গল্প বালির_সংসার পর্ব ১৬ থেকে ১৮

 #বালির_সংসার

#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)

(পর্ব১৬ থেকে ১৮)

.

.

#পর্বঃ ১৬

.

.

সমুদ্রের তীরে বালি দিয়ে বানানো ছোট্ট একটা ঘর৷ 

হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢেউ কিংবা বাতাসে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাবে। 

অর্থির চোখের সামনে শুধু তাই ভেসে উঠছিলো।

সে মনে করেছিলো, ভালোবাসা, যত্ন, ত্যাগ দিয়ে এই সংসার কে বাচাবে। হোক না ঘর বালির!  তাতে কি?  ভালোবাসা তো সব পারে। 

ইট, কাঠ, সিমেন্ট দিয়ে শুধু ঘর হয়। সংসার তো হয় না। 

কিন্তু সংসার ও যে বালির হয় আজ সে বুঝতে পারছে৷

হাতে হাতে গড়ে তোলা তার এই বালির সংসার নিশি নামক ঝড়ো হাওয়ায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। 

.

( আশা করছি নামের অর্থ খুজে পেয়েছেন। যাদের গল্পের নাম নিয়ে সমস্যা হচ্ছিলো)  

.

রুপের সাথে নিশির সম্পর্ক অনেক বছরের। কথা ছিলো নিশির পর পর রুপ কানাডা চলে যাবে। সব ঠিক ছিলো। যাওয়ার পনেরো দিন আগে বাবা মা মারা যায়৷ তারপর নিজের জন্যে অর্থির এমন অবস্থা দেখে নিজেকে অপরাধী মনে হতো। অর্থির দায়িত্ব নিলো। 

সম্পর্ক ধীরেধীরে ভালোবাসায় পরিবর্তন হয়েছিলো। কিন্তু নিশির ফিরে আসা যেনো ধমকা হাওয়া মতো। 

নিশিও যে খুব কাছের। 

কেনো যেনো আজ কাল অর্থি কে চিন্তা করতে পারে না। মাথায় ঝিরিঝিরি ব্যথা হয়। 

কিন্তু নিশির পরশে সব ভুলে যায়। 

সাফল্য তো নিশির। আফটার অল কানাডা থেকে মেডিসিন নিয়ে এত কিছু পড়ে এসে সে যদি নিজের কাছের মানুষকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে না পারতো তবে এত লেখা পড়া করে কি লাভ?  

রুপ কে সে পেয়েছে। হোক না নেশার ঘোরেই, হোক না অবচেতন মনেই তবুও তো কেড়ে নিয়েছে। 

কারণ নিশি জানে রুপ সজ্ঞানে অর্থি কে ছাড়বে না। কিন্তু তার রুপ কে সে কাউকে দিবে না। 

.

.

সারাদিন ক্লাস শেষে বাসায় ফিরছিলো আয়ান! কাল পাগলীটার জন্ম দিন। ঘড়িতে কাটায় কাটায় দশটা বেজে সাইত্রিশ মিনিট। 

বেশি কিছু নেয়নি। stargazer ফুল,কিছু চকলেট আর ছোট ছোট পুতুল। এগুলো দিলেই বোন খুশি৷ Stargazer বলতে তো পাগল। এই ফুল দেখলে মুখে হাসি ফুটবেই৷ 

মেয়েটা কয়েকদিনে কেমন হয়ে গেছে। রেস্টুরেন্ট থেকে অর্থির প্রিয় চিজ কেক সাথে স্পেশাল বিরিয়ানি নিয়ে বাসায় ঢুকে আয়ান। 

সারাদিন বোনের খেয়াল রাখতে পারেনি। সকালে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখেই চলে গেছে। 

দুপুরের দিকে মন টা খুব ছটফট করছিলো কিন্তু এক্সাম ছিলো তাই আসতে বা কল দিতে পারেনি। 

অর্থির রুমে গিয়ে দেখে অর্থি নেই। 

হয়তো ঘুমের মধ্যে আদিত্যদার রুমে গিয়েছে। সেখানে গিয়ে না পেয়ে বেশ ভয় পায়। 

সারা বাসায় নেই। 

চিৎকার করে ডাকলেই মা বলে নিজের বাসায় গেছে। 

মায়ের প্রতি প্রচন্ড রাগ হয় আয়ানের। 

- তোমার মাথা ঠিক আছে?  তুমি কোন আক্কেলে আপু কে যেতে দিছো?  একটা দিন সামলাতে পারলা না?  আল্লাহ জানে আমার বোন কেমন আছে!  ওর কিছু হইলে তোমারে ছাড়বো না। 

.

আয়ান দৌড়ে গিয়ে রুম থেকে কিছু একটা নিয়ে বের হয়ে যায়। আয়ানের হঠাৎ এমন রেগে যাওয়া দেখে মা বেশ চমকে উঠে। 

গাড়ি নিয়ে অর্থির বাসার সামনে যেতেই দারোয়ান গেট খুলে দেয়৷

ওর কাছে থাকা ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে অর্থি কে খুজতে থাকে। আত্নায় যেনো পানি নেই। 

বেডরুমের দিকে যেতে দেখে অর্থি পড়ে আছে। রক্ত জমাট বেধে গেছে৷ চোখ খুলছে না। 

ভয় হয় আয়ানের। 

কিছু না বলেই উঠিয়ে গাড়িতে নিয়ে আসে। দারোয়ান চাচা শুধু দেখছিলো। 

.

আধ ঘন্টা পর অর্থির জন্ম দিন। কতই না পাগলামো করতো। আদিত্যর ফোনের গ্যালারি তে শুধু ওর ছবি। সেই পিচ্চি অর্থি, আবদার গুলো বড্ড পোড়ায়। কেনো সেদিন আদিত্য একটু ধৈর্য্য ধরলো না?  সে কেনো ভুলে গিয়েছিলো যা দেখা হয় সব সত্যি না। 

এসব ভাবতে ভাবতে আদিত্যর ফোনে কল আসে আয়ানের। 

- আদিত্য দা!  নরমাল এক্সিডেন্ট হলে যা যা মেডিসিন প্রয়োজন সেসব নিয়ে প্লিজ বাসায় আসো। 

.

আয়ানের কথার উত্তর দেওয়ার আগেই কেটে যায়।

আচ্ছা অর্থির কিছু হয়নি তো? 

.

.

অর্থির রুমে ঢুকে আদিত্যর পিলে চমকে উঠে। 

মাথায় কাটা দাগ, গালে কেটেছে। বাম হাতের কনুইয়ে কাচের টুকরো গেথে আছে। নাকের ভিতরে রক্ত জমে কালো হয়ে গেছে। হাটুর অংশে সালোয়ার রক্তে লাল আরো পুরো শরীরে মারের দাগ৷ অজ্ঞান হয়ে আছে। 

আয়ান আদিত্য দুজনে মিলে এন্টিসেপ্টিক লাগিয়ে শুয়িয়ে দিলো। আদিত্য ডান হাতে ধরে বসেছিলো। বা হাতে স্যালাইন চলছে৷ 

ঘড়ির কাটায় বারোটা। 

ফুলগুলো এগিয়ে দিয়ে ঘুমন্ত অর্থির কপালে চুমু দিয়ে উইশ করলো 

- শুভ জন্মদিন আমার পিচ্চি আপু৷ দেখিস তোর এই ছোট ভাই তোর সব কষ্ট দূর করে দিবে। 

.

.

#পর্বঃ ১৭

.

.

প্রতিবার মেয়ের জন্মদিনে বাবা দুই হাত ভর্তি করে চকলেট দেয়৷ 

এবারো তাই। বাবা কয়েক রকমের চকলেট নিয়ে এসেছে। 

কিন্তু অর্থির ছোট্ট ছোট্ট হাতে বেশি চকলেট আটে না।

বাবা এবারো হেসে দেয়। আর বলে 

- মা!  আমি তো তোমাকে চকলেট বেশি করেই দিতে চাই। কিন্তু তোমার হাতেই তো আটে না। 

.

অর্থি চারপাশ ঘুরে যেনো কি দেখে। 

তারপর বাবা কে বলে নিজের সাথে যেতে। 

আদিত্য ড্রয়িং রুমে বসে নিউজপেপার পড়ছিলো। 

অর্থি গিয়ে আদিত্যর হাতের নিচে নিজের দুই হাত দিয়ে বাবার দিকে বাড়িয়ে দেয়

- এখন তো বেশি দিতে পারবে?  আদিত্যদার হাত বড় আছে। তো তুমি এখন চকলেট দাও। 

অর্থির বাবা তাই দিলো৷ আদিত্য পুরোই অবাক, সাথে লজ্জাও পেলো। 

অর্থির বাবা দাড়ালো না। সে চলে যাওয়ার পর 

অর্থি নিজের ওড়না আঁচলের মতো করে আদিত্যর সামনে ধরলো 

- এখন আমাকে আমার চকলেট ফিরত দাও। 

- কেনো?  এগুলো তো আমার হাতে, সো চকলেট আমার।

- মানে কি? 

- মানে কিছুই না৷ দিবো না। এগুলো আমার। 

- লাগবে না৷ 

বলেই অর্থি নিজের রুমের ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায়৷

আদিত্য চকলেট হাতে নিয়েই হাত সামনে বাড়িয়ে অর্থি কে পিছন দিক থেকে ধরে। ঠিক যেনো আবদ্ধ করে নিলো। আদিত্য হাত দুটো আলাদা করেনি। হাত ভর্তি চকলেট। 

বুকের সাথে মিশে আছে অর্থির পিঠে ছড়ানো কোমর অব্ধি লম্বা চুল। 

- নে পিচ্চি, চকলেট। 

- নিবো না। 

- নিবি না? 

- শুনো না?  

আদিত্য উত্তর না দিয়েই ওকে উঁচু করে। 

অর্থি বলে 

- আদিত্যদা আমাকে নামাও!  হয় আমি পড়বো না হয় চকলেট। 

- চুপ। 

দোলনায় বসিয়ে দিয়ে ওর কোলে চকলেট রাখে। টুল টেনে নিয়ে বসে চকলেট মুখে পুড়ে দেয়৷ 

- পিচ্চি তোর বয়স কতো হলো?  

- ১৭ 

- কি গিফট চাই?  

- যা চাইবো দিবে? 

- কি?  

- কি!  

- কি চাই বল?  

- বুঝো না?  

.

আদিত্য অর্থির মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বুঝতে পারে কি চাইছে। 

- এখন না পরে। 

- পরে কবে?  

- পরে মানে পরে। 

- সরি। 

- আবার কি হলো?  

- তোমাকে সব সময় বিরক্ত করি।আর করবো না। ভালো থাকো। 

- মানে কি?  

- মানে কিছুই না! তুমি তো চাও আমি তোমার থেকে দূরে থাকি। তাই থাকবো। ভালোবাসো বলতেও হবে, কাছেও আসতে হবে। আসলে তোমার জন্য রুশা আপুই ভালো হবে। মানাবে ভালো। স্টাইলিশ, স্মার্ট মেয়ে, আমার মতো না।  

যেমন টা তোমার পছন্দ। ভালো থাকো, রুশা আপুকেই নিয়ে। 

.

.

কথা গুলো বলেই অর্থি উঠে যেতে নেয়। কোলের সব চকলেট পড়ে যায়। 

এক পা এগুতেই আদিত্য অর্থি কে হাত ধরে টেনে এনে বসিয়ে গালে সজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷ 

অর্থি  এমন কাজে অভ্যস্ত না৷ কেউ ভুলেও মারেনি৷ মাথা ঝিমঝিম করছে।. 

.

.

আদিত্য বেশ রেগে গেছে। কখনো সে রুশা কে নিয়ে এসব ভাবে নি। কেনো ওর কথা উঠবে এখানে?  কিছু না বলতে বলতে বেশি কথা বলে ফেলে৷ 

যখন হুশ হলো আদিত্য অর্থি কে মেরেছে।

আদিত্যর নিজের প্রতি রাগ আরো বেশি হতে থাকলো। আজ বাচ্চামেয়েটার জন্ম দিন, সব থেকে বড় কথা ও কিভাবে পারলো এই পিচ্চি মেয়েকে মারতে। নিজের প্রতি রাগ আরো বেশি হলো। 

দেয়ালে কয়েকটা ঘুষি দিলো। আবার দিতেই সামনে দাড়ালো। 

আদিত্য কে কখনো এত রাগ করতে দেখেনি। কিভাবে শান্ত করবে জানে না। 

অর্থির কান্নার মুখ দেখে আদিত্য অর্থিকে বসিয়ে দিয়ে এক হাত দিয়ে অর্থির মাথা এগিয়ে নিয়ে এসে অন্য হাতে দুই হাত ধরে। 

- ভালোবাসি এটা বলতে হবেই?  প্রপোজ করতেই হবে?  তোকে নিয়ে আমার অনেক ইচ্ছে। প্রপোজ করবো, সরাসরি বিয়ের জন্য। 

ভালোবাসি বলবো যেদিন তোকে পূর্ণ করবো। 

পূর্ণ সেদিন করবো যখন তুই নিজেকে সামলানোর ক্ষমতা রাখবি। 

.

আদিত্যর রাগ কিছুটা কমে এসেছে। অর্থি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে

- তো করো  না আমায় পূর্ণ, বলো না ভালোবাসি।

- পূর্ণ করা মানে বুঝেছিস?  

- না!  

- তুই এখনো বাচ্চা আগে বড় হয়ে নে। 

.

.

আদিত্যর ঘুম ভেঙে যায়। ইদানীং সে স্বপ্নে শুধু অতীত হাতড়ে বেড়ায়। 

ফেব্রুয়ারি মাসের হালকা শীতে ঘেমে গেছে অর্থি। শরীরের উপর থেকে ওড়না সরাতেই ক্ষত গুলো চোখে পড়ে। 

রেগে ফেটে যাচ্ছে সে। এসব হয়েছে রুশার জন্য। মনে হচ্ছে ওকে চুলের মুঠি ধরে টেনে নিয়ে এসে ঠিক এভাবে মারতে। 

না ও ওসব ভিডিও, ম্যাসেজ আদিত্য কে দিতো না এসব হতো। 

অর্থির ভিডিও দেখে আদিত্যর মাথায় রাগ জেকে বসে। 

কিন্তু ভুল তো ভাঙবেই৷ ভেঙেছিলোও। 

কোন একটা অজানা নাম্বার থেকে সেন্ড করা রুপের বাসার সিসি টিভি ফুটেজ সব ভুল ভেঙে দেয় তার। ঈশ! রাগ হয় তখন নিজের প্রতি। কেনো সে অর্থি কে বিশ্বাস করেনি। কিন্তু ততদিনে রুপ অর্থির বিয়ে হয়ে গেছে। 

দেশে ফিরে এসে জানতে পারে অর্থির বেবি হবে।

আদিত্য তারপর কত রাত ঠিক মতো ঘুমায়নি। 

অর্থি দের বাসায় এসে থাকতে চায়নি কারণ চারপাশে শুধুই স্মৃতি। কিন্তু আংকেলের কথা ফেলতে পারেনি।

ভাগ্যের সমীকরণে সে পরাজিত। আজ বাদে কাল সেই রুশার সাথেই তার বিয়ে। না সে রুশা কে চায় না কিন্তু ওই যে বাংলাদেশের সব বাবার হার্ট খুব দুর্বল। একটু হলেই এট্যাক হয়।

.

.

অন্ধকার রুমে বসে রুশা কেদেই চলেছে। আজকে আদিত্য খুব খারাপ ব্যবহার করেছে। 

রুশার কান্না শুনে ওর ভাই দৌড়ে আসে। 

- কি হয়েছে আপু?  

- আদিত্য!  

- কি?  

- ও এখনো অর্থিকে ভালোবাসে 

- কাল তো তোদের রেজিস্ট্রি, তারপর আদিত্য ভাইয়া শুধুই তোর। 

- তুই যা এখান থেকে, আমি বাঁচি মরি তাতে তোর কি রে ভাই? 

- তোর চোখের পানি সহ্য করতে পারিনা বলেই কিন্তু অর্থি আপুর ওসব ফেক ভিডিও, ফটো বানিয়ে আদিত্য, কাকা, কাকী সবাই কে দিয়েছিলাম। আর তুই এখন এসব বলছিস?

.

#পর্বঃ ১৮

.

.

সকাল হতেই রুশা চলে যায় অর্থিদের বাসায়। কাল রাতে রায়ান বলেছে তো সব ঠিক হয়ে যাবে। হুম্ম তার ভাই সব ঠিক করে দিবে। আদিত্য কে সে আর ওই বাসায় থাকতে দিবে না। 

আংকেল বললেও না। আর রেজিস্ট্রি হওয়া অবধি ও নিজেও থাকবে সেখানে। 

আদিত্য সহ একবারে বেরিয়ে আসবে৷

.

অর্থির মাথার কাছে ওর বাবা বসে আছে।

মেয়ের মুখের দিকে তাকাতে পারছে না। এখনো পুরোপুরি ভাবে হুশ ফিরেনি। কেউ কিছুই জানে না। শুধু আয়ান ছাড়া। আয়ান মুখ খুললো৷ সবটা জানার পর চক্ষু সবার চড়ক গাছ। 

আয়ান শুরু থেকেই সব টা জানে।

তিন বছর আগে তখন যদি সে থাকতো এত কিছু হতো না। 

বান্দরবান ছিলো। এটার সুযোগ নিয়েই অর্থি কে কেউ ফাসিয়েছে।

ফিরে এসে সব জেনে খুব কষ্ট করে রুপের বাসার সিসিটিভি ফুটেজ রেকর্ড পায় সে। আর সেই রেকর্ড পাঠিয়ে দেয় আদিত্য, বাবা মায়ের কাছে৷

আদিত্য এত দিন জানতো অর্থি ট্রাপে পড়েছিলো। কিন্তু ফুটেজ কে দিয়েছিলো সেটা অজানা ছিলো । তাহলে সে আয়ান?. 

.

আয়ান বোনের পাশে গিয়ে হাত ধরে আবার বলতে থাকে। 

- টাকায় সব কিছু হয়৷ নিশি ছয় মাস যাবত এসেছে৷ যখন আপুর আটমাস চলছে। ওই বাসার সব ক্যামেরার ফুটেজ রেকর্ড আমার কাছে প্রথম থেকেই আছে। আপু বেশ মানিয়ে গুছিয়ে নিয়েছিলো। রুপ বেশ ভালো। কিন্তু!  নিশির প্রতি আসক্তি খুব।

.

তারপর আয়ান বেবি হওয়ার পর দিন থেকে কাল রাত অবধি সব কিছু বলে।

সবার চক্ষু চড়কগাছ। আদিত্য রাগে ফুসছে। সে জানতো রুপ মেরেছে৷ কিন্তু এতসব জানতো না। 

রাগে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলেই অর্থির জ্ঞান ফিরে। 

হাতে ঈশারা করে। 

আদিত্য কাছে যেতেই হাত বাড়িয়ে বাবা, আয়ান, আদিত্যর হাত নিয়ে বলে 

- রুপ কে কিছু বলো না তোমরা। আমিই অলক্ষী, আমি আমার সন্তানদের মেরেছি। 

বলেই ঢুকরে কান্না করে। 

আয়ান দ্রুত যায় খাবার নিয়ে আসতে। মা অর্থি কে ওয়াশ রুমে নিয়ে গোসল করাতে চাইলো। আদিত্য না করলেও অর্থি শাওয়ার এর নিচে দাঁড়িয়ে যায়। 

.

একবার অর্থি সুস্থ হোক তারপর দেখে নিবো রুপ কে আর তখন কে ওর সাথে এমন  করছে তাকে টেনে ছিড়ে ফেলবো। 

.

.

কথাগুলো শুনে রুশার হাত পা কাপছে। 

আদিত্য দা জেনে গেছে ভিডিও ওসব ফেক ছিলো। 

কাপতে কাপতে রায়ান কে কল দেয়। 

.

রুশা-হ্যালো ভাইয়া 

রায়ান- মণি বলো 

রুশা- আদিত্য দা সব জেনে গেছে।

রায়ান- মানে কি?  কি হইছে? শান্ত হও!  ক্লিয়ার করে বলো 

রুশা- ভিডিও, ছবি যে ফেক ছিলো সেইটা সবাই জেনে গেছে। 

রায়ান- কিভাবে? 

রুশা- এত জানি না!  তবে সব জানার পিছনে আয়ান আছে। 

রায়ান- তোমাকে ওরা কিছু বলেছে?  তোমার কিছু করেনি তো?  ওরা কি জানে আমরা এসব করেছি। 

রুশা- না!  আমরা করেছিলাম এসব তা জানে না। 

রায়ান- যাক বাবা বাঁচালে। শুনো রিলাক্স করো। কিছুই হবে না। 

রুশা- কিন্তু মনে হয় না অর্থি এ বাসায় থাকলে আদিত্য আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে৷ (রুপের সব কথা বলে) 

রায়ান- চিন্তা করো না। কাল দাদু আসছে সব ঠিক হয়ে যাবে৷ 

.

.

রাতের দিকে অর্থি অনেকটা সুস্থ। বারান্দায় বসে ছিলো। বাবা মা এসে অনেক কথা বলে গেলো। বাহিরে আদিত্য রুশার বিয়ের প্রিপারেশন নেওয়া হচ্ছে। 

হায়রে নিয়তি!  হায়রে ভাগ্য!  নদীর একূল ভাঙে আর ও কূল গড়ে৷ এমন টাই হচ্ছে। 

অর্থির সংসার ভেঙে যাচ্ছে আর আদিত্যর সংসার গড়ছে৷ 

বুকের ভিতর চিনচিন ব্যথা করছে৷ 

আয়ান এসে অর্থির মাথা চুপচাপ ওর বুকের সাথে লাগিয়ে ধরে। 

হাতে ফোন দিয়ে বলে 

- নাও তো মোনা 

- কি?  

- ফোনে দেখো!  

.

ফোনের গ্যালারি তে শুধুই শিনচ্যান কার্টুন। 

অনিচ্ছাসত্ত্বেও দেখা শুরু করে। দেখতে দেখতে এক সময় অর্থি হাসতে থাকে। আয়ানের বুকের মাঝে থেকে হাজার টনের বোঝা নেমে যায়। 

.

.

সকাল হতেই রুশার দাদী মানে অর্থির চাচাতো দাদী আসে। অর্থির সব কথা শুনে বেশ চেচামেচি করে। 

অর্থির মা বাবা উনাকে খুব সম্মান করে আর এর সুযোগ সে বারবার নেয়। 

রেগেমেগে অর্থির রুমে যায়৷

গিয়েই ঘুম থেকে টেনে তুলে মেয়েকে। 

বলতে থাকে 

- কি রে মুখপুড়ী?  মুখ পুড়িয়ে এখন এখন এখানে এসেছিস আমার রুশার সংসার ভাংতে?  নিজের সন্তানদের তো খাইছিস। এখন এই শুভ একটা দিনে.....  

.

.

অনেক কথা অর্থি কে বলে, যার সারমর্ম এই যে অর্থি  একটা অলক্ষী মেয়ে। নিজের সন্তান কে নিজে মেরেছে। স্বামী কে আটকে রাখতে পারেনি। সে শুভ দিনে এখানে থাকলে  রুশা আদিত্যর খারাপ হবে। তাকে এখনি বাসা থেকে অন্তত আজকের দিনের জন্য হলেও দূরে যেতে। আর রুপ কে মাফ করে নিজের সংসার করতে। পুরুষ মানুষের একটু আধটু এমন শখ থাকবেই৷ মেনে নিতে হয়। 

.

অর্থির নিজের মায়ের দিকে খুব আশা নিয়ে তাকায় কিন্তু মনে হয় তার মায়েও এই কথায় সম্মতি আছে। 

দাদী চলে যাওয়ার পর মা বলে 

- বিয়ে তো কোন ছেলে খেলা নয়। রুপ কে আবার সুযোগ দে। সব ঠিক হয়ে যাবে। 

.

.

চলবে...

0 Comments:

Post a Comment