গল্প ঘরপ_সংসার পর্ব ৬

 #ঘর_সংসার

লেখিকা:Abida Nujhat

পর্ব:৬


নিলয়,নিশিতা আর রাইসা বাড়িতে এসে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই তুমুল বৃষ্টি আরম্ভ হলো।চারদিকে বজ্রপাত হচ্ছে।

কারেন্ট চলে গেছে।এইদিকে নিশিতা ঘেমে-নেয়ে একাকার।ভেবেছিল আজই নিলয়কে প্রেগনেন্সির কথা জানিয়ে দেবে।কিন্তু শরীর সায় দিচ্ছে না।নিশিতা চুপচাপ চেঞ্জ করে শুয়ে পড়ল।

নিলয় একটা মোমবাতি ধরিয়ে আনলো।


-'নিশু।'

-'হুম।'

-'তোমার কি হয়েছে বলোতো?এই'কদিন খেয়াল করেছি শরীরটা তোমার ভাল যাচ্ছে না।'


নিশিতা উঠে বসল।নাহ,আজ ও নিলয়কে বলেই দেবে প্রেগনেন্সির কথা।

-'নিলয় তোমাকে একটা কথা বলব?'

-'বলো।'

-'তুমি বাবা হওয়ার জন্য কতটা প্রস্তুত?'

-'মানে?তুমি হঠাত এসব কথা বলছ কেন?'

-'বলোই না।'

-'তোমাকে তো বলেইছি আমি,আমার একটা বাবু লাগবে।তাহলে?'

-'আমি প্রেগন্যান্ট নিলয়।'


এক নি:শ্বাসে কথাটা বলে দম নিলো নিশিতা।নিলয় ওর দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে।ওর মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।

-'তুমি সত্যি বলছ?'

-'হুম,সত্যিই তুমি বাবা হবে!'

-'ইয়েএএএ!'


নিলয় বাচ্চাদের মত নিশিতাকে কোলে নিয়ে ঘুরতে লাগল।নিশিতাও হাসছে।তখনই কারেন্ট চলে এলো।

-'আরে নামাও আমাকে।মাথা ঘুরে যাবে।'


নিলয় নিশিতাকে নামিয়ে দিলো।

'পাগল একটা।'


নিলয় নিশিতার পেটে হাত রাখল।

-'জানো,আমি কয়েকদিন ধরেই স্বপ্ন দেখছি একটা গুলুমুলু বাবুর সাথে আমি খেলা করছি।তখন থেকেই আমার বাচ্চা নেওয়ার শখ জেগেছে।ভাবিনি এত তাড়াতাড়ি সেটা পুরণও হয়ে যাবে।'

-'ভেবেছিলাম আরো আগে বলব।কিন্তু সুযোগই পাইনি।'

-'এটা ঠিক করোনি তুমি যাও।'

-'এখন তো বললাম,রাগ করোনা প্লিজ।'


নিলয় হেসে নিশিতার পেটে মাথা রাখল।

'এই এই বাচ্চাটা নড়ছে।'

-'তাই,না।'

-'হ্যাঁ!'

-'কিন্তু নিলয় বাচ্চা তো কমপক্ষে তিন মাসের আগে নড়াচড়া করে না।'

-'ওহ,তাহলে তো আমাকে আরো অপেক্ষা করতে হবে',মন খারাপ করে বলল নিলয়।

এভাবে ওরা দুষ্টুমিষ্টি গল্প করতে লাগল।


রাইসা অনেকক্ষণ ধরে পাইচারি করছে।মাথায় কিছুই আসছে না।কিভাবে সে নিলয় আর নিশিতাকে আলাদা করবে?যার জন্য এত নাটক।নিলয়কে প্রথম রাইসা দেখেছিল তার এক্স হাসবেন্ড মানে অয়নের ফোনে।একটা ছবি যেটা রাইসার মনে গেঁথে গেছিল!এমনিতেও অয়ন অনেক গল্প করত নিলয়ের।তাই তো সে এত ছল চাতুরি করে অয়নকে ডিভোর্স দেওয়ালো,তারপর নিলয়ের চোখে অয়নকে খারাপ বানালো।শেষ পর্যন্ত এ বাড়িতে উঠতে পেরেছে সে।হ্যাঁ,মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে।যদি এটা কাজে দেয় তবে সোনায় সোহাগা!


নিলয় আর নিশিতা রাইসার চিৎকার শুনে তাড়াতাড়ি ওর রুমে এসে দেখে ও ফ্লোরে পড়ে আছে।ওরা দুজন মিলে রাইসাকে বেডে এনে শোয়ালো।মুখে পানির ছিটা দিতেই রাইসার জ্ঞান আসল।

-'রাইসা আপু,কি হয়েছিল আপনার?'

-'জানি না,হঠাতই মাথাটা ঘুরে উঠল।শরীরটাও ইদানিং ভাল যাচ্ছে না।'

-'আচ্ছা আমি ডক্টরকে কল করছি।'

-'না নিলয়,আমার পারসোনাল ডক্টর আছেন,আমি ওনাকে ছাড়া কাউকে দেখাই না।'

-'আচ্ছা তার নাম্বারটা দাও।'


রাইসা নাম্নার দিলো।নিলয় ডক্টরকে ফোন দিয়ে আসতে বলল।

ডক্টর চেকাপ করছেন।নিলয় আর নিশিতা পাশে চিন্তিত মুখে বসে আছে।কি হলো মেয়েটার?ডক্টর সবকিছু চেক করে বললেন,

-'কংগ্রাচুলেশনস,মিষ্টি খাওয়ান।'

-'মানে?'

-'উনি মা হতে চলেছেন।'

-'কিহ!'

-'জী,দুইমাস চলছে অলরেডি।'


সবাই স্তব্ধ হয়ে আছে।রাইসার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে না ও খুশি না অসন্তুষ্ট।নিলয় ডক্টরকে বিদায় দিয়ে আসল।নিশিতা এখনো রাইসার পাশেই বসে আছে।ও কি বলবে বুঝতে পারছে না।নিলয় আসতেই রাইসা বলা শুরু করল,

-'আমি জানি অয়ন আমার সাথে ঠিক করেনি।কিন্তু আমি তো ওর বাচ্চার মা।মা হয়ে আমি আমার বাচ্চাকে কষ্ট দিতে পারব না।আমি বাচ্চাটাকে নিয়েও বাঁচতে চাই।'


-'অবশ্যই,তুমি চাইলে তোমার বাচ্চাকে নিয়ে থাকতে পারো।তোমাকে কেউ বাঁধা দেবে না।,

-'আরেকটা কথা বলছিলাম',ইতস্তত করে বলল রাইসা।


-'বলো।'

-'এই অবস্থায় তো আর জব করতে পারব না।আমি কি এখানে সেইকয়টা দিন থাকতে পারি নিলয়?

-'আমি কি তোমাকে বলেছি কিছু।তোমার যতদিন দরকার ততদিন এখানেই থাকবে।'

-'থ্যাংক ইউ সো মাচ।'

-'এখন তো শুধু খুশি আর খুশি।বাড়িতে দুই দুইটা বাচ্চা আসতে চলেছে।'

-'দুইটা?'

-'হ্যাঁ,নিশিতাও প্রেগন্যান্ট।'


রাইসার হাসি মিলিয়ে গেল।এসব কি বলছে নিলয়?এখন তো ওদের আলাদা করা আরো টাফ হয়ে গেল।ধ্যাত!যা ভাবে সবসময় তার উল্টা হয়।তাও মুখে মিথ্যা হাসি ধরে রাখল।

-'ওহ,এটা তো আরো খুশির সংবাদ।'


রাইসা কোনোভাবেই এই বাচ্চাটাকে পৃথিবীর আলো দেখতে দেবে না।নিলয়কে তার চাই ই চাই।সেটা যেভাবেই হোক!নিলয়ের প্রেমে পড়ে গেছে সে।


নিলয় আর নিশিতা রুমে চলে আসল।নিশিতাকে অনেক চিন্তিত দেখাচ্ছে।

-'কি হয়েছে নিশু?'

-'ভাবছি বাচ্চাটার কি হবে?কি পরিচয় নিয়ে বড় হবে?সমাজে ধিক্কার ছাড়া আর কিছুই পাবে না।'

-'আমিও সেটাই ভাবছি।যাক যা ভাজ্ঞে আছে তা তো হবেই।আল্লাহই কোনো পথ ঠিক করে দেবেন।'

-'রাইসা আপু আমাদের বাড়িতে কতদিন থাকবে?'

-'বাচ্চাটা হয়ে যাক।তারপর আমি নিজেই ওর কোনো ব্যাবস্থা করে দেব।'

-'আচ্ছা।'


দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে সব শুনল রাইসা।তার প্রেগনেন্সির কথা শুনে ওদের কেমন প্রতিক্রিয়া হবে সেটা জানার জন্য দাঁড়িয়ে ছিল।

'নাহ নিলয়,একবার যখন উঠতে পেরেছি,আর তোমার ঘাড়ের থেকে নামছি না আমি',মনে মনে বলল সে।এমনিতে কি ডাক্তারকে টাকা খাইয়ে মিথ্যা কথা বলিয়েছে সে!শুধু এটা প্রমাণ করার জন্য যে বাচ্চাটা নিলয়ের।এতেই কাজ হয়ে যাবে আশা করছে সে।


চলবে

0 Comments:

Post a Comment