#মহীপতি👑
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা
#পর্ব_৩১
[পূর্ণ এবং প্রাপ্ত বয়স্ক দের জন্য উন্মুক্ত ]
আজিজ রহমান আর অতুসী বেগম খান বাড়িতে যাওয়ার পর৷
সবাই মিলে খেতে বসে।
মিসেস ইউন -সুহ খাবার টেবিলে খাবার রেখে সবার সঙ্গে পরিচিত হন।
মিসেস ইউন - সুহ এর কন্ঠ শুনে আজিজ রহমান অবাক হয়ে যায়।
" ইউন-সুহ। "
" আজিজ৷ "
" কেমন আছো?"
" ভালো। এই দেখো আমার ছেলে আরহাম। "
মিস্টার খান ওদের কথোপকথন শুনে জিজ্ঞেস করে,
" তোমরা একে অপর কে আগে থেকে চিনতে?"
প্রশ্ন টা মিসেস ইউন -সুহ এর হৃৎস্পন্দনের গতি বাড়িয়ে দেয়।
বাকি গল্প মিসেস ইউন -সুহ এর দৃষ্টিতে দেখব আমরা,
আমি সে দিন আসিফের থেকে লুকিয়ে গেলাম আজিজ আর আমার সম্পর্ক টা৷
আজিজের বাবা ওকে অনার্সের জন্য কোরিয়া পাঠিয়েছিল।
এবং আমরা একই স্কুলে পড়তাম।
সেখানেই আমাদের ভেতর সম্পর্ক বন্ধুত্ব থেকে আরও খানিকটা বেশি হয়ে যায়।
কিন্তু আমাদের বন্ধু ছিল মিস্টার চই সং-উন।
আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সং-উন৷
আমার খুব কাছের ছিল।
গ্রাজুয়েশন কম্পিলিট হবার পর আজিজের আমাকে নিয়ে বাংলাদেশ যাওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু এমন সময় হটাৎ খবর আসে আজিজের বাবা মারা গেছে।
ভেঙে পড়ে আজিজ।
আমার আর সে বার যাওয়া হয় না।
ওর বাবার মৃত্যুর পর ওদের ব্যাবসায় আসে বড় ঢল। আজিজ এসব সামলাতে পারেনা। জানতে পারে ওর বাবা ঋণ করেছে।
সে সব পরিশোধ করতে করতে মাথার ছাদ টা ছাড়া সব চলে যায়।
এমন সময় আমি সাহস করে ওর হাত ধরতে পারিনি৷।
সং - উন তখন নানা ভাবে আমাকে ভুল বুঝায়।
তখন আজিজ কে বুঝতে পারিনি।। কিন্তু আমার বিয়েটা আসিফের সঙ্গে হয়ে যায়।
আমি বাংলাদেশ আসি।
আসিফের ভালোবাসায় আজিজের কথা ভুলতে বলেছিলাম।
ভুলে গেছিলাম ও৷
কিন্তু সে দিন আজিজের স্ত্রী কে দেখে ভেতর টা কেমন নাড়া দিয়ে ওঠে।
সং - উন যে আমার জন্য এভাবে একটা আস্ত সয়তান হয়ে যাবে ভাবিনি।
আজিজের বাংলাদেশ আসার পর আজিজ আমার জন্য এক রকম চিঠি পাঠাত আর সং উন সেটাকে অন্য রকম ভাবে উপস্থাপন করত৷
আরহাম তখন গ্রামে এসে মজা পেয়ে যায়।
আমরাও বিভিন্ন বাহানায় গ্রামে আসি।
আসিফের ওই মেয়েটার ( ইরফানের মা) সাথে যে তলে তলে একটা ছেলে হয়ে গেছে এটা জানতে পারি নাই।
কারণ তখন আবার আজিজের দিকে খেয়াল চলে যায় আমার৷
কথায় আছে স্ত্রী রা সবই বুঝতে পারে।
সে দিন অতুসী এসেছিল আমার বাড়িতে৷ একা৷ আজিজ কে ছাড়া।
আমি জিজ্ঞেস করি এমন ভরা পেটে তুমি এখানে আসলে কেন?
আতুসী আমার কথার উত্তর না দিয়ে আমার উপর চিৎকার করে বলতে লাগল তার স্বামী থেকে যেন আমি দুরে থাকি৷
আমারো রাগ হতে লাগল।
কারণ সে কোন কথা না শুনেই চিল্লাছিল।
আমার রাগের মাত্র বেড়ে যায়। রাগের কারণে ভুলেই যাই আতুসী প্রেগন্যান্ট।
ওকে ধাক্কা দেই।
তবে ধাক্কা টা জোরে দিয়েছিলাম না।
কিন্তু অতুসী পিছলে পড়ে যায়। আর রক্ত খরণ হয়।
ডক্টর রা হৃদিকে কষ্টে বাঁচায়।
সে দিনের পর থেকে নিজেকে কেন জানিনা অতুসী এর খুনি বলে মনে হয়।
হৃদি মা হারা হয়েছে আমার কারণে।
এর ২ বছর ইরফান আর ওর মায়ের সম্পর্কে জানতে পারি।
তখন নিজেকে আর সামলে রাখতে পারিনা৷ ভুলেই গেছিলাম আমার আরহাম ও যে আছে।
ওকে রেখেই চলে গেলাম নিজের দেশে।
এসবের জন্য আরহাম কে সেই সময় টা দিতে পারিনি আমি।
ছেললটা আমার রুক্ষ মেজাজি হয়ে যায়।
,
চায়ের কাপ টেবিলে রাখে মিসেস ইউন -সুহ।
পুরাতন সব বিষয় গুলো এখনো পরিষ্কার গল্পের মত।
এখন তাদের বাচ্চা রা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ।
সব কিছু বদলে গেছে৷
সময় বদলে গেছে। তিনি আজিজ রহমান কে যে কষ্ট দিয়েছেন তার ফলেই হয়ত তার এত সৌন্দর্য তার স্বামীকে ধরে রাখতে পারেনি।
মাঝে মাঝে মিসেস ইউন -সুহ ভাবেন।। এত সুন্দর হয়ে কি লাভ।
,
,
,
রাতে ঘুমের মাঝেই আরহামের শক্ত হাত সার্টের নিচে অনুভব করে নড়েচড়ে ওঠে হৃদি।
সে গভীর ঘুমে মগ্ন।
আরহামের কৌতুক আর দুষ্টামি মোটেই ভালো লাগছে না।
আরহাম হৃদির ঠোঁটে হাত দিচ্ছে।
হৃদি এবার ঘুমে আটকে থাকা চোখ দুটো জোর করে টেনে খুলে
" কি? "
" কিছু না!"
" এই রাতের বেলায় কি হয়েছে ঘুমান না "
হৃদি আরহামের হাত দুটো নিজের কাছে নিয়ে বন্দি করে নেয়।
বেচারা হৃদি আরহামের বলিষ্ঠ হাত দুটোকে কিভাবে নিজের সাথে চেপে রাখবে।
আরহাম ত নিজের হাত ছুটিয়ে আবার হৃদির ঠোঁটে হাত রাখে।
হৃদি এবার বিরক্ত হয়ে দুরে গিয়ে শুয়ে পড়ে।
" কাছে আসবেন না৷ প্রচুর ঘুম পাচ্ছে। "
আরহাম হাসছে।
হৃদিকে এভাবে জ্বালাতে এত মজা কেন লাগছে।
নিজের ঘুমটা কেন জানিনা ভেঙে গেছে।
এখন হৃদিকে জ্বালাতে বেশ মজা লাগছে।
আরহাম দীর্ঘ সময় কম্বল থেকে বাইরে তাই তার হাত ঠান্ডা হয়ে গেছে।
গ্রামের দিকে প্রচুর ঠান্ডা পড়ে।
আরহাম নিজের ঠান্ডা হাত দিয়ে হৃদির কোমড় চেপে ধরে।
হৃদি এবার লাফিয়ে ওঠে,
" কি শুরু করলেন? বিরক্ত আমি৷ "
আরহাম চোখ ছোট ছোট করে বলে,
" আমার ঠান্ডা লাগছে জান। হাত ঠান্ডা হয়ে গেছে। "
আরহামের এমন করুন কন্ঠ শুনে হৃদি পিটপিট করে তাকায়।
" ঠান্ডা হলেন কি ভাবে? আসুন আমার কাছে আসুন। "
হৃদি আরহাম কে বুকে জড়িয়ে নেয়।
আরহাত দুটো নিজের কাছে রাখে।
আরহাম হৃদির বন্ধ চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে আছে।
হৃদি তার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর হৃদি চোখ খুলে দেখে আরহাম ত সজাক। "
" ঘুমাবেন না? "
" উহু। না। "
" তা কি করবেন?"
" যা করতে চাই করতে দিবে ত? "
" না প্লিজ আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। "
" কিন্তু আমার যে তুমি তুমি পাচ্ছে। "
" এই তুমি তুমি টা আবার কি?"
" উফ তুমি বুঝো না কেন। আমি তোমাকে কত ভালোবাসি। "
" আপনি এমন করেন কেন?"
" প্লিজ। "
হৃদি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে।
আরহাম হৃদির উপরে চলে আসে।
হৃদির ঠোঁট আকড়ে ধরে।
হৃদিও আর না করতে পারেনা৷। আরহামের ছোয়া হৃদিকে মোমের মত গলিয়ে দিচ্ছে।
আরহামের ঠান্ডা হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠছে হৃদি বার বার৷।
" জান৷ আমার থেকে কি পালানো সম্ভব বলো। "
" আ আমি কি পালাতে চেয়েছি৷ "
হৃদি ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে।
আরহাম বাকা হাসে।
" চাইলেও কি পারবে। "
আরহাম হৃদির গলায় মুখ ডোবায়।
ধিরে ধিরে হৃদির সমস্ত কাপড় ফ্লোরে পড়ে থাকে।
আর শীতের দিনে রুম টা ভরে ওঠে গরম আবহাওয়াতে।
,
,
,
শেষ রাতের দিকে শুরু হয়েছিল আরহাম।। ফজরের আজানের পর আরহাম হৃদিকে ছাড়ে।
হৃদি ক্লান্ত।
আরহাম হৃদিকে গোসল করিয়ে বিছনায় শুইয়ে দেয়।
ক্লান্তি ভর করেছে হৃদিকে।
সে ঘুমিয়ে আছে। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হৃদি।
আরহাম শুয়ে নাই৷
সে হৃদির ঘুমন্ত শরীরের পাশে একটা চেয়ার টেনে বসে আছে।
পকেট থেকে লাইটার বের করে একটা সিগারেট ধরায় আরহাম৷
সিগারেট নিয়ে কেমন শান্তি লাগল।
হৃদির দিকে যে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরহাম তা বোঝা কঠিন৷
এটাকি ভয়ানক নাকি ভালোবাসা।
" পদ্মা। আমার পদ্মা। এভাবেই আমার বাহুডোরে আবদ্ধ হয়ে থাকবে তুমি৷
সারা জীবন৷ "
আরহাম সিগারেটের শেষ টান নিয়ে সেটা ফেলে দেয়।
এরপর হৃদির পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে।
" তোমার সঙ্গে গভীর সময় কাটানোর পর সিগারেটের খেতে ভালোই লাগে। "
আরহামের এমন পাগলামি হৃদি দেখছে না।
দেখলে নিশ্চিত ভয় পেয়ে যেত৷
,
,
,
পর দিন ঘুম ভাঙতে দুপুর হয় হৃদির৷
আরহাম আগে থেকেই সব বন্দবস্ত করে রেখেছে খাওয়ার৷
আজ উ এন ও এর সঙ্গে লি সং-উন এর মিটিং আছে।
সেখানেই আরহাম আর হৃদি ভেস বদলে যাবে।
হৃদিকে খাবার খাইয়ে নিজেও খেয়ে নেয় আরহাম।
হৃদি আরহাম কে রেডি করিয়ে দেয়।
চোখে চশমা। হাতা ফুল৷ চুল গুলোও ক্যাবলা দের মত সাজিয়ে দিয়েছে।
হৃদি আরহামের দিকে তাকিয়ে আছে,
" কি দেখছো?"
" আমি কি আর্টিস্ট। ওয়াউ ওয়াউ সাজিয়ে দিয়েছি। "
" এটাকে ওয়াউ ওয়াউ সাজ বলে?"
" হ্যাঁ। "
হৃদি শব্দ করে হেসে দেয়,
" আমার স্মার্ট বরটা৷ কেউ টের ই পাবে না এটা আরহাম খান। কোন চান্স ই নেই। "
" হ্যাঁ হ্যাঁ ম্যাডাম হৃদি চলুন৷ "
আজকে আরহাম সেজেছে ম্যাডাম হৃদির সেক্রেটারি।
আর হৃদি সেজেছে কোরিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস এর বস৷
আরহাম আগে থেকেই সব রকম বন্দবস্ত করে দিয়েছে।
" আমরা রেডি। "
আরহাম হৃদিকে জড়িয়ে ধরে,
" এত সুন্দর লাগছে ইচ্ছে হচ্ছে খেয়ে ফেলি।"
" অনেক হয়েছে। এবার ছাড়ুন৷ চলুন। "
" হ্যাঁ ম্যাডাম৷ "
হৃদি আরহামের কথায় শব্দ করে হাসে।
,
,
চলবে?
0 Comments:
Post a Comment