ঠাস......
কোমল হাতের শক্ত চড়টা খেয়ে আরহামের মুখটা অপর দিকে ঘুরে যায়।
ফর্সা গালে মেয়েটার ছোট ছোট আঙ্গুের দাগ উঠে গেছে হয়ত।
" কা পুরুষ। লজ্জা করেনা৷ এই গ্রামের জমি থেকে পুরো দেশের ২০ শতাংশ ফসল উৎপন্ন হয়। লজ্জা করছে না এত গুলো মানুষের রিজিক নষ্ট করতে। ভালো চান তাহলে চলে জান। আমাদেরকে আরও গভীরে যেতে বাধ্য করবেন না। "
মেয়েটার চিৎকার আরহামের কানে বাজছে।
আরহামকে চুপচাপ দেখে তার গার্ড রা পাশ থেকে এগিয়ে আসতে গেলে আরহাম হাতের ইসারা দেয়।
সবাই নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে,
আরহাম মাথা তুলে সামনে থাকা মেয়েটার দিকে তাকায়।
লম্বা চুল, মাঝারি ফর্সা, মায়াবী চোখ আর হালকা গোলাপি ঠোঁট।
পরনে সাধারণ জামা।
মেয়ের এমন কান্ডে অবাক হয়ে ছিল আজিজ সাহেব।
তিনি ঘটনার আকষ্মিকতায় চুপ হয়ে গেলেও পরে তিনি বুঝতে পারেন কত দুর পর্যন্ত খারাপ কাজ করে ফেলেছে তার মেয়ে।
" হৃদি মা কি করলি তুই। ক্ষমা চা৷ ক ক্ষমা করে দেও বাবা। বাবা আমি তোমার কাছে হাত জোড় করে মাফ চাইছি। আমি তোমার পা ধরছি। মাফ করে দেও। হৃদি অবুঝ মেয়ে। ভুল করেছে ফেলেছে বাবা। "
হৃদি বাবার এমন কথায় অবাক হয়ে যাচ্ছে। তবে সামনে থাকা ভয়ানক সিংহের মত ফর্সা, লম্বা মানুষ টা তাদের দিকে এগিয়ে আসছে।
তার বাবা হাত জোড় করে পা ভেঙে মাটিতে বসে পরেছেন।
" মাফ করে দেও বাবা। মাফ করে দেও হৃদি অবুঝ মেয়ে আমার ও সত্যি জানেনা এসব সম্পর্কে কিছু। "
হৃদি দেখে ওর বাবার সঙ্গে ওর চাচা রাও হাঁটু গেড়ে বসে পরেছে।
হৃদি দেখে আরহাম তার সামনে চলে এসেছে।
হৃদি নিজের অবস্থান থেকে সরবে তার আগেই আরহাম হৃদির চোয়াল টা শক্ত করে ধরে নিজের কাছে টেনে আনে,
" শ্বশুর বাবার সামনে কিস করলে বেহায়া পনা হয়ে যাবে। তাই ছেড়ে দিলাম। আমি কা পুরুষ কিনা সেটা না হয় আজ রাতে বেডেই বুঝতে পারবে জান। তোমার মত একজন কেই ত চাইছিলাম। আমার বেড ওয়ার্ম করার জন্য। অপেক্ষা করো জান। আজ সন্ধ্যায় বিয়ের পর তোমাকে কা পুরুষ না আসল পুরুষ সেটা বুঝিয়ে দেব। "
হৃদি যদিও একটা সাহসী মেয়ে। তার পরেও আরহামের ভয়ানক কথা শুনে হৃদির ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
কথা গুলো সবাই শুনতে পারবে এভাবেই বলেছে আরহাম।
আরহাম হৃদির গাল দুটো ছেড়ে দু কদম পিছিয়ে আসে,
"আজিস সাহেব শ্বশুর মসাইকে মাটিতে জামাই এর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে নেই। বুকে এসে কোলাকুলি করতে হয়। যাক কে ওসব এখন থাক। সন্ধ্যার জন্য তৈরি থেকেন। আর এই মেয়ের পা যদি আপনার বাড়ি থেকে এক পাও অন্য কোথাও যায়। তবে ওর পা দুটো কেটে আপনার বাড়িতে রেখে শরীর টা নিয়ে যাব। আসা করি বুঝতে পেরেছেন। "
কথাটা বলে আরহাম হাতে থাকা বন্দুক টা তার পাশের গার্ড কে দিয়ে নিজের কালো মার্সিডিস এ উঠে পরে।
আর সেখান থেকে একে একে ১২ টা গাড়ি বেরিয়ে যায়।।
ইটের ভাটায় ইট পুড়াবার সিজিন এটা।
এখন এই মুহুর্তে সেটাই হচ্ছে।
এর মাঝেই হৃদি আর তার বাবা চাচারা বসে আছে।
আজিজ রহমান কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।
তিনি উঠে হৃদিকে জড়িয়ে ধরেন।
" তোকে বলেছিলাম বাইরে না আসতে। কেন আসতে গেলি মা? "
" উনি তোমার কলার্ট ধরে রেখেছিল বাবা। "
" ধরত৷ মেরে ফেলত আমাকে। তোকেত এভাবে দেখত না। কি বলে গেল শুনলি না? আমি এখন কি করব আসিফ। আমার মেয়েটা। "
হৃদির চাচা আসিফ তিনিও কান্না করছেন। সবাই জানে এখন করার কিছুই নেই।
"ভাইজান। আমার সালির বাড়ি বান্দরবান। হৃদিকে সেখানে পাঠিয়ে দেই। "
" আরহাম খান। ওকে তুই চিনিস ভাই। ও কি আমার হৃদি কে ছেড়ে দেবে। "
" ভাইজান চেষ্টা ত করতে পারি। "
" আগে বাড়িতে চল নাহলে ওরা সন্দেহ করবে। "
" চলো ভাইজান চলো। "
,
,
( পদ্মা হৃদি, ভালোবেসে দাদি নাম রেখেছিল পদ্মা আর বাবা হৃদি কারণ বাবার হৃদয়ের মনি সে। সেই থেকে নাম পদ্মা হৃদি।
বাবা মায়ের এক মাত্র সন্তান।
বাবা মা বললে ভুল হবে। মা নেই হৃদির৷ বাবার কাছেই মানুষ।
বয়স মাত্র ১৭ বছর।সবে ইন্টার ফাস্ট ইয়ারের পরিক্ষা শেষ করেছে।
আজিজ রহমান একজন ইটের ভাটার মালিক সাথে গ্রামের মাতব্বর।
এই গ্রামের ফসল জমি গুলো অনেক ভালো উর্বর। চাষ হয় ভালো।
সেই জমিতে ফ্যাক্টরি বানাতে চায় একটা চাইনিজ কম্পানি।
যার ডিলাট পেয়েছে আরহাম খান৷ একজন বিখ্যাত পলিটিশিয়াল। মন্ত্রী আব্দুর রহমান এর একমাত্র ছেলে।
তবে মন্ত্রীর ছেলে হবার থেকে নিজের ক্ষমতা বেশি। শুধু এ দেশ নয় বিশ্বের প্রায় অনেক গুলো দেশের মধ্যে একজন বড় মাফিয়া সে।
তার ভয়ঙ্কর রূপ দেখলে যে কারোর আত্মা কেঁপে উঠবে।
সবাই এত ভয় পায় এই ছেলেটাকে।
পুলিশ তাকে কখনে গ্রেফতার করার সাহস দেখায় না।
সবাই ভয় পায়৷ ক্ষমতা এক দিনের নয়৷ ছেলেটা ছোট থেকেই এমন রগ চটা। আর সব থেকে বড় কথা ওর মুখের কথা কখনো মিথ্যা হয়না৷ একবার বলেছে যা তাই করে।
পৃথিবীতে কারোর সাধ্য নেই ওর মুখের কথাকে ফেলার।
আরহাম খানের বয়স ২৮ বছরের মত৷ তবে দেখতে কেন জানি কোরিয়ান দের মত সুন্দর। বাংলাদেশি কোরিয়ান মিশিয়ে কারণ তার মা একজন কোরিয়ান মহিলা। তার জন্ম সুত্রে সে কোরিয়ান নাগরিক।
এ কারণে পাওয়ার তার আরও একটু বেশি।
প্রথম দেখে ছেলেটাকে ইনোসেন্ট ভাবলে কেউ ভুল করবে না। কারণ সে এতটাই মায়াবী যে কেউ তার প্রেমে পড়ে যেতে বাধ্য।
এই গ্রামের মানুষের কাজই চাষা বাদ।
প্রায় ৩০০ ঘর চাষির পেটের ভাত কেড়ে নেওয়া হবে ওই জমিতে ফ্যাক্টরি বানালে।
আর ওই যে দেশের প্রায় ২০ শতাংশ খাদ্য এখানে উৎপন্ন হয়। সেটাও হবেনা৷। এসব জানতে পেরে সবাই আজিজ রহমানের কাছে এসে বলে৷ সে যেন আরহাম খানের সঙ্গে কথা বলে। সে গ্রামের মাথা৷ সে যদি তাকে বুঝিয়ে বলে তবে হয়ত কাজ হবে।
তবে এই প্রস্তাব প্রথম আরহামের সেক্রেটারি নিয়ে এসেছিল।
তার দ্বারা কাজ না হওয়ায় আরহাম নিজেই আসে এই গ্রামে।
এমনি মাথাটা তার গরম ছিল।
ছেলেটা বেশ বেপরোয়া।)
আজ সকালে,
আজিজ রহমান সকাল সকাল না খেয়েই বেরিয়ে আসে তার ইটের ভাটায়।
কারণ আরহাম খান আসবে আজ।
হৃদি এসব কিছু জানত না।
বাবা না খেয়ে বেরিয়েছে তাই হৃদি বাবার জন্য খাবার নিয়ে গেছিল।
তবে ওদের ভাটায় এত গুলো কালো গাড়ি দেখে ও ভীষণ অবাক হয়।
হৃদিকে দেখে আজিজ রহমান হৃদির হাত ধরে ওকে ইটের ভাাটার এক কর্মচারির ঘরে নিয়ে আসে,
" মারে তুই এখানে কেন এলি?"
" ও মা তুমি যে না খেয়ে এসেছো। "
" সে সব পরে হবে। মা তুই কথা দে এ ঘর থেকে বের হবিনা। "
" ঠিক আছে বাবা হবোনা। ".
আজিজ রহমান আর কোন কথা না বলে বেরিয়ে আসে।
,
আরহাম খান গাড়ি থেকে বের হয়।
" আপনি আজিজ রহমান? "
" জি বাবা আমি আজিজ রহমান। "
" চাচা দেখুন আমার কাজে কেউ বাধা দিক এটা আমি সহ্য করতে পারিনা৷ আপনি কি চান বলুন। কত টাকা চান। ওই ৩০০ ঘর কৃষক কে আমার পক্ষ থেকে ৩০০ কোটি টাকা দেওয়া হবে৷ ওরা ভালো থাকবে এত চিন্তা কিসের জন্য করছেন৷ "
" বাবা তুমিত জানো এই জমি উর্বর আর দেশের ২০ শতাংশ... "
আজিজ রহমান কে পুরো কথা বলতে না দিয়ে থামিয়ে দেয় আরহাম।
" হুস... বয়স হয়েছে চাচা আপনার। পরিবারের কথা ভাবুন এদের আমার কাছে ছেড়ে দিন। "
" কিন্তু বাবা। "
আরহাম এবার আজিজ রহমানে সার্ট ধরে নিজের দিকে টেনে আনে,
" আমি যা বলছি তাই করুন। আমার এত ফালতু সময় নেই। আপনাকে বোঝানোর। "
তবে এসব ঘর থেকে দেখছিল হৃদি।। তার বাবার এমন অপমান সে সহ্য করতে না পেরে সোজা গিয়ে আরহমানের গালে চড় বসিয়ে দেয়।
আসলে হৃদি আরহাম খান সম্পর্কে জানেই না।
সে কে কি করে।
সে শুধু জানে গ্রামের সবাই তার বাবাকে সম্মান করে। তবে এই ছেলেটা কেন তার বাবার সার্টে হাত দেবে।
,
,
এর পরের ঘটনা সবার জানা।
,
বাড়িতে এসে আজিজ রহমান হৃদিকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
" আমি কি করব এখন কি করব। ""
" ভাইজান আমি যা বললাম তাই করি। "
" আরহাম ভীষণ ভয়ানক আসিফ।ও মেরে ফেলবে সবাইকে। "
হৃদি ত ভয়ে বাবার বুকের মাঝেই নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে।
,
,
,
গ্রামে একটা বড় বাংলো বাড়ি আছে আরহাম খানের। আসলে এটা তার বাবার কেনা।
সেখানেই আসছে আরহাম।
লিভিং রুমের সোফায় বসে পায়ের পা তুলেছে সে।
এক জন সার্ভেন্ট তার পায়ের জুতো গুলো খুলে তাকে পানি খেতে দিল।
এমন সময় আরহামনে সেক্রেটারি বলে ওঠে,
" স্যার কিছু মনে না করলে এটা কথা বলি? "
" কি কথা? "
" না মানে মেয়েটা কে সত্যি বিয়ে করবেন?"
আরহাম খান চোখ খুলে তাকায় তার সেক্রেটারির দিকে।
ছেলেটা আরহামের ওমন দৃষ্টি দেখে ভয় পেয়ে যায়।
" মেয়েটা নয় ম্যাম বল। "
" স স সরি স্যার। ".
" ওর উপর নজর রাখতে লোক পাঠা। "
কথাটা বলে আরহাম তার রুমে চলে আসে।
কিন্তু তার সেক্রেটারি সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে।
" জীবনে স্যারকে এত রাগতে দেখিনি। আর কোন মেয়ের সঙ্গেও দেখিনি। এটা যদি স্যারের রাগ হয় তবে মেয়েটার কপাল পুড়ল। "
,
,
চলবে?
#মহীপতি👑
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা
#পর্ব_০১
0 Comments:
Post a Comment