গল্প গ্যাংস্টার পর্ব ১৫

 #গ্যাংস্টার

#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)

পর্ব : ১৫


রাজ ঠান্ডা মাথায় ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলেও এখন মাথায় আস্তেআস্তে রাগ উঠে যাচ্ছে। 


কল দিচ্ছে তো দিচ্ছেই। রানির কল ধরার কোনো নাম নেই। রাজের রাগ হচ্ছে অনেক। প্রায় ২০ বার কল দেওয়ার পর রানি কল ধরে।


রাজ মাথা ঠান্ডা রেখে বলল,

"কি হয়েছে তোমার?"

"আপনার কি হয়েছে সেটা বলুন। গাধার মতো কল কেন দিচ্ছেন?" 

"কি?"

"এত বার কল কেন দিচ্ছেন?"

"আচ্ছা বলবে আমায় কি হয়েছে তোমার?"

"ধ্যাত যত্তসব ন্যাকা ন্যাকা কথা যেন কিছুই জানে না। আজাইরা লাড্ডু কোথাকার।"


রানি রাগে ফোন কেটে দেয়। রাজেরও রাগ হচ্ছে। ফোন টা আছাড় দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়। 


তারপর এত না ভেবে লম্বা একটা ঘুম দেয়। 


রাতেও অনেক বার কল দেয় রানি কল ধরে না। শেষে ফোন বন্ধ করে রাখে। এবার রাজের ভীষণ রাগ হয়। কিছু বলছেও না কেন এমন করছে।


পর দিন সকালে রাজ ফ্রেশ হয়ে কলেজের সামনে যায়। 


কিন্তু কলেজের সময় পের হয়ে গেছে তবুও রানি আসছে না। হয়তো আসবে না ভেবে রাজ গাড়ি নিয়ে অফিস চলে গেল। 


রানির কিছু ভালো লাগছে না। তাই আজ কলেজেও যায়নি। সে ভেবেয় পায় না সত্যিই মানুষ টা এমন? তবে এত দিন যে সে এই মানুষটার কারণেই অবাক হয়েছে সে কি না....

রানি কান্না করে দেয় কথা গুলি ভেবে।


সেদিন আর কথা হয় না তাদের। রাজ রাগে ফেটে যাচ্ছে। কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছে না। 


রাতে রাজ একা সুইমিংপুলে বসে ভাবছিল। এমন সময় তার কল আসে। তার গ্যাং এর এক জন কল দিয়েছে।

"হ্যালো।"

"বস।"

"খবার পেলি কিছু?"

"বস আপনি আসার আগের দিন ম্যাম তাদের বাসার সামনে ক্যাফে তে একজনের সাথে দেখা করেছে। আর আপনি না থাকা কালীন তিনি ঘর থেকে এক বারও বের হয়নি।"

"কে ছিল? কার সাথে দেখা করেছে?"

"বস জানতে পারলাম একজন মহিলা।"

"যত তাড়াতাড়ি পারিস মেয়ে টাকে বের করার চেষ্টা কর।"

"ওকে বস।"

"মনে রাখিস খুব তাড়াতাড়ি।"

"ঠিক আছে কিন্তু বস..."

"কি হয়েছে?"

"বস শাহিন জেল থেকে মুক্তি পেয়েছে কিছুদিন হলো।"

"হোয়াট?"

"হুম। বস আপনি ব্যস্ত ছিলেন তাই বলা হয়নি। খুব রকম হাঙ্গামা করছে সে।"

"ওকে দেখছি রাখ। সবাই কে সাবধানে থাকতে বলিস।"

"ওকে বস।"


রাজ ফোন কেটে দিয়ে গভীর চিন্তায় পড়ে যায়। তবে কি শাহিন ই কোনো ভাবে.... 

রাজ নিজের মনে মনে অনেক কিছু ভেবে নেয়। আর সময় দেওয়া চলবে না। এর পর হয়তো খুব দেরি হয়ে যাবো। তাই আর অপেক্ষা করে সময় নষ্ট না করাই ভালো। 


রাজ মুখে এক অদ্ভুত বাঁকা হাসি নিয়ে বলতে থাকে,

"মাই লিটল এঞ্জেল আসছি আমি খুব বেশি দেরি নয়। অপেক্ষা করো।"


সকালে রাজ ফুরফুরে মেজাজে ঘুম থেকে উঠে। 

শাওয়ার নেয়। প্রিন্সের মতো আজ নিজেকে সাজায়। মুখে সেই এক গালে হাসি। 


রানি ঘুম থেকে উঠে ছাদের এক কোণায় মন মরা হয়ে বসে আছে। যাকে পছন্দ করল। মনে মনে কত কিছু ঠিক করে নিল। আকাঙ্ক্ষিত মানুষ টার দেখাও পেলো। অবশেষে সেই মানুষ টা কি না..... 

তবে এত দিন কি তার সাথে নাটক করল? সব তার অভিনয় ছিল? কিন্তু কি করে সম্ভব? মানুষ কি এত টাও নিখুঁত অভিনয় বাস্তবে করতে সক্ষম হয়? কেন জানি রানির এই কথা গুলি মনে আসলেও মানতে তার খুব বাঁধা লাগে। কষ্টও হয়। 


বার বার সেদিনের মেয়ে টার কথা মনে হয়। মনে হতেই রাজের প্রতি রাগ আর বিতৃষ্ণা চলে আসে। আবার কি ভেবে চাইলেও রাজের প্রতি ঘৃণা আনতে পাড়ে না। সব মিলিয়ে নাজেহাল অবস্থা তার।


যতোই হোক এত দিন তার মনের মাঝে যে ছিল তাকে কি করে...


বেশ বেলা হয়ে গিয়েছে। 

সেই যে রানি ১০ টা ২০ এ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ছাদে এলো। এখনো সেই এখানেই দাঁড়িয়ে আছে। এখান থেকে একটুও নড়েনি। হয়তো এখন বেশ বেলা হয়ে গিয়েছে। হয়তো অনেক সময় হয়েছে সে এখানে এসেছে।

তবুও এখন যেতে ইচ্ছে করছে না তার।


তার কানে নিচ থেকে হাসির আওয়াজ ভেসে আসছে। তার বাবা সচরাচর এমন অট্টহাসি হাসে না। কিন্তু আজ যেন তিনি হেসে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলছে।


রানি অনেকটা বিরক্ত আর আগ্রহ নিয়েই নিচে নামল। 


ড্রয়িংরুমে গিয়ে তার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সামনের মানুষটার দিকে। 


রাজ হাসি হাসি মুখ নিয়ে তার বাবার সাথে কথা বলছে। অন্য দিকে তার বাবা রাজের কথা শুনে জোরে হাসছে। রান্নাঘরের দিকে নজর দিলে দেখে তার মা খুব ব্যস্ত হয়ে কিছু করছে। হয়তো ওই লোক টা কে আপ্পায়নের ব্যবস্থা করছে। 


রাজ রানির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। 


এই প্রথম মনে হয় রাজের দাঁত বের করা হাসি দেখল রানি। কত টা মায়া মাখানো। সুদর্শনে হাসি। 


রানি ঢুক গিলল। চোখের পাতা ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে গেল।


মেয়ে কে দেখে আরমান বলল,

"আয় মা আয়।"

"....


"দেখ মা কে এসেছে। রাজ চৌধুরী।"

রানি বিড়বিড় করে বলছে, "আব্বু তোমার থেকে আমি ওই মানুষটাকে বেশি চিনি হাড়ে হাড়ে।"


"কিছু বলছিস মা?"

"ন না আব্বু। উনি এখানে কেন?"

"সুখবর নিয়ে এসেছে।"


রানি ভ্রু কুঁচকে একবার রাজের দিকে তাকায়। রাজ ঠোঁট চেঁপে হাসে। আবার তার বাবার দিকে তাকায়।

"কি খবর? মানে সুখবর?"

"তোর আর উনার বিয়ে।"


"কি?" বলেই রানি বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। 

ওদিকে তার মা ট্রে হাতে নিয়ে এত এত নাস্তা নিয়ে এলো রাজের জন্যে। তা দেখে রাজ আদিখ্যেতা দেখিয়ে বলল,

"আরে আন্টি এত কিছু আনার কি দরকার ছিল?"

"আরে না বাবা খাও খাও। আমাদের পরিবারের সদস্য হতে চলেছো। তোমাকে যত্ন তো একটু করতেই হয়।"

আরমান বলল,

"হ্যাঁ বাবা খাও। লজ্জা পেয়ো না। একটু পর থেকে তো এই বাড়ির মানুষই হয়ে যাবে। হাহাহা।"


রাজ মুচকি হাসে। আবার রানির দিকে তাকায়। ওদের অগোচরে এক চোখ টিপ দেয়।


রানির খুব রাগ হয়। তার গা জ্বলে যাচ্ছে এমন কথায়। তাদের কথা শুনে রানি হ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছে। 


"কি যা তা বলছো তোমরা?"

"যা তা মানে?"

"তা নয় তো কি আব্বু? কি বলছো তোমরা এই সব?"

"কি বলছি শুনতে পাচ্ছিস না? রাজ বাবা তোর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।"

"মানে কি?"


"রানি তুই কি তোর আব্বুর কথা শুনতে পাচ্ছিস না নাকি বুঝতে পারছিস না?"

"আম্মু এই সব.."


"আন্টি আঙ্কেল কি বলছে তুমি কি বুঝতে পারছো না? একটু পর আমাদের বিয়ে।" ওদের কথার মাঝে রাজ বা হাত ডুকিয়ে এ কথা বলল। 

"বিয়ে মানে কি? আপনি আর কয়টা..."


রানির কথা শেষ করার আগে রাজ সিনথিয়া কে কিছু শপিং এগিয়ে দিয়ে বলল,

"আন্টি এই গুলি রানি কে পড়িয়ে দিন।"

"দাও বাবা।"


সিনথিয়া শপিং গুলি হাতে নেয়। এদিকে রানির কথা কেউ শুনতেই চাইছে না। হয়তো রাজ নয়তো আরমান আর না হয় সিমথিয়া কোনো না কোনো ভাবে তাকে আটকিয়ে দিচ্ছে। 


"নে এই গুলি পড়ে রেডি হয়ে আয়।"


সিনথিয়া রানির হাতে ব্যাগ গুলি দিলে রানি রাগে সেই গুলি মাটি তে ছুড়ে ফেলে ফুসফুস করতে করতে নিজের রুমে চলে যায়। 


মেয়ের এমন অবস্থা দেখে সিনথিয়া বিনয়ের সাথে বলে,

"কিছু মনে করো না বাবা। আসলে ও.."

"ইটস ওকে আন্টি। ওকে আমি ভালো করেই চিনি।"


আরমান বলল,

"এই কারণেই তো তোমার হাতে ওকে দিতে আমি সময় নিচ্ছি না বাবা।"


রাজ মুচকি হাসে। সিনথিয়া ব্যাগ গুলি নিয়ে আবার রানির রুমের দিকে যায়। 


চলবে..


(ছোটছোট বলবেন না। লিখতে কষ্ট হয়। আর আমি এমনি তেও ব্যস্ত আছি। কাল দেয়নি বলে আজ কিন্তু চমক নিয়ে এলাম।☺ গল্প পড়ে দুই চার লাইন গঠনমূলক কমেন্ট করবেন।😊


Sabriha Sadi

0 Comments:

Post a Comment