গল্প ঘরপ_সংসার পর্ব ১২
#ঘর_সংসার
লেখিকা:Abida Nujhat
পর্ব:১২
নীলাশা আর নিশিতা বাসস্টপে বসে অপেক্ষা করছে।নীলাশার কোলে ছোট্ট ইশা ঘুমাচ্ছে।নিলয় এতক্ষন ছিল।কিন্তু অফিসে কি জরুরি কাজ হওয়ায় চলে গেছে।নিশিতার মনে বিন্দুমাত্র শান্তি নেই।নিজের স্বামীকে অন্য মেয়ের কাছে রেখে এসেছে!এমনিতেই রাইসা নিলয়ের প্রতি উইক,সেটা নিশিতা জানে।তবুও শান্তি রক্ষার্থে এতদিন কিছু বলেনি।কারণ রাইসা তো সরাসরি কিছু করেনি এখনো।তাছাড়া কোনো প্রমাণও তো নেই নিশিতার কাছে।নিলয় কি বিশ্বাস করত?কিন্তু নিলয়ের কথাও তো ফেলে দেওয়ার মতন না।নিশিতার কিছু হয়ে গেলে এখানে কে দেখবে?বাড়িতে যাওয়াটাই উচিত।কারণ শশুর-শাশুড়ি তাদের এলাকা ছেড়ে এখানে এসে থাকতে পারবেন না এই বয়সে।রাইসাকেও তো নিয়ে আসতে চেয়েছিল হাজার সমস্যার মধ্যে।তাও তো হলো না।আচ্ছা রাইসা ইচ্ছে করে ওসব নাটক করেনি তো?নিশিতার বুকের মধ্যে ধুক করে উঠল।নাহ,ও পারবে না নিলয়কে রাইসার কাছে রাখতে।
নীলাশা মনে হয় নিশিতার মনের অবস্থা বুঝতে পেরেছে।তাই আর সে কিছু না বলে পারল না।
-'নিশিতা এনিথিং রং?
-'হু?ন..না তো আপু!'চমকিয়ে বলল নিশিতা।
-'জানি আমার ভাইয়ের কথা ভাবছ?'
-'না আপু,তেমন কিছু না।'
-'ওর জন্য টেনশন হচ্ছে?সত্যি বলো।'
-'হ্যাঁ আপু,মানে ওকে তো রাইসা আপুর কাছে...'
-'আমি জানতাম।জানো তখন কিছু বলিনি কেন?কারণ ডিসিশন তোমার দুজনে মিলে নিয়েছিলে।নিজেদের খারাপ তো আর চাবে না!কিন্তু এখন বলছি তুমি ফিরে যাও।'
-'আপু?'
-'হ্যাঁ,নাহলে তোমরা কেউই শান্তি পাবে না।'
-'আপনি ঠিক বলছেন আপু।'
রাইসা জানে সে বেশিদিন বাঁচবে না।তবুও যতদিন বেঁচে আছে ততদিন নিলয়কে পেলে ক্ষতি কি?রাইসা সুন্দর করে সাজলো।নিলয়ের তো শাড়ি পরা পছন্দ।আর সেটা যদি ওর প্রিয় রঙের হয় তাহলে তো কথাই নেই।আজ সে নিলয়কে মনের কথা বলেই দেবে।নিলয়কে মানলো কি মানলো না তাতে কিছু যায় আসেনা তার।কিন্তু নিলয় তো বোধহয় এখন অফিসে।ওকে ফোন দিল রাইসা।
-'নিলয় তুমি একটু আসতে পারবে এখন?'
-'কেন?এখন তো অফিস আওয়ার।'
-'জানি,কিন্তু আমার শরীরটা ভিষণ খারাপ লাগছে।প্লিজ একটু আসো।'
নিলয়েরও টেনশন হচ্ছে।মেয়েটা প্রেগনেন্ট।কিছু হলো না তো?ফুলিই বা কতটুকু পারবে?ওউ তো বাচ্চা মেয়ে।
-'আচ্ছা আমি আসছি।'
ফোন রেখে রাইসার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।
আজ এক মূহুর্তের জন্যও সে নিলয়ের মনে নিশিতাকে ঢুকতে দেবে না।প্রমিস।
রাকিব সেদিন অয়নকে ফোন দিয়ে আজকে একটা রেস্টুরেন্টে আসতে বলেছে।অয়ন সবটা শোনার পর থ হয়ে গেছে।ওর পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেছে।রাইসা এমন করতে পারল?কেন?ভালোবাসায় কি কমতি ছিল ওর?রাইসা নাকি প্রেগনেন্ট!কোথায় সে?কেমন আছে?রাকিব অনেকবার করে অয়নের কাছে ক্ষমা চেয়েছে।অয়ন কিচ্ছু বলতে পারেনি।চুপচাপ বাড়ি চলে এসেছে।ও এখনো ঘোরের মধ্যে আছে।বিশ্বাসই হচ্ছে না।হ্যাঁ কেউ ওকে ফাঁসিয়েছিল।যার ফলে রাইসা ওকে ছেড়ে চলে গেছে।অয়নও বাঁধা দেয়নি।কারণ ও রাইসাকে জোর করে আটকিয়ে রাখতে চায়নি।কিন্তু এসব যে রাইসার সাজানো প্ল্যান ছিল কে জানত?রাকিবকে তো সে চায় না।তাহলে ওকে
কার জন্য ছেড়ে দিলো?মনে হাজারটা প্রশ্ন ঘুরছে অয়নের।নিয়তি কেন এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা করল তার সাথে?
নিলয় বাসায় এসে দেখে ফুলি বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।তাহলে রাইসা কোথায়?কয়েকবার রাইসার নাম ধরে ডাক দিলো নিলয়।কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই।শেষ পর্যন্ত তার রুমে যেয়ে দেখল পুরো রুম অন্ধকার।নিলয়ের টেনশন যেন আরো বেড়ে গেলো।কিছু হলো না তো রাইসার?মেয়েটার যে কেউ নেই!
হঠাতই রুমের আলো জ্বলে উঠল।নিলয় দেখল রাইসা শাড়ি পরে সুন্দর করে সেজে দাঁড়িয়ে আছে।খোলা চুলগুলো বাতাসে উড়ছে।রাইসা ধীরেধীরে নিলয়ের চারপাশ ঘুরে ঘুরে নিজেকে দেখাতে লাগল।ওর চুলের বারি দিতে লাগল নিলয়কে।ওর গা দিয়ে মাতাল করা সুঘ্রাণ বের হচ্ছে।রাইসা থামল।নিলয় কিছু বলার অবস্থায় নেই।ও রাইসার চুলের ঘ্রান নিতে লাগল।ও যেন কোনো ঘোরে চলে গেছে।পরিবেশটাও আজ মাতলামি করছে।
কিন্তু নিলয়ের কল্পনাতে শুধুই নিশিতা।ও যেন নিশিতাকেই অনুভব করতে চাচ্ছে।কিন্তু....
এটা তো নিশিতার ঘ্রাণ না।এ তো পরনারী।
সাথেসাথে নিলয় রাইসাকে ধাক্কা দিলো।ও কি করছিল এটা?এসবে শুধু নিশিতার অধিকার রয়েছে।
-'হোয়াট রাবিশ রাইসা!'😠
-'আই লাভ ইউ নিলয়।'
-'কিহ!এসব কি বলছ তুমি?'
-'আমি সত্যি বলছি।আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।'
-'পাগল হয়েছ?রাইসা ইউ আর আ ডিভোর্সি।তুমি কে সব ভুলে যাচ্ছ?'
-'প্লিজ নিলয় আমাকে এভাবে বলো না।তোমাকে পাওয়ার জন্যই তো এতকিছু।আমি শুধু তোমাকে চাই।'
-'আর একটা কথা বললে আমি ভুলে যাব তুমি প্রেগনেন্ট!ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব।'
-'তার সুযোগ পেলে তো!'
-'মানে?'
-'দেখো নিলয়,নিশিতা এখন নেই।এট লিস্ট ততদিন আমার সাথে কাটাও।আই প্রমিস ও কিচ্ছু জানতে পারবে না।'
নিলয়ের সহ্যর বাঁধ ভেঙে গেলো।কষিয়ে রাইসার গালে চড় মারল।কিন্তু রাইসা উল্টো এসে নিলয়েকে জড়িয়ে ধরল।নিলয় ওকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগল।
-'নিলয়!!!'
রাইসা নিলয়কে ছেড়ে দিলো সাথেসাথে।ও পেছনে তাকিয়ে দেখে নিশিতা দাঁড়িয়ে আছে।ওর হাতে লাগেজ।তাহলে ও যায়নি?নিলয় এখন নিশিতাকে কি জবাব দেবে?ও যে নিলয়কে ভুল বুঝছে!
রাইসা এমন একটা ভাব করল যেন নিশিতা ফিরে আসাতে সে অনেক বিরক্ত।সে আর নিলয় কত সুখের সময় পার করছিল!
চলবে
No comments