গল্প গ্যাংস্টার পর্ব ২১

 #গ্যাংস্টার

#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)

পর্ব : ২১


রাতে ঘুমানোর আগে রানির খুব অস্বস্তি ফিল করছিল। অস্থিরতার জন্যে শুতে যেতেও ভালো লাগছিল না। 


অবশেষে বুকের হাজার প্রশ্ন আর অস্থিরতা নিয়ে সে ব্যালকুনিতে চলে যায়। রাতের ঘন কালো নিস্তব্ধ আকাশের দিকে তাকিয়ে হাজারো প্রশ্ন নিয়ে খেলা করছিল সে। 


রাজ পেছন থেকে তার কানো এসে ফোন রাখে। আস্তে করে বলে,

"আঙ্কেল কথা বলো।"


রানি একবার রাজের দিকে তাকিয়ে ফোন নেয়। বাবা সাথে খুব কথা বলে। তারপর মায়ের সাথে কথা বলে মন টা তার একটু হাল্কা হয়। 


কথা শেষ করে পাশ ফিরলে রাজ কে দেখে না। 

ফোনের স্কিনে নজর দিলে দেখে লক পেপারে তার একটা ছবি। এটা সেই ছবি যেদিন সে বাচ্চাদের নিয়ে খেলা করছিল পার্কে। হয়তো রাজ লুকিয়ে ছবি তুলেছিল। 

রানি তার নিজের ছবির দিকেই তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে। রাজ কে নিয়ে খুব করে ভাবছে সে। 


রাজ তার হাত থেকে ফোন টা নিয়ে বিছানাট উপর ছুঁড়ে মারে। 


রানির হাত ধরে টেনে ব্যালকুনির ডিভানে বসে। নিজের কোলে রানি কে বসায়। রানি উঠে যেতে চাইলেও রাজ তার কোমর পেঁচিয়ে রাখে। তাই চাইলে আর উঠা হয়ে উঠে না তার। 


এক কাপ কফি তে রাজ নিজের ঠোঁট ডুবায়। রানি কেও কয়েক বার খাওয়ায়। 


রাজ রানি এই এক কাপ কফিই শেয়ার করছে দুজন মিলে। 


"কফির স্বাদ টা তেঁতো হয়ে যাবে যদি ওই তোমার মিষ্টত্বের ছুঁয়া না পায়।"

কথাটা বলেই রাজ রানির ঠোঁটে নিজেকে উৎসর্গ করে। 


রানিও কেন যেন রাজের এমন আচরণের প্রতিউত্তর দেয়। যার ফলে মুহূর্তে পরিবেশ টা মধুময় হয়ে উঠে। 


রানি রাজ কে ঝাপটে ধরে। 

রাজ মুচকি হেসে তাকে কোলে নিয়ে বিছানার দিকে এগিয়ে যায়। 


ভালোবাসার আরেকটা রাত দুজনে মিলে পারি দেয়। গভীর ভালোবাসায় মেতে উঠে দুজনে। 


সকালে রানি তাকিয়ে দেখে রাজ তার বুকে মাথা রেখে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে আছে। রানির ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসি আসে। 


রাজ একটু নড়েচড়ে উঠলে রানি আগের মতো চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করে। 


রাজ চোখ ডলে রানির দিকে তাকায়। মুচকি হেসে রানির চুল গুলি কানের পাশে গুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করে। মাথা এগিয়ে দিয়ে রানির কপালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। ফিসফিসিয়ে বলে,

"প্রেয়সী কে যে খুব ভালোবাসি।"


রাজ তারপর উঠে যায়। ওয়াশরুমে গেলে রানি চোখ খুলে তাকায়। খুশিতে তার কান্না চলে আসে। 


"মানুষ টা তাকে এতটা ভালেবাসে। এত কেয়ার নেয়। যেন বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখলে তিনি স্বস্তি পায়। সেই মানুষটা কে কি করে অবিশ্বাস করছি? এটা কি সন্দেহ? কেন একজনের কিছু কে বিশ্বাস করে নিজের ভালোবাসা কে দূরে রাখছি আমি? খুব ভুল করছি কি আমি?"

রানি নিজের মনে মনে কথা গুলি বিড়বিড় করছিল। 


মনে মনে সে ভেবেই নিয়েছে রাজের সাথে এই বিষয়ে সে কথা বলবে। 


রাজ ওয়াশরুম থেকে এসে চুপচাপ রেডি হতে থাকে অফিস যেতে হবে তার। 


রানি সেই আগের মতো বিছানায় বসে আছে। গায়ের উপর চাদর টেনে মুখ গম্ভীর করে বসে আছে। রানির মুখের ভাব আর  চুপ থাকা দেখে রাজ বলল,

"বাচাল পরী চুপ কেন?"

".....

"রেডি থেকো মিটিং টা শেষ করে তোমায় আঙ্কেল আন্টির কাছে নিয়ে যাবো।"

"আপনার সাথে আমার কথা আছে।"

"বলে ফেলো কি কথা। কথা আছে তবে চুপ কেন প্রেয়সী?"

"আপনি আগে আরেকটা বিয়ে করেছেন?"


ততক্ষণ পর্যন্ত রাজ রেডি হচ্ছিল কিন্তু রানির কথা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে তাকায়। 


রানির চোখ রাজে আবদ্ধ আর রাজের চোখ রানি তে আসক্ত। 

রাজ প্রায় ১ মিনিট রানির দিকে তাকিয়ে ছিল। রানি চোখ বড়বড় করে কৌতূহলী চোখ নিয়ে রাজের দিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু রাজ তাকে অবাক করে দিয়ে আবার নিজের মতো রেডি হওয়া নিয়ে ব্যস্ত। 


"কি হলো বলুন? আমার কথার জবাব দিন।"


রাজ হাতে ঘড়ি লাগাতে লাগে। আর বলল,

"লেইট হয়ে যাচ্ছে আসছি। যা বললাম তাই করো রেডি হয়ে থেকো।"


গাড়ির চাবি টা নিয়ে রাজ সুসু করে বের হয়ে গেল। রানি চোখের পানি ফেলতে থাকে। কান্না করতে করতে বলে,

"আমি জানতাম আপনি বিয়ে করেছেন। তাই চুপ ছিলেন। আপনি যদি বিয়ে না করতেন তাহলে তো আমায় বলেই দিতেন সোজা সাপ্টা কথা। আপনি একটা ঠকবাজ। আমি আপনার সাথে আর থাকব না। আব্বুর কাছে গেলে আমি আর আসব না। আমার জীবন নিয়ে আপনি ছিনিমিনি মিছে খেলা পেয়েছেন? আপনার মতো রাক্ষস কে আমি আর ভয় পাবো না। আপনি গ্যাংস্টার আছেন আপনার গ্যাং এ আমার কাছে নয়। আমি, আমি আপনাকে ডি ডিভোর্স দিব। আমার লাইফ চোরাবালি হয়ে গেল।"


রানি মাথায় হাত দিয়ে জোরে জোরে কান্না করছে আর নিজের সাথে বিড়বিড় করছে।


রাজ মিটিং শেষ করে ১২ টা ২০ এ বাসায় চলে আসে। 

রুমে গিয়ে দেখে রানি কান্না করছে। 


"তোমায় কি বলেছিলাম আমি?"

".....

"কি হলো রানি?"

"আপনি আপনার লাইফ টা খেয়ে ফেলেছেন আপনি একটা রাক্ষস।"


রানির কথা শুনে রাজ বিশম খেয়ে যায়। শুকনো কাশতে থাকে। রানির কাছে গিয়ে তার পাশে বসে,

"মানুষের লাইফ কি খাওয়া যায়?"

"হ্যাঁ আপনি আমার লাইফ খেয়েছেন।"


রাজ শুষ্ক ঢুক গিলে শান্ত কন্ঠে বলে,

"কি ভাবে বলো আমায়?"

"আপনি আগে একটা বিয়ে করেছেন তাকে ঠকিয়ে আপনি আবার আমায় ঠকিয়ে বিয়ে করেছেন। আপনি একটা ঠকবাজ বাটপার।"


রানির কথা শুনে রাজ শান্ত থাকতে পারল না। রেগে গিয়ে রানি কে ধমক দিল। 

"শাট আপ ডেমেট। স্টপ দিজ ননসেন্স। চুপ কান্না থামাও।"


রানি এবার ভ্যা ভ্যা করে হাতা পা ছুড়াছুড়ি করে কান্না করছে। তাকে একটা বাচ্চার মতো লাগছে। 


রাজ ধমক দেয় তো রানি তার কান্নার জোর বাড়িয়ে দেয়। 

রাজ উপায় না পেয়ে রানি কে কোলে তুলে নেয়। তারপর নিচে যেতে থাকে। 


রানি হাত পা নাচাতে নাচাতে,

"এই #গ্যাংস্টার কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়?"

"....

"আ আপনি আমায় মেরে ফেলতে নিয়ে যাচ্ছেন তাই না? আপনার গোপন কথা জেনে গিয়েছি বলে। আপনি ডেভিল জামাইয়ের মতো আমায় মেরে ফেলতে চাইছেন।"

"জাস্ট শাট আপ ননসেন্স। এখন সত্যিই মার খাবে যদি কান্না না থামাও।"

"আল্লাহ আল্লাহ আমায় বাঁচাও তুমি। এই রাক্ষসের কাছ থেকে.."


রানির এই আবিল্লি পেঁচাল রাজের অসহ্য লাগছিল। রানি কে কোলে নিয়ে থেমে যায় সে। না পেরে বলল,

"রানি প্লিজ চুপ করো। তোমাকে তোমার বাসায় নিয়ে যাচ্ছি। প্লিজ স্টপ দিজ।"

"ওও এখন আমার লাইফ টা খেয়ে আপনি আপনার আগের বউ কে নিয়ে আসবেন তাই না? আমি বুঝি না ভেবেছেন? আমি সব জানি। ওকে আসেন নিয়ে আসেন আপনার ডাইনি বউ কে। থাকব না আমি আপনার কাছে। আমি আপনাকে ডিভোর্স দিব।"


রানির কথায় রাজ পাত্তা না দিয়ে আবার নিজের মতো করে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। 


চলবে....


(আমি দুঃখিত কাল গল্প না দেওয়ার জন্যে। গঠনমূলক কমেন্ট করুন।)😊


Sabriha Sadi

0 Comments:

Post a Comment