গল্প মহীপতি পর্ব ৩৫

 #মহীপতি👑

#লামিয়া_রহমান_মেঘলা

#পর্ব_৩৫

আরহাম, হৃদিকে বুকে জড়িয়ে গাছের নিচে বসে আছে। 

তার ক্ষত স্থান থেকে রক্ত বের হচ্ছে। 

হৃদি সেটা দেখতে পায়। 

হসপিটালের বেবি ব্লু রঙের জামাটা ভিজে গেছে। 

এদিকে জঙ্গলের মাঝে শীত এত বেশি যে ওরা রীতিমতো কুঁকড়ে গেছে। 

জঙ্গলের মাঝে সব সময় শীত এক বেশি থাকে। 

হৃদি আরহামের হাত কাঁধে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখে সে এক বিশাল বাড়ি। 

কোন বাগান বাড়ি বলে মনে হচ্ছে। 

হৃদি খেয়াল করে সামনে দু'জন আর্মি বাড়ির বাইরে দাঁড়ানো। 

" আপনি বসুন আমি ওদের কাছে হেল্প চাই। "

আরহাম হৃদির হাত ধরে বসে,

" নাহ। ওরা কেমন আমি জানিনা৷ আমি রিক্স নিতে চাই না। "

আরহামের এত রক্ত খরণ হয়েছে আরহাম ঠিক ভাবে দাড়াতে পারছে না। 

হৃদি আরহাম কে কোন মতে সোজা করে দাঁড় করায়। 

এমন সময় তাদের সামনে ওই দুই জনের মধ্যে এক জন এগিয়ে আসে, 

" আরহাম স্যার৷ "

ছেলেটা আরহাম কে দেখে মাথা নামিয়ে সম্মান জানায়। 

আরহাম ধিরে বলে,

" জারিফ। "

" স্যার আপনার আমাকে মনে আছে। স্যার আপনারা এখানে এই অবস্থায় কেন?"

" আপনি প্লিজ ওনাকে একটু বসার জায়গা ধরে দিবেন। ওনার অনেক রক্ত গেছে। "

" অবশ্যই ম্যাডাম। স্যার আমার জন্য যা করেছে এই বিপদে তাকে সাহায্য করব না৷ "

জারিফ হৃদি আর আরহাম কে নিয়ে ওই বাংলো বাড়ি টার ভেতরে যায়। 

বাড়িটা ভেতর থেকেও অনেক সুন্দর। 

জাড়িফ ওদের একটা রুমে বসায়। 

হৃদিকে ফাস্টএইড বক্স দেয়, 

" ম্যাডাম,  স্যারকে ঔষধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিন৷ "

আরহাম ধিরে জিজ্ঞেস করে,

" বাড়িটা কার?"

" বাড়িটা স্যার একজন ডিসির৷ 

ডিসি কালো টাকা দিয়ে এই বাড়ি বানিয়েছে। যার কারণে সরকার এটা সিল করে রেখেছে। আমাদের দায়িত্ব খেয়াল রাখা৷ আমরা দু'জন ডিউটি পেয়েছি। 

দিনের বেলায় বাইরে থাকি আর রাতে এত বড় বাড়ির যে কোন রুমে শুয়ে থাকি। 

কিন্তু স্যার আপনার এ অবস্থা কি করে হলো।"

আরহাম সব খুলে বলে। 

হৃদি ততক্ষণে আরহামের ক্ষত স্থানে নতুন করে ঔষধ দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়। 

" স্যার উ এন ও জহিরুল কে ত ট্রান্সফার করে দিয়েছে। "

" কি বলো। "

" হ্যাঁ। আপনারা যাদের সঙ্গে কথা বলেছেন সে হলো রোকানুজামান।"

" মানে?"

" মানে একেবারে নতুন জয়েন করেছে তাই বাইরের নেইম প্লেট পাল্টায় নি৷ আমি ত ডিউটি তে ছিলাম হৃদয়পুর গ্রামে। তারপর এখানে আসছি। উনি মিথ্যা বলেছে। উনি ভীষণ খারাপ। উনি আপনাদের খুজে পেতে সাহায্য করেছে হয়ত ওই জং সুক কে। 

রোকানুজামান টাকার জন্য সব করতে পারে। ও ভীষণ খারাপ মানুষ। "

আরহাম,  হৃদি অবাক হয়ে যায়। 

আসলেই মানুষ কতটা ঘৃণ হতে পারে। 

" স্যার আপনি কাউকে কল করবেন? এখানে ত নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না৷ "

" আমার শ্বশুর আমাদের খুঁজে বের করবে। আমি ট্রাকার লাগিয়ে এসেছি। "

" স্যার আপনার সেবা করার সুযোগ দিন স্যার। "

" এরকম বলো না। "

" ম্যাডাম আপনি স্যারকে ফ্রেশ করিয়ে দিন৷ আমি আসছি খাবার নিয়ে। "

জারিফ বেরিয়ে যায়। 

হৃদি আরহামের দিকে তাকায়, 

" ছেলেটা কে?"

" ছেলেটা তোমাদের গ্রামের একটা দুস্থ পরিবারের ছেলে। 

টাকার জন্য চাকরি হচ্ছিল না। 

১৫ লাখ টাকা লাগত চাকরির জন্য। ওর মা বাড়ি বিক্রি করার জন্য আমার কাছে এসেছিল। 

কিন্তু আমি ওকে চাকরি দিয়ে দিয়েছিলাম। 

কারোর থাকার শেষ সম্বল কেড়ে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। "

হৃদি আরহামের ঠোঁটে চুমু খায়। 

আরহাম চোখ বন্ধ করে ছিল। 

হৃদির চুমু খেয়ে চোখ খুলে তাকায়। 

" আমি আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি। আপনার জন্য আমার মাথা পাগল হয়ে যাচ্ছিল। "

আরহাম হৃদিকে নিজের কাছে নিয়ে আসে,

" আমি জানি তোমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।"

" আমি আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি৷, "

হৃদি ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে,

আরহাম হৃদির কপালে চুমু খায়। 

" পাগলি কেঁদো না আমি ঠিক আছি। "

হৃদির কান্না বাঁধ ভেঙেছে। 

এত কষ্ট হচ্ছে তার। 

কিভাবে এই অবস্থায় তার জন্য ফিরে এসেছে আরহাম। 

এতেই বোঝা যায় ঠিক কতটা ভালোবাসে আরহাম হৃদিকে। 

" কেঁদো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। সব ঠিক হয়ে যাবে। কেঁদো না।"

আরহাম হৃদির কপালে চুমু খায়। 

,

,

,

আজিজ রহমান পুরো পুলিশ ফোর্স লাগিয়ে দিয়েছে। 

" এই লোকেশন ট্রাক করো। দ্রুত ট্রাক করো।"

" স্যার আমরা ট্রায় করছি একটু অপেক্ষা করুন৷ "

" কি বলব৷ তোমাদের কিছু হয় না। "

আজিজ রহমান চেয়ারে বসে পড়ে, 


" আমারি ভুল হয়েছে। আমার উচিত হয়নি আরহাম কে নিয়ে এত বড় রিক্স নেওয়া। মেয়েটাকে ত হারালাম এখন জামাই টাকেও। 

কি অভাগা বাপ আমি। "

,

ওই সময় আরহাম আর আজিজ রহমানের ভেতর কথা হয়েছিল। 

যদি আরহাম ফিরতে না পারে তাহলে আজিজ রহমান যেন আরহামের কাছে থাকা  ট্রাকার দিয়ে খুঁজে নিতে পারে। 

,

,

,

জারিফ খাবার নিয়ে এসেছে, 

" স্যার এটাত পাহাড় এখানে ভালো পাহাড়ি মুরগি পাওয়া যায়৷ "

" আপনি এত কষ্ট না করলেই পারতেন ভাই৷ "

" ম্যাডাম। কি যে বলেন৷ এ ত সৌভাগ্য আমি স্যার কে একটু হলেও সাহায্য করতে পারছি৷ আমার জন্য স্যার যা করেছে। আমি আমার পরিবার নিয়ে ভালো আছি শুধু মাত্র স্যারের জন্য। "

"আপনি খাবেন না? "

" হ্যাঁ আমার সহকর্মীর সঙ্গে খাব৷ আপনি দেখুন ম্যাডাম এ বাড়িতে সব আছে। আপনি স্যারকে খাইয়ে দিন। "

" ধন্যবাদ ভাই৷ "

" ধন্যবাদ দিবেন না ম্যাডাম।  আমি সত্যি অসম্ভব সৌভাগ্য বোধ করছি আমি যে এত টুকু করতে পারছি । "

জারিফ চলে যায়। 

হৃদি রুম থেকে বেরিয়ে প্লেট নিয়ে আসে। 

খাবার বেড়ে আরহাম কে নিজের হাতে খাইয়ে দেয়। 

খাওয়া শেষে আরহামের ক্লান্ত শরীর ঘুমিয়ে যায়। 

হৃদিও খেয়ে ঘুমিয়ে যায়। 

আরহামের শরীরে ঘ্রাণ হৃদিকে শান্ত করে। 

আর যাই হোক তার স্বামী তার সঙ্গে আছে তার কাছে আছে। এটাই হৃদির ভালো থাকা৷"

,

,

,

জং সুক পুরো জঙ্গল সার্চ করেছে। 

" এত টুকু সময়ের ভেতর ওরা গেছে কোথায়?"

" স্যার বুঝতে পারছি না৷ "

" বুঝতে পারছো না বলে চলে যেও না৷ বুঝতে হবে। ওরা পার হয়ে গেলে আমরা ধ্বংস হয়ে যাব। "

জং সুকের ফোনে ফোন আসে,

 জং সুক কল পিক করে,

" হ্যালো। "

" জং সুক। "

" কে?"

" এত দ্রুত ভুলে গেলেন উপকারী ব্যাক্তি কে?"

"রোকানুজামান। "

" জি জি। আপনি আমাকে আমার পুরো টাকাটা কেন পাঠান নি? "

" পেয়ে যাবেন৷ আমি এই মুহুর্তে একটু ঝামেলায় আছি। "

" যাই করেন না কেন? আমার সঙ্গে ডিল যেন ভুলেই গেছেন?"

" ডিল করলে সেটা রাখব আমি। 

আপনি ফোন টা রাখুন৷ আমি একটু ঝামেলায় আছি৷ "

" এসব বলে আমার টাকাটা যদি না পাই তাহলে আপনাকে ইন্টারন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস কে কল করে আপনার বিপক্ষে সব প্রমাণ দিয়ে আপনাকে ধরিয়ে দিব। "

" বাহ। আপনি দেখি থ্রেড দিচ্ছেন। "

" যা ভাবার ভাবুন৷ "

জং সুক ফোন কেটে দেয়। 

,

" স্যার স্যার। "

" কি?"

" স্যার এদিকে একটা বাংলো বাড়ি। "

" বাংলো বাড়ি! "

" হ্যাঁ......!"

" চলো সার্চ করি। "

,

,

,

চলবে?


0 Comments:

Post a Comment