#ঘর_সংসার
লেখিকা:Abida Nujhat
পর্ব:৫
আকাশটা বড্ড মেঘলা।নিশিতা সারাসকাল শুয়ে শুয়েই কাটিয়ে দিল।শরীরটা ভাল যাচ্ছে না।বাচ্চাটার অস্তিত্ব আস্তে আস্তে ঠিক পাচ্ছে সে।আচ্ছা তাদের কি হবে?ছেলে না মেয়ে?দেখতে কার মতন হবে?নিলয় না নিশিতা!রাইসা সেই সকাল থেকেই দরজা বন্ধ করে দিয়ে আছে।মেয়েটা যে এভাবে কি করে ভেবে পায়না নিশিতা।বড্ড শরীর খারাপ নিয়েও নিশিতা গেল দুপুরের রান্না করতে।
-'ফুলি,আমাকে একটু হেল্প করো।'
-'জি আফু কন।'
তখনই নিলয়ের ফোন এলো।
-'হ্যালো নিশু,আজ রান্না করা লাগবে না।'
-'কেন?'
-'আমার এক ফ্রেন্ডের রিসিপশন আছে,আমরা ওখানে যাব।তুমি রেডি হয়ে থাকো।আমি তোমাকে নিতে আসছি।'
-'আচ্ছা,কিন্তু রাই...'
নিশিতা বলার আগেই নিলয় কল কেটে দিলো।রাইসা আপুর কি হবে?সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে নিশিতা রেডি হতে গেল।একটা অফ হোয়াইট কালারের গাউন পরল সে।এই গরমে আর প্রেগন্যান্ট অবস্থায় এটা পরেই ইজি লাগছে তার।চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা লাল লিপস্টিক।ব্যাস,এতেই অপূর্ব লাগছে নিশিতাকে।নিশ্চয় আজ নিলয় তাকে দেখে চোখ সরাতে পারবে না।
নিলয় বাড়িতে এসে ঢুকতেই রাইসা তার রুম থেকে বের হয়ে আসল।সে নিলয়কে এই সময়ে দেখে অবাক।
-'এ কি নীল,তুমি এখন এলে যে?'
-'আসলে আমার একটা ফ্রেন্ডের রিসিপশন পার্টি আছে।তাই আমি আর নিশু ওখানে যাচ্ছি।'
রাইসা একটু মন খারাপের ভান করে বলল,
-'আচ্ছা তবে যাও তোমরা।'
নিলয় ভাবল এটা কেমন দেখায়?শুধু সে আর নিশিতা যাবে।রাইসা নিশ্চয় মন খারাপ করবে।এটা অভদ্রতা হবে।
-'রাই তুমিও যাও রেডি হও।'
-'আরে না না,ইনভাইট তোমাদের করেছে,তোমরা যাও।'
-'আরে কিচ্ছু হবে না।তুমি আমার কথা শুনবে না?'
-'আচ্ছা,তুমি এত করেই বলছ যখন,আমি যাচ্ছি।'
রাইসা মনে মনে অনেক খুশি হলো।ও তো এটাই চেয়েছিল।
নিলয়ের রুমে এসে নিশিতাকে দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।মেয়েটা গাউন পরেছে কেন?ও কি জানে না নিলয় ওকে শাড়ি পরা দেখতে কত ভালবাসে?নিলয় বিছানায় ধুম করে বসে পড়ল।
-'কি হয়েছে?কোনো সমস্যা?'
-'সমস্যা তো তুমি!'
-'মানে?'
-'কিছু না,চলো।'
নিশিটা বুঝে উঠল না ছেলেটার হঠাত হলো কি?ফোনে যখন কথা বলছিল তখন তো ঠিকই ছিল!
নিলয় আর নিশিতা বেরোতেই রাইসা এসে হাজির হলো।ও নিলয়ের পছন্দের কালার লাল কালারের শাড়ি পরেছে।সেটা দেখে নিলয়ের মেজাজ চরমে উঠে গেল।বাইরের মেয়ে শাড়ি পরতে পারে আর নিশিতা পরল না।
তিনজন থাকায় নিলয় গাড়ি নিয়ে বের হলো।
নিলয় আর ড্রাইভার সামনে বসেছে।নিশিতা আর রাইসা পেছনে।ড্রাইভার না থাকলে নিশ্চয় নিলয় নিশিতাকে নিয়ে সামনে বসত।ভাজ্ঞিস ড্রাইভার এসেছিল,ভাবতেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে রাইসার।
পার্টি সেন্টারে পৌঁছে ওরা গাড়ি থেকে নেমে পড়ল।নিশিতার বমি লাগছিল তাই অন্য জায়গায় সরে আসল।কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল।একটু পানি খেয়ে নিলো।এদিকে রাইসা খুশিতে খুশিতে নিলয়কে নিয়ে ঢুকে পড়ল।ভাব এমন করছে যেন সবাই ভাবে ও-ই নিলয়ের বউ।নিশিতা হাত মুখ মুছে এসে দেখে নিলয় রাইসা কেই নেই।বোধহয় ভেতরে চলে গেছে।নিশিতাও পার্টিতে প্রবেশ করল।
নিলয়ের বন্ধুর মা ওদের দেখে এগিয়ে আসল।নিলয় একটু অন্যদিকে চলে গেল।সে এসে রাইসাকে জিজ্ঞাসা করল,
-'মা তুমি কি নিলয়ের বউ?'
রাইসা কিছু বলল না।শুধু মুচকি হাসল,যা এক প্রকার সম্মতিই বোঝায়।নিলয় নিশিতাকে না পেয়ে ওকে খুঁজে আনল।
-'কোথায় গেছিলে একা একা?'
-'এমনি একটু খারাপ লাগছিল।'
-'বেশি খারাপ লাগছে?বাসায় যাবে?'
-'না থাক,আমি ঠিক আছি।'
নিলয় নিশিতাকে নিয়ে ওর বন্ধুর মায়ের কাছে গেল।
-'আসসালামু আলাইকুম আন্টি,কেমন আছেন?'
-'ওয়া আলাইকুমুস সালাম বাবা,আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি।তোমার পাশের মেয়েটা কে?'
-'আমার ওয়াইফ আন্টি।'
রাইসা একটু ভয় পেয়ে গেল।বুড়িটা কিছু বলে বসবে না তো?তাহলে তো সব প্ল্যানে পানি!
-'তাহলে এই মেয়েটা কে?'
রাইসাকে দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন ভদ্র মহিলা।
-'আমাদের বাড়ির গেস্ট।'
-'ওহ আচ্ছা,যাও তোমার বন্ধুকে দেখে আসো।'
নিলয় চলে গেলে ভদ্র মহিলা নিশিতাকে টেনে একপাশে নিয়ে আসলেন।
-'মা একটা কথা বলার ছিল।'
-'জী বলুন আন্টি।'
-'তোমাদের ওই মেয়েটাকে কিন্তু আমার একদম ভাল লাগেনি!'
নিশিতা কি বলবে বুঝতে পারছে না।ইনিও বুঝে গেছেন ব্যাপারটা!তারমানে সত্যিই রাইসার মধ্য ঘাপলা আছে।
-'শোনো মা,নিজের স্বামীকে নিজের আঁচলে বেঁধে রাখবে।অন্য কোনো মেয়ে যাতে তারদিকে নজর দিতে না পারে।তুমি বুঝতে পারছ আমি কি বলতে চাচ্ছি?'
-'জী আন্টি।'
নিশিতার মনে কেমন একটা খটকা লাগল।নাহ,ওকে পারতেই হবে।নিলয়কে ও কারোর হতে দেবে না।নতুন করে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেল ও।নিলয়কে খুঁজে ওর পাশে গিয়ে দাঁড়াল।রাইসাকে মোটেও নিলয়ের পাশে ভিড়তে দিচ্ছে না ও।রাইসাও নিশিতার এই আচরণে অবাক।হঠাত করে ভোলাভালা মেয়েটা এত পাল্টে গেল কি করে?
-'তুমি শাড়ি পরনি কেন?'
-'ওহ,এইজন্য বুঝি আমার বরটা রাগ করেছে!'
-'হু!'
-'আচ্ছা সরি আর এমন হবে না।'
-'সত্যি তো?'
-'হ্যাঁ রে বাবা,তিন সত্যি।বাই দ্যা ওয়ে,তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।'
-'ওয়াও!সত্যি?কি বলনা প্লিজ?'
-'উহু,এখন না,বাসায় যেয়ে।'
-'উফ,আমার তো আর তরই সইছে না।'
-'কিন্তু ওয়েট তো করতেই হবে মি: নিলয়।'
-'তাই না,দেখাচ্ছি তোমার ওয়েট।'
দূর থেকে নিলয় নিশিতার এই দুষ্টুমিষ্টি ভালবাসা আর হাসাহাসি দেখে রাইসা জ্বলে যাচ্ছে।হাতে থাকা পানির বোতলে চাপ দিয়ে ফুটো করে ফেলে দিল সে।'নাহ,কিছু একটা করতেই হবে',মনে মনে বলল সে।
চলবে
0 Comments:
Post a Comment