#মহীপতি👑
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা
#পর্ব_০৭
সকাল হয়েছে এ কথা বলেছে পাখি, বলেছো সূর্য। বলেছে আকাশ।
সব সাক্ষী প্রমাণ নিয়ে সূর্য মামা যখন পূর্ব আকাশে উকি দেয় তখন হৃদির চোখে রোদের এক ঝলকানি এসে পরে।
হৃদি একটু নড়তে গেলে শরীরে ব্যাথা অনুভব করে।
হৃদি চোখ খুলে পাশে আরহাম কে দেখতে পায়।
কি মিষ্টি দেখা যাচ্ছে। ওকে এত সুদর্শন লাগে।
মায়াবী।
হৃদির কালকে রাতের কথা সব মনে পড়তে থাকে।
হৃদির মনে পড়ে হৃদি কাল কিভাবে আরহাম কে টেনে ধরেছিল।
হৃদি ভীষণ লজ্জা পেয়ে যায়। কিন্তু কাল হৃদি এমন কেন করেছিল।
হৃদির কাছে উত্তর নেই।
তবে এখন আর এসব ভেবে লাভ নেই। এখন তাকে যেতে হবে ওয়াসরুমে। শুয়ে থাকলে যে আর হচ্ছে না।
হৃদি আরহামের মাথাটা নিজের বুকের উপর থেকে সরিয়ে উঠে বসে। কিন্তু হৃদির পেটে ভীষণ ব্যাথা করছে। হৃদি নামতে গিয়ে ঠাস পরে যায়। কিছু পরার শব্দ শুনে আরহাম লাফিয়ে ওঠে।
আরহাম দেখে সে যে বালিসে শুয়ে ছিল সেই বালিস নিচে পরে আছে।
আরহামের ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে আছে হৃদির দিকে।
হৃদি ও ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আরহাম কিছুক্ষণ পর শব্দ করে হেসে দেয়।
হৃদির চোখে পানি চলে আসে।। সে এখানে পড়ে গেছে আর ওই লোক কিনা হাসছে।
" জান সরি। আমারি ভুল। তোমাকে আমার ওয়াসরুমে দিয়ে আসা উচিত। "
আরহাম উঠে হৃদিকে নিয়ে ওয়াসরুমে দিয়ে আসে।
" আমার মাজায় ব্যাথা পেয়েছি৷ "
আরহাম হৃদির কিউট ঠোঁটে চুমু খায়।
" সমস্যা নেই আমি ঔষধ দিয়ে দেব ঠিক হয়ে যাবে। "
হৃদির মনে হচ্ছে না আরহাম তাকে জোর করে বিয়ে করেছে।
হৃদি আরহামের সব কাজ পর্যবেক্ষণ করছে।। আরহাম নিজ হাতে হৃদিকে গোসল করিয়ে আয়নার সামনে এনে দাড় করায়।
হৃদি তাকিয়ে আছে আরহামের দিকে।
আরহাম হৃদির চুল শুকাচ্ছে।
" সামনে তাকান ম্যাডাম আমাকে অনেক দেখা যাবে। সারা জীবন পরে আছে। "
হৃদি লজ্জা পায় বটে তাই চোখ সরিয়ে সামনে তাকায়। আয়নার মাঝে হৃদি দেখে তার গলায় আরহামের সুন্দর দাঁতের করা আর্ট লালচে বর্ণ ধারণ করেছে।
হৃদিকে একটা জামা পরিয়েছে আরহাম।
জামা গুলো সব কালকে আনা৷
হৃদির চুল শুকিয়ে হৃদিকে নিয়ে রুমে আসে আরহাম।
" নিচে যাবে আমার সঙ্গে খেতে? নাকি উপরে নিয়ে আসব খাবার? "
গোসল করার পর হৃদির যন্ত্রণা আরও একটু কমেছে। তাই হৃদি বলে
" না চলুন নিচে যাই। "
আরহাম নিজে ফ্রেশ হয়ে অফিসের জন্য তৈরি হয়ে নেয়।। এরপর সে হৃদিকে নিয়ে নিচে চলে আসে।
মিস্টার এবং মিসেস খান দু'জন একটু আগেই নিচে এসেছে। সব সার্ভেন্ট ব্রেকফাস্ট সার্ভ করছে।
আরহাম হৃদির হাত ধরে নিচে এসে বসে।
মিস্টার খান হৃদিকে সহ্য করতে পারেন না।
হৃদিও ভালল বুঝে এ বিষয় টা।
মিষ্টার খান ব্রেকফাস্ট প্লেটে নিতে নিতে আড় চোখে তাকাচ্ছে তিনি।
তার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।
সে তার ছেলের জন্য বিজনেস ডিল সাজিয়ে রেখেছিল অথচ এই মেয়েটা হুট করে চলে এসেছে।
মিসেস ইউন-সুহ স্বামীর মনের কথা বেশ ভালোই বুঝতে পারেন,
" জাগি.....আমাদের ছেলের বউ কি সুন্দর তাইনা৷ এবার শুরু দাদা দাদি হতে পারলেই হয়ে যাচ্ছে তাইনা৷ "
হৃদির মনে পড়ে যায় কালকে রাতের কথা।
গাল তার অটোমেটিক লাল হয়ে যায়।
এর মাঝেই কে যেন পেছন থেকে বলে ওঠে,
" হ্যা আন্টি ইউন-সুহ। আমর মনে হয় এবার আমার আর আরহামের বিয়েটা করে নেওয়া উচিত।"
হৃদি হটাৎ করে কেঁপে ওঠে।
আরহামের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।
এই রেজি নামের মেয়েটাকে তার মোটেই পছন্দ নয়।
এ বাড়িতে এসে আরহামের সম্পর্কে এসব ফালতু কথা বলার সাহস শুধু ওই মেয়েটারি আছে।
মিসেস ইউন-সুহ পরিস্থিতি সামাল দিতে বলেন,
" রোজি কেমন আছো তুমি? এসো এসো আমাদের নতুন বউ দেখে যাও। "
" নতুন বউ!"
" হ্যাঁ নতুন বউ। এই দেখো আমার হৃদি। আরহামের বউ। "
রোজি আগে থেকে যদিও সব জানে তাও সে এমন ভাব ধরছে যেন সে কিছুই জানেনা।
" আরহাম বিয়ে কবে করল আন্টি। আঙ্কেল এসব কি বলছে আন্টি তুমি বলোনা এসব মিথ্যা বলো আঙ্কেল। "
" আসলে রোজি.. "
বাবাকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে আরহাম বলে ওঠে,
" আসলে রোজ তোমাকে বিয়ে করার কথা আমার জীবনে ছিলনা।
আমি এমন কোন কমিটমেন্ট তোমাকে দেয়নি।
আমার স্ত্রী হৃদি। দয়া করে এ বাড়িতে এসে আমার বউ এর সামনে আমাকে নিজের হবু স্বামী বলে দাবি করবে না।
I hope you understand.
হৃদি উঠো রুমে যাও। "
হৃদি উঠে দাঁড়ায়।
আর তখন হৃদি প্রথম রোজির মুখ দেখে।
অসম্ভব সুন্দর একটা মেয়ে। পোশাক তার ফিটফাট।
দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভীষণ মেকাপ করে।
হৃদি ত প্রাকৃতিক ভাবে সুন্দর। মেকাপ সে খুব একটা পছন্দ করেনা।
হৃদির সামনে রোজিকে দেখলে যদিও রোজি সুন্দর বেশি তাও সবাই হৃদিকেই বেছে নেবে। কারণ মানুষ মেকি কিছু পছন্দ করেনা।
আরহাম হৃদির হাত ধরে ওকে নিয়ে উপরের চলে যায়।
মিসেস ইউন সুহ হাসে, আর আড় চোখে মিস্টার খান এর দিকে তাকায়।
তিনি রেগে ফেটে যাচ্ছে।
মিসেস ইউন সুহ ও চলে যায় নিজের রুমে,
" আঙ্কেল এই মেয়ে টার জন্য আরহাম আমাকে পাত্তা দিচ্ছে না। "
" চিন্তা করিস না মা। এই মেয়েকে আমরা তাড়িয়ে দেব৷ তোর সাহায্য লাগবে যার জন্য তোকে আমি ডেকেছি। এ বাড়িতে৷ পারবি না থাকতে?"
" হ্যাঁ পারব৷ "
তবে মিস্টার খানের মাথায় ঠিক কি চলছে।
,
,
,
,
,
অফিসে বসে নিজের কাজ করছে আরহাম।
তবে মাথার ভেতর ঘুরছে একটা বিষয়।
রোজি আর ওর বাবার দ্বিতীয় টার্গেট কি। সেটা ভাবছে আরহাম।
এর মাঝেই রুমে আসে জং সুক,
" স্যার। "
" হ্যা। "
" স্যার আপনি যা জানতে বলেছিলেন। "
" বলো। "
" স্যার........
.....
.....
.....
....."
আরহাম, জং সুকের দিকে তাকিয়ে আছে।
" স্যার! "
আরহাম হাসে।
ওই হাসিতে ভীষণ গভীরতা লুকিয়ে আছে। যে কেউ শুনলে তার শরীরে পশম দাঁড়িয়ে যাবে।
এমন সময় আরহামের ফোনে নোটিফিকেশন আসে।
খান বাড়ির একটা ল্যাল লাইন আছে।
যেটা কমন নাম্বার। সেই ল্যাল লাইনে একটা টেলিফোন আরহামের রুমেও আছে। আরহামের রুমের সব কিছুই আরহামের নিয়ন্ত্রণে থাকে। কেউ যদি ল্যাল লাইনে ওর রুম থেকে কথা বলে সেটাও রেকর্ড হয়ে যায়।
আরহাম ভ্রু কুচকে সেটা ওপেন করে,
হৃদি করোর সঙ্গে কথা বলছে,
,
,
হৃদি বসে ছিল বিছনায়। হটাৎ করেই রুমের কেণায় রাখা ফেনটা বেজে ওঠায় হৃদি প্রথম ভয় পেলেও পরে গিয়ে সেটা ধরে। হৃদি ভেবেছিল এটা হয়ত আরহাম৷ কিন্তু তাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে এটা ছিল নিহাদ। হৃদির বাবার বন্ধুর ছেলে। হৃদির থেকে বয়সে একটু বড়। তবে ওরা বন্ধুর মত৷
" হ্যালো। "
" কে? হৃদি? "
" হ্যাঁ। নিহাদ ভাই আপনি?"
" হ্যাঁ। বড্ড কষ্ট করে আরহাম খানের বাড়ির এই নাম্বার টদ জোগাড় করেছি হৃদি। তুমি কেমন আছো?"
" আমি ভালে আছি। আব্বু কেমন আছে নিহাদ ভাই। "
" ভালো নেই হৃদি। আমরা তোমাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। "
" কিছুতে লাভ নেই। ও আমাকে কেথাও যেতে দেবেনা। আমি চাইনা আমার জন্য তোমাদের সমস্যা হোক। তোমরা প্লিজ এসব করোনা। আব্বুকে একটু দিবা নিহাদ ভাই। "
" চাচাত এখন আমার কাছে নেই। আমি কাল থেকে চেষ্টা করছি৷ কিন্তু কোন উপায় পায়নি। এই মাত্র এই নাম্বার পেলাম। কিন্তু এতে যে তোমাকে পাব ভাবিনি। "
" আব্বুকে বলো আমি ভালে আছি। চিন্তা না করতে। "
" তুমি চিন্তা করোনা হৃদি তোমাকে ওখান থেকে বের করে আনব আমি। "
বলতে বলতে ফোন কেটে যায়।
হৃদির চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
আজ ৩ দিন সে বাবকে দেখেনা।
কালও কথা বলতে গিয়েই ওত কিছু ঘটে গেছিল।
,
,
আরহাম নিজের হাতে থাকা ফোনটা ছুড়ে মারে।
" হাউ ডেয়ার সি। "
আরহাম প্রচন্ড রেগে গেছে এই মুহুর্তে।
......
চলবে?
0 Comments:
Post a Comment