গল্প মহীপতি পর্ব ৩৩

 #মহীপতি👑

#লামিয়া_রহমান_মেঘলা

#পর্ব_৩৩

অন্ধকারে নিজেকে চেয়ারের সঙ্গে টাইট করে বাঁধা আবিষ্কার করে হৃদি। 

মাথাটা হালকা নাড়ায়।

এতেই প্রচন্ড যন্ত্রণা হয়ে ওঠে। 

কতক্ষণ ধরে বেহুস ছিল সে। 

মাথায় আসছে না কিছু। 

তবে হাত পা বাঁধা টাইট করে বাঁধা। 

ঘরে কারোর জুতার শব্দে ক্রমশ হৃদির দিকে এগিয়ে আসছে। 

একটু ভয় পেয়ে যায় হৃদি এবং ঘাবড়ে যায়। 

হৃদি চোখ খুলে সামনে তাকায়। 

ইরফান হাতে খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে, 

ক্লান্ত হৃদি ধিরে বলে,

" কি এগুলে?"

" খাবার। গত ৩ দিন জ্ঞান হারিয়ে ছিলে। কি জানি জং সুক আঙ্কেল তোমাকে কি ঔষধ দিয়েছিল। 

এখন দ্রুত খেয়ে নেও। তুমি সুস্থ হলে বিকালে আমরা বিয়ে করব। "

হৃদির প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। 

কিন্তু মাথা খাটিয়ে কাজ করতে হবে। 

" আমার.... 

হাত টা...... 

খুলে দিন...."

ইরফান হৃদির  হাত পায়ের বাধা অংশের দিকে তাকায়। 

কালো হয়ে গেছে। 

হৃদি সোজা হয়ে বসার ব্যার্থ চেষ্টা করে। 

ইরফান হৃদিকে সোজা করে বসায়৷ 

" খাবার! "

" না....

খাব না....

 এমন স্যাঁতস্যাঁতে...... 

পরিবেশে...... 

আমি খাব না........ "

হৃদির কথা বলতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। 

ইরফান হৃদির সামনে বসে,

" চলো তাহলে তোমাকে রুমে নিয়ে যাই৷ "

ইরফান হাত বাড়ায়   

" না... 

ধরবে না৷ "

" তাহলে যাবে  কিভাবে?"

" আমি...

যাব। "

হৃদি চেয়ারে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। 

আর সোজা হাটা ধরে। 

কতটদ যেদি মেয়েটা৷। 

ইরফান হৃদির পেছন পেছন হাঁটছে, 

" এত বেশি নিজেকে শক্তিশালী প্রমাণ করছো৷ শেষ মেস আমার বুকেই ফিরতে হবে তোমাকে। "

হৃদির প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। কিন্তু এই মুহুর্তে কোন কথা বলা যাবে না। 

হৃদি কিছু দুর গেলে পড়ে যেতে নেয়। 

এই সময় একজন এসে হৃদিকে ধরে বসে,

মহিলাটা ইরফানের মা। 

"কিরে তুই ওকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?"

" ওকে খাবার দেব না। নাহলে মরে যাবে। "

" হুম।।তুই যা আমি দেখছি। "

" আমি যাব না? "

" না আমি যাচ্ছি। ".

ইরফানের মা হৃদিকে নিয়ে তার রুমে চলে আসে, 

" তুমি গোসল করবে?"

" আন্টি..... "

হৃদির চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। 

ইরফানের মা হৃদিকে নিয়ে ওয়াসরুমে আসে। নিজের হাতে হৃদিকে পরিষ্কার করিয়ে নিজের একটা জামা পরিয়ে দেয়। 

হৃদি একটু অবাক হচ্ছে। 

গোসল করে তার একটু ভালো লাগছে। 

কামিনি বেগম ছায়াকে বিছনায় শুইয়ে খাবার খাইয়ে দেয়। 

এরপর ঔষধ খাইয়ে হাতে পায়ের ক্ষত স্থানে মলম লাগিয়ে দেয়। 

হৃদি কামিনি বেগমের দিকে তাকায়, 

" কে আপনি আন্টি?"

" আমি ইরফানের মা। তোমার বরের সৎ মা৷ "

হৃদি অবাক হয়। 

এটা কামিনি বেগম বুঝতে পারেন। 

" মারে তোকে দেখে আজ আমার প্রথম দিনের কথা মনে পড়ছে। 

জানিস বাবা লি জং সুক যে দিন আমাকে আসিফ খানের সামনে উপস্থাপন করেছিল। সে দিন নিজের উপর প্রচুর রাগ হচ্ছিল। 

একটা মেয়ে আমি। অন্য একটা মেয়ের ঘর ভাঙতে যাচ্ছি। 

আসিফ খান কে দেখে তখন আমার ধিরে ধিরে ভালো লাগা কাজ করতে লাগল। 

বাবারে আমি বারে কাজ করতাম৷ ড্রিংস সার্ভ করতাম মানুষ কে। 

আমার কোন মূল্য ছিল না। 

দু তিন বার রে* ও হয়েছি। 

এরপর আসিফ খানকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। 

কিন্তু সময়ের সঙ্গে বুঝেছি লেকটা জঘন্য মানুষ। যে তার এত সুন্দর স্ত্রী কে ধোঁকা দিতে পারে৷ সে আর কি করতে পারে। 

জং সুকের প্লান অনুযায়ী ইরফান পৃথিবীতে আসার পর থেকেই ইরফান জং সুকের কথা মত কাজ করে। 

আমিও চাইতাম আরহাম কে ধ্বংস করে দিতে। 

কিন্তু এখন বুঝি আসিফ খান বর জং সুকের মত জঘন্য মানুষ কে শেষ করা উচিত । 

না কি আরহাম কে। 

আমি ভুল করেছি। তোকে দেখে বড্ড মায়া লাগছে। 

তুই কারোর স্ত্রী। 

তোর স্বামি আছে। তোকে কি করে তোর স্বামীর থেকে আলাদা করতে পারে।"

হৃদি কামিনি বেগমের হাতের উপর হাত রাখে,

" সাহায্য করবেন আমাকে?"

" করব৷ সেই জন্য ই নিয়ে এসেছি। আমার ছেলের উপর আমার বিশ্বাস নেই। তোর সঙ্গে খারাপ কিছু করলে কি হতো বলত। "

"আমার আরহাম কেমন কাছে কে জানি। ওনাকে ওরা গুলি করেছিল। "

" ভরসা রাখ। "

" হ্যাঁ ওনার কিছু হবেনা আমি জানি। আমার আরহামের কিছু হতে পারে না৷  "

কামিনি বেগম,  হৃদির গালে হাত রাখে,

" এখন একটু রেস্ট কর। বিকালে ওরা তোর বিয়ের আয়োজন করেছে। আমি বিকালের আগে তোকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করব৷ "

" ধন্যবাদ আন্টি। "

" হ্যাঁ। "

,

,

,

হসপিটালের কলিডোর দিয়ে পায়েচারি করছে মিসেস ইউন -সুহ। 

আজিজ রহমানের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। 

গত ৩ দিন যাবত আরহাম জ্ঞান হারা৷ 

সার্জারী করার পরেও সে সুস্থ নয়৷ 

ডক্টর রা নিজেরাও কিছু বলতে পারছে না। 

আসিফ খান দেশে ফিরেছে। 

তবে মিসেস ইউন -সুহ ছেলেকে দেখতে দেয় নি। 

আজিজ রহমান নিজের সব টুকু দিয়ে হৃদিকে খোঁজার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। 

মিসেস ইউন -সুহ দুটো কফি নিয়ে আসে। 

" আজিজ গত তিন দিন কিছু খাচ্ছো না। তার উপর এই হসপিটালেই আছো। একটু খেয়ে নেও। "

" আমার মেয়েটার সঙ্গে ওরা কি করছে ইউন সুহ৷ "

" কিছু করছে না। প্লিজ চিন্তা করো না৷ "

" তুমি জানো না। মেয়ে আমার বড্ড যেদি। ইরফান যদি ওর শরীরে টাচ করে তাহলে সে নিজেকে শেষ করে দেবে। আমি আর আমার মেয়েকে দেখতে পারব না। "

" তুমি প্লিজ চিন্তা করো না। "

এমন সময় পেছন থেকে দৌড়ে আসে একটা মেয়ে। 

" আন্টি আন্টি। কোথায় আরহাম কোথায়। "

" রোজি তুমি এখানে কি করছো?"

" আন্টি প্লিজ আরহাম কে একটু দেখতে দিন। "

" বেয়াদব মেয়ে বের হও এখান থেকে। তোমার মুখ দেখতে চাই না। "

" আন্টি প্লিজ.. "

মিসেস খান এর মাথায় হটাৎ করেই একটা বুদ্ধি আসে,

" তুমি চাও আরহাম কে দেখতে?"

" হ্যাঁ। "

আজিজ রহমান অবাক হয়ে যায়। 

মিসেস ইউন- সুহ ইসারা করে আজিজ রহমান কে চুপ থাকতে বলে, 

" দেখতে পারবে তার আগে বলো। ইরফান এই মুহুর্তে কোথায় আছে? "

" আমি জানি না। "

" বেরিয়ে যাও। "

" দেখুন আমি জানিনা তবে জানার চেষ্টা করতে পারি। "

" ওকে করো। "

রোজি ফেন বের করে ব্যাগ থেকে। 

ইরফানের নাম্বারে কল করে,

" হ্যালো। "

" ইরফান? "

" হ্যাঁ। "

" রোজি বলছিলাম এত দ্রুত ভুলে গেলেন?'

" না ভুলিনি বলুন। "

" কোথায় আছেন?"

" বাড়িতে। "

" আপনার বাড়িতে?"

" হ্যাঁ। "

" একটু দেখা করা যাবে কি?"

" ঢাকার বাড়িতে নেই আমি। আমার অন্য একটা বাড়িতে আছি দেখা করা যাবে না৷ "

" আমার একটু দরকার আপনি বলুন কোথায় বাড়ি৷ "

" ওহ আপনি আসুন৷ বিকালে আমার আর হৃদির বিয়ে। "

" ওয়াউ কংগ্রাচুলেশনস। কোথায় বিয়ে?"

" এই XYZ এলাকায়............. 

ঠিকানায়৷ "

" বাহ৷ তাহলে আমিও নিমন্ত্রিত তাই ত? '

" হ্যাঁ হ্যাঁ আপনি প্রথম প্রথম যে সাহায্য করেছেন। "

রোজির মুখ চুপসে যায়৷ 

মিসেস ইউন- সুহ ইসারা করে রোজিকে চালিয়ে যেতে,

" ঠিক আছে তাহলে আমি আসছি। "

রোজি কল কেটে দেয়। 

ওরা কথা বলা শেষ করতে পেছনে ফিরে সবাই অবাক হয়ে যায়। 

,

,

চলবে?

0 Comments:

Post a Comment