গল্প মহীপতি পর্ব ৩২

 #মহীপতি👑

#লামিয়া_রহমান_মেঘলা

#পর্ব_৩২

গম্ভীর পর্যালোচনায় মিটিং চলছে উ এন ও এর অফিস রুমে। 

হৃদি আর আরহাম যে ছদ্মবেশে এসেছে সেটা কেউই বুঝতে পারে নি। 

"মিস্টার জহিরুল। আশা করছি আপনাকে সবটা বুঝাতে পেরেছি৷ এখানে আমার সমস্ত লোক আছে। যারা ভরসা আপনার এতে কোন সমস্যা হবে না৷ "

জহিরুল ইসলাম বসে থাকেন কিছুক্ষণ জাবত৷ 

এরপর কিছু একটা ভেবে তিনি বলেন,

" আমি এত বড় কাজ করব কিন্তু যদি এটা জানতে না পারি যে কাজের আসল গুরু কে "

ইরফান একটু নড়েচড়ে ওঠে,

" মানে?"

" মানে। আপনি এই খেলার আসল মাস্টার মাইন্ড নন। আমি আপনাকে দেখেই বুঝতে পারছি বিষয় টা৷ "

" আপনি কিভাবে বুঝতেছেন এগুলো। ফালতু কথা৷ "

" আপনার উত্তেজিত হওয়ার মাত্রাই আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে এসবের পেছনে অন্য কারোর হাত আছে। "

" মি. জহিরুল.. "

ইরফান কে থামিয়ে রুমে প্রবেশ করে লি জং-সুহ। 

" থামো আরহাম। উনার সঙ্গে আমার কথা বলা উচিত। -

হ্যালো আমি মিস্টার লি জং -সুক। "

হৃদি আর আরহাম অবাক হয়ে যায়। 

তারা ভাবতেও পারেনি এই লোক থাকবে এসব কিছুর পেছনে। 

সে একজন বিক্ষাত বিজনেসম্যান। 

কোরিয়াতে খুব ভালো পজিশনে আছে। 

" আপনি আমার প্রস্তাবে রাজি হন। আমাদের সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস এর ম্যাডাম জিওন উউনি  আছেন। 

কি ম্যাডাম আমি ঠিক বলছি ত? "

হৃদি নিজের জায়গা থেকে উঠে দাঁড়ায়। 

" হ্যাঁ আপনি ঠিকই বলছেন। 

আমরা সব সামলে নেব। প্রয়োজনে আপনাকে এত টাকা দেব আপনি দেশের বাইরে বউ বাচ্চা নিয়ে আরামসে জীবন কাটাতে পারবেন৷ "

জহিরুল ইসলাম কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। 

" আপনি বলছেন। ঠিক আছে। তাহলে পরিকল্পনা কি আপনাদের। প্লিজ একটু বলবেন আমাকে। "

" মিস জিওন ইউনি আপনি বলবেন প্লান টা কি?"

" নো আপনিই বলুন। "

" না আপনি বলুন বিষয় টা ভালো শোনাবে।"

" মিস ইউনি। আপনাকে এত সুন্দর দেখাচ্ছে আপনিই বলুন। "

" জি কিছু মনে না করলে আমি ওনার সেক্রেটারি হিসাবে সবটা উপস্থাপন করতে চাই। "

আরহাম উঠে দাঁড়ায়  

এবং প্রজেক্টেরে ওদের প্লান সবটা সাজিয়ে গুছিয়ে বর্ণনা করে। 

আসলে জং সুকের সন্দেহ হচ্ছিল হৃদিকে দেখে তাই সে হৃদিকে ফোর্স করছিল। 

কিন্তু আরহামের বর্ণনা দেখে তিনি আর কিছু বলেন না। 

ডিল করে তারা সেখান থেকে চলে যায়। 

হৃদি চেয়ারে বসে পড়ে,

" জং সুক। এই জং সুক এসবের পেছনে? আমি ভাবতে পারছি না। "

আরহাম চোখের চশমা খুলে ফেলে,

" আমিও বুঝতে পারছিলাম কিছুত গন্ডগোল আছে। "

" তাহলে নেক্সট কি করবেন?"( জহিরুল) 

" প্লান ত সাজানোই আছে শুধু আমল করার পালা। "

" বেস্ট অফ লাক আরহাম খান৷ মিসেস হৃদি খান। "

" আপনাকেও। আপনি সত্যি একজন ভালো মানুষ। "

" মাই প্লেজার৷ "

,

,

আরহাম হৃদি বাড়িতে চলে আসে। 

" সিরিয়াসলি আরহাম আপনি কল্পনা করতে পারছেন৷ কত বড় খেলোয়াড় এরা৷ "

" কল্পনা করতে পারলে ওরা আস্ত থাকত না৷"

" আমারত রাগ হচ্ছে। কি রকম বেহায়া হলে মানুষ এরকম একটা জঘন্য কাজের অফার এত সুন্দর ভাবে দিতে পারে। "

" আজকেই জং সুক অ্যারেস্ট হবে। "

" সত্যি? "

" হ্যাঁ সত্যি। "

" আপনি আমার মহারাজ। "

আরহাম মৃদু হেসে হৃদিকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। 

হৃদির কানে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়। 

হৃদি কেঁপে ওঠে, 

আরহাম হৃদিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। 

" এত ভলোবাসি। "

" সত্যি। "

" হুম..."

হৃদি আরহামের পিঠে হাত নেওয়া বিদ্যমান এমন সময় গুলির শব্দ। 

হৃদি থমকে যায়। 

হাত দেয় আরহামের পিঠে। 

রক্তে ভরে গেছে আরহামের পিঠ। 

হৃদি আরহামকে সামলাতে পারেনা  মাটিতে পড়ে যায়। 

হৃদি সামনে দেখে অনেক বড় একটা গ্যাং । 

যারা সব কালো পোশাক পরে রেখেছে। 

আরহাম হৃদির দিকে তাকিয়ে বলে,

" পালাও। "

" না কোথাও যাব না আপনাকে রেখে। "

কালো গার্ড দের মাঝে একজন এগিয়ে আসতে গেলে হৃদি আরহাম কে জড়িয়ে ধরে,

" গুলি মেরো না প্লিজ। 

প্লিজ গুলি মেরো না প্লিজ। প্লিজ গুলি মেরো না। "

হৃদি চিৎকার করছে। 

কিন্তু ওদের ভেতর একজন এগিয়ে এসে হৃদিকে জোর করে আরহামের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। 

" ছাড়ুন আমাকে। ছাড়ুন৷ 

আরহাম.... "

লোক গুলোর পেছন থেকে জং সুক বেরিয়ে আসে। 

হাতে তার সুটার গান৷ 

সাইলেন্সার দেওয়া। 

হৃদির সামনে এসে আরহামের বুকে পা রাখে। 

আরহামের মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে যায়। 

" ছাড়ুন.....

ওনাকে ছেড়ে দিন প্লিজ.... "

হৃদির চিৎকার শুনে জং সুক সাইকো দের মত হাসছে। 

" মিস জিওন ইউনি... গেম ভালোই খেলেছেন। তবে আমার সামনে টিকা কঠিন৷ "

হৃদি নিজেকে হাজার ছাড়াতে চেয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। 

এদিকে আরহাম মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। 

ওর চোখ গুলোও বন্ধ হয়ে আসছে। 

চোখের সামনে আরহামের এমন অবস্থা দেখে হৃদির সহ্য হচ্ছে না। 

গার্ড গুলো আরহাম কে সেখানে ফেলে হৃদিকে নিয়ে বেরিয়ে  আসে। 

হৃদি দেখতে পায় তাদের সব গার্ড যারা সিভিল ড্রেসে বাড়িটা ঘিরে রেখেছিল সবাই মারা গেছে। 

" ছাড়ুন... 

আরহাম... "

আরহাম সব শুনছে কিন্তু বলিষ্ঠ এই মানুষ টার শক্তি টুকু এই মুহুর্তে সব শেষ। 

,

,

জং সুক হৃদিকে সেন্স লেস করে নিয়ে যায়। 

গাড়িতে উঠে জং সুক হাসে,

" আরহাম খান৷ প্লান ভালোই ছিল। 

কিন্তু তুমও জানোনা আমি তখনি বুঝে গিয়েছিলাম এটা জিওন ইউনি নয়। যখন ইউনির সব কথা তুই বলেছিলে। 

আরহাম তোকে মরার কোন প্লান আমার ছিল না৷ কিন্তু তোর বউকে দেখে বুঝলাম ইরফান কেন সব সময় এই মেয়ের জন্য হাসফাস করত। 

সমস্যা নেই এখানে তুই মর আর ওখানে ইউন-সুহ হবে আমার। 

বর এই মেয়েটাকে ইরফান কে দিয়ে দেব।। বেচারা আমার ভালো পেয়াদা। 

এত টুকু উপহার তাকে আমি দিতেই পারি। "

জং সুক গাড়ি চালাতে বলে। 

,

,

আসলে উ এন ও অফিসেই জং সুক সব বুঝতে পেরেছিল৷। 

জং সুক হৃদি আর আরহাম চলে আসার পর জহিরুল ইসলাম কেও কিডন্যাপ করে নেয়। 

এরপর প্লান করে হটাৎ করেই হামলা করে। 

যাতে আরহাম কিছুই বুঝতে না পারে। 

জং সুকের প্লান মতই সব কিছু হয়েছে। 

,

,

,

ঘুম থেকে উঠেই মিসেস ইউন -সুহ চোখ মুখের ঘাম মুছেন। 

" ইয়া আল্লাহ আমার সন্তানের জন্য এ কেমন স্বপ্ন দেখলাম আমি। "

মিসেস ইউন -সুহ খুবই বাজে স্বপ্ন দেখেছেন। 

তিনি দ্রুত ফোন দিয়ে আরহাম কে কল করে। 

করিম ফোন বেজে চলেছে আরহাম ফোন তুলছে না। 

রক্তের বন্যা বইছে ফ্লোরে। 

তিনি যদি জানতেন তার আদরের ছেলের এখন কি অবস্থা। 

মিসেস ইউন-সুহ আরও চিন্তিত হয়ে পড়েন। 

" আমার বাচ্চা দের কি হলো। "

হৃদিকে কল করে সেটাও ধরছে না। 

,

মিসেস খান দ্রুত আজিজ রহমানের রুমে চলে আসে। 

আজিজ রহমান  জোহরের নামাজ আদায় করছিলেন। 

সালাম ফিরিয়ে দেখেন মিসেস ইউন -সুহ এসেছে। 

জায়নামাজ গুছিয়ে রেখে বলেন,

" কি হয়েছে?"

" আজিজ জলদি চলো আমরা হৃদয় পুরে যাব। "

" কেন কি হয়েছে? "

" তুমি প্রশ্ন করো না। আমার ভীষণ খারাপ লাগছে। আমার মনে হচ্ছে ওরা কোন বিপদে আছে। "

" তুমি শান্ত হও ওদের ফোন করো। "

" করেছি ধরছে না। "

" ঠিক আছে চলো তার আগে আমি আনিস কে পাঠাই বাড়িতে। "

আনিস রহমান হৃদির চাচা৷ 

আজিজ রহমান দ্রুত আনিস রহমান কে কল করে তাদের বাড়িতে যেতে বলে।। এবং এদিকে নিজেরাও রওনা হয়। 

,

,

চলবে?


0 Comments:

Post a Comment