#ঘর_সংসার
লেখিকা: Abida Nujhat
পর্ব:৪
আজ দুদিন হলো রাইসা এ বাড়িতে এসেছে।নিলয় তো নিশিতাকে বলেছিল যে রাইসা জব না পাওয়া পর্যন্ত এখানে থাকবে।কিন্তু এই মেয়ের তো জব খোঁজার কোনো নামই নেই!আর নিলয়েরও তাতে খুব একটা ভ্রুক্ষেপ দেখতে পারছে না নিশিতা।সবাই যার যার আপন গতিতে চলে যাচ্ছে।কেবল পারছে না শুধু নিশিতা।
নিলয় অফিস থেকে আসার সময় একটা কাজের মেয়ে ঠিক করে এনেছে,পার্মানেন্ট।টুকিটাকি সব কাজই পারে মেয়েটা।বয়স খুব একটা বেশি না।১৬ - ১৭!
-'রাই তোমার একা ভয় লাগলে ওকে নিয়ে থাকবে।মেয়েটা অনেক ভাল।শুধু টাকার অভাবে আজ এই অবস্থা!'
রাইসার ভেতরে ভেতরে জ্বলে গেলেও মুখে তা প্রকাশ পেল না।এই দু'টাকার কাজের মেয়ের সাথে নাকি সে থাকবে!
-'ঠিক আছে,সমস্যা নেই।'
-'তুমি মেয়েটাকে এই জন্য এনেছ?'
-'হ্যাঁ,পাশাপাশি ও তোমাকে কাজেও হেল্প করবে নিশিতা।'
নিশিতা আজ একমাস ধরে কাজের মেয়ে রাখার কথা নিলয়কে বলছে।ওই যে কোনোকিছুই ভাল লাগে না!তখন তো ও আর জানত না যে ও প্রেগন্যান্ট।কিন্তু নিলয় তাতে নারাজ।তার কথা বাড়িতে কোনো বাইরের মেয়েকে রাখা যাবে না।দরকার হলে রেস্টুরেন্ট থেকে খাব।সেই নিলয় এই দুতিন দিনেই রাইসার জন্য কাজের মেয়ে এনেছে!নিশিতার চোখ শুকনো থাকলেও বুকের ভেতর যে রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে তা কি নিলয় জানে?জানলে নিশ্চয় এমন করত না।
কয়েকঘন্টার মধ্যেই মেয়েটার সাথে বেশ ভাব জমে গেল নিশিতার।মেয়েটা অনেক মিশুক।মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে।গরিব তো কি হয়েছে?মানুষের মনই বড়।নিশিতা রাতের রান্না করছে।আর ফুলি মানে কাজের মেয়েটা ওকে সব এগিয়ে দিচ্ছে।
-'আচ্ছা ম্যাডাম,একডা কতা কমু?'
-'হ্যাঁ বলো,আর আমাকে আপু ডাকবে বুঝলে?ম্যাডাম না।
-'আইচ্ছা আফু।'
নিশিতা হাসল।
-'বলো কি বলবে।'
-'না মানে,আপনাগো বাড়িত আরেকডা মাইয়া আছে না...'
-'তুমি বলতে চাচ্ছ রাইসা?'
-'হ,হ্যারে আমার একদম পছন্দ হয় না।কেমন আপনের জামাইয়ের পিছে লাইগা থাকে!
নিশিতার মুখটা মুহুর্তেই মলিন হয়ে গেল।হাসি মিলিয়ে গেল।মেয়েটা খুব একটা ভুল বলেনি!এই কয়েকঘন্টায় ফুলি এসব বুঝে ফেলেছে।আর নিশিতা যে এটা দিনরাত সহ্য করে যাচ্ছে!
-'ও কিছু না।তুমি আর এইসবে মন দেবে না,বুঝলে?'
-'হ,কিন্তু আমি হাছা কথা কইছি।'
নিশিতা আর কিছু বলল না।
রাতে খেয়েদেয়ে নিশিতা চুপচাপ বিছানায় বসে আছে।নিলয় ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ওর কাছে যেয়ে ওর কোলে মাথা রাখল।
-'জানো ফুলিকে মেইন কেন এনেছি?'
-'হুম,রাইসা আপুর যাতে একা থাকতে সমস্যা না হয় সেইজন্য!'
-'নাহ,ওকে আমি এনেছি যাতে আমার বউয়ের থেকে আমাকে দূরে থাকতে না হয়।'
-'মানে?'
-'রাই তোমাকে রাতে এসে নিয়ে যায়।তুমি জানোনা তোমাকে ছাড়া আমার ঘুম হয় না?তুমি যাও যাও আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়ে যাও।'
নিশিতা হালকা হাসল।পাগলটা এখনো পাগলই রয়েছে।
-'তাই।'
-'নিশু আমার না একটা গুলুমুলু বাবু লাগবে!'
নিশিতা বিষম খেল।নিলয়কে কি বলে দেবে বাচ্চার কথা?হ্যাঁ কারণ বাচ্চাই একমাত্র মা বাবার সম্পর্ক আরো মজবুত করতে পারে।
-'আসলে নিলয়,আমি প্রে...'
তখনই কোনোকিছু ভাঙার শব্দ শোনা গেল।আর রাইসার চিৎকার।নিলয় তাড়াতাড়ি করে উঠে রাইসার রুমে গেল।পেছন পেছন নিশিতাও গেল।
-'তোর সাহস তো কম না।তোর জন্য আমি পড়ে গেলাম।বদমাইশ মেয়ে।'
-'বিশ্বাস করেন ম্যাডাম,আমি ইচ্ছা কইরা পানি ফেলি নাই।ভুল কইরা পইড়া গেছে।'
-'ভুল,তোর ভুল আমি ছোটাচ্ছি দাঁড়া।'
রাইসা ফুলির দিকে তেড়ে আসলে নিলয় যেয়ে আটকায়।
-'আহ রাই,ও তো বলছেই যে ও ইচ্ছা করে করেনি।বাদ দাও না।'
-'তুমি শুধু ওর দিকটাই দেখলে নীল।আমি যে পড়ে কতটা ব্যাথা পেয়েছি,সেটা দেখলে না।'
ন্যাকা কান্না করছে রাইসা।নিশিতা চুপচাপ দাঁড়িয়ে সব দেখছে।কাজের মেয়েটাকে ইশারা দিয়ে চলে যেতে বলল।
-'আহ,পা মচকে গেছে।দাঁড়াতেও পারছি না।'
নিলয় আচমকাই রাইসাকে কোলে তুলে নিলো।রাইসা নিলয়ের গলা জড়িয়ে আছে।নিলয়কে রাইসাকে বিছানায় শুইয়ে দিলো।এই দৃশ্য আর নিশিতার সহ্য হলো না।ও কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে আসল।
-'আমি ফুলিকে ডেকে দিচ্ছি।ও তোমার পায়ে মলম লাগিয়ে দেবে।'
-'না,ওই শয়তান মেয়েটাকে আর আমার কাছে এনো না প্লিজ।'
নিলয় আর উপায় না দেখে নিজেই ড্রয়ার থেকে মলম বের করে রাইসার পায়ে লাগিয়ে দিলো।রাইসা একটা পরিতৃপ্তির হাসি দিলো।সে পেরেছে!
নিশিতা বিছানায় বসে আছে।চোখের পানি মুচ্ছে আবার বের হচ্ছে।উফ এই চোখদুটো আজ ওর সাথে নাফরমানি করছে!একটুপরেই নিলয় এলো।নিশিতা বালিশ দিয়ে চলে যেতে চাইলে নিলয় আটকায়।
-'কোথায় যাচ্ছ?'
-'রাইসা আপুর কাছে।ফুলি তো আর থাকবে না!'
-'রাগ করেছ?'
-'না ছাড়ো,আমাকে যেতে দাও।'
নিলয় বালিশটা নিশিতার হাত থেকে নিয়ে বিছানায় ছুড়ে মারল।তারপর ওকে কোলে তুলে নিলো।
-'আরে,কি করছ?'
-'এখন সারারাত আমরা এভাবে গল্প করব।'
-'কিহ!মানে?'
-'আমি রাইকে কোলে নিয়েছি বলে রাগ করেছ না?আর কি করতাম বলো?তাই আপনার রাগ ভাঙ্গানোর এই উপায়।'
-'না লাগবে না নামাও আমাকে।'
কিন্তু কে শোনে কার কথা?নিলয় নিশিতাকে কোলে নিয়ে সারারাত এভাবেই গল্প করেছে!
শেষরাতে নিশিতা ঘুমিয়ে গেলে ওকে শুইয়ে দেয় নিলয়।
সকালে রাইসা উঠে দেখে নিলয় রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার আনিয়েছে।
-'বাইরে থেকে খাবার আনলে যে?নিশিতা কি করছে?'
-'ঘুমাচ্ছে তাই ডাকিনি।সারারাত ঘুমায়নি তো!'
বলে নিলয় নিজেই বোকা বনে গেল।রাইসা এই কথার কি অর্থ ভাববে!রাইসা নিলয়ের এই আদিক্ষেতা দেখে রাগে কটমট করতে করতে রুমে চলে গেল।
চলবে
0 Comments:
Post a Comment