গল্প মন্ত্রী_মশাই_ভালোবাসে_তোমায় পর্ব ১

 বাসর ঘরে জড়োসড়ো হয়ে একহাত ঘোমটা টেনে  বসে আছে এক রমণী, ভয়,  লজ্জা সব কিছু যেন একসাথে চেপে ধরেছে তাকে, সারা রুম ফুলের গন্ধে মউমউ করছে, যদিও রুমটা তার ভীষণ পরিচিত তবুও আজকে কেনো যেন অন্য রকম মনে হচ্ছে তার।


রমণীটি এসব ভাবছিলো এমন সময় খট করে দরজা খোলার শব্দ শুনে কেঁপে ওঠে মেয়েটা। দু'হাতে শাড়ীর আঁচল চেপে ধরে সে, বুকের ভেতর ধুকপুকানি বেড়েই চলেছে।


সে বুঝতে পারলো মানুষটা তার একদম কাছে এসে দাঁড়িয়েছে,  রমণীটি একটু নড়েচড়ে বসলো, হুট করে মানুষটার তার কানের কাছে গিয়ে ফিসফাস করে বললো.... 


-আমি তোমাকে ভালোবাসি নীলুপাখি।... নেশালো কন্ঠে বলে উঠলো নিলয়। 


চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয় নীলিমা। নিলয় আস্তে আস্তে ঘোমটা তুলে নিজের প্রেয়সীকে দেখে, নিলয় ঠোঁট কামড়ে হাসে, ইশশ কি কিউট লাগছে তার বউকে।


নিলয় তাকে আস্তে করে ডাক দেয়...-নীলুপাখি...? 


মেয়েটা চোখ খুলে তাকায়, সালাম করার কথা মাথায় আসতেই তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে নেমে নিলয়ের পা ধরে সালাম করতে যায় সে, ইশশ ভুল হয়ে গিয়েছে তার, সবাই বলেছিল নিলয় আসলেই তাকে সালাম করতে,  সে তো ভয়ে সব কিছুই ভুলে গিয়েছে। 


নিলয় তার প্রেয়সীকে থামিয়ে দেয়, বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় মেয়েটাকে,  আহ, শান্তি লাগছে, বউকে জড়িয়ে ধরার শান্তিটা আলাদা। নীলিমা আবেশে দু-চোখ বুঝে নেয়। ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে পেয়েছে এর থেকে বেশি আর কী চাই তার।


-নীলুপাখি চলো, ফরজ নামাজ আদায় করে নেয়।


নীলিমা কিছু বললো না শুধু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়। অযু করে এসে নামাজ আদায় করে নিলো তারা।


-তুমি কী আমার উপর রেগে আছো নীলুপাখি...? 


মাত্রই বিছানায় এসে বসেছিল নীলিমা, নিলয়ের এমন প্রশ্ন শুনে চট করে মাথা তুলে তাকায় তার দিকে। 


-না, না আমি রাগ করবো কেনো...? নীলিমা আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলো। 


-তাহলে, আমার সাথে কথা বলছো না কেন...?


নীলিমা কি বলবে ভেবে পেলো না, সে তো লজ্জায় কথা বলতে পারছে না, তার উপর নিলয় ভাই তাকে তুমি করে সম্বোধন করছে। 


নিলয় নীলিমার পাশে গিয়ে বসে, থুতনিতে হাত রেখে তার দিকে তাকায়, মেয়েটা তাকে রেখে মাটি দেখছে কেনো,মেয়েটা এত লজ্জা পাচ্ছে কেনো,....-নীলুপাখি, লজ্জা পেলে তোমাকে টমেটোর মতো দেখতে লাগে, খেয়ে ফেলতে মন চাই একদম। 


নীলিমার কান গরম হয়ে ওঠে, তাড়াতাড়ি হাত দিয়ে নিলয়ের মুখ চেপে ধরে.... -ছিঃ, কী লাগামহীন কথাবার্তা নিলয় ভাই। 


ব্যাস মুডটাই নষ্ট হয়ে গেলো নিলয়ের,  বেচারা বাসর ঘরেও বউ তাকে ভাই ডাকছে, ইশশ সহ্য হলো না তার।


নীলিমার হাত ছাড়িয়ে ঠোঁটে চুমু খাওয়া শুরু করে, ঘটনা টা এত তাড়াতাড়ি ঘটেছে যে মেয়েটা বুঝতেই পারলো না।


বেশ কিছুক্ষণ পর নিলয় মেয়েটাকে ছেড়ে দেয়,  হাতের উল্টো পিঠে ঠোঁট মুছতে মুছতে বলে.... -ভাই ডাকছিস কেনো বেয়াদব। 


নীলিমা জোরে জোরে শ্বাস নেয়, পাষাণ লোকটা এক্ষুনি মেরে ফেলতো তাকে, ভুল করে না হয় ভাই ডেকেছিল আরকি, তাই বলে এমন করবে..।


-এই আপনি আমায় ছোলেন কেন.... রাগে গজগজ করতে করতে বললো নীলিমা। 


নিলয় শব্দ করে হাসে....-ছোঁয়নি তো বউ, কিস করেছি,  বুঝতে পারো নি তুমি,  ওকে নো প্রবলেম চলো আবার করে বুঝিয়ে দেয়।


________________


আসিফ বাসর ঘরে ঢুকেই দেখে তার বউ গুটিশুটি মেরে ঘুমাচ্ছে। বউ ঘুমিয়ে গিয়েছে দেখে বন্ধুদের দিকে কয়েক হাজার গা*লি ছুড়ে গিলো সে, ইশশ বউটা না জানি কতক্ষণ ধরে বসেছিল তার জন্য,  শা*লা বন্ধুগুলোর জন্য এমন একটা রাত মিস করতে হলো।সে গিয়ে বিছানার পাশে দাঁড়ালো, বউ মুখখানা দেখে এতক্ষণ যে রাগটা লাগছিল সেটা মুহূর্তেই ভেনিস হয়ে গেলো,... -এত্তো আদুরে মেয়েটা, থাক ঘুমাক সে, সারাদিন অনেক দখল গিয়েছে মেয়েটার উপর। 


আসিফ কাবার্ড থেকে টিশার্ট আর টাওজার নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। 


আসিফ যেতেই মেয়েটা চোখ খুলে তাকায়, তাপছিরার ঘুম তো আসিফ রুমে আসা মাত্রই ভেঙে গিয়েছিল  সে শুধু আসিফকে শাস্তি দেওয়া জন্য ঘুমানোর নাটক করছিল, মেয়েটা একটু নড়েচড়ে উঠলো,  উফফ এত ভারি শাড়ী নিয়ে কী শুয়ে থাকা যায়, কিন্তু এখন তো উঠতেও পারবে না সে, আসিফ ভাই যদি কোনো ভাবে বুঝতে পারে সে এতক্ষণ নাটক করছিল,  তাহলে যে তার খবর আছে। বাধ্য হয়ে আগের মতো শুয়েই রইলো সে।


আসিফ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে পূনরায় তাপছিরার কাছে আসে, শাড়ী পেটে উপর থেকে সরে গিয়েছে, আসিফ ঢুক গিলে,...-উফফ মেয়েটা তাকে ঘুমাতে দিবে না আজকে। 


ঠিক করার জন্য শাড়ীতে হাত দেয় আসিফ। এমন সময় তাপছিরা চেঁচিয়ে উঠে.... -এই, এই আপনি আমার গায়ে হাত দিলেন কেন,  অসভ্য লোক..? 


বেচারা আসিফ আহাম্মক বনে যায়,বেচারা কিছুই তো করলো না তার আগেই বউ তাকে অসভ্য উপাধি দিয়ে দিলো।


চট করে মাথায় আসলো মেয়েটা তো ঘুমাচ্ছিলো, তার মানে এতক্ষণ নাটক করছিল ম্যাডাম।


আসিফ রাগী চোখে তার দিকে তাকালো। তাপছিরা বুঝতে পেরে ঢুক গিলে ভয়ে, ইশশ, কে বলেছিল এভাবে চেঁচাতে, নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলাম ছ্যাহ।


মেয়েটা বোকা বোকা হেসে বিছানা থেকে নেমে আসিফের কাছে গেলো, আসিফ এখনও ঠিক আগের মতোই তাকিয়ে আছে, দিনদিন মেয়েটার দুষ্টামি বেড়েই চলেছে। 


-এতক্ষণ নাটক করার কারণ জানতে পারি মিসেস মাহমুদ...?....গম্ভীর স্বরে বললো আসিফ। 


মানুষটা শান্ত স্বরে বাঁশ দিলো তাকে।


-আপনি আজকে সারাদিন আমার দিকে একবারও তাকাননি, আর এতক্ষণ ধরে আমি বসে আছি আর আপনি আসলেন কখন, তাই এমন করলাম..... মুখটা কাঁদো কাঁদো করে বললো তাপছিরা। 


আসিফ হাসবে নাকি কাঁদবে ভেবে পেলো না, মেয়েটা এইটুকু কারণে তার এত সুন্দর রাত নষ্ট করতে যাচ্ছিল, দাড়ান ম্যাডাম দেখাচ্ছি মজা। 


-শাস্তি তো আপনাকে পেতেই হবে মিসেস মাহমুদ। 


মেয়েটার মুখ চুপসে গেলো শেষে কিনা বাসর রাতে, আসিফ ভাই তাকে শাস্তি দিবে, এইটা কি মানা যায় আপনারাই বলেন। 


-কই ভাবলাম আসবে, আমার মুখ দেখে একটু প্রশংসা করবে, একটু কিস,মিস দিবে তা না, হিটলার লোক শাস্তি দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে... বিরবির করে বললো তাপছিরা। 


-কি হলো রেডি তো শাস্তির জন্য...?  আসিফ দুষ্টু হেসে বললো।


-ঠিক আছে আমি রেডি... মেয়েটা মুখ কালো করে বলে।


আসিফ সটান দাড়িয়ে বললো....-আসেন তাহলে আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরেন।


মেয়েটা চোখ বড় বড় করে তাকালো আসিফের দিকে। বলে কি, আমি নিজে গিয়ে জড়িয়ে ধরবো মানে, আমার বুঝি লজ্জা করে না, উঁহু যাবো না আমি, কী খারাপ লোক রে বাবা।


মেয়েটা আসছে না দেখে আসিফ আবারও বললো.... -কী হলো মিসেস মাহমুদ কী ভাবছেন এত, তাড়াতাড়ি আসেন আমার আবার ঘুমাতে হবে... তাপছিরাকে বাজিয়ে দেখার জন্য এমন করে বললো আসিফ। 


তাপছিরার এবার সত্যি কান্না পাচ্ছে, ফাহা আর ইশপা বলেছিল বাসর রাতে তাদের বর তাদেরকে আদর করেছে, কিন্তু আসিফ ভাই তো দেখি পুরো টাই উল্টো। 


মেয়েটা কিছু না বলেই ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে শুরু করলো।


আসিফ হুট করে গিয়ে তাপছিরাকে জড়িয়ে ধরে, কান্না অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায় তার, এবার লজ্জা লাগছে মেয়েটার। 


একহাতে চোখের পানি মুছে দিয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আসিফ,মেয়েটার নাকের ডগায় চুমু খায়, তাপছিরা নিজের শাড়ী খামচে ধরে। 


-চলেন ম্যাডাম..।


-কোথায়..? তাপছিরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে। 


-নামাজ পরবো ইডিয়ট। 


আসিফকে ছেড়ে দিয়ে গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে ফিরে দাঁড়ায় তাপছিরা। 


-কি হয়েছে জান এমন করছো কেন...?


যদিও মেয়েটা এখন ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে,  আসিফ ভাই তাকে হুটহাট জান ডাকে,তাতে ভীষণ লজ্জা পাই সে।কিন্তু এখন কিছুতেই লজ্জা পাওয়া যাবে না।


-আপনি আমাকে ভালোবাসেন না... আগের মতোই গাল ফুলিয়ে বললো।


-#মন্ত্রী_মশাই_ভালোবাসে_তোমায়.....আসিফ ফিসফিসিয়ে বললো।


চলবে ....? 


#মন্ত্রী_মশাই_ভালোবাসে_তোমায়

#মোছাম্মৎ_তাপছিরা_চৌধুরী

সূচনা পর্ব 


(গল্পটা শুধু মাত্র তাদের জন্য যারা আসিফ তাপছিরার মিলন চাইছিলেন , যদিও গল্পটা তো সম্পূর্ণ আলাদা। যাদের মনে হবে একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে তারা স্কিপ করবেন ধন্যবাদ। 😊)

নেক্সট পর্ব 👇

https://www.effectiveratecpm.com/subgpswu?key=7374dafd89b3c657437abf97094d71c8

0 Comments:

Post a Comment