গল্প বালির_সংসার পর্ব ১৯ থেকে ২১

 #বালির_সংসার

#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)

(পর্ব১৯ থেকে ২১)

.

.

#পর্বঃ ১৯

.

.

দাদুমণি চলে যাওয়ার পর কথা গুলো বুঝতে অর্থির কিছুটা সময় লাগলো। 

সময় লাগলেও সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগলো না। 

যাই হোক সে রুপের কাছে ফিরে যাবে না। 

আদিত্য করুক বিয়ে! আমি তো না করিনি! কেনোই বা করবো? তার পবিত্র, কুমারী মেয়ে চাই। যার উপর শুধুই তার স্পর্শ থাকবে। আমার শুধু বিয়ে নয়, দুই সন্তান জন্ম দিয়েছিলাম। তার কথা মতো না আমি পবিত্র না কুমারী। আমি চারপাশে থাকলেও অবশ্যই তার কোন সমস্যা হওয়ার কথা না।

আর রইলো রুপ কে মাফ করার? হুম করবো মাফ! একবারে করবো। 

.

.

বেশ খানিকটা সময় নিয়ে শাওয়ার নেয় অর্থি। 

বের হয়ে দেখে মা বসে আছে

- অর্থি! আমার কথায় তোর হয়তো মনে হবে আমি তোর মা হয়ে এসব বলছি কেনো? তবুও বলবো। জানিস তো মেয়েদের জীবন বড্ড বেশি ভয়ংকর। রুপ তোর স্বামী। হয়তো সন্তানদের হারানো কিংবা কোন এক কারণে ভুল পথে পা দিয়েছে কিন্তু স্ত্রী হিসেবে তোর উচিৎ তাকে সুযোগ দেওয়া। 

হয়তো ভুল শুধরে নিবে। বড় কথা আদিত্য রুশার বিয়ে৷ তুই এখানে থাকলে হয়তো হবে না এই বিয়ে। আমার কথা বুঝার চেষ্টা করিস। 

রুপ কে ছাড়বি? কার ভরসায়? আজ বাবা -ভাই পাশে আছে কাল হয়তো থাকবে না। আর আমার এ বাড়িতে কি সারাজীবন থাকতে পারবি? 

হয়তো তোর খারাপ লাগছে। তবুও বলবো তুই ফিরে যা। রুশা কে সুখী হতে দে। 

আর যদি না যাস তাহলেও অনন্ত আজকের দিনের জন্য যা। 

.

.

মা কথা গুলো বলে যাওয়ার পরেই রুশা আসে। 

তার একটা কথাই 

- আদিত্য কে খুব কষ্টে পেয়েছি কিন্তু এখনো তোকেই চায়। প্লিজ আদিত্য কে আমাকে ফিরিয়ে দে। তুই থাকলে ও কোনদিন আমার হবে না। আমি তোর কাছে আদিত্য কে ভিক্ষে চাইছি প্লিজ।

.

রুশার কান্না দেখে অর্থির দম বন্ধ হয়ে আসে। আদিত্য কেনো তাকে চাইবে? সে তো অপবিত্র! 

এই ঘরে আরশের অনেক কিছুই আছে। অর্থি আরশের ছবি আর একটা খেলনা নিয়ে কিছু না বলেই বেরিয়ে পড়ে। সে জানে তার কোন জায়গা নেই এই বাড়িতে। 

রুশার মুখে ফুটে উঠে বিশ্বজয়ের হাসি। 

.

.

অর্থি আবার ফিরে এলো রুপের বাড়িতে। কই যাবে? কি করবে? এই আশায় হয়তো রুপ মাফ চাইবে, আবার সব ঠিকঠাক হবে। কিন্তু সব চাওয়াই কি পূর্ণতা পায়? 

.

.

বাসার অবস্থা নাজেহাল। জিনিসপত্র ভাঙা, খাবার টেবিল অপরিস্কার আরো কতকি? বাইরের থেকে খাবার আনিয়ে খেয়েছে হয়তো। 

অর্থি চাল ধুয়ে ভাত চুলোয় দেয়। অন্যটায় ডাল সিদ্ধ। ভাতের সাথে আলু সিদ্ধ হচ্ছে। একে একে ডিম সিদ্ধ করে বেগুন পুড়িয়ে নেয়। 

রান্নার ফাকে ফাকে সব গুছিয়ে ফেলে। শুকনো মরিচ ভাজার সাথে সাথে রুম থেকে বেরিয়ে আসে রুপ আর নিশি।

কিছু বলতে না দিয়েই বলে 

- আপনারা বসুন খেয়ে নিন তারপর কথা বলা যাবে। 

.

চুপচাপ বসে খাবার খায়। অর্থির গলা দিয়ে খাবার নামছে না। 

বিষম খেলে রুপ পানি দেয় কিন্তু অর্থি নেয় না। 

.

খাওয়া শেষে 

- আপনারা বিয়ে করে নিন। বাহিরে মেলামেশা করলে ভালো দেখায় না। 

- তাহলে তুমি? (নিশি)

- আপনাদের আশ্রিতা হয়ে না হয় এখানে থাকবো। 

- না তা হয় না। আমি তোমাকে আমার সামনে কিভাবে সহ্য করবো? আমি পারবো না। আমি আমার স্বামীকে কারো সাথে ভাগ করবো না। 

.

বিনিময়ে অর্থি তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। 

- তাছাড়া তোমার সামনে জীবন পড়েই আছে। তুমি যদি এখানে থাকো তাহলে তোমার কষ্ট হবে বোন। 

- আমি আপনার স্বামীর উপর অধিকার দেখাতে যাবো না। আপনারা বলেন না যে আমি আশ্রিতা তাই বলেছিলাম। 

- তুমি বললে কি হবে? আমি সতীন নিয়ে সংসার করতে পারবো না। 

আমাদের বিয়ের আগে তোমাদের ডিভোর্স হওয়া দরকার। 

- তাহলে উকিল কে বলুন। আমার সমস্যা নেই। 

.

.

অর্থি, নিশির মাঝে রুপ একটা কথাও বলেনি। অর্থি দুই ঘন্টার মধ্যে পুরো বাসাকে নতুন বউয়ের মতো সাজিয়েছে সাথে নিশি কেও। এই প্রথম মনে হয় কোন মেয়ে তার সতীন কে কনে সাজে সাজিয়ে দিলো। 

রান্না,মিষ্টি, বাসর সব রেডি। রুপ কে সাদা পাঞ্জাবী তে বেশ মানিয়েছে। 

ঈশ! এভাবে তাকিয়ে থাকলে অর্থির নজর লেগে যাবে রুপের।

অর্থির খুব ইচ্ছে করছিলো রুপ কে ছোয়ার কিন্তু নিশি হয়তো ভালো চোখে দেখবে না। 

অর্থি নিজেই অধিকার ছেড়ে দিচ্ছে কারণ রুপ চায় না তাকে। 

উকিল এলো ডিভোর্স হলো। রুপ একটা বার না করলো না। একটা কথাও বললো না।

অর্থির কান্না পাচ্ছে খুব৷ আর রুপের প্রতি অধিকার রইলো না। সবটা ভুলে নতুন শুরু করা জীবন আজ শেষ।

কাপাকাপা হাতে নাক ফুল খুলে এগিয়ে দিলো অর্থি নিশির দিকে।

নিশি- এটা তুমিই রাখো। আমি তোমার ব্যবহার করা জিনিস ব্যবহার করবো না।

.

মুখে হাসি ফুটিয়ে অর্থি বলে 

আমার ব্যবহার করা স্বামী ব্যবহার করবেন এটা তো শুধু নাকফুল মাত্র। 

.

.

পিছন ফিরে তাকায়নি সে। আরশের জিনিস গুলো নিয়ে চলে এসেছে। মাঝ রাস্তায় বসে জীবনের হিসেব কষতে থাকে। কি পেলো কি হারালো? পাওয়ার কিছুই নেই শুধুই হারানো। ছোট্ট পিচ্চি অর্থির জীবনে আদিত্য এলো। কিশোরী বয়স থেকে আগলে রাখলো হঠাৎ সব তছনছ হয়ে গেলো এক রাতে। তারপর রুপের সাথে সংসার। অরুনীমা, আরশ এলো চলেও গেলো আবার নিশির ঝড়ো হাওয়ায় গুছানো সংসার বালির সংসারে পরিণত হলো। আজ সে সংসার আর নেই।

ডান দিকে যে রাস্তা গিয়েছে তার বাবার বাসার সামনে? সেই বাসায় হয়তো এতক্ষণে আদিত্য রুশার বিয়ে শুরু হয়ে গেছে আর বামে রুপ নিশির। 

সবার গুছানো জীবনে কোন জায়গা নেই। চোখ মুছে সামনের রাস্তায় এগিয়ে যাচ্ছে।

হয়তো আর কখনো ফিরবে না এই শহরে। হয়তো তার মৃত্যুর খবর আসবে না সুখী মানুষ গুলোর জীবনে, লাশের দাফন হবে বেওয়ারিশ হিসেবে...

.

.

#পর্বঃ ২০

.

.

সময় প্রবাহমান। কেটে গেছে দুই মাস। 

দুই মাস সময়ের মধ্যে একটা দিন ও রাতে ঘুমের মেডিসিন ছাড়া ঘুমাতে পারেনি অর্থির বাবা। 

মাইনর এট্যাক হয়েছে দুইবার। মুঠো ভর্তি মেডিসিন বাঁচিয়ে রেখেছে তাকে। 

ছেলে মেয়ে দুটো কই আছে জানে না সে। 

বেশি চিন্তা হয় মেয়ের জন্য। 

আচ্ছা সত্যি কি মেয়েটা মরে গেছে? 

চোখ বন্ধ করলেই ভেসে উঠে সেই রাতের স্মৃতি...... 

.

.

কিছুক্ষণ পর শুরু হবে আদিত্য রুশার বিয়ে। সামাজিক ভাবে বেশ কয়েকজন মানুষ এসেছে বিয়েতে।

আদিত্য আজ অফ হোয়াইট পাঞ্জাবী পড়েছে আর রুশা অফহোয়াইট লাল পাড়ের শাড়ি। বেশ মানিয়েছে দুজন কে।

সারাদিন আয়ান বাসায় ছিলো না। 

বাসায় ঢুকেই চিৎকার শুরু করে। 

রেগে অস্থির হয়ে যাচ্ছে সে।

মায়ের কাছে গিয়ে হাতে শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে আসে ড্রয়িং রুমে 

- তুমি যদি আমার মা না হতে না? তাহলে আমি ঠাটিয়ে তোমার দুগালে দুটো থাপ্পড় মারতাম। নিজেকে কি মনে করো? দায়িত্ব? দায়িত্ব দেখাচ্ছো রুশার প্রতি? নিজের মেয়েকে ওসব বলতে বাধলো না? 

আমার মোনাপাখির যদি কিছু হয় আমি তোমাদের সবাই কে জেলের ভাত খাওয়াবো বলে রাখলাম। 

.

শান্তশিষ্ট আয়ানের এই রুপ দেখে সবাই অবাক। আদিত্য থামাতে গেলে আদিত্য কে বলে 

- উহু স্পর্শ করবে না। তোমার বিয়েতে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য সরি। বিয়ে করে নাও। আমি একাই যাবো মেয়ে টাকে খুজতে। তুমি বিয়ে করো। আর হুম! শুনো তোমরা! গুড নিউজ আছে। 

অর্থি কে খুজে পাচ্ছি না। আমাদের সোকল্ড মা তোমার বিয়েতে ঝামেলা না হয় সেজন্য ওকে চলে যেতে বলেছে আর রুপ কে ডিভোর্স দিয়ে ওর বাসর সাজিয়ে কোথায় গেছে আমি জানি না। আমি ওকে পাচ্ছি না। 

আল্লাহর কাছে দোআ করো। ও যেনো মরে যায়। ওর লাশ যেনো না পাই। 

আদিত্যর রুশা আছে রুপের নিশি। ওর তো কেউ নেই৷ অলক্ষী কুলক্ষী মরাই ভালো।

.

সেই যে আয়ান চলে গেলো আজ অবধি আসেনি। মেয়েটা ছেলেটাকে আগলে রাখতো কিন্তু ভাই যে বোন কে এভাবে ভালোবাসতে পারে জানা ছিলো না। হুম্ভ রুশা তাদের দায়িত্ব। কোন দিন তফাৎ করেনি ভাতিজি আর মেয়ের মাঝে৷ ভাইটা অকালে মরে গেলো। দায়িত্ব দিয়ে৷ দায়িত্ব কি ফেলে দেওয়া যায়? 

.

.

চোখ লেগে এসেছিলো অর্থির বাবার। হঠাৎ কারো চিৎকারে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে ড্রয়িং রুমে । 

আয়ান চুলের মুঠি ধরে টেনে হিচড়ে নামাচ্ছে রুশা কে।

চোখে মুখে রাগ। 

কোমর থেকে বেল্ট খুলে ইচ্ছামতো পেটাচ্ছে, রুশা চিৎকার করছে কিন্তু লাভ হয়নি।

.

আয়ান জোড়ে জোড়ে বলতে থাকে

- ঠিক এইভাবে রুপ আমার বোন কে মেরেছিলো। কষ্ট হচ্ছে? আরো হবে। তুই তো সুস্থ, আমার বোন অসুস্থ ছিলো। দেখ কেমন লাগে। 

.

আদিত্য বাইরে থেকে এসে থামাতে চাইলে বলে 

- আয়ান কি হচ্ছে কি ছাড় ওকে।

- ওহ মিঃ আদিত্য আহমেদ! আপনার স্ত্রী কে মারছি বলে লাগছে? হ্যাঁ লাগবেই তো। যতই হোক পবিত্র মেয়ে বলে কথা৷ কিন্তু কি জানেন? শরীর কখনো পবিত্র হয় না। পবিত্র হয় মন। আজকে ওর জন্য আমার বোনের এই অবস্থা। এতটা হিংসে? 

যে আমার বোনের সম্মান নিয়ে এত কিছু৷ 

.

.

ততক্ষণে পুলিশ এসে গেছে। রায়ান কে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে। রায়ানের ল্যাপটপ ঘেটে জানা গেছে রায়ান সব ফেক ভিডিও, ছবি বানিয়েছিলো। কিন্তু রুশার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ নেই। 

তখন আয়ান ল্যাপটপে ফুটেজ চালু করে। 

যেখানে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে রুশা কাউকে বলছে যে আদিত্য আয়ান সব জেনে গেছে যে ভিডিও ছবি ফেক ছিলো। 

.

রুশা অনেক মাফ চাইলেও এবার আর মাফ করলো না অর্থির বাবা। ভাগ্যিস আয়ান টা ছিলো। না হলে এসব জানতো না৷ কাল রাতে কি মনে করে যেনো ফুটেজ চেক করছিলো আয়ান । তখন এসব চোখে পড়ে। রুশা ভাইয়া কেবল রায়ান কেই বলে। রায়ানের ফ্ল্যাটে যেতেই দেখে নেশায় টাল হয়ে পড়ে আছে। ল্যাপটপ ঘেটে সব পায়। 

এতটা রাগ হয়েছিলো না? সব প্রমাণ নিয়ে সকাল অবধি অপেক্ষা শুধু।

.

.

বাবা- মা কে খুজে পেয়েছিস আয়ান? 

আয়ান- তাতে তোমাদের কি? আদিত্য, রুশা আছে তো তোমাদের ছেলে মেয়ে। আমরা মরি বাঁচি তোমাদের কি? আর হ্যাঁ মিঃ আদিত্য আহমেদ আপনি যতই চেষ্টা করুন না কেনো আপনার স্ত্রী কে আমি সহজে ছাড়বো না। আপনি দেখেন আমিও দেখে নিবো। 

আগে তো মেয়েটাকে খুজে পাই তারপর কাউকে ছাড়বো না। না আপনাকে, না রুপ কে। গুনেগুনে হিসেব নিবো ভালো থাকবেন৷

.

.

আদিত্য - দাড়াও আয়ান। অনেক কথা বললে জানি রাগ করে। যে ছেলে এত কিছু জানে সে কি এটা জানেনা আমি রুশা কে বিয়ে করিনি? জানে কিন্তু রাগের দৃষ্টিতে বলছো কি না। 

তুমি যেমন তোমার মোনা পাখি কে খুঁজছো আমিও আমার পিচ্চিকে দিন রাত খুঁজতেছি। আমরা সবাই ওকে ছাড়া অসম্পূর্ণ। 

.

আয়ান তাচ্ছিল্যের সাথে হাসে আর বলে 

- অসম্পূর্ণ হলে সেদিন ওকে অবিশ্বাস করতে না। 

.

.

দেখতে দেখতে কেটে যায় আরো চার মাস। 

এখনো কেউ জানে না মেয়েটা কোথায় আছে। কিন্তু মনের কোথাও একটা আশা নিয়ে আছে হয়তো মেয়েটা ফিরে আসবে। কিন্তু যদি মরে যায়? না বিশ্বাসে মেলায় বস্তু তর্কে বহুদূর। 

.

.

#পর্বঃ ২১

.

.

তাহাজ্জুদ নামাজের সিজদাহ্ তে শুধুই অর্থির ফিরে আসা চায় ওর বাবা।

দিন যে ফুরিয়ে আসছে তার খুব ভালোভাবে সে বুঝে।

মেয়েকে না দেখে মরেও শান্তি পাবেনা। 

.

.

আয়ানের ব্যবহারে আদিত্য অবাক হয় মাঝেমধ্যে। 

সে কি সত্যি জানেনা অর্থি কোথায়? না কি বলতে চাচ্ছেনা। 

.

.

আজকাল দিন গুলো বড্ড ক্লান্তিকর যায় অর্থির। সারাদিন পরিশ্রমের পর রাতে যখন বিছানায় ঘুমায়,ঘুম চলে আসে। 

মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়, দুজন মানুষের স্মৃতি বড্ড পোড়ায়। না! সে আদিত্য, রুপ কে নিয়ে ভাবে না। ওর চিন্তায় তাদের অস্তিত্ব নেই কিন্তু অরুনীমা, আরশ কে সে ভুলতে পারে না। এখানে সবাই ওকে মা বলে ডাকে কিন্তু তবু তৃপ্তি বিষাদচূড়ায়। 

হ্যাঁ! অর্থি বেঁচে আছে। ছোট্ট একটা চাকুরী করেই দিন চলছে। বেতন বেশি না সাত হাজার টাকা। তবুও লাগে না অর্থির। অনাথাশ্রম, বৃদ্ধাশ্রম এক সাথেই এখানে। তাদের সবার দেখাশুনার দায়িত্বে আছে। 

সারাদিন সবার মা ডাক শুনতেই দিন কেটে যায়। 

পরিবার, সন্তান হারিয়ে এদের নিয়েই বেঁচে আছে সে। তবুও কোন অভিযোগ নেই। 

.

সকালে উঠে সব কাজ অন্য একজন কে বুঝিয়ে বেরিয়ে গেলো অর্থি। 

যাওয়ার সময় পাশে দোকান থেকে মোমবাতি,আগরবাতি কিনে নিলো। আজকে যে তার সন্তানদের জন্মদিন। 

একবছর আগেই তাকে নিঃস্ব করতে পৃথিবীতে এসেছিলো তারা। 

মাঝেমধ্যে ভাবে ভালোই হয়েছে মরে গেছে। না হলে এই দুনিয়া বড্ড বেশি ভয়ংকর। 

.

.

সন্তানদের কবরের পাশে বসে নিরবে কাদঁছে সে। 

হাত দিয়ে স্পর্শ করাতে আর নিরব থাকতে পারলো না। চিৎকার করে কাদঁতে লাগলো। 

মসজিদের ইমাম সাহেবের বউ এসে মাথায় হাত রাখলো। কিছুই অজানা নয় তার৷ 

মেয়েটার কষ্ট দেখে সত্যি কষ্ট হচ্ছে। 

.

.

দূর থেকে আদিত্য কাউকে দেখতে পাচ্ছে। খুব সময় লাগলো না তার। 

দৌড়ে কাছে গিয়েই পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে৷

ছাড়িয়ে সামনের দিকে তাকাতেই চমকে যায় সে। দ্রুত চলে যেতে নিলে আদিত্য কষিয়ে থাপ্পড় মারে। 

টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায় অর্থি। 

.

কাল রাত থেকে কেনো যেনো মনে হচ্ছিলো অর্থি আজকের দিনে এখানে আসবে। পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাক না কেনো? আজ যে তার সন্তানদের জন্মদিন।

ভাগ্যিস সময় থাকতে এসেছিলাম। 

.

.

অর্থি কে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে আদিত্য কাউকে কল দেয়৷ 

কিছুর ব্যবস্থা করতে বলে। তারপর অর্থি কে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে নেয়। না হলে উঠলে চেচামেচি করবে। 

.

.

টানা সতেরো মিসডকল দেখে চমকে যায় আয়ান। 

মোনাপাখি ঠিক আছে তো? 

সিকিউরিটি গার্ড কে কল দিতেই বলে কেউ একজন অর্থি ম্যাম কে নিয়ে গেছে। 

আয়ান রাগে ফেটে যাচ্ছে তার থেকে বেশি ভয়। 

কিন্তু? কে নিলো? বোন কই আছে আয়ান শুরু থেকেই জানে। ওর সাথে সব সময় ছদ্মবেশে সিকিউরিটি গার্ড থাকে। আজকেও ছিলো। যেখানে ও ছিলো খুশি ছিলো তাইতো আয়ান ওকে নিজের মতো সময় দিয়েছে তবে আজকে কে এলো? তবে কি? 

ছবি পাঠাতেই আয়ান সিউর হলো। আদিত্য দা। 

গার্ডদের না করে দিলো কিছু করতে৷ 

কারণ তার বোন এখন সবচেয়ে নিরাপদ মানুষের কাছেই আছে। 

.

.

অর্থির ঘুম বেশ খানিক্ষন পর ভাঙে। কিছু কিছু মনে আছে৷ ব্ল্যাক জিন্স, স্কাইব্লু শার্ট, আদিত্যদা!!!!! 

হ্যাঁ আদিত্যদা ছিলো। 

উঠে বসতেই দেখে বারান্দার সাদা পর্দাগুলো বাতাসে সরে সরে যাচ্ছে। 

সিগারেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে আদিত্য। 

উঠতে দেখেই ফিরে এলো তার কাছে। 

কিন্তু অর্থি তাকে স্পর্শ করতে দিতে নারাজ। 

কেনো করবে সে? 

কোন অধিকারে। 

বেশ খানিকটা তর্কবির্তক হয়। 

অর্থির এক কথা সে অপবিত্র কেনো তাকে আদিত্য স্পর্শ করবে? 

তার থেকে তাকে মেরে ফেলুক। কারণ সে তো আত্নহত্যাও করতে পারছে না। 

.

আদিত্য রেগে গিয়ে বলে 

- মরবি? মরতে চাস? আচ্ছা মারবো। তার আগে এখানে সিগ্নেচার কর।

- এটা কি? 

- তোর মৃত্যুর পর তোর শরীর তুই স্বেচ্ছায় দান করছিস। 

.

.

অর্থি একবারো চিন্তা না করে সাইন করে দেয়৷

তারপর আদিত্য তাকে হাত ধরে টানতে টানতে বাহিরে নিয়ে যায়।

বাহিরে গিয়ে অর্থির চোখ ছানাবড়া। কি দেখছে এসব? । চারপাশে শুধু পানি আর পানি। পানির মধ্যে ভাসমান কটেজে? তার মানে কি আদিত্যদা ওকে নিয়ে সিংগাপুর আছে? 

কেননা বিয়ের পর ওদের এখানে আসা নিয়ে আদিত্যর প্ল্যান ছিলো। পানি খুব ভয় পায় সে। হাত পা খুব কাপছে৷ আদিত্য হাত ধরেই পিছনে দাঁড়িয়ে। খুব কান্না পাচ্ছে অর্থির। সে যে আরেক টা নিশি হতে চায় না। চাইছে না সে রুশাও তার মতো কষ্ট করুক। আদিত্য দা কেনো বুঝছে না। 

উপরওয়ালা কেমন পরীক্ষা নিচ্ছে? 

অতীত থেকে ছুটতে গিয়ে অতীতে জড়িয়ে যাচ্ছে সে। 

.

আদিত্য হাল্কা ধাক্কা দিতেই পানিতে পড়ে যায় অর্থি। 

আদিত্যর মুখে পৈশাচিক হাসি। 

- তুই তো মরতে চাস তাই না? নে মরে যা। 

.

অর্থি পানির মধ্যে হাত পা ছুড়তে থাকে সে যে সাতার পারে না। যাক বেশ ভালোই হলো মরেই যাচ্ছে সে। 

.

আদিত্যর বড্ড হাসি পাচ্ছে। অনেকদিন পর অর্থি আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে। অনেকটা পানি খেয়ে নিয়েছে। 

আদিত্য অর্থি কে ডিভানে শুয়িয়ে দিয়ে ওর পাশে শুয়ে পড়ে। 

বড্ড জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। 

অর্থির পানিতে ফোবিয়া আছে।৷ বেশি পানি প্রচন্ড ভয় পায়৷ সেবার সবাই মিলে সেন্টমার্টিন গিয়ে এক মুহূর্তের জন্য আদিত্যর হাত ছাড়েনি। আদিত্যর হাত ছাড়তে হলে আগে আয়ান এসে এক হাত ধরতো তারপর। 

.

.

অর্থি কিছুটা শান্ত হয়েছে। অর্থির অস্থিরতা আরেকটু বাড়াতে ক্ষতি কি। 

অর্থি কে সুযোগ না দিয়েই আদিত্য ঠোঁটে ঠোঁট রাখে।

একে তো পানি থেকে উঠেছে, আরেক আদিত্যর এমন ব্যবহারে অর্থির বেশ কষ্ট হয় দম নিতে।

আদিত্য বুঝে অর্থি অনেকটা শান্ত হয়ে এসেছে। 

আদিত্যর ঠোঁট অর্থির গলায় নেমে এলে কিছুক্ষণ পর যখন ওর বুকে মাথা রাখবে তখন অর্থি আদিত্য কে সরিয়ে দেয়। 

আদিত্য অর্থির এমন ব্যবহারে প্রচন্ডরকম রেগে যায়। এক হাত দিয়ে 

গলায় চাপ দিয়ে বলে

- এই বুকেই রুপ মাথা রাখতো তাই না? তাই তুই এমন করছিস?

.

এবার অর্থির সত্যি মনে হচ্ছে ও মরে যাবে। 

.

আয়ান জলদি জলদি সব কিছু গুছাচ্ছে৷ দ্রুত সিংগাপুর যেতে হবে। 

আপু ওখানে আছে। যেতে সারে চার ঘন্টার মতো লাগবে। 

এক মুহূর্ত ভাবলো আবার কি ভেবে যেনো আজকের টিকিট ক্যান্সেল করে দিলো।

হুম প্রয়োজন আছে।। আদিত্য অর্থি কে একা কিছু সময় থাকতে দেওয়া প্রয়োজন৷ 

হয়তো সব ঠিকঠাক হবে৷ কিন্তু সে তো তার বোন কে চিনে। এত সহজে মানবে না। 

আল্লাহ আদিত্য দা কে সহ্য করার ক্ষমতা দিক। কারণ অর্থি ইমোশনাল হলে সামনের মানুষের মাথা কাজ করার মতো থাকে না তার করা কাজে । নিজেকে যে সে বর্বর ভাবে অত্যাচার করার ক্ষমতা নিয়ে জন্মিয়েছে।

.

চলবে....

0 Comments:

Post a Comment