#মহীপতি👑
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা
#পর্ব_০৮
হৃদির, আমনাফের সঙ্গে কথা আরহামের সঙ্গে অন্য একজন ও শুনে নেয়।
আর সেটা অন্য কেউ নয় রোজি।
কান থেকে ফোনটা রেখে রোজি সামনে তাকায়,
" আরহামের থেকে তাহলে হৃদিকে দুরে রাখার ভালো একটা উপায় পেলাম।
হৃদির গ্রামেই আমাকে সার্চ করতে হবে। "
রোজির মুখে সয়তানি হাসি।
,
আরহামের অফিসের কাজে সারা দিন ব্যাস্ত ছিল।
সে পারেনি বাড়িতে যেতে। তার থেকে বড় কথা চায়নি। কারণ সে বাড়িতে গেলেই রাগ অবস্থায় হৃদিকে কষ্ট দিত।
,
হৃদিও সারা দিন রুমে ছিল।। সার্ভেন্ট দুপুরের খাবার দিয়ে যায় হৃদিকে।
কিন্তু এখন আর এই সোনার খাচায় বসে থাকতে মন চাইছে না৷
এ বাড়িতে সুন্দর একটা গার্ডেন আছে।
হৃদি পাশ থেকে ওড়না জড়িয়ে আয়নার সামনে আসে।
চুল গুলো আচড়ে নিচে চলে আসে৷।
নিচে মিসেস ইউন সুহও গার্ডেন এ ছিলেন।
হৃদি গুটি গুটি পায়ে গার্ডেনের দরজা ঠেলে চলে আসে।
" হৃদি৷ এদিকে আয় মা। "
হৃদি শ্বাশুড়ির কাছে গিয়ে বসে।
গার্ডেনের এক পাশে একটা দোলনা৷।
বাইরে শীত শীত আবহাওয়া।
হৃদি ভালো করে ওড়না জড়িয়ে নেয়।
" শীত লাগছে?"
হৃদি মাথা নাড়ায়৷
" না। "
" এখনি কফি আনবে আনজু৷ অপেক্ষা কর।"
কিছুক্ষণ এর মাঝে একটা সার্ভেন্ট কফি এনে ওদের সামনে দেয়।
হৃদি আর মিসেস ইউন সুহ দু'জন মিলে গল্প করতে করতে বিষয় টাকে এনজয় করে।
হৃদির এ বাড়িতে শুরু মাত্র তার শ্বাশুড়ির সঙ্গে ভালো অনুভব করে।
গার্ডেনের দরজা লাগিয়ে দিয়ে ভেতর থেকে কিছু দেখা যায়না।
আরহাম বাড়িতে এসে সোজা রুমে চলে যায়।
কিন্তু সেখানে হৃদিকে না দেখে মনের মাঝে কি সব উল্টো পাল্টা খেয়াল আসছে।
মেয়েটা কি পালিয়ে গেল। কিন্তু কিভাবে ওর সিকিউরিটি যে টাইট৷
আরহাম অফিসের জামা পরা অবস্থায় আবার নিচে চলে আসে।
তবে এবার মিসেস ইউন সুহ আর হৃদি দরজা ঠেলে বাসার ভেতরে আসছিলেন।
আরহাম তা দেখে থমকে যায়।
সাথে প্রচন্ড রাগ হতে লাগে আরহামের।
সে হৃদির হাত ধরে রুমের দিকে নিয়ে যেতে লাগে।
" আরে আরহাম এটা কি রকম ব্যাবহার। আমি এখানে আছি। ".
মায়ের কথা শুনে আরহাম পেছনে ফিরে তাকায়।
তবে কিছু বলার আগেই আরহাম দের বাড়িতে কেউ প্রবেশ করে।
হৃদি তাকিয়ে আছে সে দিকে।। ইনি আবার কে।
আরহামের মত এরকম ফিটফাট পোশাক তার৷।
দেখতে যদিও লম্বা সুদর্শন।
হৃদি ভাবছে এটা কে।
ছেলেটা এগিয়ে আসে আরহাম এর সামনে।
" Hello Brother. অতিথি বাড়িতে আসলে ওয়েলকাম করতে হয়৷ এটা কি আমাদের ভাবি কোন ভাবে? হাই আমি ইরফান খান। Nice to meet you. "
ইরফান, হৃদির দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়।
" এক রোজি কি কম ছিল এখন ইরফান ও এলো। আমার ছেলেটাকে এরা শান্তি দিবে না৷"
মিসেস ইউন সুহ মনে মনে কথা গুলো বলেন।
তবে নিরিবিলি পরিবেশ হটাৎ করেই আরহামের চিৎকারে গরম হয়ে ওঠে,
" ভেতরে যাও হৃদি। আমি না বলা পর্যন্ত রুম থেকে বের হবা না৷ "
হৃদি কেঁপে ওঠে।
এদিকে হৃদির হাত আরহাম এত জোরে ধরেছে হৃদির হাত ভেঙে যাচ্ছে।
" ঠ ঠিক আ আছে। ছাড়ুন। "
আরহাম ছেড়ে দেয় হৃদির হাত৷
হৃদি উপরে চলে আসে।
রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়।
হৃদির খারাপ লাগছে ভীষণ। আরহাম শুধু ওকে বকে। জীবনে ওর বাবা কখনো ওকে এভাবে বকেনি।। এই আরহাম এই পর্যন্ত হৃদিকে ঠিক যত বার বকেছে। হৃদি ওর পুরো জীবনে এত গুলো বকুনি শুনেনি।
,
,
,
আরহামের সামনে বসে আছে ইরফান।
দুজনের মুখেই কোল্ড একটা এক্সপ্রেশন।
" কি চাই? "
আরহামের কথায় ইরফান আরহাম এর দিকে তাকায়,
" যা চাই দিবি কি?"
" কি চাই তাই বল। "
" ভাবি, "
ভাবির পরের কথা টুকু বলার আগেই আরহামের চোখ ইরফান কে গিলে খাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে,
ইরফান বলে,
" কুল বস কুল। আমিত জাস্ট বলতে চাইছিলাম ভাবি অনেক সুন্দর। "
" আমার স্ত্রী যাই হোক না কেন তা তোর মুখে শুনতে চাইনা৷ "
" ওকে বস। সমস্যা নেই। আমি এখানে হৃদয়পুর গ্রাম সম্পর্কে একটা তথ্য দিতে এসেছিলাম। "
" দয়া করে দ্রুত বল। "
" ভাই তুইত পারলি না গ্রাম টাকে কিনে দিতে। তাই প্রজেক্ট টা আমার কাছে এসেছে। আমি ওই গ্রামটা এখন কিনে দেব। এত বড় জিত আমার। তাই ভাবলাম তোকে বলি। তোকে না বলে আমিত কোন কাজ করিনা তাইনা৷ "
" Go for it. আরহাম খান থাকতে ওই গ্রামের কিছু হবেনা৷ যদি পারিস দিয়ে দেখ। "
আরহাম আর কিছু না বলে উপরে চলে আসে।
ইরফান আরহামের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে,
" ওটা আমারি হবে৷ তোর যা সব আমার হবে। তোর বিবিজান ও। ".
কথাটা বলে ইরফান সেখান থেকে চলে যায়।।
মিসেস ইউন- সুহ রান্না ঘরে এসে খাবার বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন৷
এমন সময় রোজি আসে সেখানে,
" আন্টি। "
" হ্যা বলো। "
" আন্টি ইরফান ভাই কেন আপনাদের সঙ্গে থাকেনা৷ আমিত শুনেছি ওনি আঙ্কেল এর, "
" রুমে যাও রোজি। এসব নিয়ে কথ বলতে চাইনা৷ "
" আসলে আন্টি। "
মিসেস ইউন সুহ, রোজির দিকে তাকায়।
বোঝা যাচ্ছে তিনি রেগে আছে।
রোজি আর সাহস করে কিছু বলতে পারল না চলে গেল সেখান থেকে।
,
,
রুমে এসে হৃদিকে বসে থাকতে দেখে আরহাম এর কেমন জেন আরও রাগ হচ্ছে।
সে গিয়ে হৃদির হাত ধরে ওকে বিছনায় ফেলে।
হৃদি বেশ ভয় পায় আর ব্যাথাও।
আরহাম হৃদির উপরে চলে আসে,
" নিচে কেন গেছিলি?"
" আ আমি ত শুধু আম্মার সঙ্গে কথা বলছিলাম। আমি কিছু করিনি। "
আরহাম হৃদির গাল দুটো শক্ত করে হাতের ভেতর নিয়ে আসে।
হৃদির চোখ গড়িয়ে পানি পড়ছে।
" কোথাও যাবিনা৷ তুই আমার অনুমতি ছাড়া কোথাও যাবিনা৷ এ ঘর থেকেও বাইরে যাবিনা।
ওর চোখ তোর শরীর টাকে দেখছিল। আমার ভালো লাগছিল না। বুঝতে পেরেছিস তুই। নাকি আরও বুঝাব৷ বল জান বল। "
" বুঝতে পেরেছি৷ "
আরহাম হৃদির মুখ থেকে হাত সরিয়ে হৃদির ঠোঁট আকড়ে ধরে।
হৃদি চোখ বন্ধ করে আরহামের সব অত্যাচার সহ্য করছে।
কিছুক্ষণ পর আরহামের রাগটা একটু কমে।
আরহাম হৃদির ঠোঁট ছেড়ে দেয়।
হৃদির ঠোঁট কেটে রক্ত বের হচ্ছে।
আরহাম হৃদির ঠোঁটে হাত দিয়ে রক্ত মুছে দেয়৷
হৃদি ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে নেয়।
আরহাম হৃদির গলায় মুখ গুঁজে।
হৃদি কিছু বলছে না।
তবে আরহাম তার কাজে সচল৷
সে হৃদির জামাটা নিচে সরবে এমন সময় তার মনে পড়ল হৃদি হয়ত খায় নি এখনো।
তাই আরহাম হৃদির উপর থেকে উঠে যায়।
" যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। খাবার খেতে হবে। "
হৃদি মুখ ফিরিয়ে নেয়।
বিছনার অন্য পাশে গিয়ে কম্বল টেনে আরহামের দিকে পিঠ করে শুয়ে পরে।
আরহাম বুঝতে পারে সবটাই।। তবে সে কিছু বলেনা।
নিজে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কাপড় বদলে আসে।
তারপর ডিনার পাঠিয়ে দিতে বলে।
কিছুক্ষণ পর মেড এসে ওদের খাবার দিয়ে যায়৷
হৃদি চোখ বন্ধ করে সেভাবেই শুয়ে থাকে।
আরহাম হৃদির কাছে এসে হৃদিকে পাজকোলে তুলে নেয়,
" ছাড়ুন আমাকে। "
" ছাড়ব না। "
" ছাড়ুন৷ "
" সুস৷ ".
আরহামের উপর কথা বলার সাহস হৃদির নেই।
আরহাম নিজের হাতে হৃদিকে খাইয়ে দেয়।। খাবার টাও হৃদির প্রিয় ছিল। গরুর মাংস আর ভাত৷
হৃদি না করেনা৷ এমনি থেকেও এদের কিছু বিদেশি খাবার যা হৃদির পছন্দ নয় মোটেই।
হৃদি খেতে খেতে বলে,
" এ একটা কথা বলব। "( হেঁচকি তুলে)
" হুম "
" আমার জন্য কি বাঙালি রান্না করা যায়না৷ যদি না যায় তবে রান্না আমি করবনি। আমাকে শুধু জিনিস পত্র এনে দিবেন। "
আরহাম হৃদির দিকে তাকিয়ে আছে।
মেয়েটা সত্যি খাবার কষ্ট করেছে। তার স্ত্রী খাবার কষ্ট করেছে। ভাবতেই অবাক লাগছে।
" কাল থেকে নতুন সেফ আসবে তোমার জন্য সব রকম বাঙালী খাবারের ব্যাবস্থা করা হবে।"
হৃদি খুশি হয়ে যায়৷।
হৃদির হাসি এত মিষ্টি৷ আরহাম এই প্রথম ওই হাসি দেখল।
ভীষণ মায়াবী।
আরহাম হৃদির হাসি গালে চুমু খায়।
হৃদি খাবার বাদ দিয়ে আরহামের দিকে তাকায়।
" কি হলো খাও। "
হৃদি আর কিছু বলেনা খেয়ে নেয়।
চলবে?
(
0 Comments:
Post a Comment