#গ্যাংস্টার
#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)
পর্ব : ১৮
রাজ গাড়ি থামিয়ে কোনো কথা ছাড়াই আবার রানি কে কোলে তুলে নেয়।
কান্নায় চোখ লাল হওয়া রানি অবাক হয়ে রাজ কে দেখছে।
রাজ সুন্দর করে রানি কে কোলে নিয়ে তার বেড রুমে চলে যায়। বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলে,
"এখানে থাকো আমি আসছি।"
রাজ চলে যায়। একটু পর এক কাপ কফি হাতে নিয়ে রুমে আসে।
"ধরো।"
"....
"আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে এটা হাতে নাও।"
রাজ আবার বলল,
"কি হলে নাও।"
রানি কথা ছাড়া রাজের হাত থেকে কফির মগ টা নেয়। রাজ চুপ করে রানি কে কোলে তুলে নেয়।
"কি হচ্ছে? একটু পর পর আমায় না বলে কোলে নিচ্ছেন কেন?"
"তোমায় জিজ্ঞেস করতে হবে বুঝি?"
"অবশ্যই করতে হবে।"
"কখনোই নয়। একটু আগে থেকেই তুমি আমার হয়ে গেছো। তুমি সব টাই এখন আমি বা আমার। আর আমার জিনিস কি করব না করব সেটা কাউ কে বলার প্রয়োজন মনে করি না আমি। মাইন্ড ইট।"
"আজব।"
"তাও ঠিক। কারণ তুমি এখন আমার অর্ধাঙ্গিনী। মানে আমার অর্ধেক অংশ।"
"....
পড়ন্ত গোধূলি লগ্ন চলছে তখন। রাজ রানি কে কোলে নিয়ে ব্যালকুনির দিকে চলে যায়।
অপকল রানি কে দেখছে। যেন এটা কোনো হুর কে কোলে নিয়ে রেখেছে সে। রাজ নেশা ধরা চোখ নিয়ে রানি কে দেখছে। রানির এখন বেশ লজ্জা লাগছে।
"কফি টা খাও। মাথা ব্যথা একটু কমবে।"
"....
কান্নার কারণে রানির আসলেই মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে। তাই কিছু না বলেই কফির কাপে চুমুক দেয়। এক হাতে তার কফি অন্য হাতে রাজের কাঁধ আগলে রেখেছে। আড়চোখে আবার দেখছেও।
"তুমি কি মানুষ না? নাকি দয়া মায়া নেই? আমি যে আছি তাও তোমাকে কোলে নিয়ে একটুও বলতে ইচ্ছে কারছে না আমায় আমি কফি খাবো কি না।"
রাজের এমন কথায় রানির লজ্জা পায়। ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,
"এটা তো আপনি আমার জন্যে এনেছেন। আপনার জন্যে তো আপনি আনেন নি। আর এটার মাঝে আমি ঠোঁটও লাগিয়ে দিয়েছে.."
রাজ আকাশের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলে,
"তো কে বলেছে এটা না খাওয়ার কথা। আমি এটার কথাই বলেছি।"
"....
"দিবে না নাকি?"
"এটা?"
রাজ একটু জোর নিয়েই বলে,
"তো আমি অন্যটার কথা বললাম কি?"
"....
রানি কি করবে বুঝে পায় না।
"আপনি কি রাক্ষস?"
"হোয়াট?"
"না আসলে মানে আপনি আমার খাওয়া.."
"এটার হিসাব না হয় পরে নিলাম। আপাদত আমার মুখে কফি দাও। খুব মিষ্টি খেতে ইচ্ছা করছে তোমার ওই ঠোঁ.."
কথাটা বলতে বলতে রাজ রানির দিকে তাকায়। রানি ভ্রু কুঁকচে রাজের দিকে তাকিয়ে থাকে। রাজ কথা পাল্টিয়ে বলে,
"না মানে আমার খুব কফি কফি পাচ্ছে। তাড়াতাড়ি কফি মুখে মানে আমার ঠোঁটে ধরো।"
রাজ কথাটা বলে মুচকি হাসি দেয়।
রানি আর কথা না বাড়িয়ে রাজের মুখের সামনে কফির মগ ধরে। রাজ চুমুক দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। তারপর মুখ টা আরো রানির দিকে এগিয়ে দিয়ে কানের কাছে ফিসফিসানি কন্ঠে বলে,
"এই কফি তে দুনিয়ার সেরা মিষ্টত্ব রয়েছে। যা প্রেয়সীর ঠোঁটের স্পর্শে সম্ভব হলো।"
রানি এই কথা শুনে একটা ঢুক গিল। খুব লজ্জায় মাথা নুয়িয়ে নেয়।
রাজের ঠোঁটে এক বাঁকা হাসির আভাস পাওয়া যায়।
রানি কে এই ভাবে কোলে নিয়ে রাজ প্রায় ৩/৪ ঘন্টা দাঁড়িয়ে আছে। রাজ একটুও নড়ছেও না। কখনো রাজের দৃষ্টি বহুদূরের ওই আকাশে স্থির তো কখনো রানির নেশা ধরানো ঝাঁঝালো রূপের দিকে।
আর বেচারা রানির কোমর ব্যথা করছে। মনে মনে বলছে,
"উনার কোলে থেকে আমার কোমর ব্যথা করছে উনার কি হাত পা বা কোমর কোনো টাই ব্যথা করছে না? কি স্টিল বডি মাবুদ। ডাইনোসরের শক্তি রয়েছে এই হাতির মতো জিম বডি তে।"
রাজের মতো লোকের রানি কে ৩/৪ ঘন্টা কেন সারা রাত কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও বোধ হয় হেলবে না। তার যে বডি। অপর দিকে তার কাছে রানি একটা পাটশলা। ওজন বোধ হয় ৪৬ কিংবা ৪৮ হবে।
রাত যখন দশ টা বাজে রাজ তখন রানি কে নিয়ে ঘরে ঢুকে।
"চুপ করে বসে থাকবে একটুও নড়বে না। আসছি আমি।"
রাজ চলে গেলে রানি বিছানায় নড়চড়ে কোমরে হাত দিয়ে বসে। একটু জোরে জোরেই বলে,
"এ্যা বললেই হলো। নড়বে না একটুও। কেন গো? আমি কি আপনার মতো রোবট ম্যান নাকি? কোমরের নাট বল্টু নড়ে যাচ্ছে আর উনি আসছে নড়বে না নিয়ে। আল্লাহ মাবুদ এই গ্যাংস্টারের সাথে থাকব কি করে আমি? একে তো ভয় তারউপর রাগ।"
রাজ ট্রে করে খাবার নিয়ে এলো। রানি বেশ অবাক হয়ে। ভাবে
"উনি কি সত্যিই এলিয়েন? জাদু টাদু জানে নাকি? খাবার নিয়ে এলে কি করে?"
রানি কৌতূহল নিয়ে বলেই বসল,
"আপনি কি এলিয়েন বা ম্যাজিশিয়ান?"
"হোয়াট?"
"না মানে এই ৫ মিনিটে যে খাবার নিয়ে এলেন।"
"তুমি কি ভাবো সবাই তোমার মতো বোকার ডিম? সবাই কি বোকার রাজ্যের বাস করে?"
"কি? কি বললেন আপনি? আমি বোকার ডিম? তাহলে তো আপনি হাতির ডি.."
কথা টা বলতে গিয়েও রানি থেমে যায়। পরে যদি রাজ তাকে এই একা ঘরে পেয়ে কিছু করে বসে।
"খাবার বাহির থেকে আনিয়েছি আরো আগেই। আমি রাজ চৌধুরী। নজর টা একটু আগে আগেই চলে আমার। খুব ফাস্ট।"
রানি মুখ ভেংচিয়ে মনে মনে বলে,
"হুমম তা তো দেখাই আছে। এই কারণেই তো আমার সাথে অভিনয় করলেন। অন্য একজন কে ঠকালেন। আবার আমায় বিয়েও করে নিলেন।"
রানি কে রাজ নিজের হাতে খায়িয়ে দিতে চালইলে রানি বলে,
"আমার হাত আছে আমি খেতে পাড়ি।"
"চুপ পিচ্চি। হা করো।"
"আ আমি পিচ্চি?"
"হা করো না হলে গালে একটা খাবে।"
রানি বড়সড় করে হা করে। রাজ মুচকি হেসে রানি কে খায়িয়ে দিতে থাকে।
রাজ নিজে খেয়ে আবার উপরে রানির কাছে যায়। রানি তখন বসে ছিল। চেয়ারের উপর বসে পা দুলাচ্ছিল। যার কারণে তার সাদা পা গুলি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। রাজ ঘরে ঢুকেই এমন দৃশ্য দেখে কাশতে শুরু করে। শুকনো ঢুল গিলে রানির কাছে যায়।
রানির সামনে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে যায়। রানির হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে রানির দিকে তাকিয়ে থাকে।
রাজের এমন চাওনি দেখে রানি ঘনঘন চোখের কাজল কালো পাঁপড়ি ফেলে। রাজ এটা দেখে একটু অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে মুচকি হাসে। আবার রানির দিকে তাকায়। ঠোঁট চেঁপে হেসে রানি কে কোলে তুলে নেয়।
"আবার কে কো কোলে.."
রাজ রানি কে নিয়ে ব্যালকুনিতে চলে যায়। সেখানে গিয়ে তাকে নামায়।
রানির সামনে হঠাৎ করে হাটু গেড়ে বসে পড়ে।
প্যাকেট থেকে রিং এর বক্স টা বের করে রানির সামনে দেয়। সেখান থেকে চকচক করা ডায়মন্ডের রিং টা রানির বা হাতের তর্জনি আঙ্গুলে পড়িয়ে দেয়। সেই হাতেই চুমু খায় রাজ।
আর রানি অবাক দৃষ্টিতে রাজ কে দেখতে থাকে।
"ভালোবাসি।"
"...
"প্রাণের টুকরো টা কে খুব ভালোবাসি। তুমি আমার বউ। আমার অর্ধাঙ্গিনী। আমার জীবনের সব টা তে তুমি আছো। তুমি ছাড়া আমি আমার জীবন টা চিন্তা করতে পারি না। তুমি বিহীন আমি সত্যিই বাঁচতে পারব না। জীবনে যাই করো আমাকে ছেড়ে কখনো যেও না। আমি মরে যাবো। তুমি চলে গেলে এই দুনিয়াতে একটা নিশ্বাসও হয়তো আমি নিতে পারব না। আমায় প্লিজ তোমার বুকে ঠাই দিও। খুব ভালোবাসি তোমায়। আমি আমার জীবনের অংশ তোমাকে ভালোবাসি। তোমায় খুব বেশিই ভালোবাসি প্রেয়সী।"
রানি শুধু ফ্যালফ্যাল করে রাজ কে দেখছে। তার মনের মাঝে অনেক কথা জাগলেও কিছু বলতে পারছে না এখন। যেন বোবা হয়ে গেছে। গলা দিয়ে আসছেও না কথা।
রাজ বসা থেকে উঠে রানির পিছনে পিঠের দিকে নিজের হাত নিয়ে রানিকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। ঝাপটে জড়িয়ে নেয় নিজের বুকে। বাচ্চাদের মতো কান্না করতে থাকে। রানি কে নিজের বুকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে রাজ।
রানির যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে। রাজের কান্না টাও তার সহ্য হচ্ছে না। মনের মণিকোঠায় বড্ড বারি খাচ্ছে।
চলবে....
(আশা করছি গঠনমূলক কমেন্ট পাবো।😊)
Sabriha Sadi
0 Comments:
Post a Comment