গল্প - #মন্ত্রী_মশাই_ভালোবাসে_তোমায়
লেখনীতে - #মোছাম্মৎ_তাপছিরা_চৌধুরী
পর্ব - ৫
কেটে গিয়েছে বেশ অনেক দিন। ইদানীং তাপছিরা আর নীলিমা দুজনেরই সবকিছুতে অস্থির লাগে বিনা কারণেই, বেচারা আসিফ আর নিলয়ের উপর ঝড় যাচ্ছে , বেচারা দু ভাই চুপচাপ সহ্য করছে।
মেয়েদের শরীরের অবস্থা বুঝতে পারছেন রোকসানা বেগম,উম্মে সালমা। তারা নিজেদের মধ্যে কথা বললেন। এই বিষয় নিয়ে কথা বলা দরকার তাদের সাথে। বাড়ীর পুরুষেরা বেরিয়েছেন অফিসের উদ্দেশ্যে।
ক্লান্ত শরীর নিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিলো তাপছিরা আর নীলিমা, রান্নাঘরে টুকটাক কাজ করে এসেছে দুজন, আজকাল ছোট ছোট কাজেও শরীর ক্লান্ত লাগছে কেনো বুঝতে পারে না তারা।
-আপামনি আপনাগো কী অশান্তি লাগতাছে, রং চা খাইবেন..? কইরা দিমু...?... রহিমা খালা, হেল্পার হিসেবে রেখেছেন উনাকে আসিফ আর নিলয়। যদিও তাতে তাপছিরা আর নীলিমা একদমই নারাজ ছিল, কী দরকার তারা তো এইটুকু কাজ করতেই পারে, কিন্তু এবার দুভাই কারো কথা কানে নিলো না, ধমক দিয়ে চুপ করিয়েছে দুজনকে।
_________________
রোকসানা বেগম ২টা প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ধরিয়ে দিলেন দুই বোনের হাতে , প্রথমে তারা অবাক হয়ে তাকালো রোকসানা বেগমের দিকে , পরক্ষনে নিজেদের শারীরিক অবস্থা দেখে বুঝতে বাকি নেই আর, লজ্জায় দুই বোনের মুখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে , মায়েদের দিকে তাকাতে পারলো না তারা। রোকসানা বেগম ব্যাপারটা খেয়াল করতেই মেয়েদের বললেন......
-রুমে যা, রেষ্ট নে কিছুক্ষণ।
তার বলতে দেরি কিন্তু তাপছিরা আর নীলিমার দৌড়ে পালাতে দেরি হলোনা।মেয়েদের অবস্থা দেখে ঠোঁট চেপে হাসলেন তিন কর্তি।
দৌড়ে রুমে এসে দরজা আটকে দিলো তাপছিরা, লজ্জা, ভয় মিলে অস্থির লাগছে, তার মধ্যে কী সত্যিই আরেকটা ছোট্ট প্রাণ আছে ভাবতেই চোখ ভিজে উঠছে তার, কীরকম এক অনুভূতি হচ্ছে, গভীর নয়নে টেস্ট কিট এর দিকে তাকালো, মনে মনে ভাবলো.....-এখনই কী টেস্ট করা ঠিক হবে , ভীষণ ভয় কাজ করছে মনে, কী হবে এসব ভাবতে ভাবতে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো সে।
বেচারি নীলিমা, তারও একই অবস্থা, বোনকেও কিছু বলতে পারছে না ভীষণ লজ্জা লজ্জা লাগছে , কী করবে ভেবে পেলো না , হাতে প্রেগন্যান্সি কিট, হাতটা কাঁপছে তার, ইচ্ছে হলো এমুহূর্তে তাপছিপুর কাছে ছুটে যেতে , আবার ভাবলো সে নিজেও লজ্জা পাবে তাপছিপু ও লজ্জা পাবে , কিছুক্ষণ ওভাবেই বসে থাকলো বিছানায়।
_________________
দুপুরে খাবার টেবিলে তাপছিরা নীলিমা দুজনেই উপস্থিত , বাড়ী কর্তিরা ভাবলেন এক্ষুনি হয়তো মেয়েরা খুশির খবর দিবে কিন্তু না, খাবার টেবিলে ছিল দু-বোনের মুখ থমথমে। মায়েরা মেয়েদের অবস্থা দেখে নিজেদের দোষী ভাবলেন , ইশশ নিজেরাই বেশি বেশি ভেবে ফেললো কেনো, কারোই ঠিক করে খাওয়া হলো না, বার বার মনে হলো মেয়েদের মন খারাপের কারণ তারা।
_________________
এখন বাজে সন্ধ্যা ৬ টা, বাড়ীর তিন কর্তি, রহিমা খালা সহ বসে আছেন বসার ঘরে , তাপছিরা নীলিমা নিজেদের রুমে গিয়েছে বেশ অনেকটা সময় হলো।
-রহিমা যা তো তোর আপামনি দের ডেকে নিয়ে আয়,কিছুই তো মুখে দিলো না মেয়েগুলো..... রোকসানা বেগম রহিমা খালাকে বললেন , রহিমা খালা বয়সে তার ছোট তাই তিনি আপন মনে করে তুই করেই সম্বোধন করেন।
-আইচ্ছা ডাইকা লইয়া আইতাছি খালাম্মা... এই বলেই রহিমা খালা উঠে দাড়ালেন।
ততক্ষণে দেখা গেলো তাপছিরা নীলিমা দুজন সিড়ি বেয়ে নামছে।
-আরে আপামনি আপনেরা আইছেন , আহেন খালাম্মা আপনাগো ডাকতাছিল...বলেই তিনি পূনরায় নিজের জায়গায় বসে পরলেন।
দুবোন হাসি হাসি মুখ নিয়ে বসার ঘরে আসলো....-কী হয়েছে সোনা মেয়ে আমার, শরীর খারাপ করছে...? এতক্ষণ কোথায় ছিলি মা....তাদের দেখে উম্মে সালমা জিজ্ঞেস করলেন।
-হ্যা, কী হয়েছে তোমাদের ডাক্তার আসতে বলবো....?..পাশ থেকে সাহেরা খাতুন বলেন উঠলেন।
মায়েদের কথায় দু-বোন আমতা আমতা শুরু করলো , এতক্ষণ তো সব ঠিকই ছিল এখন লজ্জা লাগছে ভীষণ , ইশশ কীভাবে বলবে তারা।
রোকসানা বেগম মেয়েদের টেনে নিজেদের মধ্যে পাশে বসালেন..... -কী হয়েছে বলো, মন খারাপ তোমাদের , বলো আমাকে...?
তিন কর্তি মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন।
-তুমি দিদা হতে যাচ্ছো আম্মু.... তাপছিরা চোখ বন্ধ করে কথাটা বললো।
নীলিমা একই কথা সাহেরা খাতুনকে বললো।
চমকে উঠলো সবাই , 'দিদা' শব্দটা রোকসানা বেগমের মাথায় আসতেই বুঝতে পারলো, কথা ছিল তার জন্য ছিল, 'দিদা' শব্দটা এত ভালো, এত সুন্দর লাগলো রোকসানা বেগমের, তার মেয়েরা এত বড় একটা খুশির খবর দিলো।
-আমায় কী ডাকলি আবার ডাক সোনা.... আবেগী হয়ে তাপছিরাকে বললেন রোকসানা বেগম।
-আম্মুউউ....তাপছিরা বলে জড়িয়ে ধরলো রোকসানা বেগমকে।
চোখ ভিজে উঠে রোকসানা বেগমের, এই প্রথম মেয়েটা তাকে 'মা' বলে ডেকেছে , যদিও এইটা নিয়ে তার কোনো অভিযোগ নেই , তবু্ও একমাত্র ছেলের বউ, তার ওপর মেয়েটার প্রতি তার আলাদা একটা টান রয়েছে , আজ মা বলে ডাকায় ভীষণ খুশি তিনি, তিন, তিনটে খুশি একসাথে। মেয়েদের জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলো তারা, আজ ভীষণ খুশি , বাড়ীতে দু, দুটো নতুন অতিথি আসছে , সারাক্ষণ তাদের দিদা দিদা বলে ডাকবে ব্যাপার টা ভীষণ রকম সুন্দর।
একমাত্র মেয়ে মা হবে ভেবেই খুশিতে আত্মাহারা উম্মে সালমা , রহিমা খালাকে এটা ওটা বানাতে বলছেন মেয়েদের জন্য , ইতিমধ্যে বাড়ীর তিন কর্তাকে জানানো হয়েছে , ছেলেদের জানানো হয়নি এখনো , তিন কর্তা ভীষণ খুশি।
বিল্লাল চৌধুরী ডেকে ফাটালেন ছেলেদের , আসিফ নিলয় বিল্লাল চৌধুরীর কেবিনে এসে দেখলো বাবা, চাচ্চু সবাই উপস্থিত , আসিফ এসেই বাবাকে বললো......
-কী হয়েছে বাবা, ডেকেছে ফাটিয়েছেন...? চাচ্চু তোমরাও আছো..? শেষের কথাটা জাফর, জাহেদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললো সে।
-হ্যা, তোমরা এক্ষুনি বাড়ীতে যাচ্ছো তোমরা, যাওয়ার পথে বেশি করে মিষ্টি নিয়ে যাবে....কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বললেন বিল্লাল চৌধুরী।
আসিফ নিলয় অবাক হলো, সাধারণত বাবা তো এমন করে কথা বলে না, এমন করে কথা বলছে কেনো,আবার মিষ্টি নিয়ে যেতে বললো কেনো..... --কিন্তু বাবা...
--কিন্তু কী...? মুখের উপর প্রশ্ন করছো কেনো, যেটা বলছি সেটা করো।
আবারও অবাক হলো দুই ভাই , আজ বাবার কী হলো বুঝলো না, তবে আর কথা বাড়ালো না আসিফ বেরিয়ে গেলো বাবার কেবিন থেকে।
তারা রুম ছেড়ে বেরিয়ে যেতেই তিন কর্তা হু হা করে হেসে উঠলো , বিল্লাল চৌধুরী মনে মনে বেশ মজা পেলেন , ছেলেকে যে আজ ভালোই জব্দ করতে পেরেছেন তিনি।
_____________
আসিফ নিলয় বাড়ী ফিরেছে বাবার কথা মতে অনেকগুলো মিষ্টি ও নিয়ে আসলো, বাড়ীর পরিবেশ অন্যদিনের তুলনায় অন্য রকম , সবার মুখে খুশি খুশি ভাব। আসিফ মায়ের কাছে গেলো....
-বাড়ীতে কী হচ্ছে মা, বাবা মিষ্টি আনতে বললো তোমাদেরকে ভীষণ খুশি দেখাচ্ছে...?
রোকসানা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে হাসেন , সাথে সাহেরা খাতুন আর উম্মে সালমা ঠোঁট চেপে হাসলেন..... -আগে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয় , তার পর বলছি...রোকসানা বেগম চাইলেন কোনো মতে ছেলেকে রুমে ফাটাতে পারলেই হলো, নিজেই জেনে যাবে খবর।
-না আগে বলো, তারপর যাচ্ছি , বাবাকে ও দেখলাম কেমন যেন বিহেভ করছে।
-না না তাড়াতাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়...মায়ের সাথে না পেরে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো আসিফ সাথে নিলয় ও গেলো।
_______________________
-নীলুপাখি.....?
নীলিমা দরজার দিকে উল্টো পিট করে বসেছিল , হঠাৎ নিলয়ের কন্ঠ শুনে চমকে উঠে সে।
-কী হয়েছে জান, ভয় পাচ্ছো কেনো তুমি..? আমি এসেছি....।
-কই, কই ভয় পাচ্ছি... নীলিমা আমতা আমতা করে বললো..।
হঠাৎ লজ্জা লাগছে তার, নিলয় খেয়াল করলো তার নীলুপাখির মুখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করছে আস্তে আস্তে ,মেয়েটা লজ্জা পাচ্ছে কেনো।
-জান তুমি কী লজ্জা পাচ্ছো...?কী হয়েছে...?
নীলিমা কিছু বললো না , চোখে পানি টলমল করছে , ঠোঁট উল্টে নিলয়ের দিকে তাকালো , নিলয় তার প্রেয়সীকে বুকে টেনে নিলো......
-কী হয়েছে জান, একবার বলো আমায়, তুমি না বললে আমি বুঝবো কীভাবে।
নীলিমা কোনোমতে হাত দিয়ে ইশারা করে টেবিলের উপর রাখা টেস্ট কিট টা দেখিয়ে দিলো।নিলয় একবার টেস্ট কিট এর দিকে তাকালো আবার তার নীলুপাখির দিকে , হুট করে নীলিমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো....
--সত্যি আমরা বাবা-মা হতে যাচ্ছি জান......?
নীলিমা উপরে নিয়ে মাথা নাড়ালো, তাতে শান্তি পেলো না নিলয়.....-মুখে বলো জান, শান্তি পাচ্ছি না, তুমি মুখে বলো।
-আমরা মা-বাবা হতে যাচ্ছি নিলয় ভাই...।
নিলয়ের মুখটা চুপসে গেল, এতক্ষণ ঠিকই ছিল বাবা হওয়ার খবর দিচ্ছে তাও আবার ভাই ডেকে , এটা কী মানা যাই...?
-বাব থেকে সোজা মামা বানিয়ে দিলে নীলুপাখি....?
নিলয়ের কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো নীলিমা।
তাপছিরা আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে দেখছে..
-ম্যাডাম আয়নাতে এত কী দেখেন, দেখি এদিকে ও তাকান আমিও দেখি...দরজার হাতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে আসিফ।
সহসা পেছন ফিরে তাকালো তাপছিরা। ততক্ষণে আসিফ তার একদম কাছে এসে দাড়িয়েছে।
-কোলে নেন আমাকে.. চোখ পিটপিট করে বললো মেয়েটা।
আসিফ হা করে তাকিয়ে আছে তার বউজান এর দিকে, সে কী সত্যি শুনলো....-আবার বলো জান বুঝতে পারিনি তুমি কী বললে।
ব্যাস মুহূর্তে পাল্টে গেলো মিসেস মাহমুদ চৌধুরীর মুড.....-নিতে হবে না কাউকে , আপনার সাথে কথা নেই সরেন সামনে থেকে।
আসিফ যেন আকাশ থেকে পরলো, এখনই তো বললো কোলে নিয়ে আবার বলছে কথা নেই..... -কী হয়েছে বউজান, মুড অফ কেনো জান আপনার।
তাপছিরার মুড আবারও পাল্টে গেলো। মেয়েটা আয়নার দিকে ঘুরে দাড়ালো, আসিফ তার পেছনে..... -হাত দেন আপনার।
আসিফ বিনাবাক্যে হাত এগিয়ে দিলো। তাপছিরা নিজের পেটের উপর রাখলো আসিফের হাত...
-#মন্ত্রী_মশাই.....?
-বলেন ম্যাডাম....?
--আপনার প্রমোশন হয়েছে #মন্ত্রী_মশাই....।
আসিফ চট করে তাকালো..... -কী বললে বউজান....?
-আপনি বাবা হতে যাচ্ছেন...।
কী চমৎকার কথা, ভীষণ চমৎকার শুনালো কথাটা।কেঁপে উঠলো আসিফ , হাত পা যেন কাঁপছে , বাবা হবে শুনে এমন অনুভূতি হচ্ছে তার, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দর অনুভূতি এটা।
আসিফ ঝট করে কোলে তুলে নিলো মেয়েটাকে,মেয়েটা গলা জড়িয়ে ধরে আসিফের, অসংখ্য বার নিজের অধর ছোঁয়ায় তাপছিরার ললাটে।
--তোমাকে ধন্যবাদ বউজান, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দর অনুভূতির সাথে পরিচয় করানোর জন্য , সবচেয়ে সুন্দরতম উপহার দেওয়ার জন্য , আমি ভীষণ খুশি , তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ বউজান, বলো তোমার কী চাই।....বলতে বলতে চোখ ভিজে উঠে আসিফের।
আসিফের খুশি দেখে কেঁদে দিলো মেয়েটা, আসিফের বুকে মুখ লুকিয়ে বলে.....- সারাজীবন এভাবেই ভালোবাসতে হবে আমাকে....। আপনাকে অনেক অনেক অনেক বেশি #ভালোবাসি_মন্ত্রী_মশাই।
- #মন্ত্রী_মশাই_ভালোবাসে_তোমায় বউজান।
চলবে......?
(বি:দ্র: সম্পূর্ণ ভাবে কপি করা নিষেধ।)
0 Comments:
Post a Comment