#ঘর_সংসার
লেখিকা:Abida Nujhat
পর্ব:৭
সকাল থেকেই নিলয় নিশিতাকে কোনো কাজ করতে দিচ্ছে না।সারাক্ষণ রেস্টে রাখছে।নিশিতা অতিষ্ট হয়ে যাচ্ছে এসবে।ওর এভাবে বসে থাকতে একদম ভাল লাগে না।কিন্তু নিলয় ওর কোনো কথাই শুনছে না।
-'প্লিজ নিলয়,একটা মানুষ কতক্ষন বসে থাকতে পারে?'
-'আমি কোনো কথা শুনতে চাই না।আমি চাই না আমার বেবির কোনোভাবে কোনো কষ্ট হোক।'
-'হুহ বাচ্চা মনে হচ্ছে ওনার একার।'
-'সে তুমি যাই বলো,তুমি আর কাজ করবে না।বোর লাগলে টিভি দেখো,মোবাইল চালাও।বাট কাজ না!ওকে?
-'আর রান্না তো তোমার দাদী করে দিয়ে যাবে!'
-'এই এখানে আমার দাদী আসল কোথা থেকে?আজকে আসার সময় কোনো ভাল কাজের লোক নিয়ে আসব।সে যাবতীয় কাজ করবে আর ফুলি তো আছেই।সো তোমার কোনো কাজ করা লাগবে না।'
-'কিন্তু নিলয়...'
-'আর কোনো কিন্তু না।আমি অফিসে যাচ্ছি,তাড়াতাড়ি চলে আসার চেষ্টা করব।ততক্ষন রেস্ট নেবে।আমি কিন্তু ফুলির কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করব।'
-'হুহ।'
নিশিতা মুখ ভেংচায়ে বসে থাকল।নিলয় মুচকি হেসে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে অফিসে চলে গেল।নিশিতা মনে মনে অনেক খুশি।আসলেই বাচ্চা বাবা মার সম্পর্ক জোড়া লাগাতে পারে।একদিনেই নিলয় আবার আগেকার মত হয়ে গেছে।নিশিতার এত সুখ ধরবে তো?
দরজার আড়াল থেকে সব দেখল রাইসা।গা জ্বলে যাচ্ছে তার।এত আদিক্ষেতা কেন নিলয়ের?মনে হচ্ছে পৃথিবীতে আর কারোর কখনো বাচ্চা হয়নি!নিশিতাই প্রথম।হুহ,ঢং যত্তসব।
রাইসা সেজেগুজে কোথাও বের হচ্ছিল।তখনই নিশিতা দেখে ফেলল।মেয়েটার কি কমন সেন্স বলতে কিচ্ছু নেই?নিশিতাকে না বলেই চলে যাচ্ছে,আজব!
-'কোথাও যাচ্ছেন আপু?'
রাইসা মনে হলো একটু অপ্রস্তুত বোধ করল।
-'হ্যাঁ মানে,ড..ডক্টরের কাছে।'
-'ওহ,তো এই অবস্থায় একা যাচ্ছেন কেন?নিলয় আসুক,ও আমাকে আজকে নিয়ে যাবে চেকআপের জন্য।সাথে আপনিও যেয়েন।'
-'না না থাক,আমি যেতে পারব।ইট'স আর্জেন্ট।আমার এপয়েন্টমেন্ট আছে।'
নিশিতা আর কিছু বলল না।জোড়াজুড়ি তো আর করতে পারবে না।কিন্তু প্রেগন্যান্ট অবস্থায় একটা মেয়ে কিভাবে এত হেভি ড্রেসআপ করতে পারে বুঝে উঠতে পারছে না নিশিতা।ওর তো শাড়ি পরলেই দম বন্ধ হয়ে আসে এখন।
রাইসা বাড়ি থেকে বের হয়ে একটা সিএনজি নিলো।একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে থামল।ভাড়া দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই একটা ইয়াং ছেলে এসে তার হাত ধরে নিয়ে গিয়ে একটা টেবিলে বসালো।
-'হাই সুইটহার্ট!'
-'হাই,বেবি।'
-'আমি তোমার ওপর রাগ করে আছি।'
-'ওলে আমার বাবুটা রাগ করেছে,কিন্তু কেন?'
-'তুমি এই কয়দিন আমার সাথে দেখা করোনি কেন?'
রাইসা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।নিলয়ের কথা বলবে?
-'আসলে অয়নকে নিয়ে ঝামেলায় ছিলাম জানোই তো।অনেক কষ্টে ব্যাটার থেকে ডিভোর্স নিতে পেরেছি।'
-'ওয়াও,তাহলে তো আর কোনো বাধায় রইলো না।চলোনা এবার বিয়ে করে ফেলি।এখন তো আর অয়ন নামের কাঁটা নেই।'
রাইসা বিষম খেলো।না সে রাকিবকে বিয়ে করতে পারবে না।তার মন প্রাণ জুড়ে শুধুই নিলয়।হ্যাঁ একসময় টাইমপাস করার জন্য রাকিবের সাথে সে রিলেশন করেছিল।অয়নকে ভাল লাগত না।কিন্তু এখন আর না।দরকার পড়লে সে রাকিবকেও তার আর নিলয়ের মধ্যে থেকে সরিয়ে দেবে!
-'আমাকে আরেকটু টাইম দাও।বুঝতেই পারছ সদ্য ডিভোর্স হওয়া মেয়ে আবার বিয়ে করছে,সমাজ কেমন নজরে দেখবে।'
-'আচ্ছা বাট বেশি টাইম না,ইউ নো আই লাভ ইউ সো মাচ।'
রাইসা মুচকি হাসল।ছেলেটা ওকে পাগলের মত ভালবাসে।তাইতো ম্যারেড হওয়া সত্তেও মেনে নিয়েছে।অয়নের সাথে ডিভোর্সেও হেল্প করেছে।অয়নকে মিথ্যা দোষ দিয়ে ফাসিয়েছে যে ওর অন্য মেয়েদের সাথে সম্পর্ক আছে!
রাইসা রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে আসল।হঠাতই তার গা গুলিয়ে যাচ্ছে।তাড়াতাড়ি রিকশা নিয়ে বাড়ি চলে আসল।বাড়িতে ঢুকেই দৌঁড়ে ওয়াশরুমে যেয়ে বমি করে দিলো।এটা কি হচ্ছে তার সাথে?তবে কি নাটক সত্যি হতে যাচ্ছে?না,তাহলে তো সব শেষ!
ফুলিকে ডেকে হাঁসের মাংস রান্না করতে বলল রাইসা।বড্ড খেতে মন চাচ্ছে।শরীরটা একদম ভাল যাচ্ছে না।বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে গেল।
সবাই মিলে রাতে ডিনার করতে বসেছে।নিশিতা হাঁসের মাংস দেখেই মুখ শিটকিয়ে নিলো।বমি লাগছে।দৌঁড়ে যেয়ে বেসিনে বমি করে দিলো।নিলয়ের আর খাওয়া হলো না।নিশিতার কাছে যেয়ে ওকে ধরে এনে টেবিলে বসালো।মুখ মুছিয়ে পানি খাইয়ে দিলো।তারপর চিল্লিয়ে জিজ্ঞাসা করল,
-'হাঁসের মাংস কে রান্না করেছে?'
কেউ কথা বলার মত সাহস পেলো না।নিলয় আবার চিল্লিয়ে জিজ্ঞাসা করল,
-'বলো কে রান্না করেছে?'
-'আ..আমি',ভয়ে ভয়ে বলল ফুলি।
-'কার কথায়?'চোখ লাল করে বলল নিলয়।
-'রা..রাইসা ম্যাডামের।'
নিলয় চোখ লাল করে রাইসার দিকে তাকাল।মেয়েটা ভয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।কিছু বলতে যেয়েও পারল না।ওরই বা দোষ।ও তো জানেই না নিশিতা হাঁসের মাংস সহ্য করতে পারে না।এখন তো আরো প্রেগন্যান্ট!নিলয় নিশিতাকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে গেল।
রাইসা সব চুপচাপ দেখল।দৌঁড়ে রুমে এসে বসে পড়ল।চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পড়ছে।এত কষ্ট লাগছে কেন তার?নিলয় নিশিতাকে কত কেয়ার করছে।অয়ন থাকলেও নিশ্চয় এমন করত।আজ রাইসার অসুস্থতা দেখলে সে ছুটে এসে ওর কাছে বসে থাকত।যত্ন নিতো।কোনো কাজ করতে দিত না।আচ্ছা,সে কোনো ভুল করেনি তো অয়নকে ছেড়ে এসে?ছেলেটা যে তার জন্য পাগল ছিল!যেমনটা নিলয় নিশিতার জন্য।
চলবে
0 Comments:
Post a Comment