গল্প বামনের ঘরে চাঁদ পর্ব ২৯

 বামনের ঘরে চাঁদ 


সাজিয়ানা মুনির 


২৯.


( কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ)


হাসপাতাল থেকে চাঁদ বাড়ি ফিরেছে। একমাস পর চাঁদের ফাইনাল পরিক্ষা, আষাঢ় ক্যাম্পাসে গিয়ে তটিনীর মাধ্যমে চাঁদের যাবতীয় সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বইপুস্তক নিয়ে এসেছে। এখানে থেকে পরিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে চাঁদ। 


বিছানায় পা তুলে বইপত্র খুলে বসেছে চাঁদ। গভীর ভাবে বইয়ের পাতায় দৃষ্টি মেলে। অমনি হ্ঠাৎ পায়ে কারো স্পষ্ট পেল, ছিটকে উঠলো চাঁদ। তড়বড় করে চোখ উঁচিয়ে তাকালো।   আষাঢ় পায়ের কাছে বসে, হাতে ম্যাসেজ অয়েল। দুইদিন হলো চাঁদের পায়ের প্লাস্টার ছাড়িয়েছে। পুরোপুরি ভাবে এখনো  পা ঠিক হয়নি। কোনোরকম হাঁটাচলা করতে পারছে। ডাক্তার  বলেছে ম্যাসেজ করলে দ্রুত পা ঠিক হবে। বাড়ি ফেরার পর থেকে চাঁদের সম্পূর্ণ দেখাশোনা আষাঢ় করছে। ঔষধ থেকে শুরু করে যাবতীয় সবকিছু। 

আচমকা আষাঢ়ের হাত তার পায়ের কাছে দেখে গুছিয়ে নিতে চাইলো। আষাঢ় দিলো না। একপ্রকার জোর খাটিয়ে কোলের উপর মেলে নিলো। চাঁদ খানিকটা দ্বিধান্বিত সুরেই বলল, 

' আমি পারবো। আপনি পায়ে হাত দিবেন ব্যাপারটা ভালো লাগছে না! খারাপ দেখায়!'

চাঁদের কথার তোয়াক্কা করলো না আষাঢ়। পায়ে তেল ঢেলে মালিশ করে দিতে দিতে বলল,

' খারাপের কি হলো। আমার বউ অসুস্থ তার দেখাশোনা করা আমার দায়িত্ব।'

চাঁদ চোখ ছোট ছোট করে নিলো। অফুটন্ত সুরে বিড়বিড় করে বলল,

' তবুও!'

আষাঢ় উত্তর দিলো না। চাঁদ মুগ্ধ গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনের মানুষটার দিকে। অনেক বছর আগে এই মানুষটাকে ভালোবেসেছিল। দুনিয়ার সকল ভয় ভীতি পিছনে ফেলে, বিলাসী জীবনের চৌকাঠ মাড়িয়ে শুধু তাকে পাওয়ার লোভে এসেছিলো আষাঢ়ের ঘরে। প্রত্যাশার ঝুঁড়ি বরাবরই শূন্য ছিলো তার। ভরসা ছিলো মানিয়ে নিতে পারবে সব। এই কঠোর শক্তপোক্ত মানুষটার একটুখানি ভালোবাসা পাওয়ার আশার চাতক পাখির মত ছটফট করতো। খুব করে চাইতো আষাঢ় তাকে একটু ভালোবাসুক আদর সোহাগে আগলে রাখুক। আষাঢ়ের জীবনের কঠিন সংগ্রাম  গুলো চাঁদ দেখেছে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে পরিবার ঢাল হয়ে দাঁড়ানো বড্ড বেশি কঠিন ছিল। চাঁদ সবসময় চাইতো, এই মানুষটার একটা সহজ, সুন্দর আয়েসি জীবন হোক। এতবছর পর সবস্বপ্ন সত্যি হয়েছে। একটা সময় যখন এই সম্পর্ক থেকে হাপিয়ে সবকিছু ছেড়ে দূরে চলে গিয়েছিল চাঁদ। এখন আবার সেই বিরান মনে আশার প্রদীপ জ্বলেছে। বিশ্বাসের চারা বপন হয়েছে। আবারও একটু একটু করে আষাঢ়কে চাইছে। পুরানো সেই ভালোবাসা জাগ্রত হচ্ছে। 

পায়ে অয়েল ম্যাসেজ করে, পাশে বসে জুসের গ্লাসটা এগিয়ে দিলো চাঁদের দিকে। চাঁদ জানে মানা করলে শুনবে না সে।আষাঢ়ের সাথে পেরে উঠবে না। তাই বাধ্য মেয়ের মত পুরোটা জুস শেষ করল। পাশের টেবিলে খালি গ্লাস রেখে আষাঢ় বুকে জড়িয়ে নিলো চাঁদকে। বিছানা থেকে খোলা বারান্দার শেষ বিকালের আলোটা দেখা যাচ্ছে। হলুদ র/ক্তিম আলো সূর্য ডোবার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। দখিনা দমকা হাওয়ায় এলোমেলো হয়ে সাদা পর্দা নাচছে।চাঁদ আবেশে চোখ বুজে নিলো, আষাঢ়ের বুকে মাথা রেখে বুকের বা পাশে হাত রাখলো। আষাঢ়ের এক হাত চাঁদের কোমরে, অন্য হাত বুকে রাখা চাঁদের হাতটায় শক্ত করে জড়িয়ে। কিছুকিছু মুহূর্ত খুব সাধারণ হয়, কিন্তু অনুভবের গভীরতা বেশ প্রচন্ড। দুজন পিনপতন নীরব, একে অপরের হৃদয় স্পন্দন শুনতে ব্যস্ত! 

অনেকটা সময় এভাবে কাট/লো। হঠাৎ আষাঢ়ের একটা গভীর ডাক কানে এলো। চোখ মেলল চাঁদ, মাথা উঁচিয়ে উপরে তাকালো। আষাঢ় তার দিকে নিমিষ দৃষ্টিতে চেয়ে। চোখে কত ভালোবাসা গভীর নেশা জড়িয়ে। অস্থির নিমিষ কণ্ঠে বলল সে,

' এবার দুরত্ব বাড়লে, তোমার বিরহে ম/রে যাবো চাঁদ।' 

চাঁদ চোখ নামিয়ে নিলো। লাজুক হেসে বলল,

' একটু দুরত্ব তো হবেই, পরিক্ষার সময় আমাকে ক্যাম্পাসে থাকতে হবে।'

' এখানে থেকে পরিক্ষা দিলে হয় না?'   

চাঁদ হাসলো। বলল,

' ছেলেমানুষী করছেন! '

আষাঢ় আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরলো। বলল,

' হ্যাঁ, করছি ছেলেমানুষী! তো? কি করবো। তুমি যে আমার অভ্যাস হয়ে গেছ।'

চাঁদ আবারও লাজুক হাসলো। অনেকটা রসিকতার ছলেই বলল,

' এই অভ্যাস আপনাকে কা/টাতে হবে। আমি অনেক বেশি সাফল্য, স্বাধীনচেতা হতে চাই।'

' আমি জানি তুমি পাড়বে। এই কাঁটা বেছানো পথে আমি তোমার সাপোর্ট হয়ে পাশে থাকবো চাঁদ!'

' জানেন, আমি ছোট থেকে ভাবির বোন প্রমি আপাকে রোলমডেল মানি। কি নিদারুণ, স্বাধীনচেতা ব্যক্তিত্ব তার। এইটুকু বয়সে আমেরিকার মত দেশে নিজের ব্যবসা দাঁড় করিয়েছে। অথচ এই মানুষটার জীবনেও একটা অতীত আছে, খুব সাধারণ দারিদ্র ঘরের একজনকে গভীর ভাবে ভালোবেসেছিল। কিন্তু মানুষটা ঠুনকো ছিলো। টাকার লোভে বাড়িতে প্রমি আপাকে একা পেয়ে ড্রাংক অবস্থায় সে/ক্সচুয়াল হারেসমেন্ট করে ভিডিও করে ব্লাকমেইলের চেষ্টা করে। ভাগ্যিস ঠিক সময় বাড়ির লোকজন চলে এসেছিল। তাই ব্যাপারটা বেশি দূর আগায়নি। এরপর অনেক দিন আপা ডিপ্রেশনে ছিলো, কয়েকবার সুই/সাইড করার চেষ্টা করে কিন্তু বেঁচে ফিরে। পরবর্তীতে তাকে আমেরিকা পাঠিয়ে দেয়। প্রথমে আপার হুট করে আমেরিকা শিফট হওয়ার ব্যাপারটা অস্বাভাবিক লেগেছিল। কিন্তু এতবছর পর সেদিন হাসপাতালে এর পেছনের কারণ জানলাম। একবার চিন্তা করেন ওই মানুষটা কি পরিমাণ বিবেকহীন অমানুষ! আপাকে কতটা সাফার করতে হলো তার কারণে।'

প্রমির নাম শুনতেই আষাঢ় হাত শক্ত মুঠিবন্ধ করে নিলো। চোখ অস্বাভাবিকরকম র/ক্তিম হলো। চাঁদ আরও কিছু বলবে তার পূর্বেই আষাঢ়ের রাগচাপা গম্ভীর আওয়াজ শোনা গেল। চাঁদের দুগালে শক্ত করে হাত চেপে বুঝানোর সুরে বলল,

' শোনো, তোমাকে অন্যকারো মত হতে হবে না। তুমি যেমন এমনটাই অনন্য। সকল চাকচিক্য জিনিস সোনা হয়না। যাকে তুমি সোনা ভাবছ, হতে পারে পুরোটাই বানোয়াট, খাদে পূর্ণ।'

আষাঢ়ের চোখমুখ কেমন জানো অস্থির, চাপা একটা রাগ। ব্যাপারটা চাঁদ খেয়াল করলো। কিছু বলল না। ভীষণ অবাক হলো। আষাঢ় অকপট উঠে চলে গেল, তার যাওয়ার দিকে ফ্যালফ্যাল চেয়ে রইল চাঁদ।   


কাচে ঘেরা ক্যাবিনটায় এক চিলতে রোদ এসে পড়ছে। আষাঢ়ের মুখশ্রীতে অদম্য ক্রোধ। সামনের মানুষটার দিকে ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে চেয়ে। অথচ সামনে মানুষটার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। ঠোঁটের কোণে হাসি টেনে বেশ স্বাভাবিক বসে। আষাঢ় ক্রোধান্বিত সুরে বলল,

' কেউ কতটা নিলজ্জ হলে এতকিছুর পর এভাবে সাহস জুটিয়ে আমার সামনে বসে থাকতে পারে?'

আষাঢ়ের খোঁচানো কথাটা প্রমি কানে তুলল না। বেশ গা ছাড়া ভাব নিয়ে বসে রইল। আষাঢ়ের প্রচন্ডরকম রাগ হলো। রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে, সামনের টেবিলে বেশ জোরে আঘা/ত করে বলল,

' চাঁদকে ওইসব উল্টাপাল্টা মিথ্যা গল্প কেন শুনিয়েছ? আমাদের মধ্যে কখন সম্পর্ক ছিলো? আমি তোমার টিউটর ছিলাম। পৃথার ছোট বোন সেই পরিচয়ের সুবাদে, টিউশন দিয়েছিলাম।'

প্রমি বেশ শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল,

' চাঁদের মধ্যে এমন কি আছে, যা আমার মধ্যে নেই? বরং আমি চাঁদের চেয়ে বেটার। উহু, বেটার না বেস্ট। তোমার চাঁদ আমাকে রোলমডেল মানে! আমার মত হতে চায়। ফ্যামিলি স্ট্যাটাসের অযুহাতে আমাকে ছেড়ে দিয়েছিলে। বলেছিলে, আমাদের এক হওয়া সম্ভব না! তাহলে চাঁদকে গ্রহণ করলে কেন? আমার বাবার চেয়ে ওর বাবার টাকা বেশি বলে? নাকি চেহারা দেখে? টিউশন পড়ানোর সময় দরজা বন্ধ করে স্পেশাল সম্মানি দিয়েছে বুঝি!'

আষাঢ় রাগ চেপে তীর্যক হাসলো। বলল,

' তোমার প্রশ্নেই উত্তর আছে। চাঁদের সাথে নিজের তুলনা করছ? অসম্ভব! আমার চাঁদ অমূল্য। তোমার মত নোংরা ডোবার পঁচা কীট নয়! তুমি প্রথম থেকেই মেন্টালি সিক, নেশা করে রাস্তাঘাটে পড়ে থাকতে। এক্সক্লুসিভ জিনিস গুলোর মত তুমি আমাকে তোমার কালেকশনে রাখতে চেয়েছিলে নিজের গোলাম করে। আমি তোমার জেদ ছিলাম। কিন্তু চাঁদের কাছে আমি তার ভালোবাসা। আমার সম্মানের জন্য ও সব পারে। নিজের সবটা উজাড় করে ঢাল বনে থাকে। তোমার একটা জেদ আমার পুরো জীবন এলোমেলো করে দিয়েছে। সেদিন সেই বিকালে কি ঘটেছিল আমার মনে নেই। কিন্তু সেই একটা ঘটনার জের ধরে আমি আজও নিজের সাথে চোখ মিলাতে পারি না। আমার চাঁদকে দীর্ঘ সময় নিজের থেকে দূরে রেখেছিলাম। আজও ওর আশেপাশে থাকলে নিজেকে তুচ্ছ, অপবিত্র মনে হয়। দ্বিধাদ্বন্দে ভুগি সবসময়।'

প্রমি রেগে গেল। তড়িঘড়িয়ে বলল,

' ওই মেয়ের প্রতি এত ভালোবাসা? কেন? কি আছে ওর। শুনেছি হলে থাকে। কোনো ছেলের সাথে যে ফিজিক্যালি ইনভলভ না তার কি নিশ্চয়তা আছে? তুমি..'

প্রমি আরও কিছু বলবে তার পূর্বেই আষাঢ় জোড়ালো থাপ্পড়ে মুখ বন্ধ করে দিলো। গলা চেপে রাগী চিৎকার করে বলল,

' চাঁদের বিরুদ্ধে আর একটা নোংরা কথা বললে খু/ন করে ফেলল। তুই নোংরা, পতিতা বলে কি সবাই তোর মত? নিজের সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাক। বাড়াবাড়ি করলে জানে মে/রে ফেলবো।'

প্রমির আচরণে কোনো পরিবর্তন এলো না। ক্ষিপ্ত হেসে বলল,

' আমার গায়ে হাত তুললে কি সত্যি বদলে যাবে? সেদিন বিকালে তুমি আমার সাথে ছিলে, আমার বেড রুমে! হুঁশে হোক বা বেহুঁশে। সেটা কেউ ঘাটতে যাবে না। এসব কথা যদি তোমার চাঁদ জানে তোমার কাছে কি আদৌ সে থাকবে? কি চাও বন্ধ কেসটা রিওপেন করি? আমার কাছে এখনো সব প্রমাণ আছে। এবার তো বাঁচানোর জন্য তোমার বন্ধুও নেই, না আন্ডার এইট্টিন বা রাজনৈতিক ঝামেলা আছে! শুনেছি পীরের পর্দা ফাঁসের জন্য নাকি এমনিতেই শত্রু হয়েছে। আমি কি সেই শত্রুতায় বাতাস দিবো? তোমার ফ্যামিলি, কম্পানি, স্পেশালি চাঁদ তোমার কাছে থাকবে তো?'

আষাঢ় থমকে গেল। দুনিয়ার সব ভেস্তে যাক, তাতে আষাঢ়ের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু চাঁদ! ওর দৃষ্টিতে ঘৃ/ণা সইবে কি করে? চাঁদই যে তার একমাত্র দুর্বলতা। তাদের জটিল সম্পর্কটা এতবছর পর সবে সহজ হতে শুরু করেছে। এত অপেক্ষার পর বামনের ঘরে চাঁদ ধরা দিয়েছে। সেই চাঁদকে কি করে হারাবে। পরিস্থিতি শক্তিশালী অদম্য পাহাড়কেও কখনো কখনো ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। আষাঢ়ের রাগ, জেদ, ক্ষমতা সামনে থাকা কুৎসিত মেয়েটার সামনে ঝুকে গেল। দুনিয়াতে কিছুকিছু মানুষ আছে অশুভ ছায়ার মত যেখানেই যায় নিজেদের কুৎসিত চিহ্ন রেখে যায়। আষাঢ়ের জীবনে প্রমি সেই অশুভ কুৎসিত ছায়াটার মত। 

প্রমির গলা ছাড়লো আষাঢ়। রাগ চেপে শান্ত হয়ে চেয়ারে বসলো। ক্রোধান্বিত দৃষ্টি তুলে গম্ভীর সুরে জিজ্ঞেস করল,

' কি চাই? '

প্রমি চেয়ার ছেড়ে উঠে আষাঢ়ের সামনে এসে দাঁড়ালো। মেয়েটার চোখমুখে অদ্ভুতরকম পরিবর্তন। অঙ্গভঙ্গী ব্যতিক্রম। অনেকটা সাইকোদের মত। আষাঢ়ের দিকে ঝুঁকে এলো, বলল,

' তোমার যেমন চাঁদকে চাই! আমার তোমাকে চাই। কতবছর তোমার অপেক্ষায় ছিলাম। আমেরিকায় কতজনের সাথে লিভিং রিলেশনে ছিলাম। কিন্তু তোমাকে ভুলতে পারিনি। আমার তোমাকে চাই। চাঁদকে ডিভোর্স দিতে হবে না। ও তোমার পছন্দ, থাকুক। কিন্তু তোমার আমার সাথেও সম্পর্ক রাখতে হবে। যতটা সময় তুমি চাঁদের সাথে থাকবে ততটা আমার সাথেও থাকবে। তোমাকে ভাগাভাগি করে যদি একটু পাওয়া যায়।  আমি ভাগাভাগি করে নিতেও প্রস্তুত। মানুষের এক্সট্রা ম্যারিটাল অ্যাফেয়ার থাকে না? তুমিও রাখবে ক্ষতি কি তুমি তো পুরুষ মানুষ। কথা দিচ্ছি চাঁদ তোমার অতীত বা এই অ্যাফেয়ার সম্পর্কে কিছু জানবে না।'

এবার আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলো না আষাঢ়। ধাক্কা দিয়ে প্রমিকে দূরে সরিয়ে দিলো। উঠে দুচারটা চড় দিলো। চিৎকার করে বলল,

' তোদের মত দুই একটা মেয়ের জন্য সকল নারীদের চরিত্রে কলঙ্কের দাগ লাগে। তোরা হচ্ছে ভদ্র ঘরের মুখোশধারী বে**। তোর সাথে সম্পর্ক তো দূর, তোর উপর থুতু ফেলারও প্রয়োজনবোধ করি না। কি করবি তুই? কেস করি? চাঁদকে বলবি! যা বল। তোর হু/মকিতে ভয় পাই না। যা করার কর। আমিও দেখছি, তোর দৌড় কতদূর!'

আচমকা প্রমির কাচের বাহিরে চোখ পড়লো। চাঁদকে দেখলো, সাথে সাথে আষাঢ়কে জড়িয়ে ধরল। কাচের দেয়ালে অপর প্রান্তে চাঁদ দেখে স্তব্ধ। চোখ থেকে অনবরত জল পড়তে শুরু করলো। নিজেকে সামলে কোনো রকম ঝটপট পায়ে সেখান থেকে সরে গেল। খাবারের বাক্স বাহিরে রিসেশনে রেখে তড়িঘড়ি সেখান থেকে বেরিয়ে গেল। 

রাস্তার পাশে ফুটপাতে গন্তব্যহীন হাঁটছে চাঁদ। আগামীকাল হলে চলে যাবে । সামনে সাপ্তাহ থেকে পরিক্ষা শুরু। তাই আজ দুপুরে নিজের হাতে রান্নার করে নিয়ে এসেছিলো। ভেবেছিল দুজন এক সাথে খাবে তারপর সারা বিকেল ঘুরবে। কিন্তু...। চাঁদের মাথা এখনো ভনভন করে ঘুরছে। ভেতরে এটা সে কি দেখলো? অস্থিরতা বাড়ছে। ভেতর ভেঙেচুরে কান্না আসছে। হাত দিয়ে মুখ চেপে কান্না থামালো। হ্ঠাৎ  কিছু মনে পড়তে তড়িঘড়ি হাতে মোবাইল বের করলো। কাউকে ফোন করে বলল,

' হ্যালো। আমি আসছি, দেখা করবো।' 


প্রমি বেরিয়ে যাওয়ার পর রিসিপশন থেকে ফোন এলো। চাঁদ অফিসে খাবার নিয়ে এসেছিলো জানতেই ততক্ষণাত আষাঢ়  বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। বাড়িতে পৌঁছে জানলো, চাঁদ বাড়ি ফিরেনি। ফোনটাও বারবার বন্ধ বলছে। আষাঢ় ঘাবড়ে গেল। আষাঢ়ের ক্যাবিনে চাঁদ প্রমিকে দেখে ফেলেনি তো? অদ্ভুত এক ভয় অন্তর ঝেঁকে ধরলো। অশান্তি লাগছে সব। প্রমি উপর প্রচন্ডরকম রাগ হচ্ছে। মনে মনে একবার ভাবলো,  প্রমিকে খু/ন করবে। ছকও কষে নিলো। নানারকম উদ্ভট চিন্তাভাবনা মাথা চেপে ধরলো।


চাঁদ সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলো। দুয়ার মেলে ঘরে আসতেই থমকে গেল। নিকষ কালো আঁধারে মাখানো সব। দূর সোফায় একটা মানুষের প্রতিবিম্ব দেখা গেল। মানুষটাকে চাঁদের বুঝতে বাকি রইলো না। ঘরের আলো জ্বালালো না। কেন যেন ইচ্ছা করলো না। বাহিরের সন্ধ্যাবাতিতে অনেকটাই উজ্জ্বল ঘর। 

আষাঢ় যেন চাঁদের উপস্থিতি টের পেল। সোফা ছেড়ে অকপট উঠে বিনাবাক্যে চাঁদকে জড়িয়ে ধরলো। বেশ আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রাখলো। অস্থির কণ্ঠে বলল,

' কোথায় ছিলে এতক্ষণ? আমার চিন্তা হচ্ছিলো। অফিসে গিয়ে দেখা করলে না কেন? '

চাঁদ খানিক চুপ থেকে অসার সুরে বলল,

' আগামীকাল চলে যাবো তাই আপনার সাথে লাঞ্চ করতে গিয়েছিলাম। শুনলাম কোনো জরুরী মিটিং-এ আছেন, আমারও জরুরী একটা কাজ পড়লো তাই বেরিয়ে গিয়েছিলাম।'

' সবকিছু ঠিক আছে তো?'

' বেঠিক থাকবে কেন? '

একটু চুপ থেকে, চাঁদ আবারও বলল,

'হ্যাঁ, সবকিছু ঠিক আছে আষাঢ়।'

আষাঢ় স্বস্থির নিশ্বাস ফেলল। এতক্ষণ আটকে থাকা ভারী ভাবটা বুক থেকে বেরিয়ে গেল। আষাঢ় আবারও বলল,

' কাল চলে যাবে? আমার তোমাকে হারানোর ভয় হচ্ছে চাঁদ!'

চাঁদের শান্ত, আশ্বস্ত আওয়াজ,

'এবার ফিরে এসে সব দূরত্ব মিটিয়ে দিবো, কথা রইল আমার।' 


চলবে..............


চেক করা হয়নি, ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।


টাইপোগ্রাফি করেছে Maksuda Ratna আপু❤️🌺

0 Comments:

Post a Comment