#ঘর_সংসার
লেখিকা:Abida Nujhat
পর্ব:১০
আজ খুব ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে রাইসা।শাওয়ার নিয়ে এসে গুনগুন করে গান গাইছে আর চুল মুচ্ছে।এই আনন্দের সময়টাতেই রাকিবের কল আসা লাগল,অসহ্য ছেলে একটা।রাইসা একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফোনটা ধরল।
-'হ্যালো।'
-'হ্যালো বেবি,আমার সাথে আজকে একটু দেখা করতে পারবে?'
-'আজকে?কেন?'
-'একটু দরকার ছিল।না করোনা প্লিজ।'
রাইসার মন চাচ্ছে না কিন্তু ছেলেটা এত করে রিকুয়েস্ট করছে যে না মেনে উপায় নেই।
-'আচ্ছা,কখন আসব আর কোথায়?'
-'এইতো এখনই,ফুড ভিলা রেস্টুরেন্টে।'
-'আচ্ছা আমি আসছি।'
এই বিকেলের দিকে হঠাত করে রাকিবের কি মনে হয়েছে বুঝতে পারল না রাইসা।যাই হোক সেটা গেলেই বোঝা যাবে!
নিশিতা মায়ের একটা শাড়ি বের করে সামনে নিয়ে বসে আছে।আজ মায়ের কথা বড্ড মনে পড়ছে তার।মা মারা গেছে তখন যখন নিশিতার ৫ বছর বয়স ছিল।তারপর বাবা আর বিয়ে করেননি।একা হাতেই নিশিতাকে মানুষ করেছেন।তাদের পরিবারে শুধু নিশিতার দাদা,দাদী আর বাবা।দাদী বারবার করে তার বাবাকে বিয়ে করতে বলেছিল।কিন্তু নিশিতার কথা ভেবে বাবা আর দ্বিতীয় বিয়ে করেননি।মায়ের শাড়িটা হাতে নিয়ে চোখের পানি ফেলল নিশিতা।এই সময় একটা মেয়ের সবচেয়ে বেশি দরকার হয় তার মাকে।কিন্তু নিশিতার তো আর সেই কপাল নেই!ইস,যদি সে তার মাকে বলতে পারত যে,"মা,আমিও মা হব!"নিশিতা শাড়িটা আলমারির মধ্যে রেখে নীলাশার রুমে গেল গল্প করার জন্য।
রাইসার সামনে বসে আছে রাকিব।চোখ-মুখ দেখে অনেক চিন্তিত মনে হচ্ছে।রাইসা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
-'কি হলো কি বলবে বলো।'
-'আমি অনেক ভেবেচিনতে একটা ডিসিশন নিয়েছি রাইসা।'
এবার রাইসাও ঘাবড়িয়ে গেল।কারণ খুব সিরিয়াস কথা ছাড়া তাকে রাইসা বলে ডাকেনা রাকিব।কি বলতে চাচ্ছে ও?
-'হুম বলো।'
রাকিব রাইসার দুই হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল,
-'চলো না দূরে কোথাও চলে যাই।'
-'মানে!কি বলছ তুমি এসব?'
-'আমি সজ্ঞানেই বলছি রাইসা।চলো আমরা বাইরের দেশে চলে যাই।যেখানে শুধু তুমি আর আমি থাকব।কেউ কথা শোনাতে পারবে না!'
-'না,রাকিব।সেটা সম্ভব না।'
-'কেন সম্ভব না?তুমি কি আমাকে ভালবাসো না?আর তুমি কোথায় থাকছ তাও তো আমি জানি না।'
-'আমি বান্ধবীর বাসায় থাকছি।আর আমি সেটা বলিনি,কিন্তু এখন বিদেশে যাওয়া সম্ভব না।'
-'কেন সম্ভব না?সেটাই তো জানতে চাচ্ছি আমি।'
রাইসা কি করে রাকিবকে বোঝাবে ভেবে পাচ্ছে না।এই ছেলে যে আঠার মত লেগে আছে।আর আজ তো লিমিট ক্রসই করে ফেলেছে!রাইসা শুধু ওকে নিয়ে টাইমপাস করেছে এটা কি ও বুঝছে না?রাইসা আর কোনো উপায় পেল না।এখন এই মিথ্যাটাকেই কাজে লাগাতে হবে।
-'রাকিব আমি প্রেগনেন্ট।'
-'হোয়াট!'
-'হ্যাঁ,অয়নের বাচ্চার মা হতে চলেছি আমি!'
-'কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব!তুমি শুধু আমার রাইসা।'
কাঁদছে রাকিব।রাইসাকে ও পাগলের মত ভালবাসে।যার জন্য কত খারাপ করেছে ও।সে আজ কি বলছে এসব?
-'আর আমি আমার বাচ্চাকে নিয়েই থাকতে চাই।'
-'আচ্ছা জান শোনো,তোমার বাচ্চাকে আমি আমার পরিচয়ে বড় করব।কিন্তু তোমাকে ছাড়া আমি মরে যাব।প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না।'
-'না,বললাম তো আমি আমার বাচ্চাকে নিয়ে থাকতে চাই।আর কখনো আমাকে ডিস্টার্ব করবে না',ধমকের সুরে বলে হনহন করে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেল রাইসা।
রাকিব পাগলের মত কাঁদছে।সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে।কিন্তু সেদিকে কোনো খেয়াল নেই ওর।রাইসা ওর ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে।যার পাওয়ার জন্য ও ওর জানের চাচাত ভাই অয়নকে পর্যন্ত ফাঁসিয়েছে!সেই রাইসা আজ এমনটা কিকরে করতে পারল?নাহ,অনেক ভুল করেছে সে।এখন সেই ভুলের প্রায়শঃচিত্ত করতে হবে।চোখ মুছে মোবাইলটা বের করে অয়নকে কল দিলো রাকিব।
সন্ধ্যাবেলা নিশিতা নামাজ পড়ে উঠতেই নিলয় ওর চোখ ধরে ফেলল।নিশিতা হাসল।
-'চলে এসেছ।কি ব্যাপার?হঠাত চোখ ধরলে যে!'
-'থামুন ম্যাডাম,সারপ্রাইজ আছে।'
-'তাই!কি বলো না।'
-'ওয়েট ওয়েট।'
নিশিতা চোখ খুলে তাকাতেই দেখতে পেলো বিছানার ওপর একগাদা বাচ্চাদের খেলনা,ড্রেস আর ছবি!নিশিতা তো সেই খুশি।ও জিনিসগুলো নেড়েচেড়ে দেখতে লাগল।
-'পছন্দ হয়েছে?'
-'হুম,অন্নেক!থ্যাংকস।'
-'আরে আমিও তো বাবুটার বাবা।এইটুকু না করলে মান-সম্মান থাকে!'
নিশিতা হাসল।নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে ওর।মা নেই তো কি হয়েছে?মায়ের অভাব ওকে কখনো বুঝতে দেয়নি নিলয়।
-'আমার বাচ্চাটা না এই বাবুর মত কিউট হবে',একটা ছবি দেখিয়ে বলল নিশিতা।
-'উহু,এটা তো ছেলে।আমাদের মেয়ে হবে।একদম তোমার মতন....ঝগড়াটে'😉
-'কিহ,আমি ঝগড়াটে!'
বলেই মারতে লাগল নিশিতা নিলয়কে।দুজনেই হাসাহাসি করতে থাকল।
রাইসা ঘামে ভিজে একাকার।তার জীবনে এসব কি চলছে?একজনকে পাওয়ার জন্য সে কোন খেলায় মেতেছে!যেখানে শুধু ক্ষতি আর ক্ষতি।এখন সে মাঝ সমুদ্রে ভাসছে।অনেক অন্যায় করে ফেলেছে।সবাই সব জেনে গেলে কি হবে?ইস,অয়নের সাথে মন দিয়ে সংসার করলে এমন কিছুই হত না।ছেলেটা ওকে বড্ড চেত।আচ্ছা এখনো কি ওরকমই চায়?না বদলে গেছে ও?আরেকটা বিয়ে করেছে?একগাদা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে রাইসার।আজকে আসার সময় টেস্ট করে এসেছে।ইদানিং ধরে অনেক শরীর খারাপ লাগে।কাল রিপোর্ট দেবে।কে জানে রিপোর্টে কি আসবে!পাশে রাখা একগ্লাস পানি ঢকঢক করে খেয়ে নিলো সে।সবকিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে ঘুম ভাঙলেই বুঝতে পারবে এসব শুধুই স্বপ্ন ছিল।তার বাস্তব জীবন অনেক সুন্দর।অয়নময়!
চলবে
0 Comments:
Post a Comment