গল্প বালির_সংসার পর্ব ৯ থেকে ১২

 #বালির_সংসার

#সৌরভে_সুবাসিনী(moon) 

(পর্ব ৯ থেকে ১২)

.

#পর্বঃ ৯

.

.

স্কুলে সবাই জেনে গেছে আদিত্য অর্থির বয়ফ্রেন্ড। 

পাকনা পোলাপান দের কিছু বলতে হয় না। একাই বুঝে। 

অর্থি যেনো দিন রাত শুধুই আদিত্য কে চাই। 

অর্থির মা বাবা কিংবা আদিত্যর ফ্যামিলি কারো কোন সমস্যা নেই। 

দেখতে দেখতে অর্থির ফাইনাল টেস্ট চলে এলো৷

স্কুলে বসে কথা হচ্ছিলো বান্ধুবীদের। 

- আদিত্য ভাইয়া তোকে কিস করেছে,? 

- কেনো? তা করবে কেনো? 

- বাহ্ রে তোর বয়ফ্রেন্ড আর কেনো? 

- উনি আমার বয়ফ্রেন্ড হবে কেনো? মাথা গেছে? 

- আমরা বুঝি। থাক বলতে হবে না। দেখিস আবার যেনো ভ্রমরা মধু খেয়ে উড়াল না দেয়। 

.

সেসময় আদিত্য চলে আসে। আদিত্যর বাইকে উঠে আজকে কাধে হাত রাখতে অস্বস্তি হচ্ছে। আদিত্য খেয়াল করেই জোড়ে ব্রেক কষে। অর্থি হুড়মুড়িয়ে আদিত্যর উপরে পড়ে। 

- সমস্যা কি? আদিত্যদা 

- তোর সমস্যা কি? 

অর্থি সব বলে। আদিত্য কিছু বলেনা। 

সেদিন থেকে আদিত্য অর্থিকে দূরে দূরে রাখছে। 

অর্থি বিষয় টা বুঝেও কিছু বলে না। এখন আর সারা রাস্তা অর্থি আদিত্য কে কথার জুড়ির গল্প বলে না। দেখতে দেখতে ১৩ দিন পার হয়ে গেলো। এক্সাম শেষ। আদিত্য বসে বসে পড়ছিলো। 

অর্থি আজ শাড়ি পড়েছে। 

চুপচাপ এসে আদিত্যর বিছানায় শুয়ে পড়ে। আদিত্যর রাগ ভাংগানোর এর থেকে উপায় পায়নি সে। অর্থি কে এতদিনে একবারো আদিত্যর রুমে আসতে দেখেনি। 

খুব ক্লান্ত ছিলো অর্থি। এক্সাম দিয়ে। তারউপর বাহিরে ঠান্ডা পড়েছে। 

বিছানায় শুতেই ঘুমিয়ে গেছে। 

অর্থি কে ছাড়া আদিত্যর থাকতে কষ্ট হচ্ছিলো। কিন্তু কখনো তো ওকে ওভাবে স্পর্শ করেনি। চাইলে সে অনেক কিছু পারতো। কিন্তু তাও মেয়েটা কেনো এমন কথা বললো।

সিগারেট ফেলে দিয়ে আদিত্য বিছানায় যেতেই অর্থি কে দেখে চমকে যায়। 

চুলগুলো এলোমেলো মুখে ছড়িয়ে আছে। শাড়ী টা একটু উপরর উঠে সাদা ধবধবে পা বেড়িয়ে আছে।

এইমেয়ে টা নিজের সর্বনাশ নিজেই ঢেকে আনবে। এমনিতেই মেজাজ ভালো না তার উপর এই মেয়ের এসব। 

বাচ্চা মেয়ে কিছুই বুঝে না আসে পাকনামি করতে। কোলে তুলে নিতেই আবার কি যেনো হলো।

বেশ খানিকটা জোড়েই খাটের উপর ফেলে দেয় অর্থি কে। 

ঘুম ভেংগে যায়। দেখে আদিত্য বারান্দায় দাঁড়ানো।

মাথাটা বেশ ঝিমঝিম ধরছে। 

উঠতে গিয়ে শাড়িতে পারা লেগে পড়ে যায়। আদিত্য আসেনা। 

অর্থির কানে শুধু বাজতে থাকে 

- তোমার বাসায় আছি বলে কিন্তু তোমার আয়া না। যে তোমার সব আমাকে করতে হবে। তুমি কি সত্যি ঘুমের মধ্যে হাটো না অন্য কিছু? প্রতিদিন ড্রামা। ইউজলেস ফেলো। মাঝরাতে ঢং। যত্তসব। 

.

আদিত্য ইচ্ছে করেই এমন টা করে। 

দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এভাবে থাকলে নিজেকে কন্ট্রোল করা দায়। কিন্তু সে চায় না তার ভালোবাসার মানুষকে অপবিত্র করতে। 

.

.

অর্থি আর আদিত্যর ঘরে যায় না। কিন্তু অদ্ভূত ভাবে ঘুমে'র মধ্যেও সে এখন আর যায় না। 

সিড়ি দিয়ে নেমে চুপচাপ রান্না ঘরে শুয়েছিলো। 

বাসার সবাই এটা নিয়ে চিন্তিত। কারণ এমন টা হলে যেকোন সময় মেইনগেটের বাহিরেও যেতে পারে। 

.

সবার সমস্যার সমাধান অর্থি নিজেই দেয়। 

- আমাকে তালা মেরে রাখো। আমি চাইলেও বের হতে পারবো না।অর্থির কথাতে কেউ রাজি হয় না। আদিত্য বুঝে তার উপর রাগ করেই এসব বলছে অর্থি। 

মেয়ের জিদের কাছে হার মানে সবাই। অর্থি খাবারের টেবিল ছেড়ে উঠে যায়৷ 

- আমার খাবার টা পাঠিয়ে দিও। যেহেতু এক্সাম তাই সারাদিন রাত সবসময় ঘরেই থাকবো। পড়াশোনা হবে আর কোন ঝামেলা হবে না। 

.

আদিত্যর বেশ খানিক টা রাগ হয়। এটা কেমন কথা? আংকেল মেনে নিলো কেনো? মেয়ের জেদ তাই কি মানতে হবে? 

.

আজ প্রায় এক মাস যাবত অর্থি নিজের রুমেই থাকে। বের হও না। টিউটর এসে পড়িয়ে যায় কিন্তু ও বের হচ্ছে না। 

মেয়েটাকে বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছে আদিত্য। 

গভীর রাত গুলোতে যখন অর্থির পড়ার শব্দ আসে না তখন বাকী রাত সিগারেটের সাথে কাটে। 

দেখতে দেখতে কেটে যায় আরো এক মাস। 

অর্থি কে না দেখতে পেয়ে আদিত্য পাগলপ্রায় হয়ে উঠেছে। 

ওর ঘুমন্ত চেহারা যে আদিত্যর ঘুমের ঔষধ। 

.

সেদিন অর্থির বিদায় অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা। 

হালকা আকাশী থ্রিপিস, খোলাচুলে বেরিয়ে এলো অর্থি।

মেয়েটাকে দেখে আদিত্যর বুকের ভিতর টা মোচড় দিয়ে উঠে। 

চোখের নিচে কালী, শুকিয়ে গেছে। 

কোন কথা না বলে চলে যায় আদিত্যর সাথে। রাস্তায় কোন কথা বলেনি।

ফিরে এসে আবার রুমে চলে গেছে। 

নাহ্! আজ রাতে আদিত্য আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। রাত ১ টার দিকে তালা খুলে রুমে গিয়ে দেখে মেয়েটা খাটের নিচে শুয়ে আছে।হাত টা হ্যান্ডকাফ লাগানো। 

হাত টা নীল হয়ে গেছে। রাতে যেনো অন্য কোথাও না যায় এর জন্য এই অবস্থা?

আগে উঠো তারপর এই ফালতু জিনিস কে এনে দিয়েছে তার ব্যবস্থা করবো। 

বলে আদিত্য কোলে নিয়ে খাটে শুয়িয়ে দেয়। মেয়েটা সারাদিন কিছুই খায়নি। খাবার টাও ওমনি পড়ে আছে। 

নিজেকে খুন করতে ইচ্ছে করছে।

ঘুম ভাংগার পর অর্থি আদিত্য কে দেখে আবার ঘুমাতে যাওয়ার সময় চোখ তুলে তাকায়! 

আপনি? এখানে কেনো? যান এখান থেকে। 

- যাওয়ার জন্য আসিনি! থাকবো বলে এসেছি। 

- মানে? কিছুই না। সাইডে চাপো বসতে দাও। আর তুমি ঘুমাও তো। 

.

পরদিন সকালে আংকেলের সাথে কথা বলে আদিত্য। এবার আদিত্যর জেদের কাছে অর্থি হার মানে।

.

বারন্দায় দাঁড়িয়ে ঠান্ডা বাতাসে জমে যাচ্ছিলো অর্থি। 

এক্সাম টেনশনে ঘুম হারাম৷ এমনিতেও ঘুমাতে চায় না। কি একটা বাজে অভ্যেস। যেদিন টেনশন অথবা মন খারাপ থাকলে এমন হয়।

.

হঠাৎ নিজের কোমরের দুইপাশে দুই হাতের স্পর্শ অনুভব করে।

আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে পিছনে দাঁড়ায় আদিত্য। 

- এই পিচ্চি! তুমি তো লম্বা হয়ে গেছো। 

অর্থি কিছু বলেনা। আদিত্য জড়িয়েই থাকে। অর্থি ছাড়িয়েও যায় না। 

- মন খারাপ? 

- আপনি চলে যান। 

- যাবো বলে আসিনি। 

- কিন্তু যেতে হবে। 

- উহু। সেদিন এভাবে জড়িয়ে নেইনি বলেই তো এত রাগ। 

- আমি রাগ করিনা। 

- তাহলে! এত নাটক কেনো? 

- আপনার গার্লফ্রেন্ডের কাছে যান। আমার কাছে কি? 

.

এতক্ষণে অভিমানের কারণ বুঝে। 

কিছু না বলেই আদিত্য গান ধরে 

.

মেঘ পিয়নের ব্যাগের ভেতর মন খারাপের দিস্তা,

মন খারাপ হলে কুয়াশা ধোয় ব্যাকুল হলে তিস্তা।

মন খারাপের খবর আসে------- মন খারাপের খবর আসে,

বন পাহাড়ের দেশে, চৌকনো সব বাক্সে, যেথায় যেমন থাকে সে।

মন খারাপের খবর পড়ে, দারুণ ভালবেসে ---------

বাগান শেষে সদর দুয়ার, বারান্দাতে আরাম চেয়ার।

গালচে পাতা বিছানাতে ছোট্ট রোদের ফালি।

সেথায় এসে মেঘ পিয়নের সমস্ত ব্যাগ খালি।

মেঘ পিয়নের ব্যাগের ভেতর মন খারাপের দিস্তা,

মন খারাপ হলে কুয়াশা ধোয় ব্যাকুল হলে তিস্তা।

.

আদিত্য অর্থি কে ধরেই আছে। বাহিরে বৃষ্টি পড়ছে। 

অর্থি! এই পিচ্চি! 

ঘুমিয়ে গেলে না কি? উহু! 

জেগেই আছে। আদিত্য কিছু না বলেই উঠিয়ে নেয়। 

- আচ্ছা! আদিত্য দা আমাদের সম্পর্কের নাম কি? তুমি কি একটু স্বার্থপর হতে পারো না। 

.

.

#পর্বঃ ১০

.

.

দেখতে দেখতে কেটে যায় আরো তিনটে বছর। 

অর্থির প্রশ্নের উত্তর আজো আদিত্য দেয়নি। একবারে দিবে। ভালোবাসি বলেও নি। অর্থি এখন আর জিজ্ঞেস করে না। সংসারের মাঝেই ছোট্ট একটা সংসার সাজিয়েছে অর্থি।সব আদিত্য কে নিয়েই। ভার্সিটি আদিত্য নিয়ে যায়। নিয়ে আসে। ওদের মেলামেশা তে দুই পরিবার দ্বিমত করেনি। দুই বন্ধু সম্পর্কে জড়াবে এতে সবাই খুশি কিন্তু এখনো কোন কথা হয়নি। সবাই বুঝে তাইতো এত দিনেও কোন ঝামেলা হয়নি। আদিত্য অর্থি কে নিজের মতো করে গড়ে নিয়েছে। খুব ভালোবাসে কিন্তু কখনো বলেনা। ভালোবাসি কথাটা বলতেই হবে এমন তো নয়। 

আগামীকাল রাতের ফ্লাইটে আদিত্য ২ বছরের জন্য অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে। 

এই বিষয়ে আগ্রহ বেশি ছিলো অর্থির কিন্তু এখন সব থেকে চুপচাপ সে নিজেই৷ 

মাঝের তিনটি বছর অনেক কিছু হয়েছে কিন্তু পালটায় নি আদিত্য। 

অর্থির নিস্পাপ ঘুমন্ত চেহারার কাছে বার বার পরাজিত হয়েছে ভিতরের কামুক পুরুষ টা।

বারান্দায় রকিং চেয়ারে বসে সিগারেট খাচ্ছিলো। 

আদিত্য দেখতে আগের থেকে আরো বেশি সুঠাম সুন্দর দেখতে। 

অর্থি কম যায় না। একটু লম্বা হয়েছে। কিন্তু বুদ্ধি আগের মতই। 

আদিত্যর পিচ্চিই আছে। 

এলোমেলো চুলে এসে আদিত্যর সামনে দাঁড়ায়। 

বুঝাই যাচ্ছে কান্না করেছে। 

কিছু না বলেই চুপচাপ আদিত্য কোমর জড়িয়ে কোলে উঠিয়ে নেয়। 

অর্থির পুরোভর আদিত্য উপর। চুপচাপ আছে।

- সিগারেট টা ফেলো।

.

আদিত্য বাধ্য ছেলের মতো তাই করে। আদিত্যর বুকে মাথা রেখে 

অর্থি বা হাতের বড় বড় নখ দিয়ে আদিত্যর হাতে কিছু একটা লিখছে। 

-অর্থি? 

- হুম! 

- আজ রাত পরেই চলে যাবো। 

অর্থি এবার শক্ত করে ওর হাত ধরে। 

- আজ রাতে যদি আমি একটু স্বার্থপর হই মেনে নিবি?

অর্থি কিছু বলেনা। আদিত্য ওকে উঠিয়ে দিয়ে হাতে শপিং ব্যাগ দেয়। 

অর্থি দেখে শাড়ি।সেদিনের পর থেকে আর শাড়ি পড়েনি।আদিত্যর আবদার দেখে সেইদিনের কথা মনে পড়ে গেলো। কি বাচ্চামি টাই না করেছিলো। 

- আজকেও কি আমার সামনেই চেঞ্জ করবি? 

- সেদিন করেছিলাম তুমি কিছু দেখেছিলে? 

- আমার চোখ বন্ধ ছিলো। 

- আয়নাতে আমি সব দেখেছি। কিন্তু সেদিন শুধু শাড়ি পাল্টেছি। আজ পারবো না।

.

কিছুক্ষণ পর অর্থি এলো। আদিত্য আবার সিগারেট হাতে নিয়েছে। অর্থি ছাড়া থাকতে কষ্ট হয়। 

- আবার? 

- সরি। খুব সুন্দর লাগছে। 

- পেত্নীরা সুন্দর হয় না। 

- কিছু চাইলে দিবি? 

- কি?

- তোর ওই ঠোঁটের অধিকার। 

অর্থি কিছু বলেনা। অবাক বেশি হয়। আদিত্যদা কখনো এমন কথা বলেনি৷ কখনো না। ঘুমন্ত অর্থি নিজেকে কতবার আদিত্যর বুকে পেয়েছে। হিসেব নেই৷ 

কিন্তু আজ কি হলো? 

.

.আদিত্য কিছু না বলেই কোমর জড়িয়ে নেয়। 

অর্থি আদিত্যর পায়ের উপর দাড়াতেই আদিত্য দেরি করেনা। অর্থির ঠোঁটে যাদু নয় নেশা আছে। সিগারেটের থেকেও অধিক।

কিছুক্ষণ পর আদিত্য ছেড়ে দেয়। 

আদিত্যর বুকের উপর ঘুমন্ত অর্থি কে দেখে পার হয়েছিলো সারা রাত। 

.

.

.

অর্থির ঘুম ভেঙে গেলে দেখে আদিত্য হাত ধরে বসে আছে।

ঘুমন্ত চেহারায় বারবার অর্থি প্রেমে পড়ে।

কিন্তু এখন আর এসব মানায় না। 

আদিত্যদা! কেনো তুমি আমাকে সেদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলে? কেনো সেদিন আমার কথা বিশ্বাস করোনি! 

.

বাচ্চা টা কেদে উঠে। আদিত্যর ঘুম ভাংগে। এতক্ষণ তাহলে সে অতীত হাতড়ে বেড়াচ্ছিলো যা শুধুই মরীচিকা। 

.

.

সারা রাতেও রুপ নিশি কে বুঝাতে পারেনি। 

কিন্তু এখন আর হয় না। অর্থি যে তার দায়িত্ব। আজ রুপের জন্য মেয়েটার এই অবস্থা। 

ভালোবাসা ত্যাগ করা যায় কিন্তু দায়িত্ব যায় না। 

পুরুষ মানুষ পৃথিবীতে এমন এক প্রাণী যারা চাইলেও মন খুলে কাদতে পারে না। 

নিশি তার প্রথম ভালোবাসা। সব ঠিকঠাক চললে আজ অর্থির জায়গা তে নিশি থাকতো। 

কিন্তু কেনো এমন হলো? নিশির প্রশ্নের উত্তর রুপের কাছে নেই৷

বিধাতা না নিয়তি কে খেলছে এই জীবন গুলো নিয়ে? 

.

ফোনের রিংটোন বাজছে। রুপ ফোন হাতে নিয়ে দেখে আদিত্যর কল। 

- হ্যালো! ডক্টর। অর্থি ঠিক আছে? 

- জ্বী। কিন্তু আপনি পারলে আসুন। কিছু কথা ছিলো। 

- এনিথিং সিরিয়াস! 

- বলতে পারেন। 

- প্লিজ বলুন। 

- সামনাসামনি বলবো। 

- যতটা দ্রুত সম্ভব আমি আসছি। প্লিজ অর্থি কে দেখে রাখবেন। 

.

আদিত্য কল কেটে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো। এই ১০ দিন সে বাসার দিকে যায়নি। অর্থিকে নিয়েই বাসায় ফিরছে। 

.

অর্থি কে বাসায় নিয়ে আসা হয়। 

দোতলায় অর্থির রুমে যেতে হলে সিড়ি বেয়ে উঠতে হবে। তাই আদিত্য চুপচাপ অর্থি কে উঠিয়ে নেয়। আজো অর্থি আদিত্যর স্পর্শে কেপে উঠে। ইচ্ছে করছিলো চিৎকার করে কেদে আদিত্য কে জিজ্ঞেস করতে 

- কেনো তার সাথে এমন করলো? এই সে তার পিচ্চি কে চিনেছিলো?

.

কি রে অর্থি? আদিত্যদার কোলে উঠার অভ্যেস টা এখনো গেলো না? রুপ ভাইয়া কে বলতি কোলে নিতে। এবার তো আমার স্বামীকে ছাড়। এই সিড়ি বেয়ে উঠতে মরে যাবি না। 

.

.

#পর্বঃ ১১

.

.

কিরে অর্থি? আদিত্যদার কোলে উঠার অভ্যেস টা এখনো গেলো না? রুপ ভাইয়াকে বলতি কোলে নিতে? এবার তো আমার স্বামীকে ছাড়। এই সিড়ি বেয়ে উঠতে মরে যাবি না। 

.

.

আদিত্যর বুক থেকে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে রুশা কথাগুলো বলছে। ওর খালাতো বোন। 

স্বামী? রুশার স্বামী? কথাটা শুনে আদিত্যর বুকের শার্ট টা খুব জোরে খামছে ধরেছে। 

আদিত্য দা বিয়ে করে নিয়েছে? অহ্! 

.

রুশা- কি চিন্তা করিস? 

অর্থি- কিছুনা। হুম যেতে পারবো। 

রুশা- তাহলে যা! আদিত্য দা ওকে নামিয়ে দাও। 

অর্থি- আমাকে নামাও আদিত্য দা। আমি যেতে পারবো। 

.

এতক্ষণ অর্থি আদিত্যর বুকের সাথে মিশে ছিলো। তাই বুঝেনি। চোখ তুলে তাকাতেই দেখে আদিত্যর চোখ লাল হয়ে গেছে। কোন কারণে সে প্রচন্ডরকম রেগে আছে। 

রুশার কথার পাত্তা না দিয়ে আদিত্য অর্থি কে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। 

আর অর্থি বলছে

- আমায় নামাও আদিত্য দা। আমি যেতে পারবো। আর নিজের বউয়ের সামনে অন্য মেয়েকে কোলে নেওয়া ঠিক না। তাছাড়া এটা ভালো দেখায় না। 

বিয়ে করেছো বলোনি তো। যাই হোক তোমরা খুব সুখী হবে। অনন্ত পবিত্র মেয়েকে পেয়েছো। আর যাই হোক বিয়ে নামক সম্পর্কে তো অপবিত্র মেয়ে কে মেনে নেওয়া যায় না। 

.

শেষের কথায় আদিত্য থমকে দাঁড়ায়। বেশ বুঝতে পারে আদিত্যর কথা ওকেই ফিরিয়ে দিলো। 

আদিত্য রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। অর্থির হাত পা কাপছে। এটা নতুন কিছু না। হুটহাট কোন শকিং খবর পেলে মেয়েটা এমন করে।

আরো কিছু বলতে নিলেই 

আদিত্য সুযোগ না দিয়ে ঠোঁট রাখে অর্থির দুই ঠোঁটে। 

সারা শরীর কাপুনি দিয়ে উঠে অর্থির। কিন্তু আদিত্য ছাড়ে না। অর্থি নিজেকে ছাড়িয়ে নিতেই পারে না।কিভাবে পারবে? ও তো এখনো আদিত্যর কোলেই আছে।

.

বেশ খানিকটা সময় পার হয়ে গেলেও অর্থি কে ছাড়ার নাম নেই আদিত্যর। 

মনে হচ্ছে কত জনমের পিপাসা ছিলো। আজ সব শোধ করে নিচ্ছে সে। 

.

দরজায় বেশ খানিকক্ষণ যাবত ধরে কড়া নাড়ছে রুশা। 

সেদিকে কোন খেয়াল নেই।

আদিত্য অর্থিকে বিছানায় নামিয়ে দিতেই মুখ ডুবালো ওর গলায়। কিছুক্ষণ পর অর্থি আদিত্য কে থামিয়ে কাপা কাপা স্বরে বলে 

- আমায় এভাবে শেষ করে দিও না। আদিত্য দা! প্লিজ! দরজা খুলো। তোমার বউ দরজার বাহিরে। 

.

আদিত্যর চোখ আবার লাল হয়ে গেলো। অর্থি কে ছেড়ে দরজা খুলেই দেখে নার্স, রুশা দাঁড়িয়ে আছে।

নার্স কে উদ্দেশ্য করে আদিত্য বলে 

- ম্যাম কে ফ্রেশ হতে সাহায্য করুন। গোসল করাবেন না। শুধু শ্যাম্পু করে দিবেন চুলে। 

.

.

রুশার হাত ধরে নিয়ে সাথে সাথে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আদিত্য। 

- আমি তোর স্বামী? আমি তোর স্বামী না! বিয়ে ছাড়া অন্য জন কে স্বামী বলতে বাধে না? আর বলেছি না আদিত্য দা বলে ডাকবি না। ওই ডাক শুধুই অর্থির। তোর সাথে শুধু আমার বিয়ের কথা হচ্ছে। বিয়ে না। 

লিমিট ক্রসের চেষ্টাও করবি না। তাহলে খুন করতে আমার হাত কাপবে না। 

.

.

রুশাকে কথাগুলো বলেই আদিত্য নিজের রুমে চলে গেলো। লম্বা শাওয়ার নিয়ে ফিরে এসে সিগারেট ধরাতেই নার্স এসে বললো 

- স্যার! ম্যাম বেবির কথা জিজ্ঞেস করছে। কিছু খায়নি। মেডিসিন দিতে হবে। যদি একটু....... 

.

.

আদিত্য রুমে এসে দেখে অর্থি শুয়ে আছে। 

নার্সকে বলে, আপনি নিচে বসুন। আমি দেখছি। 

.

অর্থি হালকা ঘুমে রয়েছে। নিজের উপর হালকা ভর অনুভব করে তাকানোর আগেই অর্থির দুই ঠোঁট আদিত্যর দখলে। 

পৃথিবীর সব উপেক্ষা করার শক্তি থাকলেও আদিত্য কে বাধা দেওয়ার শক্তি কেনো সে পাচ্ছে না? শরীর ভালো না। আর রুপ কে সে ঠকাচ্ছে৷ খুব চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করে।নিজের উপর ঘেন্না হয় অর্থির। আদিত্য অতীত,রুপ তো বর্তমান। আদিত্য দা তো এমন ছিলো না। কেনো এমন করছে? 

.

.

আদিত্যর ঠোঁট তখন অর্থির গলায়। কামিজের কাটার ভিতর দিয়ে কোমরে চাপ দিতেই অর্থি চিৎকার দিয়ে উঠে। 

আদিত্য হুশে ফিরে। কি করছিলো সে? 

দ্রুত উঠে বসে উপর থেকে কম্বল সরিয়ে নিতে নিতে বলে 

- বাবু আমি সত্যি! খেয়াল ছিলো না। ব্যথা পাইছো তুমি? ড্যামেড! কিচ্ছু হবে না। আমি আছি তো। আমার একটু খেয়াল ছিলো না। 

কি করবো? তোকে দেখে আমার মাথা ঠিক ছিলো না।

তিন বছর পর পেয়েছি। 

.

- আমি ঠিক আছি। 

.

এবার আদিত্য এসে অর্থির পাশে বসে। 

কম্বল টেনে দিতে গিয়ে দেখে অর্থির কামিজ অনেকটা ভেজা। 

ভ্রু কুঁচকে তাকায়। 

- চুল ঠিক করে মুছিস নি? কামিজ ভিজে গেছে। 

- আদিত্যদা! আমার ছেলে কোথায়? ওকে এনে দাও। ওর খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।

.

আদিত্য কি উত্তর দিবে ভেবে পায় না। মা হওয়া সত্যি খুব কস্টের। কত হরমোনের হেরফের হয়! ছেলের কথা কি বলবে আদিত্য? বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠছে। পরীটা যখন জানবে তখন হয়তো মরেই যাবে এবার। 

.

ঘোর কাটে গাড়ির হর্নে। রুপ এসেছে বুঝতে অসুবিধা হয় না। 

আদিত্য দ্রুত আলমারী থেকে লম্বা কটি এনে অর্থি কে উঠিয়ে পড়িয়ে দেয়। 

কোমর অবধি কম্বল দিয়ে অর্থির মাথার চুল বেধে মাথায় কাপড় দিয়ে রাখে। 

.

কি অদ্ভুত! অর্থি রুপের স্ত্রী। যার উপর সব অধিকার রুপের কিন্তু আদিত্য চাইছেনা রুপ অর্থি কে অন্য অবস্থায় দেখুক। হায়রে ভালোবাসা। হায়রে পুরুষ! 

.

.

#পর্বঃ ১২

.

.

রুপ কে দেখে অর্থির কলিজায় পানি ফিরে এলো৷ 

আদিত্যর এমন ব্যবহারে অর্থি মোটেও অভ্যস্ত নয়৷ 

চিন্তা করতেই ভয় লাগছে। এই কি সেই আদিত্য? ভাবতেই ঢুকরে কান্না করে উঠে অর্থি। 

রুপ কাছে এসে বসতেই অর্থির কান্নার বেগ বেড়ে যায়। 

অর্থির হাত দুটো কাপছে। রুপ খুব যত্ন করে জড়িয়ে নিলো। 

হালকা ভাবে জড়িয়ে রুপ অর্থির মাথায় হাত রেখে বলে 

- পাগলি! কি হয়েছে? কাদছো কেনো? 

অর্থির গলায় মনে হচ্ছে কেউ অদৃশ্য হাত দিয়ে চেপে ধরেছে। 

খুব কষ্ট হচ্ছিলো। ও যে রুপ কে ঠকিয়েছে। ইচ্ছে করে না হলেও তো। এখন ওর উপর শুধুই রুপের অধিকার। 

আদিত্যদা অতীত। সে নিজে ছেড়েছিলো অর্থি কে।

আজ কেনো অধিকার দেখাতে আসছে। 

যেখানে অধিকার নেই সেখানে কেনো জোড় করছে। 

.

কিছুটা সময় পার হয়ে যাওয়ার পর অর্থি কিছুটা শান্ত হয়।

রুপ ছাড়ে না। চুপচাপ ধরেই রাখে। 

অর্থি আধো আধো গলায় বলে 

- ক্ষিধে পেয়েছে।

এবার রুপের হাসি পেলো। 

রুপ- এই জন্যই বুঝি কাদছো? ঠিক সেদিনের মতো? 

অর্থি- কোন দিনের মতো? 

রুপ- কন্সিভ করার ২৩ দিন পর রাতে ফুসকা খাওয়ার জন্য কেদেছিলে মনে আছে? রাত দুটোর সময় ফুসকা এনে দিতে হয়েছিলো। 

অর্থি- ও এখন খোটা দেওয়া হচ্ছে? 

রপ- রানী সাহেবা খোটা দিতে পারি? তাহলে তো গর্দান যাবে। 

.

অর্থি এবার হাসলো। হুম অর্থি এই মানুষ টাকে ভালোবাসে। না! এর ভালোবাসা,দায়িত্ব, কেয়ার কে ভালোবাসে।

সে যে অতীত হাতড়ে মরতে চায় না। 

স্বামী সন্তান নিয়ে বাঁচতে চায়। 

.

.

রুমে এসে আদিত্য কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছিলো না। 

রাগ,জেদের বসে সে এসব কি করেছে? 

পিচ্চির সাথে এতটা খারাপ ব্যবহার? 

সেই মেয়েটাকে জোড় করে অধিকার খাটিয়েছে যে মেয়ে আদিত্য কে সব থেকে বেশি বিশ্বাস করে? 

কতই তো আদিত্যর রুমে এসে ঘুমিয়ে থাকতো মেয়েটা। কত ঝড়ের রাত অর্থি আদিত্যর বুকে কাটিয়েছে। তখন আদিত্যর ভিতরে বাহিরে সমান তালে ঝড় বয়ে গেছে। 

কই তখন তো আদিত্য এমন করেনি?

নিজের প্রতি বড্ড ঘেন্না হচ্ছে। কেনো পারলো আদিত্য নিজের ভিতরের জানোয়ার টা কে আটকে রাখতে? জানোয়ার? হ্যাঁ! তাই। 

কোন মুখে যাবে অর্থির সামনে? 

অর্থির কান্না দেখে আদিত্য বেশ বুঝে গিয়েছিলো যে আদিত্যর কাজের জন্যই অর্থি কাদছিলো। 

যে আদিত্য সব সময় চাইতো অর্থি কে পবিত্র রাখতে আজকে তার জেদ, রাগ, অপেক্ষা নিয়ে সে নিজেই কি অর্থি কে অপবিত্র করে দিলো? 

তার স্পর্শ যে অর্থি কে দগ্ধ করেছে খুব ভালোভাবে সে বুঝছিলো। 

সব টা ওই রুশার জন্য। ওর কথায় অর্থি নার্ভাস হয়ে গেছিলো আর অর্থির কথায় আদিত্যর মাথা। 

নিজের অনুশোচনা বোধ তাকে এতটাই শেষ করছিলো যে নিজে দেয়ালে কয়েক বার হাত বাড়ি মারে। 

গ্রিলে লেগে হাত বেশ নীল হয়ে গেছে। 

.

একের পর এক সিগারেট শেষ করছে আদিত্য। 

সে নিজেও বুঝছে না অর্থির সাথে এখন কি করা উচিৎ? 

একটু অবিশ্বাস তার থেকে সব কেড়ে নিয়েছে। 

কিন্তু সে যে অর্থি কে রুপের সাথেও দেখতে পারছে না। 

.

.

ফ্ল্যাটে এসে ফোন টা জুড়ে ছুড়ে মারলো রুশা। কি কি না করেছে আদিত্য কে পাওয়ার জন্য। 

কিন্তু আদিত্য ফিরেও তাকায়নি। শুধু অর্থি, অর্থি আর অর্থি। অসহ্য লাগছে। এত কস্টের পর আদিত্য কে সে পেতে যাচ্ছিলো আবার সেই মেয়েই। 

না! আগে বাড়ি থেকে সম্পত্তি থেকে আদিত্যর জীবন থেকে সরিয়েছিলো এবার দুনিয়া থেকেই সরিয়ে দিবে। 

.

রুপ যেনো বারবার মরে যায় অর্থির ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে। 

কিছু তো আছে যে মেয়েটাকে তার দিকে টানে। 

এমন সময় নিশি এসে ঢুকে। হাত ধরে বারান্দায় নিয়ে যায়। 

.

নিশি- একটু আদর কর না! 

রুপ- মাথা খারাপ তোর? তুই এখানে কেনো? 

নিশি- ভালোবাসতে এসেছি। জড়িয়ে ধর আমি চলে যাবো। না হলে অর্থি উঠলে কিন্তু দোষ তোর। 

.

রুপ কোন উপায় না দেখে নিশি কে জড়িয়ে ধরে। 

এই মেয়েটা কেনো ওকে এত ভালোবাসে রুপ বুঝে না। ওর কোন কমতি নেই। তবুও কেনো বারবার অপমান হতেই ফিরে আসে? 

নিজের অজান্তেই কপালে চুমু দেয়। 

নিশি- ঠোঁটে দিলে কি ফুরিয়ে যাবে? 

কথা বলে এক সেকেন্ড দেরি করে না সে। 

.

আদিত্য রকিং চেয়ারে বসে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। শেষ কথাটা শুনে চমকে উঠে। 

.

কিছুক্ষণ আগে তো সে অর্থির ঠোঁট ছুয়েছিলো বলে এত কান্না করলো আর এখন রুপ কে বলছে? 

এতটাই পর সে? হুম্ম। এখন সে সত্যি পর। 

.

কিছুক্ষণ পর আদিত্য এসে অর্থির রুমে নক করে। ইচ্ছে করে করেনি। বাধ্য হয়েই করেছে। 

.

দরজায় নক শুনে রুপ নিশিকে ছাড়িয়ে নেয়। 

দরজা খুলে দেখে আদিত্য। ততক্ষণে নিশি বারান্দায় সরে গিয়েছে। 

আদিত্যর কথায় অর্থি জেগে উঠে। রুপ বেরিয়ে যেতে নিয়ে ফিরে এসে অর্থির কপালে চুমু দেয়। 

অর্থিকে আবার ঘুমোতে বলে। মেয়েটা এতটাই দুর্বল যে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। 

.

আদিত্য - আমাকে লজ্জা পাওয়ার কিছুই নেই। আপনি.... 

রুপ- আই নেভার কিসড হার লিপস বিকজ? 

আদিত্য - মানে? 

রুপ- স্ত্রীর অধিকার দিলেও ওই ঠোঁটের অধিকার নেই। চাইয়ো না। কারণ রানী সাহেবা বলে ভালোবাসার বিশুদ্ধ প্রকাশ কপালের চুমুতেই হয়। 

.

আদিত্যর মাথায় শুধু ঘুরতে থাকে তাহলে কিছুক্ষণ আগে যা শুনলো তা কি? কিছু দূর এগিয়ে যেতেই দেখলো কেউ একজন দ্রুত পায়ে অর্থির রুম থেকে গেস্ট রুমের দিকে যাচ্ছে। 

.

.

চলবে...

0 Comments:

Post a Comment