গল্প মন্ত্রী_মশাই_ভালোবাসে_তোমায় পর্ব ৩

 গল্প - #মন্ত্রী_মশাই_ভালোবাসে_তোমায়

লেখনীতে - #মোছাম্মৎ_তাপছিরা_চৌধুরী


পর্ব -৩


তাপছিরা ,,নীলিমা দুবোন এখন পাক্কা গিন্নী , সকালে উঠে সবার জন্য নাস্তা রেডি করা থেকে রাতের খাবার অবধি সব দুবোনই সামলাচ্ছে , শাশুড়ি আর মা-দের পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে যে তারা রান্না ঘরে  তাদের কোনো জায়গা নেই।


বাড়ীর দুই কর্তা বাড়ী ফিরেছেন রাত ৯ টায়, আসিফ ,নিলয় এখনো ফিরেনি, কাল সকালে ফরেনার ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং আছে তাদের। 


তাপছিরা আর নীলিমা নিজ নিজ রুমে গেলো সারাদিন ভীষণ দখল গিয়েছে তাদের উপর ,মুখ ফুটে বলেনি কাউকে ,এখন সবার ঘুমের সময়, তারাও এখন একটু রেষ্ট নিবে, আসিফরা আসলে পরে নিচে আসবে। 


তাপছিরা রুমে গিয়ে গা এলিয়ে দিলো, চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিলো মেয়েটা, মুহূর্তেই চেখে ভেসে ওঠলো আসিফের মুখ ,.....-ইশশ সারাদিনের ব্যস্ততায় মানুষটার খবর নেওয়া হয়নি।


সে পাশ ফিরে বালিশের পাশ থেকে মোবাইলটা নিলো, সময় এখন ১০:৫৩ বাজে, অবাক হলো মেয়েটা.... -এত সময় হলো তারা ফিরছে না কেনো।


তাপছিরা কল দিলো আসিফকে, রিং হওয়ার পর কেটে দিলো আসিফ। মেয়েটার রাগ হলো.......- নিজে তো ফোন দিলোই না উল্টো আমার কল কেটে দিলো।


একটু পর মেসেজ আসলো.....-সরি বউজান, একটু ব্যস্ত আছি তাই কল কেটে দিয়েছি , রাগ করে না আমার সোনা বউজান, আমি একটু পরই আসছি , রেডি থেকো।


মেসেজটা পরে হাসলো তাপছিরা , মানুষটাকে কিছুই বললো না, কিন্তু মানুষটা ঠিকই বুঝে গেলো, উত্তরে কিছু বললো না সে। আসিফের ছবি দেখতে দেখতে কখন যে চোখ লেগে গেলো বুঝতেই পারেনি সে।


___________________________


সিফাত গাড়ীতে বসে ফাহাকে মেসেজ দিলো.....-ফাহা জান কী করো....?


একটু পর ফাহার রিপ্লাই আসলো.... -কিছু না, তুমি এখনো আসছো না কেন....?


সিফাত দুষ্টু হেসে পূনরায় মেসেজ দিলো....-আসতে হবে.....? 


ফাহার মাথায় আগুন জ্বালে উঠলো,..... -১১ টা বাজতে চললো, সে এখন আমার কাছে জিজ্ঞেস করছে আসবে কিনা।


-নাটক করছো আমার সাথে , আসতে হবে মানে কী, বউ আরেকটা জুটিয়েছো নাকি, সারাক্ষণ তো ওখানেই থাকতে মন চাই তোমার। 


ফাহার মেসেজ দেখে সিফাত হা হয়ে গেলো,.....-হঠাৎ বউ এতো চটে গেলো কেনো.?


-কী হয়েছে পাখি..? মন খারাপ তোমার..? ছেলে জ্বালাচ্ছে বেশি...? 


ব্যাস এটুকুতেই ফাহার মন গলে গেলো, এত সুন্দর করে কথা বললে কী আর রাগ থাকে...... -তোমাকে মিস করছি , বাড়ী ফিরছো না কেন এখনো।.....শান্ত কন্ঠে বললো সে।


সিফাত হাতে চাঁদ পেলো যেন। বউ আজ তাকে মিস করছে, উফফ, সে পারলো না যেটুকু পথ বাকি আছে , সেটুকু উড়েই বাড়ী ফিরতে। 


-ওয়েট করো, আমি আসছি বউ, তোমার জন্য চকলেট নিয়ে আসবো। 


ফাহা মহাখুশি , সিফাতের এই ছোট ছোট জিনিস গুলো তার ভীষণ ভালো লাগে। 


১৫ মিনিট পর সিফাত বাড়ীতে ঢুকলো, বউ তার একা বসে আছে বসার ঘরে, বুঝলো ছেলে আর মা হয়তো ঘুমাচ্ছে ,ফাহা দৌড়ে সিফাতের কাছে গেলো, সিফাত টেবিলে অফিসের ব্যাগ আর চকলেটের প্যাকেট রেখে বউকে জড়িয়ে ধরলো, ফাহা আজ মা আসছে , ছেলে আসছে বলে ভয় দেখালো না বরং নিজ থেকে সিফাতকে জড়িয়ে ধরলো , এতে বেশ অবাকই হলো সিফাত।


-কী হয়েছে জান, ভাত খেয়েছো তুমি....? 


-আমার ভালো লাগছে না, তুমি এভাবেই ধরে রাখো।


--আচ্ছা আমি আছি তো, রুমে চলো।


-উঁহু.....ফাহা নড়লো না নিজের জায়গা থেকে..। 


সিফাত টেবিলে থেকে অফিসের ব্যাগ আর চকলেটের প্যাকেট নিয়ে ফাহার হাতে দিলো, ঝট করে কোলে তুলে নিলো। 


রুমে এসে তাকে বিছানায় বসিয়ে দিলো সিফাত..... -জান আমি ফ্রেশ হয়ে আসি, তুমি বসো।


--আচ্ছা। 


ফাহা চুপচাপ বসে আছে ,সিফাত বেরিয়ে আসতেই তার দিকে তাকায়।


সিফাত গিয়ে বউয়ের পাশে বসে ,কিছু বলার আগে ফাহা ঝট সিফাতের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।


_____________________


--আম্মু দরজা খুলো, নয়তো তোমার বউমাকে বেরিয়ে আসতে বলো...।


পারবিন চৌধুরী ছেলের কথা শুনে অবাক হয়ে ইশপার দিকে তাকায়, তার ঘরে শোয়ার সময় তো মেয়েটা বলেছিল আজ মায়ের কথা মনে পড়ছে তাই তার সাথে শুতে এসেছে।আবরার হোসেন প্রায় সময় ঢাকার বাইরে থাকেন, তিনি তো একা তাই আর কিছু বললেন না ইশপাকে।


আদিলের কথা শুনে ও না শুনার মতো শুয়ে রইলো ইশপা।পারবিন চৌধুরী ইশপাকে আস্তে করে ডেকে বলেন..... -কী হয়েছে মা, আদিল তোমাকে কিছু বলেছে....? 


ইশপা শাশুড়ির কথা শুনে একটু নড়েচড়ে উঠে বসে.....--আম্মু আমি ওঘরে যাবো না আজকে।


আদিল বার বার ডেকেই যাচ্ছে। পারবিন চৌধুরী ছেলের বউয়ের কথায় অবাক হয়,এমন তো সে কখনো বলেনি , নিশ্চয়ই আমার ছেলেই কিছু করেছে। 


-আচ্ছা, এখন তুমি যাও, কাল সকালে আমি ওর বিচার করবো, যাও ও তোমাকে ডাকছে তো মা।


ইশপা শাশুড়ির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়, তার মোটেই ইচ্ছে নেই আজ লোকটার সাথে এইঘরে শুয়ার।

পারবিন চৌধুরী রুমের দরজা খুলে দেন, ওমনি ছেলে হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকে ,ঝট করে ইশপাকে কোলে তুলে নেয়।


পারবিন চৌধুরী কিছু বলবেন তার আগে আদিল মা-কে বলে উঠে.... -মা কালকে বকে দিও এখন আমি যাই কেমন।...বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।


পারবিন চৌধুরী হাসেন , ছেলে একদমই বাপের মতো হয়েছে। 


শাশুড়ীর সামনে এভাবে কোলে তুলে নেওয়ায় ভীষণ রাগ হলো মেয়েটার, ছিঃ কী ভাববেন সে।তাও কিচ্ছু বললো না ইশপা।


আদিল রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো। রাগে দুঃখে মেয়েটার কান্না পাচ্ছে। 


-মায়ের রুমে শুয়েছো কেনো আফরোজা....? 


ইশপা উত্তর দিলো না সে আজ কিছুতেই উত্তর দিবে না লোকটাকে।অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো।আদিল বউকে জড়িয়ে ধরলো.। 


-ছাড়েন ঘুমাবো আমি।


-- ছাড়াছাড়ি নেই মিসেস আফরোজা জাহান। 


মেয়েটা প্যাছ প্যাছ করে কাঁদতে শুরু করলো।


-আপনি একটুও ভালোবাসেন না আমাকে।


-কে বললো আমি তোমাকে ভালোবাসি না....?


-তো ভালোবাসলে সকালে ধমক দিলেন কেনো...?....নাক টেনে টেনে বললো ইশপা।


--এইদিকে আসো এখন ভালোবাসি তোমায়...।


____________________


-নীলুপাখি.....?


রুমে এসেই নিলয় নীলিমাকে ডাকলো, নীলিমা ঘুম ঘুম কন্ঠে উত্তর দিলো....


-জি বলেন...?


নিলয় বউয়ের মুখের দিকে তাকালো, মুখে ক্লান্তির চাপ স্পষ্ট , সারাদিন ভীষণ কাটে তার বউ, পাক্কা গিন্নী হয়ে উঠেছে যে, ভীষণ মায়া হলো তার, এবার বাড়ীতে হেল্পার রাখতেই হবে , এবিষয়ে ভাইয়ার সাথে কথা বলবে সে, বোনু বা নীলিমা কারো কথা শুনবে না।


নিলয় বিছানায় বউয়ের গা ঘেঁষে বসলো একটুখানি উষ্ণতা পেয়ে মেয়েটা কোমর জড়িয়ে ধরে আরাম করে শুলো, নিলয় নীলিমার কপালে শব্দ করে চুমু খায়, হাত বুলিয়ে দেয় তার মাথায় , নিলয়ের উপস্থিতি টের পেয়ে, চোখ খুলে তাকায় নীলিমা....


-আপনি কখন আসলেন , আমায় ডাকলেন না কেনো..? ফ্রেশ হয়ে আসেন আমি খাবার দিচ্ছি....? 


-শুয়ে থাকো জান, আমি ফ্রেশ হয়ে এলে তারপর উঠিও, এখন রেষ্ট নাও।


নিলয়ের মুখে ও ক্লান্তির চাপ স্পষ্ট ,নীলিমা তাকিয়ে থাকে....-কাজের চাপ কী বেশি...? অনেক বেশি ক্লান্ত লাগছে আপনার। 


নিলয় হাসে.....--একদমই নেই এখন...।আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।


--আচ্ছা।


নিলয় ফ্রেশ হয়ে এসে নীলিমাকে নিচে নামতে দিলো না আর, নিজেই এসে এক প্লেটে করে খাবার নিয়ে গেলো দুজনের জন্য , রুমে এসে দেখলো নীলিমা ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানার উপর পা তুলে বসে আছে , প্লেট টেবিলের উপর রেখে দরজা আটকে আসলো, হাত ধুয়ে এসে ভাত মাকিয়ে নীলিমার মুখের সামনে ধরে বললো....-হা করো জান..।


-একি আগে আপনি খান আমি পরে খাবো, নিশ্চয়ই খিদে পেয়েছে আপনার।


-আমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে যে আমার বউয়ের খিদে পেয়েছে ভীষণ , তাকে রেখে আমি আগে কী করে খায়, তাড়াতাড়ি হা করো জান।


নীলিমা কথা না বাড়িয়ে খেয়ে নিলো, নিলয় এক লোকমা বউকে দিলো তো এক লোকমা নিজে খেলো।


খাওয়া শেষে নিলয় নিজেই প্লেট নিচে রেখে আসলো, ততক্ষণে নীলিমা শুয়ে পড়েছে। নিলয় রুমে এসে লাইট নিভিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো, বউকে বুকে টেনে নিয়ে শান্তিতে চোখে বন্ধ করলো।


_______________________


--আসিফ রুমে এসে দেখে তার বউজান গভীর ঘুমে...।


চলবে............? 


(বি:দ্র: সম্পূর্ণ ভাবে কপি করা নিষেধ।)

0 Comments:

Post a Comment