#ঘর_সংসার
লেখিকা:Abida Nujhat
পর্ব:১১
সকাল সকাল নিশিতা মন খারাপ করে বসে আছে।করবেই বা না কেন?নিলয় বলেছেই এমন কথা।নিশিতার বুক ফেটে কান্না আসছে।
-'প্লিজ সোনা বউ আমার রাজী হয়ে যাও না।'
-'নিলয়,তুমি আমাকে নিজের থেকে দূরে রাখতে পারবে!একটুও কষ্ট হবে না তোমার?'
-'কে বলেছে কষ্ট হবে না।সবচেয়ে বেশি কষ্ট আমার হবে।তুমি তো জানো তোমাকে ছাড়া আমি অচল।রাতে ঘুম পর্যন্ত হয় না তোমাকে ছাড়া!'
-তাহলে কেন আমাকে বাড়ি পাঠাতে চাচ্ছ?'বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ল নিশিতা।নিলয়ের বুকে মাথা রেখে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।
-'যা বলছি তোমার ভালোর জন্যই বলছি পাখি।তুমি দিন-দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছ।এখন তোমার প্রোপার রেস্ট আর যত্ন প্রয়োজন।আমি থাকি সারাদিন অফিসে।যতক্ষন বাসায় থাকি ততক্ষন তো তোমার খেয়াল রাখার চেষ্টা করি।কিন্তু তারপর?বাই এনি চান্স তোমার কিছু হয়ে গেলে কে দেখবে?রাই নিজেও তো প্রেগনেন্ট।বাড়িতে বাবা মা আছেন।তোমার দেখাশোনা করতে পারবেন।আর আপুও তো কাল-পরশু চলে যাচ্ছে।তারসাথেই না হয় তুমি যেও।প্লিজ?'
-'আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না।'
-'আমিও পারব না।কিন্তু তোমার ভালোর জন্যই তো বলছি।আর আমি প্রত্যক শুক্রবার তোমাকে যেয়ে দেখে আসব।তারপর তোমার ডেলিভারির পর আবার এখানে নিয়ে আসব।'
-'সত্যি তো?আসবে কিন্তু।নাহলে আমি মরে যাব।'
-'এভাবে বলেনা পাগলী।এখন হাসো।'
নিশিতা হাসল।কিন্তু আবার মনে অনেক চিন্তা দানা বাঁধল।
-'আর রাইসা আপু?'
-'কি?'
-'উনি কোথায় থাকবে?ওনাকেও নিয়ে যাই?'
-'সেটা আমিও ভাবছি।কিন্তু মা বাবা ওকে দেখলে উল্টাপাল্টা ভাববে।তুমি জানোই তো ওনারা কেমন।তাছাড়া রাইসার ড্রেসআপে ওকে একদম পছন্দ করবে না।'
-'তাহলে?'😰
নিলয় হালকা হেসে বলল,
-'ভয় পাচ্ছ?'
-'কেন?'ভ্রু কুঁচকে বলল নিশিতা।
-'রাই থাকলে আমি যদি কিছু...'
-'ন..না,আমি সেটা বলিনি।'😤
-'সেটা তো বুঝতেই পারছি।'
-'হুহ।'
রাইসা ফ্লোরে বসে আছে।চুলগুলো এলোমেলো।সামনে তার রিপোর্ট পড়ে আছে।চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।বুক জোরেজোরে ধুকপুক করছে।মানুষ যদি জানত যে তার মৃত্যু কবে তাহলে বোধহয় তার আগেই ভয় পেয়ে হার্ট এটাক করত!কিন্তু রাইসা সেটা জানতে পেরেছে।হ্যাঁ,রাইসা বেশিদিন বাঁচবে না!তার পেটে খুব বড় একটা টিউমার হয়েছে।ওষুধ খেয়ে সর্বোচ্চ ৩ মাস বাঁচতে পারবে।অপারেশন করতে অনেক টাকা লাগবে।রাইসার কাছে ওত টাকা নেই।অয়নের কাছ থেকে আসার সময় বাড়িতে যা ক্যাশ ছিল সব নিয়ে এসেছিল।সেটাও প্রায় ফুরিয়ে যাওয়ার পথে।কিন্তু সেই অপারেশনেও রিস্ক অনেক।
রাইসা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।নিলয়ের কাছে টাকা চাইবে?হ্যাঁ,তাকে বাঁচতেই হবে।সে এখনই মরতে চায় না।আল্লাহ এই কোন পাপের শাস্তি দিচ্ছে তাকে?কিন্তু কি বলে টাকা নেবে?পরে যদি সবাই জেনে যায় সে প্রেগনেন্ট না!সব নাটক ছিল।না থাক।নিলয়কে পাওয়ার জন্য এত কিছু।কিন্তু আজ তাকে নিজের জীবন বাঁচাতে যুদ্ধ করতে হচ্ছে।
নিলয় অফিসে চলে গেছে।নিশিতা কি ভেবে রাইসার রুমের কাছে এসে নক করল।রাইসা তাড়াতাড়ি করে রিপোর্টটা আলমারিতে রেখে নিজে ঠিক হয়ে দরজা খুলল।
-'তুমি?'
-'হ্যাঁ আপু,একটু কথা ছিল।'
-'ওহ,ভেতরে আসো।'
নিশিতা বিছানায় বসল।রাইসাকে দেখে কেমন যেন লাগছে।
-'আপু কিছু হয়েছে?'
-'ন..না তো!তুমি কি বলবে বলো?'
-'বলছিলাম যে আমি প্রেগনেন্সির মাসগুলো বাড়িতে শশুর-শাশুড়ির সাথে থাকব।'
-'হুম তো?'
-'তাই বলছিলাম তুমি কি আমার সাথে যাবে?না মানে এখানে একা একা থাকা!তার উপর তুমিও তো প্রেগনেন্ট।'
রাইসার মনে বাতি জ্বলে উঠল।এটাই তো সে চেয়েছিল।যদি নাও বাঁচে,তবুও নিলয়ের সাথে তো একান্তে কিছু সময় কাটাতে পারবে!নাহ,সে কোথাও যাবে না।কিন্তু কিছু একটা তো বলতে হবে।
-'আসলে নিশিতা,আমি তোমার সাথে যেতে পারব না গো।সরি বোন।'
-'ওমা কেন?'
-'আজকে ডক্টরের কাছে গেছিলাম জানোই তো।ডক্টর আমাকে প্রথম ৩ মাস একদম ভারী কাজ বা জার্নি করতে নিষেধ করেছে।আমার প্রেগনেন্সিতে নাকি কপ্লিকেশন্স আছে!'
নিশিতার মন খারাপ হয়ে গেল।একটা মেয়েকে কি করে ওর স্বামীর কাছে রেখে ও বাড়ি যাবে।ধ্যাত,তাহলে ওউ যাবে না হুম।
-'তাও আমি যেতাম।কিন্তু একটা জবের এপ্লাই করেছিলাম।ওরা আমাকে ছাড়ছেই না।ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে আমাকে অনেক পছন্দ করেছে।কিন্তু আমি তো আর এই অবস্থায় জি করতে পারব না।ওদেরও দেখতে হবে।অনেক ঝামেলা।তুমি চিন্তা করোনা।তুমি যাও।আমি আর ১ মাস পরেই তোমাদের বাড়িতে চলে আসব।'
নিশিতা এবার একটু খুশি হলো।যাক একমাসই তো।সমস্যা নেই।তাছাড়া কাজের লোক তো আছেই।
সন্ধ্যায় নিলয়কে নিশিতা সব খুলে বলল।নিলয়ও তাতে রাজী।এখন রাইসার পেগনেন্সি নিয়ে তো কোনো রিস্ক নেওয়া যাবে না।পরের আমানত বলে কথা!তারপর নাহয় একমাস পর নিলয় নিজে গিয়ে তাকে রেখে আসবে বাড়িতে।
দেখতে দেখতে নীলাশাদের যাওয়ার দিন চলে আসল।নিশিতার খুব মন খারাপ।নিলয় ওকে অনেক বুঝিয়েছে।তবুও মেয়েটার মন মানছে না।এটা স্বাভাবিক।
-'আমাকে মিস করবে না আমার আদরকে?'
-'ধ্যাত,আমি সিরিয়াস নিলয়।'
-'আচ্ছা যাও এখন সব পুষিয়ে দিচ্ছি।তাহলে হবে তো?'
নিশিতা লজ্জায় নিলয়ের বুকে মুখ লুকালো।
ছেলেটার মুখে কিচ্ছু আটকায় না।
তারপর...
নিলয় নীলাশা আর নিশিতাকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে আসল।রাইসার মনে প্রেমের হাওয়া বইছে।অনেক ছল চাতুরি করে নিশিতাকে ভাগাতে পেরেছে।এখন সে আর নিলয়!এই কয়েকদিনে নিলয়কে নিজের করে পেতেই হবে।তার হাতে যে আর সময় নেই!
চলবে
0 Comments:
Post a Comment