#মন্ত্রী_মশাই_ভালোবাসে_তোমায়
#মোছাম্মৎ_তাপছিরা_চৌধুরী
পর্ব-২
সকালের এক চিলতে রোদ মুখের উপর পড়তেই চোখ খুলে তাকালো আসিফ , চোখ খোলার চেষ্টা করলো ভীষণ জ্বলছে , হালকা চোখে খুলে দেখে, বইটা গুটিসুটি মেরে তার বুকের উপর ঘুমাচ্ছে , বেবি হেয়ার গুলো মুখের উপর ছড়িয়ে আছে, গাল গুলো হালকা ফুলাফুলা হয়ে আছে। লোভ সামলাতে না পেরে বউয়ের গালে শব্দ করে চুমু খেলো আসিফ , এতে মেয়েটা চোখমুখ কুচকে ফেললো।
ফু দিয়ে বেবি হেয়ার গুলো সরিয়ে দিলো, মেয়েটা একটু নড়েচড়ে উঠে।
-উফফ, বোনু একটু ঘুমাতে দে না , এমন করছিস কেন।
বেচারা আসিফ বউয়ের কথায় টাস্কি খেলো, শেষমেষ বোনু বানিয়ে দিলো তাকে মেয়েটা।
-এই বোনু কে হুম, উঠো দেখি...মেয়েটাকে হালকা ঝাকিয়ে বললো আসিফ।
আসিফের কণ্ঠস্বর শুনে মেয়েটা ধরপড়িয়ে উঠে। চোখ খুলে কিছুক্ষণ আসিফের দিকে তাকিয়ে থাকে, সে এখানে কেন, বিয়ের কথা মাথায় আসতেই জিভ কাটে, ইশশ জামাইকে বোন ডেকেছে সে।
-বউউউউ...?
উফফ, এত্ত সুন্দর ডাকটা।
-হুমম..তাপছিরা ছোট করে উত্তর দেয়।
-মর্নিং কিস দাও জান।
তাপছিরা চোখ বড় বড় করে তাকালো, ছিঃ এভাবে কেউ বলে, লজ্জায় মুখ লাল বর্ন ধারণ করে তার।
-আমি ফ্রেশ হবো, সবাই হয়তো ওয়েট করছে আমাদের জন্য।
-আগে মর্নিং কিস, তারপর ফ্রেশ হবে।
-আমি উঠবো ছাড়েন আমায়... মুখটা কাঁদো কাঁদো করে বললো।
আসিফ শব্দ করে হেসে দিলো.... --আচ্ছা আমার হাতে ফ্রেশ হতে চাও আগে বলবে তো।
টাস্কি খেলো মেয়েটা, সে আবার কখন বললো একথা, আজব।
-বুঝতে পারছো না তাই তো।
তাপছিরা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো।
--আচ্ছা শুনু তাহলে , যদি তুমি এখন আমাকে মর্নিং কিস না দাও তাহলে মনে করবো তুমি আমার সাথে ফ্রেশ হতে চাইছো।
তাপছিরা অসহায় হয়ে তাকালো, মানুষটা ভীষণ খারাপ। খালি লজ্জা দেয়।
-আসিফ ভাই.....?
চটে গেলো আসিফের মাথা ,বিয়ের পরের দিন কোনো বউ তার বরকে ভাই ডাকতে এই প্রথম দেখলো আসিফ।
হুট করে মেয়েটাকে নিজের সাথে চেপে ধরে বললো....- জান প্রথমে ভাবলাম ছেড়ে দিবে, কিন্তু এখন কোনো ছাড়াছাড়ি নেই , মর্নিং কিস আমার ডেফিনেটলি চাই।
তাপছিরা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো.... -এমন করছেন কেনো আপনি...?
-কেনো করছি বুঝ না জান, একটা দিয়ে দাও ছেড়ে দিচ্ছি ,আমার কিন্তু লেট হচ্ছে।
-- পারবো না , ছাড়েন তো, না হয় আমি চিৎকার করবো বলে দিচ্ছি।
-চিৎকার করে কী বলবে শুনি।
-বলবো আপনি আমায় মেরেছেন।
-ওকে, দাও চিৎকার ,তুমি না পারলে আমাকে বলো আমি দিচ্ছি।..... আসিফ ভাবলো মেয়েটা তার সাথে মজা করছে , কিন্তু তাকে ভুল প্রমাণ করে মেয়েটা সত্যি সত্যি চিৎকার দিলো।
-কাকিয়া.........?
আসিফ আহাম্মক বনে গেলো, কী পাজি মেয়ে সত্যি সত্যি চিৎকার দিলো ,তাও ডাকলো কিনা নিজের শাশুড়ীকে।
অন্যদিকে মেয়েটার চিৎকার শুনে বাড়ীর সবাই আসিফের রুমের সামনে হাজির।
বাইরে থেকে রোকসানা বেগম চেঁচিয়ে বলছেন..... -কী হয়েছে মা দরজাটা খুল ,আসিফ কোথায় তুই।
তাপছিরা দৌড়ে গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো, বেচারা আসিফ আর উপায় না পেয়ে দরজা খুলে দিলো, সবাই আসিফকে টেলে রুমে প্রবেশ করে, মূলত মেয়েটাকে খুঁজছে তারা, তাপছিরাকে না পেয়ে সবাই আসিফের দিকে তাকালো।
-আমার বউমা কোথায় আসিফ..... বিল্লাল চৌধুরী গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন ছেলেকে।
আসিফ অবাক হয়ে তাকালো বাবার দিকে, আজব কাল অবধি তো বাবা তাপছি বা মা বলে সম্বোধন করতো মেয়েটাকে, আজকে বউমা বলছে কেনো, শুনতে কেমন জানি লাগছে।
-কী হলো উত্তর দাও, কোথায় আমার বউমা।
-ওয়াশরুমে।
সবাই অদ্ভুত চোখে তাকালো..... -মেয়েটা ওয়াশরুমে হলে চিৎকার দিলো কে....রোকসানা বেগম ছেলের সামনে এসে বললেন।
-তোমাদের আদরের মেয়ে চিৎকার দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়েছে।
-সুন্দর করে কথা বলো আসিফ ,সে তোমার স্ত্রী হয়।
--আচ্ছা ঠিক আছে আম্মাজান, আমার বউ চিৎকার দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়েছে। এবার ঠিক আছে....?
নিলয়, নীলিমা ভাইয়ের কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো। বিল্লাল চৌধুরী লজ্জা ও পেলেন, ছেলে দিনকে দিন লাগামহীন হয়ে যাচ্ছে , কার সাথে মিশচ্ছে কে জানে।
-কী হয়েছে বাবা, মেয়েটা এভাবে চিৎকার করলো কেনো.....এতক্ষণে উম্মে সালমা বলে উঠলেন।
-ঐ , আর কি আরশোলা দেখে ভয় পেয়েছিল।
উম্মে সালমার রাগ হলো ভীষণ ,এতবড় দামড়ি মেয়ে হয়েছে , বিয়ের প্রথম দিনই আরশোলা দেখে এভাবে চিৎকার দিলো, ছিঃ ছিঃ , অন্যের বাড়ী হলে এতক্ষণে মানসম্মান সব যেতো।
-আজকে বের হোক, বেয়াদব মেয়ে....বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন তিনি।
তার পিছু পিছু সবাই বেরিয়ে গেলো, রয়ে গেলো শুধু নিলয় ,নীলিমা।
-ভাইয়া বোনু কী আসলেই আরশোলা দেখে ভয় পেয়েছিল....? ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো নিলয়।
আসিফ চোখ কটমট করে তাকাতেই নিলয়,নীলিমা দুজনেই দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।কিছুক্ষণ পর তাপছিরাও বেরিয়ে আসলো, আসিফ কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেয়েটাকে দেখে ঘোরের মধ্যে চলে গেলো সে।
সদ্য গোসল করে একটা নীল রঙের শাড়ী পড়ে বেরিয়েছে তার বউ, আসিফ মেয়েটার সামনে গিয়ে এক ঝাটকায় কোলে তুলে নিলো। ভয়ে চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো তাপছিরা। আসিফের গলা জড়িয়ে ধরে বললে.......
-প্লিজ, পেলে দিবেন না ,আর কখনো এমন করবো না প্রমিজ, পেলে দিবেন না প্লিজ।
আসিফ হাসে.....এই রূপে সাতখু*ন মাপ তোমার বউজান...।
মেয়েটা বুঝতে পারে, লজ্জায় মিহিয়ে যায়, চুপচাপ গলা জড়িয়ে ধরে থাকে আসিফের।
__________________
তাপছিরা রুম থেকে বেরিয়ে দেখে সাফওয়ান দাড়িয়ে আছে, খুশী হয়ে তাকে কোলে নিলো মেয়েটা।
-মামুনি জানো আমি কালকে রাতে তোমার সাথে ঘুমাতে চেয়েছিলাম কিন্তু মাম্মাম বললো, তুমি বাপির সাথঘুমাবে তাই আমাকে আসতে দিলো না।
-ওলে আমার সাফু বেবি আমার সাথে ঘুমাতে চাই, আচ্ছা আজকে আমরা একসাথে থাকবো।
বেচারা আসিফের মুখ চুপসে গেলে সত্যি সত্যি হয়তো আজকে বউ ছাড়া থাকতে হবে তার।
--আচ্ছা মামুনি তুমি বাপির সাথে কেনো ছিলে।
সাফওয়ান এর প্রশ্ন শুনে তাপছিরা খুকখুক করে কেঁশে উঠে। আসিফ ছোট করে সাফওয়ানকে বলে....-তোমার মামুনি ভয় পেয়েছিল তাই আমার সাথে ঘুমিয়েছে বুঝলে।
সাফওয়ান খিলখিল করে হেসে উঠলো।
উম্মে সালমা রান্নাঘর থেকে এসে মেয়েকে দেখে রেগেমেগে বললেন..... -এইদিকে এসো বেয়াদব মেয়ে।
-কী হয়েছে মা ,আমি কি করলাম...? বাচ্চা বাচ্চা ফেইস করে বললো তাপছিরা।
-কি করেছো জানো না তুমি ,এইভাবে চিৎকার দেয়, সবাইকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে তুমি।
আসিফ পড়লো মহাবিপদে, তার বউ যদি এখন কিছু বলে তাহলে সে তো শেষ ,তাই নিজেই আগবাড়িয়ে বললো.....
-থাক এবারের মতো ছেড়ে দাও ছোটো মা, পরের বার এমন ভুল না হলেই হলো।
রোকসানা বেগম চোখ ছোট ছোট করে তাকান ছেলের দিকে ,ছেলে এত সাধু সাজছে কেনো, বুঝতে চাইছেন তিনি।কিছু বললেন না তিনি, জানেনই তো ছেলেটা সারাক্ষণ মেয়েটার পেছনে লেগে থাকে।
-কীরে দোস্ত কেমন কাটলো রাত হ্যা.....ফাহা ফিসফিসিয়ে বললো।
-মানুষের রাত যেমন কাটে তেমনই কেটেছে আরকি......মুখ গোমড়া করে বললো তাপছিরা।
ফাহার বুঝি বিশ্বাস হলো না কথাটা.......-এই সত্যি করে বল ভাইয়া কিছু করেনি তোর সাথে।
তাপছিরা চোখ গরম করে তাকালো.....-কী করবে হিটলারটা আমার সাথে।
ফাহা ফোস করে শ্বাস ছাড়লো, তার মানে কিছুই হয়নি এদের মাঝে,...... -ধ্যাত শুধু শুধু সকালের ঘুমটা নষ্ট করে আসলাম বান্ধবীর বাসর রাতের গল্প শুনবো বলে, তাদের তো কিছুই হলো না।
উম্মে সালমা মেয়েকে মোবাইল ধরিয়ে দিয়ে বললো কথা বলতে , স্কিনে তাকিয়ে দেখে তার বাবা, খুশী হলো সে।মোবাইল কানে দিতেই জাহেদ চৌধুরী বললেন...... -কেমন আছো মা...?
-আমি ভালো আছি বাবা, তুমি কেমন আছো...?
-আমিও ভলো আছি, এখন কী করছে আমার মা টা।
-বসে আছি বাবা, তুমি কখন আসবে তোমাকে ছাড়া ভালো লাগছে না।
-আমার মা টা বাবাকে কী মিস করছে....?
-হুম অনেক।
--আচ্ছা বাবা তাড়াতাড়ি ফিরবো , ভালো থেকো, মায়ের সাথে বেশি দুষ্টামি করোনা এখন, আমি আসলে একসাথে জ্বালাবো তোমার মা-কে বুঝলে তো।
বাবার কথায় মেয়েটা খিলখিল করে হাসে।
আসিফ নাস্তা করে ওপরে চলে গেলো, তাপছিরা ,নীলিমা , ফাহা সবাই আড্ডা দিচ্ছে সাফওয়ান এর সাথে দুষ্টামি করছে। এমন সময় আসিফ ডাক দেয় তাপছিরাকে..।
-তাপছি এইদিকে এসো, কাজ আছে।
মেয়েটা শুনেও না শুনার মতো করে টাই বসে রইলো। আসিফ বেশ কয়েকবার তাপছি ,তাপছি বলে ডাকলো, বউ যাচ্ছে না দেখে এবার ভাবলো অন্য ভাবে ডাকা যাক।
--বউউউউ , বউজান কোথায় তুমি।
রোকসানা বেগম হেসে বললেন...... -যাতো মা, ছেলেটা দিন দিন এমন বাদর হচ্ছে কী বলবো।
তাপছিরা কিছু না বলে চলে গেলো, মানুষটার কী মাথা খারাপ এতো গুলো মানুষের সামনে কেউ এভাবে ডাকে।
____________________
--নীলু জান শার্টের বোতাম গুলো লাগিয়ে দাও।
হঠাৎ নিলয়ের কথা শুনে থমকে গেলো নীলিমা , নিলয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো।
-কী হলো আসো, তাড়াতাড়ি করো।
নীলিমা বিনাবাক্যে, বোতাম লাগানো শুরু করলো।
নীলিমা কাছে আসতেই তার কোমড় পেঁচিয়ে ধরলো নিলয়, কেঁপে ওঠে নীলিমা।
-জান কালকের পর তো কাঁপাকাঁপি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা, এখনো কাঁপছো কেন, আমি আমার কাজে সক্ষম নই......?
কথাটা শুনে নীলিমার কান গরম হয়ে উঠে।
--ছিঃ ,অসভ্য।
-তোমারই তো।
____________________
-এই আপনার লজ্জা করেনা, এভাবে বউ, বউ করে চেঁচাচ্ছেন কেনো, সবাই কী ভাববে অসভ্য লোক।
-আমি তোর সামনে সবসময় নির্লজ্জই থাকতে চাই জান, না হয় বাচ্চার বাপ হবো কেমনে।.....বলেই বউকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো আসিফ।
--আপনি আমাকে তুই করে বলেছেন ,আমি কাকিয়াকে বলে দিবো কিন্তু।
-সবসময় মায়ের ভয় দেখাও কেনো বউ, তোমাকে যে এত আদর করি সেটা দেখো না।
--আচ্ছা কী জন্য ডেকেছেন সেটা বলেন।
-তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিল জান ,তাই ডেকেছি।
-দিন দিন অসভ্য হচ্ছেন #মন্ত্রী_মশাই...।
-না হয় বাবা হতে পারবো না জান।
চলবে......?
(বি:দ্র:সম্পূর্ণ ভাবে কপি করা নিষেধ।)
0 Comments:
Post a Comment