#গ্যাংস্টার
#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)
পর্ব : ১৬
আসলে রাজ সকাল সকাল রানির বাসায় চলে এসেছিল। আরমান আর সিনথিয়া কে নিজের পরিচয় দেয় বাসায় এসেই। সবার মুখে এত নাম ডাক শুনে তাদেরও চিনতে অসুবিধা হয় না। তারা অবাক হয়ে যত্নে রাজ কে ঘরে নিয়ে আসে। সে রানি কে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। রানি কে পছন্দ করে সেটাও জানায়। তাই তারা রাজি হয়ে যায়।
পাত্র দেখতে শুনতে ভালো। এতো নাম ডাক রানি কেও পছন্দ করে আপত্তি করার মানেই হয় না। তাই রানির বাবা মাও রাজি হয়ে যায়।
আজ শুক্রবার। তাই রাজ আজই বিয়ে করে নিতে চায় রানি কে। এটা শুনে তারা অবাক হয় এত তাড়াতাড়ি..
কিন্তু পরে আর না করেনি। কারণ তাদের জানানোর মতো তেমন কেউ নেই। আর রানি যে অবস্থায় আছে। মানে মানে বিয়ে টা হলে বাঁচে তারা। বিয়ের পরে না হয় মেয়ে এই বাড়িতেও থাকতে পাড়ে কোনো সমস্যা হবে না। বাবা মায়ের চিন্তা তো দূর হবে। এই ভেবেই অমত করে না।
একটু পর কাজি আসবে তাদের বিয়ে পড়াতে। রাজ সব প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে। স্বাদে কি আর রাতের ঘুম আরাম করে চিন্তা করেছে সে?
সিমথিয়া রানির পাশে বিছানার উপর ব্যাগ গুলি রাখে।
"মা এমন ভালো ছেলে কি আর সব সময় পাওয়া যায়? এত ভালো ছেলে তোকে পছন্দ করে বলেই তো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এলো। তুই মা আর অমত করিস না। রাজি হয়ে যা। তোর বাবাও না হলে রাগ করবে। এই গুলি পড়ে রেডি হয়ে নে।"
"আম্মু তোমরা কেন বুঝতে চাইছো না আমার কথা? আমাকে কিছু বলার সুযোগ কেন দিচ্ছো না? উনাকে পছন্দ আমিও করতাম.."
"তা হলে আর অমত না করে চুপ করে রেডি হয়ে নে।"
রানি সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে তার বাবা ঘরে প্রবেশ করেছে।
"আব্বু আমার কথাটা একটু তুমি শুনো।"
"কোনো কথা আমি শুনতে চাই না। এত দিন কষ্ট করে নিজের সব টা দিয়ে একমাত্র সন্তান কে মানুষ করেছি কি এই কারণে? অন্যের সামনের মেয়ের মুখের উপর কথা শুনতে? না এমন কখনোই হবে না। যদি আমাদের মা বাবা হিসেবে সম্মান করে থাকিস তা হলে ওই ছেলেটার সামনে বেইজ্জত করিস না আমাদের। যা বলছি তাই কর। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। একটু পর কাজি চলে আসবে।"
"আব্বু ওই লোকটা আ.."
"সিনথিয়া চলে এসো। বাকি টা ওর কাছে, আমাদের যা বলার আমরা বলে দিয়েছি।"
গম্ভীর কন্ঠে আরমান কথা টা বলে চলে গেল। স্বামীর বাধ্য স্ত্রী সিনথিয়া স্বামীর কথা মতো চলে যায়। যাওয়ার আগে দরজায় দাঁড়িয়ে বলে,
"জিদ না করে রেডি হয়ে নে। একা যদি রেডি হতে না পারিস তবে সামিয়া কে ডেকে নে।"
এই বলে সিনথিয়া চলে যায়।
রানির মাথাতেও সামিয়া আসে। ভাবে সামিয়া হয়তো কিছু করতে পারবে। তাই তাড়াতাড়ি করে সামিয়া কে কল দেয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাসায় আসতে বলে।
সামিয়া বাসায় এসে রাজ কে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়। তারপর তাড়াতাড়ি করে রানির কাছে চলে যায়।
"রানি রানি।"
"তুই এলি? এতক্ষণ লাগে? এত হাপাচ্ছিস কেন? কোন পাগলা কুত্তা দৌড়ানি দিল?"
"আরে থাম না। এখন তোর এই কথা গুলি একটু বন্ধ কর।"
"আমার সব শেষ।"
"স্যার মানে তোর রাজ চৌধুরী কে বাসায় দেখলাম আঙ্কেলের সাথে হাসছে কথা বলছে।"
"হুম রে। ডেভিল টা আমার আম্মু আব্বু কে খেয়ে ফেলেছে।"
"কি?"
"না মানে হাত করে নিয়েছে। নিজের বশে এনে ফেলেছে রে। আমি এখন কি করব?"
"কেন? কি হয়েছে বলবি তো। সব টা বল।"
"উনি আসছে আমায় বিয়ে করতে আজ।"
"হোয়াট?"
"হো বইন হো। আমার জীবন টা কয়লা। কি করব আমি?"
"মানে সিরিয়াসলি?"
"আরে এই বাইদানী তোর সাথে এখন মজা করতে আমার কোন পা টা গেছে রে?"
"উনি তোকে বিয়ে.."
"না না আমাকে না তো তোর নানি কে বিয়ে করতে আসছে। আজাইরা লাড্ডু কোথাকার।"
"না ইয়ে, তোকে বিয়ে করতে আসলে তো ভালোই। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।"
"কি করে রেডি হবো? উনি তো একটা ডেভিল।"
রানি সামিয়া কে সব টা বলে। সেদিনের পর থেকে তার মন খুব বেশি খারাপ হওয়ায় সামিয়া কে সব কিছু বললেও সেই ঘটনার কথা জানায়নি। তেমন মন মানসিকতা ছিল না তার।
সব শুনে সামিয়া বেশ অবাক হয়। এটাও সম্ভব? কি করে? সে হা করে তাকিয়ে আছে রানির দিকে।
"তুই ঠিক বলছিস?"
"তা নয় তো কি? স্বাদে কি আমি উনাকে বিয়ে করতে চাইছি না? উনি তো একটা লুচ্চা। যাকে কি না এত দিন মনে প্রাণে চেয়ে এসেছে আজ তাকেই বিয়ে করতে আমার..."
"আরে আরে কাঁদিস না। চুপ কর।"
"কি করে চুপ করব বল তো? উনি কি ভাবে করতে পারল? তারপরেও আমার সাথে..."
"তুই বা কি করে শিওর হচ্ছিস মুখের কথা শুনে?"
"নিজের চোখ কেও কি অবিশ্বাস করব? এটাই বলছিস তুই আমায়?"
"না আসলে। যাই হোক এখন কি করার?"
"আমিও তো তাই ভাবছি এখন কি করার? কি করব আমি? তুই কিছু বুদ্ধি দে।"
"আ আমি?"
"এমন করে বলছিস কেন? গোবর মাথায় একটু কিছুও কি বুদ্ধি নাই? সব টাই কি ফাঁকা কলসি লুচ্চা মেয়ে?"
সামিয়া রানির কথার জবাব না দিয়ে একটু ভেবে বলে,
"এক কাজ কর এখন উনি যা বলছে তেমনি কর। পরে উনার কাছে গিয়ে না হয় সব টা জেনে নিস। যদি সত্যিই হয় তবে না হয় ডি..."
"তার মানে তুই বলতে চাইছিস আমি জেনে শুনে নিজের গলা দঁড়ির সামনে নিয়ে হাজির করব? নিজেই নিজের জীবন টা আগুনের কাছে বিলিয়ে দিব। আর বলব নে আগুন খা আমায়। খেয়ে শেষ করে ছাই করে দে।"
"দেখ এখন এই সব বলার সময় নয়। উনি যেমন মানুষ তাতে সব করতে পাড়ে। যদি রাজি না হস পরে উনি তোর ক্ষতি করলে? তার থেকে ভালো উনি যা বলছে তাই কর। রেডি হয়ে নে।"
"আরে ডাইনি তোকে এনেছিলাম আমায় বাঁচাতে। এখন তুই নিজেই মরণ কে উস্কিয়ে দিচ্ছিস। তুই একটা আস্তো শাকচু.."
রানির কথা শেষ হওয়ার আগেই দরজার ওপাড় থেকে সিনথিয়ার কথা শুনা যায়।
"কি হলে রে? হলো তোদের? আর কতক্ষণ লাগবে? সামিয়া তাড়াতাড়ি করে রেডি কর ওকে। কাজি চলে আসবে একটু সময়ের মাঝে।"
"আ আন্টি হয়ে যাবে। তু তুমি যাও। আর একটু আছে।"
"তাড়াতাড়ি কর।"
বলেই সিনথিয়া চলে যায় দরজার ওপাড় থেকে।
"দেখ বইন তোর পায়ে পড়ি এখন চিন্তা ভাবনা না করে বিয়ে টা করে নে। পরে না হয় সব জেনে শুনে একটা কিছু ভাবা যাবে। তাড়াতাড়ি উঠ। তৈরি হ।"
"পরে কেন? আগে জেনে শুনে নিলে কি হয়?"
"তোর যে লাভার। সেই সময় টা পেলে তো। দেখছিস না একদিনও সময় দিল না। আজ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এলো। আজই বিয়ে করবে বলে সব ঠিকঠাকও করে নিল।"
"দেখ তুই উনাকে একদম কি কিছু বলবি না."
"ওরে কতো দরদ। তাহলে রেডি হয়ে নে উনার গলায় গিয়ে ঝুঁলে পড়।"
"মুলা তুই..."
"কিছু না তাড়াতাড়ি বিয়ে করে উনার সংসার কর গিয়ে। উঠ।"
রানি মুখ ভুতা করে আছে। সামিয়া তাকে শাড়ী পড়িয়ে দিয়ে সাজাতে ব্যস্ত।
"বইন মুখ ভুতা করে রাখিস না। পরে দেখবি তোর হবু জামাই এই মুখ ভুতার কারণে আমাকেই না মেরে ফেলে.."
"সামু তুই..."
"ভুল কিছু বলি নি।"
"আমিও তাই চিন্তা করছি। কি করে ওই গ্যাংস্টারের সংসার করব? থাকব কি করে উনার সাথে এক ছাদের তলায়?"
চলবে....
(গঠনমূলক কমেন্ট করবেন)
Sabriha Sadi
0 Comments:
Post a Comment