1t/Banner 728x90

গল্প ঘরপ_সংসার পর্ব ১৩

 #ঘর_সংসার

লেখিকা:Abida Nujhat

পর্ব:১৩


নিশিতা ওর লাগেজটা পাশে রাখল।তারপর রাইসার সামনে এসে দাঁড়াল।ওর চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে।রাইসা মনে মনে ভয় পেলেও প্রকাশ করছে না।তার নিলয়কে চায়ই চায়।তার জন্য যা করা লাগবে সে করবে।

.

.

আচমকায় নিশিতা রাইসার গালে সর্বশক্তি দিয়ে একটা থাপ্পড় মারলো।রাইসা বোধহয় এটার জন্য প্রস্তুত ছিল না।সে ভাবতেই পারেনি নিশিতা এমন করবে!থাপ্পড়ের জোর এত ছিল যে সে টেবিলের কোণায় গিয়ে পড়ল।কপালের এক জায়গায় হালকা কেটেও গেল।রাইসা আর নিলয়ের চোখ বিস্ময়!এটা কি সেই চেনা-জানা নিশিতা?নিশিতা তাও শান্ত হলো না।যেয়ে রাইসাকে টেনে তুলে আবার আরেকটা থাপ্পড় মারল।এবার রাইসা ছুটে যেয়ে পড়ল।কাটাটা আরো গভীর হলো।রক্ত পড়ছে।রাইসা হসফস করছে ভেতর ভেতর।উঠেও দাঁড়াতে পারছে না ভয়ে।এটা কোন নিশিতা?

.

.

নিলয় চুপচাপ দাঁড়িয়ে সব দেখল।কাছে যেয়ে বলার সাহস হচ্ছে না।নিশিতার এই রুপ দেখে রীতিমত ভয়ার্ত ও!শান্তশিষ্ট বউটা ওর এত রাগী হয়ে গেল কি করে?মেয়েরা আর যাই হোক নিজের স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারে না।তাই হয়তো আজ সে চন্ডী রুপ ধারণ করেছে।


নিশিতা নিলয়ের দিকে এক নজর তাকিয়ে নাক ফুলিয়ে নিজের রুমে চলে গেল।সেই নজরে তীব্র 

সন্দেহ দেখতে পেয়েছে নিলয়।ওউ আর দেরি না করে নিশিতার পেছন পেছন চলে এলো।


নিলয় এসে দেখে নিশিতা চুপচাপ বিছানার উপর চোখদুটো বন্ধ করে বসে আছে।নিলয় ওর পাশে যেয়ে বসল।নিশিতা টের পেলেও চোখ খুলল না।

-'বিশ্বাস করো আমি কিছু করিনি।'

-নিশিতা চুপ।

-'এই কিছু বলছ না কেন?'

-নিশিতা চুপ।

-'প্লিজ কিছু তো বলো।তুমি কি আমাকে অবিশ্বাস করছ?'

-'না।'

-'তাহলে কথা বলছ না কেন?'

-'যা দেখলাম তারপর আর বলার মত কিছু থাকে না।'

-'প্লিজ বিলিভ মি।আমি জানতামও না রাইসার মনে এসব চলছিল।'

-'তোমার তো এখন অফিসে থাকার কথা।আমি যতদূর জানি ইম্পরট্যান্ট কাজ ছিল।'

-'হ্যাঁ,কিন্তু রাইসা আমাকে কল দিয়ে বলল ওর শরীর নাকি ভাল না।তাই আমি এসেছি,সত্যি।'

-'আচ্ছা।'

-'কি আচ্ছা?'


নিশিতা একবার আড়চোখে নিলয়ের দিকে তাকাল।কিন্তু কিছু বলল না।তার আগের কথাগুলো অনেক ঠান্ডা গলায় বলল।কিন্তু একটু আগে ও যা দেখেছে তাতে ওর এত ঠান্ডা থাকার কথা না ভাবছে নিলয়।নিশিতা উঠতে নিলেই টান দিয়ে নিজের বুকের ফেলল নিলয়।নিশিতা উঠতে চাইলেও নিলয় উঠতে দিলো না।ওর ঠোঁটে মুচকি হাসি।

.

.

অয়ন সবটা ক্লিয়ার করতে চায়।আর সেইজন্য রাইসার সাথে কথা বলা প্রয়োজন।কিন্তু সে তো অয়নের সাথে কোনো যোগাযোগের পথই খোলা রাখেনি।তাহলে?অয়ন কিছুক্ষন ভেবে রাকিকবে কল দিলো।বলল রাইসাকে কোথাত মিট করার জন্য ডাকতে।রাকিব জানে রাইসা এখন আর তার কোনো কথাই শুনবে না।তবুও অয়নের রিকুয়েস্টে একবার শেষ চেষ্টা করে দেখতে চায়।এটাই হয়তো তার পাপের প্রায়ঃচিত্ত হবে।

.

.

রাইসা ওর রুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।নিজের দিকে তাকিয়ে দেখছে।এ কি অবস্থা!তার জীবনে কি এমন হওয়ার ছিল?না তো।সে তো কত সুখেই থাকতে পারত।


মুহুর্তেই নিশিতার উপর রাগ উঠল।মেয়েটার সাহস তো কম না রাইসাকে চড় মারে।😡কিন্তু ও তো ভুল কিছু করেনি।ভালো না বাসলেও অয়নকে ওভাবে কোনো মেয়ের সাথে দেখলে রাইসার মাথায়ও রক্ত উঠে যেত!


অয়ন?হ্যাঁ,ইস যদি সে অয়নের সাথে মন দিয়ে সংসার করত তাহলে আজ অন্য মেয়ের কাছ থেকে থাপ্পড় খাওয়া লাগত না।কারণটার জন্য তো সে নিজেই দায়ী।নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে রাইসার।সে কি করবে নিজেও বুঝতে পারছে না।কিন্তু রাইসার পেটে তো টিউমার!সে তো বেশিদিন বাঁচবে না।সবারই কেউ না কেউ আছে।শুধু তারই কেউ নেই।ফ্লোরে বসে কাঁদতে লাগল রাইসা।এই পৃথিবীতে তার আপন বলতে কেউ নেই।আর আজকের ঘটনার পর হয়তো নিলয়ও তাকে স্থান দেবে না।কি হবে তার?


ছোটবেলা থেকেই অনাথাশ্রমে মানুষ হয়েছে সে।বাবা মায়ের আদর ভালোবাসা পায়নি সে।কলেজে পড়াকালীন অয়নের সাথে বিয়ে হয়।প্রথম প্রথম মন দিয়ে সংসার করলেও পরে অয়ন আস্তে আস্তে সময় দেওয়া কমিয়ে দেয়।হসপিটালেই বেশি সময় থাকত।হ্যাঁ,অয়ন একজন নিউরো সার্জন।তখনই রাকিবের সাথে রিলেশন হয় তার।তারপর অয়নের ফোনে নিলয়ের ছবি দেখে নিলয়কে পছন্দ হয়।এতটা যে ওকে পাওয়ার জন্য রাইসা এতকিছু করেছে।

কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে ফাটল ধরানো কি এতই সহজ?


নিলয় ঠিক করেছে রাইসাকে আর এ বাসায় রাখবে না।মেয়েটা যে এমন সেটা জানলে কখনোই তাকে আশ্রয় দিত না নিলয়।সাহায্যের এই প্রতিদান দিলো সে!প্রেগনেন্ট বলেও আর কনসিডার করবে না।দরকার পড়লে অন্য কোথাও রাখবে।তবুও ওর আর নিশিতার মধ্যে না।নিলয় রাইসার রুমে এসে দেখে সে নেই।মেয়েটা গেল কোথায়?পালিয়ে যায়নি তো?ফ্লোরে রক্তের দাগ!

.

.

রাইসা এখন অয়নের মুখোমুখি বসে আছে একটা রেস্টুরেন্টে।অপরাধীর মত চোখ নিচু করে আছে।কিন্তু এটাই বুঝতে পারছে না অয়ন সব জানল কিভাবে?রাকিব বলে দেয়নি তো?বিশ্বাসঘাতক একটা😡।কিন্তু সেও তো কম চিটিং করেনি।নিয়তি হয়তো তার কর্ম তাকে ফেরত দিচ্ছে।


-'হাত কেটেছ কেন?'


অয়নের প্রশ্ন শুনে রাইসা অবাক হলো।কোথায় অয়ন বকা দেবে তা না এখনো যত্ন দেখাচ্ছে!রাইসার চোখের বাঁধ এবার ভেঙে গেল।ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না শুরু করল।অয়ন কিচ্ছু বলল না।চুপচাপ রাইসার কান্না দেখছে।ও পাথর হয়ে গেছে।রাইসা কি করবে এখন?কিন্তু এটা নিশ্চিত যে সে আর নিলয়ের কাছে ফিরবে না!তাহলে কি টিউমার নিয়েও মরে যাবে?


চলবে

No comments

Powered by Blogger.