গল্পঃ #সে_ফিরে_আসবেই
৬ষ্ঠ_পর্ব
লেখকঃ #অনন্য_শফিক
আমি নীলাকে রাগত স্বরে বললাম,' তোমায় না বলেছিলাম আমার সামনে কখনো পড়বে না। কেন তবে আবার সামনে এসেছো আমার? কেন?'
নীলা আমার পথরোধ করে দাঁড়িয়ে গেল তখন। আর আমায় বললো,' তুমি আমার হাসব্যান্ড। তুমিই আমার এই পৃথিবীর সব। তোমার সামনে আসবো না তো আমি কার সামনে যাবো। তোমায় ছাড়া আমার যাওয়ার আর জায়গা কোথায় বলো?'
ওর কথা শুনে আমার রাগ আরো বাড়ছে। রাগে কাঁপতে কাঁপতে আমি বললাম,' আমি তোমার সব তাই না?আমায় ছাড়া তোমার যাওয়ার আর কোন জায়গা নাই তাই না? তো তমাল তোমার কে?'
নীলা এবার চুপ হয়ে যায়। তার গলায় এসে দলা পাকিয়ে কথাগুলো আটকে যায় কেমন!
আমি ধমক দিয়ে বলি,' বলো তমাল তোমার কে? তমালের সাথে কিসের সম্পর্ক তোমার?'
নীলা কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,' ওর নাম আর বলো না প্লিজ! আমার সামনে ওর নাম বলো না!'
নীলা কাঁদতে শুরু করেছে। খুব করে কাঁদছে ও।
এইসব কান্না দেখে আমার কষ্ট হচ্ছে না। রাগ হচ্ছে। এখনও তমালের জন্য ওর প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বাসঘাতক একটা। ওর উপযুক্ত শাস্তি একটাই।
ডিভোর্স। আমি তাকে ডিভোর্স দিবো!
নীলা কাঁদতে কাঁদতে আবার বলে,' ফাহাদ, ওর বিষয়ে অনেক কথা আছে। ব্যপারটা সহজ নয়। এবং আমি ইচ্ছে করলেই এখন শান্ত থাকতে পারছি না। কিন্তু তোমায় কথা দিলাম আমি তোমায় ঠকাবো না। তোমার সাথে প্রতারণা করবো না। আমি শুধু তোমারই আছি। আমায় ভুল বুঝো না তুমি। খুব শিগগিরই সব খুলে বলবো আমি!'
আমি এবার ওকে এক ধাক্কায় সরিয়ে দিলাম আমার সামনে থেকে।
নীলা তাল সামলাতে না পেরে বারান্দার গ্রিলে গিয়ে পড়লো। পড়ে গিয়ে কপালের একটা পাশ সামান্য কেটে গেল ওর। আমি রাগে আর তখন
ঘরের ভেতর গেলাম না। হন হন করে হেঁটে বাইরের দিকে ছুটে গেলাম।
বাসায় আবার ফিরলাম ঠিক তিন ঘণ্টা পর। তখন বিকেল। রোদের প্রখরতা
নীলা বাসায় নেই। মানহাও নেই। দরজা বাইরে থেকে লক করা।
কমেছে। বাইরে হলুদ মিষ্টি আলো। বাসায় ফিরে আমি অবাক হলাম। রাগে শরীরটা আমার খিটখিট করে উঠলো। ওর ফোনে ফোন করলে ও ফোন রিসিভ করলো না।
সারাটা বিকেল বারান্দায় বসে রইলাম।
নীলা ফিরলো সন্ধ্যা বেলায়। ও ফিরতেই আমি বললাম,' কোথায় গিয়েছিলে?'
নীলা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,' তমাল ডেকেছিলো একটু। এটাই শেষ যাওয়া। আর যাবো না কখনো। ওর সাথে আর দেখা করবো না!'
ওর মুখে তমালের নাম শুনে আমার রাগ আরো প্রখর হয়ে উঠলো। নীলার গায়ে কোনদিন আমি হাত তুলি নি। এবং স্ত্রীর গায়ে স্বামীর হাত তুলা আমার কাছে নোংরা একটি কাজ বলে মনে হয়! এই কথা ভাবতেও আমার ঘেন্না হয়। কিন্তু আজ আমার কী হলো জানি না। নীলাকে মানহার সামনেই ইচ্ছে মতো মারলাম। নীলা কাঁদেনি। চুপচাপ শুধু একটা কথাই বলে গেছে,' তুমি আমার কথাগুলো শুনো আগে। তারপর তোমার ভুল ভেঙ্গে যাবে!'
আমি এবার এক ধাক্কায় ওকে বারান্দার বাইরে নামিয়ে দিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিলাম ওর মুখের উপর। আর বললাম,' তোমার সাথে আমার সব সম্পর্ক আমি ছিন্ন করলাম। তোমার মতো পাপীর উপযুক্ত স্থান জাহান্নাম। যাও এখন তুমি জাহান্নামে যাও। যে সকালে ক্ষমা চেয়ে বিকেল বেলা আবার তমালের সাথে দেখা করতে চলে যায় তার কী কথা শুনবো আমি!' নীলা দরজায় কড়া নাড়তে লাগলো। আর কাঁদতে লাগলো খুব করে।
আমি ওকে ধমক দিয়ে বললাম,' এভাবে ভিকেরির মতো দাঁড়িয়ে থেকে দরজায় টোকা দিয়ো না। ভালোই ভালোই চলে যাও বলছি। তুমি না গেলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে আসবো!'
নীলা তখন কাঁদতে কাঁদতে আমায় অনুনয় করে বললো,' আমার কথাগুলো তুমি একবার শুনো প্লিজ! কেন ওর কাছে গিয়েছিলাম তা শুনো।' আমি রাগে গর্জন করে উঠে বললাম,' কেন গিয়েছিলে তা আমি ভালো করেই জানি। নিজের বাসায় ওকে ডেকে এনে যে মেয়ে চুমু খায় বাইরে
গিয়ে ওর সাথে এই মেয়ে কী করে না করে তা আমার ভালো জানা আছে। এখন যাও। ওর কাছেই যাও। আমার ঘরের দরজা তোমার জন্য চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। আর এরপরেও যদি তুমি আমার কথা না শুনো তবে আমি তোমায় আমার মুখেই তিনবার তালাক বলতে বাধ্য হবো।'
নীলা আর দাঁড়িয়ে রইলো না আমার এই কথা শুনে। তার তখন আর করার কিছুই ছিলো না। কাঁদতে কাঁদতে সে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল বাইরের দিকে।
মানহা কিছুই বুঝতে পারছে না। সে বোকার মতো তাকিয়ে এতোক্ষণ সবকিছু দেখে গেছে। কিন্তু রাত হলেও যখন ওর মা বাসায় ফিরলো না তখন সে কাঁদতে শুরু করলো।
আমি ওকে সান্তনা দিতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু সে আমার কোন কথাই শুনছে না। কোন জল খাবারও মুখে তুলছে না। রাতে না খেয়ে কাঁদতে কাঁদতেই সে ঘুমে ঢলে পড়লো।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই আবার মানহা তার মাকে খুঁজতে লাগলো। কিচেনে, ওয়াশরুমে, বেলকনিতে কোথাও সে তার মাকে খুঁজে না পেয়ে আমার কাছে এসে কাঁদো কাঁদো গলায় জিজ্ঞেস করলো,' বাবা, মা কোথায়?'
আমি ওকে সান্তনা দিলাম। বললাম,' ওর বন্ধুর বাড়ি গেছে।'
মানহা বললো,' কখন ফিরবে?'
'তাড়াতাড়ি এসে যাবে মা। তোমার জন্য স্যুপ করে দিচ্ছি খাও।'
আমি স্যুপ করে কাঁচের গ্লাসে করে ওর জন্য নিয়ে এলাম। সে স্যুপ ভর্তি গ্লাস আমার হাত থেকে নিয়ে মেঝেতে ঢিল মেরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ভেঙে ফেললো। তারপর আমায় রাগী রাগী গলায় বললো,' বাবা, তুমি ভালো না। তুমি পঁচা। তুমি খুব পঁচা। মাকে তুমি মেরেছো। বাসা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছো। আমিও চলে যাবো বাসা থেকে। এখানে আর থাকবো না।'
কী ভয়ংকর বিপদে পড়ে গেছি আমি। পরপর দুদিন মেয়েটার কোন খাওয়া দাওয়া নাই। এতো মহা মুশকিল! মেয়ে শুধু কাঁদে। ওর শরীর খুব দূর্বল হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে এবার কোন বড় অসুখ বাঁধিয়ে ফেলবে।
অপারগ হয়ে নীলাকে ফোন করি আমি। কিন্তু নীলার ফোন বন্ধ। এদিকে
মানহার অবস্থা ভালো না। কোন কিছু খাচ্ছে না। কান্নাও কিছুতেই বন্ধ
করছে না। তৃতীয় দিন সকাল বেলা ওকে নিয়ে গেলাম ওর মামা বাড়ি।
ওখানে যাওয়ার পর পড়লাম আরেক বিপদে। নীলা ওখানে যায়নি।
মানহার নানু জিজ্ঞেস করলেন,' কী হয়েছে? নীলা কোথায় গেছে?'
আমি কী বলবো কিছু বুঝতে পারছিলাম না।
মানহা তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো,' বাবা মাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। মাকে অনেক মেরেছেও।'
আমার শাশুড়ি কথাটা শুনে হা হয়ে গেলেন একেবারে। তারপর ভয়ে ভয়ে বললেন,' ফাহাদ, এসব কী বলছে মানহা? নীলা এখন কোথায়? কেন এমন করেছো ওর সাথে? নীলার কী দোষ ছিল? আমায় কেন আগে জানালে না কিছু?'
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,'মা, আপনার মেয়ে আমার সাথে প্রতারণা করেছে। এর বেশি আমি কিছু বলতে পারবো না।'
মা তখন ঝাঁজালো গলায় বললেন,' বলতে তো হবেই। সব বলতে হবে।
আর আমার মেয়েকে বের করে এনে দিতে হবে। নয়তো এর ফল ভয়াবহ হবে। আমি তোমায় সহজে ছেড়ে দিবো না। তাছাড়া মানহার যা অবস্থা এতে যে আরেকটা ভয়ংকর কিছু ঘটতে যাচ্ছে তা আমি টের পাচ্ছি আগে ভাগেই। এখন বলো আমার মেয়ের অপরাধ কী ছিল? কেন এসব করেছো তুমি?'
আমি আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। তমালের সাথে ওর ঘটে যাওয়া বিষয়টা খুলে বললাম।
মা শুনে চোখ বড় বড় করে ফেললেন। আর আটকে আসা গলায় বললেন,' তমাল! তমাল কোথা থেকে এলো?ও তো সাত বছর আগেই খুন হয়েছে।'
মার মুখ থেকে এই কথা শুনে আমার শরীরের সবগুলো রুমকূপ কাঁটা দিয়ে উঠলো। মাথা থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত সবটা শরীর ঘামে ভিজে যেতে লাগলো।
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,' মা কী বললেন আপনি? তমাল খুন হয়েছে মানে? কে খুন করেছিল ওকে? আর কেনইবা খুন করা হয়েছিল? তমাল আসলে কে? নীলার সাথে ওর কী সম্পর্ক? আর ও যদি সাত বছর আগেই খুন হয়ে থাকে তবে ফিরে এলো কীভাবে আবার?'
#চলবে
0 Comments:
Post a Comment