তোমার কিছু হলে আমি বেচেঁ থেকেও মরে যাবো বউ। আমার লাগবে না কোনো বাচ্চা।

মেহেরের চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো। তেজপূর্ণ কণ্ঠে বললো,

কি বলছেন ভেবে বলছেন? প্রতিটা মেয়েই চায় মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করতে। হোক তাতে রিস্ক।

~তুমি বললে আমরা বাচ্চা এডপ্ট করবো। তবুও আমি চাই না তুমি রিস্ক নাও।

~রিস্কের ভয় করলে এই পৃথিবীতে আপনি, আমি কেউই থাকতাম না রুদ্র।

~রুদ্রাণী!

~প্লীজ রুদ্র! আপনার কথা আমার ভালো লাগছে না।

রুদ্র কিছু বলার আগেই দরজায় করাঘাতের শব্দ এলো। রুদ্র উঠে বসলো। গলা উচিয়ে বললো,

কে?

~ভাইয়া আমি রুমি।

রুদ্র উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই রুমি হেসে বললো,

আহিল ভাইয়া আর কাব্য ভাইয়া এসেছে। তোমাদের ডাকে। রুদ্র রুমিকে কোলে নিতেই মেহের ঘর থেকে বের হলো। রুদ্রর আগে সে নিজেই নিচে চলে গেলো। মেহের রাগ করছে তা বুঝতে পারছে রুদ্র। কিন্তু সে তার ব্যাপারে কোনো রকমের রিস্ক নিতে চাইছে না। তার রুদ্রাণীর কিছু হলে সে ভালো থাকবে কি করে?

~~~

চলবে~

(কেমন আছেন সবাই? গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। আর নেক্সট নেক্সট না বলে গঠনমূলক কমেন্ট করবেন প্লীজ। পরের পর্ব খুব দ্রুত দিবো ইন শাহ্ আল্লাহ। হ্যাপি রিডিং~)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৩৯

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 39


🍂🍂🍂


রোদের প্রকোপ আজ যেনো একটু বেশিই অনুভব হচ্ছে। মেহের আকাশের দিকে চেয়ে কপালের ঘাম মুছে দিয়া, কাব্য আর আহিলের দিকে তাকালো। বললো,

ফুচকা খেতে যাবি? আজ বেশ ইচ্ছে করছে। চল না যাই।

~হ্যাঁ, হ্যাঁ। চল যাই। (দিয়া)

~কি যাই? দিয়াইন্না! এই ফুচকার মধ্যে পাস কি তোরা? কি নোংরা! (কাব্য)

~ফুচকাকে নোংরা বলিস! তোর সাহস তো কম না! তোর নামে তো ফুচকার মানহানির* মামলা করা উচিত! (দিয়া)

~এই আইন কি তুই বের করলি? (কাব্য)

~হ্যা। করলাম। (দিয়া)

~তোরা ঝগড়া করতে থাক। আমি গেলাম ফুচকা খেতে। (মেহের)

~এই না! আমিও আসছি। (কাব্য)

ফুচকার স্টলে যেতে যেতেই কাব্য প্রশ্ন করলো,

স্নেহার শরীর কি বেশি খারাপ?

মেহের কাব্যর মুখশ্রীর দিকে তাকালো। ছেলেটার চেহারায় চিন্তার রেশ বিদ্যমান। চোখ দুটো জবাবের আশায় তার দিকেই স্থির। মেহের মুচকি হেসে বললো,

প্রেগনেন্সির সময় এমন একটু আধটু অসুস্থ সকলেই হয়। চিন্তা করিস না।

~মা হতে গেলে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়। তাই না?

মেহের ফের মুচকি হাসলো তবে জবাব দিলো না। কাব্যর চোখে পানি চিকচিক করছে এই ভেবে যে তার মা ও তো না জানি কত কষ্ট সহ্য করেছে তাকে পৃথিবীতে আনতে। স্টলে ওদের দেখে ইভান আর ফারাজও ওদের কাছে এলো। ইভান গিয়ে মেহেরের পাশে আর ফারাজ দিয়ার পাশে বসতে নিলেই রুদ্র ধপ করে মেহেরের পাশে আর আয়মান দিয়ার পাশে বসে পড়ে। এই মুহূর্তে এখানে রুদ্র আর আয়মানকে দেখে সকলেই বেশ অবাক হয়ে তাকায়। রুদ্রকে দেখে ফারাজ আর ইভানও অন্যদিকে চলে যায়। মেহের প্রশ্ন করে,

আপনি এখানে কি করছেন?

~তার আগে তুমি বলো ফোন ধরছিলে না কেনো? কত চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। জানো?

মেহের দ্রুত ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে ৭ বার কল দিয়েছে রুদ্র। ফোন সাইলেন্ট থাকায় বুঝতে পারেনি। রুদ্র গম্ভীর কন্ঠে কাব্য আর আহিলের উদ্দেশ্যে বলে,

তোমরা থাকতে ওর পাশে অন্য ছেলে বসতে আসছে কেনো? হাত পা ভাঙতে জানা নেই? 

~না জানলে বলো আমি নিজে ট্রেনিং দিবো। (আয়মান)

মেহের কপাল কুঁচকে বললো,

হাত পা ভাঙার ট্রেনিং মানে? আপনি আবারো গুন্ডাগীরি শুরু করেছেন!

~শোনো! বউকে বা বোনকে প্রোটেক্ট করার জন্য মারপিট করলে তাকে গুন্ডামি বলে না।

~আপনি বললেই তো হলো না।

রুদ্র বিরক্তিতে "চ্" শব্দ করে বললো,

এইখানে কি করছো?

~ফুচকার স্টলে কি করে মানুষ? অবশ্যই বিয়ে পড়ায় না।

 ~বড্ড সাহস বেড়ে গেছে দেখছি তোমার। মুখে মুখে তর্ক করো।

মেহের মুখ ভেংচি কেটে অন্যদিকে ঘুরে বসে রইলো। রুদ্র নিঃশব্দ হেসে আরেকটু মেহেরের গা ঘেসে বসলো। কাব্য বললো,

ভাই আপনার কোনো দুর সম্পর্কের বোন বা কোনো সিঙ্গেল মেয়ে নেই?

রুদ্র কপাল কুঁচকে বললো,

না তো! কেনো?

কাব্য হতাশার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

আমার মতো সিঙ্গেলদের আপনাদের প্রেম দেখলে দেবদাস টাইপ ফিল আসে। চিল্লিয়ে তখন গাইতে ইচ্ছে করে "বড় একা একা লাগে আমার, লাগে না ভালো আর... ওওও~"

দিয়া ধমকে উঠে বললো,

এই বেসুরা কাক! চিল্লানো বন্ধ কর! আমার কানের পর্দা শহীদ হলো বলে।

~তুই চুপ কর শয়তান মহিলা। বিয়া করছস সব বান্ধবী এক পরিবারে। একটাও ননদ নাই। এই খেয়াল করলি না তোদের ভাই দুইটা সিঙ্গেল থাকবো। ঢেং ঢেং করতে করতে নিজেরা বিয়া কইরা নিলি। আবার চিল্লাস!

কাব্যর কথায় আহিল সায় জানিয়ে বললো,

একদম ঠিক বিয়ে করেছিস তো করেছিস আবার আমাদের সামনে বসে প্রেম করিস। লজ্জা করে না?

কাব্য আর আহিলের কথায় আয়মান আর রুদ্র হেসে উঠলো। কাব্য উদাসীন কণ্ঠে বললো,

এককালে সিঙ্গেল অবস্থায় আমাদের সাথেই বসে হাসতেন আয়মান ভাই। আর আজকেও আপনি হাসতেছেন তবে বিবাহিত অবস্থায় তাও আমাদের ওপর হাসেন। সবই কপাল বুঝলেন!

______________________________________


~আপনি কি ইভান ভাইয়াকে মার দেওয়ার প্ল্যানিং করছেন?

আয়নায় মেহেরের প্রতিবিম্বর দিকে চেয়ে বাকা হাসলো রুদ্র।

~আমার সাথে থাকতে থাকতে বেশ বুদ্ধিমতী হয়ে যাচ্ছো দেখি বউ। স্বামীর মন, মস্তিষ্ক বুঝার চেষ্টায় আছো দেখছি? ভালো, খুব ভালো। আই লাইক ইট।

~ফাজলামো রাখেন রুদ্র। আপনি ওনাকে কোনো আঘাত করবেন না।

~আচ্ছা।

রুদ্রর কথায় চমকালো মেহের। উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললো,

আপনি সত্যিই মারবেন না?

~অলরেডী যথেষ্ট মার খেয়েছে। আরও খেলে তো সে পটল তুলবে মেহেরজান।

~মানে?

~মানে তুমি তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে একটু বেশিই দেরি করে ফেলেছো। অলরেডী সে আর ফারাজ মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি।

~কিহ?

~জ্বি। তাদের নিজ পায়ে দাড়াতেই কয়েকমাস লেগে যাবে দেখে নিও।

~কেনো? কেনো মারলেন এত?

~আমার বউ আর আমার বোনের দিকে পা বাড়িয়েছিল তাই। বাই দ্যা ওয়ে, আমি মারিনি। গার্ডস দিয়ে মার খাইয়েছি।

মেহের বিরক্ত হয়ে আর জবাব দিলো না। মানুষ অভ্যাসের দাস। এই দাসত্ব ছাড়াতে বেশ সময় লাগবে তা জানে মেহের। এখন ওর বা আয়মানের সাথে চিল্লিয়েও লাভ নেই। ফারাজ আর ইভান এর জন্য একরাশ খারাপ লাগা অনুভব করলো মেহের। বেচারারা চেয়ারে বসতে চেয়েছিল একটু। আর রুদ্র সোজা বেড এ পাঠিয়ে দিয়েছে। তাও যেনো তেনো জায়গার বেড নয়। সোজা হাসপাতালের বেড এ। একেই বলে যেচে বাঁশ খাওয়া। আরো যাও বিবাহিত মেয়েদের পাশের চেয়ারে বসতে।

~~~

চলবে~