#মহীপতি👑
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা
#অন্তিম_পর্ব_শেষ_খন্ড
হৃদি বসে আছে হাতে একটা রিপোর্ট নিয়ে।
মৃদু মৃদু হাসি তার ঠোঁটে লেগে আছে।
ভারি অদ্ভুত অনুভুতি এটা।
পেটে হাত দিয়ে ভেতরে বাড়তে থাকা ছোট্ট জীবন টাকে অনুভব করতে চায় হৃদি।
মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব শুখ যেন সে পেয়ে গেছে।
তার সঙ্গে আরেকটা চিঠিও এসেছে হৃদির হাতে।
সিওল ইউনিভার্সিটির ভর্তি এপ্লিকেশন।
সব খুশিতে খুশিতে চারিদিকে পরিপূর্ণ।
রুমে বসে বসে গুন গুন করে গান গাইছে হৃদি৷
এমন সময় দরজায় কেউ নক করে,
" হৃদি কি করছিস মা? আসব?"
" হ্যাঁ আম্মু আসো। "
মিসেস ইউন -সুহ ভেতরে প্রবেশ করে।
" কি ব্যাপার এত খুশি যে?"
হৃদি মৃদু হেসে মিসেস ইউন -সুহ কে দুটো চিঠি ধরে দেয়,
মিসেস ইউন-সুহ চিঠি দুটো দেখে ভীষণ খুশি হয়ে যায়।
" আল্লাহ আমি দাদি হবো সত্যি? "
" সত্যি! "
" আরহাম জানে?"
" না আমি ওকে সারপ্রাইজ দিতে চাই৷ "
" ঠিক আছে। আমিও হেল্প করে দিবো। "
মিসেস ইউন-সুহ হৃদিকে সাহায্য করে।
ঘর সাজাতে সে খাবার রান্না করে নিজের হাতে কেক বানায় এতে লিখা ছিল,
" Papa Welcome Me."
আরহাম সারা দিন বাসায় আসতে পারেনি। কাজে ব্যাস্ত ছিল।
তবে হৃদিকে কল করে সকল খোঁজ খবর নিয়েছে।
এটা তার দৈনিক রুটিন।
আরহাম কোরিয়াতে সেলেটমেন্ট হবার জন্য কাজ করছিল।
এই জন্য আরও একটু বেশি ব্যাস্ত ছিল।
,
,
রাত ১০ টা,
আরহাম জানে সবাই হয়ত ডিনার করে নিয়ে যে যার রুমে আছে।
শুধুমাত্র তার বউ টাই তার জন্য জেগে থাকে।
আরহাম ধিরে রুমে এসে উপরে চলে যায়।
রুমের দরজা খুলতে চারিদিকে অন্ধকার দেখে আরহাম।
আরহাম বুঝতে পারেনা।
হাতের কাছেট সুইচ দিয়ে আলো জ্বালিয়ে সামনে দেখে সিল্ক স্কার্ট আর টপ করে তার বউটা দাঁড়িয়ে আছে।
ওয়েস্টার্ন পোশাকে তাকে এত সে* লাগে আরহামের কল্পনার বাইরে।
তবে হটাৎ এসব আয়োজন কেন?
আরহাম এগিয়ে যায়।
হৃদি আরহাম কে একটা লাল গোলাপ দেয়,
আরহাম গোলাপ টা নিয়ে হৃদির ঠোঁটে চুমু খায়।
" আজ আমার বউটা ভীষণ খুশি। কি হয়েছে?"
" আগে কেক কাটুন। "
হৃদি আরহামের সামনে কেক টা রাখে,
কেকের উপরের লেখাটা পড়ে আরহাম অবাক হয়ে যায়।
শক্ত মানুষ টার চোখ লাল হয়ে আসে।
জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়,
" ম মানে?"
হৃদি আরহামের হাতে রিপোর্ট টা দেয়,
আরহাম রিপোর্ট টা পড়ে অবাক,
হৃদিকে জড়িয়ে নেয়,
" আই লাভ উ.... "
" আই লাভ উ টু৷ "
" আমার জীবনে এত সুন্দর একটা অভিজ্ঞতার স্বীকার করানোর জন্য ধন্যবাদ।"
" আমার জীবনেও প্রথম৷ "
আরহাম হৃদির ঠোঁটে চুমু খায়৷
" লাভ উ...."
" লাভ উ টু। চলুন কেক কাটি। "
আরহাম কেক কাটে হৃদিকে খাইয়ে দেয়।
এরপর আরহাম ফ্রেশ হতে যায়। তারপর
ওরা দু'জন সুন্দর একটা ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করে,
আরহাম হৃদির পেটে কত গুলো চুমু খেয়েছে হিসাব নেই।
হৃদি হাসে,
" ছাড়ুন। আর কত চুমু খাবেন?"
আরহাম হৃদির পেটে আরেকটা চুমু খায়,
" আমার মন ভরছে না। এই পেটে আমাদের ভালোবাসার অংশ আছে। আমার ভাবতেই অসম্ভব ভালো লাগছে। "
আরহাম কথাটা বলে হৃদির পেটের কাছের টপের বাঁধন টা খুলে দেয়।
হৃদির সিল্ক স্কার্ট টা পেটে বাঁধা। আর টপ টাও পেটে বাঁধা।
গিট খোলার সাথে সাথে হৃদির শরীরের উপরের অংশ উন্মুক্ত হয়ে যায়।
হৃদি লজ্জায় অন্য দিকে ফরিতে গেলে আরহাম ধরে বসে হৃদিকে,
" এত লজ্জা কেন পাচ্ছো?"
" লাইট অন করা। "
" খুব একটা বেশি তফাত লাগছে না৷ "
" মানে?"
আরহাম হৃদির উপরে চলে আসে।
" মিসেস খান।
আই লাভ উ... আই লাভ উ সো মাচ৷ "
আরহাম হৃদির ঠোঁটে আঁকড়ে ধরে,
ধিরে ধিরে সিল্ক ড্রেস টার সম্পূর্ণ টা খুলে ফেলে দেয়।
হৃদিকে এভাবে দেখে নিজেকে সামলানো সম্ভব নয়,
" ধন্যবাদ জান আমার জীবনে এত সুন্দর উপরহার হয়ে আসার জন্য। "
আরহাম হৃদিকে পায়ে স্লাইড করে হাত উপরে নিয়ে আসে,
হৃদি বিছনার চাদরে খামচে ধরে
আরহাম বাকা হাসে।
হৃদির বুকে নাক ডোবায়।
"এই ঘ্রাণ.... আমার খুব প্রিয়.... "
,
,
,
হৃদিকে বুকে নিয়ে শুয়ে আছে আরহাম৷
ভালোবাসা হয়ত কোন ঘাটতি নেই।
তাইত এত বাঁধার পরেও আজ এত শান্তি।
এত শান্তি কোথাও নেই।
হৃদির বুকে আরহামের জন্য লুকিয়ে থাকে সব থেকে বড় শান্তি।
,,
,,
,,
ইরফানের বিয়ের পরের দিন আরহাম আর হৃদির কোরিয়া যাওয়ার দিন।
হৃদির প্রেগন্যান্সির বেশি দিন হয়ে গেলে হৃদির সমস্যা হবে।
হৃদি এবং বাচ্চা দু'জন ই সুস্থ আছে।
তাই আরহাম হৃদিকে নিয়ে কোন চিন্তা করছে না৷
হৃদি একেবারে হেলদি আছে ডক্টর যেটা বলেছে।
আরহামের একটাই চিন্তা হৃদির পড়ালেখার উপর যেন বেবির কোন চাপ না পড়ে। তাহলে হৃদি কি করবে। ওর হয়ত কষ্ট হয়ে যাবে বেবি এবং পড়ালেখা দুটো সামলাতে।
আরহাম পুরোপুরি ভাবে প্রস্তুত হৃদির সম্পূর্ণ ভাবে সাহায্য করতে৷
,
,
ইরফান আর রোজি বিয়ের জন্য মুখোমুখি হয়ে বসে আছে।
হৃদির সুন্দর একটা লাল রঙের শাড়ি পড়েছে।
অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে।
আরহাম ও সুন্দর করে সুট বুট পরে রেডি।
হৃদির আর আরহাম রোজিকে সুন্দর একটা নেকলেস গিফ করে আর ইরফান কে ঘড়ি। রোজি, হৃদিকে জড়িয়ে ধরে,
" আমার উপর কোন রাগ রেখো না হৃদি। "
হৃদি মৃদু হাসে,
" না রাখি নি। "
" ধন্যবাদ। "
" তোনাকেও. "
ইরফান, আরহাম কে বলে,
" এটার কি দরকার ছিল ভাইয়া তোমরা এসেছো এটাই অনেক। "
" ভাই হিসাবে দায়িত্ব আছে তাই। "
ইরফানের মুখে হাত রাখে।
ইরফান ঠিক নিজের ভাই এর মত অনুভব করে,
" কাল ফ্লাইট তোমাদের?"
" হ্যাঁ বিকালে। "
" আমি আর রোজিও যাব। "
" ঠিক আছে। "
" চলো তাহলে খাওয়া দাওয়া করি সবাই মিল?"
" হ্যাঁ চলো। "
সবাই মিলে বিয়েতে বেশ মজা করে।
দেশে আজ শেষ দিন।
আজিজ রহমান ও এসেছে।
তবে ওরা ইরফানের বিয়েতে আসতে পারেনি।
ইরফানের বিয়ে হওয়ার পর হৃদি আর আরহাম চলে আসে।,
,
,
খান বাড়িতে আজ ভীষণ কষ্টের দিন,
বাড়ির ছেলে এবং বউ বিদেশ পাড়ি দিবে।
আসলে আরহাম শুধুমাত্র হৃদির পড়ালেখার জন্য দেশ ছাড়ছে,
হৃদির স্বপ্ন গুলোকে আরহাম অপূর্ণ রাখতে চায় না।
মিসেস খান ছেলে এবং বউকে সব গুছিয়ে দেয়।
" আজিজ ভাই থেকে জান। হৃদিও এখন থাকবে না৷ একা একা কিভাবে থাকবেন?"
" দেখুন বেয়াই। "
আসিফ খান এগিয়ে আসে,
" আমিও রিকোয়েস্ট করছি বেয়াই থাকুন। দেখুন বাচ্চা দুটো চলে যাওয়ার পর খান বাড়িতেও কেউ নেই। থাকুন। কিছু দিন। "
সবার জোড়াজুড়ি তে আজিজ রহমান থাকতে রাজি হয়।
আরহামের মা বাবার সম্পর্ক ও এখন ভালো হয়েছে।
,,
,,
আরহাম আর হৃদি চলে যায় কোরিয়া তে,
দিন গিলো স্বপ্নের মত করে কেটে যায়।,
,
,
হৃদির ডেলিভারির সময় মিসেস ইউন -সুহ কোরিয়া এসে থেকেছেন।
ওদের একটা সুন্দর মেয়ে সন্তান হয়।
তার নাম রাখা হয় স্নেহা।
একেবারে বাবার মত দেখতে,
স্নেহার জন্মের পর মি. এবং মিসেস খান ও কোরিয়া চলে আসে।
হৃদি একা একা পড়ালেখা সামলে স্নেহার টেক কেয়ার করতে অক্ষম হয়ে যায় সেই জন্য।
এদিকে বেবি সিটার ও রাখা হয়েছে।
রাজকন্যা তার বাবার খুব আদরের,
,
,
৩ বছর পর
অফিসে বসে হৃদির রেজাল্ট দেখছে আরহাম।
তার বউ ভালো করেছে।
অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে।
ফার্মাসিস্ট পড়েছে,
হৃদি চাকরি করতে চায়।
ভালো চাকরি হবে তার।
আরহাম আশেপাশে দেখছে,
সে চায় হৃদিকে এমন একটা কোম্পানিতে দিতে যার আশেপাশেই স্নেহার স্কুল থাকবে।
অথচ হৃদি এসবের কিছুই জানেনা।
তার জীবনে সব ভালো থাকার কারণ যে আরহাম।
সেটা হৃদি জানেনা।
হটাৎ করেই দরজায় নক হয়,
" এসো।
জং সুক ভেতরে প্রবেশ করে,
" স্যার পেয়েছি "
" কি পেয়েছো?"
" বাবেল ফার্মেসি। এখানের সিইও বানিয়ে দেই ম্যাম কে? এর পাশে স্নেহা মামনির জন্য স্কুল আছে। তার উপর এটা সিওল ইউনিভার্সিটির থেকে অনেক কাছে। "
" হুম ঠিক আছে কনট্রাকট করো। "
" হ্যা ঠিক আছে স্যার।
কিন্তু একটা প্রশ্ন আছে। "
" কি প্রশ্ন?"
" ম্যাম কি আদও কখনো জানবে যে আপনি তার হয়ে তার প্রতিটা কাজ কেমন সহজ করে দেন?"
" জানবে না। জানলে ওর নিজেকে যোগ্য কম মনে হবে। "
" আচ্ছা.. "
" জং সুক। "
" জি স্যার। "
" এই বিয়েটা করার পর একটা রাজ্য তৈরি হয়েছে সেখানের #মহীপতি আমি। তাই আমার ইসারায় সব কিছু হওয়া উচিত "
" এটা আবার বলতে আপনি না চাইলে একটা কিছু হয়না। "
" আর কেউ সেটা জানেও না৷ "
এটাইত আপনার স্পেশালিটি স্যার৷ "
আরহাম হাসে,
" হুম.."
,
,
আরহাম অফিস শেষে বাসায় আসার পর, হৃদি স্নেহার আগে আরহাম কে দৌড়ে জড়িয়ে ধরে,
" কি ব্যাপার। আমার বউ যে ভীষণ খুশি?"
" হ্যাঁ রেজাল্ট দিয়েছে। "
" ওয়াউ। কেমন হয়েছে?"
" দেখুন আপন!"
আরহাম দেখে অবাক হওয়ার অভিনয় করে,
" ওয়াউ. "
" জব এবার৷ "
হৃদি মিষ্টি করে তাকিয়ে আছে,
" ঠিক আছে আমি দেখছি কি করা যায়। "
হৃদি অনেক খুশি হয়ে যায়।
স্নেহা পাশে দাঁড়িয়ে মা বাবার এসব কর্ম দেখছে, বুকে হাত গুজে,
আরহাম সেটা খেয়াল করে স্নেহা কে কোলে নেয়,
" মামনি আমার৷ "
" লাভ উ পাপা৷ "
" লাভ উ টু। "
" আম্মু আজকে আমার আগে তোমাকে হাগ করেছে। "
" উফ আমার জেলাজ বানি কাল থেকে তুমি আগে করো। "
স্নেহা হেসে দেয়।
" ঠিক আছে। ".
আরহামের শুখি পরিবার।
হৃদি, স্নেহা, মা বাবা, শ্বশুর মসাই,
সবাইকে নিয়ে জীবন বেশ শুখি।
হৃদির, স্নেহা, আর আরহামের ভালোবাসার মূহুর্তের সঙ্গে গল্পটা শেষ হলো।
,
,
______সমাপ্তি ________
( আসসালামু আলাইকুম। গল্পটা যে রকম রেসপন্স ছিল সেই রকম রেসপন্স কমে যায়। তার পরেও আমি গল্প লেখা বন্ধ করিনি।
গল্পের ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ আর আশা করছি আজ সমাপ্তি পর্বে আপনাদের ভালো মন্তব্য পাবো। )
0 Comments:
Post a Comment