#গ্যাংস্টার
#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)
পর্ব : ১৭
রাজ কখন থেকে বসে আছে। সামনে সিঙ্গেল সোফায় বসে আছে তার শ্বশুর। মানে হবু শ্বশুর।
রাজের মনের মাঝে নতুন এক অনুভূতি কাজ করছে। নতুন বিয়ের অপেক্ষারত সবার মনের মাঝে যেই এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি হয়। রাজের এখন তাই হচ্ছে।
অবশেষে রাজের অপেক্ষার তীব্র এক অজানা অনুভূতির অবসান ঘটিয়ে রানি এলো।
সাদা এক বেনারসি গায়ে। সাদা স্টোন গুলি ঝিকঝিক করছে। গায়ে অনেক গয়না। মাথায় কি সুন্দর করে ঘোমটা দেওয়া। মুখের মাঝে হাল্কা মেকআপ। ঠোঁটে গাঢ়ো লাল লিপস্টিক। কাজল কালো চোখ গুলি কলো রঙে রঙ্গিম হয়ে আছে। রানি কে যেন হুর লাগছে। মনে হচ্ছে আকাশ বেদ করে বেহেশতের হুর মাটিতে স্থান নিয়েছে।
চোখ এক মনে এক ধ্যানে রানির দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখের পাতা নড়ছে না। একদম স্থির মায়ামি রানির দিকে তাকিয়ে আছে।
আরমান গলা কাশি দিলে রাজের হুশ ফিরে একটু নড়েচড়ে বসে ঠিক হয়ে।
রানি কে সামিয়া রাজের পাশে এনে বসায়। তবে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে। রানির গা রাগে জ্বলে যাচ্ছে। তো রাজের মন রোমাঞ্চে পুলকিত হচ্ছে। আড় চোখে চোখে রানি কে দেখছে।
কাজি বিয়ে পড়িয়ে চলে যায়। সবাই মিষ্টিমুখ করে।
রাজ তো মনের আনন্দে গপগপ করে কয়েক মিষ্টি পেটে দিয়ে দেয়। শান্তি তে মনে হয় মিষ্টি গুলি পেটে গেল। রানি এই সব দেখে মনে মনে বলতে থাকে,
"খাও বাছাধন বেশি করে খাও। জীবনে কি আর কখনো খাইছিলা? খাও নাই তো। এখন হাতের কব্জি ডুবিয়ে খাও। ভরাসিয়াস একটা।"
সবাই এক সাথে মিলে খাবার খেতে বসে। সিনথিয়া পরিবেশন করছে।
আরমান, রাজ রানি আর সামিয়া বসে নিজেদের মতো খাচ্ছে। রানির এত ভার গয়না নিয়ে খাবার খেতে অনেক অসুবিধা হচ্ছে। যদিও পাশে বসে থাকা রাজের কারণে রাগে সে খাবার গলা দিয়ে নামাতে পারছে না। তবুও হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করছে।
কম সময়ের মাঝে সিনথিয়া বেশ রান্নাবান্না করে নিয়েছে।
রাজ আরাম আয়েশে খাবার খাচ্ছে। আরমান আর সামিয়াও মন ভরে খাবার খেতে ব্যস্ত। রানি শুধু রাগে ফেটে যাচ্ছে।
"বুঝলে তো রাজ বাবা তোমার কারণে আজ এত কিছু খেতে পারলাম। সিনথিয়া তো আলসেমির কারণে তেমন কিছু রান্নাও করতে চায় না।"
সিনথিয়া রাগে বলে উঠল,
"তবে কি শুধু ময়দা খেয়ে জীবন কাটাও?"
"যাই বলো আজ বেশ রান্না করেছো।"
"....
রাজ চামচ দিয়ে পায়েস মুখে দিতে দিতে নিজের পা দিয়ে রানির পায়ে স্লাইড করছিল।
এমন কাহিনী তে রানি হকচকিয়ে যায়। হঠাৎ বিশম খায় খুব জোরে। রাজ তাড়াতাড়ি তার মুখের সামনে পানি ধরে।
রানি কাশতে কাশতে পানি না নিয়ে চোখ গরম করে রাজের দিকে তাকিয়ে থাকে। মনে মনে হয়তো এটাই বলছে "ভাব দেখাচ্ছে এখন। নিজের এমন কান্ডে বিশম খেলাম এখন পানি ধরে আদিখ্যেতা দেখানো হচ্ছে। মরণ আমার।"
রানি কাশছে অথচ রাজের হাত থেকে পানি নিচ্ছে না। রাজ রানির থুতনিতে এক হাত ধরে অন্য হাতে পানির গ্লাস তার মুখে তুলে দেয়।
যেন ৪/৫ বছরের কোনো বাচ্চা মেয়ে কে পানি খাওয়ানো হচ্ছে।
তাদের এমন কান্ড দেখে সামিয়া মুচকি হাসে।
রাজ রানির দিকে তাকিয়েই আছে। আরমানও সিনথিয়ার দিকে নজর দেয়। সিনথিয়া মুচকি হাসে। হয়তো দুজনে তাদের সদ্য বিয়ের পুরোনো দিনের মাঝে চলে গিয়েছে।
আরমান আর সিনথিয়ার এমন আবেগপ্রবণ চাওনি দেখে সামিয়া খায় বিশম। খুব জোরে জোরে কাশি পায় তার।
তার কাশির আওয়াজে সবার ধ্যান ভাঙ্গে। সামিয়া নিজেই পানির গ্লাস নিয়ে টগটগ করে পানি খেয়ে নিয়ে নিশ্বাস ছাড়ে। সামিয়া মনে মনে বলে "এ কোথাই আছি আমি?"
খাওয়া দাওয়ার পর সবাই কিছুক্ষণ মিলে কথা বলে। একসময় রাজ রানির মা বাবা কে জানায়,
"আঙ্কেল আমি রানি কে আজ নিয়ে যেতে চাই বাসায়।"
"আজই.."
"হুম।"
"....
রানি আরো রেগে যায়। কটমট করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
"কি? এখন আমাকে উনার সাথে যেতে হবে?"
"ছিঃ রানি এই সব কি কথা? ঠিক করে কথা বল। ও তোর স্বামী হয়।"
"আম্মু.."
"চুপ আর একটা কথাও নয়। রাজ বাবা এখন থেকে তোর সব। ও যা বলবে তাই করতে হবে। ওর কথা শুনে চলাই তোর কাজ এখন। ওর কথার অবাধ্য হবি না কখনো।"
"...
সিনথিয়ার কথায় সবাই যেন থ মেরে যায়। রানি একটু পর বলতে শুরু করে,
"ওকে ফাইন। যা বলবে তাই হবে। আমি খেলার পুতুল না! আমাকে তো সব মানতেই হবে। ঠিক আছে। আমাকে বিদায় করার জন্যে উঠে পড়ে লেগে গিয়েছো না? চলে যাচ্ছি। দেখবে আমি আর আসব না। আসব না তোমাদের এই খানে। আগুনের সামনে নিয়ে গেলে না আমায় খেয়ে ফেলার জন্যে। আমি নিজেই আগুনের কাছে গিয়ে বলছি আমায় শেষ করে দিতে। না হয় ওই নরক কুণ্ডেই ঝাঁপ দিচ্ছি। ভালো থাকো তোমরা। আর কখনো আসব না এখানে।"
রানি কথা গুলি একদমে বলে চলে যায় বাসা থেকে। আর একটুও দাঁড়ায় না সেখানে।
"আঙ্কেল আন্টি আপনারা কিছু মনে করবেন না। ও রাগে বলল কথা গুলি। রাগ কমলে ঠিক হয়ে যাবে। কাল পরশু আমি ওকে নিয়ে আসব।"
আরমান রাজের হাত ধরে কেঁদে দেয়। অস্পষ্ট কন্ঠে বলে,
"আমার মেয়ে টা কে দেখে রেখো বাবা। ও বড্ড ছেলে মানুষি করে।"
"চিন্তা করবেন না। আমি সব সময় ওর পাশে থাকব।"
".....
আরমান আর কথা বলতে পাড়ে না কান্নার কারণে।
"একটা বাবা ঠিক কত টা কষ্ট করে তার বুকের ধন কে অন্যের হাতে দিয়ে দেয়। তা 'বাবা' রা ছাড়া পৃথিবী তে এই কষ্ট টা আর কেউ বুঝে না। হয়তো তাদের কলিজা ছিঁড়ে যায় এমন যন্ত্রণায়। নয়তো বা মনে হয় এই বুঝি দম টা বের হয়ে যাবে। প্রতিটা বাবার কাছে তার 'মেয়ে' রাজকন্যার চেয়ে কোনো অংশে কম হয় না। সব বাবা রা চায় আমার মেয়ে টা সব চেয়ে ভালো থাকুক। স্বামীর সাথে খুব সুখে থাকুক। বাবা রা তাদের মেয়েদের কলিজা ভাবে। মেয়ে একটু কষ্ট পেলে মনে হয় বাবাদের বুকে লাগে। বিয়ের পর ঠিক এমন মুহূর্তে বাবাদের কেমন লাগে তা হয়তো কেউ লিখে প্রকাশ করতে বা অন্য কে বলে বুঝাতে পারবে না।"
আরমান সাহেবেরও হয়তো এমন লাগছে এই মুহূর্তে।
রানির মা রাজের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কাঁধো কাঁধো কন্ঠে বলে,
"বাবা ও কিন্তু নিজের খেয়াল একদমি নিতে পাড়ে না। আমার খায়িয়ে দিতে হয়। চুল মুছে দিতে হয়। ওর সব দেখে শুনে দিতে হয়। তুমি একটু সামলে নিও। ওর একটু খেয়াল রেখো। সাবধানে যাও।"
"কোনো চিন্তা করবে না আপনারা ও আল্লাহর রহমতে ভালোই থাকবে। আসছি। দোয়া করবেন।"
রাজ বেড়িয়ে আসে বাসা থেকে।
গিয়ে দেখে রানি পিছনের সিটে বসে রাগে সাপের মতো ফুসফুস করছে।
রাজ পেছনের জানালার সামনে গিয়ে বলছে,
"এই যে ম্যাম আপনি আমার ওয়াইফ। আমি আপনার ড্রাইভার নই। সামনে আসুন।"
"পারব না। আপনার ইচ্ছে হলে সামনে বসে ড্রাইভ করুন। না হলে পিছনে ঠেলতে ঠেলতে আপনার বাসায় নিয়ে যান।"
"হোয়াট?"
".....
রাজ আর কিছু না বলে দরজা টা খুলে। নিঃশব্দে রানি কে কোলে তুলে নেয়।
রানি অবাক হয়ে বলে,
"আরে আরে করছেন কি?"
"....
রাজ আশেপাশের লোকজন কে তোয়াক্কা না করে রানি কে কোলে নিয়ে সামনে তার পাশের সিটে বসিয়ে দেয়। রানি ফ্যালফ্যাল করে রাজ কে দেখছে।
তখন রাগের মাথায় অনেক কিছু বললেও এখন রানি কান্না করছে নাক টেনে টেনে।
রাজ ড্রাইভ করতে করতে রানির দিকে তাকাচ্ছে। রানি বাহিরের দিকে তাকিয়ে নাক টানছে তো কান্না করছে। রাজ দেখলেও কিছু বলছে না। এখন একটু কান্নার দরকার তার। মন টা ভালো হবে।
রাজও আড় চোখে রানি কে দেখছে। রানির মনের পরিস্থিতি টা সে বুঝতে পারছে। নিজের বাড়ি ছেড়ে চললে সব মেয়েদের এমন হয়।
ড্রাইভ করতে করতে রাজ টিস্যু এগিয়ে দেয় রানির দিকে।
চলবে....
(গঠনমূলক কমেন্ট করবেন😊)
Sabriha Sadi
0 Comments:
Post a Comment