#মহীপতি👑
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা
#পর্ব_০৪
খুব ভোরে না হলেও সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস আরহামের অনেক আগে থেকেই।
ঘুম থেকে উঠে জিম করা। নিজেকে ফিট রাখাটা বেশ ভালোই জানে সে।
তবে প্রতিটা রাতের ঘুমের সঙ্গে আজকের ঘুমের বেশ তফাত আছে।
আজকের ঘুমটা এত ভালো কোন ছিল সেটা জানেন আরহাম।
ঘুম থেকে উঠে বুকের মাঝে ছোট্ট তুলাট বস্তা টাকে দেখে ভালো লাগে আরহামের।
হৃদি ঘুম থেকে উঠলে সে লজ্জা পাবে। তাই আর লজ্জা না বাড়িয়ে আরহাম উঠে ওয়াসরুমে চলে যায়।
ফ্রেশ হয়ে রোজ কার মত তার জিম রুমে চলে যায়।
আরহামের যাওয়ার কিছুক্ষণ এর মাথায় হৃদির ঘুম ভাঙে।
ঘুম ভেঙে নিজেকে বিছনায় একা দেখে একটু শান্তির নিশ্বাস নেয় হৃদি।
আরহাম তার জামাটা খুলে পাশে রেখেছিল।
হৃদি দ্রুত জামাটা নিয়ে পরে নেয়।
এরপর ওয়াসরুমে চলে যায়।
ওয়াসরুমের সব কিছু আধুনিক ঠিক আছে৷ কিন্তু হৃদির ভয় করছে। ও যদি উল্টাপাল্টা কিছু করে তাতে যদি আরহাম কোন রিয়াক্ট করে।
কিছুক্ষণ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হৃদি ভাবল,
"কাল তোর বিয়ে হয়ে গেল হৃদি। তোর স্বামী হয়ে গেল একটা মানুষ। "
হৃদি নিজেকে বুঝায়। নিয়তি নিশ্চয়ই তার জন্য ভালো কিছু রেখেছে।
হৃদি ফ্রেশ হয়ে আবারো বিছনায় গিয়ে বসে।
বাইরে ঠান্ডা তার বেশ ঠান্ডা লাগছে।
কিছুক্ষণ পর হৃদি টের পায় রুমে কেউ এসেছে।
হৃদি সামনে তাকিয়ে দেখে আরহাম। জিম শেষ করে এসেছে।
কালো গেঞ্জি টা ঘামে ভিজে গেছে।
আরহামের চুল বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে।
এত সুদর্শন কিভাবে লাগছে তাকে।
" মিসেস খান গোসল করে নিন। কাল থেকে কিছু খান নি। চলুন কিছু খাবেন নিচে গিয়ে। "
" কিন্তু আমারত জামা নেই। "
আরহাম কাবার্ড থেকে একটা সার্ট আর প্যান্ট দেয় হৃদি কে,
" আপাতত এটা পরে নিন এরপর না হয় আমি ব্যাবস্থা করছি। "
হৃদি আরহাম কে রাগাতে চায়না৷ তাই মাথা নাড়িয়ে সায় জানিয়ে হৃদি চলে আসে ওয়াসরুমে।
আরহামও অফিস যাবে তাই অন্য রুমের ওয়াসরুম ব্যাবহার করে নেয়।
হৃদির তুলনায় সার্টটা হাঁটুর সামান্য নিচ পর্যন্ত পড়েছে।
আর প্যান্ট সে যে মাটিতে ১ হাত গড়াগড়ি খাচ্ছে।
হৃদি রুমে মাথা ঢুকিয়ে দেখে আরহাম নেই।
তাই ওভাবেই বেরিয়ে আসে।
আয়নার সামনে এসে প্যান্ট কে টাইট করে বাঁধে।
এরপর নিচ থেকে প্যান্ট ভাজ করা শুরু করে।
৫ বার বড়ো বড়ো ভাজ করে হৃদির পায়ের উপর পর্যন্ত বানায় প্যান্ট টাকে।
তবে এই পোশাকে কেমন মাতাল করা একটা ঘ্রাণ আছে।
হৃদি হাত থেকে বেড়ে থাকা সার্টের হাতাটা গুছিয়ে নেয়।
অন্য হাতে গুছাতে গিয়ে নাকের কাছে নেয়।
কি মিষ্টি ঘ্রাণ।
" ঘ্রাণ নেওয়া হলে নিচে এসো। "
হটাৎ করেই আরহামের কন্ঠ শুনে কেঁপে ওঠে হৃদি।
আরহাম কালো পোশাক পরে আছে।
ওভার সাইজ কালো কোর্ট আর লং নেক এর কালো গেঞ্জি।
ফর্সা শরীরে এত সুন্দর দেখাচ্ছে।
" পদ্মা। "
আরহামের মুখে নিজের নাম শুনে চমকে যায় হৃদি।
" জি। আ আপনি কিভাবে জানলেন আমার নাম? "
আরহাম শব্দ করে হাসে। তবে সেই হাসিতে গভীরতা ছিল।
হৃদির পশম দাঁড়িয়ে যায় আরহামের হাসির শব্দ শুনে।
" যাকে বিয়ে করেছি তাই নাম জানব না৷ "
" কিন্তু পদ্মা। "
" তোমার দাদি এই নামে তোমাকে ডাকত। এটা তোমার প্রিয় নাম তবে তোমার বাবার প্রিয় নাম যে হৃদি। তাই তুমি হৃদি শুনে অভ্যস্ত। "
হৃদি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ছেকেটা এত কিছু জানে। ঠিক আছে কোথায় আছি কি নাম এসব জানল। কিন্তু এসবত তাদের পারিবারিক কথা৷ এসব কিভাবে জানল।
আরহাম ধির পায়ে হৃদির দিকে এগিয়ে আসে। হৃদি পেছতে থাকে,
হৃদি এক সময় দেয়ালে ঠেকে যায়।
আরহাম হৃদির ডান গালে চুমু খায়।
হৃদি চোখ বন্ধ করে নেয়।
"ছোট একটা মাথায় এত প্রেশার না দেওয়াই ভালো। মিসেস খান। "
আরহাম পিছিয়ে এসে বলে,
" চলো নিচে। "
আরহাম বেরিয়ে যায়।
হৃদিও আরহামের পেছন পেছন নিচে চলে আসে।
,
মিস্টার খান বসে আছেন সোফায়। পাশেই মিসেস খানও বসে আছেন। মহিলা দেখতে অসম্ভব সুন্দর ।
৪৫ বছর বয়স তার হয়েছে সেটা তাকে দেখলে বুঝাই যাচ্ছে না।
মিসেস ইউন-সুহ বসে বসে নিজের ফোন টিপছেন।
" জাগি তোমার ছেলে কখন আসবে? "
" আমি জানিনা৷ ""
" কোথা থেকে কোন গেয়ো ভুত কে ধরে আনল আর তুমি মেনে নিলে। এসবত আমি মানতে পারছি না। "
" তুমি এত চিন্তা করো কিসের জন্য? তোমার ছেলে যাও রুমে গিয়ে ডেকে আনো। সেটাত পারো না। "
মিস্টার খান আর কোন কথা বলেনা।
তবে এমন সময় পেছন থেকে আরহাম বলে ওঠে,
" ওম্মা, আপ্পা তোমরা এখানে বসে কি করছো?"
" এই যে আমার ছেলে তোমার অপেক্ষাই করছিলাম। "
" আপ্পা আমার লেট হয়ে গেছে৷ মিস্টার চই বসে আছেন মিটিং রুমে। "
" বাট আরহাম তুমি কিভাবে কাউকে না বলে বিয়ে করে ঘরে তুলতে পারো। "
" এসব নিয়ে কোন কথা বলতে চাইনা৷ "
" কিন্তু আমি চাই। "
এর মাঝেই গুটি গুটি পায়ে সেখানে প্রবেশ করে হৃদি। হৃদি কে দেখে মিসেস ইউন সুহ এগিয়ে আসে,
" আরে মেয়েটা কি মিষ্টি। তোমার নাম কি মা? "
" হৃদি। "
" উম সুন্দর নাম। আমি তোমার বরের মা৷ শ্বাশুড়ি মা আই গেস৷ "
হৃদি একটু হাসে,
" উফ..... রোজির সঙ্গে তোমার বিয়ের কথা পাকা করেছি আমি। এখন আমি কি করব রোজি আসবে ত। "
" আসলে বলবা আমি বিয়ে করে ফেলেছি। সিম্পিল। "
" তোমার কাছে সিম্পিল আমার কাছে নয়৷ আমাদের ডিল টার কি হবে?"
" আপ্পা আমার সঙ্গে কেউ ডিল না করলে তার সমস্যা আমার নয়৷ "
কথাটা বলে আরহাম বেরিয়ে যায়।
" আরে বাবা খেয়ে যাবি না। "
" মুড নেই। পদ্মা তোমার দায়িত্ব ওম্মা। "
কথাটা বলে আরহাম চলে যায়।
হৃদি বাচ্চার মত সব কিছু পর্যবেক্ষণ করেছে। তবে কিছুই বলেনি।
" হৃদি চল মা তোকে খেতে দেই। "
হৃদি চুপচাপ মিসেস ইউন-সুহ এর সঙ্গে টেবিলে চলে আসে।
" হৃদি এটা খাওয়া শেষ কর। আমি কিচেন থেকে জ্যাম নিয়ে আসি। "
মিসো ইউন-সুহ কিচেনে চলে আসেন।
এসব মিস্টার খান এর একদম পছন্দ হচ্ছে না। তিনি রাগে ফুঁসছেন।
হৃদির খাওয়ার মাঝেই তিনি টেবিলে এসে বলেন,
" কত? কত টাকা হলে তুমি আমার ছেলের জীবন থেকে দুর হবে মেয়ে বলো। কত টাকা।"
হৃদি মিস্টার খানের এমন আচমকা আক্রমণে অবাক হয় সাথে ভয় পেয়ে যায়।
মিসেস ইউন সুহ রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন,
" সবাইকে নিজের মত মনে করোনা আসরাফ সবাই তোমার মত টাকার পিছে ছোটে না৷ হৃদি তোর ঘরে যা মা। "
হৃদি চুপচাপ করে আরহামের রুমে চলে আসে।
আজ বাবা কাছে থাকলে। হৃদি দৌড়ে বাবার কাছে গিয়ে বলত,
" বাবা জানো ওই আঙ্কেল টা আমাকে কি সব বলেছে। "
হৃদির বড্ড অসহায় লাগছে। ছোট থেকে বাবাকে ছাড়া কোথাও যায়নি। যেখানেই গেছে সবার ভালোবাসা পেয়েছে। কখনো খারাপ কথা শুনেনি৷ সে অভ্যাস হৃদির নেই।
খুবই কোমল হৃদি।
,
হৃদির কান্না গাড়িতে বসে দেখছে আরহাম। সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট সব দেখা যাচ্ছে।
আরহাম হৃদির ছবিতে স্পর্শ করে বলে,
" একটু শক্ত হতে হবে পদ্মা রানি। আমার কালো রাজত্বের রানি হতে হলে কান্নাকে বর্জন করতে হবে।
কষ্ট পেয়ে হলেও নিজেকে মানিয়ে নেও৷ কারণ আমার বন্দি খাঁচা থেকে তোমার মুক্তি শুধুমাত্র মৃত্যুর পরই সম্ভব। "
..
আরহাম ভীষণ সাঙ্ঘাতিক একজন মানুষ।
চলবে?
0 Comments:
Post a Comment