গল্প বালির_সংসার পর্ব ২২ থেকে ২৩ সমাপ্ত

 #বালির_সংসার

#সৌরভে_সুবাসিনী(moon) 

(পর্ব ২২,২৩)

.

.

#পর্বঃ ২২

.

.

আদিত্যর রাগ, মান- অভিমান,সহ্য শক্তি, ভালোবাসা,অবহেলা সব কিছুর মাফ কাঠি অর্থি। 

হ্যাঁ! হয়তো সে ভুল করেছিলো কিন্তু চার বছর শুধু কষ্ট পেয়েছে, শুধু কি তাই? যে অর্থির গায়ে নিজেই জোড়ে স্পর্শ করতো না তার উপর কি সব বয়ে গেছে। 

.

অর্থির স্পর্শ তার জন্য সব কিন্তু প্রত্যাখ্যান? মোটেও মেনে নেওয়া যায় না। 

অর্থির ঠোঁট কাপছে 

ধীরেধীরে বললো 

- স্পীড বোর্ডে কেউ আসছে। 

.

আদিত্য তাকিয়ে দেখে সত্যি কেউ আসছে। অর্থি কে কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে রেখে আসে। 

- শ্যাম্পু করে জলদি বের হবি। নইলে... 

- নইলে কি? আবার মারবে? মেরেই ফেলো না। 

.

আদিত্য কিছু না বলে অন্য ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে বের হয়। আদিত্য খাবার অর্ডার করেছিলো। তাই নিয়ে এসেছে। 

.

১৫ মিনিট হয়ে গেলো মেয়েটা বের হয়নি। 

ভেজা কাপড়ে কাপুনি ধরে গেছে। 

কি পড়বে? কাপড় কই? 

আদিত্যর হঠাৎ মনে হলো 

ঈশ কাপড় তো দেওয়া হয়নি। 

নক করে কাপড় দিয়েই চলে এলো। 

খাবার টেবিল গুছাচ্ছিলো সে। অনেক দিন পর আজ আবার দুজনে একসাথে। 

.

অর্থির ডাকে রুমে ঢুকতে নিলে অর্থি বলে 

- বাইরেই থাকুন। বলি যে শুধু শাড়ি কিভাবে পড়বো? 

- মানে? 

- মানে শুধু শাড়ি দিয়েছেন।

আদিত্য রুমের ভিতরে ঢুকতেই ছানাবড়া। 

অর্থি টাওয়াল প্যাচিয়ে দাড়িয়ে আছে। চুল থেকে টপটপ পানি পড়তেছে।। 

যেকোন প্রেমিক পুরুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণের জন্য যথেষ্ট নয় কি? 

অর্থির গাল দুটো মনে হচ্ছে কমলা লেবু৷ 

খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। 

.

আদিত্য চুপচাপ অর্থি কে সব দিয়ে বাইরে চলে আসে। 

চোখ জ্বলছে। গা গরম হয়ে গেছে। চোখ দুটোও লাল।

বড্ড কষ্ট হচ্ছে আজকে নিজেকে শান্ত করতে। 

.

.

বেশ খানিক্ষন পার হলেও অর্থি আসে না। 

আদিত্য গিয়ে দেখে শুয়ে আছে। 

কোলে তুলে নিয়ে খাবার টেবিলে 

- কথায় কথায় কোলে তুলেন! ভার লাগে না,?

আদিত্য চুপচাপ! খাবার মুখে দিতেই অর্থি সরিয়ে দিয়ে বলে 

- আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছেন? নিজের রক্ষীতা বানানোর জন্য? 

.

এবার রাগ উঠে। কষিয়ে থাপ্পড় মারে। এই নিয়ে তিনবার থাপ্পড় খেলো। অর্থি চুপচাপ বসে আছে। আদিত্য আবার খাবার এগিয়ে নিয়ে দিতেই চুপচাপ খেয়ে নিলো। 

.

.

দেখতে দেখতে দুদিন কেটে গেলো। আদিত্যর সাথে এখানে আছে তবুও শুধু আদিত্য খাওয়ার সময় ওর কাছে আসে।

খাইয়ে দিয়ে চলে যায়। মাঝেমধ্যে কথা বলতে নিলেই দুজনের ঝগড়া লাগছে৷ অর্থির এক কথা কেনো সে এখানে।

.

.

গোসল সেরে স্কাইব্লু কালারের শাড়ি পরে অর্থি ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়েছিলো। 

নাভি থেকে চার আংগুল নিচে দাগ। বড্ড বেশি পোড়ায় তাকে। 

.

কায়া দেখলে মায়া বাড়ে কথায় আছে না? আদিত্য নিজেকে কষ্ট দিচ্ছে সিগারেটের সাথে। 

ফোন নিতে রুমে এসে অর্থি কে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। 

চুল থেকে টপটপ পানি পড়ছে কোমরে। 

চলে যেতে নিলে অর্থি শার্টের কলার চেপে ধরে আদিত্যর পায়ের উপর দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে 

- কেনো করছেন এসব? 

- জানি না! 

- ভালোবাসেন আমায়? 

- জানিস না? 

- সারাজীবন আপনাকে সবাই আমার দ্বিতীয় স্বামী বলবে! পারবেন মেনে নিতে? সমাজের সব খোটা? 

- কবুল। 

- পারবেন আমার নাভির নিচের এই দাগ টা সহ আমাকে গ্রহণ করতে? 

- কবুল। 

- পারবেন কুমারিত্ব হীন অর্থি কে মেনে নিতে? 

- কবুল। 

.

আদিত্যর কথা শুনে নিজের প্রতি আরো রাগ হয় অর্থির। সে রুশাকে ঠকাচ্ছে যে।

আদিত্য অর্থি কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। পায়ের উপর ভর দিয়েই নিয়ে যায় ব্যলকনিতে। 

পরিবেশ টা বড্ড বেশিই সুন্দর৷ আদিত্যর সেই চিরচেনা গন্ধ যেনো অর্থি কে বার বার বলছে 

- আদিত্য তোর ছিলো। ফিরিয়ে দিস না। কিন্তু রুশা? 

.

.

দূর থেকে স্পীড বোর্ডে৷ করে কেউ এলো৷ ফুল এগিয়ে দিয়ে বললো 

- কংগ্রেস মিসেস. অর্থি আদিত্য আহমেদ । 

.

.

আয়ানের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে অর্থি। কি বলছিস এসব? 

- তুমি এখানে আসার পর কোথাও সাইন করেছো? 

- হুম। 

- ওটা তোমাদের রেজিস্ট্রি পেপার ছিলো মোনাপাখি। 

- মানে কি? 

-মানে যা তাই। 

- জোড় করে বিয়ে করে লাভ নেই। রুশা আপুকে কষ্ট দিতে পারবো না। 

.

তার থেকে বরং মরেই যাই। রুশা অন্তত সুখী হবে৷ 

আদিত্য,আয়ান একটু দূরে ছিলো। অর্থি ছুড়ি ততক্ষনে হাতে চালিয়ে দিয়েছে৷

দৌড়ে এসে ধরাতে বেশি লাগেনি। জায়গা মতো লাগলে খবর ছিলো। 

আদিত্য রেগে আয়ান কে বলে আয়ান প্লিজ কিছুক্ষণ সময়ের জন্য বাহিরে গিয়ে সব ব্যবস্থা করো। আমি চাই না তোমার সামনে তোমার বোন কে কষ্ট দিতে।

.

আয়ান অর্থির মাথার কাছে বিছানায় বসে ছিলো। বোনের কপালে ছোট্ট একটা চুমু দিয়ে বেরিয়ে যায়। 

.

আদিত্য দরজা লাগিয়ে দিয়ে এসে বেডরুমের দরজা লাগায়৷ অর্থি চুপচাপ শুয়ে আছে। সে জানে এখন বেশি তিরিং বেরিং করলে বারোটা বাজাবে৷ 

আদিত্য এসে চুপচাপ অর্থির পাশে শুয়ে পড়ে।

এ যেনো ঝড়ের পূর্বাভাস। কিছুক্ষণ পর 

অর্থি উঠতে নিলেই আদিত্য ধমক দিয়ে শুয়ে থাকতে বলে। 

শুয়ে শুয়েই আদিত্য এক প্যাকেট সিগারেট শেষ করছে। 

ঘর ধোয়ায় ভরে গেছে। 

আদিত্যর রাগ অর্থি জানে, এখন তাকে শান্ত করা প্রয়োজন৷

চুপচাপ সরে গিয়ে আদিত্যর বুকে মাথা রাখতেই আদিত্য হাতের সিগারেট অর্থির পিঠে লাগে। 

বেশ চেচিয়ে উঠে। 

চিৎকার বন্ধ করতে আদিত্য ঠোঁট রাখে অর্থির ঠোঁটে। 

.

.

ছয় মাস সতেরো দিন পর রুপ অর্থির খোজ পেয়েছে। 

আল্লাহ তার ডাক শুনেছে। সে কি না করেছে ওর সাথে। 

নাহ্ অর্থি কে আর দূরে রাখবে না সে। দরকার হলে ওর পায়ে ধরে মাফ চাইবে। 

তবুও তার অর্থি কে চাই। অর্থির বুকেই যে সে পেয়েছিলো সব থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের স্থান। 

.

.

#পর্বঃ ২৩

.

.

সকাল হতেই আয়ান এসে হাজির। 

হাতে একটা পেপার। কিছু একটা হয়েছে।

চোখেমুখে লেপ্টে আছে হাসি। 

আদিত্য কাগজ দেখে আরো খুশি হলো। 

অর্থির এডমিশন হয়ে গেছে। সাথে আয়ানের। আদিত্য, আয়ানের সাথে অর্থি পাড়ি দিলো কানাডায়। 

.

লেখাপড়া আদিত্য, আয়ান, সংসার নিয়ে বেশ ভালো আছে অর্থি। 

মাঝেমধ্যে বাবা মা আসে। প্রথমে তো মায়ের সাথে আয়ান কথাই বলতে দিবে না।। 

এখন কেনো মেয়ের প্রতি আহ্লাদ আসছে তার? সবাই বুঝানোর পর সব ঠিকঠাক হয়, মা নিজেও অনুতপ্ত। 

রুশার ব্যাপার টা জানার পর অর্থি বেশ রেগে যায়। 

এটা আশা করেনি। 

কিন্তু আয়ানের সাথে পেরেও উঠেনি।রুশার শাস্তি কমাতে পারেনি। 

.

দেখতে দেখতে কেটে গেলো দুই বছর। 

অর্থি কে আগের মতো অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। কিন্তু ওই যে দাগ? 

অর্থি কে অতীত ভুলতে দেয় না। 

আদিত্য অধিকার চায়নি অর্থি ও দেয় নি। 

অর্থি আশেপাশে আছে এটাই অনেক। 

তাছাড়া কিছু সময় দেওয়া প্রয়োজন। 

.

.

ছুটির দিন রান্নায় সবাই অর্থি কে সাহায্য করছিলো।

আটা মাখাতে গিয়ে আদিত্য আয়ানের সাথে অর্থির যাচ্ছে তাই অবস্থা। 

অর্থি দুজন কে কিচেন থেকে বের করে দিয়েছে। 

অর্থি ইদানীং বেশ জনপ্রিয় লেখিকা। 

জীবনে পাওয়া শিক্ষা, অবস্থা, পরিবেশ মেয়েটিকে অনেক শিখিয়েছে। তাছাড়া এখন সে সিরিয়া নিয়ে বেশ লেখালেখি করে আলোচনায় উঠে এসেছে। 

.

আয়ান, আদিত্য ওর পি এ এর কাজ করছে। 

এত এত মেইল, ম্যাসেজ, ভয়েস ক্লিপ চেক করছিলো দুজন৷

কিচেনের ভিতরে টেবিলে বসে এসব করছিলো। 

হঠাৎ একটা ভয়েস ক্লিপ দেখে। 

সেন্ড ফ্রম বাংলাদেশ। 

হয়তো কোন ফ্যান দিয়েছে৷ অর্থির রান্না শেষ। টেবিলে খাবার দিতেই আদিত্য রেকর্ড অন করে। 

.

.

- কেমন আছো অর্থি? আশা করি অনেক ভালো। চিনতে পেরেছো? হয়তো বা হয়তো না। 

আমি নিশি। যে তোমার সব কেড়ে নিয়েছিলাম। 

জানো তো অর্থি যখন তোমার বাচ্চারা মারা গেলো তখন আমি মনে মনে বেশ খুশি হয়েছিলাম। কেনো হবো না? 

রুপ কে যে পিছুটান থেকে মুক্তি দিয়েছে ওরা। হয়তো ওরা বেঁচে থাকলে কখনো রুপ আমার হতো না।

কিন্তু সন্তান হারানোর কষ্ট যে কি! বোন আমি এখন বুঝি। 

জানো তো তুমি চলে যাওয়ার পর বুঝতে পারি আমি কন্সিভ করেছি।

জানো তো! খুব খুশি হয়েছিলাম সেদিন। কারণ আমার সব স্বপ্ন পূর্ণ হতে চলেছে। 

কিন্তু! 

কিন্তু যখন আটমাস চলছে তখন দ্রুত ছুটতে গিয়ে পা ফসকে পড়ে যাই।আমার বাচ্চাটা মরে যায়। ডক্টর বলে আমি আর মা হতে পারবো না।

এক রাতের মধ্যে আমি সব হারিয়ে ফেলেছি৷ 

কেনো সব বলছি জানো 

? পরে বলছি। আগে শুনো। 

রুপ তোমার জায়গায় আমাকে কখনো দেয় নি। 

আমি যখন দেশে ফিরে এলাম, রুপ কে ছাড়া আমি থাকতে পারছিলাম না। যেকোন মূল্যে হোক আমার ওকে চাই। তাই আমি ওকে প্রতিদিন কফির সাথে একটু একটু ড্রাগ দিতে থাকি।

যখন ও অবচেতন হয়ে যেতো শুধু আমার থাকতো। এছাড়াও তোমার নামে বাজে কথা তো ছিলোই৷ 

ধীরেধীরে রুপ আমার হলো। যেদিন তুমি এসেছিলে রুপ তোমায় মেরেছিলো সেদিন রুপ হুশে ছিলো না।

যখন সব মনে পড়ে তোমার কাছে যেতে চাইলেও পারেনি। 

ডিভোর্স দিয়ে চলে গেলে। রুপ কে একবার ও জিজ্ঞেস করলে না। 

অপরাধ বোধ ওকে শেষ করে দিচ্ছিলো। 

যখন শুনে তোমাকে পাওয়া যাচ্ছে না, তখন পাগলের মতো খুজতো। আমি তখন আর ড্রাগ দিতাম না। কারণ রুপ তখন লিগ্যালি আমার। 

কিন্তু সেটাই হয়তো ভুল ছিলো। 

একদিন হঠাৎ জানতে পারে তোমার নাম সিংগাপুর যাওয়ার ফ্লাইটের প্যাসেঞ্জার লিস্টে পাওয়া গেছে। 

আগপাছ কিছু না ভেবেই দ্রুত যাওয়ার জন্য বের হয়৷

রাস্তায় এক্সিডেন্টে অবস্থা খুব খারাপ। 

আমি দ্রুত পায়ে ছুটতে গিয়ে পড়ে যাই। আমার বাচ্চা মারা যায়। 

রুপ এক বছর এগারো মাস কমায় ছিলো।

হঠাৎ একদিন ভালো হয়। এই বুঝি আমার কপাল ফিরলো কিন্তু কথায় আছে না? মানুষ মারা যাওয়ার আগে একদম সুস্থ হয়। 

তাই হয়েছিলো। 

আজ সাতদিন রুপ মারা গেছে। মারা যাওয়ার আগে তোমার লিখা পড়তো। নামের অংশে যখন লিখা দেখতো 

- অর্থি আদিত্য আহমেদ 

তখন কেদে উঠতো আর বলতো 

রানী সাহেবা তুমি সুখি হও। আদিত্য তোমার পায়ে সব সুখ এনে দিবে। এটা আমার বিশ্বাস। 

.

শেষ ইচ্ছে ছিলো অরুনীমা, আরশের পাশে কবর যেনো হয়। 

অর্থি মাফ করো বলবো না কারণ যা করেছি আমার ক্ষমা হয় না।

তোমার সাজানো গুছানো সংসার বালির সংসার ছিলো না। 

সংসার তো আমি বালির সাজিয়েছিলাম। যা আজ নেই। তোমার সংসার কেড়ে নিলেও তোমার ছিলো কিন্তু আমার সংসারের কোন অস্তিত্ব নেই। 

আল্লাহ আমার পাপের শাস্তি হিসেবে সব কেড়ে নিয়েছে। 

ভালো থেকো বোন। অনেক অনেক সুখী হও। 

.

.

ভয়েস রেকর্ড টা শেষ হয়ে গেলো। অর্থির হাত কাপছে আদিত্য, আয়ান দুজন দুহাত ধরে। 

অর্থি বলে আমি ঠিক আছি। অনেকক্ষণ বসে থাকার পর আদিত্য একটু বের হও৷

সিগারেট খেতে হবে। খুব প্রয়োজন। 

.

আয়ান- মোনাপাখি ঠিক আছো? 

অর্থি- হুম। 

- অতীত হাতড়ে বেড়াচ্ছো? 

- মানুষটা মরে গেছে আয়ান। ওর কোন দোষ ছিলো না। 

- আদিত্য দার কি দোষ? 

- মানে? 

- আদিত্যদা কে কেনো কষ্ট দিচ্ছো? অতীত ফিরে আসবে না, আদিত্য দা এর মতো কেউ তোমাকে ভালোবাসবে না। রুপের ভুলের শাস্তি তাকে দিও না। আগের পিচ্চি হয়ে যাও। পিছুটান রেখে লাভ নেই। বালি দিয়ে নয় ভালোবাসা দিয়ে সংসার সাজাও।

.

অর্থি আয়ানের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। এই বুঝি কেঁদে দেয়। 

আয়ান অর্থির মাথা বুকে নিয়ে বলে

- জানো তো! তোমার মাথা আমার বুকে রাখলেই সব চিন্তা মুক্তো হয়৷ তাহলে আদিত্য দা কতটা শান্তি পায় তুমি যখন তার বুকে মাথা রাখো? 

মোনাপাখি! সাজাও না আবার সংসার। দেখে এ দুচোখ জুড়াক।

আর শুনো আমি এখন বের হচ্ছি। রাতে ফিরবো না। কান্না কাটি করলে খবর আছে কিন্তু।

.

আয়ান বেরিয়ে যাওয়ার পর অর্থি চুপচাপ বসে থাকে। সত্যি কি আদিত্য দা কে সে ঠকাচ্ছে? 

বিয়ে করে আদিত্য দা আমার উপর দয়া করছে না তো? 

না! দয়া করলে আজকের অর্থি কখনো মিসেস অর্থি আদিত্য আহমেদ হতো না। 

.

আদিত্য বাসায় ফিরেছে। রাত হয়েগেছে। 

রুমে ঢুকে সিগারেট খাচ্ছে। 

এখানে আসার পর অর্থি শাড়ি পড়ে না। সালোয়ার-কামিজ পরে কিংবা জিন্সের সাতে লং কামিজ। 

আজ হঠাৎ শাড়ি পড়েছে। 

আদিত্য কে আরো ভিতরে ভিতরে পুড়াচ্ছে। 

.

অর্থি ব্যলকনি তে এসে আদিত্যর সামনে পাশে দাঁড়ায়। 

- আচ্ছা আদিত্য দা! তোমার মনে হয় না এখন আমাদের বেবি হওয়া দরকার। বয়স তো কম হলো না। তারপর আবার দেরীতে হলে মানুষ বাবুকে তোমার নাতী নাতনী বলবে। 

.

.

আদিত্য অর্থির দিকে তাকিয়ে থেকে আবার সিগারেটে টান দেয়। সে জানে অর্থি কোন রোমান্টিক উপন্যাস লিখছে হয়তো তাই এমন কথা বলছে কারণ এমন উদ্ভট কথা প্রায়ই শোনা যায়। পরে বলে গল্পের প্লট ছিলো। 

.

অর্থি জবাব না পেয়ে হুট করে আদিত্য কে টেনে ঠোঁট রাখে ওর ঠোটে। 

সিগারেটের সব ধোয়া ওর মুখের ভিতরে যেতেই কাশতে কাশতে ছেড়ে দেয়। 

আদিত্য দ্রুত পানি নিয়ে এসে পানি খাওয়ায়। 

চোখমুখ লাল হয়ে গেছে। রেগে বলে 

- এমন কেউ করে? 

- তুমি খাও কেনো? 

- চুপ। 

- না। 

- পানি খাও। 

- উহু। তোমার ঠোঁট.... 

- আমার ঠোঁট? ( ভ্রু কুচকে) 

- কিছু না৷ জ্বালাই খুব তাই না? থাকো আমি গেলাম

.অর্থির ব্যবহার যেনো সেই পিচ্চি অর্থির মতো হয়ে গেছে। 

হাত ধরে আদিত্য বলে 

- ভালোবাসি পিচ্চি। 

- মাই গড। ভালোবাসো? আবার বলো? কান কে বিশ্বাস হচ্ছে না। চিমটি দাও। আমি মেবি স্বপ্ন দেখছি। না হলে আদিত্য দি গ্রেট আহমেদ ভালোবাসি বলছে। 

দাও দাও চিমটি দাও। 

.

আদিত্য অর্থির নাকে কামড় দেয়। 

- উহু লাগলো তো। 

- লাগুক। এত জ্বালাস কেনো? এত পুড়াস কেনো রে? 

- পুড়তে না জানলে পোড়ায় কেনো? পুড়াতে না জানলে পুড়ো কেনো? 

- কথা দিচ্ছি আজ থেকে জ্বালাবো ও পুড়াবোও৷

- পারমিশন গ্র‍্যান্টেড৷ 

.

আদিত্য অর্থি কে কোলে উঠিয়ে নেয়। 

অর্থি বলে 

- অতীত সহ মেনে নিতে পারবে আমায় আজ? 

- অতীত পাল্টানো যায় না। যদি যেতো তাহলে জীবন থেকে চারটে বছর মুছে দিতাম। 

ভবিষ্যৎ হয়ে থাকবো। এত ভালোবাসবো সব ভুলিয়ে দিবো। 

.

অর্থি জানে আদিত্য ছাড়বে না। সংসার টা এবার ভালোবাসা দিয়ে শক্ত করে গড়বে। হুম সমুদ্রের তীরে বালি দিয়েই গড়বে কিন্তু ভিত্তি শক্ত থাকবে৷ 

দমকা হাওয়ায় যেনো ভেংগে না যায়। 

আজ থেকে শুরু হবে নতুন এক পথচলা। নতুন করে বেঁচে থাকা।

.

.

সমাপ্ত


0 Comments:

Post a Comment