#বালির_সংসার
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
(পর্ব ৪ ও ৫)
.
.
#পর্বঃ৪
.
.
ছোট্ট অরুনীমা কে অর্থির কোল থেকে নিয়ে নিলো ডক্টর আদিত্য আহমেদ।
গ্রামের শুরুতেই কবরস্থানে নেওয়া হবে।
খুব বেশি কেউ না। অর্থির বাবা, ভাই, কাকা, হুজুর সাহেব আর আদিত্য।
এই কয়েকজন মিলেই জানাজা পড়ে দাফন করলো অরুনীমা কে।
ছেলেটা অর্থির মায়ের কাছে ছিলো। শুধু ভাবছিলো আচ্ছা? সত্যি কি আমার অভিশাপ লেগেছে? না! সে তো এমন চায় নি। কোন মা তার সন্তানের এত বড় ক্ষতি চায় না। অর্থির ছেলে যে তার অনন্য পাওয়া। সারাজীবন আগলে রাখবে।
.
.
দাফন শেষ করতেই দূর থেকে শোনা যাচ্ছে অর্থির চিৎকার।
আদিত্য ঠিক যে ভয়টা পেয়েছিলো তাই হলো।
অতিরিক্ত স্ট্রেস আর কান্নার কারণে অর্থির অবস্থা ভালো না।
রাস্তায় আসার সময় ঝাকুনি লেগেছে।
আল্লাহ জানে সেলাইয়ের কিছু হলো কি না?
.
.
সকালে ঘুম ভেংগে নিশিতা দেখে রুপ তার পাশে নেই।
কাউচের উপর ঘুমিয়ে আছে।
আচ্ছা? ও এমন কেনো?
নিজে থেকে কি কখনো কাছে আসতে পারে না? সবসময় কি জোড় করতে ভালো লাগে?
মাঝেমধ্যে ইচ্ছে হয় ওর হাত ধরে হারিয়ে যেতে।
প্রথম দেখাতে যে শুধু ছেলেরা প্রেমে পড়ে এমন নয়।
মেয়েরাও পড়ে। ঠিক যেমন অরিয়েন্টেশন ক্লাসের দিন নিশিতা পড়েছিলো।
।
স্বাভাবিক মতো লম্বা, গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা। চোখে আলাদা একটা মায়া। জিম করা বডি দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো আর মুখে হালকা দাড়ি তাও স্টাইল করে কাটা। চুল গুলো? উফফফ সেখানেই তো মরণ হলো।।
তারপর কিভাবে যেনো বন্ধুত্ব হয়ে গেলো।
বেস্ট ফ্রেন্ড। কিন্তু মনের কথা জানাতে পারেনি নিশিতা। তার আগেই এলো অর্থি।
আচ্ছা? অর্থি কি সত্যি নিজে এসেছিলো? না কি আমিই নিয়ে এসেছিলাম? এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে রুপের কাছে চলে এএসেছে খেয়াল করেনি।
মাথায় হাত দিতেই জেগে উঠলো রুপ।
অর্থির কপালে হাত দিয়ে দেখে নিলো জ্বর আছে কি না?
না এখন আর জ্বর নেই।
দেরি না করে বেরিয়ে পড়লো ক্লিনিকের উদ্দেশ্যে।। আজ যে তার প্রিয়ভাষিণীকে নিয়ে বাসায় ফিরতে হবে।
.
.
ক্লিনিকে এসে কেবিনে কাউকে না দেখে বেশ ঘাবড়ে যায় রুপ।
খবর নিয়ে সব টা জানার পর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।
কোন মুখে যাবে রুপ অর্থির সামনে?
কোথায় খুজবে? কি হলো? কিছু বুঝতে না পেরে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে রিসিপশনের এক পাশে।
কিছুক্ষণ পর লিফটে নামতেই খেয়াল হয় অর্থির ভাই এম্বুল্যান্স থেকে নেমে আসছে।
এম্বুল্যান্স এর ভিতর থেকে কোলে করে অর্থি কে নামালো আদিত্য।
স্ট্রেচারে শুয়িয়ে দিয়েই বললো দ্রুত নিয়ে যেতে।
.
ঠিক সে সময় ঘটলো বিপত্তি।
বিদ্যুৎ না থাকায় লিফট বন্ধ। স্ট্রেচারে করে ছয় তলায় উঠানো পেশেন্ট কে? সম্ভব না।
এত কিছু ভাবার সময় নেই। অনেক টা ব্লিডিং হয়ে গেছে। দ্রুত নিতে হবে।
ডক্টর আদিত্য কিছু না ভেবেই অর্থি কে কোলে নিতে উঠানোর সময় কেউ এসে তার হাত ধরে বলে
- আমার স্ত্রী! আমি নিতে পারবো।
.
রুপের মুখের দিকে তাকিয়ে আদিত্য কিছু বলতে নিয়েও নেয় না।
এখন সময় টা অধিকারের নয়, দায়িত্বের নয়। এখন সময় হলো এই পরী টা কে বাঁচানোর।
কিছুক্ষণ আগেই তো আদিত্য ছোট্ট একটা পরীকে নিজ হাতে দাফন করে এলো। সে এখন চায় না তার মিষ্টি পরী কে হারাতে।.
.
.
#পর্বঃ৫
.
.
সাদা বেড শিটের অনেক টা রক্তে লাল হয়ে গেছে । ব্যথায় মেয়েটা কুকড়ে যাচ্ছে ।
ইন্টারনাল ব্লিডিং বেশ ভালোই হয়েছে। কমপ্লিকেশন তো আগেই ছিলো। শরীরে রক্ত কম থাকায় জরুরী ভিত্তিতে অর্থীর শরীরে রক্ত দিতে হবে। ভাই, বাবা যেনো মরিয়া হয়ে উঠেছে। কি করবে? মা তো নাতি কে কোলে নিয়ে পাথর হয়ে বসে আছে। রুপ দাঁড়িয়ে আছে আইসিইউর সামনে।
আদিত্য দিশেহারা হলেও যথেষ্ট শান্ত রয়েছে। আচ্ছা পারবে তো সে তার ছোট্ট পরী টা কে বাঁচাতে?
.
ব্লিডিং কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। ১৯ তম ব্লাড ব্যাগ চলছে। যত দ্রুত সম্ভব ব্লিডিং বন্ধ করতে হবে।
.
রুপ শুধু তাকিয়ে দেখছিলো।খুব কান্না পাচ্ছে। বারবার না করেছিলো। কিন্তু মেয়েটা শুনেনি। রুপ তো চায়নি বাচ্চা! কেনো সব সময় জেদ করতো? কিন্তু যখন কন্সিভ করলো! সেদিন আলাদা অনুভূতি ছিলো। কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলা
" এই যে সিনিয়র চৌধুরী জলদি আপনার জুনিয়র চৌধুরী আসছে। আমি যে মা হতে চলেছি। "
.
রুপের হুশ ফিরে আদিত্য আহমেদ এর কথায়। অর্থির ভাইকে কিছু একটা আনতে বলছিলো।
রুপ- আমি যাচ্ছি।
আদিত্য - আয়ান তুমি জলদি যাও।
.
আয়ান চলে যাওয়ার পর
আদিত্য - এই দায়িত্ব টা যদি কাল রাতে দেখাতে! তাহলে আজ তোমার মেয়েও বেঁচে থাকতো আর অর্থির এ অবস্থা হতো না।
.
.
সারা রাত কেউ চোখের পাতা এক করতে পারেনি। আদিত্য সব সময় অর্থির পাশেই ছিলো।
সাদা একটা চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা। মুখে অক্সিজেন মাস্ক। খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো অর্থি কে জড়িয়ে ধরে কাদতে।কিন্তু সে তো তার অধিকার নয়।
সাদা তে সব সময় মেয়েটাকে ভালো লাগে আদিত্যর কিন্তু আজকের সাদা বড্ড বেশি ভয়ংকর।
কিছুক্ষণ পর পর আদিত্যর হাত স্পর্শ করছে অর্থির হাত।
শুধুই কি পালস চেক করার জন্য? না কি পরী টা কে ছোয়ার আশায়।
একজন সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় মায়ের যে পরিমাণ কষ্ট হয় যদি সৃষ্টিকর্তা মায়ের শরীরে ধৈর্য্য না দিতো তাহলে কোন নারী সন্তান কে জন্ম দিতে পারতো না।
তাই তো বলে মায়ের প্রসবকালীন সব যন্ত্রণা মুছে যায় যখন সে সন্তানের দিকে তাকায়।
দুইদিন সময় লাগে অর্থির উঠে বসতে।
কেবিনে শিফট করার পর রুপ সবাই কে অনুরোধ করে বাইরে চলে যেতে।
অর্থির মা বাচ্চাকে রুপের কোলে দেয়। অসুস্থ হওয়ার পর সে যে বাচ্চাকে দেখেনি পর্যন্ত। ছেলেকে পাশে শুইয়ে দিয়েই রুপ অর্থির বুকে মাথা রাখে।
বাচ্চাদের মতো কান্না করতে থাকে। শক্ত করে জড়িয়ে আছে সে।
অর্থি কখনো রুপ কে এভাবে কাদঁতে দেখেনি।
হ্যাঁ দেখেছিলো যেদিন রুপের বাবা মা একসাথে এক্সিডেন্টে মারা যায়। দাফন করে আসার পর খুব কেঁদেছিল রুপ।
সেদিন অর্থির বুকে প্রথম মাথা রাখে রুপ। সম্পর্ক ছিলো না কিছুই। তবুও যেনো রুপ ভরসা,সাহস সব খুজে পেয়েছিলো।
তারপর থেকেই তো ধীরেধীরে পথচলা।
.
.
এদিকে বাচ্চাটাও কান্না শুরু করে দিয়েছে।
ভাংগা ভাংগা গলায় দুর্বল অর্থি বলে....
- কি করছো? বাপ ছেলে মিলে কান্নাকাটি শুরু করে দিলা ক্যান?
শুনো, ছেলেকে আমার কোলে দেও। আর উঠো না!
.
রুপ উত্তর না দিয়ে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। সে ছাড়া যে আর কেউ নেই তার।
.
- আরে উঠো না! ছেলের গলা শুকিয়ে গেলো তো।
রুপ উঠে ছেলে কে কোলে দিয়ে অর্থির কপালে চুমু দেয়। অপরাধ বোধ যে কুড়েকুড়ে খাচ্ছে। বিনিময়ে অর্থি হাসে আর বলে
আমি তো একা পারবো না৷ মা কে পাঠাও না!
.
রুপ বেরিয়ে অর্থির মা কে পাঠিয়ে দেয়।লিফটের সামনে দাড়াতেই কয়েক সেকেন্ডের জন্য খুলে যায় দরজা।
সেই সময় হাত ধরে টান দিয়ে কেউ রুপ কে লিফটে নিয়ে নেয়। কিছু বুঝে উঠার আগেই তার আয়েত্তে চলে যায় রুপের ঠোঁট জোড়া।
রুপ বেশ বুঝতে পারে এ স্পর্শ শুধুই নিশিতার।
.
চলবে......
0 Comments:
Post a Comment