গল্প ঘরপ_সংসার পর্ব ৯

 #ঘর_সংসার

লেখিকা:Abida Nujhat

পর্ব:৯


রাইসা নিলয়ের বুকে মাথা রেখে কেঁদেই চলেছে।কেন জানিনা কান্না ওর আপনাআপনিই চলে আসছে।এতদিনের সব গ্লানি আর বের হয়ে আসছে।সে কি কোনো ভুল করেছে?লোভের বশে কোনো পাপ করছে না তো?


নিলয়ের পরক্ষনেই মনে হলো ও কি করছে এটা!কোনো পরনারীকে ওর বুকে আশ্রয় দেওয়া কি ঠিক?নাহ,এই বুকে শুধু নিশিতার স্থান।ক্ষনিকের মোহে পড়ে হয়তো ও ভুল করেছে।কিন্তু ভুলটাকে প্রশ্রয় দেওয়া পাপ!নিলয় সাথেসাথে রাইসাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলো।

-'আর কান্না করো না। ।চোখমুখ তো একেবারে ফুলিয়ে ফেলেছো।নিজের বাচ্চাটার কথা ভাবো।

ফ্রেশ হয়ে আসো ডিনার করব।'


রাইসা হিচকি তুলে কাঁদছিল।নিলয়ের কথা শুনে কান্না থামিয়ে উঠে দাঁড়াল।সে এখন কিচ্ছু ভাবতে পারছে না।সে এখন মাঝ সমুদ্রে ভাসছে।যেখান থেকে ফিরে আসা সম্ভব নয়।আবার সামনে আগাতে গেলেও ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।তারউপর এই বাচ্চার নাটক।


নিলয় রাইসার রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে আসল।মেয়েটা এখনো ঘুমাচ্ছে।ওর মাথায় হাত দিতেই ও চোখ খুলে তাকাল।

-'উঠে গেছ।আসো ডিনার করে নিই।'

-'হুম,তুমি এতক্ষন ডাকোনি কেন বলোতো?আপু কি মনে করল,সে এসেছে আর আমি তারসাথে কথা না বলে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছি।'

-'আরে কিচ্ছু মনে করেনি।এমনিতেও আমার বউটা এখন অসুস্থ।সো তার রেস্ট সবার আগে।'

-'তাই,দেখো আমি কত লাকি না,তোমার মত হাসবেন্ড পেয়ে।অন্যকেউ হলে তো এখন ঘাড় ধরে নামিয়ে দিত',বলে নিশিতা হাসল।


নিলয়ের অনেক কষ্ট হচ্ছে।একটু আগে ও কি করল?রাইসাকে কেন নিজের কাছে আসতে দিলো।নিশিতা জানলে অনেক মন খারাপ করবে।ও প্রকাশ না করলেও তো নিলয় বুঝে।ধ্যাত,নিশিতার কষ্ট হবে এমন কাজ নিলয় করল কেন ভেবে পাচ্ছে না।


-'আচ্ছা নিশু,যদি কখনো জানতে পার যে আমার বুকে অন্য কোনো মেয়ের স্থান আছে,তখন কি করবে?'


নিশিতার হাসি মিলিয়ে গেল।নিলয় কি বলছে হঠাত করে এসব!ও উঠে নিলয়কে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রাখল।

-'আমি মরে যাব।তুমি এমন করে কেন বলছ?'

-'আরে পাগলী আমি তো মজা করছিলাম।চলো আসো খেয়ে নিই।'


নিশিতা কিছু না বলে ডাইনিং এ চলে আসল।নিলয়ের এই একটা কথায় ওর মন খারাপ হয়ে গেছে।নিলয়ও সেটা বুঝেছে।ও যে কেন বলতে গেল এই কথা কে জানে।


একে একে নীলাশা,রাইসা সবাই ডিনার করতে চলে এলো।কেউ কথা বলছে না সবাই নীরবে খাচ্ছে।নিশিতা শুধু ভয় পাচ্ছে নীলাশা রাইসাকে উল্টাপাল্টা কিছু না বলে ফেলে রাগের বশে।সে একদিন হলো এই বাড়িতে এসেছে।এখনই ঝামেলা হলে সমস্যা হবে।মৌনতা ভেঙে নীলাশাই শুরু করল,


-'তোমার নাম রাইসা তাই না?'

-'জী আপু।'

-'পড়াশোনা শেষ?'

-'জী আপু,এই বছরই মাস্টার্স কমপ্লিট করলাম।'

-'তো এখন কি জব খুঁজছো?ডোন্ট মাইন্ড তোমার ব্যাপারে নিশিতার কাছ থেকে আমি সব শুনেছি।'

-'জী আপু',নিচের দিকে তাকিয়ে বলল রাইসা।


সে মনেমনে একগাদা গালি দিচ্ছে নীলাশাকে।সে কেন নীলাশার এত প্রশ্নের জবাব দিতে যাবে?ফালতু😡।মেয়েটা তাকে হ্যারেস করার চেষ্টা করছে।কিন্তু রাইসাও কম যায় না হুহ।


-'তোমার ফ্যামিলি কোথায় থাকে রাইসা?'


রাইসা বিষম খেলো।এখন কি বলবে সে?নিলয়কে নাই কোনোভাবে বুঝিয়েছিল।কিন্তু ওর বোনকে আরো চালাক মনে হচ্ছে।বোকা বানানো অত সহজ নয়।


-'আমার কেউ নেই।ছোটবেলা থেকে অনাথআশ্রমে মানুষ হয়েছি,পড়াশোনা করেছি।ওখান থেকেই অয়নের সাথে দেখা,বিয়ে।আর তারপর...'

ন্যাকা কান্নার নাটক করল রাইসা।


-'ওকে স্টপ স্টপ,আই এম সরি।আমার এখন তোমাকে এসব জিজ্ঞাসা করা উচিত হয়নি।'

-'না ঠিক আছে আপু,তাইতো একটা চাকরির খোঁজে এখানে পড়ে আছি।আর তো আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।'

রাইসা কান্না থামিয়ে দিলো।


নিশিতা আর নিলয় চুপচাপ নীলাশা আর রাইসার কথা শুনল।তাহলে রাইসা অনাথআশ্রমে মানুষ!কই কখনো এই কথা তাকে বলতে শোনেনি নিশিতা।নিলয়ের যেন রাইয়ার প্রতি মায়া আরো বেড়ে গেল।ইস,মেয়েটা ছোটবেলা থেকেই কষ্ট পাচ্ছে।ফ্যামিলির ভালবাসা তো পায়ই নি,স্বামীর ভালবাসাও পেল না।এখন আরো বাচ্চা পেটে!

নাহ,নিলয়ের কিছু একটা তো করতেই হবে।

সবাই ডিনার শেষ করে যার যার রুমে চলে গেল।

নিশিতা আর ফুলি মিলে সব গুছিয়ে নিলো।


সকালে নিলয় অফিসে চলে গেলে নীলাশা নিশিতার রুমে আসল।নিশিতা তখন ঘর গোছাচ্ছিল।

-'আসুন আপু,বসুন।'

-'না ঠিক আছে।আর তুমি এত কাজ করছ কেন হুম?বলব ভাইকে?'

-'না আপু সমস্যা নেই।ইশা কি করছে?'

-'ও তো ঘুমাচ্ছে।একদম বাবার মত স্বভাব পেয়েছে।'


নিশিতা হাসল।ওর বাচ্চাটাও যেন একদম নিলয়ের মতন হয়।

-'শোনো যেটা বলতে এসেছি,কাল তো রাইসার কাছ থেকে সবই শুনলাম।'

-'হুম।'

-'আমার কেন জানিনা সব বিশ্বাস হয়নি।একটা মেয়ে এভাবে নিজের স্বামীর বন্ধুর বাড়িতে পড়ে থাকতে পারে!'

-'আসলে আপু উনিও প্রেগন্যান্ট।'

-'তাই নাকি,তো সে কি সারাজীবন এখানেই থাকবে নাকি?কিছু তো একটা করতে হবে।ওর জন্য না হোক বাচ্চাটার জন্য তো।'

-'আপু এই ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।'

-'তাই বললে হবে?শোনো আজকালকার মানুষের উপর কোনো বিশ্বাস নেই।কে কার বেশে ক্ষতি করে দিয়ে যাবে বলা যায়?তুমি একটু সাবধানে থেকো।'

-'আচ্ছা আপু।'


নীলাশা চলে গেল।নিশিতা নীলাশার কথা নিয়ে ভাবতে বসল।সে খুব একটা ভুল বলেনি।নাহ,আজই নিলয়ের সাথে এই নিয়ে আলোচনা করতে হবে।


রাইসা নিশিতাকে ফাঁসানোর একটা বুদ্ধি পেয়েছে।কিন্তু এটা কাজে লাগাবে কি করে?নিশিতা তো বাইরের ছেলেদের সাথে মিশেই না।

তার আগে রাকিবকে সরাতে হবে।উফ কত্ত বাধা!


চলবে

0 Comments:

Post a Comment