গল্প ঘরপ_সংসার পর্ব ২

 ঘর_সংসার

#লেখিকা: Abida Nujhat

#পর্ব:২


নিলয় রাইসার সাথে কথা বলে এসে দেখে নিশিতা ঘুমিয়ে পড়েছে।আসলে নিশিতা ঘুমায়নি।চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করছে।নিজের স্বামীকে অন্য মেয়ের সাথে রেখে কোনো মেয়েই শান্তি পায় না।নিশিতাও পাচ্ছে না।নিলয় লাইট অফ করে নিশিতার পাশে শুয়ে পড়ল।মেয়েটার চেহারায় এত স্নিগ্ধতা কেন?যেটা দেখে নিলয় সব ভুলে যায়!একটুপরেই রাইসা ওদের রুমের দরজা জোরেজোরে ধাক্কাতে লাগল।অগত্যা নিশিতা শোয়া থেকে উঠে বসল।যেয়ে দরজা খুলে দিতেই রাইসা হুড়মুড় করে ঢুকে সোফায় বসে পড়ল।ততক্ষণে নিলয়ও উঠে পড়েছে।

-'আসলে আমার একা ঘুমাতে খুব ভয় লাগছিল।কখনো একা ঘুমায়নি তো তাই।'

-'সমস্যা নেই আপু।চলুন আমি আপনার সঙ্গে যাচ্ছি।'


নিলয় নিশিতাকে মানাও করতে পারছে না আবার রাইসাকে কিছু বলতেও পারছে না।নিশিতাকে ছাড়া যে তার ঘুম আসে না।এই একবছরে অভ্যাসটা বড্ড খারাপ হয়ে গেছে।রাইসা চুপচাপ নিশিতার সাথে চলে এলো।ও হয়তো অন্যকিছুই আশা করেছিল।নিলয়ের আর ঘুম এলো না।শেষরাতে চোখদুটো লেগে এসেছিল।


ভোরে ঘুম থেকে উঠে নিশিতা ঘরের কাজ সব গুছিয়ে ফেলল।তারপর রান্না বসালো।গরম গরম ভাত,ডিমভাজি আর আলুভর্তা করল।নিলয় অফিসে যাওয়ার জন্য ৯ টায় ঘুম থেকে ওঠে।কিন্তু আজ সে উঠছে না।শেষ পর্যন্ত নিশিতা নিজেই যেয়ে ডাক দিল।


-'শুনছ,অফিসে যাবে না?অনেক লেট হয়ে গেছে।'

নিলয় হুড়মুড় করে উঠে বসল।

৯:৩০ বাজে।মেয়েটা কি আরেকটু আগে ডাকতে পারল না?১০ টায় অফিস।আজ আরো মিটিং আছে।

-'আরো পরে ডাকতে।যত্তসব।'


নিলয় ঝাঁঝানির কণ্ঠে বলে ওয়াশরুমে চলে গেল।নিশিতা মন খারাপ করে কিচেনে এসে দাঁড়িয়ে থাকল।নিলয় রোজ ঠিকসময়ই ঘুম থেকে  ওঠে।আজ ওঠেনি নিশ্চয়ই কোনো কারণ ছিল।সেটা ভেবেই নিশিতা অপেক্ষা করছিল।আর না পেরে শেষমেষ নিলয়কে ডাকল।কিন্তু নিলয় তাকে কত কড়া কথা শুনিয়ে দিল।ছেলেটা এমন কেন?একটুও নিশিতাকে বোঝে না।আসলে কালকে রাইসার ওপর সব রাগ গিয়ে আজ নিশিতার উপর পড়েছে নিলয়ের।রাইসা নিশিতাকে না নিয়ে গেলেই তো নিলয়ের ঘুমটা কত ভাল হত!আর লেটও হত নাহ।হুহ এত বড় মেয়ের কিনা একা ঘুমাতে ভয় লাগে,ঢং।আবার রাইসার ওপর মাঝেমাঝে অনেক মায়া জাগে নিলয়ের।কেন এমন হয় সেটা সে নিজেও জানে না।তাইতো ভাল করে না দেখেশুনেই আশ্রয় দিয়েছে সে রাইসাকে।


নিশিতা কিছুক্ষণ মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।দুটো হাত ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল।সে জানে এটা নিলয়।নিলয়ের ছোঁয়া থেকে শুরু করে নিশ্বাস পর্যন্ত চেনা হয়ে গেছে নিশিতার।


-'রাগ করো না নিশু।মাথা গরম হয়ে গেছিল,সরি।

-'ইটস ওকে।খেতে বসো।অলরেডি দেরি হয়ে গেছে।'


নিলয়কে ছাড়িয়ে নিশিতা খাবার সার্ভ করে দিল।

তখনই হাই তুলতে তুলতে রাইসা এসে খাবার টেবিলে নিলয়ের মুখোমুখি বসে পড়ল।


-'গুড মর্নিং নিলয়।'

-'মর্নিং।'

মুচকি হেসে বলল নিলয়।

-'আজকে একটু আমাকে এন.এস রোডে নামিয়ে দিয়ে আসবে?বান্ধবীর বাসায় যাব।'

-'আচ্ছা,রেডি থেকো।'


নিশিতা ভেবে পাচ্ছে না মেয়েটা নিলয়ের কাছে এত কিছু আবদার করছে কেন?থাকার জায়গা দিয়েছে তাই কত।আর নিলয়ও কেন মানা করছে না?এসব দেখতে মোটেও ভাল লাগছে না তার।না চাওয়া সত্ত্বেও নিজের বাচ্চার জন্য সে খেয়ে নিল।


-'এগুলো কেমন খাবার?'

-'মানে আপু?'

-'তোমরা এসব ভর্তাটর্তা খাও,ইস।'

-'আসলে আপু এগুলো নিলয়ের প্রিয় তো তাই।'

-'ওহ কালকে থেকে আমার জন্য অন্যকিছু রান্না করবে।'

-'ঠিক আছে আপু।'


নিলয় শুধু নিরব দর্শকের মত সব দেখল।নিশিতা ভেবেছিল নিলয় রাইসাকে কিছু বলবে।যে কিনা আগে নিশিতাকে কোনো কাজই করতে দিত না।আজ অন্য একটা মেয়ে নিশিতাকে অর্ডার করছে তাও সে কিছু বলছে না!তাই নিশিতাও সব মেনে নিলো।


নিলয় রেডি হয়ে বের হতেই রাইসা চলে আসল।স্টাইল কি!কে দেখে বলবে এই মেয়েটা ডিভোর্সি।


-'চলো নিলয়।'

-'হুম চলো।'


নিলয় রাইসাকে বাইকে করে নিয়ে চলে গেল।নিশিতাকে কিছুই বলল না।যেই নিলয় প্রত্যেকদিন অফিসে যাওয়ার আগে তার কপালে ভালবাসার পরশ দিয়ে যেত।নিশিতা পারছে না নিলয়ের এই ব্যবহার নিতে।ছেলেটা একদিনে এত বদলে গেল কিভাবে?সারা সকাল নিশিতা নিজের পেটে হাত রেখে বাচ্চার সাথে হেসে-কথা বলে পার করে দিল।রান্না করতে মন চাইল না।তাই স্যান্ডউইচ বানিয়ে খেয়ে নিলো।নিলয় অফিসে খাবে।রাইসা তো এখনো আসেনি।বোধহয় বান্ধবীর বাসায় খেয়ে নেবে।


বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলল না নিলয় এলো আর না রাইসা।শেষ পর্যন্ত নিশিতা নিলয়কে কল দিল।


-'হ্যালো,কোথায় তুমি?'

-'নিশু অফিসের কাজে দেরি হয়ে গেছিল।আমি একবারে রাইকে নিয়ে আসছি।'

-'আচ্ছা,' বলতে গলাটা কেমন ধরে এলো নিশিতার।


কেন এমন হচ্ছে?একবার সে নিলয়কে তার খালামণির বাসা থেকে আনতে বলেছিল।নিলয় এক ঝাড়ি মেরে বলেছিল অফিস থেকে  টায়ার্ড হয়ে সে কোথাও যেতে পারবে না।আর আজ?


রাত করে দুজনে হাসতে হাসতে বাড়ি ঢুকল।


-'ওহ,তুমি অনেক হাসাতে পারো রাই।অনেকদিন পর এমন মন খুলে হাসলাম।থ্যাংকস।'

-'ইটস মাই প্লেজার নীল।'


নীল?!নিশিতা যে চিন্তায় মরে যাচ্ছিল সে দিকে নিলয়ের কোনো খেয়ালই নেই।নিশিতাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দুজনে চুপ হয়ে গেল।


-'এত দেরি হলো কেন?'

স্বাভাবিক কন্ঠে জিজ্ঞাসা করল নিশিতা।


-'আসলে আসার সময় রাই বায়না ধরল তাই আমরা একটু ঘুরতে গেছিলাম।আমিও ভাবলাম মেয়েটার মন ভাল হয়ে যাবে।'


-'ওহ খেয়ে নাও আসো।'

কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল নিশিতা।


-'না আমরা খেয়ে এসেছি।'

-'তাহলে তো ভালোই।'


নিশিতা হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে রুমে চলে আসার জন্য পা বাড়ালো।নিশিতার কান্না নিলয় দেখল না।

চলবে,

0 Comments:

Post a Comment