গল্প মহীপতি পর্ব ৩৪

 #মহীপতি👑

#লামিয়া_রহমান_মেঘলা

#পর্ব_৩৪

" আরহাম বাবা তুই৷ "

" আমার গাড়ির চাবি কোথায়?"

" বাবা তুই এখনো সুস্থ হস নি। তোর ত হুস ও ছিলনা৷ "

" মা আমার চাবি কোথায় "

আরহামের শরীরে হসপিটালের কাপড় জড়ানো। 

নিশ্বাস থেমে থেমে আসছে তার। 

আরহামের হাতের সেলাইন এবং সব মেসিন ও খুলে ফেলেছে ছেলেটা। 

মিসেস ইউন -সুহ ছেলের এমন অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়। 

" আরহাম দয়া কর বাবা দয়া কর৷ তুই রুমে যা। "

আরহাম কারোর কথাই শুনে না। 

সে চলে আসে সেখান থেকে। 

গাড়ির চাবিটাও  নেয় না। 

আজিজ রহাম পেছন থেকে আরহামের হাত ধরে বসে, 

" বাবা৷ দাঁড়াও। "

" ছাড়ুন আমাকে। "

" ছাড়ছি। আমাকে তোমার সঙ্গে নিয়ে চলো। আমি গাড়ি চালাই। আমি করি কাজটা। "

মিসেস ইউন- সুহ দাঁড়িয়ে আছেন। 

তিনি কি বলবেন। 

তার ছেলে শুনবে না তিনি জানেন। 

রোজি দৌড়ে আসে,

" আমিও যাব। আমিও যেতে চাই। "

" রোজি আরহাম আসুস্থ প্লিজ আর বাড়াবাড়ি করো না। "

আজিজ রহমান আরহাম কে নিয়ে রওনা হয়। 

,

,

,

মাথার ভারি ভাবটা ক্রমশ বাড়ছে। 

হৃদির শরীর ভালো না। 

ঠিক কি পরিমাণ মেডিসিন ব্যাবহার করা হয়েছিল যে হৃদি পুরো তিন দিনের জন্য অজ্ঞান ছিল। 

এতে করে হৃদির শরীর কি রকম অদ্ভুত বদল এসেছে। 

তার মাথায় কেমন অসম্ভব যন্ত্রণা শুরু হয়। 

হৃদি উঠে দাঁড়ায়। 

বাড়িটার গেইটের পাশে একটা দেয়াল। 

যেটা মনে হচ্ছে ভেঙে ভেঙে যাচ্ছে। 

হৃদি নিজের রুম থেকে বের হয়। 

চারিদিকে সব পাহারা দার৷। তার উপরে কিছু গার্ড যাদের হাতে গান৷ 

হৃদি নিজের বুদ্ধি দিয়ে সেখান থেকে বের হতে সক্ষম হয়। 

ঘর থেকে গেট টা যত কাছে লাগছিল। বাইরে এসে ততটাই দুরে মনে হচ্ছে।। চারিদিকে জঙ্গল। 

আবার কেমন হ্যালোসিনেশন এর মতন। 

হৃদির মাথাটা ঘুরাচ্ছে। 

হৃদি তার পরও নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে দৌড় লাগায়। কিন্তু কিছুদুর যেতেই শক্ত বুকের সঙ্গে ধাক্কা খায় হৃদি। 

কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুটো শক্ত হাত তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে আসে। 

হৃদি চোখ ছোট ছোট করে সামনে তাকায়। 

আধো আধো আরহামের চেহরাটা দেখা যাচ্ছে। 

হৃদি হাসে। 

" আ আরহাম.... "

আরহাম হৃদিকে জড়িয়ে নেয়। 

সেই পরিচিত ঘ্রাণ পেয়ে হৃদি বুঝতে পারে এটা তার স্বামী। 

হৃদি আরহাম কে কাঁপা হাতে জড়িয়ে নিতে চায়। 

কিন্তু শরীর কেমন সায় দেয় না। 

আরহাম হৃদিকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে সামনে নিয়ে আসে,

" জান ঠিক আছো?"

হৃদি আরহামের মুখ ধরে নিচে নামতে বলে,

আরহাম নিজেকে নিচু করতে হৃদির আরহামের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট রাখে,

আরহামও হৃদিকে জড়িয়ে নেয়, 

" আই মিস উ...."

" জান। সব ঠিক হয়ে যাবে। তোমায় নিয়ে যাব আমি। "

" আপনি ঠিক আছেন। এতেই আমি ঠিক হয়ে গেছি। "

আরহাম বুঝতে পারে হৃদির ছোট্ট শরীর টা কাঁপছে। 

" ওরা কি করেছে তোমার সঙ্গে? "

" জানিনা।.....

 কি ঔষধ দিয়েছিল।...... 

আমি ৩ দিনের জন্য..... 

জ্ঞান হারিয়ে ছিলাম।...... "'

আরহাম হৃদির হাতে দড়ির বাঁধার সেই দাগ দেখতে পায়। 

কি টাইট করে ওকে বেঁধেছিল। 

কি কষ্ট হয়েছে মেয়েটার। 

আরহামের মাথার রগ ফুলে যায় রাগে। 

" আমাকে......

 নিয়ে চলুন......

আমি.... 

আপনার বুকে......

মাথা দিয়ে ঘুমাতে চাই.... "

আরহাম হৃদির মাথাটা নিজের বুকের সঙ্গে জড়িয়ে রাখে। 

জীবনের প্রথম নিজেকে এত অসহায় লাগছে। 

সে থাকতে তার পদ্মা কে কেউ আঘাত করেছে। 

আরহাম মানতে পারছে না৷ বুকটা ফেটে যাচ্ছে তার৷। ভালোবাসার মানুষ কষ্টে থাকলে হয়ত এই রকমই কষ্ট লাগে। 

" সব ঠিক হয়ে যাবে। 

সব. "

" আই লাভ উ. "

" আই লাভ উ টু। "

আরহাম হৃদিকে বুকে জড়িয়েই সামনে দেখে। 

সব জায়গায় গার্ড। 

আরহামের ক্ষত এখনো তাজা।। তার পক্ষে এত মানুষের সঙ্গে যুদ্ধ করা সম্ভব নয়। 

আরহাম প্লান করে হৃদিকে নিয়ে সে আস্তে বেরিয়ে যাবে।

যে পথ দিয়ে সে এসেছিল। 

আরহাম হৃদিকে নিয়ে সেই পথে হাটা শুরু করে। 

এই বাড়ির আশেপাশে বেশ ঘন জঙ্গল। 

মানুষ হারিয়ে যেতেই পারে। 

তার উপর বন্য প্রাণীও আছে। 

আরহাম, আজিজ রহমান কে রেখে এসেছে এক জায়গায়। 

আরহাম হৃদিকে নিয়ে সেই রাস্তার দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। 

আরহাম হৃদিকে ধরে সামনের দিকে এগোয়। 

কিন্তু ভাগ্যে বোধহয় তাদের সঙ্গে নেই৷ 

কিছু দুর যেতেই গার্ড রা টের পেয়ে যায়। 

আরহাম হৃদিকে নিয়ে একটা বড় গাছের পেছনে লুকিয়ে পড়ে। 

হৃদিও বাচ্চা দের মত আরহামের বুকে লুকিয়ে থাকে। 

,

,

,

ইরফানের মা সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন। 

হৃদির সঙ্গে আরহাম কে দেখে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন হৃদির কাছে যাবে না৷ 

এমন সময় সেখানে ইরফান আসে,

" মা। হৃদি কোথায়?"

কামিনি বেগম একটু চমকে যায়। 

তবুও নিজেকে শক্ত করে বলে,

" ওয়াসরুমে আছে। "

" কিন্তু দরজা ত খোলা। "

" ও দরজা খোলা। খেয়াল করিনি৷ "

" মিথ্যা বলছো মা। "

" মিথ্যা বলছি না। "

ইরফান জানালার কাছে এগিয়ে আসে,

ততক্ষণে আরহাম হৃদিকে নিয়ে অন্য দিকে চলে গেছে। 

" মা৷ তুমি হৃদিকে সাহায্য করেছো। তুমি ভুলে যাচ্ছো হৃদি এখন জ্ঞান হারা অবস্থায় আছে। আরহামের ও গুলি লেগেছে। আজ দুটো কেই মারব৷ "

" বাপের মত বেয়াদব হয়েছিস৷ "

" তুমি এ কথা বলতে পারলে?"

" না।  কথাটা বলা সোভা পায় আমার মুখে তাই বললাম। 

কারোর স্ত্রী কে নিজের করে পাওয়ার আকাঙ্খা। কাপুরষ। "

" মা। "

" যা সত্যি তাই বললাম। "

মা ছেলের কথার মাঝেই কারোর হাতে তালির শব্দ। 

দু'জনই পিছে তাকায়। 

জং সুক দাঁড়িয়ে, 

" বার থেকে তুলে এনেছিলাম এক বে** কে। 

আজ দেখো না সেই বে**র কত পাখা গজিয়েছে। নিজের মাস্টারের সঙ্গেই গাদ্দারি৷"

কামিনি বেগম হাসেন,

" হ্যাঁ বে** বলেই ত এত রকম ভাবে ব্যাবহার করতে পেরেছেন৷ ভালো হলে ত পারতেন না৷"

" তুই নিজের জায়গা ভুলে যাস সব সময়৷ "

" আমি ভুলিনি৷ অন্তত আজকের দিনেও নিজের ছেলেটাকে এভাবে বিগড়াবেন না। "

"বিগরাবো না৷ তুই ভুলে যাচ্ছিস এটা আমার নয় আসিফ খানের ছেলে। "

" ইরফান খান নয়৷ লি ইরফান৷ লি জং সুকের ছেলে৷ "

" কামিনি চুপ। "

" আজকে আর চুপ করে থাকতে পারলাম না৷ আমার শরীর নিয়ে সব থেকে বেশি তুই খেলেছিস৷ সময় অসময় আমাকে তুই ব্যবহার করেছিস৷ আসিফ ত শুধু নামেই ছিল। 

ইরফান তোর আসল বাবা এই লোক টা৷ আসিফ না। পুরো পৃথিবকে এ বলে রেখেছে তুই আসিফের ছেলে কিন্তু আসলে তুই এই লোকের ছেলে। "

ইরফান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। 

"মা। "

" সত্যি বলছি। আমি অভাগা মা৷ অভাগা আমার কপাল। আমি সব কিছু মেস করে ফেলেছি৷ ওদের বাঁচতে দে। 

এই লোকটা সব নষ্টের মূল। "

ইরফান কিছু বলার আগেই গান সট৷ 

কামিনি বেগম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। 

ইরফান কিছুক্ষণের জন্য নিশ্চুপ হয়ে যায়। 

" মা। কি হলো এটা৷ 

মা। 

আম্মু। "

ইরফান মায়ের দেহ তাকে নিজের বুকের ঝাপটে ধরে। 

" মা প্লিজ। 

মা। এটা কি করলেন আপনি?'

জং সুক গান টা নামিয়ে নেয়। 

" কুকুর ততক্ষণই ভালো যতক্ষণ সে মালিকের কথা মত চলে। 

তখন কুকুর কে মেরে ফেলতে হয়৷ যখন সে যে থালায় খায় সেই থালায় প্রসাব করে। 

কামিনি খুবই ভালো একটা মোহর ছিল আমার।। কিন্তু সে আমার খেলা আমারি ঘুটি খাচ্ছে। 

তাই ওকে মরতে হতো। "

ইরাফন উঠে  জং সুকের কলার চেপে ধরে,

" সয়তান৷ বাস্টার্ড কি করলি তুই এটা৷ 

কি করলি। "

ইরফান কে লোক দিয়ে বেসমেন্টে এ লক করে জং সুক। 

" আরহাম আর হৃদি। আমি আসছি। "

জং সুক তার ফোর্স নিয়ে বেরিয়ে যায়। 

,

,

চলবে?


0 Comments:

Post a Comment