গল্প ঘরপ_সংসার পর্ব ৮

 #ঘর_সংসার

লেখিকা:Abida Nujhat

পর্ব:৮


নিলয় আজকে অফিসে যায়নি।ওর বড়বোন নীলাশা আসবে আজকে।ওকে আনতে এয়ারপোর্ট গেছে।সে কানাডা থাকে ফ্যামিলি নিয়ে।নিশিতাকে দেখেনি।তাই একবারে এয়ারপোর্ট থেকে এখানে আসবে।কদিন এখানে থেকে বাড়িতে যাবে।


নিশিতা গোসল করে একটা স্যালোয়ার কামিজ পরল।এই প্রথম ও ওর একমাত্র ননদকে দেখবে।ভাবতেই একটা ভয় আর দ্বিধা কাজ করছে ওর মধ্যে।তাই আজকে আর ঢিলেঢালা জামা পরল না ও।ননদ আসবে বলে কথা।


কলিং বেজে উঠতেই তাড়াতাড়ি মাথায় ওড়না দিয়ে নিশিতা দরজা  খুলতে গেল।তারআগেই রাইসা যেয়ে দরজা খুলে দিলো।নিলয় আর নীলাশা আর দাঁড়িয়ে আছে।মাশআল্লাহ নীলাশা দেখতে অনেক সুন্দর।একেবারে নিলয়ের মতন।দু ভাইবোনই এক।নীলাশার কোলে আবার একটা গুলুমুলু বাচ্চা!

-'কি হলো ভেতরে ঢুকতে দেবে না?'হাসিমুখে জিজ্ঞাসা করল নীলাশা।


রাইসা একটু আনইজি ফিল করল।কে এই মেয়ে?

-'না না আসুন।'


রাইসা দরজা থেকে সরে দাঁড়ালো।নীলাশা এসে ধপ করে সোফায় বসে পড়ল।বেচারি এতটা পথ জার্নি করে অনেক টায়ার্ড।

-'কেমন আছ ভাবি?'রাইসাকে উদ্দেশ্য করে হেসে বলল নীলাশা।


রাইসা তো থতমত খেয়ে গেছে।ভাবি?!তাহলে এটা নিলয়ের বোন।আর তাকে নিলয়ের বউ মনে করেছে!মনে মনে খুশিই হলো রাইসা।নিশিতা তো কখন থেকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।নীলাশার কথা শুনে নিলয়ের দিকে তাকাল।নিলয় পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছে।তার বোন ভুল করে ফেলেছে।

-' না না আপু,তুমি ভুল করছ।ও নিশিতা নয়।ওইটা নিশিতা',নিশিতার দিকে আঙুল তুলে বলল নিলয়।


নীলাশা নিশিতার দিকে তাকাল।ইস,সে এত বড় ভুল করল কিভাবে?সবটা আগে জানার দরকার ছিল।কে জানে নিশিতা কি ভাবল?কিন্তু নীলাশাকে অবাক করে দিয়ে নিশিতা তাকে স্বাভাবিকভাবে সালাম দিলো।

-'আসসালামু আলাইকুম আপু।'

-'ওয়া আলাইকুমুস সালাম,সরি বোন।ভুল হয়ে গেছে।আমি আসলে বুঝতে পারিনি।'

-'না না ঠিক আছে আপু।আপনি তো নতুন,তাই চিনতে পারেননি।'


রাইসা ঠাই দাঁড়িয়েই আছে।কি বলবে বুঝতে পারছে না।তবে এখন কথা না বলাই ভাল।ফ্যামিলি ম্যাটার!তাই সে রুমে চলে গেল।


-'নিশু,আপুকে ঘরে নিয়ে যাও।'

-'হুম যাচ্ছি।'


নিশিতা নীলাশাকে রুমে নিয়ে আসল।ফুলি তাদের লাগেজ।

-'মাশআল্লাহ আপু,আপনার বাবুটা অনেক সুন্দর।'

-'তাই,কিন্তু আমাকে ফুফি ডাক কবে শোনাবে?'


নিশিতা একটু লজ্জা পেল।

-'আসলে আপু আমি প্রেগন্যান্ট।'

-'ওমা তাই!কই নিলয় তো আমাকে কিছু বলেনি।আসুক ও,খবর আছে আজ ওর।কয়মাস চলছে?'

-'আড়াই মাস।'

-'ওহ এখন সাবধানে থাকতে হবে।কিন্তু ওই মেয়েটা কে?'

-'রাইসা আপু,আমাদের গেস্ট।'


নিশিতা নীলাশাকে সব খুলে বলল।নীলাশার মুখে স্পষ্ট রাগ ফুটে উঠল।


-'তাই বলে এভাবে একটা মেয়েকে রেখে দিতে হবে।নিলয়ের কি কমন সেন্স সব নষ্ট হয়ে গেছে।'


নিশিতা চুপ করে থাকল।কিই বা বলবে?ও যে অনেক মনকষ্টে আছে এটা নিয়ে।পারছে না মেনে নিতে রাইসার এমন ব্যবহার।ও জানে রাইসা নিলয়কে একটু হলেও পছন্দ করে।নাহলে নিলয়ের শার্ট নিয়ে ওভাবে দেখত না!কিন্তু কি আর করার।মানবিকতার খাতিরে এইটুকু সহ্য করাই লাগবে।


-'আমি আজ নিলয়ের সাথে এই বিষয় নিয়ে কথা বলব।তাছাড়া মেয়েটার কি ফ্যামিলি নেই?আজব!'

-'না আপু,আপনি আজই আসলেন।এখন এইসব নিয়ে ঝামেলা করার দরকার নেই।ভাইয়া আসেনি?'

-'আর বলো না বোন।সে আছে তার কাজ নিয়ে।আমি ইশাকে নিয়ে চলে এসেছি,হুহ।'


নিশিতা হাসল।সব ঠিকঠাক করে দিয়ে নিজের রুমে আসল।কেউই রাইসার এই বাড়িতে থাকাটা পছন্দ করছে না।কিন্তু নিলয় কেন বুঝতে পারছে না?কি যাদু করেছে রাইসা নিলয়ের উপর?এর শেষ পরিণতি কি?এসব ভাবতে ভাবতেই নিশিতা ঘুমিয়ে গেল।


নিলয় রুমে এসে দেখে তার পাগলী ঘুমিয়ে গেছে।মুচকি হেসে নিশিতার গায়ে চাদর টেনে দিলো।এসির ঠান্ডায় উসখুস করছে।তার মায়াবতীও নাকি মা হবে!ভাবা যায়?নিলয়ের এতদিনের শখ পুরণ হতে চলেছে।তার ছোট্ট একটা বাচ্চা আসছে!


রকিং চেয়ারে গা এলিয়ে বসে আছে রাইসা।অয়নের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাচ্ছে।সে এখন এমন পর্যায়ে আছে যেখান থেকে ফিরে আসা সম্ভব নয়।নিলয়কে যে করে হোক পেতেই হবে।কিন্তু নিশিতার বাচ্চা?ধ্যাত,অসহ্য।নিশিতাকে কিছু করা যাবে না।নিলয়ের জান আছে মেয়েটার মধ্যে।এতে বরং নিলয় আরো ভেঙে যাবে।তাহলে?আচ্ছা নিশিতাকে খারাপ বানিয়ে দিলে কেমন হয়?যাতে করে নিলয় নিশিতাকে ঘৃণা করা শুরু করে আর নিজেই ছেড়ে দেয়।হ্যাঁ আইডিয়াটা খারাপ না।ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল রাইসার।


নিলয় কান্নার শব্দ পেল।আগাতে আগতে রাইসার রুমের সামনে যেয়ে থামল।হ্যাঁ আওয়াজটা এখান থেকেই আসছে।ভেতরে ঢোকা কি ঠিক হবে?সাতপাঁচ ভেবে নিলয় রুমে ঢুকে দেখে রাইসা অয়নের ছবি হাতে নিয়ে কাঁদছে।রাগ উঠে গেল নিলয়ের।ওই চিটারটার জন্য রাইসা কাঁদছে কেন?সব তো শেষ করেই দিয়ে এসেছে সে।তাহলে এখন কেন?


নিলয় রাইসার পাশে যে বসল।রাইসা চোখ তুলে তাকাল।হঠাতই নিলয়কে জড়িয়ে ধরে আরো ডুকরে কেঁদে উঠল।নিলয় কি করবে বুঝতে পারছে না।এই মুহুর্তে রাইসা নিজের ভেতরে জমে থাকা কষ্ট প্রকাশ করছে।তাই সে আস্তে আস্তে রাইসার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।

-'রাই,কুল ডাউন।কি হয়েছে?তুমি এভাবে কাঁদছ কেন?'

-'নিলয়,আজ অয়নের কথা বড্ড মনে পড়ছে।ও কেন এমন করল?আমি তো ওকে সত্যিই ভালবেসেছিলাম।আজ যদি ও ভাল হত তাহলে আমাদের সন্তানকে নিয়ে আমরা কত সুখী হতাম।'


রাইসা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।তার চোখের পানিতে নিলয়ের শার্ট ভিজে গেছে।

-'অয়ন নেই তো কি হয়েছে।আমরা তো আছি,না।ওই বিশ্বাসঘাতকের জন্য তুমি কেঁদোনা প্লিজ।'


রাইসা এবার সত্যিই বুঝতে পারছে না যে সে সত্যি সত্যি অয়নের জন্য কাঁদছে না নিলয়ের মনে জায়গা নেওয়ার জন্য!নিলয়ের অনেক মায়া হচ্ছে রাইসার জন্য।এ কেমন টান?


চলবে

0 Comments:

Post a Comment