গল্প গ্যাংস্টার পর্ব ২৬ সমাপ্ত

 #গ্যাংস্টার

#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)

পর্ব : ২৬


রানি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে গুলির আওয়াজে চিৎকার দিয়ে উঠে। 

দৌড়ে ভেতরে ডুকে আরেকটা চিৎকার দিয়ে সেন্সলেস হয়ে যায়। 


গুলি দুইটা শাহিন আর রাজের লেগেছিল। শাহিন কে পুলিশের একজন হাতে গুলি করেছিল যাতে গুলি টা ফেলে দেয় আর রাজ বেঁচে যায়। 


কিন্তু শাহিন নিজের হাতে গুলি খাওয়ার পর হাত নিজের কন্ট্রোলের বাহিরে যাওয়ায় তার হাতে থাকা বন্দুক থেকেও বেগে গুলি বের হয়ে যায়। 

যা রাজের বা হাতের বাহুতে লাগে। সাথে সাথে কলকলিয়ে গরম রক্ত ঝরতে থাকে। 


রানি রাজের হাতের অবস্থা দেখে জ্ঞান হারায়। 


রাজ চোখ মুখ খিঁচে কোনো রকম রানি কে ডান হাতে ধরে নিজের বুকের সাথে আকঁড়ে নেয়। 


ইশারা দিয়ে পানি আনতে বললে রাজ রানির মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়। 


রানি মিনমিন চোখ নিয়ে রাজের দিকে তাকায়। রাজের হাতের অবস্থা দেখে রানি চিৎকার করে কেঁদতে থাকে। 

রাজ আর নিজের মাঝে থাকতে পাড়ে না। ঢলে পড়ে যায়। 


সবাই ধরাধরি করে গাড়ি নিয়ে বের হয়। 


রানির কোলে রাজ শুয়ে আছে। চোখ তার বন্ধ। হাত দিয়ে অঝরে রক্ত পড়ছে। রাজের কোট ভিজে গেছে। সাথে রানির জামাও। অনেক রক্তক্ষরণ হচ্ছে। 


রাজ কে বুকের সাথে চেঁপে ধরে রানি কান্না করতে থাকে। 


বেশ সময় যাওয়ার পর রাজ আবার টিপটিপ করা চোখ নিয়ে রানির দিকে তাকায়। 


নিজের রক্তাক্ত হাত টা রানির হাতের সাথে মিশিয়ে নেয়। চোখ দিয়ে পানি ছেড়ে ক্ষীণ সুরে বলতে লাগল,

"রা রানি।"

"কিছু হবে না তোমার তুমি ঠিক হয়ে যাবে। আর একটু সময়।"

"রা রানি তোমায় খুব ভালোবাসি।"

"....


রানির বুক চিঁড়ে কান্না আসছে।

"প্রেয়সী আ আমি যদি বে বেঁচে না থাকি।  তবুও তোমার কোনো র রকম কষ্ট হবে না। আমার লো লোক গুলি তোমার ভালো থাকার ব্যবস্থা করে দিবে।"

"চুপ একদম চুপ তুমি। একটা কথাও বলবে না। আমার শুধু তোমাকে চাই শুধু তোমাকে। তোমাকে চাই মানে চাই। আমার জন্যে তুমি সুস্থ হবে। ইনশাল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে। প্লিজ জান এমন বলো না।"

"ভালোবাসি তোমায় খুব ভা ভালোবাসি রানি।"


রাজ আবার চোখের পাতা বুজে নেয়। রানি গলা ফাটিয়ে কান্না করছে। রাজ কে বুকের সাথে ধরে শুধু কান্না করছে আর মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছে। 


তার একটু পর হাসপাতালের সামনে গাড়ি থামে। রাজের লোক জন আবার ধরে তাকে ভেতরে নিয়ে যায়। 


ডক্টর দেখেই বলে,

"ও মাই গড। ইমিডিয়েটলি উনাকে ওটি তে নিতে হবে। শরীর থেকে অনেক রক্ত চলে গিয়েছে। তাড়াতাড়ি করুন। আড়িআপ।"


ডক্টর রাজ কে নিয়ে ভেতরে চলে যাচ্ছিল। 

রানির মনে হচ্ছিল তার বুক চিঁড়ে কেউ তার জান টা নিয়ে যাচ্ছে। রাজের হাত টা শক্ত করে ধরে ছিল। 


আস্তে আস্তে রাজ কে তারা নিয়ে গেল। হাতের বাঁধনও ছুটে গেল। তার হাত টাও কেমন ঠান্ডা হয়ে আসছিল। রানির বুকের ভেতর ঝড় বইতে লাগল। অজানা ভয়ের ঝড়। এই ঝড়ই বোধহয় তাকে তোলপাড় করে নিবে। ছন্নছাড়া হয়ে যাবে না তো?


রানি ওটির সামনে বসে কান্না করছে আর মনে মনে দোয়া পড়ছে। 


প্রায় ১ ঘন্টা পর একজন ভেতর থেকে এলো। ওটির সামনে তখন ভিড়। রাজের গ্যাং এর সব ছেলে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। 


ডক্টর এসেই বলল,

"উনার বাড়ির লোক কে এখানে?"


ডক্টরের কথায় সবাই তার দিকে চলে যায়। ডক্টর কে ঘিরে রেখেছে। সবাই অনেক প্রশ্ন করছে, রাজ কেমন আছে। কি হলো, ঠিক আছে কি না। 


ডক্টরের ধমকে সবাই চুপ হয়ে গেল। রানি ডক্টরের সামনে যায়। 


"আমি উনার ওয়াইফ। কি হয়েছে আমায় বলুন। কেমন আছে ও?"

"দেখুন আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দুই ব্যাগ AB পজেটিব রক্তের ব্যবস্থা করুন। আধ ঘন্টার মাঝে নিয়ে আসুন প্লিজ। না হলে খুব বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। যা করার তাড়াতাড়ি করুন।"


ডক্টর আবার ভেতরে চলে গেল। 


রানি ধপ করে বসে চিৎকার করে কান্না করছে। তার রক্তের সাথে রাজের রক্তের মিল নেই। না হলে নিজের সমস্ত রক্ত দিয়ে রাজ কে বাঁচাত রানি। 


রানির চিৎকার যেন হাসপাতাল কে কাঁপিয়ে তুলছে। হাউমাউ করে বাচ্চাদের মতো কান্না করেই চলছে মেয়েটা। 


"ম্যাম। আপনি চিন্তা করবেন না। কান্না থামান।"

"ম্যাম আমরা আছি তো। চিন্তা নেই।"

"আমরা কিছু একটা করছি ম্যাম আপনি ভেঙ্গে পড়বেন না।"

"বস কে আমরা আমাদের জীবন দিয়েও সুস্থ করব ইনশাল্লাহ। আপনি কাঁদবেন না ম্যাম। আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। আমরা দেখছি।"


একেক জন একেক কথা বলে রানি কে সান্ত্বনা দিচ্ছে। রানি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। 


রাজের গ্যাং এর বেশির ভাগ লোক এখন নেই। রক্তের সন্ধানে চলে গেছে। 

কিছু লোক হাসপাতালেই আছে। তবে ফোন দিয়ে নানান জায়গায় রক্তের জন্যে যোগাযোগ করছে। 


রানি খুব অসহায়। তার কিছুই করার নেই। জন্ম মৃত্যু তো আল্লাহর হাতে। এখানে কারো কিছুই করার থাকে না। আল্লাহ যখন যাকে পছন্দ করে তাকেই নিয়ে যায়। রানির এখন আল্লাহর নাম নেওয়া ছাড়া আর কোনো কিছু করার নেই। কান্না করছে দোয়া পড়ছে আর আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই। তার ভালোবাসা তার স্বামী যেন ঠিক হয়ে যায়। 


৩০ মিনিট হওয়ার পরপর রাজের গ্যাং এর লোক ৩ ব্যাগ রক্ত আনে। 


ডক্টর সাথে সাথে তা নিয়ে ওটি তে ঢুকে যায়। 


"ম্যাম আপনি চিন্তা করবেন না। ইনশাল্লাহ বস ঠিক হয়ে যাবে।"

"বস কখনো কারো ক্ষতি করেনি। উনার কোনো ক্ষতি আল্লাহ করবে না।"

"ম্যাম আমাদের সবার এত ভালোবাসা মিথ্যে হতে পাড়ে না। আমাদের দোয়া আল্লাহ নিশ্চয় শুনবে। ইনশাল্লাহ বস ঠিক হয়ে যাবে।"


ওদের কথা গুলি রানির মন কে যেন একটু শক্ত করছে। 


রানি অনবরত কান্না করছে। আর দোয়া করছে রাজের জন্যে।


তার আরো আধঘণ্টা পর ডক্টর বের হলো ওটি থেকে। 

"আল্লাহর রহমতে উনি এখন সুস্থ আছে। আল্লাহর অশেষ কৃপা। রক্ত চলছে আরো কিছুক্ষণ পর উনাকে কেবিনে দেওয়া হবে। বাকি টা আল্লাহর ইচ্ছা।"


ডক্টর চলে যায়। সবাই স্বস্তির নিশ্বাস নেয়। 

রানি হাজার বার কোটি বার আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। 


বেশ সময় যাওয়ার পর রাজ কে কেবিনে দেওয়া হয়। রাজের হাত টা রানি শক্ত করে ধরে রেখেছে। রাজ ঘুমাচ্ছে। একে একে তার গ্যাং এর সবাই গ্যাংস্টার কে দেখে যাচ্ছে। 


সারারাত রাজ আর ঘুম থেকে উঠে নি। চোখ মেলেও তাকায়নি। 

রানি সারারাত রাজের পাশে বসে ছিল। রাজের হাত টা খুব শক্তে ধরে রেখেছিল তার অর্ধাঙ্গিনী। 


সকালে রাজ মিটমিট করে তাকাতেই বুকে ভার কিছু অনুভব করে। 


ভালো করে তাকিয়ে দেখে রানি তার বুকে ঘুমিয়ে আছে। রাজ মুচকি হেসে রানির মাথায় চুমু খায়। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে রানির ঘুম হাল্কা হয়ে যায়। 


ধরফড়িয়ে রাজের বুক থেকে উঠে,

"তুমি ঠিক আছো?"

"....

"আসলে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছি..."


রানির কথা শেষ করার আগে রাজ আবার এক হাতে রানি কে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।

রানিও মুচকি হেসে রাজের বুকের লেগে থাকে। 


রাজ রানির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। 

"পাগলি খুব ভালোবাসি তোমায়।"

"....

"সারারাত ঘুমাও নি বুঝি?"


রানও মাথা তুলে বলে,

"স্বামীর এই অবস্থা থাকলে কোনো বউ ঘুমাতে পাড়ে না।"

"ওরে আমার পিচ্চি বউ টা রে।"


"তুমি থাকো আমি তোমার গ্যাং এর লোক কে জানাই তাদের গ্যাংস্টার চোখ মেলেছে।"

"ওরা কি হাসপাতালে?"

"তাহলে? সারা রাত সবাই এখানেই ছিল। ইনফেক্ট শুরু থেকেই ছিল। সবাই তোমার কেবিনের সামনে আছে হয়তো। ডক্টর এতো করে বলল সবাই কে কেবিনের সামনে না আসতে কে শুনে কার কথা?"

"বলো কি?"

"তবে আর কি? ডক্টর ২ ব্যাগ রক্তের কথা বলেছিল তোমার তাও আধঘণ্টার মাঝে। তোমার লোকজন তার আগেই ৩ ব্যাগ রক্ত নিয়ে এসেছে।"

"ওদের ডাকো।"

"হুম।"


রানি সবাই কে গিয়ে বলতেই পিঁপড়ার মতো হুড়মুড়িয়ে পড়ে রাজের দিকে। সবাই এক সাথে রাজের বেডের কাছে চলে যায়। এমন অবস্থাতেই রাজ কে জড়িয়ে ধরে সবাই চোখের পানি ফেলে। 

ওদের এই ভালোবাসা দেখে রাজ নিজেও ঠিক থাকতে পাড়ে না। আবেগপ্রবণ হয়ে কান্না করে দেয়। 


রাজ কে ৩ দিন হসপিটাল রাখা হয়। তারপর রানি রাজ আর সবাই কে নিয়ে বাড়ি যায়। 


এক সপ্তাহর উপর রানি নিজের সব টা দিয়ে রাজের যত্ন করে। রাজও সুস্থ হয়ে উঠে। এর মাঝে রানির বাবা মা এসে এসে রাজ কে দেখে যায়। 


রাজ রানি সাইরুর এক হোটেলের ব্যালকুনিতে বসে আছে। 


বেড়াতে এসেছে এখানে রানি কে নিয়ে। বউ কে নিয়ে সফর দেওয়া তো সুন্নত। আমার বিশ্ব নবীও উনার স্ত্রীদের নিয়ো বিভিন্ন দেশে সফর দিতেন।


দুজনেই ব্যালকুনিতে বসে আছে। ডিভানের উপর আধো শোয়া রাজ কে ঘেষে রানিও বসে আছে। 


আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা মুগ্ধ হচ্ছে। নীরবে যেন তারা তারাদের সাথে কথা বলছে। দুজনেই চুপ। 


সামনে কফি রাখা। এক কাপ কফি। রাজ সেই কফি হাতে তুলে নেয়। কফির মগে চুমুক দেয়। রানির কোমর টেনে রানিকেও আরো কাজে নিয়ে আসে। কফির মগ তার দিকে এগিয়ে দেয়। 


রানি মুচকি হেসে তা গ্রহণ করে। কারণ এটা রাজের অভ্যাস। এক কাপ কফিতে সে যেন রানি কে খুঁজে পেতে চায়। 


রাজ উঠে বসে। রানির গায়ে দেওয়া চাদরের মাঝে সেও ঢুকে পড়ে। রানি কে মুচকি হেসে নিজের উষ্ণ উমে নিয়ে আসে। রানিও মুচকি হেসে রাজের বুকে মাথা রাখে। 


হীম শীতল বাতাস বইছে চারিদিকে। 

হোটেলের লাইটের আলো তে চারপাশের প্রকৃতি আবছা দেখা যাচ্ছে। দুজনেই তাকিয়ে আছে তার দিকে। 


রাজ হঠাৎ রানির কানের পাশে হাত গুঁজে দিয়ে রানি কে টেনে আনে। রানির ঠোঁটে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করে দেয়। গভীর চুম্বনে তলিয়ে যায় দুজনে।


রাজ রানি কে ছেড়ে মুচকি হাসে। রানিও এক মারাত্মক রকম লজ্জাময় হাসি হাসে। 

"লজ্জাপরীর ওই লজ্জামাখা রঙ্গিন হাসি টা ভীষণ ভালোবাসি। ওই হাসি আমার দুনিয়া আলোকিত করে তুলেছে। ভালোবাসি রানি।"


রাজ আবার কফির মগে ঠোঁট লাগায়। সেই কফি রানির দিকে এগিয়ে দেয়। 


এক কাপ কফি তে দুজন দুজনকে খুঁজে চলার আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। 


সমাপ্ত.....


0 Comments:

Post a Comment