গল্প মন্ত্রী_মশাই_ভালোবাসে_তোমায় পর্ব ৪

 গল্প - #মন্ত্রী_মশাই_ভালোবাসে_তোমায়

লেখনীতে - #মোছাম্মৎ_তাপছিরা_চৌধুরী


পর্ব - ৪


আসিফ রুমে এসে দেখে তার বউজান গভীর ঘুমে। সে ডাকলো না আর বউকে, সে জানে ফ্রেশ হয়ে বের হতে হতে বউ উঠে অপেক্ষা করবে তার জন্য।  অফিস ব্যাগ আর একটা প্যাকেট বিছানার পাশে রাখা ছোট্ট টেবিলটার উপর রাখলো, কিছুক্ষণ তার বউজান এর দিকে তাকিয়ে রইলো, তার সংসারটা কী সুন্দর সামলাচ্ছে মেয়েটা, ভাগ্য করে পেয়েছে সে তাপছিরাকে।


আসিফ ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ঢুকলো, ততক্ষণে ঠিকই তাপছিরার ঘুম ভেঙে গেলো, পাশের টেবিলে অফিসের ব্যাগের সাথে আরেকটা প্যাকেট দেখে ভ্রু কুচকে তাকালো, সে হাত বাড়িয়ে প্যাকেটা নিতে যাবে তখনই  আসিফের কন্ঠ শুনতে পাই.......


-উঠে পড়েছো জান....?


তাপছিরা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো আসিফের দিকে ,... -এতক্ষণে এসে জান মারাচ্ছে ব্যাটা হিটলার। মনে মনে বললো সে।


-এত দেরি করলেন কেনো....?...গাল ফুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো মেয়েটা।


আসিফ একগাল হেঁসে এসে মেয়েটার গা ঘেঁষে ধপ করে শুয়ে পড়লো.....-আর বলো না জান, আজকে কাজের চাপ ছিল ভীষণ , সকালে পার্টি অফিসে গিয়েছিলাম ,ওখানে ঝামেলা হয়েছে একটু , তারপর আসলাম আমাদের অফিসে ,কাল আবার একটা মিটিং আছে। 


তাপছিরার মায়া হলো,.... -ইশশশ কত কাজ করে মানুষটা, আমি তো সারাদিন ঘরেই বসে থাকি।


হাত দিয়ে আসিফের গাল হালকা  স্পর্শ করলো সে, তারপর কন্ঠস্বর একদম শান্ত করে বললো......-খারাপ লাগছে...? আমি চুল টেনে দেয়....?


আসিফ তাকালো, মেয়েটা যেহাত দিয়ে তার গাল স্পর্শ করেছে সেহাত টেনে নিয়ে চুমু খেলো.......-বউজান.......?


-হুমমম..।


-আমাকে একটু জড়িয়ে ধরো বউজান, সব ক্লান্তি কেটে যাক।


মেয়েটা আর একমুহূর্ত ব্যয় করলো না, সাথে সাথে ঝাপিয়ে পড়লো আসিফের বুকে, এত সুন্দর আবদার পূরণ করতে কী অত সময় ব্যয় করতে হয় , উঁহু।


কিছুক্ষণ পর আসিফ বলে উঠলো......-জান প্যাকেটতে কী আছে জানতে চাইবে না...?


-আপনার কোনো কাজের জিনিসই হবে হয়তো...। 


-না...?


তাপছিরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো.... -তাহলে কী আছে , দেখি আমি.... বলেই উঠতে যাবে তখনই আসিফ তাকে টেনে আবার নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।


-উঁহু এখন দেখতে হবে না জান, চলো আগে খেয়ে আসি, খিদে পেয়েছে। 


মেয়েটার নিজের উপর রাগ হলো,...-ইশশ, এতক্ষণ ধরে না খেয়ে আছেন উনি।


তাপছিরা ভাত নিয়ে বসেছে , বউ খাইয়ে ন দিলে কিছুতেই খাবে না আসিফ। 


তাপছিরা লোকমা মেখে আসিফের মুখে দিচ্ছে , এতক্ষণ আসিফ ভালো ছেলের মতো খেলেও এখন একটু একটু কামড় দিচ্ছে মেয়েটার হাতে , এতে তাপছিরা চোখ রাঙ্গিয়ে তার দিকে তাকাচ্ছে।


এবার একটু জোরেই কামড় দিলো আঙ্গুলে, মেয়েটা ব্যথা পেয়ে হালকা -আহ্ বলে শব্দ করে উঠলো। আসিফ ঠোঁট কামড়ে হাসে, বউকে জ্বালাতে ভীষণ ভালো লাগে তার, দুনিয়ার সব শান্তি একদিকে বউকে জ্বালানোর শান্তি একদিকে ,.... -আহ্ কী শান্তি। 


তাপছিরা রাগে গজগজ করতে করতে বললো.....-ভাত না খেয়ে হাত খাচ্ছেন কেনো আমার, অসভ্য লোক। 


আসিফ শব্দ করে হাসে.....-জান ইচ্ছে তো করছে পুরো তুমি টাকেই খেয়ে পেলি, এত্ত হট দেখতে লাগছে তোমাকে...।.... বলেই চোখ টিপ মারলো আসিফ।


তাপছিরা প্লেট রেখে আসতেই , আসিফ কোলে তুলে নিলো বউকে , মেয়েটা চুপচাপ গলা জড়িয়ে ধরে দেখতে তাকে তার #_মন্ত্রী_মশাই এর কান্ড। আসিফ রুমে এসে নামিয়ে দিলো তাকে। প্যাকেটটা নিয়ে এসে তাপছিরার হাতে দিলো, অবাক হয় মেয়েটা..... 


-জান রেডি হয়ে আসো...।


মেয়েটা অবাকের উপর অবাক হচ্ছে , এত রাতে রেডি হবো মানে।সে প্যাকেট খুলে দেখলো, একটা কালো শাড়ী , দুমুঠো কালো চুড়ি, চকলেট সাথে একটা বেলি ফুলের মালা।


তাপছিরা আসিফের দিকে তাকালো, আসিফ তার দিকেই তাকিয়ে আছে। 


-এগুলো কখন নিলেন....? 


-শাড়ী, চুড়ি, চকলেট সকালেই নিয়েছি , বেলি ফুলের মালাটা আসার সময় নিলাম , এবার যাও রেডি হয়ে আসো। 


-এখনই পরতে হবে...?.. তাপছিরা মিনমিনিয়ে বললো।


-ইয়েস ম্যাম..।


মেয়েটা আর কিছু বললো না। ১০ মিনিট পর ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ শুনে আসিফ সেদিকে তাকালো, তাপছিরা শাড়ীর কুচি ঠিক করতে করতে বেরিয়ে এলো।আসিফ হা করে তাকিয়ে আছে বউয়ের দিকে, যেন কোনো ঘোরের মধ্যে আছে সে।


আসিফকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভীষণ লজ্জা পেলো মেয়েটা।


আসিফ এগিয়ে যায় তার দিকে , বেলি ফুলের মালাটা হাতে পরিয়ে দেয় তাপছিরার ,হাতখোপা করে রাখা চুল গুলো একটানে খুলে পেলে, কপালে পরে থাকা বেবি হেয়ার গুলো ফু দিয়ে সরিয়ে দেয়, মেয়েটা কেঁপে কেঁপে ওঠে, আসিফ অধর ছোঁয়ায় মেয়েটার কপালে, আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয় মেয়েটা , আসিফ কোমর পেচিয়ে ধরে। 


তাপছিরা চোখ খুলে তাকায়, আসিফ তার দিকেই তাকিয়ে আছে, তাপছিরা কিছু একটা ভাবে, মিষ্টি করে হেসে ইশারায় আসিফকে তার দিকে ঝুঁকতে বলে, আসিফ  তাপছিরার দিকে ঝুঁকে আসে, দুহাতে ভালো ভাবে মেয়েটার কোমর পেচিয়ে ধরে। 


আসিফকে অবাক করে দিয়ে তাপছিরা আসিফের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়। 


আসিফ ঝট করে কোলে তুলে নিলো মেয়েটা, ফিসফিসিয়ে বলে......-জান তুমি কন্ট্রোললেস করে দিয়েছো, এবার সামলাও আমায়।


শিরশির করে উঠলো তাপছিরার সমস্ত শরীর ,মেয়েটা লজ্জায় মুখ লুকায় আসিফের বুকে।


_______________________


আজকে তাপছিরার ঘুম ভাঙ্গলো দেরিতে, সারারাত বেচারি ঘুমাতে পারেনি, পারেনি না দেয় ঘুমাতে আসিফ। আসিফ আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে তাকে।


ঘুমের মধ্যে কী কিউট একটা বাচ্চা লাগছে আসিফ। আসিফ একটু নড়েচড়ে উঠলো, অনেক বেলা হয়ে গেলো, সবাই অফিসে যাবে ,,নীলিমা নিশ্চয়ই রান্নাঘরে চলে গিয়েছে। 

 তাপছিরা নিজেও নড়েচড়ে উঠে, ব্যথায় চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়... 


-ভীষণ ব্যথা করছে জান....?


হঠাৎ আসিফের কন্ঠ শুনে তার দিকে তাকালো মেয়েটা, প্রশ্নটা বুঝতে পেরে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো,........ -ব্যথা দিয়ে জিজ্ঞেস করছে ,ব্যথা করছে কিনা খবিশ কোথাকার... বিরবির করে বললো তাপছিরা।


_________________


-বাবা তুমি আসবে বললে না কেনো.....? তাপছিরা গাল ফুলিয়ে বললো জাহেদ চৌধুরীকে।


-বলে দিলে কী তুমি সারপ্রাইজড হতে , এখন যেভাবে হয়েছো....?...জাহেদ চৌধুরী মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বললেন। 


-হয়েছে এবার ছাড়ো মেয়েকে , নাস্তা করতে দাও ওকে......পাশ থেকে উম্মে সালমা বলে উঠলেন। 


-দেখেছো মা, তোমার মা কিন্তু জেলাসফিল করছে আমাদের একসাথে দেখে.......জাহেদ চৌধুরীর কথা শুনে সবার হু হা করে হেসে উঠলো।


উম্মে সালমা রাগে ফোসফোস করতে করত বলেন...... -আসলে তোমাদের ভালো করতে নেই, যেমন ইচ্ছে করো বাপ-মেয়ে আমি আর কিচ্ছু বলবো না।


___________________


এখন বাজে সন্ধ্যা ৭:২৩ মিনিট তাপছিরা আর নীলিমা ঠিক করলো কেক বানাবে তারা, যেহেতু জাহেদ চৌধুরী বাড়ী এসেছেন বহুদিন পর।

কিছুক্ষণ পরই বাড়ী দুই কর্তা অফিস থেকে ফিরবেন, আসিফ আর নিলয় ফিরতে রাত হবে। 

 যেই কথা সেই কাজ দুবোন রান্না ঘরে গিয়ে কেক বানানো শুরু করলো। 

কেক বানিয়ে হালকা ডেকোরেশন করলো।


কলিংবেল বেজে ওঠায় সাহেরা খাতুন গিয়ে দরজা খুলে দেন, বিল্লাল চৌধুরী ,জাফর চৌধুরীর সাথে ছেলেদের দেখে অবাক হয় সে, ছেলেদের তো এখন বাড়ী ফেরার কথা নই।


-তোমরা আজকে এত তাড়াতাড়ি ফিরলে যে....?...আসিফ আর নিলয়কে উদ্দেশ্য করে বললো সাহেরা খাতুন। 

ততক্ষণে বিল্লাল চৌধুরী আর জাফর চৌধুরী তাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। 


-বউ ছাড়া অফিসে মন লাগে না মামুনি.....আসিফ ফিসফিস করে বললো সাহেরা খাতুনকে।


-পাজি ছেলে, যাও বউ রান্নাঘরে আছে.... সাহেরা খাতুন হেসে বললেন। 


তার বলতে দেরি কিন্তু রান্নাঘরের দিকে আসিফের ছুটতে দেরি হলো না।


নিলয় মিটমিট করে হাসে ভাইয়ের কথা শুনে।সেও আস্তে আস্তে রান্নাঘরের দিকে গেলো, ভাইয়ের কান্ড দেখবে সে, সাথে নিজের বউটাও তো দেখতে হবে।


 রান্নাঘরে গিয়ে আসিফের মুখটা চুপসে গেল, বেচারা মামুনির কথায় ভেবেছিল বউ তার একা, এই সুযোগে দু-একটা চুমু দিয়ে দিবে ,কিন্তু রান্নাঘরে বোনু আছে বললো না তো মামুনি।


--বউউউউ.....?


হঠাৎ আসিফের কন্ঠ শুনে তাপছিরা আর নীলিমা দুজনেই পেছন ফিরে তাকালো, আসিফ মুখটা বাচ্চাদের মতো করে দাড়িয়ে আছে , তার পেছনে নিলয় , তার অবস্থাও সেইম সেইম।


তাপছিরা চোখ রাঙ্গিয়ে তাকালো।নীলিমা মিটমিট হাসে। চট করে নিলয় সামনে এসে বলে......-চলো নীলুপাখি, ভাইয়াকে সুযোগ দাও, সাথে আমাকেও।


নীলিমার ইচ্ছে করলো তার মাথা পাটিয়ে দিতে ,...... --ছিঃ ভাইয়ার সামনে অসভ্যের মতো কথা বলে , অসভ্য লোক।..... সে কিছু না বলেই নিলয়ের সাথে শুরশুর করে বেরিয়ে গেল।


আসিফ তাপছিরার কোমর পেচিয়ে ধরে..... -চলো বউ রুমে চলো।


-ছাড়েন অসভ্য লোক , যখন তখন শুরু হয়ে যান, মা চলে আসবে কিন্তু। 


আসিফ তার কথায় পাত্তা দিলো না.....-রুমে চলো না বউ....?


-রুমে কেনো, আমার এখানে কাজ আছে। 


-আমার প্রেম প্রেম পাচ্ছে , তুমি রুমে না গেলে আমি এখানেই শুরু করতে পারি, আমার কোনো সমস্যা নেই.... বলে জোরে করে চুমু দিলো মেয়েটার গালে।


-আপনি যান আমি আসছি একটু পর।


আসিফ শুনলো না তার কথা টেনে নিয়ে গেলো তাপছিরাকে। 


রুমে এসেই পকেট থেকে দুটো চকলেট বের করে তাপছিরার হাতে দিলো আসিফ , মেয়েটা ভীষণ খুশি হলো তবে কিছু বললো না , একটা খুলে খেতে লাগলো।


-উফফফ,চকলেট খেলেও মানুষকে এত্ত সুন্দর লাগে আমার বউকে না দেখলে জানতাম না।...মনে মনে বললো আসিফ তার ভীষণ লোভ হলো এই চকলেটের প্রতি। 


-বউ একটু চকলেট দাও....?


--উঁহু এগুলো আমার আপনাকে দিবো না। 


-সমস্যা নেই জান ভালো করে খাও, কিছুক্ষণ পর চকলেট নিজেই আমার মুখে চলে আসবে।


আসিফের কথার অর্থ বুঝলো না মেয়েটা....-মানে......?


আসিফ উত্তর দিলো না, তাপছিরা কিছু বুঝার আগে আসিফ তার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয় , মেয়েটা চোখ বড় বড় করে নেয় ,ছাড়তে চাই আসিফ ছাড়ে না।


বেশ কিছুক্ষণ পর তাকে ছেড়ে দেয় আমি , জোরে জোরে শ্বাস নেয় মেয়েটা এক্ষুনি ধম বন্ধ হয়ে আসছিল তার।


-নেন আপনার চকলেট আপনিই খান, অসভ্য লোক..... আসিফ হাতে অর্ধেক চকলেটটা দিয়ে বললো তাপছিরা। 


আসিফ ঠোঁট কামড়ে হাসে, পরপর চকলেটে কামড় বসায়।


চলবে........? 


(বি:দ্র: সম্পূর্ণ ভাবে কপি করা নিষেধ।)

0 Comments:

Post a Comment