ঘর_সংসার
#লেখিকা: Abida Nujhat
#পর্ব:৩
-'দাঁড়াও নিশিতা।'
নিলয়ের ডাকে নিশিতা চোখ মুছে ফিরে তাকাল।
-'তোমার জন্যও খাবার এনেছি।খেয়ে নাও।'
নিশিতা যেন এটা আশা করেনি।এ তো গোবরে পদ্মফুল।যাক নিলয় এখনো পুরোপুরি পাল্টে যায়নি।নিশিতা চেষ্টা করলে নিলয়কে এখনো আবার আগের নিলয় বানাতে পারবে।
-'সে কি,তুমি কখন নিলে খাবার?'
-'তুমি যখন ফোনে কথা বলতে বাইরে গেছিলে তখন।'
-'ওহ!'
রাইসার মুখটা কাচুমাচু হয়ে গেল।নিশিতা হাত ধুয়ে এসে খাবারটা খেয়ে নিল।রাইসা ওর রুমে যেয়ে দরজা আটকিয়ে দিয়েছে সেই তখন থেকে।নিলয় বোধহয় শুয়ে পড়েছে।ইদানিং সে নিশিতাকে ছাড়াই ঘুমাতে পারে অনায়াসে।
নিশিতার গলা দিয়ে এই খাবার নামছে না।তবুও খেতে হবে ওর বাচ্চাটার জন্য!আর এত কাজ করতে পারে না ও।একটুতেই ক্লান্তি এসে যায় কেন জানি।ডক্টর বলেছিল নিশিতার আড়াই মাস চলছে।এখন থেকে সাবধানে থাকতে হবে।কারণ এখন বাচ্চা মিসক্যারেজ হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
একটু খেতেই নিশিতার বমি চলে এলো।কোনোমতে খাবারটা শেষ করে সব গুছিয়ে রুমে এসে দেখে নিলয় ঘুমায়নি।বারান্দায় রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে দূর আকাশে দেখছে।নিশিতার ওর কাছে যেতেই চমকিয়ে উঠল।
-'আচ্ছা নিশু,এমন কেন হচ্ছে বলো তো?'
-'কি হচ্ছে?'
-'নতুন কোনোকিছু ভাল লাগতে শুরু করেছে!'
-'হুম আর আমাকে পুরনো মনে হতে শুরু করেছে।'
নিলয় অবাক হয়ে নিশিতার দিকে তাকাল।
মেয়েটা বলে কি!
-'অনেক রাত হয়েছে।শুয়ে পড়ো।'
-'আর তুমি?'
-'আমি রাইসা আপুর কাছে যাচ্ছি।'
-'কিন্তু ও তো আজ ডাকেনি।'
-'ডাকেনি কিন্তু কখন চলে আসবে তাও তো বলা যায় না।'
নিলয় আর কিছু বলল না।বলার যে কোনো মুখ নেই ওর!নিশিতা রাইসার রুমের দরজা নক করতে যাবে তখনই ভেতর থেকে হাসির শব্দ শুনতে পেল।রাইসা কি কারোর সাথে কথা বলছে?সাতপাঁচ ভেবে নিশিতা দরজায় নক করল।সাথেসাথে শব্দটাও বন্ধ হয়ে গেল।একটুপর রাইসা দরজা খুলল।দেখে মনে হচ্ছে একটু ভয় পেয়ে আছে।
-'তুমি?'
-' আসলে আপু আপনার তো একা ঘুমাতে ভয় করে তাই....'
-'ওহ না,আজকে লাগবে না।তুমি যাও।'
-'আচ্ছা।'
নিশিতা চলে আসল ঠিকই কিন্তু ওর মনের মধ্যে কেমন খচখচ করছে।রাইসা কার সাথে কথা বলছিল?আর কালকে ভয় লাগলে আজ কেন লাগল না?মেয়েটাকে প্রথম থেকেই অদ্ভুত লাগে নিশিতার।এসব ভাবতে ভাবতেই রুমে এসে পড়ল ও।
নিলয় ঘুমায়নি।সিগারেট টানছে।যেটা নিশিতার একদমই অপছন্দ।অন্যদিন হলে নিশিতা রাগ করত,কিন্তু আজ ও চুপচাপ শুয়ে পড়ল।যেটা নিলয়ের অদ্ভুত লাগল।
-'চলে এসে যে?'
-'এমনি,আপু বলল তার আজকে ভয় লাগছে না,তাই।'
-'ওহ ভাল করেছ।'
বিড়বিড় করে বলল নিলয়।
-'কি বললে?'
-'কিছু না।তুমি রাগ করেছ?'
-'কেন?'
-'এই যে আমি সিগারেট খাচ্ছি।'
-'ও না।'
-'এত চেঞ্জ হলে কি করে!'
-'সেটা তুমি হয়েছ আমি না।'
-'মানে?'
-'কিছু না।ঘুমিয়ে পড়ো!'
নিলয় আর কিছু না বলে শুয়ে পড়ল।তার মায়াবতী এত পাল্টে গেল কিভাবে?নাকি সে-ই পাল্টেছে,কোনটা?
সকালে নিশিতা উঠে ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে যেয়ে দেখে রাইসা ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে!
-'এ কি আপু আপনি এত সকালে রান্নাঘরে!'
-'হ্যাঁ,কেন?কোনো সমস্যা?'
-'না মানে আপনি তো আমাদের মেহমান।আপনি রান্না করছেন কেন?'
-'মন চাইল তাই।তুমি নিলয়কে ডাক দাও।ব্রেকফাস্ট করব একসাথে।'
নিশিতা বুঝল না একসাথে বলতে রাইসা কাদের বোঝাতে চাচ্ছে।ও আর নিলয় নাকি নিশিতা আর নিলয়?তবে নিলয় যে মাস্ট এটা নিশিতা বুঝেছে!
-'আসলে নিলয় তো ৯ টার আগে তো ওঠে না তাই...আচ্ছা আমি গিয়ে দেখি...'
-'ওঠেনা উঠবে!থামো আমি যাচ্ছি।'
রাইসা কি নিলয়কে ডাকতে গেল?এটা কেমন কথা?যাই হোক নিশিতা দেখল রাইসা বিফ কারি,চাইনিজ ভেজিটেবিল আর ফ্রায়েড রাইস রান্না করেছে।এগুলো নিলয় পছন্দ করবে নিশ্চয়ই।
রাইসা অনেক্ষণ যাবত নিলয়ের ঘুমন্ত চেহারা দেখছে।নিশিতা কত ভাগ্যবতী তাই না?নিলয় যে লিগালি ওর!তো কি হয়েছে?লিগালি না হোক ইললিগালি তো নিলয় তারই এখন!
রাইসা অনেক্ষন পর নিলয়কে ডাক দিল।
-'নিলয়,এই নিলয়,ওঠো।তোমার প্রিয় নাশতা বানিয়েছি।'
নিলয়কে আগে এভাবে নিশিতা ডাকত।ওর জন্য পছন্দের ডিশ রান্না করে ওকে ডাক দিত।তাই ঘুমের মধ্যে নিলয় ভাবল এটা বুঝি ওর নিশিতা।এক টান দিয়ে নিজের বুকে শুইয়ে দিল।নিশিতা আজ কিছু বলছে না কেন?ওর তো লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়ার কথা!একটুপর নিলয় বুঝতে পারে ও ভুল করে ফেলেছে।এটা নিশিতা নয়।রাইসা?!
রাইসাকে সরিয়ে নিলয় তড়িঘড়ি করে উঠে বসে।
-'তুমি!কখন এলে?'
-'এইতো এখনি।তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো।'
-'হুম আসছি।'
নিশিতা কি এতটাই পর হয়ে গেছে যে এখন আর ডাকতেও আসে না নিলয়কে!রাইসা বেশ খুশি।নিশিতা হয়েও তো সে নিলয়ের একটু কাছে যেতে পেরেছিল।
নিলয় টেবিলে এসে দেখে সব তার পছন্দের রান্না।রাইসাকে এত্তগুলো থ্যাংকস দিয়ে সে কবজি ডুবিয়ে খেতে বসল।নিশিতাও খাচ্ছে।নিলয় আর রাইসা খাচ্ছে আর গল্প করছে।
-'সত্যি রাই আজ অনেকদিন পর এভাবে তৃপ্তি নিয়ে খেলাম।রোজ তো ভর্তা,ভাজি এসবই খাই!'
-'আমি জানি।সেটা দেখেই তো আজ তোমার জন্য রান্নাগুলো করলাম।'
নিশিতা আড়ালে চোখের পানি মুছে উঠে গেল।
নিলয় একবার বললেই সে নিলয়ের জন্য জান পর্যন্ত দিয়ে দিতে পারে।রান্না তো কিছুই না!
চলবে
0 Comments:
Post a Comment